রমণী – রবার্ট শেকলে

রমণী – রবার্ট শেকলে

মরচেকের ঘুম ভেঙে গেল… মুখে অম্ল আস্বাদ। কানের মাঝে একটানা হাসির ঝঙ্কার। জর্জ ওয়েন ক্লার্কের বিদ্রূপমেশানো হাসি… গত রাতে ট্রায়ার্ড মর্গানের পার্টিতেই ঘটনার সূত্রপাত। সত্যিই মনে রাখার মতো পার্টি। শতাব্দীর শেষ রজনীকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যে সারা পৃথিবী যেন উন্মাদ হয়ে উঠেছিল। হ্যাঁ ৩০০০ সাল! ধনধান্যে পুষ্পে ভরা পৃথিবী… সমৃদ্ধি আর শান্তির যুগলবন্দীতে পৃথিবী আজ রীতিমতো নন্দনকানন।

পানীয় ছাড়া পার্টি হয় না। প্রত্যেকের হাতেই গ্লাস… রঙিন পানীয় টলটল করছে… আর টলটল করছে সকলের মানসিক অবস্থা। এমন মুহূর্তে ওয়েন ক্লার্ক এক বেখাপ্পা প্রশ্ন করে বসল। কণ্ঠস্বরে ঈষৎ ব্যঙ্গের আভাস।–বলো তো… তুমি সুখী তো? আরে না না… অন্য কথা নয়… সুন্দরী স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্যজীবন কেমন কাটছে… তাই জানতে চাইছি আর কি?

বেখাপ্পা প্রশ্ন। অশালীনও বটে। সকলেই জানে ওয়েন ক্লার্ক প্রাচীনপন্থী। কিন্তু তাই বলে পরের দাম্পত্যজীবনে নাক গলাবে! দুঃসহ। তোর ভালো লেগেছে তুই না হয় এক আদিম মেয়েকে বিয়ে করেছিস, তাই বলে…

–কী বলতে চাইছিস? স্ত্রীকে নিয়ে আমি খুবই সুখী। আমি ভালোও বাসি খুব। যেমন নিখুঁত দেখতে তেমনি সব কাজে পারদর্শিনী… তোর বউয়ের মতো রাশি রাশি নার্ভ, শিরা, উপশিরা আর মুডের বান্ডিল নয়! বেশ গর্বভরে মুখের ওপরে বলে দিলাম। পানীয়ের ঘোরে সবই যেন বেশি বেশি মনে হয়।

মনে মনে হোঁচট খেল ওয়েন ক্লার্ক। একটু আমতা আমতা করে বলল– রেগে যাচ্ছিস কেন… আমাকে ভুল বুঝিসনি… আমি বলছিলাম কী, তোর বয়স হচ্ছে… সব দেখে চলা ভালো… মনে হয় তোর স্ত্রীর চেক আপ-এর প্রয়োজন। কয়েকদিনের মধ্যে ওর রিফ্লেক্স লক্ষ করেছিস?

সব কথা মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্বাঙ্গে যেন বিছুটির জ্বালা ধরল। গাধা… সন অব এ বিচ! মনে মনে গালাগাল দেওয়াতে মনটা হালকা হল তার। বিছানায় সর্বাঙ্গ এলিয়ে দিল। পর্দার ফাঁক দিয়ে ভোরের নূর্য উঁকি মারছে। মায়রার রিফ্লেকস! ওয়েন ক্লার্ক তো শত্রু নয়। মুখে স্বীকার না করলেও মনে মনে ভাবল সে…সত্যিই তো ইদানীং কেমন কেমন যেন মনে হয়। কাজকর্ম কেমন যেন শ্লথ ধীর।

–মায়রা! চিৎকার করে ডাকল মরচেক। আমার কফি হয়েছে? কয়েক মুহূর্ত সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে গেল। পরক্ষণেই একতলা থেকে মায়রার কণ্ঠস্বর ভেসে এল এক মিনিটের মধ্যে হয়ে যাবে।

মরচেক দু’পায়ে চটি গলিয়ে কোনওরকমে উঠে বসল। চোখে তখনও ঘুমের রেশ। মনে মনে শতাব্দীকে ধন্যবাদ জানাল… ওর জন্যেই না পরপর তিনদিন ছুটি। কেবল উৎসব আর হইহুল্লোড়… খানাপিনা আর ফুর্তির জোয়ারে গা ভাসিয়ে দাও।

নিচে মায়রার কর্মব্যস্ততার আভাস পাওয়া যাচ্ছে… কাপের শব্দ.. কফির ফর-র-র… টেবিল সাজানোর আওয়াজ… চেয়ার সাজানোর শব্দ… কান পেতে শুনল মরচেক। নিচে নেমে চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীর আলিঙ্গন আর উষ্ণ চুম্বনে সব সন্দেহ মুহূর্তে দূর হয়ে গেল তার। চুলবিহীন টাকে কেমন করে হাত বোলায় মায়রা। মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়াটাই মরচেকের অন্যতম বিলাসিতা।

–আমার সুন্দরী স্ত্রী কেমন আছ? ভালোবাসার রসে ভিজিয়ে রহস্যভরে জিজ্ঞেস করল মরচেক।

–দারুণ! অপূর্ব! কেমন যেন থেমে থেমে উচ্চারণ!… দেখ… তোমার জন্যে সেফিনার তৈরি করেছি… সেফিনার তোমার খুব পছন্দ।

সন্দেহ বড় বিষম বস্তু। সন্দেহের মতো আঠা বোধহয় আর কিছু নেই। লাগলে আর ছাড়তে চায় না। মায়রার সব কথাগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ করল মরচেক। স্বতঃস্ফূর্ত

ঝরঝরে নয়! ভাবতে ভাবতে পেয়ালায় চুমুক দিল কয়েকবার।

–সকালবেলায় কেমন লাগছে তোমার? আবার প্রশ্ন মরচেকের। টোস্টের ওপরে একমনে মাখন লাগাচ্ছে মায়রা। মাখন লাগানো বন্ধ করে বলল- বেশ ভালো লাগছে… তুমি তো জানো কালকের পার্টিতে দারুণ হইচই হয়েছে… আমার যে কী ভালো লেগেছে।

–হ্যাঁ, যা বলেছ… আমার আবার একটু নেশ হয়েছিল। চিন্তিত মনে উত্তর দিল মরচেক।

–সত্যি বলতে কী… তোমার নেশা হলে আমার দারুণ ভালো লাগে… তখন তোমার কথা বলার ভঙ্গি… সুন্দর সুন্দর কথা… ঠিক যেন দেবদূতের মতো। মানে খুবই স্মার্ট আর বুদ্ধিদীপ্ত মনে হয়… মনে হয় এমন কথা যদি সারা জীবনভর শুনতে পেতাম! কথা বলতে বলতে আরও একটা টোস্ট-এ মাখন লাগাল মায়রা।

কথা না বলে কয়েক পলক মায়রার মুখের দিকে তাকাল মরচেক… কী মুখশ্রী.. স্বর্গীয় দেবীর মতো। পরক্ষণেই সন্দেহের কালো মেঘে ঢাকা পড়ে গেল ওর মন। গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল–মায়রা, কাল পার্টিতে ওয়েন ক্লার্কের সঙ্গে কথা হচ্ছিল… ও তো আদিম মেয়েদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

মায়রার মুখে কোনও কথা নেই। আপন মনেই সে পাঁচ নম্বর টোস্টে মাখন বাগিয়ে চলেছে… একের পর এক টোস্ট প্লেটে জমে উঠেছে। সেদিকে ওর খেয়াল নেই। ছয়-নম্বর টোস্টও তুলে নেবার সঙ্গে সঙ্গে মরচেক ওর হাত স্পর্শ করল। চমকে উঠল মায়রা। মুহূর্তে সম্বিত ফিরে এল তার।

আদিম মেয়েদের কথা আর বোলো না… মান অভিমান আর অহংবোধের সমষ্টিমাত্র। কিন্তু হঠাৎ এদের কথা কেন? তুমি কি আমাকে নিয়ে সুখী নও মরচেক? বলো… আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলো। আমি আধুনিক, কিন্তু আমার মতো ভালোবাসার কলাকৌশল আদিম মেয়েরা জানবে কেমন করে?

মায়রার কথাগুলো মিথ্যে নয়। ইতিহাসের বিচারে অকৃত্রিম রমণীদের সঙ্গে ঘর করে পুরুষ মানুষ কখনওই নিরবচ্ছিন্ন সুখভোগ করেনি। করতে পারে না… কারণ আদিম বা অকৃত্রিম মেয়ের অহংবোধ প্রবল… ফলে নানান দুর্বলতার শিকার… শুধু কি তাই? সারাজীবন ধরে পুরুষ মানুষকে শুধুই ওদের মন যুগিয়ে চলতে হবে। আদরযত্নের ঘাটতি হলে তুলকালাম কাণ্ড হবে। ওয়েন ক্লার্ক কী করে যে আদিম মেয়েদের অত্যাচার সহ্য করে কে জানে… প্রয়োজনে স্ত্রীর হুকুমে এঁটো বাসন-কোসনও পরিষ্কার করে দিতে হয় ওয়েনকে। আদিম মেয়েদের টাকার খিদের শেষ নেই… টাকা দাও আর সেই টাকায় ওরা জামাকাপড় আর প্রসাধনসামগ্রী কিনবে। চাহিদার শেষ নেই… প্রাতঃকালে বিছানায় জলখাবার দিতে হবে… সঙ্গে করে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে… টেলিফোনে কথা বলা শুরু করলে শেষ হবে না… আর অন্য মেয়েদের দিকে নজর দিলেই সন্দেহ আর বাঁকা বাঁকা কথা… উঃ, কথা নয়ত, যেন জ্বলন্ত শানানো ছুরি! এখানেই শেষ নয়… পুরুষদের কাজেও ওরা ঢুকে পড়েছে… পুরুষদের সঙ্গে সমান অধিকারের দাবিদার… আইনের সাহায্যে সে স্বীকৃতিও ওরা আদায় করে ছেড়েছে। এসব কথা মনে এলেই মরচেকের সর্বাঙ্গে জ্বালা ধরে যায়।

ওয়েন ক্লার্কের মতো বেশ কিছু বুদ্ধ এখনও আদিম মেয়েদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

মায়রার নিখুঁত ভালোবাসায় মরচেকের ঘুম ঘুম ভাব কেটে যায়। মরচেকের পছন্দসই ভালোবাসায় মায়রা তৈরি হয়েছে। আপন মনেই খেয়ে চলে মরচেক। মায়রা অনেক ভোরে খেয়ে নিয়েছে। নচেৎ মরচেকের প্রতি পুরো মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। কখন কোনটার প্রয়োজন মায়রার সব মুখস্ত। তার ফলেই মরচেকরা নিরবচ্ছিন্ন সুখ ভোগ করে।

–মায়রা, ওয়েন ক্লার্ক কী বলে জানো? তোমার চটজলদি প্রতিক্রিয়া নাকি বেশ মন্থর হয়ে পড়েছে।

সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল না মায়রা। কয়েক মুহূর্ত পরে বলল– আদিম মেয়েদের পাল্লায় যারা পড়েছে, তাদের কথা আর বোলো না… ক্রমে ক্রমে তোমার বন্ধুও সেকেলে হয়ে উঠছে।

ওঃ, একেবারে মরচেকের মনের মতো কথা! কিন্তু মায়রা যে মন্থর হয়ে পড়েছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে যে উত্তর দেবার ক্ষমতা ছিল তার, এখন সেটাই যেন একটু শ্লথ হয়ে গেছে। আরও কয়েকটা প্রশ্ন করল মরচেক। সামনেই দেওয়াল ঘড়ি… সেকেন্ডের কাঁটা অনুযায়ী উত্তর দিতে বেশ কয়েক সেকেন্ড লাগল মায়রার। আবার দ্রুত প্রশ্ন করল মরচেক।

–কোনও চিঠি এসেছে? কেউ ফোন করেছিল নাকি? আজ নতুন কী রান্না হবে?

বড় বড় চোখ করে মরচেকের দিকে তাকিয়ে রইল মায়রা। এক সেকেন্ড দু’ সেকেন্ড তিন সেকেন্ড… মনে মনে প্রমাদ গুনল মরচেক। চার সেকেন্ডের মাথায় মুখ খুলল মায়রা, কিন্তু কিছু বলার চেষ্টা করেও বলতে পারল না। বেশ ভালো রকম গড়বড় হয়েছে… মনে মনে ভাবল মরচেক।

বিশ্বাস করো… আমি তোমায় ভালোবাসি মরচেক। আয়তনেত্র ভাবলেশহীন, কেমন যেন অসহায় মায়রা।

মরচেকের হৃৎপিণ্ড দ্রুত চলতে শুরু করল। অব্যক্ত যন্ত্রণায় বুকটা টনটন করে উঠল। মরচেকের ভালোবাসায় কোনও খাদ নেই… ভালোবাসার ঘোরেই সে ছিল এতদিন। ওয়েনের ওপরে প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে, কিন্তু ওয়েনের দোষ কোথায়? সত্যি কথা বলা কি অপরাধ? মায়রার একটা চেক আপ-এর প্রয়োজন। মায়রাও নিশ্চয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা ও বলে চলেছে… আমার সব সময়ে একই চিন্তা, তোমার সুখ তোমার স্বাচ্ছন্দ্য… তবে তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি কি অসুস্থ? বলো না… আমাকে তুমি সুস্থ করে তুলবে?… আমি সুস্থ হয়ে উঠলে আমাকে আবার ফিরিয়ে নেবে তো… বলো বলো… আমার পরিবর্তে অন্য কাউকে নেবে না… বিশ্বাস করো মরচেক…. তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না… এই বাড়ি এই সব… না না আমাকে পালটাতে দিও না। দুই হাতের মধ্যে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে রইল মায়রা। বুকফাটা কান্নায় ডুবে গেল সে… কিন্তু ওর কান্নায় কোনও শব্দ হয় না… কারণ সেই একই… কান্নার শব্দে যদি পুরুষ মানুষের অসুবিধে হয়!

-না না, এত ভেঙে পড়ছ কেন মায়রা… তোমাকে একবার শুধু চেক আপ করিয়ে নেব। সান্ত্বনার সুরে বলল মরচেক। কিন্তু অব্যক্ত যন্ত্রণায় ওরই দু’চোখ জলে ভরে উঠল। তবে একটা বিষয়ে দুইজনেই একমত… সত্যি সত্যিই মায়রা অসুস্থ।

মনে মনে সমাজব্যবস্থাকে দুষল মরচেক। আদিম মেয়েরা এমনভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ল… পড়লেও সেটা সাময়িক। ঘরে থেকেই চিকিৎসায় সেরে ওঠে। কিন্তু কৃত্রিম সব আধুনিক মেয়েদের মানসিক ভারসাম্য এতই সূক্ষ্ম যে, কখন যে বিকল হয়ে যাবে সেটা কেউ বলতে পারে না। অথচ আধুনিক মেয়েদের মধ্যেই নারীধর্মের যাবতীয় গুণাবলী মেপে মেপে ভরা আছে।

নেই শুধু পরিশ্রম করার অফুরন্ত শক্তি।

মুহ্যমান মায়রা। কষ্ট করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়ল সে ধপ করে। মুখমণ্ডলে মানসিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। আর সেইজন্যেই মায়রা যেন মেঘে ঢাকা দ্বিতীয়ার ক্ষীণ বাঁকা চাঁদ। ওর অসুস্থতার দরুন গণ্ডদেশ রক্তিমাভ হয়ে উঠেছে… পর্দার ফাঁক দিয়ে সূর্যকিরণ ওর ভ্রমর-কালো চুলে আলো-আঁধারির খেলা জুড়ে দিয়েছে।

–মরচেক… আমার মরচেক… একটা অনুরোধ করব… আরও কয়েকদিন যদি থেকে যাই… আরও কয়েকদিন আমাকে সহ্য করতে পারবে না তুমি?… মুমূর্ষ রুগিদের মতো কাতর অনুরোধ ফুটে উঠল ওর কথায়। কিন্তু দু’চোখের দৃষ্টির মধ্যে এর কোনও প্রকাশ নেই… কেমন যেন উদ্দেশ্যবিহীন… বোকা বোকা।

মরচেকের মুখে কথা সরে না। বুকের মধ্যে অনেক স্মৃতি মাথা কুটে মরে। কিন্তু…

–আমি… আমি তো নিজে নিজেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারি… মরচেক নিরুত্তর।

এবার এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মায়রা বলে উঠল– বেশ, বুঝতে পারছি… অসুস্থ স্ত্রী নিয়ে কোনও পুরুষই বেশিদিন ঘর করে না। নতুন স্ত্রীকে নিয়ে… এ-একবার মনে করে দেখো আমি কতখানি তোমায় ভালোবেসেছিলাম! একবার… কথা শেষ না করে দুই হাতের মধ্যে মাথা গুঁজে বসে রইল মায়রা। টপটপ করে জল পড়ল দু’গাল বেয়ে।

–গাড়িটা নিয়ে আসছি মায়রা। কথাগুলো বলেই দ্রুতপায়ে গ্যারেজ অভিমুখে চলে গেল মরচেক। মায়রার সামনে আর বসে থাকতে পারছিল না সে। হয় তো… হয় তো মায়রার মতো নিজেও ভেঙে পড়ত!

গ্যাবেজের দিকে পা আর চলতে চায় না… সর্বাঙ্গ অবশ হয়ে আসছে… এতদিনকার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক… ভাবতেই সর্বাঙ্গ ঝিমঝিম করছে। মায়রাকে যে আর সারিয়ে তোলা যাবে না সে বিষয়ে নিশ্চিত মরচেক। বিজ্ঞান এর বদলে আরও আধুনিক রমণী দেবে, কিন্তু বিফল হওয়া রমণীকে সচল করতে পারে না।

গ্যারেজে পৌঁছে ডেকে উঠল মরচেক– গাড়ি, ব্যাকে এসে গেটের সামনে দাঁড়াও।

–কোনও কিছু বিকল হল নাকি বস? গাড়ি প্রশ্ন করে উঠল। আপনাকে ভীষণ চিন্তিত দেখাচ্ছে। রাত্রে কি ভালো ঘুম হয়নি?

–না… ঠিক তা নয়… তবে মায়রা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

কয়েক মুহূর্ত গাড়ি কোনও উত্তর দিল না। তারপর নিচুস্বরে বলল– আমি দুঃখিত বস। মনে হয় আমি বোধহয় একাই পৌঁছে দিতে পারব!

–অনেক ধন্যবাদ! এই মানসিক অবস্থায় সহানুভূতি জানিয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে মরচেক বেশ উজ্জীবিত হয়ে উঠল।

–আমার তো মনে হয়েছিল কী হবে? আমি একলা তো নিয়ে যেতে পারব না। গাড়ি ব্যাক করে গেটের সামনে দাঁড়াল… সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির এক পাশ ধীরে ধীরে ওপরে উঠে গেল। ধীরে ধীরে পেছনের সিটটা আরও চওড়া হয়ে গেল। মায়রাকে ধরে ধরে নিয়ে গাড়িতে তুলে দিল মরচেক, নিঃশব্দে গাড়ি চলতে শুরু করল। গেট পেরিয়ে বড় রাস্তা… রাস্তা ধরে একেবারে সোজা কারখানার দিকে। মরচেকের দু’চোখ ঝাপসা হয়ে উঠল।