সেন্ট অ্যালবান্স

সেন্ট অ্যালবান্স

বাবার কর্মস্থল ১৯৫০ সালে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কর্মস্থলটি হাইগেটের পার্শ্ববর্তী হ্যাম্পস্টেড থেকে স্থানান্তর করা হয়েছিল লন্ডনের দক্ষিণাঞ্চলের সীমানাবর্তী মিল হিলে নবনির্মিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল রিসার্চে। হাইগেট থেকে সেখানে যাতায়াতের বদলে পুরো পরিবার লন্ডনের বাইরে সরিয়ে নেওয়া এবং কাজের জন্য শহরে যাতায়াত করাটাই বেশি যৌক্তিক মনে হয়েছিল বাবার। তাই মা-বাবা সেন্ট অ্যালবান্সের ক্যাথেড্রাল সিটিতে একটি বাড়ি কিনে ফেলেন। এই বাড়িটি ছিল মিল হিল থেকে ১০ মাইল উত্তরে এবং লন্ডনের কেন্দ্র থেকে ২০ মাইল উত্তরে। ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের বাড়িটিতে বেশ আভিজাত্যের ছাপ ছিল। বাড়িটি কেনার সময় মা-বাবার তেমন আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না। আবার বাড়িটি বাসযোগ্য করতে তাঁদের অনেক মেরামতের কাজও করতে হয়েছিল। তবে এরপর বাবা একজন সাচ্চা ইয়র্কশায়ারবাসীর মতোই মেরামতের কাজে আর একটা পয়সাও খরচা করতে রাজি হননি। বরং তিনি যতটা পেরেছেন, বাড়িটিকে যত্নআত্তি করে গেছেন। আবার তাতে প্রয়োজনে নিজেই রং লাগিয়েছেন। কিন্তু এত বড় একটা বাড়িতে এ ধরনের কাজ সামলানোর মতো যথেষ্ট দক্ষতা তাঁর ছিল না। বাড়িটি বেশ দৃঢ়ভাবে বানানো হয়েছিল। তাই এত সব অবহেলা অবলীলায় সহ্য করতে পেরেছিল সেটি। ১৯৮৫ সালে বাবার ভীষণ অসুস্থতার সময় মা-বাবা বাড়িটি বিক্রি করে দেন। পরের বছরই বাবা মারা যান। সম্প্রতি আমি বাড়িটি দেখেছি। দেখে মনে হলো না যে তাতে আগের চেয়ে খুব বেশি কোনো মেরামতের কাজ করা হয়েছে।

আমাদের বাড়ির নকশা করা হয়েছিল গৃহকর্মীসহ একটি পরিবারের বসবাসের উপযোগী করে। ভাঁড়ার ঘরে একটি ইন্ডিকেটর বোর্ড ছিল, কোন ঘর থেকে কলিং বেল টেপা হয়েছে, সেখানে তা দেখা যেত। আমাদের কোনো গৃহকর্মী ছিল না বলা বাহুল্য। আমার প্রথম শোবার ঘরটা ছিল কিছুটা ইংরেজি এল আকৃতির। নিঃসন্দেহে এটি কোনো গৃহকর্মীর ঘর ছিল। আমার খালাতো বোন সারাহর পরামর্শে এই ঘরটা পেতে আবদার করেছিলাম আমি। সারাহ ছিল আমার চেয়ে বয়সে একটু বড়। তাকে আমার খুবই ভালো লাগত। সে বলেছিল, এই ঘরটাতে আমরা অনেক মজা করতে পারব। ঘরটির অন্যতম আকর্ষণীয় দিকটা ছিল, জানালা বেয়ে উঠে ওই ঘর থেকে বাইসাইকেলের শেডের ছাদে লাফিয়ে নামা যেত, আর সেখান থেকে লাফ দিলেই মাটি।

আমার মায়ের বড় বোনের নাম জেনেট। তাঁরই মেয়ে সারাহ। খালা চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং বিয়ে করেছিলেন এক সাইকোঅ্যানালিস্টকে। তাঁরাও আরও পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে হারপেনডেন গ্রামে আমাদের মতোই এক বাড়িতে থাকতেন। সেন্ট অ্যালবান্সে আমাদের আসার পেছনেও অন্যতম কারণ ছিল এই খালা আর তাঁর পরিবার। সারাহর কাছে থাকতে পারাটা ছিল আমার জন্য বাড়তি এক পাওনা। মাঝেমধ্যেই বাসে চেপে আমি হারপেনডেনে তাকে দেখতে চলে যেতাম।

সেন্ট অ্যালবান্সের অবস্থান ছিল প্রাচীন রোমান শহর ভেরুলিমিয়ামের কাছে। লন্ডনের পর এটিই ছিল ব্রিটেনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোমান বসতি। মধ্যযুগে এখানে ব্রিটেনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ মঠ ছিল। সন্তু অ্যালবানের সমাধিমন্দির ঘিরে এটি নির্মিত হয়েছিল। সন্তু অ্যালবান ছিলেন রোমান সেনাপতি। কথিত আছে, খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাস করার কারণে ব্রিটেনে তাঁকেই প্রথম মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এখন ওই সমাধিমন্দিরের ধ্বংসাবশেষ হিসেবে কেবল খুব বড় ও বিশ্রী একটা গির্জা এবং পুরোনো একটা তোরণ ভবন টিকে আছে। এ তোরণটি এখন সেন্ট অ্যালবান্স স্কুলের অংশ। পরে এই স্কুলেই আমি পড়তাম। হাইগেট কিংবা হারপেনডেনের সঙ্গে তুলনা করলে সেন্ট অ্যালবান্স ছিল বেশ নীরস আর রক্ষণশীল এক এলাকা। আমার মা-বাবাও সেখানে খুব বেশি বন্ধুবান্ধব তৈরি করতে পারেননি। এর আংশিক কারণ অবশ্য তাঁরা নিজেরাই। কারণ, মা-বাবা নিরিবিলি থাকতেই পছন্দ করতেন, বিশেষ করে আমার বাবা। তবে এখানে বিভিন্ন ধরনের জনগোষ্ঠীর প্রতিফলন দেখা যেত। সেন্ট অ্যালবান্সে আমার স্কুলের এমন কোনো বন্ধু ছিল না, যাদের মা-বাবাকে বুদ্ধিজীবী বলা যেতে পারে।

হাইগেটে আমাদের পরিবারকে মোটামুটি স্বাভাবিক হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। কিন্তু আমার ধারণা, সেন্ট অ্যালবান্সে আমাদের গণ্য করা হতো ছিটগ্রস্ত পরিবার হিসেবে। আসলে আমার বাবার আচার-আচরণের কারণে এ রকম ধারণা ক্রমেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। কারণ, টাকা বাঁচানোর সুযোগ পেলে চেহারাসুরত নিয়ে তিনি কোনো কিছুর পরোয়া করতেন না। তরুণ বয়সে তাঁর পরিবার ছিল খুবই দরিদ্র। সে জন্য এটি তাঁর ওপর এক দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে গিয়েছিল। নিজের সুখের জন্য তিনি কোনোমতেই অর্থ ব্যয় সহ্য করতে পারতেন না। এমনকি পরে আর্থিক সামর্থ্য হলেও তাঁর এই স্বভাব বদলায়নি। খুব বাজে রকমের ঠান্ডা লাগার পরও বাড়িতে তিনি সেন্ট্রাল হিটিং লাগাতে রাজি হননি। বরং তিনি সাধারণ কাপড়চোপড়ের ওপর কয়েক প্রস্থ সোয়েটার এবং ড্রেসিং গাউন পরে থাকতেন। তবে তিনি অন্যদের ব্যাপারে খুবই উদারহস্ত ছিলেন।

১৯৫০-এর দশকের দিকে বাবার হঠাৎ মনে হলো, গাড়ি কেনার মতো সামর্থ্য তাঁর হয়েছে। কাজেই যুদ্ধের আগেকার সময়ের একটি লন্ডন ট্যাক্সি কিনে ফেললাম আমরা। তারপর বাবা আর আমি মিলে একটি নিসেন কুঁড়েঘরকে গ্যারেজ বানিয়ে ফেললাম। তাতে অবশ্য প্রতিবেশীরা বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেও আমাদের দমানো যায়নি। অধিকাংশ ছেলের মতো আমিও মা- বাবার কারণে বিব্রত হতাম। তবে সেটি আমাকে কখনো দুশ্চিন্তায় ফেলেনি।

ছুটির দিনগুলোতে সময় কাটাতে মা-বাবা একটা জিপসি ক্যারাভান কিনেছিলেন। সেটি ওসমিংটন মিলসের একটি মাঠে রাখা হয়েছিল। জায়গাটা ব্রিটেনের দক্ষিণ উপকূলের কাছে ওয়েমাউথে। ক্যারাভানটির আগের মালিক ছিলেন এক জিপসি | তিনি বেশ জমকালো রঙে পুরোটা সাজিয়েছিলেন। ওটার প্রকটতা কমাতে বাবা ক্যারাভানটার পুরোটা সবুজ রং করেছিলেন। ক্যারাভানটিতে মা-বাবার জন্য একটি ডাবল বেড এবং সন্তানদের জন্য নিচে একটা কাপবোর্ড ছিল। তবে বাবা আর্মি-সারপ্লাস স্ট্রেচার লাগিয়ে তাতে বাঙ্ক বেড বানিয়ে ফেলেছিলেন। আর্মি- সারপ্লাস তাঁবুতে ঘুমাতেন মা-বাবা। সেখানে আমরা ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত গ্রীষ্মের ছুটি কাটিয়েছিলাম। তারপরই কাউন্টি কাউন্সিল শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে ক্যারাভান সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল।

প্রথম সেন্ট অ্যালবান্সে আসার পর আমাকে মেয়েদের হাইস্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হলো। স্কুলটি নামে মেয়েদের হলেও সেখানে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেদেরও ভর্তি করা হতো। ওই স্কুলে এক টার্ম থাকার পর আমার বাবা আফ্রিকা পরিদর্শনে চলে গেলেন। প্রায় প্রতিবছরই তিনি সেখানে যেতেন। সেবার গিয়েছিলেন দীর্ঘ সময়ের জন্য, প্রায় চার মাসের জন্য। মা এই সময়টুকু একা একা থাকতে চাইলেন না। কাজেই আমার দুই বোন আর আমাকে নিয়ে তাঁর স্কুলের বান্ধবী বেরিলের সঙ্গে দেখা করতে ছুটলেন তিনি। বেরিলের বিয়ে হয়েছিল কবি রবার্ট গ্রেভসের সঙ্গে। তাঁরা মাজোরকার স্প্যানিশ দ্বীপে দেওয়া নামে এক গ্রামে থাকতেন। সময়টি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাত্র পাঁচ বছর পরের ঘটনা। এই যুদ্ধকালে হিটলার আর মুসোলিনির মিত্র স্পেনের একনায়ক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো তখনো ক্ষমতায় বহাল তবিয়তেই ছিলেন (তিনি আরও দুই দশক ক্ষমতায় ছিলেন)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আমার মা ছিলেন তরুণ কমিউনিস্ট লিগের সদস্য। তারপরও তিন সন্তান নিয়ে মা নৌকা আর ট্রেনে চড়ে সেখানে গিয়েছিলেন। আমরা দেয়াতে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম। সেই সময়গুলো সত্যিই দারুণ কেটেছিল। কবি রবার্টের ছেলে উইলিয়ামের সঙ্গে এক টিউটরের কাছে পড়তাম আমি।

আমাদের টিউটর ছিলেন কবি রবার্টের আশ্রিত। আমাদের পড়ানোর চেয়ে এডিনবার্গের উৎসবের জন্য নাটক লিখতে বেশি আনন্দ পেতেন তিনি। তাই আমাদের কোনোভাবে কাজে ব্যস্ত রাখতে চাইতেন। সে জন্য প্রতিদিন বাইবেলের একটি অধ্যায় পড়তে দিয়ে পরে তার ওপর কিছু লিখতে বলতেন। আমাদের দুজনকে ইংরেজি ভাষার সৌন্দর্য শেখাতে এ পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন তিনি। এভাবে সেখান থেকে ফিরে আসার আগেই পুরো জেনেসিস আর এক্সোডাসের কিছু অংশ শেষ করেছিলেন। এভাবে চর্চার ফলে খুব ভালোভাবে শিখে গিয়েছিলাম, ‘এবং’ দিয়ে কোনো বাক্য শুরু করতে হয় না। তাই একসময় আমি জানতে চাইলাম, বাইবেলের বেশির ভাগ বাক্যই তো ‘এবং’ শব্দ দিয়ে শুরু হয়েছে। উত্তরে আমাকে বলা হয়েছিল, রাজা জেমসের পর ইংরেজি ভাষা অনেক বদলে গেছে। এ কথা শুনে যুক্তি দেখালাম, তাহলে আমাদের খামোখা বাইবেল পড়ানোর মানে কী?

কিন্তু সেসব বিফল হয়েছিল। সে সময় বাইবেলের প্রতীকবাদ এবং অধ্যাত্মবাদে খুব মজেছিলেন রবার্ট গ্রেভস। তাই এ ব্যাপারে তাঁর কাছে কিছু বলার মতো কেউ ছিল না।

ব্রিটেনের উৎসব শুরু হওয়ার কারণে আমরা দ্রুতই নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম। ক্ষমতাসীন লেবার দলের সরকারের পরিকল্পনা ছিল এটা। বিগত ১৮৫১ সালে প্রিন্স আলবার্ট গ্রেট এক্সিবিশনের আয়োজন করে একবার ব্যাপক সফলতা পেয়েছিলেন। আধুনিক হিসেবে এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক মেলা। এই মেলা ব্রিটেনের যুদ্ধের সময় এবং যুদ্ধ-পরবর্তী মন্দা কাটাতে সহায়তা করেছিল। সেই আয়োজনের সাফল্যকেই এই উৎসবের মাধ্যমে নতুনভাবে আনার চেষ্টা করছিল লেবার সরকার। মেলাটির আয়োজন করা হয়েছিল টেমস নদীর দক্ষিণ পারে। এ মেলায় প্রদর্শিত বিভিন্ন প্রকৌশলের ধরন এবং নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমার চোখ খুলে দিয়েছিল। তবে মেলাটি ছিল ক্ষণস্থায়ী। কারণ, সেই শরতে কনজারভেটিভ পার্টি নির্বাচনে জিতে মেলাটি বন্ধ করে দেয়।

১০ বছর বয়সে আমি তথাকথিত ইলেভেন-প্লাস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। এটা ছিল একধরনের বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা। এ পরীক্ষার মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিশুর মধ্য থেকে একাডেমিক শিক্ষার জন্য উপযুক্তদের বাছাই করা হতো। আর অন্য অধিকাংশ শিশুর জায়গা হতো নন-একাডেমিক সেকেন্ডারি স্কুলগুলোতে। এই ইলেভেন-প্লাস পদ্ধতির মাধ্যমে শ্রমজীবী ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের শিশুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার এবং সম্মানজনক জায়গায় চাকরির সুযোগ পেত। কিন্তু ১১ বছর বয়সীদের জন্য এই চূড়ান্ত নির্বাচনপ্রক্রিয়ার পুরো নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ উঠেছিল। এ প্রতিবাদে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অভিভাবকেরা। কারণ, তাঁরা একসময় দেখতে পেলেন যে তাঁদের সন্তানদের শ্রমজীবী শ্রেণির সন্তানদের সঙ্গে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। সমন্বিত বা বিভিন্ন শ্রেণির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলে ১৯৭০-এর দশকে এ পদ্ধতি বাতিল করা হয়।

১৯৫০-এর দশকে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপকভাবে শ্রেণিবিভক্ত ছিল। স্কুলগুলোতে একাডেমিক আর নন- একাডেমিকে বিভক্তি ছাড়াও একাডেমিক স্কুলগুলোও আবার এ, বি এবং সি ধারায় বিভক্ত ছিল। এ বিভাগের জন্য বিষয়টি বেশ ভালোই ছিল, কিন্তু বি-এর জন্য সেটা তেমন ভালো ছিল না। আর সি বিভাগের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যেত। আমার ইলেভেন-প্লাসের রেজাল্টের ভিত্তিতে সেন্ট অ্যালবান্সে আমি এ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম বর্ষের পর ক্লাসে ২০-এর নিচে যাদের অবস্থান হয়েছিল, তাদের বি বিভাগে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনাটি ছিল তাদের আত্মবিশ্বাসের ওপর চরম আঘাত। এরপর অনেকেই সেখান থেকে কখনো আর ওপরে উঠে আসতে পারেনি। সেন্ট অ্যালবান্সে প্রথম দুই টার্মে আমি যথাক্রমে ২৪ ও ২৩তম অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু তৃতীয় টার্মে ১৮তম অবস্থানে চলে আসি। এভাবে বছর শেষে আমি কোনোমতে নিচের বিভাগে নেমে যাওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম।

.

আমার যখন ১৩ বছর বয়স, তখন বাবা চাইলেন আমি যেন ওয়েস্টমিনস্টার স্কুলে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করি। এটি ছিল ব্রিটেনের প্রধান পাবলিক স্কুল (যাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাইভেট স্কুল বলে ডাকা হয়)। আগেই বলেছি, সে সময় শ্রেণিগতভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে কঠোর বিভক্তি ছিল। বাবা বুঝতে পেরেছিলেন, স্কুলের মতো একটি সামাজিক মর্যাদা পরবর্তী জীবনে আমাকে সুবিধা দেবে। বাবা বিশ্বাস করতেন, শুধু নিজের আত্মনিষ্ঠ ও যোগাযোগের অভাবে তাঁর চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের হাতে তাঁর ক্যারিয়ার হাতছাড়া হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তাঁর বেশ অসন্তোষ ছিল কারণ, তাঁর ধারণা ছিল, অনেকেই তেমন দক্ষ না হয়েও শুধু সঠিক পরিবেশ ও যোগাযোগের মাধ্যমে তারা বাবার তুলনায় ভালো অবস্থানে যেতে পেরেছে। এ ধরনের মানুষ সম্পর্কে তিনি আমাকে প্রায়ই সতর্ক করতেন।

মা-বাবার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তাই ওয়েস্টমিনস্টারে পড়ার জন্য আমাকে একটা স্কলারশিপ পেতেই হবে। কিন্তু স্কলারশিপ পাওয়ার পরীক্ষা দেওয়ার ঠিক আগে আগে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তাই সেবার পরীক্ষাটা দেওয়া হলো না। তার বদলে আমাকে সেন্ট অ্যালবান্সেই থেকে যেতে হলো। সেখানে ওয়েস্টমিনস্টারের চেয়ে খুব বেশি ভালো না হলেও মোটামুটি ভালো শিক্ষাই পেয়েছিলাম। আবার পরবর্তী সময়ে এ ধরনের সামাজিক মর্যাদার অভাব আমার জন্য কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তবে ওষুধবিজ্ঞানের চেয়ে পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাপারটা একটু আলাদা বলে মনে হয়। আপনি কোন স্কুলে যেতেন কিংবা কার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের কোনো মাথাব্যথা নেই। এখানে আপনার গবেষণা বা কাজটিই মুখ্য।

ক্লাসে আমি কখনোই মাঝারি মানের চেয়ে ওপরে উঠতে পারিনি। (ক্লাসটিতে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল।) আমার ক্লাসওয়ার্ক খুবই অপরিপাটি থাকত। আবার আমার হাতের লেখা দেখে শিক্ষকেরা হতাশ হতেন। অথচ আমার সহপাঠীরা আমার ডাকনাম দিয়েছিল আইনস্টাইন। হয়তো তারা আমার মধ্যে কোনো ভালো কিছুর চিহ্ন দেখতে পেত। আমার ১২ বছর বয়সে আমার এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সঙ্গে আমাকে নিয়ে এক ব্যাগ মিষ্টির বাজি ধরেছিল। তাদের বাজির বিষয় ছিল, আমি কখনোই ভালো কিছু করতে পারব না। এই বাজি পরে কখনো নিষ্পত্তি হয়েছিল কি না, আমার আর কখনো জানা হয়নি। আর যদি নিষ্পত্তি হয়ও, সেটি কীভাবে ঠিক হয়েছিল, তা-ও জানি না।

আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল ছয় থেকে সাতজন। তাদের অধিকাংশের সঙ্গেই এখনো যোগাযোগ বজায় রেখেছি আমি। সে সময় বিভিন্ন বিষয়ে আমরা প্রায়ই দীর্ঘ সময় আলোচনা আর তর্কবিতর্ক করতাম। আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে ছিল রেডিও- নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র থেকে শুরু করে ধর্ম এবং প্যারাসাইকোলজি থেকে পদার্থবিজ্ঞান—সবকিছু। মহাবিশ্বের জন্ম এবং একে সৃষ্টি ও সচল রাখতে ঈশ্বরের কোনো প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা হতো আমাদের। শুনেছিলাম, বহু দূরের গ্যালাক্সি থেকে আসা আলো বর্ণালিরেখায় লালের দিকে বিচ্যুত হয়। আবার এ-ও শুনেছিলাম, এটিই নাকি ইঙ্গিত করে, মহাবিশ্ব ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে। (বর্ণালিরেখার নীলের দিকে বিচ্যুত হওয়ার অর্থ মহাবিশ্বের সংকোচন।) তবে আমি নিশ্চিত ছিলাম, এই লোহিত বিচ্যুতির অবশ্যই অন্য কোনো কারণ আছে। আমার কাছে অপরিহার্যভাবে অপরিবর্তনীয় ও চিরন্তন মহাবিশ্বকেই অনেক বেশি প্রাকৃতিক বলে মনে হতো। ভাবতাম, হয়তো বহু দূর থেকে আমাদের কাছে আসতে গিয়ে আলো নিঃশেষিত হয়ে গেছে। আর সে জন্যই এই লোহিত বিচ্যুতি। প্রায় দুই বছর পিএইচডি গবেষণা করার পর অবশেষে বুঝতে পারলাম, আমার আগের ধারণা আসলে ভুল ছিল।

.

আমার বাবা গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের রোগবালাই নিয়ে গবেষণা করতেন। তিনি মাঝেমধ্যেই আমাকে মিল হিলে তাঁর গবেষণাগারে নিয়ে যেতেন। সেটা আমার কাছে বেশ লাগত, বিশেষ করে অণুবীক্ষণযন্ত্রের মধ্য দিয়ে কোনো কিছু দেখতে খুব ভালো লাগত। মাঝেমধ্যে কীটপতঙ্গের জন্য বানানো ঘরেও আমাকে নিয়ে যেতেন তিনি। সেখানে ক্রান্তীয় এলাকার রোগে আক্রান্ত মশা রাখা হয়েছিল। এগুলো দেখে আমার খুব দুশ্চিন্তা হতো। কারণ, আমার মনে হতো, কিছু মশা হয়তো কোনো ফাঁক গলে বাইরে বেরিয়ে আসবে। বাবা তাঁর গবেষণায় খুবই পরিশ্রমী আর নিবেদিত ছিলেন।

কোন যন্ত্র কীভাবে কাজ করে, তা জানতে আমি সব সময়ই মুখিয়ে থাকতাম। মাঝেমধ্যে যন্ত্রগুলো খুলে খুলে দেখতাম সেগুলো কীভাবে কাজ করে। কিন্তু সেগুলোকে আবার আগের মতো ঠিকমতো লাগিয়ে রাখার ব্যাপারে আমার তেমন দক্ষতা ছিল না। আসলে আমার তাত্ত্বিক জিজ্ঞাসার সঙ্গে আমার ব্যবহারিক দক্ষতা কখনোই খাপ খায়নি। বিজ্ঞানের প্রতি আমার কৌতূহলকে উৎসাহিত করতেন বাবা। এমনকি গণিতের জ্ঞানে তাঁকে ছাড়িয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি আমাকে গণিতও শেখাতেন। বাবার এই শিক্ষা এবং তাঁর চাকরির কারণে স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিয়েছিলাম, আমাকেও বিজ্ঞান গবেষণাতেই যেতে হবে।

স্কুলের শেষ দুই বর্ষে আসার পর গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ হতে চাইলাম আমি। সেখানে গণিতের বেশ ভালো এক শিক্ষক ছিলেন। তাঁর নাম মি. তাহতা। মাত্র কদিন আগে স্কুলে গণিতের জন্য নতুন একটি কক্ষ বানানো হয়েছিল। সেখানে গণিতের ক্লাস নেওয়া হতো। কিন্তু আমার গণিতে পড়ার বিপক্ষে ছিলেন বাবা। কারণ, তাঁর ধারণা ছিল, গণিতবিদ হিসেবে শিক্ষক হওয়া ছাড়া আর ভালো কোনো চাকরি নেই। আমি যাতে মেডিসিন নিয়ে পড়ি, সেটিই মনেপ্রাণে চাইতেন তিনি। কিন্তু জীববিজ্ঞানে আমার কোনো আগ্রহই ছিল না। এই বিষয়টি আমার কাছে স্রেফ বর্ণনামূলক বলে মনে হতো। আবার একে যথেষ্ট মৌলিক নয় বলেও মনে হতো আমার। এদিকে আমাদের স্কুলেও জীববিজ্ঞানের মর্যাদা ছিল নিচু মানের। কারণ, মেধাবী ছেলেরা গণিত আর পদার্থবিজ্ঞানে পড়ত। অন্যদিকে কম মেধাবীরা পড়ত জীববিজ্ঞানে।

বাবা জানতেন আমি জীববিজ্ঞানে পড়ব না। তাই আমাকে রসায়ন এবং সামান্য গণিত পড়া কোনো রকমে চালিয়ে যেতে দিয়েছিলেন তিনি। কারণ, তাঁর ধারণা ছিল, এর মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে আমার বিজ্ঞানের কোনো বিষয় বেছে নিতে সুবিধা হবে। এখন আমি গণিতের অধ্যাপক। কিন্তু ১৭ বছর বয়সে সেন্ট অ্যালবান্স স্কুল ছাড়ার পর থেকে গণিতে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আমি যেটুকু জেনেছি, তা নিজের চেষ্টাতেই। কেমব্রিজে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে মাঝেমধ্যে সুপারভাইজ করতাম। ওই কোর্সে তারা অন্যদের তুলনায় প্রায় এক সপ্তাহ এগিয়ে ছিল।

স্কুলে পড়ার সময় পদার্থবিজ্ঞান সব সময়ই আমার কাছে বিরক্তিকর মনে হতো। কারণ, বিষয়টি আমার কাছে খুবই সহজ আর প্রত্যক্ষগোচর ছিল। অন্যদিকে রসায়ন ছিল অনেক মজার। কারণ, এখানে মাঝেমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনাও ঘটত, যেমন হঠাৎ কোনো বিস্ফোরণ। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান আর জ্যোতির্বিদ্যা এটাই বোঝার আশা জাগাত যে আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং আমরা এখানে কেন। আমি মহাবিশ্বের গভীরতার সীমা অনুধাবন করতে চাইতাম। হয়তো ক্ষুদ্র পরিসরে এ বিষয়ে সফলতা পেয়েছি। কিন্তু এই ক্ষেত্রটিতে এখনো আরও অনেক কিছুই আমি জানতে চাই।

তথ্যনির্দেশ

হিটলার : পুরো নাম অ্যাডলফ হিটলার। অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ। জার্মানির নাৎসি বা নাজি দলের নেতা ছিলেন। ১৯৩৩ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। ১৯৩৪ সালে নাৎসি জার্মানির ফুয়েরার (নেতা) হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন। একনায়ক হিসেবে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর জন্য তাঁকে দায়ী করা হয়। ১৯৩৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে জার্মানরা পোল্যান্ড দখল করে নেয়। তাতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪৫ সালে রাশিয়ার রেড আর্মি বার্লিন দখল করার সময় তিনি আত্মহত্যা করেন।

মুসোলিনি : ইতালিয়ান এই একনায়কের পুরো নাম বেনিতো আমিল্কার আন্দ্রেয়া মুসোলিনি। ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট দলের নেতা। ১৯২২ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। ১৯২৫ সালে তিনি দেশটিতে স্বৈরতন্ত্র চালু করেন। ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পক্ষে যোগ দেন এবং ইতালির সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব নেন। সে সময় তিনি জার্মান একনায়ক হিটলারের ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হন। ১৯৪৩ সালে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং ১৯৪৫ সালে সুইজারল্যান্ডে পালানোর সময় তাঁকে হত্যা করা হয়।

কবি রবার্ট গ্রেভস : ইংরেজ কবি, ঐতিহাসিক, ওপন্যাসিক, সমালোচক ও অনুবাদক রবার্ট গ্রেভের জন্ম ১৮৯৫ সাল। লেখালেখি করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর নিজের লেখা কিছু ঐতিহাসিক উপন্যাসের জন্য তিনি সুপরিচিত। এ ছাড়া প্রাচীন লাতিন ও গ্রিক থেকে তাঁর অনূদিত দ্য টুয়েলভ সিজার এবং দ্য গোল্ডেন অ্যাস জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

রাজা জেমস : সতেরো শতকে ইংল্যান্ডের রাজা জেমসের নির্দেশনায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছিল। এটিই কিং জেমস বাইবেল নামে পরিচিত। বাইবেলটির অনুবাদ শুরু হয় ১৬০৪ সালে, তা শেষ হয় ১৬১১ সালে। এ বাইবেলের সংস্করণে পুরোনো নিয়মের (ওল্ড টেস্টামেন্ট) ৩৯টি পুস্তক এবং নতুন নিয়মের ২৭টি পুস্তক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া আরও অপ্রামাণিক ১৪টি পুস্তকও এতে যুক্ত করা হয়েছিল। কিছু তর্কবিতর্ক থাকলেও এই বাইবেল ইংরেজিভাষী প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানদের কাছে দ্রুতই জনপ্রিয় হয় এবং ইংরেজি ভাষার মানদণ্ড হয়ে ওঠে। এর গতিময় ভাষা ও গদ্যের ছন্দ পরবর্তী ৪০০ বছর ইংল্যান্ডের সাহিত্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

বর্ণালি : লাতিন শব্দ স্পেকট্রাম (Spectrum) অর্থ প্রতিচ্ছবি বা অপচ্ছায়া। তবে সতেরো শতকে আইজ্যাক নিউটন তাঁর অপটিকস বইটিতে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন অন্য এক অর্থে। একটি প্রিজমের মধ্য দিয়ে সূর্যের দৃশ্যমান সাদা আলো প্রবেশ করলে তা রংধনুর মতো সাতটি আলাদা রঙে বিভক্ত হয়। আলো এভাবে বিভিন্ন রঙে শ্রেণিবদ্ধভাবে ছড়িয়ে পড়া বোঝাতেই নিউটন স্পেকট্রাম শব্দটি ব্যবহার করেন। বাংলায় একেই বলা হয় বর্ণালি বা বর্ণালিরেখা। বর্তমানে শব্দটির অর্থ আরও বিস্তৃত হয়েছে। এখন শুধু দৃশ্যমান আলোর ক্ষেত্রেই নয়, বরং পুরো বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গের ক্ষেত্রেও বর্ণালি শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কারণ, দৃশ্যমান আলো বিদ্যুৎচুম্বকীয় বর্ণালির একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্ৰ।

লোহিত বিচ্যুতি : ডপলার ইফেক্টের কারণে যে নক্ষত্র আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তার থেকে আসা আলো বর্ণালিরেখায় লাল রঙের দিকে সরে যায়। একেই বলা হয় রেড শিফট। বাংলায় লোহিত বিচ্যুতি বা রক্তিম স্থানান্তর বা লাল সরণ। অস্ট্রিয়ান পদার্থবিদ ক্রিস্টিয়ান ডপলার শব্দতরঙ্গের জন্য ডপলার প্রভাবের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। পরে তাঁর ব্যাখ্যাটি আলোতরঙ্গের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করে সফলতা পাওয়া যায়। ১৯২০-এর দশকে এডুইন হাবল গ্যালাক্সিগুলো থেকে আসা আলো পরিমাপ করে অধিকাংশেরই লোহিত বিচ্যুতি পেয়েছিলেন। তাতেই বোঝা গিয়েছিল গ্যালাক্সিগুলো আমাদের কাছ থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। এভাবেই মহাবিশ্বের প্রসারণের প্রথম প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।

নীল-বিচ্যুতি : কোনো গ্যালাক্সি যদি পৃথিবী থেকে একটি স্থির দূরত্বে থাকে, তাহলে বর্ণালিরেখায় তার বৈশিষ্ট্যরেখা স্বাভাবিক অবস্থানে থাকে। অন্যদিকে গ্যালাক্সিটি যদি আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে তরঙ্গগুলো সম্প্রসারিত হয় কিংবা প্রসারিত হয়। আর তার বৈশিষ্ট্যরেখাটি লাল রঙের দিকে বিচ্যুত হয়। আর গ্যালাক্সিগুলো যদি আমাদের দিকে আসতে থাকে, তাহলে তরঙ্গগুলো সংকুচিত হয় এবং বৈশিষ্ট্যরেখাগুলো নীল রেখার দিকে বিচ্যুত হতো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *