টাইম ট্রাভেল

টাইম ট্রাভেল

১৯৯০ সালে কিপ থর্ন প্রস্তাব করলেন, ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে অতীত ভ্রমণ হয়তো সম্ভব হতেও পারে। সে কারণে আমি ভাব- লাম, পদার্থবিজ্ঞান টাইম ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণ অনুমোদন করে কি না, তা খুঁজে দেখার এটাই উপযুক্ত সময়।

সময় পরিভ্রমণ নিয়ে প্রকাশ্যে জল্পনাকল্পনা করা বেশ কিছু কারণে ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়ার মতো। খবরের কাগজে যদি খবর প্রকাশ করা হয় যে টাইম ট্রাভেল-বিষয়ক গবেষণায় সরকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে, তাহলে প্রথমত জনগণের টাকা নষ্ট হওয়ার প্রতিবাদের ঝড় শুরু হতে পারে। অথবা এই গবেষণা সামরিক কারণে গোপন রাখার দাবি উঠতে পারে। কারণ, রাশিয়া কিংবা চীনের হাতের মুঠোয় যদি টাইম ট্রাভেলের প্রযুক্তি চলে যায়, আর আমাদের কাছে যদি সেটি না থাকে, তাহলে আমরা নিজেদের রক্ষা করব কীভাবে? তখন হয়তো কমরেড স্তালিন আর মাওকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারে তারা।

পদার্থবিজ্ঞানীদের দলে বোকার মতো সাহসী বলতে কেবল আমরা কজনই আছি, যারা অনেকের কাছে গুরুত্বহীন এবং রাজনৈতিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ বলে বিবেচিত কাজেও দ্বিধা করি না। তাই আমাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুটি গোপন করতে আমরা তাত্ত্বিক পরিভাষা ব্যবহার করি। যেমন ‘কণার আবদ্ধ ইতিহাস’, শব্দবন্ধকে টাইম ট্রাভেলের কোড হিসেবে ব্যবহার করি আমরা। সময় সম্পর্কে প্রথম বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। সেটি ছিল ১৬৮৯ সালের কথা। নিউটন একদা কেমব্রিজে লুকাসিয়ান চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেটি এখন আমার দখলে (অবশ্য নিউটনের কালে এটি বৈদ্যুতিকভাবে চালিত হতো না)। নিউটনের তত্ত্বে সময় ছিল পরম এবং তা অবিরাম বয়ে যেত। এখানে কোনো পেছনে ও আগের কোনো যুগে ফেরার মতো কিছু ছিল না। তবে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা সূত্রবদ্ধ করার পর পুরো পরিস্থিতি পাল্টে গেল। কারণ, সাধারণ আপেক্ষিকতায় স্থান-কাল বক্র এবং মহাবিশ্বের বস্তু ও শক্তির প্রভাবে স্থান-কাল বিকৃত হয়। অবশ্য তারপরও সময় স্থানীয়ভাবে বাড়তে পারে। কিন্তু এতে স্থান-কালের এত বেশি বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেল যে কেউ চাইলে একটি পথে যাত্রা শুরু করার আগের মুহূর্তে ফিরে যেতে পারে।

এ রকম ঘটনা ঘটার একটি সম্ভাবনা অনুমোদন করে ওয়ার্মহোল। এটি স্থান-কালের হাইপোথেটিকেল বা কাল্পনিক নল, যা হয়তো স্থান ও কালের ভিন্ন কোনো অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত। ধারণাটি এ রকম : আপনি ওয়ার্মহোলের একটি প্রান্তে পা রাখলেন এবং ওয়ার্মহোলের আরেক প্রান্ত দিয়ে ভিন্ন কোনো জায়গায় ও ভিন্ন কোনো সময়ে বেরিয়ে এলেন। ওয়ার্মহোলের অস্তিত্ব যদি সত্যিই থাকে, তাহলে দ্রুততম মহাকাশ ভ্রমণের জন্য এটিই হবে আদর্শ আপনি হয়তো একটি ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে আমাদের ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির অন্য কোনো প্রান্তে চলে গেলেন এবং ঠিক ডিনারের সময় আবার ফিরে এলেন। আবার এটাও প্রমাণ করা যায় যে ওয়ার্মহোলের অস্তিত্ব থাকলে তা ব্যবহার করে আপনি আপনার যাত্রা শুরুর আগের মুহূর্তে ফিরে আসতে পারবেন। তাহলে এটাও ভাবা যায় যে এভাবে নিজের প্রথম যাত্রাকে ঠেকাতে আপনি নিজের নভোযানকে আসল উৎক্ষেপণকেন্দ্রে ধ্বংস করে দিতে পারবেন। এটি আসলে বহুল আলোচিত সেই গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সের আরেক সংস্করণ। গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সটা এমন, ধরা যাক, আপনি অতীতে গিয়ে আপনার বাবার জন্মের আগেই নিজের দাদাকে খুন করে ফেললেন। তাহলে কী হবে? তাহলে কি আপনার বর্তমানের কোনো অস্তিত্ব থাকবে? যদি তা না হয়, তাহলে আপনার অস্তিত্বই থাকে না। তাই আপনি অতীতে গিয়ে আপনার দাদাকেও খুন করতে পারছেন না। নিঃসন্দেহে এটি একটি প্যারাডক্স, যদি বিশ্বাস করেন, ইচ্ছেমতো সবকিছু করার স্বাধীন ইচ্ছা আপনার আছে এবং অতীতে গিয়ে আপনি ইতিহাস পরিবর্তনও করতে পারেন।

তবে এখানে প্রধান প্রশ্নটি হলো, পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম ওয়ার্মহোল এবং স্থান-কালকে এতটাই বেঁকে যাওয়াকে অনুমোদন করে কি না, যার মধ্য দিয়ে ম্যাক্রোস্কোপিক কোনো বস্তু (যেমন নভোযান) তার নিজের অতীতে ফিরে যেতে পারে। আইনস্টাইনের তত্ত্বমতে, একটি নভোযান অনিবার্যভাবে আলোর স্থানীয় বেগের চেয়ে কম বেগে যাবে। এ ছাড়া নভোযানটি স্থান-কালের মধ্যে ‘সময়সদৃশ পথ’ (টাইম লাইক পাথ) অনুসরণ করবে। কাজেই প্রশ্নটিকে তাত্ত্বিকভাবে এভাবে বলা যায় : স্থানকাল কি সময়ের মতো কোনো আবদ্ধ বক্রতা স্বীকার করে? অর্থাৎ সময়সদৃশ মতো বক্রতাগুলো কি তাদের সূচনাবিন্দুতে বারবার ফিরে আসতে পারে?

এখানে তিনটি পর্যায় আছে। সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি। প্রথমটি আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। একে চিরায়ত তত্ত্বও বলা হয়। কারণ, এখানে অনুমান করা হয়, মহাবিশ্বের কোনো রকম অনিশ্চয়তা ছাড়াই একটি সুসংজ্ঞায়িত ইতিহাস আছে। চিরায়ত সাধারণ আপেক্ষিকতার জন্য টাইম ট্রাভেল কীভাবে সম্ভব হতে পারে, সে সম্পর্কে আমাদের কাছে মোটামুটি একটি সম্পূর্ণ চিত্র আছে। আবার আমরা এ-ও জানি, চিরায়ত তত্ত্বটি কখনোই পুরোপুরি সঠিক হতে পারে না। কারণ, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মহাবিশ্বে পদার্থের ফ্লাকচুয়েশ বা অস্থিরতা প্রবণতা আছে। অন্যদিকে এদের আচরণের ভবিষ্যদ্বাণীও নির্ভুলভাবে করা যায় না।

১৯২০-এর দশকে কোয়ান্টাম তত্ত্বের নতুন ধারণা বিকাশের কারণে পদার্থের এই অস্থিরতার ব্যাখ্যা দেওয়া ও অনিশ্চয়তার পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছিল। তাই টাইম ট্রাভেল-সম্পর্কিত দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রশ্নটি করা যেতে পারে। দ্বিতীয় এই পর্যায়কে বলা হয় আংশিক বা আধা চিরায়ত তত্ত্ব। এখানে চিরায়ত স্থান-কাল পটভূমিকে কোয়ান্টাম পদার্থের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এখানকার চিত্রটি এখনো সম্পূর্ণ নয়। তবে আমরা অন্তত এটুকু জানি, কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

সর্বশেষে পূর্ণাঙ্গ মহাকর্ষের কোয়ান্টাম তত্ত্ব বা এ ধরনের কিছু পাওয়া যাবে। ‘টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব?’—এই প্রশ্ন এখানে কীভাবে তোলা যাবে, সেটি স্পষ্ট নয়। অসীম বিশ্বে পর্যবেক্ষকেরা তাঁদের পরিমাপগুলোকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেন, হয়তো সেটিই সবচেয়ে ভালো প্রশ্ন হবে। তাঁরা কি মনে করেন যে টাইম ট্রাভেল স্থান-কালের ভেতরই সংঘটিত হয়?

.

চিরায়ত তত্ত্বের কাছে ফিরে আসা যাক: সমতল স্থান-কাল ক্লোজড টাইম-লাইক কার্ভ বা আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতা ধারণ করে না। এমনকি শুরুতে আইনস্টাইনের সমীকরণের অন্য কোনো সমাধানও জানা ছিল না। ১৯৪৯ সালে কার্ট গোডেল একটি সমাধান আবিষ্কার করছিলেন। সেখানে এমন একটি মহাবিশ্বের ছবি দেখা গেল, যা ঘূর্ণমান পদার্থে পরিপূর্ণ। আবার এর প্রতিটি বিন্দুতে আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতাও রয়েছে। এই আবিষ্কার ছিল আইনস্টাইনের জন্য বিরাট এক ধাক্কা। গোডেলের সমাধানের জন্য একটি মহাজাগতিক ধ্রুবকের প্রয়োজন হয়েছিল, যেটির অস্তিত্ব আছে বলে জানা ছিল। অবশ্য পরবর্তীকালে অন্যান্য আরও কিছু সমাধানও পাওয়া গেল, যেখানে মহাজাগতিক ধ্রুবকের কোনো প্রয়োজন ছিল না।

এটি ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মজার বিষয়টি হলো, দুটি কসমিক স্ট্রিং বা মহাজাগতিক সুতা পরস্পরের কাছ থেকে উচ্চ গতিতে দূরে সরে যাবে। নামেই বোঝা যাচ্ছে, কসমিক স্ট্রিং হলো এমন বস্তু, যার দৈর্ঘ্য আছে কিন্তু ক্ষুদ্র প্রস্থচ্ছেদযুক্ত। মৌলিক কণাবিষয়ক কিছু তত্ত্বে তাদের অস্তিত্বের কথা অনুমান করা হয়। একটি একক কসমিক স্ট্রিংয়ের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র হলো টুকরো কীলকসহ সমতল স্থান, আর এই কীলকের তীক্ষ্ণ শেষ প্রান্তেই থাকে স্ট্রিং। কাজেই একটি কসমিক স্ট্রিংয়ের চারদিকের কোনো বৃত্তাকার পথে যদি কেউ যেতে পারে, তাহলে স্থানের দূরত্ব তার প্রত্যাশার চেয়েও অনেক কম হবে। তবে এখানে সময় প্রভাবিত হবে না। অর্থাৎ একটি একক কসমিক স্ট্রিংয়ের চারদিকে স্থান-কালে কোনো আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতা থাকে না।

তবে সেখানে যদি প্রথম স্ট্রিংয়ের সাপেক্ষে দ্বিতীয় আরেকটি কসমিক স্ট্রিং চলমান থাকে, তাহলে টুকরো কীলকটি স্থানিক দূরত্ব এবং কালিক পার্থক্য উভয়কেই সংক্ষিপ্ত করবে। কসমিক স্ট্রিংগুলো যদি পরস্পরের সাপেক্ষে আলোর কাছাকাছি বেগে চলতে থাকে, তাহলে দুটি স্ট্রিংয়ের চারপাশে সময়কে এতটাই কমিয়ে ফেলা যাবে যে যাত্রা শুরুর আগের মুহূর্তে ফিরে যাওয়া যাবে। অন্য কথায়, এখানে আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতা আছে, যা অনুসরণ করে অতীতে ভ্রমণ করা যাবে।

কসমিক স্ট্রিংয়ে ধনাত্মক শক্তি ঘনত্বের বস্তু থাকে। আর তাই এটি ভৌতভাবে যুক্তিযুক্ত। তবে কুঞ্চনের জন্য যে আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতা তৈরি হয়, তা অসীমের সব জায়গায় বিস্তৃত অসীম অতীতের দিকে ফিরে যায়। তাতে এই স্থান-কালকে তাদের মধ্যে সময় পরিভ্রমণ উপযোগী করে তৈরি করা যায়। তবে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে আমাদের নিজেদের মহাবিশ্ব এ রকম কোনো কুঞ্চন কায়দায় তৈরি হয়েছে। আবার এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ভবিষ্যৎ থেকে আসা বিশ্বাসযোগ্য কোনো পর্যটকেরও প্রমাণও নেই। (অবশ্যই ইউএফও ভবিষ্যৎ থেকে এসেছে এবং এটি সরকার জেনেও বিষয়টি গোপন করছে বলে যে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু আছে, সেগুলো বাদ দিয়ে বলছি। অবশ্য সরকারের গোপন করার রেকর্ডও কিন্তু তেমন ভালো নয়।) কাজেই এখান থেকে অনুমান করা উচিত যে ধ্রুব সময় S-এর কোনো পৃষ্ঠতলের অতীতের দিকে আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতার কোনো অস্তিত্ব নেই।

তাহলে প্রশ্ন হলো, কোনো উন্নত সভ্যতা টাইম মেশিনের মতো কোনো যন্ত্র বানাতে পারবে কি না। অর্থাৎ যন্ত্রটি কি স্থান-কাল রূপান্তর করে S-এর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে, যাতে আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতা একটি সসীম অঞ্চলে বিরাজ করবে? এখানে আমি ‘একটি সসীম অঞ্চল’ বলেছি। কারণ, কোনো সভ্যতা যতই উন্নত হোক না কেন, সেটি মহাবিশ্বের একটি সীমাবদ্ধ এলাকাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

বিজ্ঞানে কোনো সমস্যা সঠিকভাবে বুঝতে পারাটা প্রায়ই তার সমাধানের প্রধান চাবিকাঠি। আর এ ক্ষেত্রে এটি ভালো একটি উদাহরণ। একটি সসীম টাইম মেশিন বলতে কী বোঝায়, তা বর্ণনা করতে আমার শুরুর দিকের কিছু গবেষণার কাছে ফিরে যাব আমি। S-এর ভবিষ্যতের কশি (Cauchy) বিকাশ স্থান-কালের বিন্দুগুলোতে সংজ্ঞায়িত করেছি আমি। S-এ কী ঘটেছে, তার ওপর ভিত্তি করে এখানে ঘটনাগুলো পুরোপুরি নির্ধারিত হবে। অন্য কথায়, এটি স্থান-কালের সেই অঞ্চল, যেখান থেকে আসা প্রতিটি সম্ভাব্য পথ আলোর চেয়ে কম বেগে যাতায়াত করে। তবে কোনো উন্নত সভ্যতা একটি টাইম মেশিন বানাতে পারলে সেখানে ভবিষ্যৎ S-এর দিকে আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতা C থাকতে হবে। S-এর ভবিষ্যতের ভেতর C বারবার আবর্তিত হতে থাকবে। কিন্তু এটি পেছন দিকে ফিরবে না এবং S-কে ছেদ করবে না। এর অর্থ দাঁড়ায়, C-এর ওপরের বিন্দুগুলো S-এর কশি বিকাশের ভেতর থাকবে না। কাজেই S-এর একটি কশি দিগন্ত থাকবে, অর্থাৎ এমন একটি তল, যা S-এর কশি বিকাশের ভবিষ্যতের সীমানা।

কিছু কৃষ্ণগহ্বর সমাধানে কিংবা অ্যান্টি-ডি সিটার স্থানে (Ads) কশি দিগন্ত পাওয়া যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে কশি দিগন্ত গঠনকারী আলোকরশ্মিগুলো অসীমতায় বা পরম বিন্দুতে শুরু হয়। এ ধরনের কশি দিগন্ত তৈরি করতে অসীমের সবটা পথজুড়ে বক্র স্থান-কাল অথবা স্থান-কালে একটি পরম বিন্দু থাকতে হবে। অসীমের পথজুড়ে বক্র স্থান-কাল তাত্ত্বিকভাবে সবচেয়ে উন্নত সভ্যতার ক্ষমতার বাইরে, যা স্থান-কালকে শুধু একটি সসীম অঞ্চলে বাঁকাতে পারে। উন্নত সভ্যতা যথেষ্ট পরিমাণ বস্তু একত্র করে একটি মহাকর্ষীয় সংকোচন ঘটাতে পারবে। এটি অন্তত চিরায়ত সাধারণ আপেক্ষিকতা অনুসারে একটি স্থান-কালের পরম বিন্দু তৈরি করতে পারে। কিন্তু আইনস্টাইনের সমীকরণগুলো সিঙ্গুলারিটি বা পরম বিন্দুতে অকার্যকর হয়ে যায়। কাজেই কশি দিগন্তে কী ঘটে, তা কেউই অনুমান করতে পারবে না। বিশেষ করে যেখানে কোনো আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতা থাকে, সেখানে এ ঘটনা ঘটে।

কাজেই টাইম মেশিনের জন্য মানদণ্ড এমন কিছু হওয়া উচিত, যাকে আমি সসীমভাবে তৈরি কশি দিগন্ত বলব। অর্থাৎ কশি দিগন্ত একটি ঘনসংবদ্ধ অঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসা আলোকরশ্মির মাধ্যমে তৈরি হয়। অন্য কথায়, তারা কোনো অসীম থেকে বা একটি পরম বিন্দু থেকে আসে না। তবে আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতাসমৃদ্ধ একটি সসীম অঞ্চল থেকে এটি শুরু হয়। অর্থাৎ আমাদের ধারণা, আমাদের ভবিষ্যতের উন্নত সভ্যতা হয়তো এ ধরনের কোনো অঞ্চল তৈরি করতে পারবে।

এই সংজ্ঞাকে একটি টাইম মেশিনের রূপরেখা হিসেবে গ্রহণ করার সুবিধা হলো, কার্যকারণ-সংক্রান্ত কাঠামো এই যন্ত্রে ব্যবহার করা যাবে। আর এটি রজার পেনরোজ আর আমার পরম বিন্দু আর কৃষ্ণগহ্বর-বিষয়ক গবেষণায় গড়ে তুলেছিলাম। এমনকি আইনস্টাইনের সমীকরণগুলো ব্যবহার না করেই আমি প্রমাণ দেখাতে পেরেছিলাম যে সাধারণভাবে একটি সসীমভাবে গঠিত কশি দিগন্তে আবদ্ধ আলোকরশ্মি থাকবে। অথবা একটি আলোকরশ্মি একই বিন্দুতে বারবার ফিরে আসতেই থাকবে। আবার প্রতিবার আলো আসার সময় সেটি আগের চেয়ে ক্রমেই নীল-বিচ্যুতি হবে। তবে ছবিগুলো ক্রমেই ঝাপসা হতে থাকবে। আলোকরশ্মিগুলো প্রতিবার কেন্দ্র থেকে যথেষ্ট পরিমাণ সরে যেতে পারে, তাতে আলোকশক্তি গড়ে উঠতে পারে না এবং অসীম হয়ে যায়। তবে নীল-বিচ্যুতির অর্থ দাঁড়াবে, একটি আলোর কণার শুধু একটি সসীম ইতিহাস থাকবে, যা তার নিজের সময়ের পরিমাপে সংজ্ঞায়িত হবে। এমনকি এটি বারবার একটি সসীম অঞ্চলে ফিরে এলেও এবং বক্র পরম বিন্দুতে না গেলেও তা-ই ঘটবে।

আলোর একটি কণা যদি একটি সসীম সময়ে তার ইতিহাস সম্পূর্ণ না করে, তাহলে হয়তো কিছু যায়-আসে না। কিন্তু আমি এটাও প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে আলোর চেয়ে কম বেগের পথও সেখানে থাকবে এবং সেগুলোর ব্যাপ্তি থাকবে শুধু সসীম যেসব পর্যবেক্ষক কশি দিগন্তের আগে একটি অসীম অঞ্চলে আটকা পড়েছেন এবং দ্রুত বেগে যাচ্ছেন, এগুলো তাঁদের ইতিহাস হতে পারে, যতক্ষণ না তাঁরা একটি সসীম সময়ে আলোর বেগের সমান হচ্ছেন।

কাজেই একটি ফ্লাইং সসারে কোনো সুন্দরী এলিয়েন যদি আপনাকে তার টাইম মেশিনে আমন্ত্রণ জানায়, তাহলে একটু সাবধানে সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনি ওই সব সসীম ব্যাপ্তির আটকা পড়া পুনরাবৃত্ত ইতিহাসের মধ্যেও পড়ে যেতে পারেন।

.

আগেই যেমনটি বলেছি, এসব ফলাফল আইনস্টাইনের সমীকরণগুলোর ওপর নির্ভর করে না। বরং এগুলো শুধু একটি সসীম অঞ্চলে স্থান-কাল বেঁকে তৈরি হতে যাওয়া আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতার ওপর নির্ভর করে। তবে এখন প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, একটি সসীম আকারের টাইম মেশিন বানাতে স্থান-কালের যে রকম বক্রতার প্রয়োজন, তার জন্য একটি উন্নত সভ্যতার কোন ধরনের পদার্থ দরকার? এর সব জায়গাতেই কি কসমিক স্ট্রিংয়ের স্থান-কালের মতো ধনাত্মক শক্তি-ঘনত্ব থাকতে হবে? এখানে কল্পনা করা যেতে পারে যে কসমিক স্ট্রিংয়ের সসীম লুপ ব্যবহার করে হয়তো একটি সসীম টাইম মেশিন বানানো যাবে এবং তার সবখানে ধনাত্মক শক্তি-ঘনত্ব থাকবে। যারা অতীতে যেতে চায়, তাদের আশাহত করার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। কিন্তু সবখানে ধনাত্মক শক্তি-ঘনত্ব ব্যবহার করে এটি করা সম্ভব নয়। আমি প্রমাণ করেছি যে একটি সসীম টাইম মেশিন বানানোর জন্য ঋণাত্মক শক্তির প্রয়োজন।

চিরায়ত তত্ত্বে ভৌতভাবে যৌক্তিক সব ক্ষেত্র দুর্বল শক্তি অবস্থা মেনে চলে। এখানে বলা হয়, যেকোনো পর্যবেক্ষকের জন্য শক্তি-ঘনত্ব শূন্যের চেয়ে বড় অথবা শূন্যের সমান হবে। কাজেই বিশুদ্ধ চিরায়ত তত্ত্বে সসীম আকারের টাইম মেশিন বাতিল হয়ে যায়। তবে আংশিক চিরায়ত তত্ত্বে বিষয়টি একটু ভিন্ন। এখানে একটি চিরায়ত স্থান-কালের পটভূমিতে কোয়ান্টাম ফিল্ড বা ক্ষেত্র থাকে বলে বিবেচনা করা যায়। কোয়ান্টাম তত্ত্বের অনিশ্চয়তার নীতি অনুযায়ী, এই ক্ষেত্রগুলো সব সময় ওপর ও নিচে ওঠানামা করছে, এমনকি আপাতদৃষ্টিতে কোনো শূন্যস্থানেও একই ঘটনা ঘটছে। এই কোয়ান্টাম অস্থিরতা শক্তি-ঘনত্বকে অসীমে পরিণত করছে। কাজেই পর্যবেক্ষণে দেখা সসীম শক্তি-ঘনত্ব পেতে হলে একটি অসীম পরিমাণ বিয়োগ করতে হবে। নইলে শক্তি-ঘনত্ব স্থান-কালকে বাঁকিয়ে একটি একক বিন্দুতে পরিণত করবে। এই বিয়োগের ফলে শক্তির কাঙ্ক্ষিত মান ঋণাত্মক হতে পারে, অন্তত স্থানীয়ভাবে। আবার সমতল স্থানে কোয়ান্টাম অবস্থা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সেখানে মোট শক্তি ধনাত্মক হলেও শক্তি-ঘনত্বের কাঙ্ক্ষিত মান স্থানীয়ভাবে ঋণাত্মক হয়।

অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো, কাঙ্ক্ষিত এসব ঋণাত্মক মানের কারণে আসলে স্থান-কালকে যথার্থভাবে বাঁকিয়ে দিতে পারবে কি না। সব দেখে মনে হয়, সেটি অবশ্যই বাঁকিয়ে দিতে পারবে। কোয়ান্টাম তত্ত্বের অনিশ্চয়তার নীতি কৃষ্ণগহ্বর থেকে কণা ও বিকিরণ বেরিয়ে আসার অনুমতি দেয়। এ কারণে ধীরে ধীরে উবে গিয়ে কৃষ্ণগহ্বর ভর হারায়। কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনাদিগন্ত আকারে সংকুচিত হওয়ার কারণে ঘটনাদিগন্তে শক্তি-ঘনত্ব অবশ্যই ঋণাত্মক হবে। আবার তা স্থান-কালকে বাঁকিয়ে আলোকরশ্মিগুলোকে পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। শক্তি-ঘনত্ব যদি সব সময় ধনাত্মক হয় এবং বক্র স্থান-কাল আলোকরশ্মিগুলোকে পরস্পরের দিকে বাঁকিয়ে দেয়, তাহলে কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনাদিগন্ত শুধু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে পারবে।

কৃষ্ণগহ্বরের উবে যাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে বস্তুর কোয়ান্টাম শক্তি ভরবেগের টেনসর মাঝেমধ্যে স্থান-কালকে এমন দিকেও বাঁকিয়ে দিতে পারে, যা দিয়ে একটি টাইম মেশিন বানানো যায়। কাজেই কল্পনা করা যেতেই পারে যে অতি উন্নত কোনো সভ্যতা শক্তি-ঘনত্বের এই কাঙ্ক্ষিত মান যথেষ্ট পরিমাণ ঋণাত্মক হিসেবে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে। আর এটি কাজে লাগিয়ে একটি টাইম মেশিন বানাতেও সক্ষম হবে তারা। আর এই টাইম মেশিনটি ম্যাক্রোস্কোপিক বস্তুর মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে।

তবে মনে রাখা দরকার, কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনাদিগন্ত এবং একটি টাইম মেশিনের ঘটনাদিগন্তের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনাদিগন্তে আবদ্ধ আলোকরশ্মি থাকে, যা বৃত্তাকারে অনবরত ঘুরতেই থাকে। এটিই শক্তি-ঘনত্বকে অসীম করে তোলে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি বা কোনো নভোযান এই ঘটনাদিগন্ত পার হয়ে টাইম মেশিনে যাওয়ার চেষ্টা করলে তীব্র বিকিরণে মুছে বা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। তাই অতীত নিয়ে অযথা মাথা না ঘামানোর জন্য আমাদের প্রতি একটি হয়তো প্রকৃতির একটি সতর্কবার্তা।

কাজেই টাইম ট্রাভেলের জন্য ভবিষ্যৎও অন্ধকার বলেই মনে হয়। আমার কি একে অন্ধভাবে সাদা বলা উচিত? শক্তি ভরবেগের টেনসরের কাঙ্ক্ষিত মান নির্ভর করে পটভূমির ওপর অবস্থিত ক্ষেত্রগুলোর কোয়ান্টাম অবস্থার ওপর। অনেকে হয়তো কল্পনা করতে পারে যে সেখানে কোয়ান্টাম অবস্থা এমনও তো হতে পারে, যেখানে ঘটনাদিগন্তের ওপর শক্তি-ঘনত্ব সসীম এবং এমনটি হওয়ারও উদাহরণ আছে। আপনি কীভাবে এই কোয়ান্টাম অবস্থা অর্জন করবেন কিংবা ঘটনাদিগন্ত অতিক্রম করার কোনো বস্তুর জন্য সেটি সুস্থির কি না, তা আমরা কেউ জানি না। কিন্তু এটি হয়তো উন্নত কোনো সভ্যতার হাতের মুঠোয় কখনো আসতেও পারে।

এটি এমন ধরনের প্রশ্ন, যাকে উপহাস বা তাচ্ছিল্য না করেই পদার্থবিদদের আলোচনা করা উচিত। এমনকি কখনো যদি দেখা যায় যে টাইম ট্রাভেল অসম্ভব, তাহলে সেটি কেন অসম্ভব, বোঝাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা মহাকর্ষের কোয়ান্টায়িত তত্ত্বের পুরোটা এখনো জানি না। তবে হয়তো আশা করা যায়, শুধু প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্যে (এক সেন্টিমিটারের এক মিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ দৈর্ঘ্য) এটি আংশিক চিরায়ত তত্ত্বের চেয়ে আলাদা হবে। স্থান-কালের পটভূমিতে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন বা অস্থিরতা হয়তো ওয়ার্মহোল সৃষ্টি করতে পারে। আর এর মাধ্যমেই মাইক্রোস্কোপিক পরিসরে টাইম ট্রাভেল সম্ভব করে তুলতে পারে। কিন্তু সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বমতে, ম্যাক্রোস্কোপিক বস্তুগুলো তাদের অতীতে ফিরে যেতে পারে না।

এমনকি ভবিষ্যতে যদি অন্য কোনো তত্ত্ব আবিষ্কৃতও হয়, আমার মনে হয়, তাতেও কখনো টাইম ট্রাভেল সম্ভব হবে না। কারণ, তা-ই যদি হতো, তাহলে এত দিনে আমাদের এখানে ভবিষ্যৎ থেকে আসা পর্যটকদের ভিড় লেগে যেত।

তথ্যনির্দেশ

সাধারণ আপেক্ষিকতা : বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের তত্ত্ব। বিজ্ঞানের নিয়মকানুন সব পর্যবেক্ষকের জন্য একই হবে, তাদের গতিশীলতার ওপর এই নিয়মকানুন নির্ভরশীল নয়—এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে এই তত্ত্ব গড়ে উঠেছে। চতুর্থ মাত্রিক স্থান-কালের বক্রতার ভিত্তিতে এটি মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করে।

ওয়ার্মহোল : স্থান-কালের মধ্যে একটি পাতলা নল, যা মহাবিশ্বের দূরবর্তী দুটি অঞ্চলের মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টি করে। ওয়ার্মহোলের সঙ্গে সমান্তরাল বা শিশু মহাবিশ্বের সংশ্লিষ্টতা আছে। এর মাধ্যমে সময় পরিভ্রমণ সম্ভব হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

ম্যাক্রোস্কোপিক বস্তু : কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই যা খালি চোখে দেখা যায়, এমন বস্তু। অর্থাৎ মাইক্রোস্কোপিক বা আণুবীক্ষণিক বস্তুর বিপরীত।

চিরায়ত পদার্থবিদ্যা : বিংশ শতাব্দী শুরুর কিছুদিন আগপর্যন্তও প্রাকৃতিক ঘটনাবলি নিউটনের বলবিদ্যা, ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎচুম্বকীয় তত্ত্ব, তাপগতিবিদ্যা এবং বোলজম্যানের পরিসংখ্যানিক গতিবিদ্যা দিয়ে বেশ ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল। তবে ইথার ও বিকিরণ-সংক্রান্ত কিছু বিষয় তখনো অমীমাংসিত ছিল। উনিশ শতকের একেবারে শেষ দশকে একের পর এক নতুন কিছু আবিষ্কার পদার্থবিজ্ঞানে নতুন বিপ্লবের জন্ম দেয়। যেমন রন্টজেনের এক্স-রে আবিষ্কার, থমসনের ইলেকট্রনের আবিষ্কার, বেকরেলের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার, হার্জের ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্ট আবিষ্কার নতুন কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়। এ ছাড়া এ সময়েই কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ পদার্থবিদদের ধাঁধায় ফেলে দেয়। কারণ, পদার্থবিদ্যার প্রচলিত কোনো সূত্র দিয়েই একে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না। অবশেষে একে ব্যাখ্যার জন্য ১৯০০ সালে বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক কোয়ান্টাম ধারণা ব্যবহার করলেন। তাঁর হাত ধরেই শতাব্দীর একেবারে শুরুতে জন্ম নিয়েছিল নতুন এক বিজ্ঞান, যা কোয়ান্টাম তত্ত্ব নামে পরিচিত। তাই ১৯০০ শতকের আগপর্যন্ত পদার্থবিদ্যার সব তত্ত্বকে বলা হয় চিরায়ত বা ধ্রুপদি পদার্থবিজ্ঞান।

মহাজাগতিক ধ্রুবক : একটি গাণিতিক কৌশল, যা আইনস্টাইন ব্যবহার করেছিলেন। স্থান-কালকে প্রসারিত হওয়ার একটি সহজাত প্রবণতা দিতে তিনি এই ধ্রুবক ব্যবহার করেছিলেন। তবে একসময় জানা গেল, মহাবিশ্ব প্রসারণশীল। তখন আইনস্টাইন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। সমীকরণে এই ধ্রুবকটি ব্যবহারকে তার সবচেয়ে বড় ভুল বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

কোয়ান্টাম মহাকর্ষ : মহাকর্ষের জন্য একটি কোয়ান্টাম তত্ত্বের নামই কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি বা কোয়ান্টাম মহাকর্ষ। একমাত্র মহাকর্ষ বাদে প্রকৃতির সব কটি মৌলিক বলের কোয়ান্টাম তত্ত্ব গঠন করা সম্ভব হয়েছে। প্রস্তাবিত এই তত্ত্বের মাধ্যমেই সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব একত্র করে একটি পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব পাওয়া সম্ভব হবে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।

ইউএফও বা ফ্লাইং সসার : আন-আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট বা অজানা উড়ন্ত বস্তু। একে এলিয়েনদের তৈরি রহস্যময় নভোযান বলে বিশ্বাস করেন অনেকে। এরই আরেক নাম ফ্লাইং সসার বা উড়ন্ত সসার।

কশি দিগন্ত : কৃষ্ণগহ্বরের আশপাশে ঘটনাদিগন্ত ছাড়া আরও কিছু দিগন্ত দেখা যায়। এদের মধ্যে একটির নাম কশি। ফরাসি গণিতবিদ ও পদার্থবিদ অগাস্টিন লুই কশির নামে এই দিগন্তের নামকরণ করা হয়েছে।

আবদ্ধ সময়সদৃশ বক্রতা: মহাকর্ষের প্রভাবে সবকিছুই বেঁকে যায়, এমনকি আলোও। তাই তাত্ত্বিকভাবে এমন মহাকর্ষক্ষেত্র তৈরি করা সম্ভব, যার প্রভাবে আমাদের পথ এতটাই বেঁকে যাবে যে আমার যাত্রা শুরুর আগের বিন্দুতে পৌছাতে পারব, সোজা কথায় অতীতে চলে যেতে পারব। অতীতে যাওয়ার এ রকম পথ অবশ্যই আবদ্ধ হতে হবে। পদার্থবিদেরা একেই বলে ক্লোজড টাইম-লাইক কার্ভ বা সিটিসি। সাধারণ আপেক্ষিকতার সমীকরণগুলোর সমাধান করে এটি পাওয়া গেছে। ১৯৪৯ সালে কার্ট গোডেল এ সমাধান বের করেছিলেন। তবে স্টিফেন হকিং এবং আরও অনেক বিজ্ঞানী সিটিসিকে মানতে নারাজ।

অনিশ্চয়তার নীতি : জার্মান বিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গে সূত্রবদ্ধ করা একটি তত্ত্বের নাম অনিশ্চয়তার নীতি। এর নীতি অনুযায়ী একটি কণার অবস্থান এবং গতিবেগ দুটো একই সঙ্গে নির্ভুলভাবে জানা সম্ভব নয়। দুটোর মধ্যে একটি যত নিখুঁতভাবে জানা যাবে, ততই অন্যটিকে নিখুঁতভাবে জানার পরিমাণ কমতে থাকবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *