অথচ রবীন্দ্রনাথ

লিখছি টেবিলে ঝুঁকে একটি কবিতা বিকেলের
নিভৃত আভায়, চোখ তুলে
দেখি এক পাখি, হল্‌দে মখমল যেন
ওর শরীরের সবটুকু, শুধু শাদা
লাল; নাম জানি না পাখির।
একটি পঙ্‌ক্তির দু’টি শব্দ বদলের
জন্যে অসমাপ্ত কবিতায় বলপেন ছোঁয়াতেই
পাখি উড়ে যায়, ছেঁটে ফেলি তিন ছত্র।

কিছুক্ষণ কাটাকুটি ক’রে অনিবার্য উপমার ভাবনায়
ডুবে থাকি, হঠাৎ নজরে পড়ে এ কি
দাঁড়ানো রবীন্দ্রনাথ এ ঘরে, ঈষৎ নুয়ে-পড়া
উদ্ভাসিত দুপুরের মতো। খানিক এগিয়ে তিনি
দাঁড়ালেন লেখার টেবিল ঘেঁষে, আমার অপূর্ণ
সৃষ্টি দেখে তাঁর ঠোঁটে ফোটে প্রশ্রয়ের
হাসির ঝলক। আজ পঁচিশে বৈশাখ কিংবা বাইশে শ্রাবণ
নয়, তবু কেন এই আবির্ভাব ছোট ঘরে? ভেবে সারা হই।

কী নির্বোধ আমি! বাংলার ঘরে ঘরে নিত্যদিন
তাঁর আসা-যাওয়া, তিনি সর্বদা আছেন
আমাদের চেতনা প্রবাহে মিশে রঙে আর
গানে গানে, কবিতায়। তাঁর পদস্পর্শ ক’রে কুণ্ঠিত দাঁড়াই
এক পাশে; কখন যে রাত
এসে গেল চুপিসারে, টের
পাইনি এবং অকস্মাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠে
দেখার মতোই দেখি রবীন্দ্রনাথের মেটেরঙ আলখাল্লা
থেকে ঝরে অবিরাম নক্ষত্রের কণা। কিছু কণা
খুব দ্রুত কুড়িয়ে নেওয়ার জন্যে ব্যাকুল বাড়াই দু’টি হাত।

অথচ রবীন্দ্রনাথ ছায়াপথে নিঃসঙ্গ যাচ্ছেন মিশে, যেন
শান্তিনিকেতনে শালবনে।
১.৭.৯৭