প্রহরী – লরেন্স এস. জ্যানিফার

প্রহরী – লরেন্স এস. জ্যানিফার

আমি লন্ড্রিতে ফিরে গিয়ে বললাম, আপনারা আমাকে ভুল প্যাকেট দিয়েছেন। প্যাকেটটা খুলে দেখি–

কর্মচারীটির মুখমণ্ডল যেন রক্তশূন্য হয়ে গেল নিমেষের মধ্যে। প্রাণহীন হেসে বলল, “আমি দুঃখিত। মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে। প্যাকেটটা আপনি খুলে দেখেছেন?”

“হ্যাঁ। ভেতরে একটা সোয়েটারের পাঁচটি হাতা।”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ,” কাঁধ ঝাঁকিয়ে সে বলল, “এ জোক! দরজির ভুল।”

আমি বললাম, “শুধু পাঁচহাতাওলা সোয়েটারই নেই ওই প্যাকেটের ভেতরে, একটা ব্রেসিয়ারও আছে– উইথ থ্রী কাপস! বেলুনের মতো একটা পায়জামা, যে এটা পরে তার বোধহয় একটামাত্র পা।”

সে ব্যস্তভাবে বলে উঠল, “ডিফমর্ড! সার্কাসের লোক।”

আমি কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করলাম। সে ইতস্তত করে আবার বলল, “আমার উত্তর শুনে আপনি যেন খুশি হতে পারছেন না। হ্যাঁ, এর মধ্যে একটা গোপন ব্যাপার আছে। অ্যালমার গ্রহের নাম শুনেছেন আপনি?”

“একটি গ্রহ?” আমি শুধালাম।

“হ্যাঁ। অনেক দূরের– আপনাদের টেলিস্কোপ এখনও পর্যন্ত সেখানে পৌঁছতে সক্ষম হয়নি।” সে বলল, “অ্যালমার একজন স্বৈরশাসক দ্বারা শাসিত হয়। গ্রহের অধিবাসীদের সে গোলাম করে রেখেছে। সেখানকার পুরুষরা বাইরে থেকে হুবহু মানুষের মতো দেখতে। কিন্তু নারীদের চেহারা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের। কয়েকমাস আগে কয়েকজন নারী-পুরুষ দল বেঁধে অ্যালমার থেকে লুকিয়ে পালিয়ে আসে।”

আমি সবিস্ময়ে কৌতূহল প্রকাশ করলাম, “তা-ই নাকি! তারপর?”

সে বলল, “ওই স্বেচ্ছাচারী রাজার বিরুদ্ধে একটা জোরদার বিদ্রোহ করবার প্ল্যান তৈরি করছি আমরা। এখানে, অ্যালমার গ্রহ থেকে এতদূরে এসে আমরা এখন গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছি। একদিন প্রস্তুত হয়ে আমরা ফিরে যাব সেখানে। স্বৈরতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্রের শাসন কায়েম করব আমরা–এই আমাদের প্রতিজ্ঞা।”

“গল্পের মতো শোনাচ্ছে।” আমি বললাম।

“কিন্তু আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হচ্ছে।” সে বলল। আমার আরও কাছে এগিয়ে এল সে, “স্বেচ্ছাচারী শাসকের গুপ্তচরেরা অ্যালমারের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে, বুঝলেন? এখানেও যাতে আমাদের কোনও কথা ফাঁস না হয়, তার জন্যে সবাইকে নির্দেশ দেওয়া আছে।”

“সতর্ক তো থাকতেই হবে।” আমি বললাম, “কিন্তু কী– ওকী! আপনি আমাকে লক্ষ করে–”

একটা ছোট্ট আগ্নেয়াস্ত্র আমার দিকে উঁচিয়ে ধরল সে, “আপনাকে আমাদের খুন করতে হচ্ছে। আমাদের একটা গোটা জাতির স্বাধীনতা অর্জনের কারণেই আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন, এই কথা ভেবে আপনি সুখী থাকুন।”

“শ্চমৎকার!” আমি বললাম। এবং বলেই চকিতে আমার যথাকৰ্তব্য শেষ করে ফেললাম আমি। স্বভাবতই স্বৈরশাসক তাঁর প্রহরীদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে রেখেছেন। আর যা-ই হোক, এরা অর্থাৎ অ্যালমার গ্রহের এই বিদ্রোহীরা তো আমাদের কাছে অ্যামেচারই! লন্ড্রির কর্মচারীটির দেহটা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবার পরে তার জায়গায় গিয়ে বসলাম আমি। শীঘ্রই বা বিলম্বে যখনই হোক, এদের দলের সবাইকে এক একে পেয়ে যাব এখানে।