রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মামুন আকাশের দিকে তাকালেন কয়েকবার। রাস্তার বাতিগুলি জ্বালানো হয়নি, কোনো বাড়ির একচিলতে আলোও এসে পড়েনি পথে, চতুর্দিক আবছায়া অন্ধকার। কিন্তু আকাশে একটা বড়সড় চাঁদ উঠেছে, শত শত ঝরনা ধারার মতন নেমে আসছে জ্যোৎস্না। আকাশে কেউ ব্ল্যাক আউট করতে পারেনি।
সারাদিন ধরেই বারবার গুজব ছড়াচ্ছে, আজ বোমা বর্ষণ হবে। লাহোর ফ্রন্টে তুমুল আক্রমণের মোকাবিলা করবার জন্য পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর সব কটা প্লেনই চলে গেছে ওদিকে, ঢাকা শহর রক্ষার জন্য একটাও রেখে যায়নি, এই সুযোগে আজ কলাইকুণ্ডা থেকে উড়ে এসে ভারতীয় বোমারু বিমান ঢাকা আক্রমণ করবে। সন্ধে থেকে বেশ কয়েকবার প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে, লোকের বাড়ির জানলা-দরজা জোরে বন্ধ করলেও বোমার শব্দ বলে ভুল হয়। ভারতীয় বিমানগুলি নাকি খুব ছোট ছোট, ওগুলোর নাম ন্যাট, বাদুড়ের মতন নিঃশব্দে উড়ে আসতে পারে।
এ গুজবের কোনো ভিত্তি নেই, তবু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পূর্ব পাকিস্তানেও ফ্রণ্ট খুলে ভারত এই যুদ্ধটা সর্বত্র ছড়িয়ে দেবে, মামুনের তা বিশ্বাস হয় না। কিন্তু কাশ্মীর ছেড়ে লাহোরে তো ভারত আক্রমণ করেছে ঠিকই। এবারে এদিকেও অতর্কিতে এসে পড়তে পারে। ভারতের কি মতলেব তা হলে পাকিস্তানকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া?
অফিসের কাজের চাপ সাঙ্ঘাতিক, তবু মামুন হঠাৎ এক সময় রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন একা। শুধু তাঁর সেক্রেটারি শওকতকে বলে এসেছেন যে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ফিরবেন, কোথায় যাচ্ছেন তা বলেননি। এখন পৌনে আটটা বাজে। প্রত্যেকদিন রাত সাড়ে বারোটা-একটা পর্যন্ত যুদ্ধের শেষতম খবর দিয়ে পাতা ছাড়তে হয়, পর পর কয়েক রাত মামুন বাড়ি ফেরেননি, অফিসে নিজের ঘরেই একটা ইজি চেয়ারে শুয়ে ঘুমিয়ে নিচ্ছেন কয়েক ঘণ্টা। আজ কাজ করতে করতে এক সময় তাঁর অসহ্য লাগছিল, তাঁর মনে হলো মাথায় একটু ঠাণ্ডা বাতাস লাগানো দরকার। তা ছাড়া মামুন নিজের মনকে বোঝালেন, শুধু রিপোটারদের মুখ থেকেই তিনি খবর পাচ্ছেন, কিন্তু সম্পাদক হিসেবে তাঁর নিজের চোখেও একবার শহরের অবস্থাটা দেখে আসা উচিত। গাড়ি নেননি, তিনি পায়ে হেঁটে বেরিয়েছেন। যদি সত্যিই প্লেন থেকে বোমা পড়ে, তা হলে বাড়ি বসে থেকেও কি নিস্তার পাওয়া যাবে?
অফিসে তাঁর মালিকের সঙ্গে রোজ রোজ তর্ক বাঁধছে, এ কাজ মামুন আর কতদিন করতে পারবেন তাতে সন্দেহ আছে। তবে, খবরের কাগজের কাজের একটা নেশা আছে, বিশেষত যুদ্ধ-বিগ্রহের মতন বড় ধরনের খবরের সময় কাজ ছাড়ার প্রশ্ন ওঠে না।
কাশ্মীরে সংঘর্ষ শুরু হবার পরদিনই হোসেন সাহেব মামুনকে তাঁর চেম্বারে ডাকিয়ে টেবিল চাপড়িয়ে বলেছিলেন, দ্যাখলেন, দ্যাখলেন, আমি তখনই কইছিলাম না? আপনেরা ম্যাডাম ফতিমা জিন্নারে সাপোর্ট করলেন! আমাগো চৌদ্দ পুরুষের ভাইগ্য যে ফতিমা জিন্না জেতে নাই। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইজ যদি মাইয়া মানুষ হইত, তাইলে আর রক্ষা আছিল? মাইয়া মানুষে এই যুদ্ধ চালাইতে পারতো? জবরদস্ত জেনারাল আইয়ুব খান আছে বইলাই তো ইণ্ডিয়া এখনো পাকিস্তানরে ডরায়! আপনেরা তখন ফতিমা জিন্নার নামে নাচতে আছিলেন।
মামুন নম্রভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন যে ফতেমা জিন্না জয়ী হলে হয়তো এ যুদ্ধই হতো না। ফতেমা জিন্না প্রেসিডেন্ট হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, গণতান্ত্রিক সরকার এলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই কাশ্মীর-সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা যেত। কিন্তু কে শোনে কার কথা! হোসেন সাহেব টেবিল চাপড়েই নিজের মতটা প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাঁর কাছে যুদ্ধ মানে যেন দুই দেশের শীর্ষ পদাধিকারীর দৈহিক লড়াই! ভারতের প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ছোট্ট খাট্টো মানুষ, আর আইয়ুব খান লম্বা চওড়া পুরুষ, সুতরাং এই যুদ্ধে পাকিস্তান জিতবেই। হোসেন সাহেব হাত দিয়ে দেখিয়ে দেন, কী ভাবে আইয়ুব খান ঐ চড়ুই পাখির মতন লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে বাঁ হাতের মুঠোয় পিষে মেরে ফেলবেন।
সংবাদ পরিবেশনা ও সম্পাদকীয় নিয়েও হোসেন সাহেবের সঙ্গে মামুনের মতভেদ হচ্ছে পদে পদে। হোসেন সাহেব ইণ্ডিয়ার বদলে হিন্দুস্থান নামটির ওপর জোর দিতে চান। লোকে মুখে মুখে পাকিস্তান-হিন্দুস্থানের লড়াই বলে বটে, কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী পাশের রাষ্ট্রটির নাম ইণ্ডিয়া,দ্যাট ইজ ভারত। কাগজেকলমে হিন্দুস্থান নামে কোনো দেশের অস্তিত্ব নেই, সুতরাং সাংবাদিকতার এথিক্স অনুযায়ী ইণ্ডিয়া বা ভারতই লেখা উচিত। হোসেন সাহেব সে যুক্তি বুঝবেন না। তাঁর মতে, ইণ্ডিয়া মানেই হিন্দু সাম্রাজ্যবাদ।
গতকালের সম্পাদকীয় নিয়েও মতবিরোধ তুঙ্গে উঠেছিল। হোটেলওয়ালা হোসেন সাহেব এখন সম্পাদকীয় পলিসিও ডিকটেট করতে চান! কয়েকদিন আগে আদমজী জুট মিলে একটা হাঙ্গামা হয়ে গেছে, পুলিস সেখানকার শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়েছে। এই খবরে অনেকেই শঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন। বড় বড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলি ঐ জুট মিল এলাকা থেকেই শুরু হয়। মোনেম খাঁ এবং তার চ্যালারা এখন একটা সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা লাগিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে পারে, যাতে পশ্চিম রণাঙ্গনে পাকিস্তানী যুদ্ধের দুর্বলতা এদিকে চাপা পড়ে যায়। মামুন সেই বিষয়েই লিখেছিলেন সম্পাদকীয়। ছাপতে দেবার আগেই সেই সম্পাদকীয় পড়ে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে হোসেন সাহেব বলেছিলেন, এদিকে এত বড় একটা যুদ্ধ চলতাছে, আর আপনে ল্যাখলেন এই রকম একটা তুচ্ছ বিষয়ে? আপনার কি মাথা খারাপ হইছে, এডিটর সাহেব?
মামুন বলেছিলেন, এটা মোটেই তুচ্ছ বিষয় নয়! এখন কোনোরকম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়াতে দেওয়া উচিত নয় আমাদের নিজেদের স্বার্থে। আসল লড়াইয়ের জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে না?
টেবিল থেকে সেদিনের “ইত্তেফাক” কাগজটা তুলে নিয়ে মামুন আরও বলেছিলেন, এই দেখুন, আজকের “ইত্তেফাক”-এও সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, “রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিরোধ যতই, মর্মান্তিক হোক, তা যেন বীভৎস সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পুনরাবৃত্তি না ঘটায়।”
হোসেন সাহেব তাঁর কাগজের সঙ্গে অন্য কোনো কাগজের তুলনা পছন্দ করেন না। তাঁর মতে, “দিন কাল”ই বাংলার শ্রেষ্ঠ সংবাদপত্র। তিনি তাঁর দাড়ি চেপে ধরে রাগের সঙ্গে বললেন, ঐ মানিক মিঞার চোথা কাগজে কী ল্যাখছে তা আমার জানার দরকার নাই! মনে রাখবেন, “দিন কাল” আওয়ামী লীগের মাউথ পীস না! আমাগো মতামত স্বাধীন। এই যুদ্ধে হিন্দুস্থানরে আমরা ক্র্যাশ কইরা দিমু! আপনে সেই রকম গরম গরম ল্যাখেন।
মামুন এবারে আলতাফের দিকে ফিরে কঠোরভাবে বলেছিলেন, তোমার চাচাকে জিজ্ঞেস করো, আমি এখনও এই কাগজের সম্পাদক আছি কিনা। যতক্ষণ আমি তা থাকবো, ততক্ষণ আমার লেখার ওপরে কেউ কলম চালাতে পারবে না। আরও একটা কথা ওঁকে বলে দাও, খবরের কাগজে মিথ্যা মিথ্যা গরম গরম কথা লিখে একটা দেশকে ক্র্যাশ করে দেবার ক্ষমতাও আমার নাই, সেই রকম কোনো ইচ্ছাও নাই।
আলতাফ তার চাচাকে খুব ভালোই চিনে গেছে। মামুন ভাই যতক্ষণ শান্ত থাকেন ততক্ষণই হোসেন চাচা পেয়ে বসেন আর নানারকম হুংকার দেন। মামুন একবার পদত্যাগের কথা তুলতেই উনি চুপসে যান। এই অফিসের অধিকাংশ ছেলেছোঁকরাই মামুনের ভক্ত, মামুন কাজ ছেড়ে দিলে তারাও সদলবলে চলে যাবে, কাগজ বন্ধ হয়ে যাবে।
আলতাফ সহাস্যে বললো, আরে না, না, মামুন ভাই, আমার চাচা বিচক্ষণ ব্যক্তি। তিনি ঠিকই বোঝেন যে ওরকম কিছু সম্ভব না। উনি শুধু মাঝে মাঝে আপনারে একটু চ্যাতাইয়া দিতে চান, যাতে আপনে ইণ্ডিয়া সম্বন্ধে আর একটু গরম গরম অ্যাটাকিং লেখেন!
রাস্তায় বেরিয়েও মামুনের মাথায় এই সব কথাই ঘুরছে। তিনি কিছুক্ষণ অফিসের বিষয় ভুলে থাকতে চান। তিনি সিগারেট ধরিয়ে, এক খিলি পান খাওয়ার কথা ভাবলেন।
অন্ধকার হলেও রাস্তা একেবারে নির্জন নয়। মোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা। অনেকেই তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। এমন ধপধপে চাঁদের আলোয় বোমারু বিমান এসে পড়লেও ওপর থেকে ঢাকা শহরটি স্পষ্ট চিনতে পারবে।
বড় দোকানপাট সব বন্ধ থাকলেও দু-একটা পান বিড়ির দোকান গোপনে বিক্রি বাটা চালাচ্ছে। একটা ছোটখাটো জটলার মধ্যে গান ধরেছে একজন ভিখিরি জাতীয় মানুষ। এরা সিনেমা হলের সামনে ভিক্ষে করে। ব্ল্যাক আউটের জন্য রোজগার বন্ধ। মামুন গানটা শুনলো মন দিয়ে।
আল্লা যদি করে ভাই লাহোরে যাইব
হুথায় শিখের সাথে জেহাদ করিব।
জিতিলে হইব গাজী মরিলে শহীদ
জানের বদলে জিন্দা রহিবে তৌহিদ।
গানটা শুনে মামুনের ঠোঁটে হাসি এলো। এটা অনেককাল আগেকার একটা ছড়া, খুব শৈশবে মামুন তাঁর পিতামহের মুখে শুনেছিলেন। সেই ছড়াতেই সুর দিয়ে এই লোকটি এখন বেশ বুদ্ধি করে কাজে লাগিয়েছে তো।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মামুন লোকজনের কথাবার্তাও শুনলেন কিছু কিছু। অধিকাংশই গুজব-চচা। দুটো গুজব নতুন শুনলেন মামুন। রেডিওতে নাকি বলেছে যে একজন মান্যগণ্য মৌলবী স্বপ্ন দেখেছেন, স্বয়ং রসুলুল্লাহ যুদ্ধের পোশাকে সজ্জিত হয়ে ঘোড়ার সওয়ার হয়েছেন। মৌলবী জিজ্ঞেস করলো, হুজুর সওয়ারে কায়েজাত, কোথায় তশরীফ নিতে যাচ্ছেন। হুজুর উত্তর দিলেন, পাকিস্তানে জেহাদ ঘোষণা করা হয়েছে, ওদের রক্ষার জন্যই যেতে হচ্ছে আমাকে।
আর একটি, যুদ্ধে পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য আশমান থেকে নেমে আসছেন অসংখ্য ফেরেশতা। তাঁদের লম্বা দাড়ি ও সবুজ পোশাক। ইণ্ডিয়ার সৈন্যরাই এর সত্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। হিন্দুস্থানী সোলজাররা ধরা পড়বার পর ক্যাম্পে এসে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করছে, আমাদের যে সবুজ পোশাকধারী সৈনিকরা গ্রেফতার করলো, তারা কোথায়?
ভিড়ের মধ্য থেকে একজন চেঁচিয়ে উঠলো, ভাই-বেরাদরেরা শুনেছো, লাহোরে আসল লড়াই লড়ত্যাছে কারা? আমাগো ইস্ট পাকিস্তানী ব্যাটেলিয়ান! আমাগো বাঙ্গালী সোলজারদের সামনেই ইণ্ডিয়ানরা দাঁড়াইতে পারতেছে না, পিছু হাঁটতেছে।
আর একজন বললো, তা তো বোঝলাম, কিন্তু বাংগালী ব্যাটেলিয়ান রইলো লাহোরে, আর ইদিকে ইণ্ডিয়ান আর্মি যদি যশোর দিয়া ঢুইক্যা পড়ে, তাইলে তাগো সাথে লড়াই দিবে কেডা? ইদিকে যে বেবাক ফাঁকা!
মামুন আবার হাঁটতে শুরু করলেন। একটা পান খেয়ে চাঙ্গা বোধ করছেন। অনেকদিন তিনি এরকম একলা একলা ঘুরে বেড়াননি সন্ধের পর। তিনি আজ নিজের চোখে দেখলেন, নিজের কানে শুনলেন, ঢাকা শহরের মানুষ এই যুদ্ধে অসহায় বোধ করছে, পশ্চিম পাকিস্তানী প্রতিরক্ষার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এখন রসুলুল্লার ও ফেরেস্তাদের ওপর তাদের ভরসা। কাশ্মীর নিয়ে কারুর বিশেষ মাথাব্যথা দেখা গেল না।
মামুন কোনো গন্তব্য ঠিক করে পথে বেরোননি। তবু তিনি একটি বাড়ির সামনে এসে থামলেন। পকেট থেকে সরু টর্চ জ্বেলে দেখলেন, সদর দরজা বন্ধ। একটু ইতস্তত করে তিনি টর্চের উল্টো দিক দিয়ে দরজায় ঠকঠক করে ঠুকলেন কয়েকবার।
একটু পরে হাতে একটি কুপি নিয়ে অল্পবয়সী একটি মেয়ে দরজার এক পাল্লা খুলে মামুনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
মামুন জিজ্ঞেস করলো, বাবুল বাসায় আছে না?
মেয়েটি বললো, জী না, বাসায় নাই।
মেয়েটি দরজা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছিল, মামুন এক হাত দিয়ে ঠেলে তাকে রুখলেন। ভেতরে এসে ভর্ৎসনার সুরে বললেন, তুই কে রে, ছেমরী, আমারে চেনোস না?
শালোয়ার কামিজ পরা কিশোরী মেয়েটি বললো, জী না। আপা গ্যাট বন্ধ রাখতে কইছেন।
–তোর আপা কোথায়? তারে গিয়া ক যে মামুন মামা আইছে।
–আপা গোসলখানায়।
–ঠিক আছে, আমি উপরে গিয়া বসতাছি।
সিঁড়ি দিয়ে মামুন চলে এলেন দোতলায়। এই সময় বাবুল কোথায় গেল? আলতাফের ছোট ভাই হলেও বাবুল চৌধুরী ‘দিনকাল পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছে। মামুনের অনুরোধেও সে কিছু লিখতে চায় না। আগে সে নিউজ রুমে আড্ডা দিতে যেত সন্ধের দিকে, এখন তাও যায় না, তা হলে কোথায় যায় সে?
ওদের বাচ্চাটি নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে, নইলে তার সাড়া পাওয়া যেত। মঞ্জুর ছেলেকে মামুন এত ভালোবাসেন যে কয়েকদিন না দেখলে তাঁর মন ছটফট করে। যুদ্ধের ডামাডোলে বেশ কিছুদিন তিনি এ বাড়িতে আসতে পারেন নি। বসবার ঘর পেরিয়ে মামুন শয়নকক্ষে এসে উঁকি দিলেন। সুখু মিঞা সত্যিই ঘুমিয়ে আছে। মামুন কাছে এসে আলতো করে তার কপালে একটা চুম্বন দিলেন, তাকে জাগালেন না।
মঞ্জু গা ধুয়ে আসুক, ততক্ষণ তিনি অপেক্ষা করবেন। বসবার ঘরে ফিরে এসে তিনি আর একটি সিগারেট ধরালেন। ইদানীং তাঁর সিগারেট খাওয়া বেড়ে গেছে। রাত জাগতে গেলে সিগারেট বেশি খেতেই হয়। অফিসে ফিরে গিয়ে আজও অনেক রাত জাগতে হবে। আর যদি ইণ্ডিয়ান বোমারু বিমান আসে…অনেকের ধারণা ওরা এলে আসবে মাঝরাত্তিরের পর…থাক, মামুন এখন ওসব নিয়ে চিন্তা করতে চান না।
ঢাকা শহরে খুব ধরপাকড় চলছে। গ্রেফতার হয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। এরা যে দেশপ্রেমিক তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে? যুদ্ধের সময় কোনো দেশপ্রেমিক কি অন্য দেশের সমর্থক হতে পারে? গভর্নর মোনেম খাঁ হিন্দু ছেলেছোঁকরাদের যে আটক করছেন, তাতে অবশ্য বিশেষ দোষ দেওয়া যায় না। সেকেণ্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের সময় আমেরিকা তার নিজের দেশের মধ্যে জাপানী বংশোদ্ভূতদের আটক করে রাখেনি? পল্টন বাবুল-আলতাফদের দু-একজন হিন্দু বন্ধু আটক হয়েছে, সেজন্য তারা খুব উত্তেজিত, কিন্তু আপকালে এরকম কিছু কিছু ঘটনা তো ঘটবেই।’
বাবুল হঠাৎ ধরা-টরা পড়ে যাবে না তো? এই ছেলেটি বড় গভীর-সঞ্চারী, মামুন ওকে ঠিক বুঝতে পারেন না। তাঁর অতি স্নেহের, অতি আদরের মঞ্জুর স্বামী এই বাবুল। মামুনের নিজের পুত্র সন্তান নেই, তিনি বাবুলকে নিজের ছেলের মতন দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাবুল তাঁকে এড়িয়ে এড়িয়ে যায়। বাবুল বলে, সে এখন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নেই, সে আওয়ামী লীগে নেই, ন্যাপের সঙ্গেও নেই তা সত্যি। ফতেমা জিন্না হেরে যাবার পরে তো সব রকম রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপও আবার বন্ধ হয়ে গেছে। তবু, বাবুল যেন গোপনে গোপনে কিছু একটা করছে। সে প্রায়ই একা একা গ্রামে গ্রামে ঘুরতে যায় কেন? ছেলেটার নিজের নাম প্রচারের চেষ্টা নেই, রোজগার বাড়াবারও ধান্দা নেই, তবে সে কী চায়?
বাথরুমে মঞ্জু গায়ে জল ঢালছে সেই শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েটার তিনবেলা স্নানের বাতিক। তার হৃদয়ের মতনই তার শরীররটাও সব সময় ঝকঝকে পরিচ্ছন্ন। এই মেয়েটার কথা ভাবলেই মামুনের মনটা দ্রব হয়ে আসে। এই মেয়েটা কোনো বড় রকমের দুঃখ পেলে মামুন তা কিছুতেই সহ্য করতে পারবেন না।
রাস্তায় একটা হুড়োহুড়ির শব্দ, কিছু লোক ছোটাছুটি করছে। মামুন জানলার কাছে এসে দাঁড়ালেন। আবার কিছু একটা গুজব। ও হরি, ওয়াটার ওয়ার্কসের শব্দ। প্রত্যেকদিনই এই শব্দ পাওয়া যায়। কিন্তু আজ ঐ শব্দতেই লোকে বোমারু বিমানের শব্দ বলে ভুল করেছে। অবশ্য আজ নিস্তব্ধতাও অনেক বেশি।
আকাশে কী শান্ত, সুমধুর জ্যোৎস্না। এর মধ্যেও আততায়ী এসে শত শত মানুষ খুন করার জন্য বোমা নিক্ষেপ করতে পারে? কিন্তু মানুষ তো মরছে। এই মুহূর্তে ছা-আগনুরে পাকিস্তানী স্যাবার জেট আর ভারতীয় ভ্যামপায়ার অগ্নিবর্ষণ করছে, ইছোগিল খালের। এপাশে-ওপাশে গর্জন করছে রাইফেল।
মামুনের হঠাৎ মুসাফিরের কথা মনে পড়লো। রহস্যময় পুরুষ। তাঁকে নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে পরিচিত মহলে। লোকটা সত্যিকারের কী মহাপুরুষ, না জালিয়াৎ? বিশ্ব মানবতাবাদী, না গুপ্তচর? কাশ্মীর উপলক্ষ করে এই সময়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ যে শুরু হবে, তা উনি আগে থেকে কী করে জানলেন? মামুন তো কল্পনাও করতে পারেননি, ইণ্ডিয়ার অনেক পত্র-পত্রিকাতেও এই আকস্মিকতায় বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। তবে উনি কী করে জানলেন? স্বপ্ন দেখেছেন?
এর মধ্যে আরও দু-তিনবার মুসাফিরের সঙ্গে দেখা হয়েছে মামুনের। প্রত্যেকবারই উনি ওঁর ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধির প্রখরতায় মুগ্ধ না হয়ে পারেননি। অবশ্য ম্যাজেশিয়ানরাও চকিতে মানুষকে মুগ্ধ করে দিতে পারে। মামুন একদিন অফিস আসার পথে দেখেছিলেন, গ্যাণ্ডেরিয়ার মোড়ে উনি একা দাঁড়িয়ে আছেন। ওঁর চেহারার জন্য ওঁকে ভিড়ের মধ্যেও আলাদা ভাবে চোখে পড়ে। দীর্ঘ, সমুন্নত দেহ, সাদা কুতা-পাজামা পরা, চোখে কালো চশমা। ঐ চশমা তিনি কক্ষনো চোখ থেকে খোলেন না। অথচ অন্ধও তো নন, একা একাই চলাফেরা করেন।
মামুন গাড়ি থামিয়ে তাঁকে তুলে নিতে চেয়েছিলেন। তিনি রাজি হননি। মৃদু হেসে বলেছিলেন, এখন যাবো না, এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নানারকম মানুষ দেখছি। বেশ লাগছে।
যেন মুসাফির অন্য গ্রহের অধিবাসী। তিনি মানুষ দেখতে এসেছেন। কথার সুরটি ছিল সেই রকম। মামুনের মজা লেগেছিল। লোকটিকে দিয়ে কিছু লেখাতে পারলে ভালো হতো।
কিন্তু তা আর হলো না। পরশুদিন মুসাফিরও গ্রেফতার হয়েছেন। তার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। মুসলমান হলেও ঐ মুসাফির ইণ্ডিয়ান সিটিজেন, এই যুদ্ধের সময় অন্য দেশের সিটিজেনদের আলাদা করে এক জায়গায় আটকে রাখাই তো স্বাভাবিক, সব দেশই তাই করে।
প্রথম দিনের আড্ডায় মামুন যাঁদের মুসাফিরের বন্ধু হিসেবে দেখেছিলেন, তারা এখন সবাই মুসাফিরের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করছেন। মামুন কবি জসিমুদ্দিনের কাছে খবর করেছিলেন, কবিও অনেকটা এড়িয়ে গিয়ে বললেন, পার্টিশানের আগে ওনার সাথে পরিচয় ছিল, তারপর অনেকদিন খবর রাখি না, এখন ওনার মতবাদ কী হয়েছে না হয়েছে তা আমি কী করে বলবো! কেউ কেউ বললো, লোকটা আসলে হিন্দু, বিশেষ একটা মতলোবে এই সময়ে ঢাকায় এসেছিল। নিশ্চয়ই ইন্ডিয়ার স্পাই। মামুনের এতটা বিশ্বাস হয় না। স্পাইয়ের চাকরির জন্য এতটা বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত লোকের প্রয়োজন হয় না। তা ছাড়া স্পাই হলে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লাগার সম্ভাবনার কথা সে আগেই বলে দেবে কেন?
মুসাফির আরও একটা কথা বলেছিলেন, যা ভাবলেও এখনও মামুনের হাসি আসে। মামুনের ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের মাঝখানে নাকি একটি সুন্দরী নারী এসে ছায়া ফেলবে। মামুন দাড়িতে হাত বুলোলেন, অর্ধেকের বেশি পেকে গেছে। মাথার পিছনে ইন্দ্রলুপ্ত। চশমা
পরলেই একেবারে অন্ধ। বয়েস তাঁর খুব বেশি হয়নি, কিন্তু অকাল বার্ধক্য এসে গেছে, এই সময় কোন সুন্দরী নারী স্বেচ্ছায় আসবে তাঁর জীবনে! আকাশ-কুসুম ছাড়া আর কিছু পাওয়ার আশা নেই এ জীবনে।
রাস্তায় আবার গোলমাল, একটা ধাতব ঘর্ঘর শব্দ। দুটো সাঁজোয়া গাড়ি বেরিয়েছে। তা হলে সব কটা ট্যাঙ্ক পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হয়নি, কয়েকটা রয়ে গেছে? ঢাকাবাসীদের মনোবল বাড়াবার জন্য সেগুলো রাস্তায় বার করা হয়েছে, ভারতীয় বিমান এলে এই দু-চারখানা। ট্যাঙ্কই তাদের মোকাবিলা করবে! পূর্ব পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলি রোজ বড় বড় ব্যানার হেডলাইনে যুদ্ধের উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, এখানে একটা কিছু না ঘটলে আর ইজ্জত থাকে না।
মামুন জানলা বন্ধ করে দিতেই অন্য দিক থেকে একটা আলোর শিখা দেখতে পেলেন। পাছে মঞ্জু হঠাৎ তাঁকে দেখে ভয় পেয়ে যায় তাই তিনি আগে থেকেই সহাস্যে বললেন, কেমন আছিস রে, মঞ্জু? আমার বিলকিসবানুর খবর কী?
একটা বড় মোম হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো মঞ্জু। সদ্য স্নান করে সে একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছে, এক রাশ চুল পিঠের ওপর ফেলা। সে আস্তে আস্তে হেঁটে আসছে, বাতাস নিয়ে আসছে তার শরীরের সুগন্ধ। তার সারল্যমাখা দু চোখে এখন অদ্ভুত বিস্ময়, যেন সে মামুনকে চিনতে পারছে না।
মামুনও মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন। অন্ধকারের মধ্যে মোমবাতি হাতে নিয়ে এই অসামান্যা রমণীটি যেন উঠে এসেছে ইতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে। কিংবা সে রক্তমাংসের মানবী নয়, কোনো মহাকবির কল্পনা। যুদ্ধ-বিগ্রহ, রাজনৈতিক দলাদলি, ক্ষুদ্র স্বার্থ সব কিছু এই রূপের কাছে তুচ্ছ। নারীর এই রূপ যুগ যুগ ধরে পুরুষকে মহান শিল্প সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
এই প্রৌঢ় বয়েসেও মামুনের বুক কেঁপে উঠলো। তারপরই তিনি দেখলেন মঞ্জুর মুখে আতঙ্কের ছায়া।
খুব কাছে এসে মঞ্জু থমকে দাঁড়ালো। একদৃষ্টে চেয়ে রইলো, কোনো কথা বললো না।
মামুন মঞ্জুর এক হাত ধরে বললেন, কী হয়েছে তোর? ভয় পেয়েছিস নাকি? ভয় কী?
মঞ্জ খুব আস্তে আস্তে প্রায় ফিসফিসানির মতন গলায় জিজ্ঞেস করলো, মামুনমামা, উনি কোথায়? উনি আসেন নি?
মামুন বললো, বাবুলের খোঁজেই তো আসলাম। তাকে বাসায় দেখছি না। সে গেছে কোথায়, তোকে কিছু বলে যায়নি?
মঞ্জু দু’দিকে মাথা নেড়ে বললো, না।
মামুন বললেন, আচ্ছা পাগল ছেলে তো! এমন দিনে বউকে একা বাসায় রেখে কেউ বাইরে থাকে? তবে তুই চিন্তা করিস না, রাস্তায় অনেক মানুষজন, সে এসে পড়বে।
মোমবাতিটা খুব যত্ন করে একটা টেবিলের ওপর আটকালো মঞ্জু। তারপর হঠাৎ পেছন ফিরে মামুনের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে হু-হুঁ করে কাঁদতে লাগলো। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো, মামুনমামা, আমার: কী হবে? উনি আমার সাথে আর ভালো করে কথা কন না, আমারে আর ভালোবাসেন না!
কত বাচ্চা বয়েস থেকে দেখছেন এই মেয়েটিকে, মামুন এর কষ্ট সইতে পারেন না। বাবুলের ওপর তাঁর বেশ রাগ হলো, কিসের এত আড্ডা সে ছেলের যে এমন বউয়ের কথা ভুলে যায়? মঞ্জুর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মামুন সাবান, পারফিউম ও শরীরের একটা আলাদা সুগন্ধ পেলেন, তিনি ভুলে গেলেন যুদ্ধের কথা, ভুলে গেলেন অফিসের কথা। কোমল সুরে তিনি বলতে লাগলেন, তুই কিছু চিন্তা করিস না, মা, সে এসে পড়বে। সে বুঝদার ছেলে, সে কোথাও যাবে না।
–আমি জাহানারা আপার বাসায় গেছিলাম, উনারাও কিছু বলতে পারলেন না। আগে ঐ বাড়িতে সন্ধ্যাবেলায় যেতেন প্রায়ই!
–তুই এই অন্ধকারের মধ্যে একা রাস্তায় বেরিয়েছিলি? কাজটা মোটেই ভালো করিস নাই! বাবুল তো দায়িত্ববান মানুষ, নিশ্চয়ই কোথাও…।
–সেই দুপুর দুইটার সময় বাইরাইছেন…আমি জুনিপারের বাসা থিকা তিন-চার জাগায় টেলিফোন করলাম, কেউ কিছু জানে না, পল্টনভাইও কিছু কইতে পারলেন না। জুনিপার আমারে ভয় দেখাইলো
–জুনিপারের কথা তুই শুনিস না।
মঞ্জু একবার মুখ তুলে জল-ছলছল দু চোখে বললো, মামুনমামা, উনি কোথায় যান বলেন তো? আমি বুঝে গেছি, উনি আমারে আর ভালোবাসেন না। তাইলে আমি কী নিয়া বাঁচবো।
মামুন মঞ্জুর মুখখানা আবার নিজের বুকে চেপে ধরলেন। বিদ্যুতের মতন একটা চিন্তা তাঁর মন ছুঁয়ে গেল। বাবুল ইদানীং খবরের কাগজের অফিসে যায় না, প্রত্যক্ষ রাজনীতিও করে না, বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়, তা হলে কি সে অন্য কোনো মেয়ের পাল্লায় পড়েছে? সে অত্যন্ত রূপবান যুবক, ঢাকা শহরের অনেক যুবতীই তাকে আকৃষ্ট করতে চাইতে পারে। হাই সোসাইটিতে এরকম কিছু কিছু রমণী দেখেছেন তিনি, যাদের কোনো হায়াসরম নেই, বিবাহিত পুরুষদের দিকে তারা যখন তখন ঢলে পড়ে। নব্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে এরকম একটা ইঙ্গ বঙ্গ সমাজ তৈরি হয়েছে, যারা পশ্চিম পাকিস্তানীদের বাড়িতে ডেকে পার্টি দেয়, ঘরের বউ-ঝিদের বাইরে বার করে, বাবুল কি সেরকম কোথাও গিয়ে জুটলো? তিনি মনে মনে তৎক্ষণাৎ শপথ করলেন, যেভাবেই হোক, বাবুলকে তিনি ফিরিয়ে আনবেনই!
মামুন মঞ্জুর পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বললেন, দূর পাগল, সে তোরে ভালোবাসবে না, এ কি হতে পারে? বাবুল আমাদের হীরার টুকরা! সে একটু বেশি আড্ডা দিতে ভালোবাসে এই যা! তোর কোনো ভয় নাই রে, মঞ্জু, সে আজ যতক্ষণ না আসে, আমি থাকবো এখানে। কী, তা হলে হলো তো? আর ভয় নাই তো? একটু চা খাওয়াবি?
চায়ের প্রস্তাবে মঞ্জু নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলো মামুনের বুক থেকে। কিন্তু মামুনের চায়ের জন্য তেমন ব্যস্ততা নেই। মেয়েটা ভয় পেয়েছে, তাকে সান্ত্বনা দেওয়াটাই অনেক বেশি জরুরি, তিনি মঞ্জুকে সম্পূর্ণভাবে বুকে জড়িয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগলেন।