ছেলেবেলা

ছেলেবেলা

আমার বাবা ফ্রাঙ্কের জন্ম ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের এক বর্গাচাষি পরিবারে। তাঁর দাদা, অর্থাৎ আমার প্রপিতামহ জন হকিংকে বেশ সম্পদশালী কৃষকই বলা যায়। কিন্তু একসময় তিনি অনেকগুলো খামার কিনেছিলেন। তাতে এই শতাব্দীর শুরুতে কৃষিমন্দার সময় দেউলিয়া হয়ে যান তিনি। তাঁর ছেলে রবার্ট, মানে আমার দাদা তাঁর বাবাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেও দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। চরম সৌভাগ্যই বলতে হবে, বরোব্রিজে একটি বাড়ির মালিক ছিলেন রবার্টের স্ত্রী। সেই বাড়িতে তিনি একটি স্কুল চালাতেন। সেখান থেকে আয় হতো খুব সামান্যই। তবু কোনোমতে ছেলেকে অক্সফোর্ডে পাঠাতে পেরেছিলেন তাঁরা। সেখানে চিকিৎসাবিদ্যা বিষয়ে পড়ালেখা করেছিলেন তিনি।

পরপর বেশ কয়েকটি স্কলারশিপ ও পুরস্কার জিতেছিলেন আমার বাবা। তাই তাঁর পিতা-মাতাকে টাকা পাঠাতে পারতেন। পরে তিনি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার চিকিৎসাবিদ্যা (ট্রপিক্যাল মেডিসিন) বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। এ গবেষণার অংশ হিসেবে ১৯৩৭ সালে পূর্ব আফ্রিকায় ভ্রমণ করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইংল্যান্ডে ফেরার জন্য জাহাজ পেতে স্থলপথে ও কঙ্গো নদী ধরে পুরো আফ্রিকা ঘুরতে হয়েছিল বাবাকে। দেশে ফিরে তিনি সামরিক বাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। অবশ্য তাঁকে বলা হয়েছিল, চিকিৎসাবিদ্যায় গবেষণা করাটাই তাঁর জন্য বেশি ভালো হবে।

আমার মায়ের জন্ম স্কটল্যান্ডের ডানফার্মলাইনে। এক চিকিৎসক পরিবারের আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ওই পরিবারের সবচেয়ে বড় মেয়েটি ডাউন সিনড্রোমে ভুগছিলেন। তাই এক তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে তাঁকে আলাদা রাখা হতো। মাত্র ১৩ বছর বয়সে মৃত্যুর আগপর্যন্ত এভাবেই ছিলেন তিনি। আমার মায়ের বয়স যখন ১২ বছর, তখন পুরো পরিবারটি ডেভনে চলে যায়। বাবার পরিবারের মতোই মায়ের পরিবারেও তেমন সচ্ছলতা ছিল না। তারপরও কীভাবে যেন মাকে অক্সফোর্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন তাঁরা। অক্সফোর্ডে পড়ালেখা শেষে বেশ কয়েকটি চাকরি করেছিলেন মা। এর মধ্যে একটি চাকরি ছিল ট্যাক্স ইন্সপেক্টর। এই চাকরিটি মায়ের মোটেও ভালো লাগত না। তাই সেক্রেটারির চাকরি পাওয়ার আশায় একসময় তিনি এটি ছেড়ে দেন। ঠিক এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে আমার বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর আমার জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি। তারিখটা গ্যালিলিওর মৃত্যুর ঠিক ৩০০ বছর পরের। হিসাব করে দেখেছি, ওই দিন আরও প্রায় দুই লাখ শিশুর জন্ম হয়েছিল। তবে এদের কেউ পরে জ্যোতির্বিদ্যায় আগ্রহী হয়েছিল কি না, আমার জানা নেই।

আমার মা-বাবা লন্ডনে বসবাস করলেও আমার জন্ম অক্সফোর্ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান ও ব্রিটিশদের মধ্যে একটি চুক্তিই ছিল এর পেছনের কারণ। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজে কোনো বোমা হামলা চালাবে না জার্মান বাহিনী। বিনিময়ে জার্মানির হাইডেলবার্গ ও গটিনজেনে বোমা না ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্রিটিশরা। দুঃখের বিষয়, অন্য শহরগুলোর জন্য দুই পক্ষের কাছ থেকে এ ধরনের সুসভ্য প্রতিশ্রুতি আদায় করা যায়নি।

আমরা থাকতাম উত্তর লন্ডনের হাইগেটে। আমার জন্মের ঠিক ১৮ মাস পর জন্ম হয়েছিল আমার বোন মেরির। পরে শুনেছি, আমি নাকি তার পৃথিবীতে আসাটাকে ভালোভাবে নিতে পারিনি। দুজনের বয়সের ফারাক খুব কম হওয়ার কারণে শৈশবজুড়েই আমাদের দুজনের ভেতর একধরনের টানাপোড়েন ছিল। তবে বয়সকালে আমাদের পথ আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণে যথারীতি সেই বৈরিতা গায়েব হয়ে গিয়েছিল। বড় হয়ে সে চিকিৎসক হয়েছিল। তাতে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন আমার বাবা।

প্রায় পাঁচ বছর বয়সে চারপাশে কী ঘটছে, সেসব যখন বেশ বুঝতে শিখেছি, ঠিক তখন জন্মেছিল আমার বোন ফিলিপ্পা। এখনো মনে আছে, তার জন্মের জন্য এককালে কেমন অধীর প্রতীক্ষায় থাকতাম আমি। কারণ, তখন ভাবতাম, তিন ভাইবোন হলে খেলাধুলায় অনেক বেশি মজা করতে পারব আমরা। শিশু হিসেবে ফিলিপ্পা ছিল খুবই আবেগপ্রবণ আর সমঝদার। আমি সব সময় তার বিবেচনাবোধ আর মতামতের গুরুত্ব দিতাম। আমার ভাই এডওয়ার্ডকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল আরও অনেক পরে। তখন আমার বয়স সবে ১৪ বছর। তাই তাকে নিয়ে আমার শৈশবে তেমন কোনো স্মৃতি নেই। আমাদের পরিবারের অন্য তিন শিশুর চেয়ে একেবারেই আলাদা ছিল সে। পড়ালেখা কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে তার কোনো আগ্রহ ছিল না। সেটাই হয়তো আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। সে একটু বেয়াড়া ধরনের শিশু হলেও তাকে পছন্দ না করে কোনো উপায় ছিল না। ২০০৪ সালে সে মারা যায়। কিন্তু এর কারণটা সঠিকভাবে কখনোই জানা যায়নি। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, এডওয়ার্ডের ফ্ল্যাট সংস্কারের সময় দেয়ালে লাগানো আঠা থেকে উদ্বায়ী গ্যাসের বিষক্রিয়া তার মৃত্যুর কারণ।

সবচেয়ে ছোটবেলার একটি স্মৃতি এখনো বেশ মনে পড়ে। সেটি হলো, হাইগেটে বায়রন হাউস স্কুলের নার্সারি ক্লাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছি আমি। আর আমার চারপাশে শিশুরা খেলছে। তাদের খেলনাগুলো দেখে অসাধারণ বলে মনে হচ্ছিল। আমিও তাদের সঙ্গে খেলায় যোগ দিতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার বয়স তখন মোটে আড়াই বছর। আসলে সেবারই প্রথম একদল অজানা-অচেনা মানুষের ভিড়ে একা ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল আমাকে। তাতেই খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার ধারণা, মা-বাবা আমার এমন প্রতিক্রিয়া দেখে একটু অবাক হয়েছিলেন। কারণ, আমিই তাঁদের প্রথম সন্তান। সন্তান লালন-পালনে তাঁরা শিশু বিকাশবিষয়ক কিছু পাঠ্যপুস্তক মেনে চলতেন। সেসব বইয়ে বলা হয়েছিল, শিশুদের দুই বছর বয়সেই সামাজিক সম্পর্কের জন্য তৈরি করা উচিত। কিন্তু সেদিনের ওই ভয়াবহ সকালের পর তাঁরা আমাকে সেখান থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর পরবর্তী দেড় বছর বায়রন হাউসের দিকে আর পা বাড়াননি তাঁরা।

সে সময়, অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই হাইগেট এলাকায় বেশ কিছু বিজ্ঞানী আর শিক্ষাবিদ থাকতেন। স্বাভাবিকভাবেই এসব মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের পাঠাতেন বায়রন হাউস স্কুলে। কারণ, সেকালে এটিই ছিল সবচেয়ে অগ্রসর স্কুল।

আমার মনে আছে, এই স্কুল আমাকে কিছুই শেখাতে পারছে না বলে মা-বাবাকে একবার অভিযোগ করেছিলাম। পড়ালেখার ক্ষেত্রে সেকালের সর্বসম্মত কায়দাটি ছিল কোনো কিছু জোর করে ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া। কিন্তু এই রীতিতে বিশ্বাস করতেন না বায়রন হাউসের শিক্ষকেরা। বরং সেখানে কোনো কিছু না বুঝেই পড়তে শেখানো হতো। একসময় আমিও এভাবেই পড়তে শিখেছিলাম, কিন্তু মোটামুটি ভালোভাবে শিখতে আট বছর বয়স পেরিয়ে গিয়েছিল। আমার বোন ফিলিপ্পা প্রচলিত পদ্ধতিতে পড়তে শিখেছিল। এভাবে চার বছর বয়সেই সে পড়তে পারত। পরে আমার চেয়ে বেশি মেধার স্বাক্ষর রেখেছিল সে।

.

ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের একটা লম্বা ও সরু বাড়িতে থাকতাম আমরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মা-বাবা খুবই সস্তায় বাড়িটি কিনেছিলেন। সে সময় সবার মনে ভয় ছিল, লন্ডনে বোমা হামলা হবে। সত্যি সত্যিই আমাদের বাড়ি থেকে কয়েকটা বাড়ি পরে একটা ভি-২ রকেট ফেলা হয়েছিল। বাবা সে সময় ওই বাড়িতেই ছিলেন। তবে মা আর বোনের সঙ্গে আমি তখন সেখান থেকে বেশ দূরে ছিলাম। ভাগ্য ভালোই বলতে হবে, বাবা সেদিন কোনো আঘাত পাননি। আবার আমাদের বাড়িটারও তেমন ক্ষতি হয়নি। অনেক বছর পর্যন্ত রাস্তার নিচে বোমা পড়ার সেই জায়গাটি নির্দিষ্ট করে রাখা ছিল। ওই জায়গায় আমার বন্ধু হাওয়ার্ডের সঙ্গে খেলতাম আমি। ওদের বাড়িটি ছিল উল্টো দিকের রাস্তায়, ঠিক তিনটি বাড়ি পরেই। আমার কাছে হাওয়ার্ড ছিল দারুণ এক বিস্ময়। কারণ, আমার চেনাজানা অন্য ছেলেদের মতো ওর মা- বাবা বুদ্ধিজীবী ছিলেন না। সে কাউন্সিল স্কুলে পড়ত, বায়রন স্কুলে নয়। আবার সে ফুটবল, বক্সিংসহ এমন এমন সব খেলা জানত, যেগুলোর কথা আমার মা-বাবা কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি।

.

প্রথম ট্রেন সেট পাওয়ার ঘটনা নিয়ে ছোটবেলার আরেকটা স্মৃতি আছে। যুদ্ধের সময় ব্রিটেনে কোনো খেলনা বানানো হতো না। অন্তত দেশের বাজারের জন্য তো নয়ই। খেলনা ট্রেনের প্রতি আমার ছিল প্রবল আগ্রহ। একবার বাবা আমাকে একটা কাঠের ট্রেন বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেটি আমার একটুও ভালো লাগেনি। কারণ, আমি এমন কিছু চেয়েছিলাম, যেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে পারবে। একবার তিনি কোথা থেকে যেন একটা সেকেন্ডহ্যান্ড চাবিটানা ট্রেন পেয়েছিলেন। ট্রেনটা ঝালাইয়ের মাধ্যমে ঠিকঠাক করে এক বড়দিনে উপহার দিয়েছিলেন আমাকে। আমার বয়স তখন প্রায় তিন বছর। এই ট্রেনটা ঠিকমতো চলত না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরপরই একবার আমেরিকা গেলেন বাবা। কুইন মেরিতে চড়ে ফিরে মায়ের জন্য কিছু নাইলন এনেছিলেন তিনি। সে সময় ব্রিটেনে নাইলন মোটেও সহজলভ্য বস্তু ছিল না। সেবার মেরির জন্য এনেছিলেন একটা পুতুল। পুতুলটিকে শোয়ানো হলে সেটি চোখ বন্ধ করতে পারত। আর আমার জন্য বাবা এনেছিলেন কাউক্যাচার ও আট ট্র্যাকের লাইনসহ একটা আমেরিকান ট্রেন। ট্রেনের বাক্স খোলার সেই রোমাঞ্চকর মুহূর্তটির কথা এখনো ভুলিনি আমি।

চাবিটানা ট্রেনটা বেশ ভালোই ছিল বলতে হবে। তবে সেটি পেলে আপনি হয়তো মুখ ফিরিয়ে নেবেন। আমি আসলে একটা ইলেকট্রিক ট্রেন চেয়েছিলাম। হাইগেটের কাছে ক্রাউচ এন্ডে আমি একটি মডেল রেলওয়ে ক্লাব লেআউট দেখে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিতাম। আর ইলেকট্রিক ট্রেনের স্বপ্ন দেখতাম। একবার কী একটা কাজে যেন মা-বাবা দুজনেই বাইরে গেলেন। পোস্ট অফিস ব্যাংকে আমার কিছু জমানো টাকা ছিল। সেই সুযোগে আমি পুরো টাকাটাই তুলে ফেলি। এই টাকাগুলো বড়দিনসহ বিশেষ দিনগুলোতে বড়দের কাছ থেকে উপহার পেয়েছিলাম। এই টাকাগুলো দিয়েই কিনে ফেললাম একটা ইলেকট্রিক ট্রেন সেট। কিন্তু এটিও তেমন ভালোভাবে চলত না দেখে বেশ হতাশ হয়েছিলাম। আসলে তখনই উচিত ছিল ট্রেনটা ফেরত দিয়ে দোকানদার বা নির্মাতাদের কাছে ওটা পাল্টে দেওয়ার দাবি জানানো। কিন্তু তখনকার মনোভাব অনুযায়ী কিছু কেনাতেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। কেনার পর কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে সেটা নিতান্তই আপনার দুর্ভাগ্য। কাজেই ট্রেনের ইঞ্জিনের ইলেকট্রিক মোটর সারাইয়ের জন্য আমাকে আরও কিছু খরচ করতে হয়েছিল। কিন্তু তবু সেটি কখনোই ঠিকঠাক কাজ করেনি।

অনেক পরে, অর্থাৎ কৈশোরে মডেল বিমান আর নৌকা বানিয়েছিলাম। অবশ্য এসব বানানোর ব্যাপারে আমার তেমন দক্ষতা ছিল না। আসলে এগুলো বানিয়েছিলাম আমার স্কুলের বন্ধু জন ম্যাকক্লিনাহানের সঙ্গে। এ ব্যাপারে তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। ওদের বাড়িতে ওর বাবার একটা ওয়ার্কশপ ছিল। আমার লক্ষ্য ছিল এমন কোনো কিছুর মডেল বানানো, যাকে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সেটি দেখতে কেমন হলো, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না। মনে হয়, এই একই তাড়না থেকেই আমার আরেক স্কুলবন্ধু রজার ফারনিহোর সঙ্গে খুবই জটিল বেশ কিছু খেলা আবিষ্কার করেছিলাম। এর মধ্যে একটা নির্মাণবিষয়ক খেলা, যেখানে কিছু কারখানা থাকত, যার প্রতিটি ইউনিট বানানো হতো বিভিন্ন রং দিয়ে। এ ছাড়া এতে যাতায়াতের জন্য থাকত রাস্তা, রেলপথ ও স্টক মার্কেট। আরও ছিল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। চার হাজার বর্গবিশিষ্ট একটা বোর্ডে এটা খেলা হতো। এমনকি সামন্ততান্ত্রিক ধরনের খেলাও ছিল। সেখানে প্রতিটি খেলোয়াড়ের একটা বংশতালিকাসহ পুরো রাজবংশ থাকত। আমার মনে হয়, ট্রেন, নৌকা আর বিমানের মতোই কোন সিস্টেম বা ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে এবং তাদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা জানার তাড়না থেকেই এসব খেলা আমার মাথায় এসেছিল। আমি পিএইচডি শুরু করার পর এই প্রয়োজনটা মিটেছিল

কসমোলজি বা বিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ববিষয়ক আমার গবেষণার মাধ্যমে। মহাবিশ্ব কীভাবে চলছে, তা বুঝতে পারলে কোনো এক উপায়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

তথ্যনির্দেশ

ডাউন সিনড্রোম : এই জেনেটিক রোগটি ডিএন বা ডিএনএস নামেও পরিচিত। ব্রিটিশ চিকিৎসক জন ল্যাংডন ডাউন এই রোগের বর্ণনা দিয়েছিলেন। তাঁর নামেই রোগটি পরে ডাউন সিনড্রোম নামে পরিচিতি পায়। আবার এ রোগে ক্রোমোজম ২১-এর তৃতীয় কপির পুরোটা বা একটা অংশ থাকে বলে এর আরেক নাম ট্রাইসোমি ২১। সোজা কথায়, ২১ নম্বর ক্রোমোজমে দুটির জায়গায় তিনটি ক্রোমোজম থাকে। এ রোগে সাধারণত দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে। প্রতিবছর এক হাজার শিশুর মধ্যে একজন ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ : মানব ইতিহাসে ঘটা সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ যুদ্ধ। ১৯৩৯ সালে ইউরোপের জার্মানি ও অ্যাংলো-ফ্রান্স কোয়ালিশনের ভেতর সংঘাতের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্যান্য দেশও এতে জড়িয়ে পড়তে থাকে। এর এক পক্ষে ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন—যারা মিত্রশক্তি নামে পরিচিত ছিল। আর অন্য পক্ষে ছিল জার্মান, জাপান, ইতালি—যারা অক্ষশক্তি নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে বিশ্বের ৩০টির বেশি দেশ সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা ফেলার মধ্য দিয়ে ১৯৪৫ সালে শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ছয় বছরের এ যুদ্ধে ৫ থেকে ৮ কোটি মানুষ নিহত হয়। ইতিহাসে আর কোনো যুদ্ধে এত মানুষের মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির নজির নেই।

গ্যালিলিও : পর্যবেক্ষণীয় জ্যোতির্বিদ্যার জনক বলা হয় ইতালিয়ান পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ, প্রকৌশলী, দার্শনিক ও গণিতবিদ গ্যালিলিও গ্যালিলিকে (১৫৬৪-১৬৪২ খ্রি.)। ইতিহাসে তিনি অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তিনি প্রথমবার বৈজ্ঞানিকভাবে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এভাবে তিনি একে একে সূর্যের কলঙ্ক, চাঁদের পাহাড় ও উপত্যকা, বৃহস্পতির চারটি বড় উপগ্রহ এবং শুক্র গ্রহের কলা আবিষ্কার করেছিলেন। শুরু থেকে কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্ব (গ্রহগুলো সূর্যের চারপাশে ঘুরছে) বিশ্বাস করতেন গ্যালিলিও। এই ধারণার সমর্থনে প্রয়োজনীয় প্রমাণ খুঁজে পাওয়ার পরই তিনি এ তত্ত্বের সপক্ষে জনসমক্ষে বলতে শুরু করেছিলেন। এভাবেই ক্যাথলিক গির্জার সঙ্গে বিরোধের সূত্রপাত হয়েছিল গ্যালিলিওর। তাঁর ওপর জারি করা একটি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার অভিযোগে গ্যালিলিওকে ইনকুইজিশনে পাঠায় ক্যাথলিক গির্জা। সেখানে গ্যালিলিওকে যাবজ্জীবন গৃহবন্দী করে রাখাসহ জনসমক্ষে কোপার্নিকাসের মতবাদ পরিত্যাগের আদেশ দেওয়া হয়। জীবন বাঁচাতে গ্যালিলিও তা মেনেও নেন। ১৬৪২ সালে মৃত্যুর চার বছর আগেও তিনি গৃহবন্দী ছিলেন।

কসমোলজি : গ্রিক শব্দ কসমস (kosmos) এবং লজিয়া (logia) একত্র হয়ে কসমোলজি শব্দটি গঠিত হয়েছে। কসমস অর্থ মহাবিশ্ব এবং লজিয়া অর্থ জ্ঞান। মহাবিশ্বের জন্ম, বিবর্তন এবং শেষ পরিণতি নিয়ে বিজ্ঞানের যে শাখায় গবেষণা করা হয়, তাকেই বলে কসমোলজি বা বিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ব। শব্দটি ইংরেজিতে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল ১৬৫৬ সালে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *