ব্রাহ্ম পর্ব
মধ্য পর্ব
প্রতিসর্গ পর্ব
1 of 3

পদ্মাবতী কথা বর্ণন

।। পদ্মাবতীকথাবর্ণনম্।।

।। পদ্মাবতী কথা বৰ্ণন।।

এই অধ্যায়ে পদ্মাবতীর কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

ইত্যুক্তস তু বৈতালো মহাকালেশ্বরস্থিতঃ। শিবং মনসি সংস্থাপ্য রাজানমিদমব্রবীৎ।। ১।। বিক্রমাদিত্যভূপাল শৃণু গাথাং মনোরমাম্।। বারাণসী পুরী রম্যা মহেশো যত্ৰ তিষ্ঠতি।।২। চাতুর্বর্ণ্যপ্রজা যত্র প্রতাপমুকুটো নৃপ মহাদেবী চ মহিষী ধর্মজ্ঞস্য মহীপতে।।৩।।

 শ্ৰী সূতজী বললেন, পূর্বকথিত বেতাল মহাকালেশ্বরে ছিলেন। ভগবান শিবকে মনে সংস্থাপিত করে রাজাকে সে বলেছিল, হে ভূপাল বিক্রমাদিত্য, এখন তুমি এক মনোরম গাথা শ্রবণ কর। বারাণসী নামে খুব রম্য এক নগরী ছিল, সেখানে ভগবান শিব স্বয়ং অবস্থান করতেন।।১-২।।

তৎপুত্রো বজ্ৰমুকুটো মন্ত্রিন সুতবল্লভা। ষোড়শাদ্বেহথ সংপ্রাপ্তে হয়ারূঢ়ো বনং গত।।৪।। অমাত্যতনয়শৈচব বুদ্ধিদক্ষ ইতি শ্রুতঃ। হয়ারূঢ়ো গতঃ সার্ধং সমানবয়সা বনে।।৫।। স দৃষ্টা বিপিনং রম্যং মৃগপক্ষিসমন্বিতম্। মুমোদ বজ্রমুকুট কামাশয়বশং গতঃ।।৬। তস্য কুলে শিবস্থানং মুনিবৃন্দৈ প্ৰপূজিতম্।।৭।। দৃষ্ট্বা তত্র গতৌ বীরৌ পরমানন্দমাপতুঃ। এতস্মিন্নন্তরে ভূপ করর্ণাটকভূপতে।।৮।। দন্তবক্তসৎ তনয়া নামা পদ্মাবতী মতা। কামদেবং নমস্কৃত্য কামিনী কামরূপিনী।।৯। চিক্ৰীড় সখিভি ক্রিড়াং সরোমধ্যে মনোহরা। তদা তু বজ্রমুকুটো মন্দিরাদাগতো বহি।।১০।।

সেখানে প্রজাবর্গের মধ্যে চার বর্ণের লোক ছিল এবং যেখানের রাজা ছিলেন প্রতাপ মুকুট, তাঁর রাণী ছিলেন মহাদেবী। তাঁর পুত্রের নাম ছিল বজ্ৰ মুকুট। তিনি ষোড়শ বর্ষে পদার্পণ করলে তিনি অশ্বচালনা করে বনে যান। মুন্সীপুত্র বুদ্ধিদক্ষও অশ্বারোহন করে বনে যান। তারা দুইজনেই সমবয়স্ক ছিলেন।।৩-৫।।

সেই রাজকুমার মৃগ এবং পক্ষি সমন্বিত সুন্দর বা দেখেছিলেন এবং পরম প্রসন্নতা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। সেখানে সেই রাজকুমার কামাশায় বশীভূত হয়ে গিয়েছিলেন।।৬।।

সেই বনে এক অত্যন্ত রম্য এবং পরম দিব্য সরোবর ছিল, যা বিভিন্ন পক্ষিগণে সুন্দর নিনাদ যুক্ত ছিল। সেই সরতটেমুণিসমূহের দ্বারা পূজিত ভগবান শিবের এক স্থান ছিল।।৭।।

দৃষ্ট্বা পদ্মাবতীংবালাং তু রূপগুণান্বিতাম। মূৰ্চ্ছিতঃ পতিতো ভূমৌ সা দৃষ্ট্বা তু মুমোহ বৈ।। ১১।। প্রবুদ্ধো বজ্ৰমুকুটো মাং পাহি শিবশঙ্কর। ইত্যক্ত্বা ভূপতনয়ঃ পুনৰ্বালাং দদর্শ হ।।১২।। শিরসঃ পদ্মকুসুমং সা গৃহীত্বা তু কর্ণয়োঃ। কৃত্বা চখান দৰ্শণৈঃ পাদয়োদধতী পুণঃ।।১৩।। পুণগৃহীত্বা তৎপুষ্পং হৃদয়ে সংপ্রবেশিতম্।

ইতি ভাবং চ সা কৃত্বাহহলিভিঃ সার্ধং যযৌ গৃহম্।।১৪ তীর্থার্থং চ সমং পিত্রা সংপ্রাপ্তা গিরিজাবলে। তস্যাং গতয়াং স নৃপো মারবাণেন পীড়িতঃ।।১৫।। মহতীং মানসীং পীড়াং প্রাপ্তবান্মোহমাগেলঃ। উন্মাদীব ততো ভূত্বা খাদ্যপানবিবর্জিতঃ।।১৬।।

সেই শিবালয়টিকে দেখে দুই যুবক সেখানে গিয়ে মহা অনন্দলাভ করলেন। হে ভূপ, এরমধ্যে সেখানে কর্ণাটকের রাজা দত্তবক্রের পুত্রী পদ্মাবতী সেখানে আসেন। তিনি কামিনী স্বরূপিন। দিন। তিনি কামদেবকে প্রণাম করে পরম সুন্দরী সখীদের সঙ্গে সেই সরোবরে জলক্রীড়া করতে লাগলেন। সেই সময় রাজকুমার বজ্রমুকুট মন্দির থেকে বাইরে নির্গত হয়ে সমান রূপ ও গুণবতী পদ্মাবতীকে দেখে মোহিত হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর বজ্রমুকুটের চেতনা ফিরলে তিনি প্রবুদ্ধ হয়ে বলেন হে শিবশংকর আমাকে রক্ষা করুন। এই বলে তিনি পুনরায় সেই কন্যাকে দেখতে লাগলেন।।৮-১২।।

সেই কন্যা মাথার পদ্মপুষ্প গ্রহণ করে কর্ণে রেখে, পুনরায় দশনের পুনঃপুনঃ খেতে লাগলেন এবং পুনরায় তা হৃদয়ে প্রবেশ করালেন। এই প্রকার ভাব করে তিনি পুনরায় সখিদের সংগে গৃহে চলে গেলেন।।১৩- ১৪।।

ধ্যাত্বা পদ্মাবতীং বালাং মৌনব্রতমচীকরৎ। তদা কোলাহলো জাতঃ প্রতাপমুকুটান্তিকে।।১৭।। কুমারঃ কাং দশাং প্রাপ্ত ইতি হাহেতি সর্বতঃ ত্রিদিনান্তে মন্ত্রিসুতো বুদ্ধি দক্ষো বিশারদঃ।।১৮।। অব্রবীদ্বজমুকুটং সত্যং কথয় ভূপতে। স আহ কারণং সর্বং যথা জাতং সরোবরে।।১৯।। তচ্ছু ত্বা বুদ্ধিদক্ষশ্চ বিহস্যাহ মহীপতিম্। মহাকষ্টেন স দেবী মিত্রত্বং হি গমিষ্যতি।।২০।। করণাটকভূপস্য দন্তবক্তস্ত সা সুতা। পদ্মাবতীতিবিখ্যাতা দধতী ত্বাং স্বমানসে।।২১।। পুষ্পাভাবেন জ্ঞাত্বাহং ত্বাং নয়ামি তদন্তিকে। ইত্যক্ত্বা তস্য পিতরং প্রতাপমুকুটং প্রতি।।২২।। আহাজ্ঞাং দেহি ভূপাল যা স্যেহং করণাটকে। ত্বৎসুতস্য চিকিৎসার্থং স বজ্রমুকুটোহচিরম্।।২৩।।

এরপর তীর্থ করতে পিতার সংগে গিরিজা বনে চলে গেলেন, তাঁর বনে যাওয়ার পরে নৃপ কামবানের দ্বারা অত্যন্ত পীড়িত হয়ে ছিলেন। খুব কঠিন মানসিক পীড়াতে আক্রান্ত হয়ে মোহিত হয়ে গেলেন। তিনি অহর্নিশ পদ্মাবতীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে মৌনী হয়ে রইলেন। তিনি এইভাবে খাদ্য ভোজন ত্যাগ করে মানসিক রোগীর ন্যায় আচরণ করতে লাগলেন। এই সংবাদ পদ্মাবতীর কাছে রাজা প্রতাপ মুকুটের কাছে কোলাহলের সংগে পৌঁছান।।১৫-১৭।।

কুমারের এই অবস্থা দর্শনে সকলের মধ্যে হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। তিনদিন পর মন্ত্রীপুত্র পরম পন্ডিত বুদ্ধিদক্ষ বজ্রমুকুটকে বলেছিলেন, হে ভূপতি, সত্য বলুন কি ব্যাপার। তখন রাজকুমার সমস্ত কারণ তাকে বলেছিলেন বনের মধ্যে যা ঘটনা ঘটেছিল সেই সকল কথা রাজকুমার বুদ্ধিদক্ষকে বলেছিলেন।।১৮-১৯।।

আয়ামি নাহত্র সন্দেহো যদি জীবয়সে সুতম্। তথেতি মত্বা স নৃপঃ প্রাদাৎপুত্ৰং চ মন্ত্রিণে।। ২৪।। হয়ারূঢ়ৌ গতৌ শীঘ্রং দন্তবক্তস্য পত্তনে। কাচিদ্বুদ্ধাঅস্থি তত্র তস্যা গেহং চ তৌ গতৌ।।২৫।। বহুদ্রব্যং দদৌ তস্যৈ বুদ্ধিদক্ষো বিশারদঃ। ঊষতুমন্দিরে তস্মিন্নাত্রিং ঘোরতমোবৃতাম্।।২৬।। প্রাতঃ কালে তু সা বৃদ্ধা গচ্ছন্তীং রাজমন্দিরম্। তামাহ মন্ত্রিতনয়ঃ শৃণু মাতৰ্বচো মম।।২৭।। পদ্মাবতীং চ সংপ্রাপ্যৈকান্তে মদ্বচনং বদ জ্যেষ্ঠশুক্লস্য পঞ্চম্যামিন্দুবারে সরোবরে।।২৮।। যো দৃষ্টঃ পুরুষো রম্যস্বদর্থে সমুপাগতঃ। ইতি শ্রুত্বা যযৌ বৃদ্ধা পদ্মং তস্যৈ ন্যবেদয়ৎ।।২৯।।

এই কথা শ্রবণ করে বুদ্ধিদক্ষ হেসে উঠে মহীপতিকে বলেছিলেন, মহাদেবীর সংগে মিত্রতাপ্রাপ্তি অনেক কষ্টকর বিষয়। তিনি কর্ণাটক রাজ্যের রাজা দন্তবক্রের পুত্রী। তাঁর নাম পদ্মাবতী। তিনি আপনাকে মনে ধারণ করে রেখেছেন। আমি পুষ্পভারের কথা শুনে আপনাকে তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। বুদ্ধিদক্ষ একথা বলে সেই রাজকুমারের পিতা প্রতাপ মুকুটকে বললেন–হে ভূপাল, আপনি আজ্ঞা করুন। আমি আপনার পুত্রের চিকিৎসার জন্য সেখানে যাচ্ছি। বজ্রমুকুট ও আমি অতিশীঘ্র ফিরে আসব। যদি আপনি পুত্রকে জীবিত রাখতে চান তাহলে সেখানে যাবার আজ্ঞা দিন। রাজা তাকে আজ্ঞা দিয়ে পুত্রকে তার সঙ্গে কর্ণাটকে পাঠালেন।।২০-২৪।।

তারা দুজনে অশ্বারূঢ় হয়ে শীঘ্র রাজা দত্তবক্রের নগরে পৌঁছালেন। সেখানে কোনো এক বৃদ্ধা স্ত্রী ছিলেন। তারা দুজনে তার ঘরে চলে গেলেন।।২৫।।

পরম পন্ডিত বুদ্ধিদক্ষ অনেক ধন সম্পদ বৃদ্ধাকে দিয়ে ঘোর অন্ধকার রাত্রে সেই মন্দিরে বসবাস করতে লাগলেন। প্রাতঃকালে সেই বৃদ্ধা রাজ মন্দিরে যাচ্ছিসেন। সেই সময় মন্ত্রীপুত্র বুদ্ধিদক্ষ তাঁকে বললেন, হে মাতা, আমার কথা শ্রবণ করুন, আপনি পদ্মাবতীর কাছে গিয়ে আমার কথা তাকে বলুন যে, জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে চন্দ্রবারে যে রম্য পুষ্প তুমি দেখেছিলে, সেটি তোমার জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছে। একথা শ্রবণ করে বৃদ্ধা চলে গেলেন এবং সেই বৃত্তান্ত পদ্মাবতীকে গিয়ে নিবেদন করলেন।।২৬-২৯।।

রুষ্টা পদ্মাবতী প্রাহ চন্দনাদ্ৰাঙ্গুলীয়িকা। গচ্ছ গচ্ছ মহাদুষ্টে তলেনোরস্যতাড়য়ৎ।।৩০ ।। অঙ্গুলীভিঃ কপোলৌ চ তস্যাঃ স্পৃষ্টা যযৌ গৃহম্। সা তু বৃদ্ধা বুদ্ধিদক্ষং সর্বং ভাবং ন্যবেদয়ৎ।।৩১।। সমিত্রং দুঃখিতং প্রাহ শৃণু মিত্র শুচং ত্যজ। ত্বামাহ ভূপতেঃ কন্যা প্রাণপ্রিয় বচঃ শৃণু।।৩২। ত্বদর্থে তাড়িতং বক্ষঃ কদা মিত্রং ভবিষ্যসি। শ্রুত্বা তন্মধুরং বাক্যং রজো দেহে সমাগতম্।।৩৩।। রজস্বলান্তে ভো মিত্র তবাস্যং চুম্বিতাস্ম্যহম্। ইতি শ্রুত্বা ভূপসুতঃ পরমানন্দমাযযৌ।।৩৪।। ত্রিদিনান্তে তু সা বৃদ্ধাপদ্মাবত্যৈ ন্যবেদয়েৎ। ত্বামুৎসুকঃ স ভূপালস্তব দর্শন লালসঃ।।৩৫।।

চন্দনার্দ্র অঙ্গুলীয়ক যুক্ত পদ্মাবতী রুষ্ট হয়ে বললেন, হে মহাদুষ্টা, চলে যাও। এই বলে তিনি সেই বৃদ্ধাকে তাড়না করলেন। অঙ্গুলী দ্বারা সেই বৃদ্ধার কপোল স্পর্শপূর্বক গৃহে চলে গেলেন। পুনরায় বৃদ্ধা এসে বুদ্ধিদক্ষকে সেই সম্পূর্ণ ভাব নিবেদন করলেন।।৩০-৩১।।

সেই মন্ত্রীপুত্র বুদ্ধিদক্ষ দুঃখিত মিত্রকে বললেন, হে মিত্র শ্রবণ করুন, আপনি চিন্তা ত্যাগ করুন। রাজকন্যা কি বলেছে শ্রবণ করুন, তিনি বক্ষঃস্থল তাড়িত করেছেন কারণ তিনি বলতে চান যে, “তুমি কবে আমার মিত্র হবে। তার মধুর বাক্য শ্রবণ করে দেহে রজঃ প্রবৃত্তি হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন রজস্খলতা হলে আমি তোমাকে চুম্বন করব।” এই কথা শ্রবণ করে রাজ পুত্রের পরম আনন্দ হয়েছিল।।৩২-৩৪।।

তিনদিন ব্যাতীত হলে সেই বৃদ্ধা পদ্মাবতীর সমীপে গিয়ে বললেন, ভূপাল তোমাকে দর্শন করতে অতি উৎসুক হয়েছেন।।৩৫।।

তং ভজস্বাদ্য সুশ্রোণি সফলং জীবনং কুরু। ইতি শ্রুত্বা মহাহৃষ্টা সা মস্যাদ্রাঙ্গুলীয়কম।।৩৬।। গবাক্ষদ্বারি নিষ্কাস্য তলে পৃষ্ঠে চ তাড়িতা। তথৈব বৃদ্ধা তং প্রাপ্য মন্ত্রিণং চাব্রবীদ্ব চঃ।।৩৭।। প্রসন্নো বুদ্ধিদক্ষশ্চ মিত্ৰং প্রাহ শৃণুম্ব ভোঃ। পশ্চিমে দিশি ভোঃ স্বামিগ্নবাক্ষং তব নির্মিতম্।।৩৮। আর্দ্ধরাত্রে তু সংপ্রাপ্য ভজ মাং কামবিহ্বলাম্। শ্রুত্বা তদ্বজমুকুটঃ প্রিয়াদর্শনলালসঃ।।৩৯।। যযৌ শীঘ্রং মহাকামী রমণীং তামরাময়ৎ। মাসান্তে কামশিথিলো মিত্র দর্শন লালসঃ।।৪০।। পদ্মাবতীং প্রিয়াং প্রাহ শৃণু বাক্যং বরাননে। যেন প্রাপ্তবতী মহ্যং ত্বং সুভূঃ সুরদুর্লভা।।৪১।।

হে সুশ্রোণী, তুমি আজ রাজকুমারের সেবা করে নিজের জীবন সফল করো। একথা শ্রবণ করে পদ্মাবতী অত্যন্ত হর্ষিত হলেন ও বৃদ্ধাকে মসীরাদ্র অঙ্গুলীয়কের দ্বারা গবাক্ষের দ্বারে বার করে দিয়ে তল ও পৃষ্ঠে তাড়িত করেছিল। এই কথা বৃদ্ধা মন্ত্রীর কাছে নিবেদন করেছিল।।৩৬-৩৭।।

এই কথা শ্রবণ করে বুদ্ধিদক্ষ মিত্রকে বললেন, হে রাজকুমার, শোনো হে স্বামিন, সে পশ্চিমদিকে তোমার গবাক্ষ তৈরী করেছেন। অর্ধরাত্রে তুমি গমন করে কাম বিহ্বলা সে রমণীকে সেবন কর। এই কথা শ্রবণ করে বজ্রমুকুট প্রিয়া দর্শনের লালসায় পূর্ণ হয়ে গেলেন।

সেই রাজকুমার শীঘ্র সেখানে গিয়ে সেই রমণীকে উত্তমরূপে রমণ করলেন। একমাস পূর্ণ হলে তিনি কাম শিথিল হলেন এবং মিত্রের সংগে দর্শনের ইচ্ছায় লালসান্বিত হলেন।।৩৮-৪০।।

তন্মিত্রং বুদ্ধিদক্ষশ্চ কিং নু তিষ্ঠতি সাম্প্রতম্। আজ্ঞাং দেহি প্রিয়ে মহ্যং দৃষ্ট্বাযাস্যামি তেহস্তিকম্।।৪২। ইতি শ্রুত্বা বচস্তস্য নিষ্ঠুরং কুলিশোপমম্। মিষ্টান্নং সবিপ কৃত্বা মন্ত্রিণে সান্যবেদয়ৎ।।৪৩।। তদা তু বুদ্ধিদক্ষশ্চ চিত্রগুপ্ত প্ৰপূজকেঃ। জ্ঞাত্বা তৎকারণং সর্বং ন তু ভক্ষিতবান্বয়ম্।।৪৪।। এতস্মিন্নস্তরে প্রাপ্তো ভূপতিত্ত্বরয়ান্বিতঃ। বিবেকবন্তং মিত্রং তং দৃষ্ট্বা প্রাহ রুষান্বিতঃ।।৪৫।। কস্মান্ন খাদিতং মিত্রং ভোজনং মৎপ্রিয়াকৃতম্। বিহস্য বুদ্ধি দক্ষস্তু সারমেয়ে দদৌ হি তৎ।।৪৬।। ভুক্ত্বা স মরণং প্রাপ্তঃ স দৃষ্টাব বিস্মিতো নৃপঃ। স্ত্রীচরিত্রং চ বিজ্ঞায় স্নেহং ত্যক্ত্বাহ ব্রবীতম্।।৪৭।। মিত্ৰগচ্ছ গৃহং শীঘ্রং ময়া ত্যক্তা চ পাপিনী। স আহ শৃণু ভূপাল গচ্ছ শীঘ্রং প্রিয়ান্তিকম্।।৪৮।।

তখন সেই রাজকুমার পদ্মাবতীকে বললেন, হে বরাননে, আমার বচন শ্রবণ করো, যার জন্য তুমি আমাকে প্রাপ্ত হলে সেই মিত্র হলেন আমার মিত্র বুদ্ধিদক্ষ। এখন তিনি এখানে আছেন কিনা। তুমি আমাকে আজ্ঞা দাও। আমি তার সঙ্গে দেখা করে শীঘ্র তোমার কাছে চলে আসব।।৪১-৪২।।

রাজকুমারের বজ্রসম অত্যন্ত কঠোর বাক্য শ্রবণ করে রাজপুত্রী তাকে বিষযুক্ত মিষ্টান্ন প্রদান করে ছিল। সেই মিষ্টান্ন রাজকুমার মন্ত্রীপুত্রকে নিবেদন করলে চিত্রগুপ্তের প্রপূজক বুদ্ধিদক্ষ সমস্ত কারণ দেখে সেই মিষ্টান্ন ত্যাগ করেছিল।।৪৩-৪৪।।

তদলঙ্কারমাহৃত্য ত্রিশূলং জানুনি। প্ৰসুপ্তাং ত্যজ ভো মিত্র যা হি ত্বং মা বিচারয়।।৪৯।। ইতি শ্রুত্বা যযৌ ভূপস্তথা কৃত্বা সমাগতঃ। স্বমিত্ৰেণ যযৌ সার্ধং শ্মশানে রুদ্রমন্ডপে।।৫০।। শিষ্যং কৃত্বা নৃপং তং স যোগিরূপো হি ভূষণম বিক্রয়ার্থং দদৌ তস্মৈ স্বমিত্রায় স বুদ্ধিমান্।।৫১।। স বজ্ৰমুকুটো মত্বা তদাজ্ঞাং নগরং গতঃ। চোরোয়মিতি তং মত্বা বদ্ধা রাজ্ঞো হি রক্ষিণঃ।।৫২।। শীঘ্রং নিবেদয়ামাসুদন্তবক্ত্রস্তমব্রবীৎ। ক্ব প্রাপ্তং ভূষণম্ রম্যং সর্বং কথয় পুরুষঃ।।৫৩।। জটিলঃ প্রাহ ভো রাজশ্মশানে মদগুরুঃ স্থিতঃ। তেন দত্তং বিক্রয়ার্থং ভূষণং স্বর্ণগুণ্ঠিতম্।।৫৪।। ইতি শ্রুত্বা স নৃপতি স্বর্ণমাহুয় তদ্‌গুরুম্। ভূষণং পৃষ্টাবান্নাজা যোগী প্রাহ শৃণুম্ব ভোঃ।।৫৫।।

ইতিমধ্যে রাজকুমার সেখানে এসে বিবেকবান্ সেই মিত্রকে দেখে ভয়ংকর ক্রোধে বলেছিল হে মিত্র আমার প্রিয়ার দেওয়া মিষ্টান্ন কেন ভোজন করোনি, এই কথা শুনে বুদ্ধিদক্ষ হেসে কুকুরকে সেই মিষ্টান্ন খেতে দিয়েছিল, কুকুর সেই মিষ্টান্ন ভোজন করে মারা গেল। এই ঘটনা দেখে রাজকুমার বিস্মিত হন এবং স্ত্রী চরিত্র বুঝে তার স্নেহ ত্যাগ করার কথা মিত্রকে বলেছিলেন, হে মিত্র তুমি শীঘ্র ফিরে চলো। আমি সেই পাপিনীকে ত্যাগ করেছি। মিত্র বললেন–হে ভূপাল, শোনো, তুমি শীঘ্র নিজের প্রিয়ার কাছে যাও এবং তার অলংকার সমূহ গ্রহণ করে তার জানুতে ত্রিশূল বিদ্ধ কর। হে মিত্র, তুমি তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় ত্যাগ করবে, যাতে করে তোমাকে সে বিচার করতে পারবে না। এই কথা শ্রবণ করে রাজকুমার সেখানে গেল এবং পূর্বে আলোচনা মত কাজ করে নিজ মিত্রের সঙ্গে রুদ্রমন্ডপ শ্মশানে গিয়েছিল।। ৪৫-৫০।।

শ্মশানে সন্ধিতং মন্ত্র ময়া যোগিস্বরূপিণা। পিশাচী প্ৰাপিতা কাচিত্তস্যাশ্চিহ্নং ময়া কৃতম্।।৫৬।। বামজানুনি শূলেন তয়া দন্তং হি ভূষণম্। জ্ঞাত্বা তৎকারণ রাজা সুতা নিকাসিতা গৃহাৎ।।৫৭।। স বজ্ৰমুকুটস্তাং তু গৃহীত্বা গৃহমাযযৌ বিহস্য প্রাহ বৈতালঃ শৃণু বিক্রম ভূপতে।।৫৮।। কস্মৈ পাপং মহৎপ্রাপ্তং চতুর্ণাং মে বদাধুনা ইতি শ্রুত্বা বচস্তস্য বিক্রমো নাম ভূপতিঃ।।৫৯।। বিহস্য ভার্গবং প্রাহ প্রাপ্তং পাপং হি ভূপতেঃ। মিত্রকার্যমমাত্যেন স্বামিকার্যং চ রক্ষিভিঃ।।৬০।। ভূপ পুত্রেণার্থসিদ্ধ কৃতং তস্মাচ্চ ভূপতেঃ। মহৎপাপং চ সংপ্রাপ্তং তেনাসৌ নরকংগতঃ।।৬১।। রজোবতীং সুতাং দষ্ট্বা ন বিবাহেন যো নরঃ। স পাপী নরকং যাতি ষষ্টিবর্ষসহস্ৰকম্।।৬২।।

শ্মশানে বুদ্ধিদক্ষ মিত্র বজ্রমুকুটকে শিষ্য করে নিজে যোগীরূর ধারণ করলেন। এরপর রাজপুত্রী অলংকার সকল বিক্রয়ার্থে শিষ্যরূপী রাজকুমারকে নগরে পাঠালেন। সেই অলকার দেখে রাজরক্ষীগণ তাকে রাজার কাছে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে নিয়ে এলেন। রাজা তাকে অলংকার প্রাপ্তির কথা জিজ্ঞাসা করলে সে বলেছিল, তার গুরুদেব সেগুলি বিক্রয়ার্থে পাছিয়েছেন। রাজা সেই যোগীগুরুকে রাজসভায় আনিয়ে অলংকারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে, সেই গুরু বলেছিল, শ্রবণ করুন, “যোগীরূপে আমি শ্মশানে থাকার সময় এক পিশাচী আমার কাছে এসেছিল। আমি সে পিশাচীর বামজানুতে ত্রিশূল চিহ্ন অংকন করেছিলাম। সেই পিশাচী আমাকে অলংকার সকল প্রদান করেছে। রাজা এই ঘটনায় প্রকৃত কারণ জেনে পুত্রী পদ্মাবতীকে গৃহ থেকে ত্যাগ করলেন।।৫১-৫৭।।

রাজপুত্র বজ্রমুকুট তাকে গ্রহণ করে পুনরায় নিজের গৃহে নিয়ে এলেন, বেতাল হেসে রাজাকে বললেন–হে ভূপতি বিক্রম, এই চার জনের মধ্যে কোন্ জন পাপী। পূতজী বললেন, বিক্রমরাজ বেতালের প্রশ্ন শুনে হেসে বললেন, রাজা হলেন পাপী। কারণ মন্ত্রীপুত্র তার মিত্রকে রক্ষা করেছে। রাজপুত্র নিজ উদ্দেশ্য সিদ্ধ করেছে। রাজরক্ষীগণ নিজ স্বামীর আজ্ঞা পালন করেছেন কিন্তু যে পিতা রজমতী নিজ পুত্রীকে দেখেও তার বিবাহ দেন না, তিনি মহাপাপী এবং তিনি ষাটহাজার বছর নরক বাস করেন। সেই কামিনী রাজপুত্রী গান্ধর্ব মতে বিবাহ করেছিলেন। তা বিচার না করে রাজা অবিবেচকের

গান্ধর্বং চ বিবাহং বৈ কামিন্যা চ কৃতং যয়া। তস্যা বিঘ্নকরো যো বৈ স পাপী যমপীড়িতঃ।।৬৩।। অদৃষ্ট দোষাং যঃ কন্যাং বিবেকেন বিনা ত্যজেৎ। স পাপী নরকং যাতি লক্ষবর্ষ প্রমানকম্।।৬৪।। ইতি শ্রুত্বা স বৈতালো ধর্মগাথাং নৃপেরিতাম্। প্রসন্নহৃদয়ং প্রাহ ভূপতিং ধর্মতৎ পরম্।।৬৫।।

মতো তাকে ত্যাগ করলেন। এইরূপ বিঘ্নকারী ব্যক্তি পাপী ও মর্মতাড়িত হন। যে ব্যক্তি বিনা কারণে অবিবেচকের মতো কন্যাকে ত্যাগ করেন সেই পাপী মনুষ্য নরকগামী হন এবং একবর্ষ পর্যন্ত নরকে যন্ত্রণা ভোগ করেন।, রাজা মুখে বেতাল এইরূপ ধর্মগাথা শুনে হৃদয়ে পরমানন্দ পেয়েছিলেন এবং ধর্ম তৎপর রাজাকে তিনি তা জানিয়েছিলেন।।৫৮-৬৫।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *