২.৪ বাংলা ফকিরি গানের স্বর্ণসঞ্চয়

বাংলা ফকিরি গানের স্বর্ণসঞ্চয়

দায়েম শাহ-র গান


ফিরবি কবে রে মন মরি এ রণ
ঘর বড় ঘড়িরে ভাই দেখিলাম ঘোর দরশন।
সেই খানেতে বিরাজ করে সাঁই নিরঞ্জন
মরি এ রণ—
ছাঁচ চালের পানি রে ভাই ঘরের মড়কচাতে মরে
ভেবে দেখ ও পাগল মন আপন আপন ধড়ে
ফিরবি কবে রে মন—
হাল জোয়াল মাঠে গেল বলদ রইল গাভির পেটে
কিরষেনের ও খোঁজ নাই তো, লাইলি গেল মাঠে
ফিরবি কবে রে মন—
দায়েম শা ফকিরে বলে আমার লেগে গেল ধাঁধা
করকটাতে শিকার করে বাজ রইলো বাঁধা
ফিরবি কবে রে মন—


মনের মায়ার তগি ফেলেছে, প্রাণের মায়ায় তগি ফেলেছে
ভবে বিষয় কাঁটার টোপ গেঁথেছে।
এই সে ভব সিন্ধু মাঝে চোদ্দ পোয়া দ’পড়েছে
চোদ্দ পোয়া পুষ্করিণীতে ঘাট করে সে বসে আছে
মনের মায়ায়—
এক দু তিন চার হাত ডোরেতে চারদিকে চার বঁড়শি আছে
কোথাকার এ খেলোয়াড় এসে ফিচাক মেরে দাঁড়া ফেলেছে
মনের মায়ায়—
জীবনে যার আখেরে গর্মি সেই কাঁটাতে ঠোকরেছে
আমোদে না গিলতে পেরে গলায় কাঁটা লাগান বসে আছে
মনের মায়ায়—
দায়েম শা ফকির বলে ভাই কাটা ভাঙার পথ রয়েছে
নবীর কলমা পড়ে মারো ঝাপটা ভাঙবে কাঁটা ভয় কি আছে
মনের মায়ায়—


রুহু নফস্‌ কালেব ভেদ জেনে তুই কররে সাধনা
রুহু নফস্ কালেব না চিনিলে বন্দেগী তোর হবে না।
রুহু নফস্‌ কালেব কারে বলে ওরে বুঝে লে তুই গুরুর ঘরে
আবার গুরুকরণ না করিলে এই ভেদ তুই পাবি না
রুহু নফস্‌ কালেব—
ওরে পঞ্চ রুহু পঞ্চ আত্মা কর তাহার সাধনা
আবার তার সাধনা করিলে ভবেতে পার পাবি না
রুহু নফস্ কালেব—
ইলমে ফুকা যারে বলে ওরে চিনে লে তুই গুরু ধরে
আবার ইলমে তাহিম তোর না থাকিলে চলবে না
রুহু নফস্ কালেব—
ওরে বুঝে নে তুই নাতেকে খুলে যেদিন যাবি গুরুর ঘরে
আবার ইলমে লাদুনী না চিনিলে বন্দেগী তোর হবে না
রুহু নফস্ কালেব—
দায়েম শা ফকিরে বলে ভেদ থাকে কি পদ্মবনে
ওরে গুরুকরণ না করিলে সেই ভেদ তুই পাবি না।


ওরে খ্যাপা সহজে কি ধন মেলে কামেল মত্ত না হলে
কামরূপেতে কামেল হাওয়া চাই জিন্দা মরতে হয়
নবীর তরিক ধরতে গেলে।
আয়ুব নবীর ছিল চার বিবি তিন বিবি তালাক নিলে
একা রহিমা বিবি নবীর করণ মরণ শিকার না যায় ছেড়ে
ওরে খ্যাপা—
আয়ুব নবীর আঠারো বছর তাজা দেহ পোকায় খেলে
তবু নবী পড়তেন নামাজ রহিমা বিবির চুল ধরে
ওরে খ্যাপা—
আয়ুব নবীর আঠারো বেটা এমনি আল্লা দিল গজব
মরে গেল সবক’টা
দায়েম শা ফকিরে বলে তবু নবী হাত তুলে
আল্লার কাছে মুলাকাত করে।


প’ড়ে হতাশ প’ড়ে হতাশ হোস না মন রাই
ইনিল্লাহু মা সাবেরুন কোরানেতে লেখা রয়।
আলিফ হে মিম দালেতে এক আহম্মদ লেখা আছে
নু হরফকে নথি করে দেখ খোদা কারে কয়
প’ড়ে হতাশ—
কুলাবিল মমিন আরশ মহল কোরানেতে লেখা রয়
আদমের কালেবে আল্লার আরশ অন্য জায়গায় কি খুঁজলে হয়
প’ড়ে হতাশ—
দায়েম শা ফকিরে বলে বৃথা জীবন আমার যায়
আমি চিনব মানুষ হয় অচেনা মানুষ চেনা ভীষণ দায়।


ও তুমি দেল হুজুর না চিনলে পরে তোমার নামাজ হবে কি করে
দেল হুজুরে পড়ো নামাজ আপনার মোকাম চিনে।
ওরে ভুলে যাবি ইস্কের জ্বালা উঠবে নুর তাজেল্লা
খ্যাপা সামনে দেখবি আল্লাতাল্লা ঠিক রাখো দুই নয়নে
ও তুমি—
খ্যাপা আপনার আপনি আসবি যাবি নামাজের ভেদ তবেই পাবি
ও তোর ছয় লতিফা হইবে জিকির খ্যাপা মারাকাবায় বসিলে
ও তুমি—
আগে নয় দরজা বন্ধ করো মুখে লা’ইলাহা জিকির ছাড়ো
খ্যাপা দম থাকিতে আগে মরো পড়ো নামাজ সমানে
ও তুমি—
বে আকারে সিজদা দিলে খ্যাপা সেই সিজদা কি হয় দলিলে
আকার ধরে দাও রে সিজদা বসে থাকো এক ধ্যানে
ও তুমি—
দায়েম শা ফকিরে বলে মারো সিজদা হরফ চিনে
মারো সিজদা হরফ চিনে নবীর মিম্বর আছে যেখানে।


মন ঘোড়াকে বাগ ফিরাইতে নারলাম না ভাই দিনে রাতে
মন সেয়ানা বুটের দানা খায় না ঘোড়া কোনমতে।
বিসমিল্লাতে দিয়ে লাগাম, একশো ত্রিশ কর ভাই পালান
হাদিসের কসনি কসে লারলাম ভাই সওয়ার হতে।
মন ঘোড়াকে—
পাঁচ কলমা গোঁজ গাড়ি নামাজ রোজা কর ভাই দড়ি
খয়রাতের দিলাম পিছাড়ী, ছিড়লো দড়া আচম্বিতে
মন ঘোড়াকে—
দায়েম শা কয় সহিস হয়ে ঘোড়সওয়ার দিন গেল বয়ে
পুল পেরোবে কিবা লয়ে সে দিন দিবে কোঁড়া ঝাঁটা হাতে।


রমণীর ছয় পিরীতে মজায় না মন তাই বলি শোন
পিরীত করতে হয় কেমন।
পিরীতে মজ মজ কুলমান ত্যাজিয়া
শততম মন মানের গোড়ায় ছাই দিয়া
ও তুমি কুল হারালে দেখতে পাবে
দেখবে তুমি ধ্যানের ছবি
পেছনে বেজাই ভেনী বাজে ঘন ঘন, তাই বলি শোন
রমণীর ছয় পিরীতে—
প্রিয়ার পবিত্র বাণী লিখেছেন সাঁই কোরানে
সে জন প্রেমিক হবে দেখা হবে নির্জনে
সুজন দেখে ভজ তুমি গুরুজীর চরণ তাই বলি শোন
রমণীর ছয় পিরীতে—
দায়েম শা কয় কাতর হালে যে জনা প্রেমিক হবে
যে জনা প্রেমিক হবে দেখিবে চন্দ্রানন তাই বলি শোন।


আমি যার কাছে যাই কেউ নাহি কয়
কী করে নামাজ আদায় হয়।
একশো তিরিশ ফরজ মশলা বিচে
লিখেছেন সাঁই কোরানে শুনে
আমার ভাবনা হয়।
আবার কোন্ ফরজে আল্লা আছে।
আল্লার দিদার হয় গো কীসে
শুনতে আমার ইচ্ছা হয়।
ওরে সাতজনাতে জামাত হল
একজন তার ইমাম হল—
বাকি দুই রেকাত নামাজ পড়িল
তিন বেকাতে ইমাম মারা যায়
কী করে নামাজ আদায় হয়।
মুক্তারিগণ ভাবছে বসে
বাকি নামাজ পড়বে না মাটি দেবে
মাটি দেবে না গঙ্গায় দেবে—
ওরে দায়েম শা ফকিরে কয়
কী করে নামাজ আদায় হয়।

১০
জন্মিলে মরণ লেখা যায় সাধের দুনিয়ায়।
দীন দুনিয়ার ধ্যানের ছবি।
পয়দা হলেন দীনের নবী
যার তুলনা এ জগতে নাই।
মরণ তোমার বাঁধছে বাসা সোনার মদিনায়।
হুকুমে এসেছে ভবে
তলব হলে যেতে হবে—
চিরদিন না রবে হেথায়।
ভাইবন্ধু সব ছাড়িয়া
নির্জনে যাও বাসর লইয়া
সঙ্গের সাথী আর তো কেহ নাই।
দায়েম শা ফকিরে বলে
দয়াল নবীর চরণ তলে—
যার তুলনা এ জগতে নাই
মা জননী কাঁদছে বসে সোনার দুনিয়ায়।

মহম্মদ শাহ-র গান


আওল আলেফেতে আল্লা গনি আপে করতার
মিম রূপে দুজাহান বিচে হয়েছেন প্রচার।
মিমে পাগল হয়ে বিধি
বেহেস্ত দোজখ জমিন আদি
বখসে আপে রত্ন আদি
আলমগড়ে হিজদে হাজার॥
মিম রূপ না হতো যদি
না করত সাত হরিয়াদি
ছেড়ে দেই আপন খুদি
মিমে ফানা পরোয়ার॥
যত দেখ মিমের কারণ
মিম চিনে তার কর সাধন
নইলে যাবে বৃথা ভজন
মিম বিনা নাই পারাপার॥
আলেফ হে দাল ছিল যখন
কিছু পয়দা হয় নাই তখন
মিমের চাদর উড়িয়ে আপন
খেলছে সদাই জাহান পর॥
আহাদ আহম্মদ চিনো আপন
আদম জিনে হবে ধরম
গুরু পদে হের আপন
মহম্মদ দেখ একাকার॥


কি কল পেতেছ কলন্দার সকল ঘুরছে লা’এ ত্রিসংসার।
লাম আলেফে জবর দিলে
লামেতে আলেফ লুকাইলে
এলাহা কাহাকে বলে
এল্লরে ভেদ কি তার॥
আলেকে তিন হরক আছে
লাম আলেফ লা হয়েছে
এলাহায় কেবা আছে
এলাল্লার ভেদ কি তার॥
কেবল কলমা পড়ছ মুখে
কেন নাই দেখ চক্ষে
কেবা তোমায় করবে রক্ষে
হাসরের দিন মাঝার॥
এলাল্লাহ সাবেদ করে
পড় সবে বরজোখ ধরে
নিস্তার পাবে মলে পরে
মহম্মদ বলেরো হাসর॥


আপনে সুরাতসে আদম বানাইয়াছেন খোদায়
সেইজন্য মালা একে সেজদা করতে হয়।
জনাবে করি মিনতি
খানাকুল্লাহ আদম
আলাসুরাতি॥
ফরমাইলেন জগৎপতি
ইবলিস খাড়া তথায় রয়।
আদম সিজদার হুকুম দিলে
আল্লা কি সেরেক করালে
সেরেক গোনা থাকে বলে
এ দিন দুনিয়ায়॥
ফুকে দম মকরুল্লা
আলাস তারা বলে আল্লা
আদম কয় কালুবালা
মিশাক সময়॥
কহুতুরেতে মুশা নবী
ইবলিসের হাল পুছে সবি
খবর শুনে মনে ভাবি
গোরে সিজদা দিতে কয়॥
মালা একে পুরা করে
ইবলিস সেথা ইনকার করে
লানতের তক গলায় পরে
মরদুদ হয়ে যায়॥
গোরে সিজদার হুকুম দিল
ইহার কি ভেদ বল
আল্লার হুকুম ফরজ হল
কি হল তায়॥
আদমে কি ভেদ আছে
আল ইনসান ফরমাইয়াছে
মহম্মদ শাহ গুরুর কাছে
বুঝে ইশারায়॥


ও মন আপনায় চিনলে পাবে মালেক রব্বানা
আমি আমি বলছো সবে কোথায় আমার ঠিকানা।
ফরমাইল ও আলী অজহু
মান আরাফা নফ সাহু
ফাকাদ আরাফা রব্বাহু
চিনে আমি বল না॥
কেবা আমি কেবা তুমি
দুয়ে সেরেক করো না
আপনাকে চিনলে তারে
কোন চিন্তা রবে না॥
অচিনে করিয়া চিন কর ভজন সাধনা
আন্দাজিতে ডাকলে পরে
বন্দেগী তার হবে না॥
সকল দুনিয়ার মজার সাতে
নিশ্বাস বিশ্বাস করো না
মত্তান্নেসের সেগা ছেড়ে
মজাক্করে হও দানা॥
যে জন চিনেছে আপে
সেই জন বলায় দেও না
আয়নাল হক ফুকারে মনসুর
পেয়ে খোদে আপনা॥
ফকির শাহ দয়া করে
দিলেন কিছু নিশানা
মহম্মদ শা মিলে থাক বলে
ধরা পড়ে না।


জাহের নামাজ পড়ো বাতুনি আদায় করো
বুঝে সুজে না পড়িলে মুছবে নাকো অন্ধকারে।
জাহেরেতে নামাজ ভাই
পাঁচওয়াক্ত পড়া যে চাই
মুরশিদ ধরে জেনে নিয়ে
নামাজ পড়া আপনারে॥
কোন হরফে কিয়াম কর
কাহার সাথে ফেরাত পড়ো
কোন হরফে হয় রুকু দিতে
সেজদাতে কোন হরফ ধরো॥
আত্তাহিয়াতো পড়ো কখন
কোন হরফ হয় হে তখন
সালাম ফিরো কেবা কোন জন
দরুদ পড়ায় কোন রূপ ধরে॥
সেজদা কেবা করে রে মন
সেজদা সেই বা লয় কোনজন
জেনে চিনে পড় আপন
নইলে সেরেক হবে আরো॥
না করিলে হুজুর দেলে
দূর হতে সেজদা দিলে
মাটি সেজদা মিশে গেলে
শয়তানের হয় তাবেদারো॥
মহম্মদ শা মুরশিদ ধর
জাহের বাতুন নামাজ পড়
লা এর ঘরে সেজদা কর
জাকাত হইয়া রাহে তারো॥


আল্লা সেওয়া সেজদা হারাম কহেছেন রব কোরানেতে।
কোনখানে কোন নামে সেজদা করি মন কিরূপেতে।
আজাজিল ফেরেস্তা ছিল
সকল স্থানে সেজদা দিল
একজেরা তিল ফাঁক না ছিল
সত্তর হাজার কি জায়গাতে॥
দেখরে মন বিচার করে
মনে হাজের হাজের জানলে তোরে
সেজদা হবে কি প্রকারে
না দেখিয়া নজরেতে।
আজাজিলের জন্ম শুদ্ধা
না চিনে করিল সেজদা
জায়গা চিনে কর সেজদা
সকল ফতে হবে তাতে।
আদম সফি মকবুল হলো
চিনে আপন সেজদা দিলো
আজাজিল বান্দা গেল
বাহির হল দরগা হতে॥
ফকির শাহের ধরে পায়
জাকাত হয়ে মহম্মদ কয়
দয়া করে চেনাও আমায়
সেজদা দিবো সে রূপেতে ॥


নামাজ পড়বি যদি নিরবধি খুদি ছাড় মন
খুদির সাথে সাথে পড়লে নামাজ সফল অকারণ।
আল্লায় হাজের নাজের
সেজদা কর পরোয়ারে
আন্দাজীতে করলে পরে
কবুল না করবে নিরঞ্জন॥
আপনায় চিনে আদম সেজদা
মকবুল করলেন আপেখোদা
না চিনে করলে সেজদা
হবি আজাজিল মতন॥
এই জন্য নবী বলে
নামাজ পড় হুজুর দেলে
দেল হুজুরী না পড়িলে
নামাজি কেমন॥
ফকির শাহের চরণ ধরে
মহম্মদ শাহ আপনায় হেরে
হুজুর দেলে নামাজ পড়
সদা সর্বক্ষণ॥


মানুষ মানুষ বল সবে মানুষ ধর মানুষ পাবে
মনের মানুষ আছে খামুস হৃদয় মাঝে গোপনভাবে।
মানুষ ধরে দেখ নিজে
পাবে মানুষ হৃদয় মাঝে
থেকো না মন মিছে কাজে
মানুষ আছে ধরতে হবে॥
মানুষ আছে রংমহলে
মানুষ মেলে কলমার কলে
নইলে জনম হায় বিফলে
আখেরাতে পস্তাইবে॥
আলেফ দাল মিম হল যখন
হুকুম দিলেন সাঁই নিরঞ্জন
সেজদা করলেন ফেরেস্তাগণ
সেই মানুষ আসিল যবে॥
ফকির শাহের চরণতলে
মহম্মদ কয় কাতর হালে
মানুষের হুঁসের বলে
সাবেদ পেয়ে দেখলাম ভবে॥


দিন থাকতে দমের কর ঠিকানা ও মন দম ফুরালে হবে না
আদমের দম বহে চব্বিশ হাজার দম
অরুজ নজুল জানলে পরে হবে তার সাধনা।
দমের ভিতর সাতটি দম
চিনে দম কর সাধন
না চিনিলে দম বৃথা জীবন
সেথা হেথা ররে কানা॥
সমস কমর আছে দুই দম
ইংলা পেংহা বলে দুই দম
খাতরাহা দম সেই বা কেমন
শুকমন দম খোঁজে না।
আদমের দম এহি দমে
আহম্মদের দম এই আদমে
আল্লার দম চিনলে মহম্মদ
অযুদ ধ্বংস হবে না॥

১০
মুখে কেবল আল্লাহ বলা হয়
আল্লাহ কোথা আমি কেবা হল না তার পরিচয়—
আপন কাছে না দেখিয়া দেখে বেড়াও জগৎময়।
বেলগায়েবে ডাকলে পরে
শেরেকেতে ধরা যায়
পাক নাম আল্লাহ হামদোলিল্লাহ
কোনখানেতে কিরূপ হয়॥
হক্কেল একিন হলে পরে
এলমেল একিনে লিল্লয় হয়
কোন মোকামে কিরূপেতে
আল্লার নামটি দেখাও ময়॥
এলমেল একিন জানলে পরে
আইনল একিন সাবেদ হয়।
হেজে করে নামটি দেখাও
ওহে গুরু দয়াময়॥
হুয়াল একিন করে দেহ
মহম্মদ শাহের অভিপ্রায়॥

১১
চড়ো মন নুহুর কিস্তিতে
সে নৌকা ভাসছে সদায় ভবেতে।
সে নৌকায় চাপে যে জনা
ঘোর তুফানে ছয় রিপুতে ঠেকতে হবে না।
আবার কিস্তি ছাড়া হবে যারা
মরতে ডুবে পানিতে॥
মনরে অবোধ বলি তোরে
চেপে বস কিস্তি পরে
না চড়িলে গৌরব করে
কঁদতে হবে শেষেতে ॥
বাঁচব আমি পাথার পরে
যে বুঝে সে পড়বে ফেরে
নবী আপে আঁটতে নেরে
বাদাম তোলে নৌকাতে॥
সেই দিনের বড়ই তুফান
জোয়ার এসে নদী কেঁপে হবে কানেকান
আবার কিস্তি চড়ে রও মহম্মদ
বাদামের নীচেতে ॥

১২
ওয়া দাহু মুখে বললে হবে না
লা শরিক সাঁহু ওয়াদহু চোখে সকল দেখ না।
একা আল্লা জোড়া নাহি তার
কিসে প্রমাণ পাই গো তাহার
সাহাদত কলমা সাক্ষী দাও যার
মুখের কথায় চলবে না॥
না দেখিয়া সাক্ষী দিলে
মুখে ওয়াদাহু বলিলে
বিচার আপনা না করিলে
রবে সদাই দিন কানা॥
মুখে এক বল যেমন
চোখে এক দেখ তেমন
মহম্মদ ধাঁধা ঘুচিয়ে আপন
ওয়াদাহুকে দেখ না॥

১৩
নিরাকার পরওয়ার আকার ধরেছে রে
ওমন দেখলি নারে নজর করে দেলের জাঙ্গারে।
হামদো সানা সিফাতে হয়
আল্লা রসুল সকলে কয়
তৈয়ব কলমায় কয় দয়াময়
রবে নিরাকার রে॥
হাম মিম সেজদা বীজে।
সা নুরেহিম আয়াতে আছে
সৃষ্টি সকল জগৎ বীজে
আমার নিশান দেখায় রে॥
আদম আল্লা সুরাতেহি
না ফাকতোহি হেমির রুহি
আকার ধরে এলাহি
দম আপনার ফুকে রে॥
মহম্মদ আপন খুদি ছাড়ো
দেশ বিদেশে নাহি ঘোর
বুলে বারো বসে তেরো
পুজো তার চরণ ধরে॥

১৪
নমাজ রোজা কলমা পড়বো না
তাতে তোমার কিসের ভাবনা
আমি কেবল মাত্র চাইব দিদার
হর গুলেমাল চাহি না॥
নামাজের মধ্যে রে আকার
দেখা ভীষণ গুনগার
ঐ জন্য আমারই ভাই
হয়ে ওঠা ভার।
তুমি পার যদি খুবই কর
আমায় কিছু বল না॥
কলমা পড়লে হয় না মুখে
কলমা দেখতে হয় চোখে
ঐ জন্যে আমি রে ভাই রয়েছি ঠেকে
আবার না দেখে পড়লে কলমা
কুফরি তো ঘুচবে না॥
রোজা রাখার যে ঠেলা
দিন গিয়ে সন্ধ্যাবেলা
খাবার হয় পালা।
আবার তাহার মাঝে একটু ত্রুটি হলে
রোজা হবে না॥
মহম্মদ জানের এই মনের বাসনা
তা কেন বলব না
হক গুরুজি মোর আলমের পানা
আমি নিজের বেহেস্ত করব তৈরী
কারো বেহেস্তে যাবো না।

১৫
দেখবি যদি অধর চাঁদে একদম ভুলো না
হুশ দরদম নজর কর কদম সাফাদের ওতনে হবে মিলনা।
ঘৃণা লজ্জা ভয় ছাড়ো বিচার করে
নাম রং জাত মা বাপ হামকে ছেড়ে
জপ জোয়ান ধিয়ান করে
আপনায় পাবি আয়না ॥
সেওয়াই মিনতি অধীনতা
জানেতে তখন সে আছে কোথা
খুঁজো কেন হেথা সেথা
হয়ে তুমি দিন কানা॥
দেল আগার সাফকুনি
হামচু আয়না বেরকুনি
চিন্তাতে রয় চিন্তামণি
পীরের কাছে বোঝ না ॥
কিনা কেবর আদাওত ছেড়ে
থাকো রে মন জ্যান্ত মরে
সাহত লালচ দূর করে
হও রে মন দেওয়ানা॥
হেরেশ বগজ গুস্যা ছাড়ো
ঝুট বখিলে নেকি কর
মহম্মদ শাহর সঙ্গ ধর
কোন চিন্তা রবে না।
কম খানা কম শোনা
কম বল না কম চল না
তুমি দয়াল দয়া করে
পুরাও মনের বাসনা ॥

১৬
বলব বলব মনে করি সে কথা বলব কি করে
তিনটি নামের একটি মানুষ একটি ঘরে বাস করে।
তাহার ঠিকানা বলি
জেলা হুগলী শহর দিল্লী
আবার জীবনপুরে ইস্টিশনে
দমকলে দম চলে ফিরে ॥
হক জামালের জমিদারী
দম দমাতে হয় কাছারী
চারটি থানার খবরদারী
চার দারোয়ান চারধারে ॥
জবরূত নাসুত লাহুত মালকুত
শুনে ফকির হয়েছে বহুত
ফকির বলে হয় না ফকির
হয় মনের মানুষ ধরে ॥

১৭
প্রেমের খেলা ইস্কের মামলা সবে জানে না
ইস্কেবাজী করে দেখ মালেক রব্বানা।
আপন নুরে আপনি আশক
হলেন দেখ আল্লাজী পাক
করে কত জাঁকজমক
হয়ে দেওয়ানা ॥
আপন নূরে নবী পয়দা করে
দুনিয়ায় পাঠায় খোদা
দুই জনাতে জুদা হয়ে
থাকতে পারে না॥
মহম্মদকে আনিবারে
জিব্রিল পাঠায় মক্কর করে
মক্করউল্লার মক্করকে কয়
প্রেমের ছলনা ॥
আয়নকহক হক ফুকারে
মনসুর আপে চড়ে দ্বারে
প্রেমের খেলা কেমন করে
দ্বারের বাহানা ॥
খলিলুল্লার আতশেতে
মুশা নবী কহতুরেতে
ইনুষ নবী মাছের পেটে
করে মিলনা ॥
জোলেখা ইউসুফের তরে
শিরীর প্রেমে ফরেহাদ মরে
লাইলার প্রেমে কয়েশ আপে
হলেন দেওয়ানা ॥
গুরুজিকে মহম্মদ কয়
প্রেম পিয়ালা পিয়াও আমায়
মস্ত কর আপন দয়ায়
বানাও দিওয়ানা॥

ইমরান ফকিরের গান

ভেদের কথা ভেদির নিকট জানতে হবে রে
খোদার নুরে নবী হল ফেরেস্তা হয় কার নূরে।
ও দাদা মনের বিচার কর
কোন্‌ পর্দাতে আছে খোদা কোন্‌ দুয়ারী ঘর—
আরশে কুরশী আরশেয়ানা আছে বল কার পরে।
ও দাদা কোরান দেখে পড়
কোন্ হরফে রূহের খেলা কোন্ হরফে ধড়—
আবার মিম্বারের তিন ধাপ কেন হয় বল দেখি কার তরে।
ও দাদা খবর তিনের শোন্‌
আহাদ আহম্মদ কোথায় ছিল কিরূপে তার তন্‌
আবার আহাদ থেকে আহমদ হলে ভালো করে দেখ তারে।
ও দাদা আবার বলে যাই
লা পুরাতে আল্লা ছিল কলমা বলে তাই—
নবী সঙ্গে বলরে কথা সেই কথা হয় কোন্ সুরে।
ও দাদা ভেদের মর্ম বোঝ
মিমের পর্দা কোথায় ছিল ভালো করে খোঁজ—
আবার কোন্ কলেতে তৈরি হল গড়ল কোন্‌ কারিগরে।
ও দাদা বলছি কথা খাঁটি
কোন্ দরিয়ার পানি দিয়ে গড়ল কাদামাটি—
আবার ঐ মাটিতে পুতুল গড়ে আদম দিল নাম তারে।
ও দাদা ইমরান বলে তাই
ভেদের কথা জানতে পীরের দরবারেতে যাই—
আবার নোক্তার ভিতর কোরান গোপন রয়েছিল কী করে।

মিয়াজান ফকিরের গান

সরলে গরল মিশে না সরলভাবে আছে যে জনা।
সর্পের মাথায় ব্যাঙ নাচে
তবু সর্পে আহার করে না।
বুঝি সর্পের ওঝা আছে
তাই জন্যে মাথা তুলে না।
পদ্মপাতায় পানি ফুটি টলমল
পদ্ম ভিজে না—
তার সাক্ষী আছে দধিভাণ্ড
উপরে ভাসে ননী ছানা।
ফকির মিয়াজানে কয় সরল পথে থাকলে মানুষ
ধইরবা রে মনা।
সরলে গরল মিশে না সরল পথে রয় যে জনা
সহজ পথে রয় সে জনা।

আবদুল্লা ফকিরের গান

সাপ ধরিবার মন্ত্র আগে শিক্ষা লও রে ভাই
নামের মালা গলে দিয়ে কুঞ্জবনে যাই।
মাটির নীচে ধন আছে
সাপিনী তায় পাহারা দিছে
ছয়টা ইঁদুর ঘরের নীচে
পিড়ার মাটি নাই॥
ব্যাঙে নাচে সাপের কাছে
সাপ পলাইল ধনের নীচে
মনিব হইয়া ব্যাঙে নাচে
ধরবার পা নাই॥
নামের হলদি গায়ে দিলে
সরে যায় সাপ গন্ধ পাইলে
আবদুল্লা কয় পইড়া রইবা চরণতলে
মাথাটি লুকাই ॥

চার ফকিরের গান

শুনুন বাবু চার ফকিরে ফকিরি গান গাই
আমরা ফকির বটে মোদের ফিকির জানা নাই।
হিন্দু মুসলমানের এ দেশ সকলে ভাই ভাই—
শুনুন বা চার ফকিরে ফকিরি গান গাই।
হিন্দু যদি মাটি হয় তো মুসলমান হয় জল
মাটিতে জল পড়লে তবে হয় জানি ফসল।
হিন্দু যদি ফল হয় তো মুসলমান হয় ফুল
হিন্দু যদি নদী হয় তো মুসলমান তার কুল।
ভেবে দেখুন দুইয়ের মাঝে কোনো তফাৎ নাই
শুনুন বাবু চার ফকিরে ফকিরি গান গাই।
হিন্দু যদি মেঘ হয় তো মুসলমান হয় হাওয়া
জল বিলিয়ে মেঘেরা সব করে আসাযাওয়া।
হিন্দু যদি চোখ দুটো হয় দৃষ্টি মুসলমান
হিন্দু যদি সুর হয় তো ইসলাম তার গান।
দুইয়ের দেহে রক্ত আছে রক্তের রং লাল
তাহলে আর কীসের তফাৎ হায় পোড়া কপাল।
হিন্দু যাকে জল বলে মুসলমানে বলে পানি
নামেতে দুই কাজে কিন্তু একই বলে জানি।
হিন্দু মুসলমানে দেখুন সকলে ভাই ভাই
শুনুন বাবু চার ফকিরে ফকিরি গান গাই।
গীতা কোরান দুইয়ে জোড়ান একই কথা বলে
দুই ধর্মের দুইটি কেতাব একই পথে চলে।
অমিল কিছু নাই ওরে ভাই আল্লা ভগবানে
ধর্ম যাদের ব্যবসা তারাই এসব তফাৎ মানে।
রাম ও রহিম সৃষ্টির একের নাইকো হানাহানি।
শুনুন বাবু চার ফকিরের সাম্যবাদের বাণী।

দরবেশি গান

সাধন কর ভজন কর তওবা করে আইছনি
হাদিস পইড়া খোদার দিদার পাইছনি—
তৌহিদ কোরান কলেমা তোমার দিলকোরানে মিলাইছনি।
দমের ঘরে অহি আছে দিলের খাতায় লিখছনি
পরের ছুরত দেখছ চাইয়া নিজের ছুরত দেখছনি।
খালে বিলের পানি দিয়া মাটির দেহ লও ধুয়াইয়া
এস্‌কো নদীর পানি দিয়া মনের ময়লা ধুইছনি।
তুমি পরের ব্যারাম সারাইতে যাও নিজের ব্যারাম চিনছনি
স্বভাব রোগে মরছে সাধু তাঁর ঔষধ খাইছনি।
না চিনিয়ে রুহ হায়াজি ছাগল গোরু দাও কুরবানি
পেটকে খাওয়াও ক্ষীর নবনী রুহর খাদ্য খাইছনি।
ইসমাইলের জন্মস্থানে উঠাও খোদর কাবা ঘর
তোমার জন্ম কোন্ খানেতে রাখছনি রে তার খবর।
তোমার সাফায়েত করেন যিনি তার সনে নাই চেনাচিনি
মোহম্মদের ছবিখানি বুর্জগে উঠাইছনি।
নিজের জমির পতিত রাইখা পরের জায়গায় বাঁধছ ঘর
দুদিন পরে তোমার জায়গায় তুমি হইয়া যাইবে পর।
আপন মানুষ থাকতে কাছে পইরা গেলি অনেক পাছে
রাধাবল্লভের আইসা গেছে বিদায় দিনের নিশানী।

ফকিরি-নামা

আবু তাহের ফকির রচিত

প্রথমেতে কহি আমি শরিয়তি কাজ।
কলেমা নামাজ রোজা জাকাত আর হজ ॥
ইহা না জানিলে কেহ মুসলমান নয়।
মুসলমান মানে হচ্ছে বিশ্বাসী যে হয় ॥
খোদা ও রসুলের প্রতি বিশ্বাস যার রয়।
মোমিন মুসলমান সে তা মিথ্যা কথা নয় ॥
প্রথমে কলেমা ভাই সবার জানা চাই।
কলেমা না জানিলে সেই কাফের গণ্য হয় ॥
কলেমা কিন্তু মহাম্মদের তবু হয় ফরজ।
চারি কলেমায় চারি একিন করো গো নেহাজ ॥
কলেমা পড়িতে আছে কোরানে আদেশ।
পড়িয়া চিনিতে হবে কলেমা বিশেষ ॥
নাইলে কাফের হবে যত কল্‌মা পড়।
না পড়িলেও কুফর হবে ওহে বেরাদার ॥
তা পরে নামাজ কর জাকাতের সাথে।
আদায় করিতে হবে একিন সহিতে ॥
কোরানেতে কোন স্থানে নামাজ পড়িতে।
বলে নাই আল্লা-তায়ালা কোন জায়গাতে ॥
বিরাশি জায়গায় আল্লা করেছে ফরমান।
জাকাত সহ নামাজ কায়েম কর মুসলমান॥
কি করিয়া নামাজ কায়েম হইবে সবার।
নামাজ কায়েম না হলে যাবে দোজখ মাঝার ॥
মৌলভী মৌলানাগণের নিকটেতে পুছ।
তাহাদের খেদমতে থাকি জেনে লও কিছু॥
নহেত কামেল পীর ধরিয়া একিনেতে।
কোন নামাজ হইবে কায়েম জাননা তার সাথে ॥
কোরানেতে আছে সহ দেখে শুনে লবে।
তত্ত্ব তৌহিদ হলে নামাজ কায়েম হইবে ॥
তারপরে ছিয়াম ভাই রোজা বলে যাকে।
একমাস প্রতিপালন কর এই রোজাকে॥
ছিয়াম মানে উপবাস ঠিক ইহা নয়।
উপবাসের সঙ্গে সংযম বলা যায় ॥
আহারে বিহারে ভাই চলায় বলায়।
হর কাজে সংযম হইতে সে যে কয় ॥
সংযম না হইলে রোজা কায়েম না হবে।
বাদুড়ের ন্যায় উপবাস করিয়া মরিবে ॥
একমাস খোদার হুজুরে হাজির থাকিবে।
পরেতে খুশীর ঈদ পালন কর সবে ॥
ঐ সঙ্গে কিছু দান কাঙাল মিস্‌কিনে করিবে।
ফেত্‌রা বলিয়া যাহা লিখিছে কেতাবে ॥
আরও বাতেন কিছু ছিয়ামতে আছে।
জেনে লিয়ে কর ভাই দুনিয়ার বিচে ॥
তাপরে জাকাত দাও করিয়া হিসাব।
মজুদ মালের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ ॥
ইহাতে বখিলের জন্যে যাহা হুকুম আছে।
আরও এক জাকাত আছে নামাজের বিচে ॥
সব হতে প্রিয় বস্তু জাকাত কিছু দাও।
ছুহা আল এমরান মাঝে কোরান পানে চাও ॥
ইহা হতে বুঝা যায় জাকাত দুই প্রকার।
জানিয়া আদায় কর ওহে বেরাদার ॥
তার পরে হজ ভাই করিতে হইবে।
মালদার যে জন ভাই সেই হজে যাবে ॥
সকলের জন্য ইহা নহে ত ফরমান।
যার আছে টাকাকড়ি সেই হজে যান ॥
হজ শব্দের অর্থ ভাই দেখা-সাক্ষাৎ হয়।
কাবা গিয়া দেখে এসো যার মনে লয় ॥
সংক্ষেপেতে পঞ্চবেনা করিলাম শেষ।
তাপরে তরিকের কথা শোন সবিশেষ ॥
তরিকেতে পীর ধর দেখিয়া শুনিয়া।
তাহার খেদমতে থাকি লইবে জানিয়া ॥
কিছু নিবে কিছু দিবে আদান প্রদান।
কোরানেতে মোবায়াত বলিয়াছে নাম ॥
হকিকত কাহাকে বলে জানিয়া লইবে।
সেইমত সত্যপথে চলিতে থাকিবে ॥
মারেফত যার নাম শোন ভাই সবে।
বুঝিয়া সুজিয়া কাজ দুনিয়ায় করিবে ॥
তরিকত না জানিলে শরিয়ত হবে না।
আগে জান দেহতত্ত্ব রবকে যাবে জানা ॥
আরবিতে যাকে দেখ তশরিহ কয়।
ইংরাজিতে সেইত দেখ এনাটমি হয় ॥
তছাউরাক যার নাম মারেফত বলে তারে।
বাংলায় শরীরতত্ত্ব বোঝ বেরাদারে ॥
দেহতত্ত্ব না জানিলে সকল বৃথা হবে।
কামেল মুর্শিদ ধরি দেহতত্ত্ব করি লবে ॥
পীচ নফস পীচ রূহ ছয় লতিফা কয়।
দেহ মধ্যে সকল আছে কর পরিচয় ॥
পঞ্চ ওজুদ তালাশ করি দেখিয়া লইবে।
কোন ওজুদে কোন মোয়াক্কেল জানা চাই তবে ॥
আপন ছুরাতে আল্লা গঠেছেন আদম।
আপনি বসত করেন লাগাইয়া দম ॥
অফি আন ফোসেকুম আফলো তোফসেরূন।
বলেছেন আল্লা-তায়ালা তার খোঁজ করুন॥
কোন ওজুদে বাস করেন পীর ধরি জানো।
পরের খেদমতে থাকে তার কথা মানো ॥
একজন যে আলেম দেখিতে পাওয়া যায়।
কোরান হাদীস লইয়া জলসা করিয়া বেড়ায় ॥
নামাজ পড় রোজা কর বলেন এই কথা।
পরের দোষ দেখে বেড়ায় করিয়া ধৃষ্টতা ॥
আরবি লেখাপড়া শিখে অহঙ্কার মনে।
আজাজিল বড় আলেম আছে কি তা মনে ॥
ঘোরাফেরা স্বার্থসাধন রুজির লালসায়।
না জানিয়া গীবত গায় কেবল রুজির দায় ॥
দুই চারিটি কেচ্ছা গেয়ে উদাহরণ দেয় ভালো।
তত্ত্ব তছুরাফ ধার ধারে না তার বেলায় মুখ কালো ॥
দেল মুখ এক না করি লোককে শুনায় ওয়াজ।
মুখে এক কাজে এক কেবল ফাঁকা আওয়াজ ॥
কোরানের আয়াত বেচি করে দরকষাকষি।
নিব দুইশত টাকা হবে না কম বেশী ॥
রূম, শাম, মিশর, কায়রো, মক্কা ও মদিনা।
তায়েফ, সিরিয়া, ইরাক, দামেস্ক, আছে কোথা মানা।
পেলেস্টাইন, কুফা কারবালা দেখে এসো চোখে।
কাগজ কেতাব রেখে দাও কাজ কি শুনে মুখে ॥
এবনে সউদ বাদশা তাঁর শাসন শরিয়ত।
দাড়ি চাঁচলে ৭ ॥ টাকা ফাইন দণ্ড তৎক্ষণাৎ ॥
স্বাধীন রাজ্যে হারাম হলে করত মুণ্ডপাত।
মুসলিম রাজ্যে বাদশার বিচার শুনে হবে মাত ॥
বাংলার পণের দায়ে হয় না বিয়ে গরিবের মেয়ে।
কত অবৈধ কাজ হয় সমাজে কেউ দেখে না চেয়ে ॥
আবার কতজনে অন্যস্থানে মেয়ে বিক্রি করে।
ঘরে বসে বাৎলায় শরা আর তান্তি করে ফেরে ॥
কত শত মৌলভী মৌলানা ফিরছে গঞ্জে গ্রামে।
বহুরকম ফতোয়া দেয় এসলামের নামে ॥
যেদিন এসলাম এসেছিল ভারতের বুকে।
সেদিন প্রশংসিত হয়েছিল লোক মুখে মুখে ॥
সেই আদর্শে ভারতের লক্ষ লক্ষ হিন্দু।
এসলাম গ্রহণ করে হয় এসলামের বন্ধু ॥
তখন তো ছিল না এত মৌলভী মৌলানা।
শরা শরা বলি এত তম্বি কেউত করত না ॥
তবু এসলাম জারি হয়েছিল এই হিন্দু দেশে।
জয়ডঙ্কা বেজেছিল তার দিকে দিকে উল্লাসে ॥
ছিল না এত আলেম ফাজেল মক্তব মাদ্রাসা।
হিংসা দ্বেষ ছিল নাকো ছিল ভালোবাসা ॥
সাম্যবাদের নীতি ছিল ছিল না সাম্প্রদায়িকতা।
যে দান নবী দিয়েছিলেন দেখাইয়া উদারতা ॥
আজি কোথা সে এসলাম চরিত্র মহান মানবিকতা।
ইহার জন্য কাহারা দায়ী ভাবিয়া দেখেছি কি তা ॥
কমবেশী সকলেই দায়ী আর মৌলভীগণ সবে।
ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা বিষ ছড়াইয়া এই মানব ভবে ॥
ভুলিয়াছি মোরা শান্তির বাণী হইয়াছি চরিত্রহীন।
মহম্মদের নামে কলঙ্ক রটায় ভেজিয়া মহম্মদী দীন ॥
কিন্তু নবী আমাদের এন্তেকাল করে নি থাকিবেন চিরদিন।
কোরান তাই সাক্ষ্য দিতেছে ‘হয়োতুল’ মরছালিন ॥
বলিবার মোর বহু কিছু আছে অল্পে করিনু শেষ।
ভাবিয়া দেখুন জ্ঞানীগণ সবে করি প্রার্থনা বিশেষ ॥
আর কিছু নিবেদন আছে আমার ফকির সম্প্রদায় মাঝে।
আউল বাউল, সাই দরবেশ নাড়াবিন্দা মালাহাদ ইসমাইলী ক
সুফী সহজিয়া চৈতন্য ধারা গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণে।
সকলের কাছে নিবেদন আমি করিতেছি মনে প্রাণে ॥
চিমটি আসা খড়ম ও ছবি মালা গেরুয়া বেশধারী।
অনেকে এই বেশ করিয়া ধারণ নগরে বেড়ায় ঘুরি ॥
জিজ্ঞাসিলে বলে সবে আমরা ফকির হয়েছি।
অমুক জনা আমার গুরু আমি তাঁর মত গ্রহণ করেছি ॥
দুই চারিটা শেখা বুলি বলে করি আত্ম অহংকার।
আত্মতত্ত্ব নাইকো জানা কেবল গাল গল্প সার ॥
কেহ কেহ পদ শিখিয়া টাকা লইয়া পাল্লা করিয়া বেড়ায়।
ভিতরে নেই প্রেমের পরশ শরার মৌলভীগণের প্রায় ॥
বৃক্ষের শাখায় ফল ধরিলে আপনি সে যায় নুয়ে।
থাকে না আর গর্দান খাড়া দেখে না লোক চেয়ে ॥
এক পয়সা আণ্ডা দিয়া আসে মুরগী বাহিরে।
কক্ কক্‌ করি উড়ন ছাড়ে জানায় লোকজনেরে ॥
হজরত মোজাদ্দেদ আলফেছানি বলেছেন এই মতে।
নিজেকে নিকৃষ্ট জান ফিরিঙ্গি ও কুকুর হতে ॥
ফকিরের মূল তত্ত্ব স্বভাব সুন্দর আর চরিত্র গঠন।
তা না হলে কি করে হবে ভজন সাধন॥
একদন ফকির দেখি মাঠে ঘাটে পথে।
ফকিরি ছড়াইয়া বেড়ায় সকল লোকের সাথে ॥
নারী লইয়া ছিনিমিনি করছে কত জন।
মায়ের জাতকে মাগী ভাবি করে অযতন ॥
কোণে বনে নির্জনেতে যে কাজ সম্ভবে না।
কি করিয়া রাস্তা ঘাটে করে সেই সব আলোচনা ॥
নফসের দায় হইয়া করে নারী নির্যাতন।
শক্তি দ্বারা ব্যভিচার সে পোড়া কাঠ যেমন ॥
কোন মূল্য নাই শক্তি বিনা শক্তিবানের।
যে জন করে অবমাননা শক্তিরূপা মহামায়া জনের ॥
তাহার মতন আর পাতক নাই এ ভব মাঝারে।
কাম লোভে ডুবে থেকে মিছে কেন মরে ॥
যে পর্যন্ত রবে তুমি মাশুক নাহি পাবে।
তুমি না থাকিবে যখন তখন মাশুক কে দেখিবে ॥
‘আনাছির রূহু’ হয় জান আল্লার ভেদ মানুষ।
হবে সেজন আরেক বিল্লা যার আছে সদা হুঁস ॥
আলা এনছান ছিররিহি মানুষের ভেদ আল্লা।
যে না জানিবে এই সকল ভেদ সে চির অন্ধকালা ॥
জীবস্বভাব আচার ব্যবহার লইয়া সদা আছে।
ধর্মের নামে ধাপ্পাবাজি সকল তাহার মিছে ॥
কেবল নফছানি আত্মসুখ অন্বেষণ স্বার্থ সিদ্ধির।
তাড়নায় মত্ততার হালে করে বিচরণ দোহাই দেয় ফকির ॥
জানে না কোরান কি বস্তু জানে না ইমান কি।
কলেমা কি বস্তু নামাজ না জানি কেবল হইয়াছি মুসল্লি ॥
অন্ধ সে জন হয় চিরদিন এ-কাল সে-কালে।
কেমনে হইবে ফকির মোকাম-মঞ্জিল তত্ত্ব না করিলে ॥
খোদার বান্দার তবে এ-কাল সে-কাল সুখ হারাম।
‘মোল্লা কাসেমী’ ছালমি হতে এক হাদিল জানগো তামাম ॥
তাহাই ব্যক্তি পাপ যাহা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা হয়।
আর গুপ্ত পাপ দেখ যাহা চিন্তা করে সুখ লালসায় ॥
এই দুই কারণেতেই খোদা বিস্মৃতি সবার ঘটে।
কি করিবে তার ফকিরি আর নামাজে দেখ তবুসির হোসেনী ঘেটে ॥
অতএব নিবেদন করি হুজুরে সবার।
করিবে ফকিরি ভাই হয়ে হুঁশিয়ার ॥
মুর্শিদ নিকটে জান করিয়া খেদমত।
দয়া করি দেখাবেন তিনি সত্যপথ ॥
আমি আর কি বলিব হয়ে গোনাগার।
কোন বাতে সন্ধ থাকে বল সামনে আমার ॥
পিছেতে বলিলে তাকে গীবত বলে ভাই।
গীবতের গোনা আল্লা মাপ করিবেন নাই ॥
এই পর্যন্ত করিনু শেষ মাপ চাই সবার কাছে।
‘ছালাম-আয়কুম’ জানাই মজলিছে যারা আছে ॥

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *