2 of 3

রাজপাট – ৯৩

৯৩ 

শরতে কাশের ফুল 
সমীরণে ভাসে। 
বসিয়া রয়েছে কার 
দরশন আশে ।।
খোঁপায় পদ্মের কুঁড়ি 
চরণে আলতা। 
হয়লডি বুঝিছে লোকে 
সব মর্মকথা ।।
গর্ভে ধরিছে ফুল 
সন্তানের সুখ। 
সাধু না আসিল ঘরে 

হইয়ে বিমুখ ।। 

আয়ান সর্দারের নাতনি মারা গেছে আজ। গোষ্ঠবিহারীর মেয়ে। মুস্তাকিমের আঙিনায় আজ লোকসমাগম সামান্যই! শোকগৃহে গিয়েছে সকলেই। সৎকারের আয়োজন হয়েছে। এ আঙিনায় এসেছে যারা, তারা অসুস্থ। পঙ্গুপ্ৰায়। 

ওই শোকাবহ পরিবেশে একমাত্র দুলুক্ষ্যাপা ছাড়া আর যায়নি তারা কেউ। সিদ্ধার্থ, তৌফিক বা বসির খান। যায়নি কারণ এই গ্রামে তারা বহিরাগত। আপাতত অতিথি হয়ে এসেছে। আর শোক বড় ব্যক্তিগত জিনিস। অতি পরিচিত বা আপনার জনের কাছে তার প্রকাশ চলে। অকারণ ভিড় নয়। শোকার্ত জনের চাই বিবিক্তি। নির্জনতা। 

এক আশ্চর্য অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে এ গ্রামের শিশুগুলি। হতে পারে এ এক সংক্রামক রোগ। এক থেকে সাত-আট বর্ষীয়দের মধ্যে ঘটছে সেই সংক্রমণ। প্রথমে জ্বর আসছে হু-হু করে, তারপর সারা শরীরে আক্ষেপ উঠছে। কেউ কেউ মরার আগে রক্তবমি করেছে পর্যন্ত। কেউ জানে না এ কী রোগ! 

এ গ্রামের অসুখে-বিসুখে আয়ান সর্দারই ভরসা। নানাবিধ ভেষজ চিকিৎসা তাঁর জানা আছে। লোকে তাঁর ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখে। কিন্তু এই চর্মরোগ, যা বিগত দশক ধরে ছেয়ে যাচ্ছে গ্রামে, তার চিকিৎসা তিনি করতে পারেননি। আর পারেননি এই শিশুমৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে। আজ তাঁর নাতনি মারা গেল। এরপর কার পালা কে জানে! মৃত্যুর ঘন কালো ছায়া এই গ্রামের ওপর ছড়িয়ে রয়েছে সারাক্ষণ। 

জোনাকির জ্বর আসাতে বিপর্যস্ত বোধ করেছিল মুস্তাকিম। আতঙ্কিত হয়েছিল। কিন্তু খোদাতায়ালার আশীর্বাদে এ বেলা সম্পূর্ণ জ্বর ছেড়ে গেছে তার। দুপুরে ভাত খেয়েছে। তবু, সকলজনের ভরসাস্থল সে, অপরের সর্বনাশে তার চিত্ত তাপিত হয়। হৃদয়ে দহন লাগে। রোগবিষে জর্জরিত মানুষ এই ধুলামাটি গ্রামে বড় বেশি করে পরস্পরকে আঁকড়ে আছে। 

সিদ্ধার্থরা চুপ করে বসেছিল। শোকের বাড়িতেই রয়ে গেছে দুলুক্ষ্যাপা। প্রায় ভোরের আলোর মতো জ্যোৎস্না সত্ত্বেও সর্বত্র গাঢ় বিষাদ। 

সিদ্ধার্থ বলল—আশেপাশে হাসপাতাল নেই? সেখান থেকে চিকিৎসা করানো যায় না?

—হাসপাতাল? 

মুস্তাকিম বিষণ্ণ হাসে। বলে – হাসপাতাল? সে আছে পাটিকাবাড়িতে। সেটাই সবচেয়ে কাছের। কিন্তু সেই হাসপাতালে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। হাসপাতাল-বাড়িতে গোরু-ছাগল চরে বেড়ায়। তার পরের হাসপাতাল আছে নওদায়। এখান হতে পনেরো কিলোমিটার হেঁটে গেলে রাধানগর পাওয়া যায়। রাধানগর থেকে সড়কপথে যেতে হবে নওদা। গ্রামজোড়া এ চর্মরোগ, দেখেছ তো, অনেক রোগী আমরা নিয়ে গিয়েছি। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল কয়েকজন। তারা বেঁচে ফেরেনি। তাদের শরীরের মাংসে পচন ধরে গিয়েছিল। ডাক্তার বলেছিল ক্যানসার। এ রোগ সারে না। দেখে অবাক হয়েছিল সেই ডাক্তার। একই এলাকায় এত ক্যানসারের রুগি? কিন্তু তাতে কাজের কাজ তো কিছু হয়নি। রুগিকে সারাতে পারেনি, বাঁচিয়েও রাখতে পারেনি কারওকে। লোকের ভয় জন্মে গেছে হাসপাতাল সম্পর্কে, সিধুভাই। তারা বলে, ‘সারব না যখন, মরতে হয় তো গ্রামেই মরব।’ কিন্তু এই পরিস্থিতি অসহ্য। ভয়ানক। কী বলব তোমাদের, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে গা খুঁজে খুঁজে দেখি। বিষ কি লাগল? আমার দেখি। বিবির দেখি। ছেলের দেখি। সামান্য একটা তিল জন্মালে মনে হয়, এই বুঝি আক্ৰমণ হল! পা ফাটলে মনে হয়, এই বুঝি ঘা হল। কী আতঙ্কের এই বেঁচে থাকা! কী বলব! কাকে বলব! এই নিয়ে দু’মাসে আটটা বাচ্চা মারা গেল গ্রামে। আমরা কী করতে পারলাম! ডাক্তার রোগ ধরতে পারে না। বলে, বিষাক্ত কিছু খেয়ে থাকতে পারে। বলে, কলকাতায় নিয়ে যাও। কাকে নিয়ে যাব? কোথায় নিয়ে যাব? আমাদের ওপর মৃত্যু যেন থাবা তুলেই আছে। কিলবিলে বিষাক্ত সাপের মতো ঘোরে সারাক্ষণ। আমাদের পায়ে পায়ে ঘোরে ওই বিষাক্ত সর্বনাশ। কী করব? কাকে বলব? আশেপাশের অনেক গ্রামে এই অবস্থা। গ্রামান্তরের সুস্থ লোক আমাদের গ্রামে আসতে চায় না জানো। বলে অভিশপ্ত গ্রাম। বলে, কলাবিবির বন হতে ধুলামাটির পাশে জলঙ্গী পর্যন্ত অভিশপ্ত। ডাকাতির পাপ লেগে আছে এই মাটিতে। জানি না সত্যিই ডাকাতির পাপ কি না। অস্বীকার করব না সিদ্ধার্থ, দশ-পনেরো বৎসর আগেও ডাকাতিই ছিল এই গ্রামের পেশা। কলাবিবির বন এই গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তখন। ষোলো-সতেরো বৎসর বয়সে আমিও গিয়েছি ডাকাতি করতে। যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল এই পেশা। নবাবি আমলে বাদশাহি সড়কের ধারে ওঁত পেতে বসে ডাকাতি করত আমাদের পূর্বপুরুষ। রাস্তায় বাঁশ ফেলে রাখত। পথিক আনমনে বাঁশ পেরোতে গেলেই বাঁশের মাথায় চাপ দিত ডাকাতের দল। লোকে মুখ থুবড়ে পড়ত। তখন তাকে হত্যা করে সব কেড়েকুড়ে নিত। দশ-পনেরো বৎসর আগে পর্যন্ত সেই ডাকাতির পেশা ছিল আমাদের। পুলিশ ধরতে পারত না। কলাবিবির বন ছিল আমাদের আশ্রয়। মাঝখানে শুনেছিলাম কলাবিবির বন কেটে ফেলা হবে। জানি না তারপর কী হল! 

সিদ্ধার্থ জিগ্যেস করল—তারপর? ডাকাতি ছেড়ে দিলে কেন? 

—আব্বাজান ছিলেন গ্রামের মাথা। প্রধান বললে প্রধান। সর্দার বললে সর্দার। ডাকাতি করে অর্থ জমিয়েছিলেন। কিছু কিছু করে জমিয়েছিল সকলেই। আমি যে দু-একবার গেছি ওই কৰ্মে, আমার মন লাগত না। আমার মা ছিলেন ধর্মপ্রাণ মহিলা। আব্বা কোনও এক জায়গা থেকে মাকে তুলে এনে শাদি করেছিলেন। মা বলত, ‘যদি পারিস, এই পাপকর্ম বন্ধ কর। দিনের পর দিন এমন গুনাহ্, ধর্মে সইবে না। জীবন্ত পচে মরবে সব।’ হয়তো মায়ের প্রভাব ছিল আমার ওপর। ডাকাতির পেশা আমি ঘৃণা করতে শিখলাম। পবিত্র প্রাণ বলেই বোধহয়, খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলেন মা। আর সত্যিই পাপ ফুটে উঠল লোকের ঘরে ঘরে। পায়ের তলায় ঘা হয়, সারে না। পা ফুলে ওঠে। হাতে ঘা হয়। চলে-ফিরে বেড়ায় মানুষ, হাতের ঘায়ের জন্য কাজ করতে পারে না। গায়ে কালো-কালো ছিট। শরীরে পচন লাগে। ক্যানসার। কেউ বমি করতে করতে মরে। কেউ সামনে খাবার দিলেও খেতে চায় না। ক্যানসার ধরেছিল বাবাকেও। সারা গ্রামের মন ভেঙে পড়ল। ডাকাতি করার মতো জোস কারও রইল না। এ গ্রামে বৌদ্ধ পরিবার আছে দু’টি। তাদের একজন ভয়ে গলায় দড়ি দিল। আব্বাজি একদিন আমাকে ডেকে বললেন, ‘পালাও। বাঁচতে হলে পালাও মুস্তাকিম। কত লোকের সর্বস্ব লুটেছি। কত লোককে আঘাত দিয়েছি। মানুষের অভিসম্পাত কুড়িয়েছি সারাজীবন। আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা কত নরহত্যা করে কলাবিবির বনে পুঁতে রেখেছে, সেই পাপে, সেই অভিশাপে ছেয়ে গেছে সব। পালাও মুস্তাকিম, পালাও সব ছেড়ে।’ আব্বাজির শেষ অবস্থা তখন। গা থেকে মাংস খসে খসে পড়ছে। দুর্গন্ধে সামনে দাঁড়ানো যায় না। জন্ম হারাম হয়ে যায় এমন সে-গন্ধ! তবু, আব্বার কষ্ট হবে ভেবে নাকে ঢাকা-চাপা দিইনি কোনও দিন! শরীর পচে গিয়েছিল। কিন্তু মাথাটা তো নষ্ট হয়নি! তা, এই বাপকে ছেড়ে পালাব কোথায়? আমার এক ভাই, তার পায়ের তলায় ঘা। পা ফুলে ঢোল। হাঁটতে পারে না। এসব ছেড়ে কোথায় পালাব? কেন পালাব? পালালেই কি পাপ আমাকে ছেড়ে যাবে? অনেক ভাবলাম। কী করা যায়! এ গ্রামে কোনও পঞ্চায়েত নেই। জানো তো? এ গ্রামের কিছু মুর্শিদাবাদে, কিছু নদিয়ায়। কোন জেলা পঞ্চায়েত সামলাবে? তা ছাড়া ডাকাতের গ্রামে আসবে কে? পুলিশ ছাড়া কোনও সরকারি কর্মচারী এ গ্রামে আসে না। রোগ দেখা দেবার পর এখন পুলিশও আসে না। ডাকাতি ছেড়ে দিয়েছে এই গ্রাম। ওরাও জানে। তবু কাছে-পিঠে কোথাও ডাকাতি হলে, খুন-খারাবি হলে, এক-আধবার খোঁজ নিয়ে যায়! নষ্টামির দাগ মানুষের গায়ে লেগে থাকে যে সারাজীবন! সিদ্ধার্থ, এ আমি সার বুঝেছি। যত ভাল কাজই করুক, বিগত জীবনের দায় সে বহন করতেই থাকে, করতেই থাকে। শেষ অবধি কেউ বিশ্বাস করে না মানুষের পরিবর্তন! ভোটের বাবুরা একবার এসেছিল। সেই যেবার ইন্দিরা গাঁধী মারা গেলেন, সেবার। কিন্তু গ্রামের লোকের অবস্থা দেখে সারা গ্রামের কুষ্ঠ হয়েছে ভেবে তারা পালিয়েছে। আর আসে না। কিন্তু সিদ্ধার্থ, বিশ্বাস কর, এগুলো কুষ্ঠ নয়, নওদা হাসপাতালের ডাক্তারও প্রথমে তাই ভেবেছিলেন। পরে জোর দিয়ে বলেছেন, এ কুষ্ঠ নয়। কিন্তু দেখতে লাগে একেবারে কুষ্ঠর মতো। এই, দেখাও না তোমরা। হাত-পায়ের অবস্থা দেখাও। 

একজন লণ্ঠন উস্কে তোলে। নিয়ে আসে কাছে। একে একে আলোর কাছে হাত নিয়ে কেউ, পা নিয়ে আসে। হাত-পায়ের সাদা গলিত ক্ষত দেখে শিউরে ওঠে তারা। সিদ্ধার্থ বুঝতে পারে এতক্ষণে, কেন অনেকে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। এ দৃশ্য দেখামাত্র তৌফিক শক্ত করে ধরেছে সিদ্ধার্থর হাত। সিদ্ধার্থ টের পেল, তৌফিকের হাত ঘামছে। সেই অস্বস্তি বিধছে সিদ্ধার্থকে। কী যেন মনে পড়েও পড়ছে না। কেন এমন হয়? কেন? 

.

মুস্তাকিম বলে চলেছে—আব্বাজির ইন্তেকাল হয়ে গেলে আমরা সবাই বসলাম। অনেক আলোচনা করে ঠিক হল ডাকাতি আর নয়। নতুন করে বাঁচতে হবে। সকলে মিলে চাঁদা দিলাম। বন কেটে পরিষ্কার করে আবাদ করা হল। সেচের জন্য নলকূপ লাগানো হল। 

সিদ্ধার্থ গাঢ় স্বরে বলে তখন—চাষবাসের অভিজ্ঞতা আগে ছিল না তো! 

—না। আস্তে আস্তে শিখেছি। মা লেখাপড়া জানা মানুষ ছিলেন। তাঁর বিদ্যা আমাকে দিয়েছিলেন। মায়ের দৌলতে এ গ্রামে আমিই একমাত্র সাক্ষর। আয়ানচাচা সামান্য পড়তে জানেন। কিন্তু লিখতে জানেন না। মাঝে মাঝে নওদা থেকে খবরের কাগজ, বইপত্র কিনে আনি। পড়ি। 

—বাঃ! 

—ফসল যা ফলে ভাগ করে নিই সকলে। কিন্তু লাভ কী হল? দিন দিন গ্রামে রোগের প্রকোপ বাড়ছে। গত দশ বছরে জন্মের হার কমে গেছে গ্রামে। তারপর এই শিশুমৃত্যু। সিদ্ধার্থ, আমরা হয়তো একদিন গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব। এখানকার মাটির পাপ শোধ তুলছে আমাদের ওপর। দেখ, কত লোক হাতে-পায়ে ঘা নিয়ে বসে আছে। কাজ করতে পারে না। কাজের লোক কমে যাচ্ছে। নৌকা আমাদের বরাবর ছিল। আগে নিজেদের খাবার জন্য মাছ ধরা হত, আর বর্ষায় গ্রাম ডুবে গেলে কিছুদিন নৌকাবাস করতে হত। এখন মাছ ধরে বিক্রি করাও আমাদের অনেকের জীবিকা। যে কোনও সাধারণ গ্রামের মতোই জীবন কাটাচ্ছি আমরা। কিন্তু পাপ আমাদের ছাড়ছে কই! 

—এখন জল ঢোকে না গ্রামে? জলঙ্গীর পাড়ে কি বাঁধ আছে? 

—জল ঢোকে। বাঁধ নেই। তবে প্রাকৃতিকভাবে নদীর পাড় উঁচু হয়ে দিয়াড় সৃষ্টি করেছে। এই দিয়াড়ের জন্য প্রতি বর্ষাতেই আমাদের গ্রাম ভাসে না। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টি পড়লে জল আসে। কালান্তর নিম্নভূমি অঞ্চলে পড়ে তো এই গ্রাম। এখানে জল দাঁড়ায় অধিক দিন। 

—কী করো তখন? 

—আগে নৌকায়-নৌকায় ভাসতাম। এখন ঘরে ঘরে রোগী। তাদের নিয়ে নৌকায় ভাসা কঠিন। নিজেরা ইট তৈরি করে চুন-সুরকি দিয়ে একটা বড় দোতলা বাড়ি বানানো হয়েছে। বাড়ির তিন পাশে তিনটি ধর্মক্ষেত্র করা হয়েছে। একটিতে হিন্দুরা রেখেছে শিবলিঙ্গ। একটিতে বৌদ্ধরা বুদ্ধমূর্তি রেখেছে। একটিতে মুসলমানের মসজিদ। আগে গ্রামে এসব কিছুই ছিল না। এখন ধর্ম করে পাপ কমানোর চেষ্টা করছি আমরা। আর ওই বাড়িতে এমনিতে কেউ থাকে না। গ্রামে জল ঢুকলে, ঘরে ঘরে জল ঢুকলে, আমরা সব ওই বাড়িতে উঠে যাই। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকি। 

সিদ্ধার্থর মনে হল, এই গ্রামে ওই অসুখ না থাকলে গ্রামটি আদর্শ হিসেবে পরিগণিত হতে পারত। কিন্তু রোগ সত্ত্বেও এখনকার বহু কিছু দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপিত করা যায়। কোনও সরকারি সাহায্য ছাড়া, কোনও পঞ্চায়েত সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের সহায়তা ছাড়াই এই গ্রাম হয়ে উঠেছে স্বয়ং সম্পূর্ণ। এই এত কিছু দশ বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়ে তোলার কাজ নিশ্চয়ই সহজ ছিল না। তা ছাড়া ডাকাতির ধারাবাহিক পেশা এবং উপার্জন ছেড়ে সকলের আদর্শ গৃহস্থ হয়ে ওঠাও খুব অনায়াসে ঘটতে পারে না। সে উপলব্ধি করে, অপরিসীম নেতৃত্বক্ষমতা আছে এই মুস্তাকিম ছেলেটির। এই বয়সেই গ্রামের সকলের মাথা হয়ে উঠেছে সে তার গুণেই। 

কিন্তু একটি গ্রাম খাদ্যে স্বয়ম্ভর হলেই তার সমস্ত প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় না। চাহিদা থাকে আরও অনেক কিছুর। সভ্যতার পক্ষে যা ন্যূনতম। যেমন স্কুল, হাসপাতাল, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ। সরকারি সাহায্য ছাড়া এইগুলি সম্ভব নয়। সে স্থির করে, এ বিষয়ে মুস্তাকিমের সঙ্গে কথা বলবে। তাকে জানাবে তার সব কাজের পরিকল্পনা। এই অঞ্চলের সংগঠনের দায়িত্ব সে দেবে মুস্তাকিমকে। মুস্তাকিম পারবে এ কাজ। দরকার হলে রাসুদাকে বলবে সে মুস্তাকিমের কথা। এখনও এ দেশের গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুৎবিহীন। সড়ক নেই। রেলপথ নেই। স্কুল নেই। স্কুলবাড়ি থাকলেও শিক্ষক নেই। হাসপাতাল নেই। হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসক নেই। ওষুধ নেই। ওষুধ যদি আসেও, চোরাবাজারে তা বিক্রি হয়ে যায়। সমগ্র পরিস্থিতির মধ্যে যেন এক গভীর অসুখ। অসততার গভীর অসুখ। ধুলামাটি গ্রাম যেন সমগ্র ভারতের প্রতীক। তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কেবলই পচন, কেবলই খসে খসে পড়া হাড়-মাস। 

চাঁদের জ্যোৎস্না বিকিরণে ছেদ নেই। উদার আকাশে তারার অফুরান বৈচিত্র্য। অথচ আজ এই অঢেল জ্যোৎস্নায়, কোজাগরী পূর্ণিমার প্রালগ্নে, এ গ্রামে মৃত্যু এসে গেছে। দূরে উঠেছে হরিধ্বনি। ওই তারা ছোট মেয়েটির শবদেহ নিয়ে চলল। বলহরি হরিবোল, বলহরি হরিবোল। 

সকলে স্তব্ধ হয়ে আছে। জ্যোৎস্নায় ওই মৃত শিশুর পাণ্ডুর মুখ দেখে বুঝি-বা কেঁদে উঠছে চাঁদও স্বয়ং। 

বহুক্ষণ পর, হরিধ্বনি সম্পূর্ণ মিলিয়ে গেলে, মুস্তাকিম বলল—মাঝে মাঝে গভীর রাত্রে ঘুম ভেঙে যায়। মনে হয়, আর ক’দিন বাঁচব! বাঁচব না! নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব! তখন খুব ভয় করে। কান্না পায়। মনে হয়, হায় খোদা, এ জগৎ এত সুন্দর করে গড়েছ, কার জন্য? যদি মানুষকে দীর্ঘায়ু না-ই দাও, তবে কেন এই সৌন্দর্য? রুবাই জানো সিদ্ধার্থ? রুবাই? শোনো তবে। 

এক হুঁকসে দিল মে উঠতি হ্যায় 
এক দর্দ জিগর মে হোতা হ্যায়
ম্যায় রাতো উঠ উঠ রোতা হুঁ 
যব সারা আলম শোতা হ্যায় 

সিদ্ধার্থর গলায় কান্না উঠে এল। স্তব্ধ হয়ে বসে রইল সে। এই ডাকাতিয়া গ্রাম তার বুকের মধ্যে কেটে বসে যাচ্ছে। মুস্তাকিম বলছে—ভেবেছিলাম সব হবে। আস্তে আস্তে সব হবে। স্কুল। হাসপাতাল। আমার জোনাকি বড় হলে বলবে না আমার বাবা ডাকাত ছিল। বলবে, আমার বাবা, আমাদের গ্রাম সম্পর্কে যত আত্মীয়-পরিজন, তাঁরা গড়েছিলেন এইসব। এই মন্দির, মসজিদ, হাসপাতাল, স্কুল। এত রোগ, এত মৃত্যু! কীভাবে কী হবে! 

হাম নে ভি কভি যামে সবু দেখা থা 
যো কুছ কহনা থা ও রুবরু দেখা থা
অব জিস বাত কো অর করতে হো নবাব 
যো খাব সা থা ও কভি দেখা থা 

তখন হঠাৎ, একেবারে হঠাৎ, সিদ্ধার্থর মস্তিষ্কে বিঁধে থাকা বিস্মৃতির অন্ধকার কাঁটা উপড়ে নিল কেউ। তার মনে পড়ে গেল আর্সেনিক! এই সমস্ত লক্ষণের কারণ, রোগের কারণ আর্সেনিক! কয়েক বৎসর হল আবিষ্কৃত হয়েছে ভূগর্ভস্থ এই বিষাক্ত প্রভাব। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিস্তৃত অঞ্চল এর কবলিত। 

সে জ্বলজ্বলে চোখে মুস্তাকিমের হাত চেপে ধরল। বলল— সাহস হারিয়ো না মুস্তাকিম। আমার মনে হচ্ছে, এখানকার মাটিতে দোষ আছে। পাপ নয়। অভিশাপ নয়। জল ও মাটি থেকেও রোগ আসে। ভেঙে পড়ো না। মুস্তাকিম আমরা এখানে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসব। মাটি পরীক্ষা করাব। ব্যবস্থা একটা হবেই। দেখো। আস্থা রাখো। মনে জোর রাখো। 

—তোমাকে দেখে মনে জোর পেয়েছি আমি সিদ্ধার্থ। তোমাকে আমি চিনেছি। তুমি যখন এসেছ এ গ্রামে, পাপ কেটে যাবে। 

—ওসব নয়, পাপ নয়, কাজ করতে হবে আমাদের মুস্তাকিম। অনেক কাজ। কাল অনেক কথা বলব তোমাকে। 

—আমিও বলব তোমাকে, অনেক কথা। 

রাত বাড়ছে। গভীর বিষাদ মেখে ভাত খেল তারা। শুতে গেল। দুলুক্ষ্যাপা আসেনি। হয়তো সে থেকে যাবে অন্য কোথাও। 

দারুণ মানসিক চাপ থাকা সত্ত্বেও দ্রুত ঘুম নেমে এল তাদের চোখে। সিদ্ধার্থ জানে না কখন, চাপা কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল তার। সে উঠে বসল। পাশের ঘর থেকে আসছে কান্না। কী হল? সে একবার ভাবল, হতে পারে কোনও ব্যক্তিগত বিষয়। পরক্ষণে আশঙ্কা হল তার। জোনাকির কিছু হল না তো? অঘোরে ঘুমোচ্ছে বসির খান ও তৌফিক। সিদ্ধার্থ উঠল। মুস্তাকিমের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে চাপা গলায় ডাকল—মুস্তাকিমভাই! কী হয়েছে! 

দরজা খুলে দিল মুস্তাকিম। লণ্ঠনের আলোর একফালি পড়েছে তার মুখে। সেই আলো-আঁধারিতে সিদ্ধার্থ দেখতে পাচ্ছে মুস্তাকিমের উদভ্রান্ত মুখ। ডুকরে উঠছে সে সিদ্ধার্থ! জোনাকির জ্বর বেড়েছে। খিঁচুনি হচ্ছে ওর। 

কেঁপে উঠল সিদ্ধার্থ—কোথায়? এই তো ভাল ছিল। 

—ভাল ছিল। ভাত খেল। ওর কিছু হলে আমি মরে যাব সিদ্ধার্থ। মরে যাব। 

সিদ্ধার্থকে জড়িয়ে হু-হু করে কাঁদতে থাকল মুস্তাকিম। সিদ্ধার্থ বলল—শোনো, শোনো মুস্তাকিম। চলো, আমরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। 

—হ্যাঁ, হ্যাঁ চলো। লড়ে যাব। শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। হায় হায়! আজকে সকালেই কেন নিয়ে গেলাম না! 

নিজের গালে নিজেই সপাটে চড় মারে মুস্তাকিম। সিদ্ধার্থ তার হাত ধরে। বলে—চলো। দেরি কোরো না। 

—চলো, চলো। রাধানগর পর্যন্ত হেঁটে যাব। তারপর ট্রাক বা কিছু পেয়ে যাব। কী বলো! 

—চলো। দেখি। 

আগাগোড়া কম্বলে মুড়ে মায়ের কোল থেকে ছেলেকে তুলে নিল মুস্তাকিম। তার বিশাল বুকে লেপটে রইল জোনাকি। 

মুস্তাকিমের বিবি জেসমিনা ফুঁপিয়ে উঠল। মুস্তাকিম বলল— কেঁদো না। মোনাজাত করো। ওকে ফিরিয়ে আনব জেসমিনা। তোমার কোলে ফিরিয়ে দেব। দরজা বন্ধ করে দাও। 

জেসমিনা উপুড় হয়ে পড়ল মাটিতে। ডুকরে উঠল। আর লাজ রইল না। হায়া রইল না। আবরুর কথা ভাবল না। মাথা খুঁড়ে খুঁড়ে বলতে লাগল—ওগো, ওকে ফিরিয়ে দিয়ে যাও। আমার বুক খালি করে দিয়ো না ওগো! 

মুস্তাকিম ধমকে উঠল—পাগলামি কোরো না। ওকে ডাক্তার দেখাতেই হবে। ওঠো! দরজা বন্ধ করে দাও! 

আর কারওকে ডাকবার, বুঝিয়ে বলে সঙ্গে নেবার সময় নেই। এক বিন্দু সময় নেই নষ্ট করবার মতো! দু’জনে প্রায় ছুটতে লাগল এবড়ো-খেবড়ো পথে। একা চাঁদ সাক্ষী রইল এই দৃশ্যের। মুস্তাকিম বলল— কলাবিবির বনের মধ্যে দিয়ে রাধানগর যাবার একটি সংক্ষিপ্ত পথ আমি জানি। তোমার কি ভয় করবে সিদ্ধার্থ? 

—না মুস্তাকিম। সংক্ষিপ্ত পথেই চলো। 

মুস্তাকিমের সঙ্গে সঙ্গে বনে প্রবেশ করল সিদ্ধার্থ। এঁকেবেঁকে ঊর্ধ্বশ্বাসে চলেছে মুস্তাকিম। সে-ও চলেছে। মুস্তাকিমের বুকে কেঁপে কেঁপে উঠছে জোনাকির দেহ। গাছের খোঁচা লেগে তাদের হাত-মুখ কেটে ছড়ে যাচ্ছে। তারা পরোয়া করছে না। ভয় নয়, কেবল এক বিস্ময়, কেবল অসহায় বেদনা ঘিরে থাকছে সিদ্ধার্থকে। কাছাকাছি একটা হাসপাতাল নেই! হায়! এক প্রাণ! কী অমূল্য এক প্রাণ বাঁচাবার তাগিদে ছুটে যাচ্ছে তারা! কী অসম্ভব, অবাস্তব এই প্রচেষ্টা! কেন? কেন? কেন? 

কতক্ষণ ছুটছে তারা? কতক্ষণ? সিদ্ধার্থ পেটে চিনচিনে ব্যথা টের পাচ্ছে। কণ্ঠ শুকিয়ে গেছে তার। খসখসে হয়ে উঠেছে জিহ্বা। হৃদপিণ্ডে দ্রুত দ্রুত দ্রুত ধাবন! তার মনে হচ্ছে, সে তো খালি হাত, তবু তার এই কষ্ট হচ্ছে। মুস্তাকিম কতক্ষণ ধরে আছে শিশুটাকে! সে ডাকল- মুস্তাকিমভাই। দাও আমাকে। 

— অ্যাঁ? 

যেন কোন ঘোরের মধ্যে থেকে উঠে এল মুস্তাকিম। সরসর শব্দ হল জঙ্গলের ভেতর। ক্যাক ক্যাক শব্দ করে উড়ে গেল রাতপাখি। সিদ্ধার্থ হাত বাড়িয়ে বলল—ওকে দাও। 

কোনও কথা না বলে সিদ্ধার্থর হাতে ছেলেকে তুলে দিল মুস্তাকিম। হাঁপাচ্ছিল সে-ও। এক হাত দিয়ে অন্য হাত মালিশ করতে করতে হাঁপ ধরা গলায় একবার ডাকল— জোনাকি! সোনা আমার! 

কঁকিয়ে উঠল জোনাকি। সিদ্ধার্থ টের পেল তার বুকের মধ্যে কেঁপে কেঁপে উঠছে শিশুটি। কত দূর? আর কত দূর? তার নিজের পায়ের শিরায় টান পড়েছে। এই মুহূর্তে নিজের কষ্ট নিয়ে ভাববার অবকাশ নেই। সে কখনও নিজের যন্ত্রণাকে গুরুত্বও দেয়নি। সে একবার চোখ বন্ধ করল। জোনাকি সেরে উঠুক—এই কামনায় 

অতঃপর দেখা দিল সেই বহু প্রত্যাশিত সড়ক। রাস্তার প্রায় মধ্যিখানে দাঁড়াল দু’জনে। অস্থির পায়চারি করছে মুস্তাকিম। হাতে হাত ঘষছে। চুলগুলো ধরছে মুঠোয়। মাথা ঝুঁকিয়ে দিচ্ছে বুকে এবং বড় শ্বাস নিয়ে তাকাচ্ছে আকাশের দিকে। অপেক্ষা অনন্তের। কিন্তু ক্ষণমাত্র অপেক্ষার স্থৈর্য তার নেই। প্রায় আধঘণ্টা পর একটা ট্রাক পেল তারা। মুস্তাকিম ছেলেকে কোলে নিয়েছে আবার। তাদের কাছে বৃত্তান্ত শুনে ছুটে চলেছে ট্রাক। মিনিট কুড়ি সময় লাগল তাদের রাধানগর থেকে নওদা পৌঁছতে। রাস্তার ধারে ট্রাক থেকে নেমে আবার ছুটল দু’জনে। হাসপাতাল, হাসপাতাল। হাসপাতাল নিকটবর্তী এখন। পৌঁছল তারা। কিন্তু এখন এই মধ্যরাতে ডাক্তার কোথায়? কর্তব্যরত নার্স শিশুটিকে দেখে গম্ভীর হয়ে গেল। জোনাকি আর নড়ছে না। তার চোখ বন্ধ। টিক টিক টিক টিক। চলে যাচ্ছে সময়। চলে যাচ্ছে। মেঝেয় বসে পড়েছে মুস্তাকিম। জোনাকির শিয়রে দাঁড়িয়ে আছে সিদ্ধার্থ। মনে মনে বলছে সে—জোনাকি! তাকা! ফিরে আয়! মায়ের বুক থেকে নিয়ে এসেছি তোকে। 

মুখে-চোখে একরাশ বিরক্তি মেখে ডাক্তার এলেন। পরীক্ষা করলেন। মাথা নাড়লেন। শেষ। কখন নিভে গেছে জোনাকি! কার বুকে? সিদ্ধার্থর না মুস্তাকিমের? কার দেহে সংলগ্ন হল তার শেষ বিন্দু প্রাণ? 

.

কোনও কথা বলল না মুস্তাকিম। কাঁদল না। তার সমস্ত চাঞ্চল্যের অবসান হয়ে গেছে। কবর দিতে মৃত্যুর ও চিকিৎসকের শংসাপত্র লাগে না তাদের গ্রামে। মানুষের শোচনাই সেখানে শেষযাত্রার যথার্থ ছাড়পত্র। জোনাকিকে বুকে তুলে নিল সে। আগের মতোই। কম্বলে জড়ানো। হাঁটতে লাগল। এবার কোনও তাড়া নেই। ধীরে ধীরে চলেছে তারা। যেন, কোথাও যাবার নেই। পৌঁছবার নেই। 

আবার একটি ট্রাকে উঠল তারা। রাধানগর নামল। প্রবেশ করল কলাবিবির বনে। মৃত শিশুটিকে মুস্তাকিমের হাত থেকে নিল সিদ্ধার্থ। আর বুকে স্পর্শমাত্র কেঁপে উঠল! আর কত মৃত্যু বুক অবধি উঠে আসবে তার? কত? আর কত? সে মৃত শিশু বুকে আঁকড়ে নিদ্রাভিভূতের মতো চলতে থাকল। 

ফিকে হয়ে এসেছে আকাশ। তারা কলাবিবির বন পেরুচ্ছে। হঠাৎ বসে পড়ল মুস্তাকিম। হাত বাড়িয়ে বলল—দাও। 

ছেলেকে নিল সে। কোলে শোয়াল। চারপাশে তাকাল। বলল—কত মৃতদেহ পোতা আছে এই বনে। তাদের অভিশাপ। 

হাউহাউ করে কেঁদে উঠল সে। জোনাকি, আমার জোনাকি! বেটা… 

মুস্তাকিমের কাঁধ জড়িয়ে বসল সিদ্ধার্থ। তারও কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কাঁদছে সে। কাঁদছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে পরিচয় হওয়া এক মানুষের মৃত সন্তানের জন্য কাঁদছে। যন্ত্রণায় কাঁদছে! অপার অসহায়তায় কাঁদছে! এক মৃত শিশুকে কোলে নিয়ে সারা বন আলোড়িত করে কাঁদছে দুই পুরুষ। 

বেশ কিছুক্ষণ। 

তারপর সংযত হল তারা। 

দাঁড়াল। 

মুস্তাকিম বলল—জেসমিনার ছেলে, জেসমিনাকে ফিরিয়ে দিই। 

চলল তারা। 

রোদ উঠল। 

ঘুরে দাঁড়াল মুস্তাকিম। 

সিদ্ধার্থর মুখোমুখি। 

বলল—সিদ্ধার্থ! আমার ছেলে মরে গেল কোন পাপে? 

সিদ্ধার্থ বলল— হাসপাতাল নেই বলে। পাপ নয়। 

—সিদ্ধার্থ। আমার মৃত সন্তানকে বুকে করে এনেছ তুমি। তোমার ও আমার আর কোনও দূরত্ব নেই। 

—না। নেই। 

—আমি রইলাম। তোমার জন্য। তোমার সব কাজে আমাকে পাবে। 

—মুস্তাকিম। 

—বলো। 

—একটা দেশ গড়ার জন্যে, একটা সুন্দর দেশ, যেখানে শিশুরা বিনা চিকিৎসায় মরে না এমন একটি দেশ গড়ার জন্যে, যদি প্রয়োজন হয়, হাতে অস্ত্র নেবে? 

—নেব। যদি তুমি বলো। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *