আসল-নকল – ৮

আট

পাওয়ার রূমের সিঁড়ির গোড়ায়, নিজের সবচাইতে বিশ্বস্ত এক দল সন্ন্যাসীকে জড় করেছেন গ্রেবা। দলটির মধ্যে অনেক ডিয়ন প্রহরীও রয়েছে, ডিয়ন প্রিস্টহুডের মিলিটারি আর্মি। গ্রেবা তাদের সঙ্গে অনুচ্চ, জরুরি কণ্ঠে কথা বলছেন।

‘আমি রাগ নিয়ে কথা বলছি না, বিশ্বাসীরা, যদিও আমাদের রাগ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা সঠিক বিচার করব, প্রাচীন রীতি অনুযায়ী। প্রহরীরা, আমার সাথে আসুন। অন্যরা গিয়ে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হোন। কিন্তু আমার নির্দেশ ছাড়া কেউ কিছু করবেন না!’

ডিয়নরা নিঃশব্দে চলে গেল।

.

কিশোর ওর গ্যাটাক গ্রেপ্তারকারীদের বনভূমির গভীরতম অংশে নিয়ে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো, এবং সবার পোশাকের অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে।

‘আর কতক্ষণ, জেনারেল?’ গজগজ করে বলল পটোম্যাক। ‘আমার জ্যাকেটটা একবার দেখুন।’ ক্ষুরধার কাঁটার আঘাতে চিরে ফালা-ফালা হয়ে গেছে ওর জ্যাকেট-পটোম্যাকের শরীরও কেটে- কুটে গেছে, যদিও সে ব্যাপারে ওর কোন উদ্বেগ নেই।

‘চুপ করো,’ গর্জে উঠল গ্যাগারিন। ‘চেপে ধরল কিশোরের কাঁধ। ‘আর কত দূর?’

‘জানি না,’ সরল গলায় বলল কিশোর। ‘ঘড়ির উল্টোদিকে ঘোরে এমন গ্রহে দিক ঠিক করা কঠিন কাজ। আমি শিয়োর ওটা এদিকে-নাকি ওদিকে?’

পায়ের পাতায় ভর দিয়ে দাঁড়াল কিশোর, চারধারে চোখ বুলাল। হঠাৎই দূরে এক গুচ্ছ অতি পরিচিত বেল ফুল দেখতে পেল ও। গ্যাগারিনের দিকে চেয়ে উদ্ভাসিত হাসি হাসল।

‘হ্যাঁ, এদিকে। কোন সন্দেহ নেই এই পথেই! ফুলগুলো চিনতে পারছি আমি!’ জঙ্গল ভেদ করে পা বাড়াল ও, পিছু নিল ওর আটককারীরা।

.

অদ্ভুত কিছু একটা ঘটনা ঘটছে, ভাবলেন হ্যান্সি। হিরু চাচা আর ইসাসকে পাওয়ার রূমে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি, এবং তাঁদের চারপাশে আলখিল্লাধারী নীরব ডিয়নরা ওঁৎ পেতে আছে। তাঁদের দেখামাত্র ছায়ার আড়াল নিচ্ছে, সাঁত করে সরে যাচ্ছে। গ্রেবার মতলবটা কী? আর ক্যারিই বা কোথায়?

ছোট্ট দলটা পাওয়ার রূমের উদ্দেশে চলেছে, এক ওয়কওয়ে ধরে শশব্যস্তে হেঁটে এলেন গ্রেবা, তাঁকে অনুসরণ করছে বেশ ক’জন সশস্ত্র ডিয়ন গার্ড। অপরদিক দিয়ে আরও কয়েকজন সন্ন্যাসিনী উদয় হলো।

‘আমার সাথে এসো, আদেশ করলেন গ্রেবা। ওদেরকে পিছনে নিয়ে পাওয়ার রূমের দিকে এগোলেন।

.

মশালের আলোয় আলোকিত পাওয়ার রূমে দাঁড়িয়ে হিরু চাচা, ডোডেকাহেড্রন যেখানে ছিল সেদিকে চেয়ে রয়েছে।

মাথা চুলকাল সে।

‘জিনিসটা নিশ্চয়ই সলিড ছিল…’

‘আমাদের চিরকালই ধারণা ছিল জিনিসটা ভারী,’ সায় জানালেন হ্যান্সি।

‘ভারী?’ বলল হিরু চাচা। ‘প্রায় দুশোর মতন আণবিক ওজন, আপনাদের একডজন লোকও জিনিসটাকে বয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।’

‘তা হলে কোথায় ওটা?’

দোরগোড়া থেকে গ্রেবা বলে উঠলেন, ‘ডোডেকাহেড্রন কোথায়, এ নিয়ে কোন প্রশ্নের সুযোগ নেই। দেবতা ওটাকে ফিরিয়ে নিয়েছেন।’

সশস্ত্র ডিয়নরা পাওয়ার রূমে বানের স্রোতের মতন ঢুকে পড়ল, এবং হিরু চাচাকে পাহারা দেয়া এডেনের গার্ডরা ত্বরিত নিরস্ত্র হয়ে গেল।

‘এসব কী, গ্রেবা?’ কঠোর কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন ইসাস।

‘আমরা কমাণ্ড নিয়ে নিচ্ছি,’ বিজয়ীর সুরে বললেন গ্রেবা। ‘দেবতাকে শান্ত করতে সব অবিশ্বাসকে মাটির ওপরে নির্বাসনে পাঠানো হবে।’

‘কিন্তু ওখানে কেউ বাঁচবে না,’ প্রতিবাদ করলেন ইসাস। ‘চারা গাছগুলো…’

‘এদের নিয়ে যাও,’ আদেশ করলেন গ্রেবা, এবং ডিয়ন সন্ন্যাসীরা হ্যান্সি আর ইসাসকে পাকড়াও করল।

‘গ্রেবা, না,’ মিনতি করলেন ইসাস। ‘আপনার এখনও আমার সাহায্য প্রয়োজন। আপনি জানেন আমি সারাজীবন দেবতাকে বিশ্বাস করে এসেছি।

‘বিশ্বাস কাজে প্রমাণ করার ব্যাপার, কথায় নয়,’ গার্ডদের উদ্দেশে হাত দোলাতেই তারা ইসাসকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল।

‘উনি বুড়ো মানুষ, গ্রেবা,’ চেঁচিয়ে উঠলেন হ্যান্সি। ‘চারা গাছগুলো ওঁকে খুন করে ফেলবে।’

তাঁর আপত্তি উপেক্ষিত হলো এবং তাঁকেও জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো।

‘চারা গাছগুলো কতটা ভয়ঙ্কর?’ উদ্বিগ্ন হিরু চাচা জিজ্ঞেস করল।

‘বেশিরভাগই বিপজ্জনক,’ সন্তোষ ফুটল গ্রেবার কণ্ঠে। ‘কিছু কিছু প্রাণঘাতী।’

‘সত্যিই? আমার তা হলে এখুনি চলে যাওয়া উচিত। আমার ভাতিজাকে উপরে রেখে এসেছি।’ হিরু চাচা দরজার দিকে এগোল, কিন্তু ডিয়নরা পথরোধ করল।

‘আপনারা বলেছিলেন সব অবিশ্বাসীরা মাটির ওপরে যাবে!’

‘আপনি না, আপনি এখানে থাকবেন এবং আমাদের ডোডেকাহেড্রন ফিরিয়ে দেবেন।’

‘আপনাদেরকে সাহায্য করতে পারলে খুশি হতাম…’

‘আপনি আমাদের সাহায্য করবেন, ডক্টর।’

প্রহরীরা কাছিয়ে এল।

.

কিশোর অবশেষে গ্যাযটাকদের পছন্দসই জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছে-সেই ফাঁকা জায়গাটায়, যেখানে ঘণ্টাসদৃশ ফুলগুলো ওকে খানিক আগে আক্রমণ করেছিল।

‘এখানে এক মিনিট দাঁড়ান,’ বলল ও। ‘আমরা পৌঁছে গেছি প্রায়, জায়গাটা চিনতে পেরেছি।’

পটোম্যাক তখনও গজগজ করছে।

‘আমরা ডিলাকের জন্যে অপেক্ষা করব বলেছিলাম।’

‘চিন্তা কোরো না, ও ঠিক পৌছে যাবে,’ দায়সারাভাবে বলল গ্যাগারিন।

‘এখানে সত্যিই স্পেসশিপ আছে কিনা কে জানে।’

‘ও মিথ্যে বললে মরবে,’ বলল গ্যাগারিন। ব্লাস্টার দিয়ে গুঁতো দিল কিশোরের পাঁজরে।

কিশোর লাফিয়ে পিছু হটল।

‘ও কাজ করবেন না!’ চারপাশে চোখ বুলাল। ‘আমি এখানকার খুব কাছেই ল্যাণ্ড করেছিলাম!’ সাদা এক লতার উপর জোরে পা দাবিয়ে গ্যাগারিনকে ঠেলে ওটার উপরে তুলে দিল। মুহূর্তে লতাটা সাপের মতন ছোবল তুলে গ্যাগারিনকে পেঁচিয়ে ধরল। লোকটা রাগে গর্জে উঠে, ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগল।

পটোম্যাক ওকে সাহায্য করতে গেল, এবং মুহূর্তে জড়িয়ে পড়ল, একটা লতা ঝট করে লাফিয়ে উঠে পাক খেল ওর শরীর ঘিরে। শীঘ্রি সব ক’জন গ্যাটাক আক্রমণাত্মক লতাগুলোর পাল্লায় পড়ে রীতিমত যুঝতে লাগল।

ওদিকে, কিশোর শহর লক্ষ্য করে খরগোশের মত ছুটছে।

কেটে, চিরে, ব্লাস্টার ব্যবহার করে নিজেদের মুক্ত করে গ্যাগারিন, পটোম্যাক এবং বেশিরভাগ গ্যাটাক-দু’একজন পারেনি-হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে কিশোরকে অনুসরণ করল।

.

কিশোর সিটি গেটের দিকে কাছিয়ে যেতেই, লাউডস্পিকারের কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হতে শুনল।

‘সিটি এক্সিট বন্ধ করুন। সিটি এক্সিট বন্ধ করুন!’

কিশোর দৌড়ের গতি বাড়াল। পিছনে পড়ে রইল ভারী শরীরের গ্যাটাকরা। গেটের কাছে পৌঁছে গেছে, এসময় ধাতব কোন কিছুর গায়ে হোঁচট খেল, লম্বা ঘাসের বুকে আধো লুকানো অবস্থায় রয়েছে।

‘রোকু!’

দুর্বলভাবে লেজ নাড়ল রোকু।

‘মাস্টার?’

কিশোর অনুভব করল ওর ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে এসেছে। পিছন ফিরে চাইল, বনভূমি দুমড়ে-মুচড়ে অনুসরণরত গ্যাটাকদের পায়ের শব্দ শুনতে পেল।

‘আয়, রোকু, আমি তোকে এখানে ফেলি যেতে পারি না।’ রোকুকে বাহুতে তুলে নিয়ে টলতে-টলতে গেটের দিকে এগোল ও, ধীরে-ধীরে গেটের পাল্লাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শেষবারের মরিয়া চেষ্টায় ফাঁক গলে ভিতরে সেঁধিয়ে পড়ল কিশোর। গ্যাটাকদের প্রথম জন টলমল পায়ে যখন এসে পৌঁছল, বাইরের দরজাগুলো হড়কে লেগে গেল।

কিশোরের দুর্ভাগ্য, ভিতরের দরজাগুলোও বন্ধ হয়ে গেল—মাঝখানের সংকীর্ণ জায়গাটিতে রোকুকে নিয়ে আটকা পড়ল ও।

.

দস্তুরমত হাঁফাচ্ছে, গ্যাগারিন আর পটোম্যাক কটমট করে চেয়ে রইল বন্ধ দরজাগুলোর দিকে।

‘কী করবেন?’ বিমর্ষ কণ্ঠে জানতে চাইল পটোম্যাক।

গ্যাগারিনের মিলিটারিসুলভ অহঙ্কারে ঘা লেগেছে।

‘আক্রমণ করো! আমরা ভিতরে যাব!’ ব্লাস্টার টেনে বের করে দরজায় আগুন ওগরাল।

কিছুই ঘটল না।

নিজের দু’জন লোককে হাতছানি দিয়ে ডাকল গ্যাগারিন।

‘তোমরা দু’জন গাছটা কেটে ফেলো!’

.

‘আপনি এখন বেরোতে পারবেন না,’ বলল ক্যারি। ‘ওরা এক্সিট বন্ধ করে দিয়েছে।’

আপার লেভেলে ওঠার সময় ঘোষণাটা শুনেছে ওরা।

‘সেক্ষেত্রে আমাদের প্ল্যান বদলাতে হবে,’ বলল ডিলাক। ‘পরের লেভেলে নিশ্চয়ই কোন ভেণ্টিলেশন শ্যাফট থাকবে।’

‘তাতে কোন লাভ হবে না। হিট প্রিজার্ভ করার জন্যে আমরা সব শ্যাফট বন্ধ করে দিয়েছি।’

‘তুমি মিথ্যা বলছ।’

‘আপনি ফাঁদে পড়েছেন,’ বলল ক্যারি। ‘আমরা সবাই ফাঁদে পড়েছি, গ্রেবা এখন ক্ষমতায়।’

‘আমরা মেইন এন্ট্রান্সের দিকে যাব। কেউ আমাকে ঠেকাতে পারবে না!’

ওর মাথার ভিতরে কেউ একজন বলে উঠল, ‘আপনি শিয়োর?’

‘পৃথিবীবাসী?’ হিসিয়ে উঠল ডিলাক। ‘আবার?’

আটপৌরে মানুষ হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীবাসী, অর্থাৎ গ্রেগ চ্যাপেলের অসম্ভব শক্তি-সাহস রয়েছে। তাঁকে ঘিরে কী ঘটছে জানেন না তিনি। তবে এটা জানেন তাঁর দেহ আর আত্মা কোন ভিনগ্রহী শক্তি দখল করে নিয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য লড়ছেন তিনি-এবং ডিলাককে পরাজয়ের প্রান্তে নিয়ে এসেছেন।

বিস্মিত, আতঙ্কিত ক্যারি ভিতরের ভয়ঙ্কর যুদ্ধটা লক্ষ করল।

সবুজ রং ফিরল ডিলাকের চামড়ায়, এবং ফের উদয় হলো ক্যাকটাসের কাঁটা।

‘কোন লাভ হবে না,’ খেঁকিয়ে উঠল ডিলাক। লড়াইটা চলছে। ‘যেতে দাও, আর্থলিং, যেতে দাও। তুমি পালাতে পারবে না। খুন হয়ে যাবে।’

‘হলে হব। এরচেয়ে খারাপ আর কোন কিছুই হতে পারে না,’ ভুতুড়ে কণ্ঠটা বলল।

‘কী? একই সঙ্গে নায়ক আর ভাঁড়? তুমি ভয়ঙ্কর এক সৃষ্টি, আর্থলিং।’

ডিলাকের গোটা অবয়ব ম্লান হয়ে এল, এবং হতচকিত ক্যারি নতুন একজনের অবয়ব দেখতে পেল-গ্রেগ, যদিও ক্যারি জানে না-বিশাল এক গাছের আকৃতির উপর আরোপিত…

প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি খাটিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করল ডিলাক। গ্রেগের আকৃতি ঝাপসা হয়ে এল, সবুজ আর ক্যাকটাস সদৃশ হয়ে গেল, এবং শেষমেশ হিরু চাচার রূপ ধরল, আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক, সবুজ রং আর ক্যাকটাসের কাঁটা মিলিয়ে গেছে।

যুঝতে-যুঝতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ডিলাক, গভীর শ্বাস টানল, এবং আবিষ্কার করল ও এক পাওয়ার টুলের মুখোমুখি। ক্যারির ওয়র্ক-বেল্ট থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে ওটা। জিনিসটা একটা লেসার-কাটার, শীট মেটাল কাটার জন্য তৈরি-কিন্তু সামনে থেকে ওটা মারাত্মক এক অস্ত্র।

‘আপনি যে-ই হোন, কিংবা যা-ই হোন,’ দৃঢ়কণ্ঠে বলল ক্যারি। ‘আপনি আমার সাথে আসছেন।’

.

চারজন দশাসই গ্যাটাক সিটি ডোরের দিকে টলমল পায়ে এগোচ্ছে, চোখা, বিশাল এক গাছের গুঁড়ি বইছে তারা।

পটোম্যাক চেঁচাল, ‘কাম অন, ল্যাডস!’

স্লাইডিং দরজার সংযোগস্থলে গুঁড়িটা দিয়ে আঘাত করল ওরা, এবং দরজাটা সামান্য নড়ে উঠল।

‘আবার,’ চেঁচাল গ্যাগারিন। ‘আবার!’

গ্যাটাকরা আক্রমণে ফিরল।

.

ভিতরের দরজার পিছনে, কিশোর যেটার পিছনে আটকা পড়েছে, একদল সিটি গার্ড তীব্র আতঙ্ক নিয়ে গাছের গুঁড়ির আঘাতের শব্দ শুনছে।

সিনিয়র গার্ড আদেশ করল, ‘পজিশন নাও, ফায়ারের জন্যে প্রস্তুত হও!’

গার্ডরা ইনার ডোরের উদ্দেশে তাদের ব্লাস্টার তাক করল।

.

গাছের গুঁড়ির চোখা দিকটা বাইরের দরজা ভেদ করে ঢুকে গেছে, লাফিয়ে পিছে সরে না গেলে কিশোরকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিত।

গুঁড়িটা পিছনে টেনে নেয়া হলো, এবার আবারও জোরে ধাক্কা দেয়া হলো। আবার টেনে নেয়া হলো। কিশোর বুঝতে পারল পরের আঘাতেই বাইরের দরজা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।

গুঁড়িটা আবারও সামনে আছড়ে পড়ল। ঠিক এসময়, কিশোরের পিছনে ভিতরের দরজা হড়কে খুলে গেল, দেখা গেল একসার এডেন গার্ড ব্লাস্টার তাক করে রেখেছে।

কিশোর ঝাঁপিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়তেই ব্লাস্টার ফায়ার ওর মাথার উপর দিয়ে চলে গেল।

‘রাস্তা পরিষ্কার করো!’ সিনিয়র গার্ড চেঁচিয়ে উঠল। ‘ওকে সরাও!’

কিশোর রোকুকে আঁকড়ে ধরল, ওদিকে গার্ডরা ওর পা চেপে ধরে দু’জনকেই শহরের ভিতরে টেনে নিয়ে গেল।

কিশোর রোকুকে লাইন অভ ফায়ার থেকে সরিয়ে দিয়ে এক চোর-কুঠরির ভিতর গুঁজে দিল, জায়গাটা দরজার ঠিক পাশে।

‘এখানে থাক, রোকু, দেখি তোকে রিচার্জ করা যায় কিনা।’

শেষবারের জোর আঘাতে দরজা ভেঙে পড়ল, এবং বিজয়ী গ্যাটাকরা ভিতরে প্রবেশ করল-ওদেরকে অভিবাদন জানাল এডেন গার্ডদের ব্লাস্টার-ফায়ার।

‘সাহায্য নিয়ে এসো,’ চেঁচাল সিনিয়র গার্ড। সিটি গার্ড, ডিয়ন, যাকে পাও। বলো শহরে হামলা হয়েছে!

গার্ডদের একজন ঘুরেই সবেগে ছুটল।

বাদবাকি গার্ডরা পজিশন নিয়ে হামলাকারীদের সঙ্গে লড়তে প্রস্তুত হলো। গ্যাযটাকবাহিনীর চাইতে সংখ্যায় কম তারা।

.

গেট থেকে চলে-যাওয়া ওয়কওয়ে ধরে খরগোশের মতন দৌড়চ্ছে কিশোর। এসময় ওর মনে হলো হিরু চাচাকে ওর দিকে শশব্যস্তে এগিয়ে আসতে দেখল-এক মেয়ে রয়েছে সঙ্গে। একটা অস্ত্র তাক করে রেখেছে হিরু চাচার উদ্দেশে।

এক চোর-কুঠরির ভিতরে শরীর মিশিয়ে দিল কিশোর, হিরু চাচাকে পেরোতে দিল, এবং পরমুহূর্তেই তার গ্রেপ্তারকারীর উপর পিছন থেকে লাফিয়ে পড়ল।

পিছনে ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে ডিলাক ঘুরে দাঁড়াল, এবং দেখতে পেল কিশোর আর ক্যারি লেসার-কাটারটার দখল নিতে প্রচণ্ড লড়াই করছে। কী ঘটেছে আন্দাজ করে নিয়ে শান্ত পায়ে ভাঙাচোরা গেটের দিকে পা চালাল সে।

ও যখন পৌছল, যুদ্ধ তখন গ্যাটাকদের দিকে ঢলে পড়েছে। শহরের বেশিরভাগ গার্ড গুলি খেয়ে ভূমিশয্যা নিয়েছে এবং যারা বেঁচে গেছে তারা শহরের ভিতরে রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। গ্যাটাকরা মৃতদের লুট করার কাজে ব্যস্ত।

ডিলাক শান্ত পদক্ষেপে ওদের পাশ কাটিয়ে জঙ্গলের দিকে এগোল। ঠিক বাইরেই গ্যাগারিন আর পটোম্যাক আক্রমণের নির্দেশ দিচ্ছে। তারা ডিলাককে বুনো আনন্দে স্বাগত জানাল। হাসছে, চেঁচাচ্ছে।

কী ঘটছে দেখতে পেয়েছে কিশোর, সে ডাক দিল, হিরু চাচা, কী করছ তুমি?’

ক্যারি রীতিমত কসরত করে উঠে দাঁড়াল।

‘ওটা হিরন পাশা নয়!’

কিশোর ওর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল।

‘কী?’

‘আমার সাথে এসো,’ ক্লান্ত কণ্ঠে বলল ক্যারি। ‘বুঝিয়ে বলব।’ কিশোরকে পিছনে নিয়ে চলে গেল।

গেটের কাছ থেকে ওরা সরে যাচ্ছে, দেখতে পেল ডিয়ন আর সিটি গার্ডরা একত্র হয়ে বেশ শক্তিশালী একটা দল গঠন করেছে, তারা ধেয়ে আসছে রণক্ষেত্রের দিকে। রিইনফোর্সমেন্ট এসে গেছে।

.

শহরের বাইরে জঙ্গলে, ডিলাক মৃদু হেসে বলল, ‘কী খবর আপনাদের?’

পটোম্যাক বলল, ‘উনি একটা রত্ন। আমাদেরকে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। আমরা তার বদলে সিটি গেট আক্রমণ করেছি, আর এক ঘণ্টা পর ঠিক বেরিয়ে এসেছেন তিনি!’

‘চুপ করো,’ খেঁকিয়ে উঠল গ্যাগারিন। ধূর্ত, অভিজ্ঞ চোখে যুদ্ধটা দেখছে সে। গেটের কাছ থেকে আসা ব্লাস্টারের শব্দ এমুহূর্তে ভারী আর নিয়মিত। ‘ওরা রিইনফোর্সমেন্ট নিয়ে এসেছে। এখন পিছানোর পালা। পটোম্যাক, রিয়ারগার্ড অর্গানাইয করো। ওদেরকে বলো যে কোন মূল্যে শত্রুদের ঠেকিয়ে রাখতে হবে। এতে আমরা পালানোর সুযোগ পাব!’

ডিলাকের দিকে ঘুরে দাঁড়াল গ্যাগারিন।

‘কী ব্যাপার বলুন তো? মনে হচ্ছে পুরো বিপর্যয় ঘটে গেছে। ওরা আক্রমণ ঠেকিয়ে দিল, ডোডেকাহেড্রনও নেই।’

‘আপনাকে দেখাচ্ছি, জেনারেল,’ বলল ডিলাক।

‘ডোডেকাহেড্রন?’ ব্যঙ্গ ঝরল গ্যাগারিনের কণ্ঠে।

‘হ্যাঁ!’ হাত বাড়িয়ে দেখাল ডিলাক, ক্যারিকে ক্যারিকে যেমনটা দেখিয়েছিল।

ওর হাতের তালুতে ডোডেকাহেড্রন, রি-ডাইমেনশনারের মাধ্যমে ছোট হয়ে পাঁচ সেন্টিমিটারে পরিণত হয়েছে।

পটোম্যাক নির্দেশ দিয়ে ফিরে এসেছে। এখন ডিলাকের দিকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে রয়েছে।

‘কাজটা করলেন কীভাবে?’

‘আমাকে ছাড়া কখনওই পারত না,’ গোমড়া কণ্ঠে বলল গ্যাগারিন।

হেসে উঠল ডিলাক।

‘আপনাদেরকে আমি আশ্বস্ত করছি, এই সবে শুরু!’