ব্রাহ্ম পর্ব
মধ্য পর্ব
প্রতিসর্গ পর্ব
1 of 3

মধুমতী বরনির্ণয় কথা বর্ণন

।। মধুমতীবরনির্ণয় কথাবর্ণনম্।।

।। মধুমতী বর নির্ণয় কথা বর্ণন।।

এই অধ্যায়ে মধুমতীর বর নির্ণয়ের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রসন্নমনসং ভূপং মহাসিংহাসনে স্থিতম্। দ্বিজবর্ষ স বৈতালো বচঃ প্রাহ প্রসন্নধীঃ।।১।। একদা যমুনাতীরে ধর্মস্থলপুরী শুভা। ধনধান্যসমাযুক্তা চতুবৰ্ণ সমন্বিতা।।২।। গুণাধিপো মহীপালস্তত্র রাজ্যং চকার বৈ। হরিশর্মা পুরোদাস্ত স্নানপূজনতৎপরঃ।।৩।।

শ্রীসূতজী বললেন, সিংহাসনস্থিত মহান্ রাজাকে দ্বিজ শ্রেষ্ঠ প্রসন্ন বুদ্ধি বেতাল এই কথা বলেছিলেন যে, যমুনা নদীর তটে পরম শুভ্র ধর্মস্থল পুরী ছিল, সেই পুরী ধনধান্যাদি পূর্ণ ছিল এবং ব্রাহ্মণাদি চার বর্ণের উত্তম নিবাস স্থল ছিল। সেখানে গুণাধিপ মহীপাল রাজ্য শাসন করতেন। তাঁর পুরোহিত হরিশর্মা স্নান এবং পূজণে তৎপর ছিলেন।।১-৩।।

তস্য পত্নী সুশীলা চ পতিব্রতপরায়ণা। সত্যশীলঃ সুতো জাতো বিদ্যাধ্যয়ন তৎপরঃ।।৪।। তস্যানুজা মধুমতী শীলরূপগুণান্বিতা। দ্বাদশাদ্ববয়ঃ প্রাপ্তে বিবাহার্থং পিতা যদা।। ৫।। ভ্রাতা বভ্ৰাম তৌ সর্বং চিতশ্চ সুতাবরম্। কদাচিদ্রাজ পুত্রস্য বিবাহে সমতো দ্বিজঃ।।৬। পঠনার্থে তু কাশ্যাং বৈ সত্যশীলঃ স্বয়ং গতঃ। একস্মিন্নন্তরে রাজন্দ্বিজঃ কশ্চিৎসমাগতঃ।।৭।। বামনো নাম বিখ্যাতো রূপশীলবয়োবৃতঃ। সুতা মধুবতী তং চ দৃষ্ট্বা কামাতুরাহভবৎ।।৮।। ভোজনং ছাদনং পানং স্বপ্ন ত্যক্ত্বা চ বিহ্বলা। চকোরীব বিনা চন্দ্রং কামবাণ প্রপীড়িতা।।৯।। দৃষ্ট্বা সুশীলা তং বালা বামনং ব্রাহ্মণং তথা। বারয়ামাস তাম্বুলৈঃ স্বর্ণদ্রব্যসমন্বিতৈঃ।।১০।।

পুরোহিতের পত্নী ছিলেন সুশীলা, তিনি পরম পতিব্রতা ছিলেন। তাদের পুত্র সত্যশীল বিদ্যাধ্যায়নে তৎপর ছিলেন। পুত্রী মধুমতী শীল-রূপ এবং অনেক সদ্‌গুণের অধিকারী ছিলেন। তিনি দ্বাদশবর্ষের অধিকারী হলে তাঁর পিতা ও ভ্রাতা তাঁর বিবাহের জন্য ভ্রমণ করতে লাগলেন। কদাচিৎ রাজপুত্রের বিবাহে পাঠের জন্য সত্যশীল কাশীতে গমন করলেন। হে রাজন, এই সময়ে সেই ব্রাহ্মণগৃহে কোনো এক ব্রাহ্মণ আগমন করলেন।।৪-৭।।

বামন নামক সেই ব্রাহ্মণ রূপবান্ ছিলেন। তাঁকে দর্শন করে ব্রাহ্মণপুত্রী মধুমতী কামাতুর হয়ে পড়লেন। ভোজন, পান, ছাদন, নিদ্রা ইত্যাদি ত্যাগপূর্বক মধুমতী অত্যন্ত বিহ্বল হয়ে পড়লেন। তিনি চন্দ্রবিনা চকোরী পক্ষীর ন্যায় কামবান পীড়িতা হলেন। সুশীলা সেই বালা বামন নামক ব্রাহ্মণকে স্বর্ণদ্ৰব্য সমন্বিত তাম্বুলের দ্বারা বরণ করলেন।।৮-১০।

হরিশর্মা প্রয়োগে চ দ্বিজং দৃষ্ট্বা ত্রিবিক্রমম্। বেদবেদাঙ্গতত্ত্বজ্ঞং সুতার্থেহবরয়ত্তদা।।১১।। সত্যশীলস্তু কাশ্যাং বৈ গুরুপুত্রং চ কেশবম্। বরিত্বা ত ভগিন্যর্থে যযৌ গেহং মুদান্বিতঃ।।১২।। মাঘকৃষ্ণত্রয়োদশ্যাং ভূগৌ লগ্নং শভং স্মৃতম্। ত্রয়ো বিপ্রাস্তদা প্রাপ্তাঃ কন্যার্থে রূপমোহিতাঃ।।১৩। তস্মিকালে তু সা কন্যা ভূজঙ্গেনৈব দক্ষিতা। মৃতা প্রেতত্বমাপন্না পূর্বকম্ প্রভাবতঃ।।১৪।। তদা তে ব্রাহ্মণা যত্নং কারয়ামাসুরুত্তমম্। ন জীবনবতী বালা গরলেন বিমোহিতা।।১৫।। হরিশর্মা তু তৎসর্বং কৃত্বা বেদবিধানতঃ। আযযৌ মন্দিরং রাজন্তসুতাগুণ বিমোহিতঃ।।১৬।। ত্রিবিক্রমস্তু বহুদা দুঃখং কৃত্বা স্মরানুগঃ। কথাধারী যতিভূত্বা দেশাদ্দেশান্তরং যযৌ।।১৭।।

অপর দিকে হরিশর্মা প্রয়াগে ত্রিবিক্রম নামক বেদ-বেদাঙ্গাদি শাস্ত্ৰ জ্ঞাতা কোনো এক ব্রাহ্মণকে দেখে নিজ পুত্রী জন্য বরণ করলেন। আবার সত্যশীল কাশীতে নিদগুরুপুত্র কেশবকে ভগিনী বর রূপে বরণ করে সানন্দে ঘরে নিয়ে এলেন।।১১-১২।।

বিবাহের জন্য মাঘমাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশী শুক্রবার নির্দিষ্ট ছিল। সেই সময় মধুমতী ব্রাহ্মণ কন্যার জন্য রূপবান্ তিন বিপ্র উপস্থিত হলেন। সেই সময় মধুমতী পূর্বকর্মানুসারে সর্পদষ্টা হয়ে প্রেতত্ব প্রাপ্ত হলেন।।১৩-১৪।।

সেই সময় তিন ব্রাহ্মণ উত্তম যত্ন করলেও সর্প বিষে বিমোহিত মধুমতী জীবন ফিরে পেলেন না। হরিশর্মা বেদবিধানানুসারে সবকিছু সম্পন্ন করে পুত্রীর গুণে বিমোহিত হয়ে মন্দিরে চলে গেলেন।। ১৫-১৬।।

কেশবস্তু মহাদুঃখী প্রিয়াস্থীতি গৃহীতবান্। তীর্থাত্তীর্থান্তরং প্রাপ্তঃ কামবাণেন পীড়িতঃ।।১৮।। ভস্মগ্রাহী বামনস্তু বিরহাগ্নি প্রপীড়িতঃ। তস্থৌ চিতায়াং কামার্তঃ পত্নীধ্যান পরায়ণঃ।।১৯।। একদা সরযূতীরৈ লক্ষ্মণাখ্যপুরে শুভে। ত্রিবিক্রমস্তু ভিক্ষার্থে সংপ্রাপ্তো দ্বিজমন্দিরে।।২০।। চস্মিন্দিনে রামশর্মা শিবধ্যান পরয়াণঃ। যতিনং বরয়ামাস ভোজনার্থং স্বমন্দিরে।।২১।। তস্য পত্নী বিশালাক্ষী রচিত্বা বহুভোজনম্। আহুয় যতিনং রাজপাত্রমালভমাকরোৎ।।২২।। তস্মিন কালে চ তদ্বালো মৃতঃ পাপবশং গতঃ অরোদীত্তস্য সৈরন্ত্রী বিশালাক্ষ্যপি ভর্তিতা।।২৩।। ন রোদনং ত্যক্তবতী পুত্রশোকাগ্নিতাপিতা। রামশর্মা তদা প্রাপ্তো মন্ত্রং সংজীবনং শুভম্।।২৪।।

দ্বিজ ত্রিবিক্রম বেদজ্ঞানী হয়েও অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে কন্থাধারী হয়ে যতিরূপে দেশান্তরে চলে গেলেন। সত্যশীলের গুরুপুত্র কেশব মহাদুঃখী হয়ে প্রিয়ার অস্থি গ্রহণ করে তীর্থ থেকে তীর্থান্তরে ভ্রমণ করতে লাগলেন। বামন পত্নীর ধ্যানে রত হলেন।।১৭-১৯।।

জপিত্বা মার্জনং কৃত্বা জীবয়ামাস বালকম্। বিনয়াবনতো বিপ্ৰস্তং চ সংন্যাসিনং তদা।।২৫।। ভোজনং কারয়িত্বা তু মন্ত্রং সংজীবনং দদৌ। ত্রিবিক্রমস্তু তং মন্ত্রং পঠিত্বা যমুনাতটে।।২৬।। প্রাপ্তবান্যত্র সা নারী দাহিতা হরিশমর্ণা। এ তস্মিন্নন্তরে তত্র রাজপুত্রো মৃতিং গতঃ।।২৭।। দাহিতস্তনয়ঃ পিত্রা শোক কত্ৰা তদামুনা। জীবনং প্রাপ্তবান্বালস্তস্য মন্ত্রপ্রভাবতঃ।।২৮।। গুণাধিপস্য তনয়ো রাজ্ঞো ধর্মস্থলীপতেঃ। ত্রিবিক্রম বচঃ প্রাহ বীরবাহুর্মহাবলঃ।।২৯।। জীবনং দত্তবান্মহ্যং বরয়াদ্য বরং মম। স বিপ্রঃ প্রাহ ভো রাজনেকশবো নাম যোদ্বিজঃ।।৩০। গৃহীত্বাস্থি গতস্তীর্থে তমন্বেষয় মা চিরম্। বীরবাহুস্তথা মত্বা দূতমার্গেণ তং প্রতি।।৩১।। প্রাপ্তস্তং কথয়ামাস কথা প্রাপ্তং হি জীবনম্।। ইতি শ্রুত্বা বচস্তস্য কেশবোহস্থিস সন্বিতঃ।।৩২।।

একদা সরযূ নদীর তীরে লক্ষ্মণনামক শুভ্রনগরে দ্বিজ ত্রিবিক্রম ভিক্ষার্থে এক দ্বিজ মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেই দিন ভগবান্ শিবের ধ্যানরত রামশর্মা ব্রাহ্মণ ভোজনের জন্য নিজ মন্দিরে সেই ব্রাহ্মণকে বরণ করে নিয়ে গেলেন। তাঁর পত্নী বিশালাক্ষী প্রভৃত প্রকারের উত্তমভোজন প্রস্তুত করেছিলেন। হে রাজন, বিপ্র ত্রিবিক্রম খাদ্য পাত্র স্পর্শ করা মাত্র সেই ব্রাহ্মণের পুত্র পাপবংশগত হয়ে মারা গেল। তখন তার স্ত্রী রোদন করতে লাগলেন এবং মাতা বিশালাক্ষী ত্রিবিক্রমকে ভর্ৎসনা করতে লাগলেন। তিনি পুত্ৰ শোকাগ্নিতে দগ্ধ হয়ে রোদন করতে লাগলেন। সেই সময় রামশর্মা এসে সঞ্জীবনী মন্ত্রের দ্বারা জপ এবং মার্জনা করে পুত্রকে জীবিত করলেন। এরপর বিনয়াবনত হয়ে তিনি বিপ্র ত্রিবিক্রমকে ভোজন করিয়ে সেই মন্ত্র প্রদান করলেন। ত্রিবিক্রম সেই মন্ত্র গ্রহণ করে হরিশর্মা যমুনা তটে যেখানে পুত্রীকে দাহ করেছিলেন সেখানে গেলেন। ইতিমধ্যে সেখানে এক রাজপুত্র মারা গিয়েছিলেন। শোকার্ত পিতা নিজপুত্রকে সেই যমুনা তটে দাহ করেছিলেন। সেই রাজপুত্র দ্বিজত্রিবিক্রমের মন্ত্রের দ্বারা জীবনলাভ করেছিল।।২০-২৮।

প্রগত্যাস্থীনি সর্বাণি দদৌ তস্মৈ দ্বিজাতয়ে। পুনঃ সংজীবিতা বালা কেশবাদীন্বচোহব্রবীৎ।।৩৩।। যোগ্যা ধর্মেণ যস্যাহং তস্মৈ প্রাযামি ধৰ্মিণে। ইতি শ্রুত্বা বচস্তস্যা মৌনবস্তস্ত্রয় স্থিতাঃ।।৩৪।। অতস্ত্বং বিক্রমাদিত্য ধর্মজ্ঞ কথয়স্ব মে। কস্মৈ যোগ্যা চ সা বালা নাম্না মধুমতী শুভা।।৩৫।। বিহস্য বিক্রমাদিত্যো বৈতালং প্রাহ নম্ৰধীঃ। যোগ্যা মধুমতী নারী বামনায় দ্বিজন্মনে।।৩৬।। প্রাণদাতা তু যো বিপ্রঃ পিতের গুণতৎপরঃ। অস্থিদাতা তু যো বিপ্রো ভ্রাতৃতুল্যস বেদবিৎ।।৩৭।।

ধর্মস্থলীর রাজা গুণাধিপের পুত্র বীরবাহু ত্রিবিক্রমকে বললেন,–হে মহাবল আপনি আমার জীবনদান করেছেন। সুতরাং কিছু বর প্রার্থনা করুন। সেই ব্রাহ্মণ বললেন, হে রাজন, কেশব নামক এক ব্রাহ্মণ তীর্থে তীর্থে মধুমতীর অস্থি নিয়ে ভ্রমণ করছেন, সেই ব্রাহ্মণকে এখানে এনে দিন। বীরবাহু সেই প্রার্থনা স্বীকার করে দূত মার্গের দ্বারা বিপ্র কেশবের গিয়ে সকল বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন। কেশব সকল বৃত্তান্ত শ্রবণ করে অস্থি সকল নিয়ে বিপ্ৰ ত্রিবিক্রমের কাছে এলেন এবং অস্থি প্রদান করলেন। ত্রিবিক্রম মন্ত্রের দ্বারা মধুমতীকে পুনর্জীবিত করলেন। পুনর্জীবন প্রাপ্ত মধুমতী কেশবাদি বিপ্রগণকে বলেছিলেন যে “আমি ধর্মের দ্বারা যার যোগ্য সেই ধার্মিককে বরণ করব”। একথা শ্রবণ করে সেই তিন বিপ্র মৌন রইলেন।।২৯-৩৪।।

হে ধৰ্মজ্ঞ, বিক্রমাদিত্য–এবার আপনি আমাকে বলুন কোন্ ব্ৰাহ্মণ মধুমতীকে গ্রহণের যোগ্য।।৩৫।।

একথা শ্রবণ করে সহাস্যে বিক্রমাদিত্য বললেন, হে বেতাল, মধুমতী দ্বিজ বামনের যোগ্য। কারণ যে ব্যক্তি জীবনদান করেন তিনি গুণতৎপর পিতার তুল্য। যিনি অস্থি প্রদান করেন বেদবিদ্‌গণ বলেন তিনি ভ্রাতৃতুল্য। সুতরাং বিপ্র বামনই মধুমতীর বিবাহ যোগ্য।।৩৬-৩৭।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *