1 of 2

মহাপ্লাবন – ৪৯

ঊনপঞ্চাশ

হাশিমা দ্বীপে রানার প্রথম নকল রোবটটি ওঅর্কবেঞ্চের দিকে যেতেই ওদিকে তাকাল হুয়াং লিটন। বড় মসৃণভাবে চলে এসব মেশিন। এটা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। পায়ে গুলি লেগেছে বলে সামান্য খুঁড়িয়ে হাঁটছে। গিয়ে বসে পড়ল ওঅর্কবেঞ্চে। আহত পা চেপে ধরেছে মানুষের মত। আঙুলের ফাঁক দিয়ে টপটপ করে পড়ছে রক্তের মত লাল তরল।

দ্বিতীয় রোবট অক্ষত।

‘ওটা থেকে যে লাল তরল পড়ছে, ওটা কি হাইড্রলিক ফ্লুইড?’ জানতে চাইল হুয়াং।

‘না,’ বলল সাবা সাবেলা। ‘গঠনমূলক প্যানেলে নকল ত্বকের নিচে ওই জেল রেখেছি আমরা। ওটার কারণে নরম মনে হবে গা। তা ছাড়া, সর্বক্ষণ দৈহিক তাপ থাকবে আটানব্বুই দশমিক ছয় ডিগ্রি। হ্যাণ্ডশেক করলে মনে হবে মানুষটার নরম মাংসে আছে স্বাভাবিক পেশি। উষ্ণও থাকবে হাত। আমাদের টেকনিশিয়ানদের একজন আবিষ্কার করেছে এই জেল। পরে লাল করা হয়েছে ওটাকে। রোবট ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবাই ভাববে, মানুষটা আহত হয়েছে বলে রক্ত পড়ছে।’

খুশি হলো হুয়াং। ‘ওই টেকনিশিয়ানকে মোটা অঙ্কের বোনাস দেবেন। আমি নিজেও ওদিকটা খেয়াল করিনি।’

আবারও রোবটের দিকে তাকাল সে। মনে মনে বলল, সামনের মিশনে রোবট আহত হলে মন্দ হয় না। পরে ঠিক একইভাবে গুলি করে মাসুদ রানাকে খুন করবে সে। এর ফলে লোকটার লাশ পরে পাওয়া গেলে কারও মনে সন্দেহ থাকবে না, অপরাধটা করেছে বিসিআই-এর বিশ্বাসঘাতক এজেন্ট

সহজ ভঙ্গিতে নিজের শার্টের বোতাম খুলল রোবট। দেখা গেল বুকে বুলেটের ক্ষত।

‘কয়টা গুলি লেগেছে?’ জানতে চাইল লো হুয়াং।

‘চারটে,’ বলল সাবেলা, ‘ব্যাকআপ মেশিনে সামান্য আঁচড় কেটে গেছে আরেকটা বুলেট। ভাবতেও পারিনি অত দ্রুত এত নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদ করবে মাসুদ রানা। তবে তার কপাল ভাল, গুলি লাগাতে পেরেছে।’

‘এটা দুঃসংবাদ,’ বলল লো হুয়াং। ‘আমার মনে হয় না কপালের জোরে গুলি লাগাতে পেরেছে। একগুঁয়ে ধরনের লোক। যখন বুঝল কী করছি আমরা, জীবনের ঝুঁকি নিয়েও চেয়েছে মেশিনদুটোকে বিকল করতে। তাই চারবার গুলি করেছে দেহের চারদিকে।’

‘দেখা যাক তাতে কাজ হয়েছে কি না,’ রোবটের দিকে ফিরল চিফ ইঞ্জিনিয়ার। ‘শুয়ে পড়ো। ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট দাও মেইন কমপিউটারকে।’

ওঅর্কবেঞ্চে শুয়ে স্থির হলো রোবট। আগেই লো হুয়াং বলে দিয়েছে, এসব রোবট হতে হবে একদম মানুষের মত। চুলের ভেতর বা শরীরে কোথাও থাকবে না কোনও পোর্ট বা পাওয়ার প্লাগ। সব ডেটা আদান-প্রদান ও ব্যাটারি চার্জিং হবে বেতারের মাধ্যমে।

‘দরকার হলে আমরা কাজে লাগাব ব্যাকআপ রোবট, ‘ বলল লো হুয়াং।

‘আমি হলে তা করতাম না, বলল সাবেলা। ‘প্রথমে ট্রেনিং নিয়েছে এটা, এর প্রসেসরও দ্রুত। ব্যাকআপ রোবট এর চেয়ে বেশ দুর্বল।’

‘এক জিনিসই তো দুটো।’

মাথা নাড়ল সাবেলা। ‘সাধারণ মানুষ ভাবে সব মেশিন একই। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। তৈরির সময় কোথাও না কোথাও থাকে তফাৎ। হয়তো এটা হয় কম দক্ষ সার্ভো বা হাইড্রলিক প্রেশারের জন্যে। যন্ত্রের প্রতিটা কল থেকে বেরোচ্ছে সামান্য তাপ। তাই দৈহিক প্রতিক্রিয়াও আলাদা। মানুষকে নকল করতে শিখেছে আর্টিফিশিয়াল এই দুটো ইন্টেলিজেন্স। তবে তাদের ভেতর তৈরি হয়েছে ক্লাস। একটা আরেকটার চেয়ে বেশি দক্ষ।’

কথাটা বুঝতে পেরেছে লো হুয়াং। অবাকও হয়েছে। মৃদু মাথা দুলিয়ে বলল, ‘এটা বোধহয় বুঝতে পেরেছিল মাসুদ রানা। সেজন্যেই গুলি করে প্রথমটাকে।’

‘আপনি তাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন,’ আপত্তির সুরে বলল সাবেলা। দেখাল রোবটের মুখের ক্ষত। ‘ভুল করে মাথায় গুলি করতে চেয়েছে সে। ধরে নিয়েছে মানুষের মত চেহারার রোবটের সবচেয়ে দুর্বল অংশ করোটি। কিন্তু ওখানে মগজ নেই এর। আমার ধারণা, লোকটা ভেবেছে গুলি লাগবে রোবটের হার্ড ড্রাইভ বা সিপিইউ-এ। একদম ভুল। বুদ্ধি করে এদের বাম উরুর মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি হার্ড ড্রাইভ আর সিপিইউ। এত চেষ্টা করে লোকটা ক্ষতি করেছে শুধু মুখ আর একটা অপটিকাল প্রসেসরের।’

রোবটের গলায় স্ক্যালপেল চালাল সে। চড়চড় করে তুলে নিল গলা থেকে শুরু করে মুখের সব ত্বক। চুলও বাদ পড়ল না। পুরনো মুখোশের মত সব ফেলল পাশের গার্বেজ বিনে। ‘ওই জিনিস আর মেরামত করা যাবে না।’

এক অ্যাসিস্ট্যান্টের দিকে তাকাল সে। ‘চালু করো থ্রি-ডি প্রিন্টার। খেয়াল রেখো, যেন ঠিকভাবে মিশিয়ে নেয়া হয় পলিমার। নতুন চেহারা চাই। এ ছাড়া, দেবে পায়ের প্যানেলের চামড়া। এসব দেয়ার পর এনে দেবে আরেকটা অপটিকাল প্রসেসর আর সেকেণ্ডারি হাইড্রলিক অ্যাসেম্বলি।

‘কতক্ষণ লাগবে এসবে?’ জানতে চাইল লো হুয়াং। ‘আমরা হেলিকপ্টারে করে রওনা হতে চাই একঘণ্টা পর।’

‘আধঘণ্টা লাগবে মেরামত করতে,’ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল চিফ ইঞ্জিনিয়ার।

মাথা দোলাল বিলিয়নেয়ার। ‘কাজে লেগে পড়ুন। অন্য টেকনিশিয়ানদের বলুন, যাতে তৈরি করে সোহেল আহমেদের মত একটা। মাসুদ রানার দুই নম্বর রোবটের চেসিস ব্যবহার করবেন। আপনারা তো আবার উচ্চতা আর শেপ নানানরকম করতে পারেন।’

‘এত কম সময়ে নিখুঁত হবে না,’ বলল সাবেলা। ‘ওই লোকের ভিডিয়ো বা ভয়েসপ্রিন্ট আমাদের কাছে নেই।’

‘এখানেই তো আছে সে,’ বলল হুয়াং, ‘ধরে এনে শিখে নিন সব। নিখুঁত হতে হবে না। চাই ওরা দু’জনই যেন হাজির হয় আমার প্যাভিলিয়নে।’

‘জী, স্যর, বেশ,’ মাথা দোলাল ইঞ্জিনিয়ার।

‘গুড।’ দরজার দিকে চলল বিলিয়নেয়ার। ‘এদিকে সেরে নেব ওরে চিচিওয়ার সঙ্গে জরুরি কাজ।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *