ক্যালটেক
১৯৭৪ সালে আমি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলাম। এই নির্বাচনটি আমার ডিপার্টমেন্টের সদস্যদের জন্য বিস্ময়কর একটি ঘটনা ছিল। কারণ, সে সময় আমি বেশ তরুণ আর সামান্য রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলাম। তবে মাত্র তিন বছরের মাথায় আমাকে প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।
আমার এই নির্বাচনের পর জেন বেশ বিষণ্ন হয়ে পড়েছিল। কারণ, তার মনে হয়েছিল, এর মাধ্যমে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছে গেছি এবং এখন থেকে আমার অবস্থা খারাপ হতে থাকবে। তবে সেবার আমার বন্ধু কিপ থর্ন যখন আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (ক্যালটেক) সাধারণ আপেক্ষিকতা বিষয়ে কাজের আমন্ত্রণ জানালেন, তাতে জেনের বিষণ্ণতা কিছুটা কমেছিল।
গত চার বছরে আমি ম্যানুয়াল হুইলচেয়ার ছাড়াও তিন চাকার নীল ইলেকট্রিক কার ব্যবহার করে আসছি। এই ইলেকট্রিক কারটি ছিল বেশ ধীরগতির। মাঝেমধ্যে এতে অবৈধভাবে আরোহীও বহন করেছি। ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে আমরা ক্যাম্পাসের কাছেই ক্যালটেকের মালিকানাধীন কলোনিয়াল ধাঁচের এক বাড়িতে থাকতাম। সেখানে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার ব্যবহার করেছিলাম। এই যন্ত্রটি আমাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছিল। কারণ, ব্রিটেনের তুলনায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিল্ডিং আর ফুটপাতগুলো শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক বেশি সুবিধাজনক। আমাদের সঙ্গে সেখানে আমার এক গবেষণা শিক্ষার্থীও থাকত। বাসস্থান আর প্রচুর একাডেমিক নজর পাওয়ার বিনিময়ে সে আমাকে বিছানা থেকে উঠতে, বিছানায় যেতে এবং খাবার খেতে সহায়তা করত।
আমাদের দুই সন্তান লুসি আর রবার্ট সেবার ক্যালিফোর্নিয়া ভালোবেসে ফেলেছিল। তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের অপহরণ করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করত সবাই। তাই কেউ তাদের শিশুকে স্কুল থেকে স্বাভাবিকভাবে ফিরিয়ে আনতে পারত না। বরং তাদের পুরো ব্লক ঘুরে গাড়ি চালিয়ে একজন একজন করে গেটে আসতে হতো। তারপর একটি লাউডস্পিকারের মাধ্যমে সন্তান সম্পর্কে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে হতো। এর আগে জীবনে কখনো এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হইনি।
আমাদের বাসাটি একটি রঙিন টেলিভিশন সেট দিয়ে সাজানো হয়েছিল। অন্যদিকে ইংল্যান্ডে আমাদের শুধু সাদাকালো একটি টিভি সেট ছিল, যেটাতে মাঝেমধ্যে কিছুই দেখা যেত না। কাজেই সুযোগ পেয়ে আমরা বেশ টিভি দেখতে শুরু করলাম। বিশেষ করে ব্রিটিশ সিরিজগুলো, যেমন ‘আপস্টেয়ার’, ‘ডাউনস্টেয়ার’ ও ‘দ্য অ্যাসেন্ট অব ম্যান’ দেখতাম। একবার আমরা ‘দ্য অ্যাসেন্ট অব ম্যান’ সিরিজটির গ্যালিলিওকে নিয়ে নির্মিত পর্বটি দেখছিলাম। সেখানে দেখানো হচ্ছিল, গ্যালিলিওকে বিচারে দোষী সাব্যস্ত করে বাকি জীবন গৃহবন্দী করার চেষ্টা চালাচ্ছে ভ্যাটিকান। ঠিক তখন খবর পেলাম, পন্টিফিকাল একাডেমি অব সায়েন্সেস আমাকে একাদশ পায়াস মেডেল পুরস্কার দিয়েছে। প্রথমে ভাবলাম, প্রচণ্ড ক্ষোভ জানিয়ে সেটি নিতে অস্বীকার করব। তখন আমাকে জানানো হলো, গ্যালিলিও সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত মনোভাব পরিবর্তন করেছে ভ্যাটিকান। কাজেই মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে আমি ইংল্যান্ডে উড়ে গেলাম। তাঁরা দুজন রোমে আমাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন। ভ্যাটিকান পরিদর্শনের সময় ভ্যাটিকান লাইব্রেরিতে গ্যালিলিওর বিচার- সংক্রান্ত সব নথি দেখানোর দাবি জানালাম আমি।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পোপ পঞ্চম পল তাঁর সিংহাসন থেকে নেমে আমার পাশে হাঁটু গেড়ে বসলেন। অনুষ্ঠান শেষে পল ডিরাকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার। তিনি হলেন কোয়ান্টাম তত্ত্বের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি যখন কেমব্রিজের প্রফেসর, তখন তাঁর সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। কারণ, কোয়ান্টাম-সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে তখন আমার আগ্রহ ছিল না। ডিরাক আমাকে বললেন, এই মেডেলের জন্য তিনি আরেকজনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সবশেষে সিদ্ধান্তে আসেন যে এর জন্য আমিই তুলনামূলকভাবে ভালো হব। পরে আমাকেই পুরস্কারটি দেওয়ার জন্য একাডেমিকে সুপারিশ করেছিলেন তিনি।
.
ক্যালটেকের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সে সময় প্রধান দুজন তারকা ছিলেন নোবেল বিজয়ী রিচার্ড ফাইনম্যান ও মারে গেল-মান তাঁদের মধ্যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল। প্রথম সাপ্তাহিক সেমিনারে গেল-মান বলেছিলেন, ‘এখন আমি গত বছর যা বলেছিলাম, সে কথাগুলোই আবার বলব।’ এ কথা শুনে ফাইনম্যান উঠে দাঁড়ালেন এবং গট গট করে হেঁটে সেখান থেকে চলে গেলেন। এরপর গেল-মান বললেন, “যাক, উনি চলে গেছেন। তাহলে আমি আসলে যা বলতে চাচ্ছিলাম, এখন সেগুলো বলতে পারি।’
কণা পদার্থবিদ্যার জন্য সেটি ছিল সত্যিই খুবই রোমাঞ্চকর সময়। স্ট্যানফোর্ডে নতুন ‘চার্ম’ পার্টিকেল মাত্রই আবিষ্কৃত হয়েছে। আর এ আবিষ্কারে গেল-মানের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করেছিল। তাঁর তত্ত্বমতে, প্রোটন আর নিউট্রন আরও তিনটি মৌলিক কণা দিয়ে গঠিত, যাদের নাম কোয়ার্ক।
ক্যালটেকে থাকা অবস্থায় আমি কিন থর্নের সঙ্গে বাজি ধরলাম যে সিগনাস এক্স-ওয়ান নামের যুগল নক্ষত্র ব্যবস্থায় কোনো কৃষ্ণগহ্বর নেই। সিগনাস এক্স-ওয়ান হলো এক্স-রশ্মির এমন এক উৎস, যেখানে সাধারণ নক্ষত্র তার বাইরের স্তর হারিয়ে অদৃশ্য ঘনবদ্ধ কোনো সঙ্গীর দিকে চলে যাচ্ছে। পদার্থগুলো যখন ওই অদৃশ্য সঙ্গীর দিকে যাচ্ছে, তখন সেটি একটি সর্পিলাকার গতি তৈরি করছে এবং খুবই উত্তপ্ত হয়ে এক্স-রশ্মি নিঃসরণ করছে। এই বাজিতে আমি হেরে যাওয়ার আশা করছিলাম। কারণ, কৃষ্ণগহ্বরের পেছনে অনেক বড় ধরনের বুদ্ধিবৃত্তি নিয়োগ করেছিলাম আমি। কিন্তু যদি দেখা যায় যে সেখানে কোনো কৃষ্ণগহ্বর নেই, তাহলে অন্তত বাজি জেতার সান্ত্বনা হিসেবে চার বছর প্রাইভেট আই ম্যাগাজিনটি পেতে থাকব। অন্যদিকে কিপ থর্ন জিতে গেলে তিনি এক বছর পেন্টহাউস ম্যাগাজিনটি পেতে থাকবেন। এই বাজি ধরার পরের বছর সেখানে কৃষ্ণগহ্বর থাকার বেশ জোরালো প্রমাণ পাওয়া গেল। কাজেই আমি হার স্বীকার করে কিপ থর্নকে পেন্টহাউস-এর এক বছরের গ্রাহক বানিয়ে দিয়েছিলাম। অবশ্য তাতে তাঁর স্ত্রী বেশ বেজারই হয়েছিলেন।
.
ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকার সময় ডন পেজ নামের ক্যালটেকের এক গবেষণা শিক্ষার্থীর সঙ্গে কাজ করতাম। ডনের জন্ম আলাস্কার এক গ্রামে এবং সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। সেখানে তার মা-বাবা স্কুলশিক্ষকতা করেন। ওই গ্রামে ইনুইট সম্প্রদায়ের বাইরের মানুষ বলতে ছিলেন শুধু তাঁরা তিনজনই। সে ছিল ইভানজেলিক খ্রিষ্টান। কেমব্রিজে আমাদের সঙ্গে থাকতে এসে সে আমাকে এই সম্প্রদায়ে ধর্মান্তরিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। সকালে নাশতার সময় আমাকে প্রতিদিন বাইবেলের গল্প পড়ে শোনাত সে। কিন্তু তাকে বলতাম, মায়োরকা থাকার সময় থেকেই আমি বাইবেল সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে জানি। কারণ, বাবা আমাকে একসময় বাইবেল পড়ে শোনাতেন। (বাবা ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন না, তবে তিনি মনে করতেন, রাজা জেমসের বাইবেলটি সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ)।
ডন আর আমার গবেষণার বিষয় ছিল, কৃষ্ণগহ্বর থেকে কোনো বিকিরণ নিঃসরণ কীভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এই বিকিরণের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম আমি নিজেই। সূর্যের ভরের সমান একটি কৃষ্ণগহ্বর থেকে আসা বিকিরণের তাপমাত্রা প্রায় এক কেলভিনের দশ লাখ ভাগের এক ভাগ হতে পারে, যা পরম শূন্য তাপমাত্রার কিছুটা ওপরে থাকে। কাজেই তা এটি মাইক্রোওয়েভ কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন (অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গের মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণ) এর মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। কারণ, মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণের তাপমাত্রা ২.৭ কেলভিন। তাই মহাবিস্ফোরণ থেকে হয়তো খুবই ছোট আকারের কৃষ্ণগহ্বরের অবশেষ থাকতে পারে। একটি পর্বতের সমান ভরের একটি আদিম কৃষ্ণগহ্বর গামা রশ্মি বিকিরণ করতে পারে। এখন হয়তো তার সূচনাকালের বেশির ভাগ ভর বিকিরণ করে তার জীবনকাল শেষ হয়ে গেছে। গামা রশ্মির পটভূমি বিকিরণের মধ্যে আমরা এ ধরনের প্রমাণ খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু তার কোনো চিহ্ন পাওয়া গেল না। এ রকম ভরের কৃষ্ণগহ্বরের জন্য আমরা ঘনত্বের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করতে পেরেছিলাম আমরা। এতে দেখা গেল যে তা শনাক্ত করার মতো অবস্থায় পৌঁছাতে পারিনি এখনো।
তথ্যনির্দেশ
পল ডিরাক : নোবেল বিজয়ী ব্রিটিশ এই তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীর পুরো নাম পল অ্যাড্রিয়ান মরিস ডিরাক (১৯০২-৮৪)। বিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিদদের অন্যতম হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করা হয়। কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। কোয়ান্টাম মেকানিকস এবং কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইনামিকসের উন্নয়নে তাঁর মৌলিক অবদান রয়েছে। ১৯৩২ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৭ বছর তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের লুকাসিয়ান প্রফেসর ছিলেন।
মারে গেল-মান : মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী। মৌলিক কণাবিষয়ক তত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য ১৯৬৯ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। পদার্থের ক্ষুদ্রতম মৌলিক কণার নাম কোয়ার্ক দিয়েছিলেন তিনিই। আর এই নামটি বেছে নিয়েছিলেন জেমস জয়েসের একটি ছড়ার শব্দ থেকে।
কোয়ান্টাম তত্ত্ব ও বলবিদ্যা : জার্মান পদার্থবিদ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের হাতে ১৯০০ সালে জন্ম নিয়েছিল কোয়ান্টাম তত্ত্ব। পারমাণবিক ও অতিপারমাণবিক পরিসরে বস্তু ও শক্তির প্রকৃতি ও আচরণ ব্যাখ্যা করে এই তত্ত্ব। আর পদার্থবিদ্যার যে শাখায় বল প্রয়োগে শক্তিকণার গতিবেগ, ধর্ম, আচরণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়, সেটিই কোয়ান্টাম মেকানিকস বা কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। এটি প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম নীতি ও হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি দিয়ে গঠিত চিরায়ত বলবিদ্যায় দৃশ্যমান বস্তুর ওপর বল প্রয়োগে বস্তুর ধর্ম বা আচরণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ক্ষেত্র অতি ক্ষুদ্ৰ শক্তিকণা (যেমন ইলেকট্রন)। চিরায়ত বলবিদ্যায় যেসব বস্তুর ভর আছে কিন্তু তরঙ্গ প্রকৃতি নেই, তাদের নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় এমন সব বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, যাদের কণা (বা ভর) প্রকৃতি এবং তরঙ্গ প্রকৃতি উভয়ই আছে। যেমন আলো একই সঙ্গে কণা ও তরঙ্গ।
প্রোটন : পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট কণাটির নাম প্রোটন। বেশির ভাগ পরমাণুর কেন্দ্রে এই কণাটি প্রায় অর্ধেকসংখ্যক থাকে, বাকি অর্ধেক নিউট্রন। প্রোটনের ভর ইলেকট্রনের ভরের প্রায় ১৮৩৬.১২ গুণ। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ আর্নেস্ট রাদারফোর্ড প্রোটন আবিষ্কার করেন। একসময় একে মৌলিক কণা হিসেবে ভাবা হতো। তবে পরবর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, এ কণাগুলো কোয়ার্ক নামের আরও ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে এক বা একাধিক প্রোটন থাকতে পারে। প্রতিটি মৌলের একটি নির্দিষ্টসংখ্যক প্রোটন থাকে। প্রোটনের এই সংখ্যাকে বলা হয় পারমাণবিক সংখ্যা। সবচেয়ে সরল মৌল হাইড্রোজেনে প্রোটনের সংখ্যা মাত্র একটি। অন্যদিকে সবচেয়ে ভারী প্রাকৃতিক মৌল ইউরেনিয়ামের প্রোটনসংখ্যা ৯২। নিউক্লিয়াসে যত বেশি প্রোটন থাকবে, ওই পরমাণুর ইলেকট্রনও তত বেশি হবে।
নিউক্লিয়াসে প্রোটনগুলো শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বলের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই বল বৈদ্যুতিক বিকর্ষণের চেয়েও শক্তিশালী। সে কারণেই ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রোটন পরস্পরকে বিকর্ষণ না করে একত্রে যুক্ত থাকতে পারে।
নিউট্রন : প্রায় প্রোটনের মতোই একটি কণা। তবে এর কোনো চার্জ নেই। বেশির ভাগ পরমাণুর কেন্দ্রে প্রায় অর্ধেক এই কণা থাকে। ১৯৩২ সালে জেমস চ্যাকউইক প্রথম নিউট্রনের খোঁজ পেয়েছিলেন। হাইড্রোজেন ছাড়া সব পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নিউট্রন থাকে। প্রোটনের মতো নিউট্রনও শক্তিশালী পরমাণুর নিউক্লিয়ার বলের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কণা পদার্থবিদ্যা অনুযায়ী, একটি নিউট্রন তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি। এদের দুটি ডাউন ও একটি আপ কোয়ার্ক। এই কোয়ার্কগুলো বলবাহী গ্লুয়ন কণার মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়।
কোয়ার্ক : বস্তুর ক্ষুদ্রতম মৌলিক কণা। একটি চার্জিত মৌলিক কণা, যা শক্তিশালী বল দ্বারা প্রভাবিত হয়। একসময় পরমাণুর প্রোটন এবং নিউট্রনকে অবিভাজ্য ভাবা হতো। কিন্তু ১৯৬৪ সালে বিজ্ঞানী মারে গেল-মান ও জর্জ ওয়েন আলাদা আলাদাভাবে কোয়ার্ক মডেলের প্রস্তাব করেন। এই মডেল অনুযায়ী কোয়ার্ক পদার্থের একধরনের মৌলিক কণা। ছয় ধরনের কোয়ার্ক কণার অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এদের নাম আপ কোয়ার্ক, ডাউন কোয়ার্ক, চার্ম কোয়ার্ক, স্ট্রেঞ্জ কোয়ার্ক, টপ কোয়ার্ক ও বটম কোয়ার্ক। প্রোটন ও নিউট্রনের প্রতিটিই তিনটি কোয়ার্ক কণা দিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে দুটি আপ কোয়ার্ক ও একটি ডাউন কোয়ার্ক মিলে তৈরি হয় প্রোটন আর দুটি ডাউন ও একটি আপ কোয়ার্ক মিলে তৈরি হয় নিউট্রন।
পরম শূন্য তাপমাত্রা : সম্ভাব্য সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রায় বস্তুর মধ্যে কোনো তাপশক্তি থাকে না। মাইনাস ২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কেলভিন স্কেলে ০ কেলভিন তাপমাত্রাকে পরম শূন্য বলা হয়।
চার্ম কণা : মৌলিক কোয়ার্ক কণা, যা চার্ম কোয়ার্ক নামে পরিচিত। কোয়ার্কদের মধ্যে ভরের দিক দিয়ে তৃতীয়তম। তাত্ত্বিকভাবে ১৯৭০ সালে এ রকম একটি কণার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন শেলডন গ্ল্যাশো, জন লিওপলস, লুসিয়ানা মেইয়ানি। ১৯৭৪ সালে কণাটি আবিষ্কৃত হয়।
সিগনাস এক্স-ওয়ান : সিগনাস নক্ষত্রপুঞ্জে একটি শক্তিশালী মহাজাগতিক এক্স-রশ্মির উৎস। পৃথিবী থেকে দেখা এক্স-রশ্মির সবচেয়ে বড় উৎস এটি। ১৯৬৪ সালে এটি আবিষ্কৃত হয়। অনেক তর্কবিতর্কের পর একে কৃষ্ণগহ্বর হিসেবে স্বীকার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই কৃষ্ণগহ্বরটি সূর্যের চেয়ে প্রায় ১৪.৮ গুণ ভারী।
গামা রশ্মি : খুবই ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিদ্যুৎচুম্বকীয় রশ্মি। তেজস্ক্রিয় পদার্থের ক্ষয় বা মৌলিক কণাদের সংঘর্ষে এই রশ্মির সৃষ্টি হয়।