০৫৫. জন্মেজয়ের বৈশম্পায়নকে কাম্যকবনস্থ পাণ্ডবগণের বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা

বলেন জনমেজয় কহ মুনিরাজ।
পার্থ বিনা কাম্যবনে পাণ্ডব সমাজ।।
কি করিল কি মতে বঞ্চিল দুঃখ শোকে।
বিস্তারিয়া মুনিবর কহিবে আমাকে।।
মুনি বলে, পাণ্ডুপুত্র অর্জ্জুন বিহনে।
অনুশোচে, পক্ষী যেন পক্ষের কারণে।।
বিষ্ণু বিনা যথা নাহি শোভে সুরগণ।
কুবের বিহনে যথা চৈত্ররথ বন।।
কান্দিয়া দ্রৌপদী বলে রাজার গোচর।
পার্থে না দেখিয়া স্থির না হয় অন্তর।।
যে অর্জ্জুন বহুবাহু কার্ত্তবীর্য্য সম।
বলবান রণে মত্ত গজেন্দ্র বিক্রম।।
তাহা বিনা সকলি যে দেখি শূন্যময়।
ক্ষণমাত্র নাহি হয় স্বচ্ছন্দ হৃদয়।।
অগ্রসর হয়ে তবে বলে বৃকোদর।
শোকানলে নিরন্তর দহিছে অন্তর।।
যত দিন নাহি দেখি অর্জ্জুনের মুখ।
মুহূর্ত্তেক নরপতি, নাহি মম সুখ।।
সর্ব্ব শূন্য দেখি আমি অর্জ্জুন বিহনে।
দশদিক অন্ধকার দেখি রাত্রি দিনে।।
যার ভূজাশ্রিত কুরু পাঞ্চাল পাণ্ডব।
দৈত্য মারি দেবে যেন পালয়ে বাসব।।
রাজ্যভ্রষ্ট হয়ে ঘুরি করিয়া সন্ন্যাস।
পুনঃ রাজ্য পাব বলি, যার করি আশ।।
যার ভূজে গন্ধ হবে যত কুরুবর।
সে অর্জ্জুন বিনা মম দহিছে অন্তর।।
অনন্তর নকুল বলেন সকরুণ।
দেবাসুরে নাহি তুল্য অর্জ্জুনের গুণ।।
জিনিল উত্তর দিকে রাজসূয় কালে।
ভৃত্যবৎ খাটাইল নৃপতি সকলে।।
কোন স্থানে নাহি সুখ না দেখি তাঁহায়।
আহার শয়ন আদি লাগে কটুপ্রায়।।
সহদেব কান্দিয়া বলিছে নৃপ আগে।
যতদিন নাহি দেখি পার্থ মহাভাগে।।
নিমিষে না হয় সুস্থ আমার শরীর।
গরলে ব্যাপিত যেন, অঙ্গ নহে স্থির।।
যাদব নিকরে বীর পরাজয় করি।
হরিয়া আনিল বলে সুভদ্রা সুন্দরী।।
আজি গৃহ শূন্য দেখি তাঁহার বিহনে।
কোনমতে শান্তি নাহি হয় মম মনে।।