ভয়-ভুতুড়ে – ১০

দশ

রবিবার বিকেলে কিশোর, মুসা আর রবিন মিলিত হলো রবিনের বাসায়, পরিকল্পনা ঠিক করতে।

মিশেল যেহেতু বলপার্কের সবাইকে চেনে, সে ওদের ঢোকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। এজন্য অবশ্য তাকে সবটা খুলে বলতে হবে। ওরা তিনজন একমত হয়েছে মুসা কাজটা করবে।

কিশোর যেহেতু হাই স্কুল টিমে খেলে, সরঞ্জাম জোগাড়ের দায়িত্ব ও নিল। কয়েক ধরনের ব্যাট সংগ্রহ করেছে ওরা। সিম্পসন যাতে পছন্দসই একটা বেছে নিতে পারেন। কিছু বেসবলও জড় করা হয়েছে।

পরিকল্পনা ছকে ফেলার পর, বাইকে চেপে মিশেলের দোকানে গেল মুসা।

‘একটা সাহায্য চাই,’ মুসা বলল ওকে। ‘আসলে সাহায্যটা আপনি খুশি মনেই করবেন।’

‘বলে ফেলো।’

‘কাল রাতে ড্যানি সিম্পসনের সাথে দেখা করতে চান?’

‘তুমি ড্যানি সিম্পসনকে খুঁজে পেয়েছ? ড্যানি সিম্পসন?’

‘উনি বলপার্কে আসছেন। আপনি আমাদের ঢোকার ব্যবস্থা করে দেবেন।’

‘আগে পুরোটা বলো শুনি,’ উত্তেজিত কণ্ঠে বলল মিশেল।

.

সোমবার রাতে বলপার্কে সবার আগে পৌঁছল মুসা আর রবিন। পার্কিং লটে কোন গাড়ি নেই। স্টেডিয়াম অন্ধকার। আকাশে চাঁদ নেই। আঁধার ঘুটঘুট করছে। মুসা বিল ফাস্টের কথা ভাবল। পার্কের পিছনে অপেক্ষা করছে সে। পার্কের ভিতরে ঢুকে কটা বাতি জ্বালতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল মুসা।

ক’ মিনিট বাদে, একজোড়া আলো বিল্ডিঙের সামনেটা আলোকিত করল। মিশেলের গাড়ি ওদের পাশে এসে থামল।

‘এসেছে?’ প্রশ্ন করল মিশেল। গাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। ‘প্রায় সাতটা বাজে।’

কিশোর বসা প্যাসেঞ্জার সিটে। গাড়ির পিছনটা বেসবল সরঞ্জাম দিয়ে ঠাসা।

‘না,’ মুসা জানাল তাকে। ‘আপনি রবিন আর কিশোরকে ভিতরে নিয়ে সব রেডি করে ফেলুন। আমি ওঁর জন্যে অপেক্ষা করি।’

দাঁড়িয়ে রইল মুসা। বারবার হাতঘড়ি দেখছে। মিনিটের কাঁটা বারো ছুঁয়ে পেরিয়ে গেল। সিম্পসন দেরি করে ফেলেছেন। টিকেটের জানালাগুলোর সামনে পায়চারী শুরু করল মুসা। আবারও ঘড়ি দেখল-৭:১৫। উনি যদি না আসেন? মুসা উদ্বিগ্ন বোধ করছে। আর হয়তো ওর বাড়ি ফেরা হবে না।

যখনই জেফারসন অ্যাভিনিউতে কোন একজোড়া হেডলাইট ঝলসে যাচ্ছে আশান্বিত হয়ে উঠছে মুসা, ভাবছে পার্কিং লটে এসে ঢুকবে। কিন্তু প্রতিবারই ধোঁকা খেতে হচ্ছে। পায়চারী করতে-করতে ক্লান্ত হয়ে সামনের ধাপে বসে পড়ল ও। আশা হারাতে রাজি নয়। বসে রয়েছে, মনে হলো স্টেডিয়ামের ওপাশ থেকে পদশব্দ ভেসে এল। শ্বাস চেপে কান পাতল। হ্যাঁ। পায়ের আওয়াজ, কোন সন্দেহ নেই।

বিল ফাস্ট অপেক্ষা করতে-করতে ক্লান্ত, ভাবল মুসা, বুকের মধ্যে আতঙ্ক বাসা বাঁধছে। এক ছুটে ধাপ থেকে নেমে ঝোপটার ভিতরে লাফিয়ে পড়ল। গুটিসুটি মেরে বসে রয়েছে, উঁকি দেয়ার সাহস নেই। উৎকর্ণ মুসা শুনতে পেল ধীর পদশব্দ বিল্ডিংটাকে ঘুরে, টিকেট বুদগুলো পেরিয়ে ধাপ ভেঙে নেমে এল ওর দিকে। ঘাপটি মেরে বসে শব্দ না করার চেষ্টা করল ও। ঝোপের ওপাশে থেমে দাঁড়াল পদশব্দ। দু’মুঠো পাকাল মুসা।

‘মুসা!’ ঝোপের ওপাশ থেকে আসা কণ্ঠটা চমকে দিল ওকে। ‘মুসা, তুমি কোথায়?’ মিশেলের কণ্ঠ।

ধরে রাখা শ্বাসটা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা। মিশেল আর্তচিৎকার ছেড়ে লাফিয়ে পিছু হটল। মুসাকে চিনতে পেরে, সিঁড়ির ধাপে বসে বুকে হাত রাখল।

‘কী করতে চাইছ তুমি?’ শ্বাস ফিরে পেয়ে হেসে উঠল মিশেল। ‘আরেকটু হলেই আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত। আমি ভেবেছিলাম বিল ফাস্ট তোমাকে ধরে ফেলেছে, আর তুমি ঝোপ থেকে লাফিয়ে আমার ওপর পড়বে।’

‘সরি,’ বলল মুসা। ‘আমি বুঝিনি ওটা আপনি। ভেবেছিলাম-’

উজ্জ্বল আলো আচমকা ওদেরকে আলোকিত করল। একটা পিকআপ ট্রাক পার্কিং লটের উপর দিয়ে ঝাঁকুনি খেতে-খেতে আসছে। হেডলাইট অন করা। সিঁড়ির সামনে ব্রেক কষে থেমে দাঁড়াল ওটা।

ট্রাকটির জানালার কাঁচ নেমে গেল, এবং মিশেল বুড়ো মানুষটির দিকে চাইল।

‘আপনার সাথে দেখা হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার, মিস্টার সিম্পসন,’ বলল মিশেল। ‘আমার নাম রিনাত মিশেল।’

‘আমার নাম ব্র্যাণ্ড,’ কাঠখোট্টা সুরে বললেন বৃদ্ধ। ‘সিম্পসন নামটা বহু বছর আগে একদল বোকা বানিয়েছিল।’

ড্যানি সিম্পসন ট্রাক থেকে নেমে বলপার্কের দিকে চেয়ে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইলেন। গভীর শ্বাস টেনে পিঠ সোজা করলেন। মুসার মনে হলো বৃদ্ধের ঠোঁটে ক্ষীণ হাসির রেখা দেখেছে ও।

মিশেল ওদেরকে পিছনে নিয়ে, কয়েকটা বাঁক ঘুরে, প্রতিধ্বনি-তোলা এক সুরঙ্গ দিয়ে ডাগআউটে চলে এল।

‘লাইট জ্বালার ব্যবস্থা করছি,’ বলে ঢুকে পড়ল সুরঙ্গের ভিতরে।

ড্যানি সিম্পসন ডাগআউটের ধাপগুলো ভেঙে উঠে ঘাসে ভরা মাঠে হেঁটে গেলেন। মুসা তাঁকে অনুসরণ করল। সিম্পসন ধীরে-ধীরে এক পাক দিয়ে, অন্ধকার স্ট্যাণ্ডগুলোর দিকে মুখ তুলে চাইলেন। একে-একে উজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল বলপার্ক। সিম্পসন দাঁড়িয়ে থেকে চোখ পিটপিট করছেন। মুসা দেখতে পেল তাঁর চোখের কোণ ভেজা। হোম প্লেটে অপেক্ষা করছিল কিশোর আর রবিন। রবিন ক্যাচার্স গিয়ার পরেছে, মাথায় মুখোশ টেনে দেয়া।

‘আমাদেরকে ওই ফেন্সটা পার করতে হবে শুধু,’ বলে ইশারায় আউটফিল্ড দেখাল মুসা। ‘আমি পিচ করব। আপনি কীরকম চান?

মুসার দিকে চোখ নামিয়ে চাইলেন সিম্পসন।

‘সেরাটা দাও, বাছা, আমাকে আউট করার চেষ্টা করো।’

হোম প্লেটে সিম্পসনকে হেঁটে যেতে দেখল মুসা। কিশোর তাঁকে ব্যাটগুলো দেখাল। সিম্পসন অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাটগুলো না নিয়ে কাঠের একটা ব্যাট তুলে নিলেন। ওটা বিল ফাস্টের ছিল। সিম্পসন তাঁর ডেনিম জ্যাকেট খুলে ছুঁড়ে দিলেন কিশোরের উদ্দেশে। মিশেল ডাগআউটে দাঁড়িয়ে লক্ষ করছে।

রবিন প্লেটের পিছনে গুটিসুটি মেরে বসে ক্যাচার্স মাস্কটা খুলে ফেলল।

‘ওয়ার্ম-আপ থ্রো করো,’ মুসার উদ্দেশে চেঁচিয়ে বলল। মুসা দস্তানা পরে একটা বল তুলে নিল। হাজার-হাজার খালি আসন ওর মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে। নিজের ওয়াইণ্ড আপে গিয়ে প্রথম পিচটা

করল।

‘এটা স্লো-পিচ সফটবল নয়,’ বলে বলটা পাল্টা ছুঁড়ে দিল নথি ‘তুমি এ খেলার সেরা একজন প্লেয়ারের বিরুদ্ধে পিচ করছ। মেজর লিগ পিচিং দেখাও!’

মুসা দস্তানা পরা হাতটা দিয়ে চেপে ধরল বলটা। এবার সর্বশক্তিতে ছুঁড়ে দিল। বলটা কোথায় গেছে জানে না। রবিনের দস্তানায় বলটার আছড়ে পড়ার শব্দ পেল ও। এবার ওটা ফিরে আসতে লাগল ওর দিকে।

‘এরকমই চাই,’ বলল রবিন। ‘একটু নীচে রাখো আর রিলিফের ওপর কনসেনট্রেট করো।’

মুসা সিম্পসনের দিকে চাইল। তাঁকে রবিনের উদ্দেশে চেয়ে স্মিত হাসতে দেখে বিস্মিত হলো। সিম্পসন প্লেটের কাছে হেঁটে গিয়ে, মুসার দিকে চেয়ে গোটা দুই প্র্যাকটিস সুইং নিলেন।

‘রেডি,’ বললেন।

মুসার পিচটা অনেক উঁচু আর বাইরে। সিম্পসন ঝুঁকে পড়ে ডান হাতে লুফলেন ওটা।

‘ইজি, বাছা,’ বললেন। ‘রিল্যাক্স।’ বলটা ছুঁড়ে দিলেন মুসার দিকে।

গভীর শ্বাস টেনে তারপর ছাড়ল মুসা। দস্তানায় হাত ডুবিয়ে বলটা চেপে ধরল। নিজের ওয়াইণ্ড আপে গিয়ে সজোরে ছুঁড়ে দিল। বলটা রকেটের মত মাঝ বরাবর সিধে হয়ে রবিনের দস্তানায় আছড়ে পড়ল। সিম্পসন ব্যাট ঘোরাননি।

‘স্ট্রা-ইক!’ বলল রবিন। সিম্পসন অবিশ্বাসের চোখে ওর দিকে ফিরে চাইলেন। ‘ওটা স্ট্রাইক ছিল,’ বলে বলটা মুসার দিকে ছুঁড়ে দিল নথি। পরের পিচের জন্য সিম্পসন যখন ঘুরে দাঁড়ালেন, তাঁর মুখে আবারও মৃদু হাসি দেখা গেল।

মুসা আবারও ওয়াইণ্ড আপ করল। পিচটা প্লেট অতিক্রম করতেই, সিম্পসন এতটাই জোরে ব্যাট ঘোরালেন, মুসার আত্মরক্ষার্থে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে হলো। মাঠের বাঁ দিকের স্ট্যাণ্ডের আসনগুলোর উপরে উড়ে গিয়ে পড়ল বলটা।

‘স্ট্রাইক টু,’ বলল রবিন।

মুসা আরেকটা বল তুলে নিল। মাউণ্ডে যখন গেল সিম্পসনের চোখে আগুন লক্ষ করল। বৃদ্ধ বার দুয়েক ইচ্ছাকৃত ধীর প্র্যাকটিস সুইং নিলেন, এবং মুসা গেল তার ওয়াইণ্ড আপে। মুসা বলটা সজোরে নিক্ষেপ করল প্লেটের দিকে, এবং সিম্পসন ব্যাট ঘোরালেন। জোরাল শব্দে মুসার মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল বলটা। শূন্যে ভেসে-যাওয়া বলটার দিকে দৃষ্টি ঘুরে গেল সবার। রবিন দাঁড়িয়ে পড়ে মুখোশটা খুলে নিল। ব্যাটগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে কিশোর—মুখ হাঁ। সিম্পসনের শরীর ঘোরানো, চোখ আউটফিল্ড ফেন্সের অনেক বাইরে পড়ন্ত বলটার দিকে।

স্টেডিয়ামে সহসা গর্জন উঠল, হাজারও দর্শক যেন উঠে দাঁড়িয়ে উৎফুল্ল চিৎকার করছে। মুসা চারধারে নজর বুলাল। শূন্য আসনগুলো থেকে শোরগোল উঠে প্রতিধ্বনিত হলো গোটা মাঠ জুড়ে। ড্যানি সিম্পসন বেস রান করছেন। দ্বিতীয়বার ঘুরে, তৃতীয়বার পেরিয়ে গেলেন। ওদিকে হৈ-হল্লা চলছে পুরো স্টেডিয়ামে। সিম্পসন হোম প্লেটে পা রাখতেই, উত্তেজিত জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ল। এবার শোরগোল মিইয়ে আসতে লাগল। মুহূর্ত পরে, ফাঁকা স্টেডিয়াম নীরব হয়ে গেল।

সিম্পসন প্লেটের উপর দাঁড়িয়ে। কবজি দিয়ে চোখজোড়া মুছে খালি বলপার্কের চারধারে দৃষ্টি বুলালেন। ক’মিনিটের বিস্ময়মাখা নিস্তব্ধতার পর, মাঠ থেকে চুপচাপ সরঞ্জামগুলো জড় করল তিন গোয়েন্দা। এইমাত্র যা শুনেছে তা নিয়ে কথা বলার সাহস কারও নেই।

ডাগআউটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষারত মিশেলের কাছে সরঞ্জামগুলো বয়ে নিয়ে গেল ওরা। একে-একে মাঠ ঘিরে জ্বলা দানবীয় বাতিগুলো নিভে যেতে লাগল। ড্যানি সিম্পসন ডাগআউটের বাইরে দাঁড়িয়ে মাঠটাকে আঁধার হয়ে যেতে দেখলেন। এবার অন্যদেরকে অনুসরণ করে বেরিয়ে এলেন।

মুসা ড্যানি সিম্পসনকে একা পেল। অন্যরা মিশেলের গাড়িতে সরঞ্জাম তুলছে।

‘আপনি আসলে বেসবল ছাড়তে চাননি, তাই না?’ প্রশ্ন করল মুসা।

মাথা ঝাঁকালেন সিম্পসন।

‘কী হয়েছিল?’ মুসা বলল। ‘মেজরে গিয়ে কেন ছাড়লেন?’

‘তোমার শেষের চিঠিটা না পেলে এখানে আসতাম না,’ জবাবের বদলে বললেন সিম্পসন।

‘তারমানে আপনি ভূতের কথা বিশ্বাস করেছেন?’

সিম্পসন ওর দিকে চেয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিলেন।

‘আপনি! আপনিও ভূতটাকে দেখেছেন, তাই না?’

আবারও ওর দিকে চেয়ে মাথা ঝাঁকালেন সিম্পসন।

‘যে বলপার্কেই খেলেছি ছেলেটাকে দেখেছি,’ বললেন তিনি। ‘লকার রূমে। ডাগআউটে। সবখানে।’

‘ওটা যে ভূত তা ভেবেছিলেন?’

‘আমি জানতাম ওটা কী,’ বললেন সিম্পসন। হাত দিয়ে পাকা চুল সমান করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ‘আমি ওকে চাপা দিই। আমিই তখন গাড়ি চালাচ্ছিলাম।’

‘আপনি?’

মাথা ঝাঁকালেন সিম্পসন।

‘পার্কে যাচ্ছিলাম, এসময় ও ঠিক আমার গাড়ির সামনে পড়ে। আমার কিছুই করার ছিল না।’ বৃদ্ধের ঠোঁটজোড়া কেঁপে উঠল। আবার কথা শুরু করতে দু’মুহূর্ত লেগে গেল তাঁর। ‘পুলিস আমাকে চিনতে পারেনি। তাদেরকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়েছি, কিন্তু ওতে আমার আসল নাম ছিল। তারা আমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করে ছেড়ে দেয়। খেলায় আমি দেরি করে পৌঁছই, কিন্তু কেউ টের পায়নি কী ঘটেছে। পরদিন জানতে পারি ছেলেটা মারা গেছে।’

মুসা নিথর দাঁড়িয়ে, ওঁর মুখের দিকে চেয়ে–নির্বাক।

‘তারপর থেকে যখনই বেসবল খেলতে নেমেছি ছেলেটাকে দেখতে পেয়েছি,’ কথার খেই ধরলেন সিম্পসন। ‘ভেবেছিলাম- সব আমার কল্পনা। মেজরে খেলতে যাব বলে মানসিক চাপ থেকে তৈরি, টুইন্সের পক্ষে ডাক পাবার পর ভেবেছিলাম ব্যাপারটা কেটে যাবে, কিন্তু প্রথম খেলার পর ও আমার জন্যে লকার রূমে অপেক্ষা করছিল। আমি সহ্য করতে পারিনি। শেষমেশ খেলাই ছেড়ে দিই।

ওরা দু’জন নীরব রইল মুহূর্তখানেক। মুসা লক্ষ করল অন্যরা ওদেরকে দেখছে।

‘ব্যাপারটা শেষ হয়ে গেছে,’ বলল মুসা। ‘বিল ফাস্টের আত্মা এখন শান্তি পাবে। ও ওর হোম-রান পেয়েছে। আমরা দু’জনের কেউই মনে হয় না ওকে আর দেখব।’

সিম্পসন মাঠের ওপারে, বলপার্কের পিছন দিকে চেয়ে মাথা ঝাঁকালেন।

‘আজ এখানে এসে খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ,’ বললেন তিনি। হাত বাড়িয়ে দিলেন মুসার উদ্দেশে। মুসা ওঁর হাতটা ঝাঁকিয়ে দিল।

মুসা তাঁকে মিশেল ও অন্যদের কাছে হেঁটে যেতে দেখল। মিনিটখানেক বাদে ট্রাকে উঠে রওনা হয়ে গেলেন তিনি।

.

এরপর আর কেউ বিল ফাস্টের ভূতকে দেখেনি। যদিও এখনও হ্যালোইন, ক্যাম্প-আউট, অন্ধকার বেডরূম আর নানান পার্টিতে ওর গল্প বলা হয়। শহরে সব কিছু এখন আবার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তিন গোয়েন্দা একটা জিনিস শুধু মনে করিয়ে দেয়, এ ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল। সেটি হচ্ছে, মিশেল’স বেসবল কার্ডস-এর কাঁচের কেসে বিশেষ একজনের স্বাক্ষর করা একটি বেসবল।

***