অদ্বৈতপ্রকাশ – ৮

অষ্টম অধ্যায়

জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় সীতানাথ।
জয় নিত্যানন্দরাজ ভক্তগণ সাথ।।
এক দিন শ্রীঅদ্বৈত ভক্তবৃন্দ লঞা।
গঙ্গাস্নান করি করে নিয়মিত ক্রিয়া।।
হেনকালে নৌকাযোগে নৃসিংহ ভাদুড়ী।
সেই ঘাটে আইলা দুই কন্যা সঙ্গে করি।।
নৌকা মধ্যে ছিলা সীতা সতী রূপবতী।
প্রভুর সৌন্দর্য্য দেখি হঞা হৃষ্টমতি।।
মনে ভাবে ঐছে রূপ জীবে না হয় স্ফুৰ্ত্তি।।
জাম্বুনদ স্বর্ণকাস্তি জিনিয়া শ্ৰীমূৰ্ত্তি।
আজানুলম্বিত বাহুর অগ্রে পদ্মাকার।
অঙ্গুলি বিরাজে চম্পক কলিকা আকার।।
সুকমল সম শ্রীচরণ সুকোমল।
দেখি মোর ফুল্ল হৈল হৃদয় কমল।।
এই মহাপুরুষে সঁপিনু দেহ প্রাণ।
ইহারে না পাঙ যদি ছাড়িমু পরাণ।।
এত ভাবি নিক্ষেপিয়া নয়ন-চকোর।
পান কৈলা প্রভুর শ্রীমুখচন্দ্রকর।।
সীতার প্রকাশ রূপা শ্রীশ্রীঠাকুরাণী।
রূপে লক্ষ্মীসমা সাধ্বী সীতার ভগিনী।।
প্রভুর রূপ দেখি তিঁহো আনন্দ অন্তরে।
কহে দিদি রূপের হাট দেখ গঙ্গাতীরে।।
যৈছে কোটি পূর্ণচন্দ্র ধরি স্বর্ণ বর্ণ।
একত্রে ভূতলে আসি হৈলা অবতীর্ণ।।
অঙ্গের সদ্‌গন্ধ কিবা অলৌকিক হয়।
কোটি প্রফুল্লিত পদ্মগন্ধে কৈলা জয়।।
অতুল্য উজ্জ্বল সুশ্রী বদন মন্ডল।
দৃষ্টিমাত্র মন প্রাণ করয়ে শীতল।।
এ হেন পুরুষ যেই নারীর হয় পতি।
ধন্য তার নারীজন্ম সেই ভাগ্যবতী।।
তবে শ্রীমান্ নৃসিংহ ভাদুড়ী দ্বিজমণি।
প্রভুরে দেখিয়া আপনারে ধন্য মানি।।
যথাবিধি কৈলা তাঁরে দৈন্য সম্ভাষণ।
দ্বিজ দেখি প্ৰভু কহে নমো নারায়ণ।।
মৃদুভাবে শ্রীঅদ্বৈত পুছে পরিচয়।
ভাদুড়ী বরেণ্য কহে করিয়া বিনয়।।
নারায়ণপুর গ্রামে মোহর বসতি।
ভাদুড়ী উপাধি মোর শ্রীনৃসিংহ খ্যাতি।।
লোকমুখে শুনি তুয়া অলৌকিক গুণে।
হেথা আইনু তব সিদ্ধ মূৰ্ত্তি দরশনে।।
বহু দিনের সাধ ছিল তোহারে দেখিতে।
আজি বাঞ্ছা পূর্ণ হৈল অনেক ভাগ্যেতে।।
প্রভু কহে মুঞি দীন কি মোর শকতি।
ধন্য কর মোর গৃহে করিয়া অতিথি।।
শ্রীনৃসিংহ কহে তুহুঁ সাক্ষাৎ সদাশিব।
তুয়া আজ্ঞা লঙ্ঘিতে পারয়ে কোন্ জীব।।
এক কহি ভাদুড়ী দুই কন্যা সঙ্গে করি।
আনন্দিত মনে গেলা অদ্বৈতের বাড়ী।।
প্রভু তানে যথা বিধি সৎকার করিলা।
ভাগ্যে প্রভুর চতুর্ভূজ ভাদুড়ী দেখিলা।।
মনে ভাবে আজি মোর জনম সফল।
আজি মোর উপজিল কোটি পুণ্যের ফল।।
যা শুনিয়াছিনু তাহা দেখিনু প্ৰত্যক্ষ।
কন্যার উপযুক্ত পাত্র এই হয় লক্ষ।।
যৈছে দুই জতু জ্বালে হয় এক কায়।
তৈছে মিথুনের মনে হৈল প্রেমোদয়।।
সংপূর্ণ সুসিদ্ধ হয় মন অভিলাষ।
যদি হরি করে মোরে দয়া পরকাশ।।
তবে সৰ্ব্ব অন্তর্বাসী শ্ৰীঅদ্বৈত চন্দ্ৰ।
দিব্য শক্তি দ্বারে স্বয়ং হইলা রাজেন্দ্র।
অট্টালিকাময় হৈল অদ্বৈতের বাড়ী।
নানা পুষ্প সুশোভিতা যৈছে ইন্দ্রপুরী।।
শান্তিপুর ধাম দিব্য সদ্‌গন্ধে মোহিলা।
রত্নসিংহাসনে প্রভু অদ্বৈত বসিলা।।
জাম্বুনদ হেম নিন্দি প্রভুর কলেবর।
বহু চন্দ্রকান্তি জিনি রূপ মনোহর।।
শিরে মাণিক মুকুট করেতে কেয়ূর।
কর্ণেতে কুণ্ডল শোভে শ্রীপদে নূপুর।।
শুক্ল পট্টাম্বর দুই পরিধানোত্তরী।
অঙ্গে বিলেপন আগর চন্দনকস্তুরী।।
শুক্ল মাল্যে কন্ঠ বক্ষঃ অপূৰ্ব্ব শোভিলা।
চতুৰ্দ্দিগে দাস দাসীগণ দাণ্ডাইলা।।
পাত্র মিত্রগণ প্রভুর নিকটে বসিলা।
শ্রীযদুনন্দনাচাৰ্য্য মুচ্ছুদ্দি হইলা।।
মুনসি হইলা ভেল পন্ডিত কৃষ্ণদাস।
মন্ত্রী পদে রহিলা শ্রীব্রহ্মহরিদাস।।
মধ্যস্থ ঘটক শ্ৰীমান্ শ্যামদাসাচাৰ্য্য।
যাহার কৌশলে এই বিবাহ হৈল ধাৰ্য্য।।
সভা দেখি শ্রীনৃসিংহ বিস্ময় মানিলা।
হেনকালে শ্রীবাস পন্ডিত তাঁহা আইলা।।
নারদাবতার গৌরলীলায় সহায়।
অন্তর্যামী শক্তি যাঁর কৃষ্ণের কৃপায়।।
দ্বিজ শুদ্ধভক্তিদাতা সদা কৃষ্ণাবেশ।
নবদ্বীপে আবির্ভাব দয়ালু বিশেষ।।
সদা হরি বিনু মুখে নাঞি অন্য বোল।
প্রভু তানে দেখি ঝাট উঠি দিলা কোল।।
শ্রীবাস প্রভুরে করি যুক্ত সম্ভাষণ।
সভাতে বসিয়া কহে শুন সৰ্ব্বজন।।
এই শ্রীঅদ্বৈত হরি অভিন্নাঙ্গ হয়।
জীব নিস্তারিত হৈলা ধরাতে উদয়।।
ইহার মহিমা মুঞি ক্ষুদ্ৰ কিবা জানি।
কিঞ্চিৎ মহত্ব জানে স্বয়ং পদ্মযোনি।।
এই যে শ্রীনৃসিংহ ভাদুড়ী মহোদয়।
ক্ষীরোদ হিমালয় মিলি হইলা উদয়।।
সাধু সত্যবাদী ইহ সাত্ত্বিকাগ্রগণ্য।
ধর্ম্মশাস্ত্রে বিশারদ কুলীনের মান্য।।
সীতানামে কন্যা ইহার পৌর্ণমাসী সেই।
ব্রজে কৃষ্ণলীলা ঘটায় যোগমায়া যেই।।
অযোনিসম্ভবা সীতা নাহি জানে লোকে।
নৃসিংহ পাইলা বহু পূণ্যফল পাকে।।
সংক্ষেপেতে কহি সীতা দেবীর প্রকাশ।
যাহার শ্রবণে সর্ব্ব পাপ হয় নাশ।।
নারায়ণপুরে বাস নৃসিংহ ভাদুড়ী।
কুলীন ব্রাহ্মণ সদা পর উপকারী।।
প্রত্যহ করয়ে নারায়ণ দেববর্চ্চন।
স্বয়ং করে শ্রীতুলসী কুসুম চয়ন।।
সেই গ্রামের সন্নিধানে এক দেবখাতে।
বহুতর পদ্মপুষ্প বিকশিল তাকে।।
সন্ধে আমোদ হৈল নগরাভ্যন্তরে।
ঘ্রাণ পাঞা শ্রীনৃসিংহ আনন্দ অন্তরে।।
ভাবে এই সুরভি বায়ু বিল হইতে আইল।
অনুমানি বহুপদ্ম বিলেতে ফুটিল।।
পদ্মপুষ্পে যেই করে নারায়ণার্চ্চন।
দেহান্তে সেই করয়ে শ্রীবৈকুন্ঠে গমন।।
তবে শুদ্ধাচারী শ্রীনৃসিংহ যাঞা বিলে।
বাছিয়া বাছিয়া বহু পদ্মপুষ্প তোলে।।
তুলিতেই দেখে এক শতদল পদ্ম।
পদ্ম মধ্যে কন্যা এক পদ্ম তাঁর সদ্ম।।
অঙ্গুষ্ঠ প্রমাণ কন্যা রূপে সৌদামিনী।
রাধামাধবের নিত্যলীলা সহায়িনী।।
কন্যা দেখি ভাবে ইঁহো বুঝি শ্ৰীকমলা।
অঙ্গকান্তি সূৰ্য্য প্রভা হৈতে সমুজ্জ্বলা।।
চতুর্ভূজা পদ্মগণ শ্রীঅঙ্গে শোভয়।
চন্দ্ৰগণ হইয়াছে নখেতে উদয়।।
এ হেন অপূর্ব্ব রূপ কভু দেখি নাই।
পদ্ম সহ কন্যা রত্ন লঞা গৃহে যাই।।
তবে সেই মহৎ পদ্ম করি উত্তোলন।
ক্রোড়ে করি বেগে ঘরে করিলা গমন।।
ঈশ্বরেচ্ছায় সেই দিন নৃসিংহ মহিলা।
শ্রীরূপা শ্রীনাম্মি এক কন্যা প্রসবিলা।।
সূতি গৃহে ভার্য্যারে ভাদুড়ী হৃষ্ট মনে।
পদ্ম মধ্যে কন্যা দেখাইলা সংগোপনে।।
নৃসিংহ মহিলার নাম নারসিংহী হয়।
সাধ্বী পূণ্যবতী লক্ষী মেনকা নিশ্চয়।।
অপরূপ কন্যা দেখি বিস্ময় মানিলা।
নৃসিংহে মধুর বাক্যে কহিতে লাগিলা।।
অহে প্রভু এই কন্যা অঙ্গুষ্ঠ প্ৰমাণ।
রূপে করিয়াছে আলো অরুণ সমান।।
মায়া করি আসিয়াছে বুঝি মহামায়া।
কন্যাভাবে রহে যদি তবে জানি দয়া।।
পরস্পর দম্পতি এইরূপে আলাপিতে।
দেবী জাত শিশু সমা হৈলা আচম্বিতে।।
লোকে সুবিখ্যাত হইল যমজ দুহিতা।
দেখিতে আইল কত গ্রামের বণিতা।।
সভে কহে দুই কন্যা লক্ষ্মীর সমান।
সীতা বড় শ্রী কনিষ্ঠ কৈল অনুমান।।
শ্রী সীতার লীলা যত কে বর্ণিতে পারে।
পঞ্চবর্ষে পদব্রজে গেলা গঙ্গা পারে।।
সন্ন্যাসীরে শিখাইলা বিবিধ প্রকারে।
সেই কথা কহিমু সংক্ষেপে সূত্রাকারে।।
একদিন তেজস্বী সন্ন্যাসী এক আইলা।
নৃসিংহ ভাদুড়ী ঘরে অতিথি হইলা।।
বহুতর লোক আইলা সন্ন্যাসী দেখিতে।
শ্রীসহ শ্রীসীতা আইলা সন্ন্যাসী শোধিতে।।
সভে ভক্তিভাবে ন্যাসীবরে প্রণমিল।
সীতা শ্রীরে দেখি সন্ন্যাসীর ভ্রম হৈল।।
অণিমাদি সিদ্ধি তার হৈল অপ্রকাশ।
দোঁহে স্তব করে তেঁহো দত্তে করে বাস।।
সীতা কহে মো দোহারে কাহে স্তুতি কর।
তুমিহ তেজস্বী ন্যাসী বহু শক্তিধর।।
ন্যাসী কহে মা তোয়া পরমা লক্ষ্মী রূপা।
কৈছে মুক্তি পায় কহ বিষ্ণু অনুরূপা।।
তত্ত্ব উঘাড়িয়া মোর ভ্রান্তি কর দূর।
জগতে মহিমা দোঁহায় রহিবে প্রচুর।।
সাক্ষাৎ দয়া রূপা সীতা কহে হাস্য করি।
ভক্তি দেবীর দাসী মুক্তি, ভক্তি সর্ব্বেশ্বরী।।
পঞ্চবিধা মুক্তি যদি পায় কোন জন।
তত্রাপি না পায় নিত্য হরির চরণ।।
মুক্তির স্বভাব মুক্ত্যে দিয়া অভিমান।
সংসারে পাঠায় পুন দিয়া তুচ্ছ জ্ঞান।।
ভক্তিদেবীর অলৌকিক মহিমা অপার।
যারে দয়া করে তার জন্ম নাহি আর।।
ভক্তিদ্বারে শুদ্ধভক্ত পাঞা প্রেমানন্দ।
কৃষ্ণপদ পায় তুচ্ছ হয় ব্রহ্মানন্দ।।
তবে শ্রী হাসিয়া কহে শুন জ্ঞানীবর।
বিষ্ণুর সারূপ্য মুক্তি অতি ঘৃণাকর।।
মধুপান ভাল কিবা লভ্য মধু হৈলে।
কৃষ্ণাপেক্ষা কৃষ্ণ ভক্তের প্রেমানন্দ মিলে।।
হেন মতে দোঁহে ভক্তি-তত্ত্ব প্রকাশিলা।
শুনিয়া সন্ন্যাসী শুদ্ধ বৈষ্ণব হইলা।।
এবে শুন শ্রীসীতার দিব্য এক লীলা।
যাহে পদব্ৰজে দোঁহে গঙ্গাপারে গেলা।
একদিন গঙ্গাপারে হৈল দেবার্চ্চন।
নৃত্য গীত হৈল আর নাম সংকীর্তন।।
বহু লোক মিলি তহি মহোৎসব কৈলা।
দুই কন্যা সঙ্গে লঞা ভাদুড়ী চলিলা।।
গঙ্গাতীরে যাঞা দেখে প্রচন্ড বাতাস।
গঙ্গার তরঙ্গ দেখি হইল তরাস।।
ভৃত্যস্থানে দুই কন্যা রাখি দ্বিজরায়।
গঙ্গাপারে গেলা চড়ি বৃহতী নৌকায়।।
তাহা দেখি শ্রীসীতা শ্রীদিব্য শক্তি দ্বারে।
পদব্রজে দোঁহে উত্তরিলা গঙ্গাপারে।।
দুই কন্যার দিব্য লীলা নৃসিংহ দেখিয়া।
ঝাট কোলে লৈলা দোঁহে অত্যাশ্চার্য্য হঞা।।
শ্রীসীতার চরিত দেখি পাষণ্ড বৰ্ব্বরে।
সগৰ্ব্বেতে পদব্রজে চলে গঙ্গা পারে।।
অগাধ জলেতে যাঞা হাবুডুবু করে।
তাহা দেখি সৰ্ব্বলোকে হাসে উচ্চৈঃস্বরে।।
শ্ৰী সীতা শ্ৰী ঐছে বাল্য লীলা কৈলা কত।
লিখিতে নারিনু মুঞি তার বিন্দুমাত্র।।
শ্রীঅদ্বৈত কহে কিছু অসম্ভব নয়।
কৃষ্ণ-দাসদাসীর অবিচিন্ত্য শক্তি হয়।।
অষ্টসিদ্ধি পায় তারা কটাক্ষ মাত্রেতে।
এক এক ভক্তের শক্তি ব্রহ্মাণ্ড শোধিতে।।
হেন মতে প্রভু-ভক্তের মহত্ত বর্ণিলা।
সদৈন্যে শ্রীবাসাদি প্রভুরে কহিলা।।
তুহুঁ কৃষ্ণ-ভক্ত অবতার চিন্তামণি।
তোঁহে বিরাজিত কৃষ্ণ-ভক্তিতত্ত্ব খনি।।
শ্রীভগবত-তত্ত্ব তুমি মাত্ৰ জান।
তুমিই ঈশ্বর গোপেশ্বর সৰ্ব্ব জান।।
এই সীতাদেবী হয় তবে যোগমায়া।
সীতার এক আত্মা শ্রী ভিন্ন মাত্র কায়া।।
এই দুই কন্যা তুহু কর পরিণয়।
তাহাতে ভাণ্ডার তব হইবে অক্ষয়।।
শ্রীকৃষ্ণ বৈষ্ণব সেবার হৈব অনুকূল।
জীব নিস্তারিতে তুয়া রহিবেক কুল।।
ইঙ্গিতে বিবাহ প্রভুপাদ স্বীকারিলা।
বিধি মতে ভাদুড়ী দুই কন্যা দান কৈলা।।
বিবাহোপলক্ষে রাধা মদনগোপালে।
ভোগ দিলা নানা বিধ মিষ্ট অন্ন ফলে।।
সেই প্রসাদ স্ত্রী পুরুষে বিবৰ্ত্তিয়া দিলা।
মহাপ্রসাদ পাঞা হর্ষে সভে চলি গেলা।।
সীতাঠাকুরাণী আর শ্রীঠাকুরাণী।
দোঁহার প্রণয়ে এক আত্মা করি মানি।।
শ্রীভগবৎ সেবায় আর পতি শুশ্রূষণে।
তাহা দোঁহার গাঢ় নিষ্ঠা বাঢ়ে দিনে দিনে।।
একদিন শ্রীসীতা-মাতার স্বপ্নাবেশে।
পুরীরাজ আসি কহে সুমধুর ভাষে।।
শুন সীতাদেবী মোর নাম মাধবেন্দ্র।
মোর স্থানে মন্ত্র লৈলা শ্রীঅদ্বৈতচন্দ্ৰ।।
যেই নিত্যসিদ্ধ কৃষ্ণমন্ত্র দিনু তারে।
সেই কৃষ্ণাকর্ষী মন্ত্ররাজ দিমু তোরে।।
অদীক্ষিতের পঞ্চঅন্ন কৃষ্ণ নাহি খায়।
স্বেচ্ছাচারে দিলে মহা অপরাধ হয়।।
সীতা কহে বহু ভাগ্যে তোমা পাইনু দেখা।
দেহাত্মা শোধন কর দিয়া মন্ত্রদীক্ষা।।
তবে পুরী সীতারে কৃষ্ণমন্ত্ৰ দিলা।
দেখিতে দেখিতে পুন অন্তহিত হৈলা।।
জাগি সীতামাতা কহে কিবা চমৎকারে।
স্বপ্নাবেশে পুরীরাজ মন্ত্র দিলা মোরে।।
আচার্য্যে করিলা সীতা সর্ব্ব বিবরণ।
তিঁহো কহে ভাগ্যে তুয়া খণ্ডিলা বন্ধন।।
প্রভু সেই মন্ত্র পুনঃবিধি অনুসারে।
শুভক্ষণে সমর্পিলা স্ব ভার্য্যা সীতারে।।
কহিনু নিগূঢ় তত্ত্বের কিঞ্চিৎ আভাস।
দয়া করি মাতা যাহা করিলা প্রকাশ।।
শ্রীচৈতন্য শ্রীঅদ্বৈত পদে যার আশ।
নাগর ঈশান কহে অদ্বৈত-প্ৰকাশ।।

ইতি শ্রীঅদ্বৈত-প্ৰকাশে অষ্টমোহধ্যায়ঃ।