আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম

আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম

মহাবিশ্ব সম্পর্কে জনপ্রিয় ধারার একটি বই লেখার চিন্তাটি প্রথম এসেছিল ১৯৮২ সালে। এই ইচ্ছার পেছনে আংশিক কারণটি ছিল আমার মেয়ের স্কুলের বেতন পরিশোধের জন্য টাকা আয় করা। (কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, বইটি যখন প্রকাশিত হলো, তত দিনে আমার মেয়ে স্কুলের শেষ বছরে পৌঁছে গেছে)। বইটি লেখার আরেকটি প্রধান কারণ হলো মহাবিশ্ব সম্পর্কে যেভাবে আমাদের উপলব্ধি হলো, সেটি আমি যতটুকু অনুভব করি, তা এতে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলাম। অর্থাৎ মহাবিশ্ব ও তার ভেতরের সবকিছু ব্যাখ্যা করতে সক্ষম কোনো পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব আমরা কীভাবে আবিষ্কার করতে পারব, সেটিই ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলাম আমি।

ভেবেছিলাম, বইটি লিখতে আমাকে যদি সময় ও শ্রম দিতেই হয়, তাহলে সেটি সর্বোচ্চ মানুষের কাছে পৌঁছাক—এটাই ছিল চাওয়া। আমার লেখা আগের তাত্ত্বিক বইগুলো প্রকাশ করেছিল কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। ওই প্রকাশক বেশ ভালোই করেছিল। তবে আমার চাওয়ামতো তারা সাধারণ পাঠকদের বাজারে পৌঁছাতে পেরেছিল বলে মনে হয় না। কাজেই আল জাকারম্যান নামে এক সাহিত্যবিষয়ক এজেন্টের দ্বারস্থ হলাম। আমার সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল এক সহকর্মীর শ্যালক হিসেবে। আমার বইটির প্রথম অধ্যায়ের খসড়া তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলাম। পরে তাঁকে বললাম, বিমানবন্দরের বইয়ের দোকানগুলোতে বিক্রি হবে, এমন ধরনের বই লিখতে চাই আমি। জবাবে তিনি জানালেন, তেমনটি ঘটার সুযোগ নেই। আমার বইটি শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো বিক্রি হতে পারে বটে, কিন্তু এ ধরনের বই জেফরি আর্চারের জনপ্রিয় রাজ্যের ধারেকাছেও ভিড়তে পারবে না।

জাকারম্যানকে আমার বইয়ের প্রথম খসড়া জমা দিয়েছিলাম ১৯৮৪ সালে। তিনি বেশ কজন প্রকাশকের কাছে সেটা পাঠিয়েছিলেন। আমাকে নরটন নামের যুক্তরাষ্ট্রের এক অভিজাত বই প্রকাশক সংস্থার কাছ থেকে প্রস্তাব নেওয়ারও সুপারিশ করেছিলেন। তবে সেটি না করে আমি ব্যানটাম বুকস থেকে একটি প্রস্তাব গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিই। জনপ্রিয় ধারার বইয়ের বাজারে এই প্রকাশনীটি বেশ পরিচিত। অবশ্য বিজ্ঞানের বই প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যানটামের তেমন নামডাক ছিল না। কিন্তু তাদের বইগুলো বিমানবন্দরের বইয়ের দোকানগুলোতে সহজলভ্য ছিল। সম্ভবত ব্যানটাম তাদের সম্পাদক পিটার গুজ্জারডির কারণে আমার বইটির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কাজটি তিনি বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই করেছিলেন। বলতে গেলে আমার কাছ থেকে বইটি আবারও নতুন করে লিখিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এর পেছনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, বিজ্ঞানী নয়, এমন সাধারণ মানুষও যাতে বইটি পড়ে বুঝতে পারে। তিনি নিজেও ছিলেন এ দলে। প্রতিবার তাঁকে একেকটি অধ্যায় নতুন করে লিখে পাঠাতাম। ওদিকে তিনি তাঁর আপত্তির দীর্ঘ তালিকা এবং প্রশ্নের পর প্রশ্ন জুড়ে দিয়ে সেগুলো আমার কাছে ফেরত পাঠাতেন, যাতে ওই অংশগুলো আমি আরও স্পষ্টভাবে লিখি বা ব্যাখ্যা করি। এভাবে একসময় ভাবলাম, এই প্রক্রিয়া বোধ হয় আর কখনোই শেষ হবে না। কিন্তু এখন বুঝি, তিনি আসলে ঠিক কাজটিই করেছিলেন কারণ, এর ফলে সবশেষে বইটি অনেক ভালো হয়েছিল।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে বইটি লেখায় বাধা পেয়েছিলাম। এই অসুখে আক্রান্ত হয়েছিলাম সার্নে থাকতে। আমাকে বিশেষ একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম না দেওয়া হলে বইটি শেষ করা হয়তো অসম্ভব হতো। প্রোগ্রামটি বেশ ধীরগতির ছিল। তখন আমি চিন্তাও করতাম ধীরে ধীরে। কাজেই আমার সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই সেটি মানিয়ে গিয়েছিল। এই প্রোগ্রাম ব্যবহার করেই গুজ্জারডির পরামর্শমতো আমার প্রথম খসড়াটি প্রায় সম্পূর্ণই নতুন করে লিখতে পেরেছিলাম। পাণ্ডুলিপিটি পরিমার্জনা করতে সহায়তা করেছিল ব্রায়ান উইট নামের আমার এক ছাত্র।

একসময় জ্যাকব ব্রোনোস্কির টেলিভিশন সিরিজ ‘দ্য অ্যাসেন্ট অব ম্যান’ আমার খুবই ভালো লাগত। (এখন এ ধরনের আবেদনময় শিরোনামের আর অনুমতি নেই।) আদিম অসভ্য অবস্থা থেকে মাত্র ১৫ হাজার বছর আগে আমরা বর্তমান অবস্থায় আসতে পেরেছি। মানবজাতির এই অর্জন সম্পর্কে সিরিজটি আমাকে অন্য রকম এক অনুভূতি এনে দিত। মহাবিশ্ব যেসব আইনে নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলোর পুরোটা বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি কতটুকু, পাঠককে সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম। নিশ্চিত ছিলাম, মহাবিশ্ব কীভাবে পরিচালিত হয়, সে ব্যাপারে কমবেশি প্রায় সবারই কৌতূহল আছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ গাণিতিক সমীকরণ বুঝতে পারে না। সমীকরণ নিয়ে আমার নিজেরও খুব বেশি মাথাব্যথা ছিল না। কারণ, সমীকরণের জন্য আমার সহজাত কোনো অনুভূতি ছিল না। বরং কোনো ধারণাকে আমি চিত্রের মাধ্যমে চিন্তা করতাম। বইটিতে পরিচিত কিছু উদাহরণ এবং রেখাচিত্রের সাহায্যে এই মানসিক ছবিগুলো শব্দের মাধ্যমে বর্ণনা করাই ছিল আমার লক্ষ্য। আশা ছিল, এভাবে অধিকাংশ মানুষ পদার্থবিদ্যার গত ৫০ বছরের উল্লেখযোগ্য অর্জনের উত্তেজনা ও অনুভূতি ভাগ করে নিতে পারবে।

তবে গণিত বাদ দিলে কিছু কিছু ধারণা ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন। তাই এতে এক সমস্যার জন্ম হলো। বুঝতে পারছিলাম না আমার কি সেগুলো ব্যাখ্যার চেষ্টা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার মতো ঝুঁকি নেওয়া উচিত? নাকি সমস্যাগুলো পাশ কাটিয়ে যাওয়া উচিত? কিছু অপরিচিত ধারণার ছবি আঁকতে চাইলেও সেগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। যেমন ভিন্ন ভিন্ন গতিতে চলা কিছু পর্যবেক্ষক যদি দুটি আলাদা ঘটনা ঘটার মধ্যবর্তী সময় পরিমাপ করেন, তাহলে তাঁদের পরিমাপ ভিন্ন ভিন্ন হবে। কাজেই ভাবলাম, সেগুলো শুধু উল্লেখ করে যাব, কিন্তু তার গভীরে ঢুকব না। মুশকিল হলো, আমি প্রকাশ করতে চাই, এমন অন্য কিছু জটিল ধারণা বোঝানোর জন্য সেগুলো আবার দরকারও ছিল।

বিশেষ করে এ রকম অন্তত দুটি ধারণা এই বইটিতে রাখা উচিত বলে মনে হয়েছিল। এদের একটির নাম সাম ওভার হিস্ট্রি বা ইতিহাসের যোগফল। এই ধারণামতে, মহাবিশ্বের জন্য কোনো একক ইতিহাস নেই; বরং মহাবিশ্বের জন্য সম্ভাব্য প্রতিটি ইতিহাসের স্তূপ রয়েছে। এসব ইতিহাস প্রতিটিই সমানভাবে বাস্তব (এ কথার অর্থ যা-ই হোক না কেন)। আরেকটি হলো কাল্পনিক সময়ের ধারণা। গাণিতিকভাবে ইতিহাসের যোগফল বোঝার জন্য এটি জরুরি। এখন বুঝতে পারি, খুবই কঠিন এই দুটি ধারণা ব্যাখ্যার জন্য আমার আরও একটু খাটতে হতো, বিশেষ করে কাল্পনিক সময়ের জন্য। বইটিতে এ বিষয়গুলো নিয়ে লোকজনকে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল বলে আমার ধারণা। তবে কাল্পনিক সময় আসলে কী, সেটা সঠিকভাবে না বুঝলেও কোনো সমস্যা নেই। এখানে শুধু এটুকু বুঝলেই চলে, আমরা যাকে বাস্তব সময় বলে জানি, এটি তার চেয়ে আলাদা।

.

বইটি যখন প্রকাশের প্রায় দ্বারপ্রান্তে, তখন ঘটল আরেক ঘটনা। নেচার ম্যাগাজিনে রিভিউ করার জন্য এক বিজ্ঞানীকে আগাম একটি কপি পাঠানো হয়েছিল। সেটি করতে গিয়ে বইটিতে ছবি ও রেখাচিত্রগুলো ভুল জায়গায় বসানো থাকতে দেখলেন তিনি 1 আবার ছবিগুলোর বিভ্রান্তিকর ক্যাপশনসহ পুরো বইয়ে ভুলে ভরা দেখে তিনি পুরো হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ব্যানটাম কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠালেন। ব্যানটামও যারপরনাই হতভম্ব হলো। তারা সেদিনই সব বই ফেরত এনে আস্তাকুঁড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। (প্রথম সংস্করণের আসল কপিগুলো সম্ভবত এখন বেশ মূল্যবান হয়ে উঠবে)। তিন সপ্তাহ লাগিয়ে ব্যানটাম পুরো বইটি পরীক্ষা ও সংশোধন করে। পরে বইয়ের দোকানগুলো বইটি প্রকাশের তারিখ ঠিক করা হয় এপ্রিল ফুলস ডেতে। এ ঘটনার পরপরই টাইম ম্যাগাজিনে আমার একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী ছাপা হয়। তখন বইটির ব্যাপক চাহিদা দেখে ব্যানটামও খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিল। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ এটি টানা ১৪৭ সপ্তাহ বেস্টসেলারের তালিকায় ছিল। আর লন্ডন টাইমস-এ রেকর্ড ভেঙে বেস্টসেলারের তালিকায় ছিল ২৩৭ সপ্তাহ। এখন পর্যন্ত বইটি বিশ্বের ৪০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে আর বিশ্বব্যাপী এক কোটির বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

আসলে আমি বইটির শিরোনাম দিয়েছিলাম ফ্রম বিগ ব্যাং টু ব্ল্যাক হোলস : আ শর্ট হিস্ট্রি অব টাইম। কিন্তু আমার সম্পাদক গুজ্জারডি ‘শর্ট’ শব্দটিকে পরিবর্তন করে রাখেন ‘ব্রিফ’। এটি ছিল আসলে জিনিয়াসদের আঁচড়ের মতো। বইটির সফলতার পেছনে নিঃসন্দেহে এটি ভূমিকা রেখেছিল। ‘ব্রিফ হিস্ট্রি’ শিরোনামে বাজারে অনেকগুলো বই ছিল। এমনকি আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব থাইম (সুগন্ধি গুল্ম) নামেও একটি বই আছে। কথায় বলে, অনুকরণ হচ্ছে প্রশংসা করার সবচেয়ে বিশ্বস্ত রূপ।

প্রশ্ন হলো, অসংখ্য মানুষ এ বইটি কেন কিনেছে? তাদের লক্ষ্যবস্তু আমি কি না, তা নিশ্চিত হওয়া আমার জন্য বেশ কঠিন তাই আমার ধারণা, অন্যরা এ বিষয়ে কী বলে, সেটিও জানা দরকার। আমি দেখেছি, বেশির ভাগ রিভিউতে আমার পক্ষে লেখা হলেও সেগুলো অস্পষ্ট ছিল। সবার মধ্যেই প্রায় একই ফর্মুলা অনুসরণ করার প্রবণতা ছিল। যেমন : স্টিফেন হকিং লুও গেহরিগস রোগে (মার্কিন রিভিউয়ে এই পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল) কিংবা মোটর নিউরন রোগে (ব্রিটিশ রিভিউয়ে) আক্রান্ত। তিনি হুইলচেয়ারে বন্দী, কথা বলতে পারেন না এবং হাতের এক্সসংখ্যক আঙুল নাড়াতে পারেন (ভুল আর্টিকেলের লেখক আমার সম্পর্কে যা পড়েছিলেন তা অনুসারে এখানে এক্স- এর মান এক থেকে তিন পর্যন্ত ওঠানামা করত বলে মনে হয়)। তারপরও তিনি এ বইটি লিখেছেন সবার জন্য সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি নিয়ে : আমরা কোথা থেকে এলাম এবং কোথায় যাচ্ছি? হকিংয়ের উত্তরটি হলো, এই মহাবিশ্ব সৃষ্টিও করা হয়নি, একে ধ্বংস করা হবে না: এটি চিরকাল এভাবেই আছে। এই ধারণাটি সূত্রবদ্ধ করতে হকিং কাল্পনিক সময়ের ধারণার অবতারণা করেছেন। সেটি আমার জন্য (রিভিউ লেখকের জন্য) বেশ কঠিন ছিল। তবু হকিং যদি সঠিক হন আর আমরা যদি একটি পূর্ণাঙ্গ একক তত্ত্ব আবিষ্কার করতে পারি, তাহলে আমরা সত্যিই ঈশ্বরের মন বুঝতে পারব। (প্রুফ দেখার সময় আমি প্রায় বইটির শেষ বাক্যটি বাদ দিতে চেয়েছিলাম। সেখানে লেখা ছিল, আমরা তাহলে ঈশ্বরের মন জানতে পারব। এ বাক্যটি কেটে দিলে বিক্রি হয়তো কমে অর্ধেকে নেমে আসত। )

আমার ধারণা, এর চেয়েও এককাঠি সরেস আরেকটি আর্টিকেল ছাপা হয়েছিল লন্ডনের দৈনিক পত্রিকা দ্য ইনডিপেনডেন্ট-এ। সেখানে বলা হয়েছিল, গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক কাজ যেমন আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম এক তীব্র উন্মাদনার জন্ম দেবে। আমার বইটিকে বৌদ্ধধর্মের জেন (ধর্মীয়) এবং মোটরসাইকেল রক্ষণাবেক্ষণ শিল্পের সঙ্গে তুলনা করায় আমি একটু আত্মশ্লাঘা বোধ করেছিলাম। আশা করেছিলাম, জেনের মতোই বইটি মানুষকে এই অনুভূতি দেবে যে তাদের জীবন থেকে মহৎ বুদ্ধিবৃত্তিক এবং দার্শনিক প্রশ্ন বাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

শারীরিক অক্ষমতা সত্ত্বেও আমি কীভাবে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ হতে পারলাম, নিঃসন্দেহে তা নিয়ে মানুষের কৌতূহল ছিল। তবে যাঁরা এ রকম মানবিক কৌতূহল থেকে বইটি কিনেছিলেন, তাঁদের হয়তো হতাশ হতে হয়েছিল। কারণ, বইটিতে আমার অবস্থা সম্পর্কে শুধু গুটিকয়েক কথাই লেখা ছিল। আসলে বইটি লেখা হয়েছিল মহাবিশ্বের ইতিহাস নিয়ে, আমার নয়। তারপরও অভিযোগ উঠেছিল যে ব্যানটাম নির্লজ্জভাবে আমার অসুস্থতাকে পুঁজি করে বেড়াচ্ছে। আবার বইয়ের প্রচ্ছদে আমি নিজের ছবি দেওয়ার অনুমতি দিয়ে তাদের সহায়তা করেছি বলেও অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু আসল ব্যাপারটা হলো চুক্তি অনুযায়ী, বইটির প্রচ্ছদে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আমি শুধু বইটির মার্কিন সংস্করণে আমার যে সেকেলে ছবি দেওয়া হয়েছিল, তা পাল্টে ব্রিটিশ সংস্করণে একটু ভালো ছবি দিতে প্রকাশককে রাজি করিয়েছিলাম। তবে মার্কিন সংস্করণের প্রচ্ছদের ছবি ব্যানটাম পরিবর্তন করতে পারবে না। কারণ, তাদের বক্তব্য হলো, মার্কিন জনগণ এখন ওই ছবিটির জন্য এ বইটি সহজেই চিনতে পারে। অনেকেই বলেন, অনেক মানুষ বইটি কিনে না পড়েই তাঁদের বইয়ের তাকে বা কফি-টেবিলে সাজিয়ে রাখেন। ঘটনা যে সত্য, সেটা আমিও নিশ্চিত। কিন্তু এটা অধিকাংশ অন্য সিরিয়াস বইগুলোর ক্ষেত্রেও ঘটে কি না, তা জানি না। শুধু এটুকু জানি, অতি কষ্টে হলেও অন্তত কিছু মানুষ অবশ্যই বইটি পড়েছে। কারণ, প্রতিদিনই এই বইটি সম্পর্কে আমি অসংখ্য চিঠি পাই। চিঠিতে অনেকেই প্রশ্ন করেন কিংবা বিস্তারিত মন্তব্য করেন। তাতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তাঁরা পুরোটা না বুঝলেও বইটি অন্তত পড়েছেন। অনেক সময় রাস্তায় সাধারণ মানুষেরাও বারবার আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন (আমি অবশ্যই অন্য লেখকদের চেয়ে আলাদা)। এতে বোঝা যায়, যাঁরা বইটি কিনেছেন, তাঁদের অন্তত একটা অংশ সত্যি সত্যিই এটি পড়েছে।

আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম লেখার পর আমি সবার জন্য বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে আরও কিছু বই লিখেছি। যেমন ব্ল্যাক হোলস অ্যান্ড বেবি ইউনিভার্স, দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল এবং দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন। আমার ধারণা, এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো বিজ্ঞান সম্পর্কে মানুষের মৌলিক বোধশক্তি আছে। তাই তাঁরা বর্তমানের ক্রমবর্ধমান বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিশ্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আমার মেয়ে লুসি আর আমি ‘জর্জ’ নামের একটি সিরিজও লিখেছি। অবশ্য এটি শিশুদের জন্য, অর্থাৎ আগামীকালের প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিজ্ঞাননির্ভর অ্যাডভেঞ্চার গল্প।

তথ্যনির্দেশ

জেফরি আর্চার : ইংরেজ ঔপন্যাসিক ও রাজনীতিবিদ জেফরি হাওয়ার্ড আর্চার। লেখক হওয়ার আগে তিনি পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। বেস্টসেলার ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি সুপরিচিত। বিশ্বব্যাপী তাঁর বই তিন কোটির বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। ১৯৭৪ সালে তিনি নট আ পেনি মোর, নট আ পেনি লেস শিরোনামে প্রথম বইটি লিখেছিলেন।

কাল্পনিক সময় : কাল্পনিক সংখ্যা ব্যবহার করে সময় গণনা। এই ধারণাটি হকিং তাঁর লেখা দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল বইয়ে ব্যবহ- ার করে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *