ভবিষ্যৎ – ডব্লিউ হিল্টন ইয়ং

ভবিষ্যৎ – ডব্লিউ হিল্টন ইয়ং

ভবিষ্যৎ-যাত্রার আগেই উইলিয়াম একটা ক্যামেরা আর টেপরেকর্ডার কিনে এনেছিল। আর নিজেও শর্টহ্যান্ড লেখায় অভ্যস্ত হল। যাত্রার রাতে আমরা সবাই জড়ো হলাম… সব আয়োজন সম্পূর্ণ। কফির কাপও এক সময়ে শূন্য হয়ে গেল। তখন আমরা গ্লাসে ব্র্যান্ডি ঢেলে পরস্পরকে শুভেচ্ছা এবং যাত্রাপথের মঙ্গল কামনা করলাম। নির্বিঘ্নে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনও কামনা করলাম।

অবশেষে বললাম–গুড বাই। বেশিক্ষণ থেকো না কিন্তু।

–কী যে বলো। তাড়াতাড়ি ফিরব। আমাকে আশ্বস্ত করে মৃদু হেসে বলল উইলিয়াম।

আমি উদ্বিগ্ন নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। চক্ষের নিমেষে সে অদৃশ্য হয়ে গেল। ভাবলাম ভবিষ্যতের বুকে ভালোভাবেই নেমেছে উইলিয়াম। ভাবতে না ভাবতেই দেখি আমার সামনে উইলিয়াম আবির্ভূত হল… আবছা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে রক্তমাংসে গড়া উইলিয়ামে পরিণত হল। কোনও পরিবর্তন নেই কোথাও। মনে হয়েছিল কত বছর কাটিয়ে যে ও ঘরে ফিরবে কে জানে।

বললাম–চলে এলে! হয়ে গেল?

বলল, আসব না তো থাকব নাকি! কফি আছে নাকি? বেশ বড় এক কাপ কফি দাও।

নিঃশব্দে কফি ঢালোম। অধৈর্য মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। কফির কাপটা এগিয়ে দিয়েই প্রশ্ন করলাম–চুপ কেন? ভবিষ্যতের কথা বলো।

–ব্যাপারটা কী জানো… আমি কিছুই মনে করতে পারছি না।

–সে কী! কিছুই মনে করতে পারছ না? কয়েক মুহূর্ত কী যেন ভাবল সে। তারপর নিস্পৃহভাবে বলল–বিশ্বাস করো… কোনও কিছুই স্মরণে আসছে না।

–নোটবই কী হল? ক্যামেরা? টেপ রেকর্ডার?

–নোটবই ফাঁকা। ক্যামেরার শাটার বন্ধ। কেন জানি না টেপ রেকর্ডার শূন্য। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। চিৎকার করে বললাম–হ্যায় ভগবান, এমনটা হল কেন? কোথায় ভুল হল? তোমারই বা কিছু মনে পড়ছে না কেন?

–কেবল একটা কথাই মনে পড়ছে।

–কী… কী কথা?

–আমাকে সব দেখাল… সব প্রশ্নেরও উত্তর দিল। আমি সব বুঝলাম। তারপর আমাকে বলল, যে ভবিষ্যৎ না জানাই মঙ্গল। ভবিষ্যতের সব জানা হয়ে গেলে… বর্তমানে আর কেউ কোনও কিছু চেষ্টা করবে না।… আর সভ্যতার উন্নতিও হবে না। তাই…

–কী সব বকছ পাগলের মতো?

–না না পাগলামি নয়। ওরা আরও বলল যে, সব কেন-র উত্তর সহজলভ্য হলে বর্তমানের অগ্রগতি বন্ধ হয়ে যাবে… ‘কেন’ আর ‘কী’র উত্তর আমাদেরই মাথা খাঁটিয়ে বার করতে হবে। আর সেই জন্যে…

আমাদের মুখ দিয়ে আর কথা সরে না।