ব্রাহ্ম পর্ব
মধ্য পর্ব
প্রতিসর্গ পর্ব
1 of 3

কথা প্রস্তাবনা

কথা প্রস্তাবনা

নারায়ণং নমস্কৃত্য নরং চৈব নরোত্তমম্। দেবীং সরস্বতীং চৈব ততো জয়মুদীরয়েৎ।।১।। জয়তি পরাশরশূনুঃ সত্যবতীহৃদয়নন্দনো ব্যাসঃ। যস্যাস্য কমলগলিতং বাঙ্ময়মমৃতং জগতিপবতি।।২।। মূকং করোতি বাচালং পংগু লংঘয়তে গিরিম্। যৎকৃপা তমহং বন্দে পারমানন্দমাধবম্।।৩।।

পুরুষোত্তম নারায়ণকে প্রণামপূর্বক নরশ্রেষ্ঠ এবং দেবী সরস্বতীকে নমস্কার করে ও জয় শব্দ উচ্চারন করে চিত্তশুদ্ধকারী ভবিষ্যপুরাণ পাঠ করা উচিত।।১।।

দেবী সরস্বতীর হৃদয়ে আনন্দদানকারী পরাশরমুনির পুত্র ব্যাসদেব মুনির জয় হোক, যাঁর মুখকমল থেকে নিঃ সৃত এই অমৃতস্বরূপ কাব্য সমস্ত জগৎ পান করে আনন্দলাভ করে।।২।।

পরমানন্দ স্বরূপ মাধবকে বন্দনা করি নার কৃপায় মূক ব্যক্তি বা চাল হয়ে ওঠে, পঙ্গুব্যক্তি পর্বত অতিক্রম করতে সমর্থ হয়।।৩।।

পারাশর্যবচঃ সরোজমমলং গীতার্থগন্ধোৎকটং নানাখ্যানককেশরং হরি কথাসংবোধনা বোধিতম্। লোকে সজ্জনষট্পদৈরহরহঃ পেপীয়মানং মুদা ভূয়াভারত পঙ্কজ কলিমল প্রধ্বংসি নঃ শ্রেয়সে।।৪।। যো গোশতং কনক শৃংগময়ং দদাতি প্রিয়ার বেদবিদুষে চ বহুশ্রুতায়। পুণ্যাং ভবিষ্যসুকথাং শৃণুয়াৎসমগ্ৰাং পুণ্যং সমং ভবতি তস্য চ তস্য চৈব।।৫।। কৃত্বা পুরাণানি পরাশরাত্মজঃ সর্বাগ্যনেকানি সুখাবহানি। তত্রাত্ম সৌখ্যায় ভবিষ্যধর্মান্ কলৌযুগেভাবি লিলেখ সৰ্বম্।।৬।। তত্রাপি সর্বাষি বরপ্রমুখ্যঃ পরাশরাদ্যৈমুনিভিঃ প্রণীতান্। সমৃত্যুক্তধর্মাগমসংহিতার্থন্ ব্যাসঃ সমাসাদবদদ্ভবিষ্যম্।।৭।।

পারাশর ব্যাসদেবের গীতার্থযুক্ত এই সাধুবচন পদ্মসদৃশ এই পুরাণের বিভিন্ন আখ্যান সেই পদ্মের কেসর, পুরাণে বর্ণিত শ্রীহরি কথা পদ্মকেসরের মধুর ন্যায়, যা ভ্রমররূপী সৎপুরুষগন পুনঃ পুনঃ পানকরে মহানন্দ লাভ করেন।।৪।।

বেদজ্ঞ এবং বহুশ্রুত ব্রাহ্মণকে যে ব্যক্তি শতসংখ্যক গো দান করেন এবং যে ব্যক্তি পরমপবিত্র এই ভবিষ্যপুরান কথা শ্রবণ করেন, তাঁরা উভয়েই সমান পুন্যবান্।।৫।।

পরাশরপুত্র ব্যাসদেব জগতের সকলের সুখে র জন্য অনেক পুরাণ রচনা করেন, তিনি নিজ সুখের জন্য তথা কলিযুগের ভবিষ্যৎ ঘটনাবলী নিয়ে ভবিষ্য পুরান রচনা করেছিলেন।।৬।।

এই ভবিষ্যপুরাণে বাসেদেব পরাশরাদি শ্রেষ্ঠ ঋষিদের দ্বারা কথিত স্মৃতি শাস্ত্রের অলোচ্য বিষয় ধর্ম আশ্রম এবং সংহিতার অর্থ সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন।।৭।।

অল্পাযুষৌ লোকজনানসমীভ্য বিদ্যাবিহীনান পশু বস্নুচেষ্টান। তেষাং সুখার্থং প্রতিবোধনায় ব্যাসঃ প্রথিতং চকারঃ।।৮।। জয়তি ভুবনদীপো ভাস্করো লোককর্তা জয়তি চ শিতিদেহঃ শাঙ্গধন্বা মুরারিঃ। জয়তি চ শশিমৌলী রুদ্রনামাভিধেয়ো জয়তি চ স তু দেবো ভানুমাংশ্চিত্রভানু।।৯।। শ্রিয়াবৃত্তং তু রাজানং শতানীকং মহাবলম্। অভিজণ্মমহাত্মনঃ সর্বং দ্রষ্টুং মহৰ্ষয়ঃ।।১০।। ভৃগুরত্রিবশিষ্টশ্চ পুলস্ত্যঃ পুলহ ক্রতুঃ। পরাশরস্তথা ব্যাসঃ সুমন্তুজৈমিনিস্তথা।।১১।। মুনিঃ পৈল যজ্ঞবন্ধো গৌতমস্তু মহাতপাঃ। ভারদ্বাজো মুনিধীমাংস্তথা নারদপর্বতৌ।।১২।। বৈশমপায়নো মহাত্মা শৌনকশ্চ মহাতপাঃ দক্ষোং গিরাস্তথা গর্গো গালবশ্চ মহাতপাঃ।।১৩।।

পুরাণকর্তা ব্যাস প্রাণিগণের মধ্যে মানুষকে অল্পায়ু সম্পান্ন দেখে এবং মানুষের পশুবৎ চেষ্টা বিবেচনা করে তাদের সুখসম্পাদনের উদ্দেশ্যে এবং জ্ঞানপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে তিনি মনুষ্যলোকে ভবিষ্য পুরাণকে বিস্তৃত করেন।।৮।।

ভুবন প্রকাশ ভগবান্ সূর্যদেব শাঙ্গধনুধারী ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ, শশিভূষণ দেবাদিদেব মহাদেব এবং চিত্র ভানুর জয়গান করে ব্যাসদেব ভবিষ্যপুরাণ কাহিনীর সূচনা করেছেন।।৯।।

সৌন্দর্য্যমন্ডিত রাজা শতানীককে সমস্ত মহর্ষিগন দর্শন করার অভিপ্রায়ে তাঁর সমীপে উপস্থিত হন।।১০।।

মুনিবর ভৃগু অত্রি, বশিষ্ট পুলস্থ্য পুলহ, ক্রতু, পরাশর, ব্যাস, সুমন্ত, জৈমিনী, পৈল,যাজ্ঞবক্ল্য, গৌতম, মহা- তপস্বী ভারদ্বাজ ধীমান নারদ, পর্বত,বৈশম্পায়ন, মহাত্মা শৌনক, মহাতপস্বীদক্ষ, অঙ্গিরা, গর্গ, এবং গালব প্রমুখ বিশিষ্ট মহাত্মাগন রাজা শতানীকের সম্মুখে গিয়েছিলেন।।১১-১৩।।

তানাগতানুষীন্তুষ্টা শতানীকো মহীপতিঃ। বিধিতপূজয়ামাস অভিগম্য মহামতিঃ।।১৪।। পুরোহিতং পুরস্কৃত্য অর্ঘ্যং গাং স্বাগতেন চ। পূজয়িত্বা ততঃ সর্বাপ্রণম্য শিরসাভূশম্।।১৫।। সুখাসীনাংস্ততৌ রাজা নিরাতংকান গতক্লমান্। উবাচ প্রণতো ভূংক্তা বাহুমুত্য দক্ষিণম্।।১৬।। ইদানীং সফলং জনম মন্যেহেং ভুবি সত্তমাঃ। আত্মনো দ্বিজশার্দূলাস্তথা কীর্তিযশোবলম্।।১৭। ধন্যোহহং পুণ্যকর্মা চ যতো মাং দ্রষ্টুমাগতাঃ। যেষাং স্মরণমাত্রেণ সুষমাকং পূয়তে নরঃ।।১৮।। শ্রোতুমিচ্ছাম্যহং কিঞ্চিদ্ধর্মশাস্ত্রমনুত্তমম্। আনুশংস্যং সমাশ্রিত্য কথয়ধ্বং মহাবলাঃ।।১৯।।

সেই সকল মহাতপস্বীদের দেখে ধীমান রাজা শতানীক দন্ডয়মান হয়ে রিধিবৎ পূজন করলেন। তিনি পুরোহিতকে সম্মুখে রেখে অর্ঘপাদ্যাদিদ্বারা পূজাপূর্বক তাঁদের পদযুগলে বারংবার প্রণাম করতে লাগলেন।।১৪-১৫।।

অতঃ পর তাঁরা সকলে সুখে আসন গ্রহন করলে এবং নির্ভয়ে শ্ৰম অপনোদন করতে থাকলে রাজ নিজ দক্ষিণ বাহু উত্তোলনপূর্বক “হে দ্বিজবর আমি আজ নিজেকে মনুষ্য গনের মধ্যে শার্দূল তুল্য বলে মনে করছি। আজ আমার জন্ম, কীর্তি, যশ, বল–সবকিছুই সফল।।১৬-১৭।

তিনি আরও বলেন যে, তিনি নিজেকে ধন্য এবং পুন্যকর্মা বলে মনে করছেন। কারন যাঁদের স্মরণ করা মাত্র মানুষপবিত্রঙয়ে যায়। সেইসকল পুন্যাত্মা আজ তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হয়েছেন।।১৮।।

রাজা শতানীক বলেন, “আমি কিছু সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মশাস্ত্র শ্রবণ করার ইচ্ছা করছি। সুতরাং হে মহাবল কৃপা পূর্বক অত্যন্ত সরল ভাবে আপনারা সেই পবিত্র কথা বলুন।।১৯।

মেনাহং ধর্মশাস্ত্রংতু শ্রুত্বা গচ্ছে পরাং গতিম্। যথা গতো মমপিতা শ্রুত্বা বৈ ভারতং পুরা।।২০।। তথোক্তাস্তেন রাজ্ঞা বৈ ব্রাহ্মণাস্তে সমন্ততঃ। সমাগম্য মিথস্তে তু বিমূস্য চ ভূশং তদা।।২১।। পূজয়িত্বা ততৌ ব্যাসমিদং বচনমব্ৰুবন্।

ব্যাসং প্রসাদয় বিভৌ এষ তে কথয়িষ্যতি।।২২।। তিষ্ঠত্যস্মিন্মহাবাহো বয়ং বক্তং ন শকুমঃ। তিষ্ঠমানে গুরৈ শিষ্যঃ কথং ব্যক্তি মহামতে।।২৩।। অঞ্জলিঃ শিরসা ব্রহ্মাঙ্কৃতৌহয়ং পাদয়োস্তব। ব্রুহি মে ধর্মশাস্ত্রং তু সেনাহং পুততাং ব্রজে।।২৪।। সমুদ্ধর ভবাদস্মাকীর্তয়িত্বা কথাং শুভাম্। যথা মম পিতা পূর্বং কীর্তয়িত্বা তু ভারতম্।।২৫।।

সেই পবিত্র ধর্মশাস্ত্র শ্রবণ করে আমি পরাগতি প্রাপ্ত হব। যেমন পূর্বে আমরা পিতা পবিত্র মহাভারত গ্রন্থ করে পরমগতি প্রাপ্ত হয়েছিলেন।। ২০।।

রাজা শতানীকের কথা শ্রবণ করে সেই সকল ব্রাহ্মণগন একত্রিত হয়ে সমস্ত কিছু যথাযথ বিচার করতে লাগলেন।।২১।।

অনন্তর তাঁরা সকলে ভগবান্ব্যাসদেবকে পূজা করে রাজা শতানীককে বললেন “হে বিভো, আপনি মহর্ষি ব্যাসদেবকে প্রসন্ন করুন। তিনি আপনাকে ধর্মশাস্ত্রের কথা শ্রবণ করাবেন।।২২।।

রাজা শতানীককে মহর্ষিগন আরও বলেন যে, এই মহাতপস্বী যেখানে বিদ্যামান সেখানে আমরা কিছুবলতে পারব না। হে মহামতি, কারণ যেখানে গুরুবর উপস্থিত থাকেন, সেখানে শিষ্য কি প্রকারে বক্তব্য প্রদান করতে পারেন।।২৩।

রাজা শতানীক তখন “হে ব্ৰহ্মন্ আমি নতমস্তকে আপনার পায়ে অঞ্জলি প্রদান করছি। আপনি কৃপাপূর্বক আমাকে ধর্মশাস্ত্রের কথা শ্রবণ করান। যে কথা পবিত্রতা লাভ করব। এই শুভ কথা বর্ণনা করে আমাকে এই সংসার থেকে মুক্ত করুন। যেমন মহাভারতের কথা কীর্তন করে পূর্বে আমরা পিতা উদ্ধার পেয়েছিলেন।।২৪-২৫।।

তস্যৈতদ্বচনং শ্রুত্বা ব্যাসো বচনমব্রবীৎ। এষ শিষ্যঃ সুমংতুমে কথয়িষ্যতি তে প্রভো।।২৬।। যদিচ্ছসি মহাবাহো প্রীতিদং চাদ্ভূতং শুভম্ শ্রব্যং ভরতশার্দূল সর্বপাপভয়াপহম্।।২৭।। যথা বৈশম্পায়নেন পুরা প্রোক্তং পিতৃস্তব। মহাভারত ব্যাখ্যানং ব্রহ্মহত্যাব্যপোহনম্।।২৮।। অথ তমৃষয় সর্ব রাজানমিদমত্ৰুবন্। সাধু প্রোক্তং মহাবাহো ব্যাসেনামিকবুদ্ধিনা।।২৯।। সুমংতু পৃচ্ছ রাজর্ষে সর্বশাস্ত্রবিশারদম্। অস্মাকমপি রাজেন্দ্র শ্রবণে জায়তে মতিঃ।।৩০।। পূণ্যাখ্যানং মম ব্রহ্মণপাবনায় প্রকীর্তয়। শ্রুত্বা মদ্ৰাহ্মণ শ্রেষ্ঠ মুচ্যেহহং সর্বপাতকান্।।৩১।।

রাজা শতানীকের এই বিনম্রনিবেদন শ্রবণ করে মহামুনি ব্যাস বললেন, হে প্রভো, এখানে উপস্থিত মুনিবর্গের মধ্যে সুমন্তু আমরা একশিষ্য যিনি তোমাকে ধর্মশাস্ত্রে কথা শ্রবণ করাবেন।। ২৬।।

হে মহাবাহু ভরতশার্দূল তোমার প্রীতি উৎপাদনকারী পরম অদ্ভূত ও শুভশাস্ত্র শ্রবনকরতে চাও তাহলে সমস্ত প্রকার পাপ ও ভয় অপহরণ কারীশাস্ত্র শ্রবণ করা উচিত। পূর্বে বৈশম্পায়ণ মুনি তোমার পিতাকে যেমন ব্রহ্মহত্যাজনিত পপথেকে মুক্ত করতে মহাভারত কথা শুনিয়েছিলেন।।২৭-২৮।।

অতঃ পর সমস্ত ঋষিগন রাজা শতানীককে বললেন অপরিমিত বুদ্ধিব্যাসদেব যথার্থ বলেছেন। সুতারাং হে রাজর্নি, সর্বশাস্ত্রে সুপন্ডিত সুমন্ত মুনিকে আপনি জিজ্ঞাসা করুন। হে রাজেন্দ্র পবিত্র সেই শাস্ত্র রকথা শ্রবণ করার ইচ্ছা আমরাও অনুভব করছি।।২৯-৩০।।

রাজা শতানীক বললেন, হে ব্রহ্মণ, আপনি কোনো পুন্যতম আখ্যান বর্ণনা করুন। যা শ্রবণ করে আমি পবিত্রতা লাভ করব। হে ব্রাহ্মণ শ্ৰেষ্ঠ, সেই পবিত্র কাহিনী শ্রবণ পূবক আমি সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি লাভ করব।।৩১।

নানাবিধানি শাস্ত্রানি সন্তি পুণ্যানি ভারত। যানি শ্রুত্বা নরো রাজনমুচ্যতে সৰ্বকিল্বিষৈঃ।।৩২।। কিমিচ্ছসি মহাবাহো শ্রোতুং মত্ত্বা ব্রবীমি বৈ। ভারতাদিকথানাং তু যাসু ধর্মাদয়ঃ স্থিতাঃ।।৩৩ ।। চতুর্ণামিহ বর্ণানাং শ্রেয়সে যানি সুব্রতং। ভবন্তি দ্বিজশার্দূল শ্রুতানি ভুবনত্রয়ে।।৩৪।। বিশেষতশ্চচতুর্থস্য বর্ণস্য দ্বিজসত্তম।।৩৫।। ব্রাহ্মণাদিসু বর্ণেষু ত্রিষু বেদাঃ প্রকল্পিতাঃ মন্বাদীনি চ শাস্ত্রানি তথাংগানি সমংততঃ।।৩৬।। শুদ্রাশ্চৈব ভূশং দীনাঃ প্রতিভাতি দ্বিজপ্রভো। ধর্মার্থকামমোক্ষস্য শক্তাঃ স্যুরবনে কথম্।।৩৭।। সাধুসাধু মহাবাহো সাধু পৃষ্টোহসিম মানদ। শৃণু মে বদতো রাজপুরাণং নবমং মহৎ।।৩৮।।

সুমন্তু বললেন, হে ভারত পৃথিবীতে অনেক প্রকার পুন্যশাস্ত্র আছে, যার কথা শ্রবণ করে মনুষ্য সর্বপ্রকার পাপ থেকে মুক্তি লাভ করে। হে মহাবাহো, তুমি এই সকল শাস্ত্রে মধ্যে কোন্ কথা শ্রবণ করতে ইচ্ছা কর যা আমি তোমাকে শোনাব মহাভারত ইত্যাদি শাস্ত্রে ধর্মইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে।।৩২-৩৩।।

রাজা শতানীক বললেন, হে সুব্রত, ত্রিভুবনে চারবর্নের কল্যানের জন্য যা কিছু বর্তমান তা সবই শ্রুত হয়েছে বিশেষকরে চতুর্থবনের অর্থাৎ শূদ্রে বিষয়ে বর্নিত শাস্ত্রও শ্রুত হয়েছে। আবার ব্রাহ্মণাদি তিন বর্ণের মধ্যে বেদ প্রচলিত এবং মনুসংহিতা ইত্যাদি শাস্ত্র ও তার সকল অঙ্গও শ্রুত হয়েছে।।৩৪-৩৬।।

তুলনামূলকভাবে শূদ্র অত্যন্ত হীন। হে দ্বিজ প্রভো শূদ্রজাতি ধর্ম, অর্থ, কামত মোক্ষ কি ভাবে প্রাপ্ত হবে।।৩৭।।

সুমন্তমুনি বললেন, হে মহাবাহু,ত তুমি যথার্থ বলেছে। এখন আমি তোমাকে মহান্ নবম পুরাণ শ্রবণ করাব।।৩৮।।

যদ্রুত্বা সর্বপাপেভ্যো মুচ্যতে মানব নৃপ। অশ্বমেধফলং প্রাপ্য গচ্ছেদ্ভানৌ ন সংশয়ঃ।।৩৯।। ইদং তু ব্রহ্মণা প্রোক্তং ধর্মশাস্ত্রমনুত্তমম্। বিদুষা ব্রাহ্মণেনেদমধ্যেতব্যং প্রযত্নতঃ।।৪০।। শিষ্যেভ্যশ্চৈব বক্তব্যং চাতুর্বর্ণেভ্য এব হি। অধ্যেতব্যং ন চান্যেন ব্রাহ্মণং ক্ষত্রিয়ং বিনা শ্রোতব্যমেব শূদ্রেণ নাধেতব্যং কদাচন।।৪১।। দেবার্চাং পুরতঃ কৃত্বা ব্রাহ্মনৈশ্চ নৃপোত্তম। শ্রোতব্যমেব শূদ্রেশ্চ তথান্যৈশ্চ দ্বিজাতিথিঃ।।৪২।। শ্রৌতং সমাতং হি বৈ ধর্মং প্রোক্তমসিমপোত্তম। তসমাছুদ্রৈবিনা বিপ্রান্ন শ্রৌতব্যং কথংচন।।৪৩।। ইদং শাস্ত্রমধীয়ানো ব্রাহ্মণঃ সংশিতব্রতঃ। মনোবাগ্দেহজৈন্নত্যং কর্মদোষৈণ লিম্পতে।। ৪৪।।

হে নৃপ, এই পুরাণ কথা শবণ পূর্বক মানুষের সমস্তপাপ দূরীভূত হয়; এবং নিঃসন্দেহে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফললাভ করে মৃত্যুর পর সূর্যলোকে প্রাপ্ত হয়।।৩৯।

ভগবান ব্রহ্মা এই শাস্ত্রকে সর্বোত্তম শাস্ত্র বলেছেন বিদ্বান্ ব্রাহ্মণদের মধ্যে এই শাস্ত্রের কথা বলা উচিত। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় ভিন্ন অন্য কোনো বর্ণের ব্যক্তির এই শাস্ত্রের অধ্যয়ন করা উচিত নয়। বিশেষতঃ শূদ্রের শুধুমাত্র এই শাস্ত্র কথা শ্রবণ করা ইচত পাঠকরা কদাপি উচিত নয়।।৪০-৪১।

হে নৃপোত্তম, দেবপূজন পূর্বক ব্রাহ্মণদের দ্বাস বা অন্যদ্বিজাতিগণের দ্বারা এবং শূদ্র দ্বারা এই শাস্ত্র শ্রবণ করা উচিত।।৪২।।

হে নৃপবর, এই পবিত্র পুরাণে শ্রৌত ও স্মার্ত দ্বারা প্রতিপাদিত ধর্মের কথা বলা হয়েছে। সুতারাং ব্রাহ্মণগণ ভিন্ন শূদ্রগণের দ্বারা কথনই এই পবিত্র শাস্ত্র শ্রবণ করা উচিত নয়।।৪৩।।

এই শাস্ত্র অধ্যায়নকারী কুশলী ব্রাহ্মণ মন কর্ম এবং শরীর থেকে উৎপন্ন কর্মদোষ দ্বারা লিপ্ত হন না।।৪৪।।

শৃণ্বন্তি চাপি যে রাজম্ভক্ত্যা বৈ ব্রাহ্মণাদয়ঃ। মুচ্যতে পাবকৈঃ সর্বৈর্গচ্ছতি চ দিবং প্রভৌ।।৪৫।। শ্রাবয়েচ্চাপি যো বিপ্রঃ সর্বান্বর্ণানুপোত্তমঃ। স গুরু প্রোচ্যতে তাত বৰ্ণানামিহ সৰ্বশঃ।।৪৬।। স পুজ্যঃ সর্বকালেষু সর্বৈবর্ণেনরাধিপ। পৃথিবীং চ তথৈবেমাং কৃৎস্নামেকোপি সোহহতি।।৪৭।। ইদং স্বস্ত্যয়নং শ্রেষ্ঠমিদং বুদ্ধি বিবর্ধনম্। মশস্যং সততমিদং নিঃশ্রেয়সং পরম্।।৪৮।। অস্মিন্ধর্মোহখিলেনোক্তৌ গুণদোষৌ চ কর্মণাম্। চতুর্ণামপি বর্ণানামাচারশ্চাপি শাশ্বতঃ।।৪৯।।

হে রাজন, যে ব্রাহ্মণ এই শাস্ত্রের ভক্তিপূর্বক অধ্যয়ন করেন, তিনি সর্বপ্রকার পাপ থেকে মুক্তহন এবং দেহান্তে স্বৰ্গলোক প্রাপ্ত হন।।৪৫।

যে ব্রাহ্মণ সকল বর্ণের মনুষ্যকে এই পুরাণ শাস্ত্রের শ্রবণ করান, তিনি এই সংসারে সকলবর্ণের গুরু পরিচিতি লাভ করেন।।৪৬।।

হে নরাধিপ, তিনি সবসময় সমস্ত বর্ণের দ্বারা পূজণীয় এবং সেই সঙ্গে তিনি সমস্তবর্ণেতর মধ্যে যোগ্যতম ব্যক্তি। তিনি কল্যাণের আধার স্বরূপ, পরমশ্রেষ্ঠ, বুদ্ধিবিবর্ধক। যশদানকারী, সর্বদা শ্রেয় সম্পাদনকারী।।৪৭-৪৮।।

পরমপবিত্র এই পুরাণ শাস্ত্রে পূর্ণধর্ম এবং কর্মের গুণ তথা দোষ বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া চার বর্ণের শাশ্বত আচার বর্ণিত রয়েছে।।৪৯।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *