ব্রাহ্ম পর্ব
মধ্য পর্ব
প্রতিসর্গ পর্ব
1 of 3

সত্যনারায়ণ ব্ৰতে ভিন্ন কথা বর্ণন

।। সত্যনারায়ণব্রতে ভিন্নকথাবর্ণনম্।।

।। সত্যনারায়ণ ব্রতে ভিন্নকথা বর্ণন।।

এই অধ্যায়ে সত্যনারায়ণ ব্রতে ভিন্ন কথা বর্ণিত হয়েছে।

অথেতিহাসং শৃণুত যথা ভিল্লাঃ কৃতার্থিনঃ। বিচরস্তো বনে নিত্যং নিষাদাঃ কাষ্ঠবাহিনঃ।।১।। বনাক্তাষ্ঠানি বিক্রেতুং পুরীং কাশীং যযুঃ ক্বচিৎ। একস্তৃষাকুলো যাতো বিষ্ণুদাসাশ্রমং তদা।।২।। দদর্শ বিপুলৈশ্চর্যং সেবিতং চ দ্বিজৈইরিম্। জলং পীত্বা বিস্মিতোহভূদ্ভিক্ষুকস্য কুতো ধনম্।।৩।। যো দৃষ্টোহকিঞ্চনো বিপ্রো দৃশ্যতেহদ্য মহাধনঃ। ইতি সংচিত্য হৃদয়ে স পপ্ৰচ্ছ দ্বিজোত্তমম্।।৪।। ঐশ্বর্যং তে কুতো ব্ৰহ্মন্দুর্গতিস্তে কুতো গতা। আজ্ঞাপয় মহাভাগ শ্রোতুমিচ্ছমি তত্ত্বতঃ।।৫

শ্রীসূতজী বললেন, এরপর তুমি এক ইতিহাস শ্রবণ কর, যেখানে ভিল্লবনে নিত্য বিচরণকারী কাষ্ঠ বহনকারী এক নিষাদ কৃতার্থ হয়েছিলেন।।১।।

কোনো এক সময় বনে কাষ্ঠ বিক্রয়ার্থে সেই নিষাদ কাশীপুরী গিয়েছিলেন। তেনে তৃষ্ণাকুল হয়ে এক বিষ্ণুদাসের আশ্রয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বিপুল ঐশ্বর্য এবং ব্রাহ্মণসেবিত হরিকে দর্শন করেছিলেন। সেখানে জলপান করে তিনি ভিক্ষুকের এই বিপুল ঐশ্বর্য দেখে এর কারণ জানতে ব্যাকুল হয়েছিলেন।

যে ব্রাহ্মণকে তিনি পূর্বে দরিদ্র দেখেছিলেন, তিনি বর্তমানে ধনবান রূপে প্রতিষ্ঠিত। এই মনে মনে চিন্তা করে–তিনি সেই ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন–আপনি এই ঐশ্বর্য কিভাবে, কোথার থেকে প্রাপ্ত হলেন, পূর্বে আপনি দরিদ্র ছিলেন, এখন দারিদ্রতা কিভাবে দূর হল, হে মহাভাগ, আপনি স্পষ্টরূপে সেকথা বলুন, আমি তত্ত্বপূর্বক সেকথা শ্রবণ করতে ইচ্ছা করি।।২-৫।

সত্যনারায়ণস্যাঙ্গ সেবয়া কিং ন লভ্যতে। ন কিঞ্চিৎসুখমাপ্নোতি বিনা তস্যানুকম্পয়া। ৬। অহো কিমিতি মাহাত্ম্যং সত্যনারায়ণার্চনে। বিধানং সোপচারং চ হ্যপদেষ্টংি ত্বমর্হসি। ৭।। সাধুনাং সমচিত্তানামুপকারহতাং সতাম্। ন গোপ্যং বিদ্যতে কিঞ্চিদাতানামিতি নাশনম্।।৮।। ইতি পৃষ্টো বিধিং বক্তৃমিতিহাসমথাব্রবীৎ। চন্দ্রচূড়ো মহীপালঃ কেদারমনিপুরকে।।৯।। মমাশ্রমং সমাযাতঃ সত্যনারায়ণার্চনে। বিধানং শ্রোতুকামোহসৌ মামাহ সাদরং বচঃ।।১০।। ময়া যৎকথিতং তস্মৈ তন্নিবোধ নিষাদজ। সংকল্ল্যমনসা কামং নিষ্কামো বা জনঃ ক্বচিৎ।।১১।।

সদানন্দ বললেন, হে অংগ, ভগবান্ সত্য নারায়ণ দেবের সেবা করে এই সংসারে সবকিছু প্রাপ্ত হওয়া যায়। তাঁর সেবা ব্যতীত প্রাণী সুখ-সমৃদ্ধি কিছুই প্রাপ্ত হন না।।৬।।

নিষাদ বললেন, ওহে সত্যনারায়ণ পূজার মাহাত্ম্য কি তা বলুন। উপাচারের সংগে পূজা পূর্ণ বিধান আপনি আমাকে বলুন।। ৭।।

পরমসাধু ব্যক্তি, সমচিত্ত মহাপুরুষ তথা পরোপকারীব্যক্তি দুঃখদূরকারী কোনো কিছু গোপন রাখেন না।।৮।

নিষাদ এই ভাবে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সকল বিধি বলতে লাগলেন কেদারমণি পূরের মহীপাল চন্দ্রচূড় শ্রীসত্যনারায়ণ দেবের পূজার সময় আমার আশ্রমে এসেছিলেন, এই বিধান শ্রবণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনিও আমাকে এ কথা বলেছিলেন।।৯-১০।।

হে নিষাদপুত্ৰ, আমি তাকে যেকথা বলেছিলোম তা তুমিও শ্রবণ কর। মনে কিছু কামনা করে অথবা নিষ্কাম হয়ে মনুষ্য যেকোনো সময় পাদার্থ

গোধূমচূর্ণং পাদাধং সেটকাদ্যৈঃ সুচূর্নকম। সংস্কতং মধুগন্ধাজ্যৈনৈবেদ্যং বিভবেহপয়েৎ।।১২।। পঞ্চামৃতেন সংস্নাপ্য চন্দনাদ্যৈশ্চ পূজয়েৎ। পায়সাপুপসং যাবদধিক্ষীরমথো হরেৎ।।১৩।। উচ্চাবচঃ ফলৈঃ পুষ্পৈধূপদীপৈমনোরমৈঃ। পূজয়েৎপরায়া ভক্ত্যা বিভবে সতি বিস্তরৈঃ।।১৪।। ন তুষ্যেদ্রব্যসম্ভারৈভক্ত্যা কেবলায়াযথা। ভগবানপরিতঃ পূর্নো ন মানঃ বৃণুয়াত্ত্বচিৎ।। ১৫।। দুর্যোধনকৃতাং ত্যক্ত্বা রাজপূজাং জনার্দনঃ। বিদুরস্যাশ্রমে বাসমাতিথ্যং জগৃহেবিভুঃ।।১৬।। সুদান্নস্তন্ডুলকর্ণাঞ্জগ্ধা মানুষ্যদুর্লভাঃ। সংপদোহদাদ্ধরিঃ প্রীত্যা ভক্তিমাত্রমপেক্ষ্যতে।। ১৭।।

গোধূমচূর্ণ সংস্কৃত করে মধু ও গন্ধ ও ঘৃতের দ্বারা নৈবেদ্য প্রস্তুত করে বিভু ভগবান্ সত্য দেবকে সমর্পণ করবে।।১১-১২।।

পঞ্চামৃতের দ্বারা তাঁকে স্নান করিয়ে পায়স, পিষ্টক, দধি, ক্ষীর ইত্যাদি দ্বারা এবং ফল, পুষ্প, ধূপ, দীপাদি মনোরম উপাচারের দ্বারা যথাশক্তি পরমভক্তি যুক্ত হয়ে পূজা করবে।।১৩-১৪।।

দ্রব্যের দ্বারা তিনি যে সন্তুষ্টি লাভ করবেন, তার চেয়ে বেশী ভক্তিভাবের দ্বারা সন্তুষ্ট হবেন। ভগবান্ হলেন পূর্ণ, কদাপি তাঁকে মানের দ্বারা বরণ করবে না।।১৫।।

ভগবান্ জনার্দন দুর্যোধনের রাজপূজা ত্যাগ করে বিদুরের আশ্রমে গিয়ে প্রেমভাবের দ্বারা আতিথ্য স্বীকার করে ছিলেন।।১৬।।

সুদামা ব্রাহ্মণের তন্ডুলকণা গ্রহণ করে মনুষ্যগণের পরম দুর্লভ সম্পত্তি শ্রীহরি প্রীতিভরে তাঁকে দিয়েছিলেন।।১৭।।

গোপোগৃধ্রো বণিম্ব্যাধো হনুমান্সবিভীষণঃ। যেহন্যে পাপাত্মকা দৈত্যা বৃত্রকায়াধবাদয়ঃ।।১৮।। নারায়ণন্তিকং প্রাপ্য মোদিন্তেহদ্যাপি যদ্বশাঃ। ইতি শ্রুত্বা নরপতিঃ পূজাসম্ভারমাদরাৎ।।১৯।। কৃতবান্স ধনং লব্ধা মোদতে নর্মদাতটে। নিষাদ ত্বমপি প্রীত্যা সত্যনারায়ণং ভজ।।২০।। ইহ লোকে সুখং প্রাপ্য চান্তে সান্নিধ্যমাঙ্গুয়াঃ। কৃতকৃত্যো নিষাদোহভূৎপ্রনম্য দ্বিজপুঙ্গবম্।।২১।। একদা নারদো যোগী পরানুগ্রহবাঞ্জচ্ছয়া। পর্যটন্বিবিধাল্লোকান্মর্ত্যলোকমুপাগম‍।।২২।। তত্র দৃষ্ট্বা জনান্সবান্না নাক্লেশসমন্বিতান্ আধিব্যাধিযুতানাতাপচ্যমানাস্বকৰ্মভিঃ।।২৩।। কেনোপায়েন চৈতেষাং দুঃখনাশো ভবেদধ্রুবম্। ইতি সংঞ্চিত্য মনসা বিষ্ণুলোকং গতস্তদা।।২৪।।

গোপ, গৃধ, বণিক, ব্যাধ, হনুমান, বিভীষণ এবং অন্য পাপাত্মক বৃত্র কায়াধবাদি দৈত্য ছিলেন তারা ভগবান নারায়ণের সান্নিধ্যে এসে পরম আনন্দ লাভ করেছেন। এ কথা শ্রবণ করে নরপতি পরমাদরে পূজা করে নর্মদাতটে পরমসুখে রাজত্ব করেছিলেন। হে নিষাদ তুমিও প্রীতিভরে দেবনারায়ণের সেবা করো।।১৮-২০।।

এই লোকে সুখ প্রাপ্তির পর দেহান্তে ভগবানের সান্নিধ্য পাওয়া যায়। এই নিষাদ কৃতকৃত্য হলেন এবং দ্বিজপুঙ্গবকে প্রণাম করলেন।।২১।।

একবার দেবর্ষি যোগিরাজ ভগবান্ নারদজী অন্যের প্রতি অনুগ্রহের ইচ্ছায় অনেক লোক পর্যটন করে শেষে এই পৃথিবীলোকে এলেন।।২২।।

পৃথিবীতে মানুষ অনেক প্রকার ক্লেশ, আধি, ব্যধিতে পীড়িত দেখেছিলেন। এছাড়া মানুষকে পরম দুঃখী এবং নিজ কর্মে পচ্যমান দেখেছিলেন। তিনি এই দুঃখের অবসানের উপায়ের কথা চিন্তা করতে করতে বিষ্ণুলোকে গিয়েছিলেন।।২৩-২৪।।

তত্র নারায়ণং দেবং শুক্লবর্ণং চতুর্ভুজমে। শঙ্খচক্রগদাপদ্মবনংমালাবিভূষিতম্ ।।২৫।। প্রসন্নবদনং শান্তং সনকাদ্যৈরভিষ্টতম্। দৃষ্ট্বা তং দেবদেবেশং স্তোতুং সমুপচক্রমে।।২৬।। নমো বাঙমনসাতীতরূপায়ানন্তশক্তয়ে। নাদি মধ্যান্তদেবায় নিৰ্গুনায় মহাত্মনে।।২৭।। সর্বেষাদিভূতায় লোকানামুপকারিণে। অপারপরিমানায় তপোধান্মে নমোনমঃ।।২৮।। ইতি শ্রুত্বা স্তুতিং বিষ্ণুনারদং প্রত্যভাষত। কিমর্থমাগতোহসি ত্বং কিং তে মনসি বর্ততে।।২৯।। কথয়স্ব মহাভাগ তৎসর্বং কথয়ামি তে। শ্রুত্বা তু নারদো বিষ্ণুমুক্তবাস্নর্বকারণম্।।৩০।।

বিষ্ণুলোকে তিনি শুক্লবর্ণ চতুর্ভূজ, শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম এবং আয়ুধধারী, বনমালাশোভিত প্রসন্ন মুখ তথা শান্ত স্বরূপ এবং সনকাদি ঋষির দ্বারা অভিষ্টত দেবদেবেশ শ্রীবিষ্ণুকে দর্শন করে তাঁর স্তুতি করলেন।।২৫-২৬।।

নারদজী বললেন, বাণী এবং মনের অতীত, অনন্ত শক্তিতে পরিপূর্ণ, আদি ও মধ্যান্তরহিত নির্গুণ মহাত্মা আপনাকে প্রণাম। সকলে আদিভূত এবং লোকের উপকার সাধনকারী অপার পরিমাণযুক্ত তপোধাম আপনাকে বারংবার প্রণাম।।২৭-২৯।।

সূতজী বললেন, এই প্রকারে ভগবান্ শ্রীবিষ্ণুর স্তুতি করে নারদজীকে বিষ্ণু ভগবান্ বললেন–হে দেবর্ষিবর, আপনি এখানে কি প্রয়োজনে এসেছেন এবং আপনার মনে কি কথা রয়েছে? হে মহাভাগ, আপনি আমাকে সব কিছু বললে আমি সমাধান করে দেবো। এই কথা শ্রবণ করে নারদজী ভগবান্ বিষ্ণুকে সমস্ত কারণ বললেন।।৩০।।

নারদস্য বচঃ শ্রুত্বা সাধুসাব্ধিত্যপূজ্যয়ৎ। শৃণু নারদ বক্ষ্যামি ব্রতমেকং সনাতনম্।।৩১।। কৃতে ত্রেতাযুগে বিষ্ণুদ্বপিরেহনেকরূপধৃক্। কলৌ প্রত্যক্ষফলদঃ সত্যনারায়ণো বিভুঃ।।৩২।। চতুষ্পাদো হি ধৰ্মশ্চ তস্য সত্যং প্রসাধনম্। সত্যেন ধার্যতে লোকে সত্যে ব্রহ্ম প্রতিষ্ঠিতম্।।৩৩।। সত্যনারায়ণ ব্রতমতঃ শ্রেষ্ঠতমং স্মৃতম্। ইতি শ্রুত্বা হরেবাক্যং নারদঃ পুনরব্রবীৎ।।৩৪।। কিং ফলং কিং বিধানং চ সত্যনারায়ণার্চনে। তৎসর্বং কৃপয়া দেব কথয়স্ব কৃপানিধে।।৩৫।। নারায়ণার্চনে বক্তৃং ফলং নালং চতুর্মুখঃ। শৃণু সংক্ষেপতো হ্যেতৎকথয়ামি তবাগ্রতঃ।।৩৬।।

দেবর্ষি নারদের কথা শুনে ভগবান্ বিষ্ণু “সাধু সাধু” একথা বলে তার সৎকার করেছিলেন এবং বলেছিলেন–হে নারদ, শোনো, সত্যনারায়ণ দেবের এক পরম সনাতন ব্রতকথা বলছি। কৃতযুগ, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগে অনেক রূপদারণকারী পরম সনাতন শ্রীবিষ্ণু কলিতে সত্যনারায়ণ রূপে পূজিত এবং প্রত্যক্ষ ফল প্রদানকারী।।৩১-৩২।।

ধর্মের চার চরণের মধ্যে সত্য তার প্রসাধন। সত্যের দ্বারা তিনি লোকধারণ করেন। সত্যের দ্বারা ব্রহ্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং সত্যনারায়ণ ব্রত সর্বশ্রেষ্ঠ। ভগবান্ শ্রীহরির এই বাক্য শ্রবণ করে নারদজী পুনরায় তাকে বললেন সত্যনারায়ণের অর্চনার কি বিধান বা তার ফল কি কৃপাপূর্বক সবকিছু বলুন।।৩৩-৩৫।।

শ্রীভগবান্ বললেন সত্যনারায়ণ দেবের অর্চনা করলে যা ফল হয় তা ভগবান্ ব্রহ্মাও বলতে সমর্থ হননা, তবুও অতি সংক্ষেপে তা তোমাকে বলছি। তুমি শ্রবণ কর।।৩৬।।

নিধনোপি ধনাঢয়ঃ স্যাদপুত্রঃ পুত্রবান্ড্যবৎ। ভ্রষ্ট রাজ্যো লভেদ্রাজ্যমন্ধোঽপি স্যাৎসুলোচনঃ।।৩৭ মুচ্যতে বন্ধনাদ্বদ্ধো নির্ভয়ঃ স্যাডয়াতুরঃ। মনসা কাময়েদ্যং যং লভতে তং বিধানতঃ।।৩৮।। ইহ জন্মনি ভো বিপ্ৰ ভক্ত্যা চ বিধিনাৰ্চয়েৎ। লভেৎকামং হি তচ্ছীঘ্রং নাত্র কার্যা বিচারণ।।৩৯।। প্রাতঃস্নায়ী শুচিভূত্বা দত্তধাবন পূর্বকম্। তুলসীমঞ্জরীং বৃত্বা ধ্যায়েৎসত্যস্থিতং হরিম্।।৪।। নারায়ণংসান্দ্রঘনাবদাতং চতুর্ভূজং পীতমহাহবার্সসম্ প্রসন্নবক্রং নবকজ্জলোচনং সনন্দনাদ্যৈরূপসেবিতং ভাজ।।৪১।। করোমি তে ব্রতং দেব সায়ং কালে ত্বদৰ্চনম। শ্রুত্বা গাথাং ত্বদীয়াং হি প্ৰসাদং তে ভজাম্যহম্।।৪২।

এই ব্রতাচনার দ্বারা নির্ধন ব্যক্তি ধন লাভ করে, অপুত্রক পুত্র লাভ করে, রাজ্যভ্রষ্ট রাজ্যলাভ করে, এবং অন্ধ ব্যক্তিও নেত্রলাভ করে।।৩৭।।

বদ্ধ বন্ধন মুক্ত হয়, ভয়াতুর নির্ভয়ে বসবাস করে। এছাড়া বিধি বিধানপূর্বক পূজার্চনা করে–মনের সকল অভিলাষ পূর্ণ হয়।।৩৮।।

হে বিপ্ৰ, এই জন্মে ভক্তিভাবপূর্বক বিধিবদ্ধ হয়ে যে ব্যক্তি অর্চনা করেন, তিনি অতিশীঘ্র কামনা প্রাপ্ত হন। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।।৩৯।।

প্রাতঃকালে দত্তধাবন তথা স্নানাদি কর্ম করে তুলসী মঞ্জরী নিয়ে সত্যস্থিত শ্রীহরির ধ্যান করবে।। ৪০।।

সঘন মেঘের ন্যায় শুভ্র, চতুর্ভূজ শোভিত, পীত কেশধারী,প্রসন্নবদন, কমলনয়ন এবং সনকাদি ঋষিগণের দ্বারা সেবিত নারায়ণের সেবা করা উচিৎ।।৪১।।

ইতি সংকল্প মনসা সায়ংকালে প্রপূজয়েৎ। পঞ্চভিঃ কলশৈজুষ্টং কদলীতোর নান্বিতম্।।৪৩।। শালগ্রামং স্বর্ণযুক্তং পূজয়েদাত্মসূক্তকৈঃ। পঞ্চামৃতেন সংস্নাপ্য চন্দনাদিভির চয়েৎ।।৪৪।। ওঁ নমো ভগবতে নিত্যং সত্যদেবায় ধীমহি চতুঃপদার্থদাত্রে চ নমস্তুভ্যং নমোনমঃ।।৪৫।। জপ্তেত্যষ্টোত্তরশতং জুহুয়াত্তদ্দশংশকম্। তর্পণং মার্জনং কৃত্বা কথাং শ্রুত্বা হরোরিমাম্।।৪৬।। ষড়ধ্যায়ীং সত্যমুখ্যাং তৎপশ্চাত্তৎপ্রসাদকম্। সম্যন্বিভজ্যতৎ সর্বং দাপয়েছোতৃকায় চ।। ৪9।। আচার্যায়াদিভাগং চ দ্বিতীয়ং স্বকুলায় সঃ। শ্রোতৃভ্যশ্চ তৃতীয়ং চ চতুর্থং চাত্মহেতবে।।৪৮।।

হে দেব;আমি আপনার ব্রত পালন করছি এবং সায়ংকালে আমি আপনার অর্চনা করব। আপনার গাথা শ্রবণ করে প্রসাদ গ্রহণ করব। মনে মনে এইরূপ  সংকল্প করে সায়ংকালে পূজা করা উচিৎ। মন্ডপে পঞ্চকল্প ও কলার তোরণ দ্বারা লমন্বিত হতে হবে।।৪২-৪৩।।

স্বর্ণমন্ডিত শালগ্রাম আত্মসুক্ত অর্থাৎ পুরুষসূক্ত পাঠ পূর্বক পূজা করবে। পঞ্চামৃত দ্বারা স্নান করিয়ে চন্দনাদি দ্বারা অর্চনা করবে।।৪৪।

“ওঁ নমো ভগবতে নিত্য সত্য দেবায় ধীমহী”। চতুঃপদার্থদাত্রে নমস্তুভ্যং নমোঃ নমঃ–এই মন্ত্রে একশ আটবার জপ করে এর দশম ভাগহবন করবে। এই হবনের দশাংশ তর্পণ এবং এর দশাংশ মার্জন করবে এবং ভগবান্ শ্রীহরির কথা শ্রবণ করবে। ছয় অধ্যায় বিশিষ্ট এই কথার মধ্যে সত্য প্ৰধান। কথা শ্রবণান্তে প্রসাদ পরিপূর্ণভাবে বিতরণ করবে। প্রত্যেক শ্রোতাকে প্রসাদ প্রদান করবে।।৪৫-৪৭।।

প্রসাদের আদিভাগ আচার্য দেব এবং দ্বিতীয়ভাগ নিজ স্বজনবর্গের মধ্যে এবং তৃতীয়ভাগ শ্রোতাদের মধ্যে বিতরণ করবে। চতুর্থভাগ নিজের জন্য রাখবে।।৪৮।।

বিপ্রেভ্যো ভোজনং দদ্যাৎস্বয়ং ভুঞ্জীত বাগ্যতঃ। দেবর্ষেহনেন বিধিনা সত্যনারায়ণার্চনম্।।৪৯।। কারয়েদ্যদি ভক্ত্যা চ শ্রদ্ধয়া চ সমন্বিতঃ। ব্রতী কামানবাপ্নোতি বাঞ্ছিতানিহ জন্মনি।।৫০।। ইহ জন্মকৃতং কর্ম পরিজন্মনি পদ্যতে। পরজন্মকৃতং কর্ম ভোক্তব্যং সর্বদা নরৈঃ।।৫১। সত্যনারায়ণ ব্রতমিহ সর্বাকামান্দদাতি হি। অদ্যৈব জগতীমধ্যে স্থাপয়ামি ত্বদাঞ্জয়া।।৫২।। ইত্যক্ত্বাংহতদধে দেবো নারদঃ স্বর্গতিং যযৌ। স্বয়ং নারায়ণো দেবঃ কাশ্যাং পূর্যাং সমাগমঃ।।৫৩।।

ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে নিজে মৌন হয়ে ভোজন করবে। হে দেবর্ষি, এই বিধি বিধানে সত্য নারায়ণ দেবের অর্চন করবে।।৪৯।।

যদি এই ব্ৰত তথা অর্চনা ভক্তি শ্রদ্ধার সঙ্গে কর তাহলে এই জন্মেই অভীষ্ট প্রাপ্ত হব।। ৫০।।

এই জন্মে কৃত কর্মের ফল পর জন্মে মানুষ প্রাপ্ত হয় এবং পর জন্মে কৃতকার্যের ফল মানুষ সর্বদা এখানে ভোগ করে।।৫১।।

সত্যনারায়ণ ব্রত এখানে সমস্ত কামপ্রদান করে। আমি তোমার আজ্ঞায় জগতে এই ব্রত স্থাপন করব– একথা নারদজী বললেন। অতঃপর তিনি অন্তর্হিত হলে দেবর্ষি নারদ স্বর্গে গমন করলেন। দেবনারায়ণ কাশীপুরীতে চলে এলেন।।৫৩।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *