বেশ কিছুদিন ধরে আছি রোগশয্যায়
যদি বলি, অস্থিমজ্জায় অজস্র ইঁদুর দাঁত বসিয়ে
ক্রমাগত খসিয়ে নিচ্ছে সারবস্তু, মিথ্যা বলা হবে না।
ঘড়ির কড়া শাসন মেনে ওষুধ খাওয়া,
মাঝে মধ্যে ডাক্তারের কাছে যাওয়া চেক-আপের জন্যে।
অন্য কোথাও ধীরে সুস্থে অথবা হন্যে হয়ে
যাতায়াত করা বারণ, কারণ, নাজুক ফুসফুসের
পক্ষে গেরিলা বীজাণুর চোরাগোপ্তা হামলা
সামলানো কঠিন। দু’বেলা ভেন্টোলিন
ইনহেলার দিয়ে শ্বাসটুকু বজায় রাখা এভাবেই
থাকা না থাকার নাগরদোলায় ভুলছন্দে হায়রে ওঠানামা,
গায়ের জামায় নিজের নাকেই লাগে রোগের চিম্সে গন্ধ।
টেবিলে তার পাঠানো ক্যামেলিয়া সগৌরবে
বিরাজ করে, ছড়ায় সৌরভ। বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখি,
এ কী খাটের চৌদিকে গজিয়ে ওঠা নলখাগড়া
থকথকে কাদা, কয়েকটি তাগড়া কাদাখোঁচা, হাড়গিলা
ভাঙা ডাল, মরা পচা পাতার মধ্যে গলাফোলা
একটা কোলা ব্যাঙ আচানক ঠ্যাঙ তুলে লাফিয়ে
গা ঢাকা দেয় খাটের তলায়,
সেই বদ্ধ জলায় অমাবস্যার করাল ছাপ।
খাটের চারপাশের পঙ্কিল কাদা কর্কশ বনবাদাড়
গড়াতে গড়াতে আমার কবিতার খাতায়
চলে আসে,
সুন্দরীতমা নগ্ন হেরার সাঁতারের
ছিটকে-পড়া জলকণা সমুদয়
আর পরশ পাথর খুঁজি। যা অপ্রাপণীয়
অথচ সন্ধ্যানের যোগ্য তা-ই আমার পুঁজি।
কাদা লেপা কবিতার খাতায় ছন্নছাড়া শূন্যতার বিলাপ,
সেখানে নিষ্ফলা ঋতুর পুষ্পহীনতা,
হঠাৎ কোন্ ধূসর রাজ্য থেকে উড়ে এসে একটা কোকিল
ব্যাকুল সুরে কবিতার খাতায় ডেকে আনলো অকাল বসন্ত।