মহাবিস্ফোরণ
১৯৬০-এর দশকে বিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্বে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি ছিল, মহাবিশ্বের আদৌ কোনো শুরু আছে কি না। স্বাভাবিকভাবেই অনেক বিজ্ঞানীই এই ধারণার বিরোধিতা করেছিলেন। আবার বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বেরও বিরোধী ছিলেন তাঁরা। কারণ, তাঁদের মনে হয়েছিল, সৃষ্টির সূচনায় এমন কোনো বিন্দু থাকলে সেখানে বিজ্ঞান অকার্যকর হয়ে পড়বে। আবার তাতে মহাবিশ্ব কীভাবে শুরু হবে, তা নির্ধারণের ভার ধর্ম আর ঈশ্বরের হাতেও চলে যাবে।
কাজেই সেটি ঠেকাতে বিকল্প দুটি তত্ত্বের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এদের মধ্যে একটি স্টেডি স্টেট থিওরি বা স্থিতিশীল মহাবিশ্ব তত্ত্ব। এই তত্ত্বমতে, মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার গড় ঘনত্ব স্থির রাখতে ক্রমাগত নতুন পদার্থ তৈরি হচ্ছে। তবে সত্যি বলতে কি, স্থিতিশীল মহাবিশ্ব তত্ত্বের কখনোই কোনো মজবুত তাত্ত্বিক ভিত্তি ছিল না। কারণ, তার জন্য পদার্থ তৈরি করতে একটি ঋণাত্মক শক্তিক্ষেত্র থাকা প্রয়োজন। এটিই এ তত্ত্বটিকে নড়বড়ে করে তোলে এবং পদার্থ ও ঋণাত্মক শক্তির উৎপাদনও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে। তারপরও পর্যবেক্ষণে পরীক্ষা করে দেখার মতো কিছু সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে এ তত্ত্বটির বেশ ভালো যোগ্যতা ছিল।
১৯৬৩ সালে স্থিতিশীল মহাবিশ্ব তত্ত্বটি বেশ সমস্যার মুখে পড়ে। ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরিতে মার্টিন রাইলের রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি দল অস্পষ্ট বেতার উৎসগুলোর একটি জরিপ চালিয়েছিল। জরিপে তারা দেখতে পেল, এই বেতার উৎসগুলো মহাকাশজুড়ে পুরোপুরি সুষমভাবে বিন্যস্ত। এই ফলাফল ইঙ্গিত করে যে ওই উৎসগুলো সম্ভবত আমাদের গ্যালাক্সির বাইরে কোথাও অবস্থিত। কারণ, তা না হলে সেগুলো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বরাবর ঘনীভূত হতো। তবে রেখাচিত্রে উৎসগুলোর সংখ্যার বিপরীতে উৎসগুলোর শক্তিমত্তা স্থিতিশীল মহাবিশ্ব তত্ত্বের ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিলল না। সেখানে অনেক বেশি অস্পষ্ট উৎস পাওয়া গেল। এটি ইঙ্গিত করল যে উৎসগুলোর ঘনত্ব অতীতে আরও অনেক বেশি ছিল।
এ ঘটনার পরও হয়েল আর তাঁর সমর্থকেরা ক্রমাগত এই পর্যবেক্ষণের জন্য একের পর এক কৌশলী সব ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৯৬৫ সালে একটা অস্পষ্ট মাইক্রোওয়েভ বিকিরণের পটভূমি আবিষ্কারের ঘটনা স্থিতিশীল মহাবিশ্ব তত্ত্বটির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়। (এটি মাইক্রোওয়েভ ওভেনের মাইক্রোওয়েবের মতোই। তবে এদের তাপমাত্রা অনেক কম, যার পরিমাণ মাত্র ২৭ কেলভিন। অর্থাৎ পরম শূন্য তাপমাত্রার সামান্য ওপরে।) স্থিতিশীল মহাবিশ্ব তত্ত্বে এই বিকিরণকে একেবারেই গোনায় ধরা হয়নি। অবশ্য হয়েল ও নারলিকার তা করার জন্য পাগলের মতো চেষ্টা করেছিলেন। হয়েলের ছাত্র না হওয়ায় আসলে আমার জন্য এক দিক দিয়েই ভালোই হয়েছিল। কারণ, তাহলে স্থিতিশীল মহাবিশ্ব তত্ত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাকে ও লড়াই চালিয়ে যেতে হতো।
মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন (অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গের পটভূমি বিকিরণ) ইঙ্গিত করে যে অতীতের ঘনীভূত অবস্থায় এই মহাবিশ্ব ছিল অতি উত্তপ্ত। তবে এটি প্রমাণ করে না যে এই অবস্থাটাই মহাবিশ্বের সূচনাবিন্দু। অনেকে হয়তো কল্পনা করতে পারেন, মহাবিশ্ব আগের কোনো সংকুচিত অবস্থায় ছিল এবং সেটি সংকোচন থেকে হঠাৎ লাফিয়ে উঠে (বাউন্স) এখন একটি উচ্চ ও সসীম ঘনত্বে প্রসারিত হচ্ছে। এটাই সত্যি কি না, তা আসলে একটি মৌলিক প্রশ্ন। আমার পিএইচডি থিসিস শেষ করার জন্য এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার দরকার হয়েছিল।
মহাকর্ষ বস্তুদের একত্র করতে কাছে টানে, অন্যদিকে ঘূর্ণন তাদের পরস্পর থেকে দূরে ঠেলে দেয়। তাই আমার প্রথম প্রশ্নটি ছিল, ঘূর্ণন কি মহাবিশ্বের বাউন্স বা লাফিয়ে ওঠার কারণ হতে পারে। জর্জ এলিসকে সঙ্গে নিয়ে আমি প্রমাণ দেখাতে সক্ষম হলাম যে মহাবিশ্ব স্থানিকভাবে সমসত্ত্ব হলে (অর্থাৎ স্থানের প্রতিটি বিন্দুতেই যদি এটি একই হয়) এই প্রশ্নের উত্তর হবে, না। এদিকে দুজন রুশ বিজ্ঞানী ইভজেনি লিফশিজ ও আইজাক খালাতনিকভ অন্য দাবি করে বসলেন। দাবিটি ছিল, ঘনত্ব সসীম থাকলে যথাযথ প্রতিসাম্য ছাড়াই একটি সাধারণ সংকোচন সব সময় কোনো লাফিয়ে ওঠার দিকে নিয়ে যাবে বলে তাদের কাছে প্ৰমাণ আছে। এই ফলাফল মার্ক্স-লেনিনবাদী দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের জন্য খুবই সুবিধাজনক হয়েছিল। কারণ, এতে মহাবিশ্বের সৃষ্টি- সংক্রান্ত ব্রিবতকর প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। কাজেই এটি সোভিয়েত বিজ্ঞানীদের জন্য নির্ভরযোগ্য একটি প্রবন্ধে পরিণত হয়েছিল।
লিফশিজ আর খালাতনিকভ ছিলেন সাধারণ আপেক্ষিকতার প্রাচীনপন্থী দলের সদস্য। অর্থাৎ তাঁরা অনেকগুলো সমীকরণ লিখেছিলেন এবং একটি সমাধান অনুমানের চেষ্টা করেছিলেন তাঁদের পাওয়া সমাধানটিই যে সবচেয়ে সাধারণ সমাধান, তা পরিষ্কারভাবে জানা ছিল না। এদিকে রজার পেনরোজ এক নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিলেন। সেখানে আইনস্টাইনের ক্ষেত্র
সমীকরণগুলোর পরিপূর্ণ সমাধানের দরকার ছিল না। বরং শুধু সাধারণ ধর্মগুলো—যেমন শক্তি ধনাত্মক এবং মহাকর্ষের আকর্ষী বিষয়গুলো ধরে নেওয়াই সেখানে যথেষ্ট ছিল। পেনরোজ এই বিষয়ে লন্ডনের কিংস কলেজে ১৯৬৫ সালে একটি সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন। ওই সেমিনারে আমি উপস্থিত না থাকলেও এ সম্পর্কে ব্র্যান্ডন কার্টারের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনেছিলাম। তাঁর সঙ্গেই সিলবার স্ট্রিটে কেমব্রিজের নতুন চালু হওয়া ফলিত গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা বিভাগে (DAMTP) দপ্তর শেয়ার করতাম আমি।
প্রথমে বিষয়টি আমি বুঝতে পারিনি। পেনরোজ দেখালেন, একটি মৃত্যুমুখী নক্ষত্র একটি নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধে সংকুচিত হয়, তাতে সেখানে অবধারিতভাবে একটি সিঙ্গুলারিটি বা পরম বিন্দু থাকবেই। অর্থাৎ সিঙ্গুলারিটি এমন একটি বিন্দু, যেখানে স্থান ও কালের সমাপ্তি ঘটবে। নিশ্চিতভাবেই ভাবলাম, আমরা এরই মধ্যে জেনে গেছি যে একটি বিপুল ভরের শীতল নক্ষত্র নিজের মহাকর্ষের টানে নিজের মধ্যেই পতন বা সংকোচনকে কোনোভাবেই ঠেকাতে পারবে না। নক্ষত্রটি একটি অসীম ঘনত্বের পরম বিন্দুতে পৌঁছার আগপর্যন্ত এই সংকোচন চলতেই থাকবে। আসলে ওই সমীকরণগুলোর সমাধান করা হয়েছিল শুধু একটি নিখুঁত গোলাকার নক্ষত্রের পতনের জন্য। অথচ একটি সত্যিকারের নক্ষত্র কখনোই নিখুঁতভাবে গোলাকার হয় না। লিফশিজ আর খালাতনিকভ যদি সঠিক হতেন, তাহলে নক্ষত্রটির পতনের সময় গোলাকার প্রতিসাম্যের পার্থক্য বেড়ে যেত। সে কারণে নক্ষত্রের বিভিন্ন অংশ পরস্পরের নাগাল পেত না। এর পরিণতিতে তা অসীম ঘনত্বের কোনো পরম বিন্দুতে পৌঁছাতে পারত না। পেনরোজ প্রমাণ দেখালেন, তাঁরা দুজন ভুল করেছিলেন : গোলাকার প্রতিসাম্যের ছোট পার্থক্য কোনো পরম বিন্দুতে পরিণত হওয়া ঠেকাতে পারে না।
বুঝতে পারলাম, মহাবিশ্বের প্রসারণের ক্ষেত্রেও এই একই যুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রমাণ করতে পেরেছিলাম যে যেখানে স্থান-কালেরও একটি সূচনা থাকবে, সেখানে পরম বিন্দুও থাকবে। তাই লিফশিজ ও খালাতনিকভ আরেকবার ভুল প্রমাণিত হলেন। সাধারণ আপেক্ষিকতা ভবিষ্যদ্বাণী করে যে মহাবিশ্বের একটি সূচনা থাকা উচিত। প্রাপ্ত এই ফলাফল গির্জার চোখ এড়ানো সম্ভব হয়নি।
পেনরোজ আর আমার আসল পরম বিন্দুর উপপাদ্যের জন্য অনুমানের দরকার ছিল যে কোনো এক সময় মহাবিশ্বের একটি কশি পৃষ্ঠতল ছিল। অর্থাৎ এমন একটি পৃষ্ঠতল, যেখানে প্রতিটি কণার গমনপথ একবার এবং শুধু একবারই পরস্পরকে ছেদ করে। কাজেই আমাদের প্রথম পরম বিন্দুর উপপাদ্য ব্যবহার করে সহজভাবেই প্রমাণ করা সম্ভব হলো যে মহাবিশ্বের কোনো কশি তল (Cauchy surface) ছিল না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটি সময়ের কোনো সূচনা বা সমাপ্তি ছিল কি না, এখানে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কাজেই পরম বিন্দুর উপপাদ্য প্রমাণ করতে এমন কিছু উপায় বের করলাম, যেখানে কশি তলে কোনো অনুমানের প্রয়োজন হবে না।
পরের পাঁচ বছর রজার পেনরোজ, বব গেরোচ ও আমি সাধারণ আপেক্ষিকতাতে কার্যকারণ-সংক্রান্ত কাঠামোর তত্ত্ব বিকশিত করলাম। সে এক চমৎকার অনুভূতি ছিল। কারণ, পুরো ক্ষেত্রটিই কার্যত আমাদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কণা পদার্থবিদ্যার তুলনায় এখানে ছিল একেবারেই উল্টো চিত্র। এখানে সর্বশেষ ধারণা পেতে তখন অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এখনো অনেকেই এই ক্ষেত্রটিতে এগিয়ে আসছে।
এই বিষয়টি নিয়ে এক প্রবন্ধে কিছুটা লিখেছিলাম, যা ১৯৬৬ সালে কেমব্রিজে অ্যাডামস পুরস্কার পেয়েছিল। এটিই ছিল দ্য লার্জ স্কেল স্ট্রাকচার অব স্পেস-টাইম শিরোনামের বইটির মূল বিষয়বস্তু। বইটি আমি জর্জ এলিসের সঙ্গে লিখেছিলাম। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস ১৯৭৩ সালে সেটা প্রকাশ করেছিল। বইটি এখনো ছাপা অবস্থায় পাওয়া যায়। কারণ, এটি কার্যত স্থান- কালের কার্যকারণ-সংক্রান্ত কাঠামোর (অর্থাৎ স্থান-কালের কোনো মেরু অন্য বিন্দুগুলোর ঘটনাকে প্রভাবিত করে) শেষ কথা। তবে সাধারণ পাঠককে এ বিষয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা না করতে সাবধান করে দিচ্ছি। কারণ, বইটি খুবই তাত্ত্বিক বিষয়ে লেখা। আমি যখন কঠোরভাবে খাঁটি গণিতবিদ হওয়ার চেষ্টা করছিলাম, এটি সেই সময়ে লেখা। এখন ন্যায়নিষ্ঠ হওয়ার চেয়ে আমি সঠিক হওয়ার পক্ষে। যা-ই হোক, কোয়ান্টাম ফিজিকসে কঠোর হওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ পুরো ক্ষেত্রটি গড়ে উঠেছে এক অনিশ্চিত গাণিতিক ভিত্তির ওপর।
তথ্যনির্দেশ
মহাবিস্ফোরণ : মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে গৃহীত একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এই তত্ত্বমতে, প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল। মহাবিশ্ব শুরুর সেই মুহূর্তে অতি উত্তপ্ত ও অসীম ঘনত্বের একটি সিঙ্গুলারিটি বা পরম বিন্দুতে সবকিছু ঘনীভূত ছিল। ১৯২৯ সালে এ মডেলের প্রস্তাব করেছিলেন বেলজিয়ামের পাদরি, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ জর্জেস লেমিত্রি। অবশ্য লেমিত্রি তাঁর তত্ত্বকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে মহাবিশ্ব সৃষ্টির এই মুহূর্তের নাম দিয়েছিলেন বিগ নয়েজ বা মহাশব্দ। তবে জ্যোতির্বিদ ফ্রেড হয়েল এ তত্ত্বকে ব্যঙ্গ করে নাম দিয়েছিলেন বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে হোয়েলের দেওয়া নামটিই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গের পটভূমি বিকিরণ : আদিম উত্তপ্ত মহাবিশ্বের উজ্জ্বলতা থেকে আসা বিকিরণ। এর এতই বড় লোহিত-বিচ্যুতি হয়েছে যে এখন আর আলো হিসেবে নয়, বরং মাইক্রোওয়েভ বা ক্ষুদ্র তরঙ্গ (একধরনের বেতারতরঙ্গ, যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার) হিসেবে একে পাওয়া যায়।
পরম বিন্দু বা অনন্যতা : স্থান-কালের এমন একটি বিন্দু, যেখানে স্থান- কালের বক্রতা (অথবা আরও কিছু ভৌত ধর্ম) অসীম হয়। মহাবিস্ফোরণের আগে সবকিছু একটি অতি উত্তপ্ত ও অসীম ঘনত্বের ক্ষুদ্র বিন্দুতে পুঞ্জীভূত ছিল বলে ধারণা করা হয়। একেই বলা হয় সিঙ্গুলারিটি বা পরম বিন্দু। আবার কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রেও পরম বিন্দুর সৃষ্টি হয়। একে বলা হয় মহাকর্ষীয় পরম বিন্দু। সেখানে বিপুল পরিমাণ ভরের বস্তু অতি ক্ষুদ্র স্থানে ঘনত্ব এবং মহাকর্ষ অসীম হয়ে যায়। একই সঙ্গে স্থান-কালের বক্রতাও অসীম হয়। পরম বিন্দুতে পদার্থবিদ্যার জানা থাকা কোনো সূত্রই আর কাজ করে না।
স্থান-কাল (Space-time) : একটি চারমাত্রিক স্থান, যার বিন্দুগুলো ঘটনা। নিউটনের বলবিদ্যায় ত্রিমাত্রিক বিশ্বে স্থান আর সময় ছিল আলাদা ব্যাপার। কিন্তু আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বমতে, এই দুটোর আসলে আলাদা নয়, বরং দুটো মিলেই একটি অস্তিত্ব, যা স্থান-কাল নামে পরিচিত।
কোয়ান্টাম মেকানিকস: গণিতের যে শাখায় বল প্রয়োগে শক্তিকণার গতিবেগ, ধর্ম, আচরণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়, সেটিই কোয়ান্টাম মেকানিকস বা কণা বলবিদ্যা। চিরায়ত বলবিদ্যায় দৃশ্যমান বস্তুর ওপর বল প্রয়োগে বস্তুর ধর্ম বা আচরণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ক্ষেত্র অতি ক্ষুদ্র শক্তিকণা (যেমন ইলেকট্রন)। চিরায়ত বলবিদ্যায় যেসব বস্তুর ভর আছে কিন্তু তরঙ্গ প্রকৃতি নেই, তাদের নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় এমন সব বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, যাদের কণা (বা ভর) প্রকৃতি এবং তরঙ্গ প্রকৃতি উভয়ই আছে। যেমন আলো একই সঙ্গে কণা ও তরঙ্গ।
কশি তল : স্থান-কালের একটি তল, যা অনেকটা তাৎক্ষণিক সময়ের মতো। ফরাসি গণিতবিদ অগাস্টিন লুই কশি নামে এর নামকরণ করা হয়েছে।