2 of 3

রাজপাট – ৮০

৮০

তারপর সাত-দিন সাত-রাত কেটে গেল পৃথিবীর আলো-অন্ধকারে
আবার চলেছি উড়ে একা একা শকুনের কালো পাখা মেলে 
পৃথিবীতে তাহাদের দেখিয়াছি-আজো তারা মনে করে রেখেছে আমারে
ভালোবাসে; রক্তমাংসে থাকিতাম তবু যদি—আমার এ সংসর্গের 
ভালোবাসা পেলে, 
রোজ ভোরে রোজ রাতে আমারে নতুন ক’রে পেলে 

গায়ে চাকা চাকা দাগ ছিল তার। কবজিতে আঙুলের ছাপে কালশিটে। ঝুলন্ত জিভ কেটে দাঁত বসে গিয়েছিল। দু’টি বিস্ফারিত চোখে রক্ত জমা 

আত্মহত্যার কোনও প্রমাণ, চিহ্ন রেখে যায়নি সে। রেখে যায়নি কোনও বিবৃতি 

খাবার টেবিল ও চেয়ার সম্বল করে অতখানি উপরে সে কী প্রকারে উঠেছিল! তা হলে কি, তা হলে কি, মেরে, হত্যা করে, ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাকে? 

কে তাকে মেরেছিল? 

হাতে তার কেন ওই কালশিটে ছাপ? 

সে মারা গেছে ভোরবেলা। চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যে যে-কোনও সময়। তখন কে ছিল ঘরে? কে ছিল? 

হারাধনকে নিয়ে গেছে পুলিশ। ‘আমি মারিনি ওকে’—তার কাতর এ আবেদন শোনেনি কেউ। জনতা আগুন-চোখে তাকিয়েছে তার দিকে। সে যে প্রহৃত হয়নি, তার কারণ একমাত্র নিখিলেশ বাঁচিয়েছেন তাকে। তার জন্য কৃতজ্ঞ সে। কৃতজ্ঞ সবিশেষ। 

এই বিপদে, বিমূঢ় সে, বারবার ডেকেছিল মৌসুমিকে। আসেননি মৌসুমি। সে ডেকেছিল সিদ্ধার্থকে। সিদ্ধার্থ শহরে ছিল না। বরং খবর পেয়ে বসির খান এসেছিল থানায়। সে-ই খবর দিয়েছিল পেতনির চরে। নাড়ুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল নারান মুদি। গাল ভিজিয়ে কেঁদেছিল লোকটা। আটচল্লিশ ঘণ্টা হয়ে গেছে সে রয়েছে পুলিশের হেফাজতে। আর চব্বিশ ঘণ্টা থাকলেই চাকরি মুলতুবি হয়ে যাবে তার। 

সব গেছে! সব গেছে! সে বসে আছে দেওয়ালের দিকে মুখ করে। সে কি পাপ করেছিল? এই কি পাপের শাস্তি? তার মা আলতা রেগে গেলে বলত— যমালয়ের ফুটন্ত তেলের কড়াই পরপারে থাকে না। থাকে ইহকালেই। পাপের শাস্তি এক জীবনেই ভোগ করে মানুষ! 

এই কি পাপের শাস্তি? কোন পাপ? বিবাহিতা স্ত্রীকে অপমান করা! অবহেলা করা! ভাবছে সে। একবারও মনে হচ্ছে না তার, মৌসুমি-গমনের কথা! সেইখানে পাপ হবে কেন! সেইখানে অনাবিল সম্পর্ক তাদের! পবিত্র সম্পর্ক! সেই নিয়ে ভরে আছে সে। বসে আছে অপেক্ষায়। সিদ্ধার্থ কবে আসবে? একজন উকিলের ব্যবস্থা সে কি করবে না? 

বয়স তার সাতাশ বৎসর। এরই মধ্যে সব গেল তার? কেন গেল? পাপে? পাপে? পাপের ফলাফল এতই সহজে লভ্য তবে! 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *