০৫৬. যুধিষ্ঠিরের নিকট মহর্ষি নারদের আগমন ও তীর্থস্নানের আগমন ও র্তীর্থস্নানের ফল বর্ণন

এইমতে রোদন করয়ে ভ্রাতৃগণ।
শোকাকুল অধোমুখ ধর্ম্মের নন্দন।।
হেনকালে নারদ করেন আগমন।
আশীর্ব্বাদ করি বৈসে মহা তপোধন।।
নারদেরে যুধিষ্ঠির কহেন বিনয়।
কহ মুনিবর মম খণ্ডুক বিস্ময়।।
তীর্থস্নান করি ক্ষিতি প্রদক্ষিণ করে।
কোন ফল লভে নর, কহ তা আমারে।।
নারদ কহেন, পূর্ব্বে ভীষ্ম সত্যব্রত।
পৌলস্ত্যের কহিল যাহা তব পিতামহে।।
সে সকল কহি শুন, অন্যমত নহে।
যার হস্ত পদ মন সদা পরিষ্কৃত।
বিদ্যা কীর্ত্তি তপস্যাতে যেই হয় রত।।
প্রতিগ্রহ নাহি করেম সর্ব্বদা সানন্দ।
অহঙ্কার নাহি যার, নহে ক্রোধে অন্ধ।।
অল্পাহরী জিতেন্দ্রিয় সত্য ব্রতাচার।
আত্মতুল্য সর্ব্বপ্রাণী দৃষ্টিতে যাহার।।
ঈদৃশ হইলে সেই তীর্থফল পায়।
পদে পদে যজ্ঞফল ত্যজি তীর্থে যায়।।
দরিদ্রের শক্য নাহি হয় যজ্ঞকর্ম্ম।
যজ্ঞাপেক্ষা তীর্থস্নানে লভে অতি ধর্ম্ম।।
দৃঢ়ভক্তি তিন রাত্রি তীর্থে যদি থাকে।
সর্ব্ব যজ্ঞফল পায়, যায় ইন্দ্রলোকে।।
পুষ্কর নামেতে তীর্থে যদি করে স্নান।
সর্ব্বপাপে মুক্ত সেই দেবতা সমান।।
একগুণ দানে কোটিগুণ ফল লাভে।
অমর কিন্নর দৈত্য সেই তীর্থ সেবে।।
দশ কোটি তীর্থ আছে পৃথিবী ভিতর।
নৈমিষকানন পরে চম্পানদীবর।।
তদন্তরে দ্বারাবতী যায় যেই জন।
দশকোটি যজ্ঞফল পায় সেইক্ষণ।।
তদন্তরে যায় গঙ্গা সাগরসঙ্গম।
তাহে স্নানে কোন কালে নাহি দণ্ডে যম।।
শঙ্কুকর্ণেশ্বর দেবে কৈলে দরশন।
দশ অশ্বমেধ ফল পায় সেইক্ষণ।।
কামাখ্যা নামেতে তীর্থে যদি করে স্নান।
সিদ্ধিপদ পায় আর জন্মে দিব্যজ্ঞান।।
তদন্তরে কুরুক্ষেত্রে যায় যেই জন।
যাহার নামেতে সর্ব্বপাপ বিমোচন।।
বায়ুতে ক্ষেত্রের ‍ধূলি যদি লাগে গায়।
সর্ব্বপাপে মুক্ত হয়ে সুরপুরে যায়।।
স্নানে ব্রহ্মলোকে যায়, নাহিক সংশয়।
সরস্বতী স্নানেতে নিষ্পাপ অঙ্গ হয়।।
গোকর্ণে করিয়া স্নান দেখে নারায়ণ।
সদাকাল নিবসয়ে বৈকুন্ঠ ভুবন।।
বাচা নামে তীর্থ যথা জন্মিল বরাহ।
স্নান কৈলে মুক্ত হয়, পাপশূন্য দেহ।।
রামহ্রদ নামে মহাতীর্থ গুণধর।
যাহাতে করিলে স্নান হয় পুণ্যবর।।
পূর্ব্বেতে পরশুরাম মারি ক্ষত্রগণ।
ক্ষত্রিয় রক্তেতে সেই করিল তর্পণ।।
তুষ্ট হয়ে পিতৃগণ তারে দিল বর।
পুণ্যতীর্থ হৌক যে বলিল ভৃগুবর।।
ইথে যে করিবে পিতৃলোকের তর্পণ।
ব্রহ্মলোকে বসিবে তাহার পিতৃগণ।।
কপিল নামেতে তীর্থ তাহার অন্তর।
সরযূর স্নানে সূর্য্যলোকে যার নর।।
স্বর্গদ্বার আদি করি যত তীর্থ সার।
সপ্তঋষ্যাশ্রম মহাসরযূ কেদার।।
গোদাবরী বৈতরণী নর্ম্মদা কাবেরী।
জাহ্নবী যমুনা জয়া জয়া সর্ব্বদাতা বারি।।
অশ্বমেধ বাজপেয় রাজসূয় আদি।
যত যত যজ্ঞ বেদে করিয়াছে বিধি।।
সর্ব্ব যজ্ঞফল লভে তীর্থগণ স্নানে।
সর্ব্বপাপ ধৌত হয়, বৈসে দেবাসনে।।
এত বলি চলিল নারদ তপোধন।
তীর্থযাত্রা ইচ্ছিলেন ধর্ম্মের নন্দন।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
কাহার শকতি ইহা বর্ণিবারে পারি।।
কহে কাশীরাম, প্রভু নীলশৈলারূঢ়।
দক্ষিণে অনুজাগ্রজ সম্মুখে গরুড়।।