ব্যবসায়ী – হেনরি সেলসার

ব্যবসায়ী – হেনরি সেলসার

সোয়ানসন বোর্ডরুমে ঢুকলেন। চুলের ডগা থেকে পা পর্যন্ত দাম্ভিকতায় ভরা। পোশাক-পরিচ্ছদ, চলনবলন, সবই বলে দেয় সোয়ানসন এক দুরন্ত সেলস একজিকিউটিভ। এই বিষয়ে শত্রুরাও ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু আজ ওকে কৈফিয়ত দিতে হবে এবং ওর ব্যর্থতার কারণ বলতে হবে। ইউনাইটেড হার্বার্ডাসারি কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে বিক্রয়ের এই চূড়ান্ত ব্যর্থতার জবাবদিহি তো করতেই হবে। কিন্তু বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়েও সোয়ানসন নির্বিকার… কোনও হেলদোল নেই। তবে শত্রুপক্ষ জানে এসব ওর মুখোশমাত্র… আর মুখোশের ভেতরে নির্বিকার ভাব শত্রুপক্ষকে অস্থির করে তোলে।

কোনওরকম বাগাড়ম্বর না করে চেয়ারম্যান সভার কাজ শুরু করেই সেলসের রিপোর্ট চাইলেন। রিপোর্টের বিষয়বস্তু সকলেরই জানা। ব্যক্তিগত এবং গোপনীয় সার্কুলারে সব সদস্যকেই জানানো হয়েছিল। সেই রিপোর্টের পুনরাবৃত্তি শোনার পর চেয়ারম্যান তাঁর মতামত দেবেন এটাই প্রচলিত নিয়ম। অবশ্য এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তির বক্তব্য সকলের সামনে রাখা হবে। জনসাধারণের সামনে অভিযুক্ত হওয়ার সময়ে ওর মুখমণ্ডলের যে করুণ অবস্থা হবে সেটাই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার জন্যে বিরোধী দল উন্মুখ হয়ে আছে।

অবশেষে বক্তব্য পেশ করার জন্যে সোয়ানসনের ডাক পড়ল।

খুবই শান্ত কণ্ঠে সোয়ানসন বললেন, উপস্থিত ভদ্রমহোদয়গণ আপনারা নিশ্চয় জানেন যে, যুদ্ধের সময় থেকেই হার্বার্ডাসারি অর্থাৎ মনোহারি ব্যাবসা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক লোকসান তো আমাদের সকলের জানা। কিন্তু এই লোকসান আমাদের ভাবিয়ে তোলেনি। কারণ ব্যাবসায় লাভ লোকসান থাকবে… তবে যে। ব্যাপারটা ভাবিয়ে তুলেছে সেটা হল ব্যাবসাসংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী… তাতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি ক্রমেই নিম্নমুখী হবে। মাননীয় সভ্যগণ, আমি কিন্তু এমন নেতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণীকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। আমার বক্তব্য হল ভবিষ্যতে কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি তো কমবেই না, বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

যেন বিনা মেঘে বজ্রাঘাত হল। বোর্ড অব ডিরেক্টরগণ নড়েচড়ে বসলেন। লম্বাটে টেবিলের শেষপ্রান্তে কয়েকজন বিষম খেয়ে কেশে উঠলেন।

–ভদ্রমহোদয়গণ, আমি জানি আমার ভবিষ্যদ্বাণী আপনাদের কাছে অবিশ্বাস্য বোধ হচ্ছে। আর সেই জন্যই মিটিং শেষ হওয়ার পূর্বেই আমি আমার বক্তব্যের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করব। কিন্তু তার আগে আমি বলি কী, আপনারা একজন বিখ্যাত ভদ্রলোকের বক্তব্য শুনুন। প্রফেসর রাল্ফ এন্ট্রইলার হলেন আমেরিকান ফাউন্ডেশন অব ইউজেনিক্স এর এক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী।

প্রেসিডেন্টের পাশের চেয়ারে বসেছিলেন প্রফেসর এন্ট্রইলার। রক্তশূন্য মুখমণ্ডল… উজ্জ্বল বড় বড় দুই চোখ। এবার তিনি উঠে দাঁড়িয়ে সমবেত সকলকে অভিবাদন জানিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন।

-–মি. সোয়ানসনের অনুরোধে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমি দু’চার কথা বলব। আমি অবশ্য মনোহারি ব্যাবসা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। আমার রিসার্চের বিষয় হল ইউজেনিক্স বা সুপ্রজননবিদ্যা এবং রেডিয়েশান বায়োলজি।

–আপনি আরও স্পষ্ট করে বলুন প্রফেসর। সোয়ানসন বলে উঠলেন।

–নিশ্চয় বলব। আর বলব বলেই তো এসেছি। আসল কথা হল আমি মিউটেশান নিয়ে কাজ করি। অদূর ভবিষ্যতে মিডটেশানই হবে জন্মধারার একমাত্র মূল কথা। বর্তমানে আমাদের জন্মহারের পঁয়ষট্টিভাগ হল মিউটেটেড বার্থ অর্থাৎ পরিবর্তিত জন্ম। সরল ভাষায় ভবিষ্যতে সব শিশুই অদ্ভুতদর্শন বা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মগ্রহণ করবে। আমার রিসার্চে দেখা যাচ্ছে–

–কোনও কিছুই বুঝলাম না… অদ্ভুতদর্শন বিকলাঙ্গ শিশুর সঙ্গে আমাদের কোম্পানির কী সম্পর্ক?

রীতিমতো অসহিষ্ণু হয়ে উঠলেন চেয়ারম্যান।

মধুর হাসলেন সোয়ানসন। উঠে দাঁড়িয়ে কোটটা খুলে ফেললেন। তারপর কোটের গলার মধ্যে দুই হাত ঢুকিয়ে উঁচু করে ধরলেন সকলের সামনে।

–এইরকম দুটো করে মাথা হবে শিশুদের। তখন একটা টুপিতে কাজ হবে না।

…দুটো করে টুপি লাগবে। বর্তমানের চেয়েও দু’গুণ বেশি টুপি বিক্রি হবে। সুতরাং কোম্পানির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।