1 of 2

মহাপ্লাবন – ৩৯

ঊনচল্লিশ

পাহাড়ের কাঁধে নির্জন রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিচের অপূর্ব দৃশ্য দেখছে বিসিআই-এর চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সোহেল আহমেদ। দূরে কোটি রঙিন আলো বুকে নিয়ে ঝিকমিক করছে নাগাসাকি বন্দর। সাগরতীরে বিশাল এনসিআর ফ্যাক্টরি। এখন ওখানে নেই কোনও ব্যস্ততা।

শক্তিশালী যুম লেন্সের ক্যামেরা দিয়ে দেখছে সোহেল। পাশে ট্রাইপডে হাই-পাওয়ার্ড মিলিটারি-গ্রেড বিনকিউলার। গাড়ি প্রতিযোগিতার সময় দেখেছে রেস ট্র্যাকের একাংশ। এরপর দুর্ঘটনা হলেও রানা সুস্থ আছে দেখে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। সোহেল জানে, যে কেউ ভাবত আজকের মত যথেষ্ট হয়েছে, কিন্তু হাল ছাড়বে না রানা।

একটু আগে রানা আর মেয়েটাকে ঢুকতে দেখেছে ফ্যাক্টরিতে। খিদে লাগতেই পাশের সিট থেকে নিয়ে স্যাণ্ডউইচে কামড় দিল সোহেল। জিনিসটা কিনেছে ভেণ্ডার মেশিন থেকে। খুবই বিস্বাদ। বিড়বিড় করল ও, ‘হুঁ, তুই শালা চালাবি দশ লাখ ডলারের স্পোর্টস কার, সুন্দরী মেয়েকে পাশে নিয়ে সাঁটাবি দারুণ সুস্বাদু ডিনার- আর আমি? না, এটা স্যাণ্ডউইচ নয়, বুড়ো কোনও জুতোর প্রাচীন সুখতলি! না রে, সৌভাগ্যের দেবী বলে কিচ্ছু নেই!’

স্কাইলাইন জিটি-আর গাড়ির ফেণ্ডারে কোমর ঠেকিয়ে স্যাণ্ডউইচটা নামিয়ে রাখল সোহেল। চোখে লাগাল বিনকিউলার। সামান্য ঘুরিয়ে ফোকাস করার পর পরিষ্কার দেখল ফ্যাক্টরির চারপাশ।

রেস শেষ হওয়ার পর কোথাও নেই কোনও নড়াচড়া। পার্কিং লটে রানার গাড়ি। থমথম করছে চারপাশ। একবারও চোখে পড়েনি সিকিউরিটি প্যাট্রল। কে জানে, হয়তো মানব গার্ডদের বদলে রোবটকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে নিপ্পন-চিন রোবটিক্স!

বিনকিউলার রেখে হাতঘড়ি দেখল সোহেল। পেরিয়ে গেছে রাত দশটা। রানা বলেছে, ঘটনা যা-ই হোক, মাঝ রাতের আগেই বেরোবে ফ্যাক্টরি থেকে। তা যদি না পারে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে সোহেল।

তবে রানা নিজেই যথেষ্ট।

সোহেল কল দিল পুলিশ সুপারইন্টেণ্ডেণ্ট হিমুরার অফিসে। ওখান থেকে বলা হলো তিনি আছেন জরুরি অ্যাসাইনমেন্টে। ফিরলে তাঁকে জানানো হবে সোহেল আহমেদ কল করেছিলেন।

কিন্তু মৃদু কেঁপেছে উবোন হিমুরার সহকারীর কণ্ঠ। এটা অস্বাভাবিক। কু ডাকছে সোহেলের মন। সেজন্যেই ভাবছে বি প্ল্যানের কথা। গাড়ির ট্রাঙ্কে রয়েছে ইণ্ডাস্ট্রিয়াল সাইযের ফায়ারওঅর্কস্। রানার বিপদ হলে ওগুলো ফেলবে ফ্যাক্টরির ওপর। কাজটা শেষ করেই যোগাযোগ করবে নাগাসাকি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট-এ- আগুন ধরেছে এনসিআর দালানে!

প্ল্যান সাধারণ হলেও আশা করা যায় কাজে আসবে। ওর আছে বোতল রকেট, একেকটা মর্টার শেলের সমান। এ ছাড়া, স্টারবার্স্ট শেল ও স্প্রিংলার। ফ্যাক্টরির ছাতে ফেললে নানাদিকে ছিটকে উঠবে লাল, সবুজ ও সাদা ফুলকি। বেরোবে প্রচুর ধোঁয়া। সবাই ভাববে সত্যিই আগুন ধরেছে ফ্যাক্টরিতে। চাইলেও ফায়ার ডিপার্টমেন্টকে এড়াতে পারবে না হুয়াঙের লোক। তখন অন্যদের সঙ্গে ফ্যাক্টরিতে ঢুকবে সোহেল।

অবশ্য, চেনে রানাকে। বিপদ হলে নিজেই খুঁজে নেবে পথ। বিড়বিড় করল সোহেল, ‘অনেক তো হলো, এবার বেরিয়ে আয়, দোস্ত! অত কী খাস?’

বিনকিউলার রাখতে না রাখতেই দেখল, ফ্যাক্টরির দিকে চলেছে কালো এক সেডান। আবারও বিনকিউলার চোখে তুলল সোহেল। পথের পাশের বৈদ্যুতিক আলোয় দেখল লোডিং যোনে গিয়ে একটা ডকে থামল গাড়িটা। ওটা থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে লোডিং প্ল্যাটফর্মে উঠল এক লোক। দরজার পাশের কলিং বেল টিপে অপেক্ষা করল না, ধুম-ধুম করে কিল বসাতে লাগল দরজার ওপর।

ছাতের কাছে জ্বলে উঠল বাতি। ওই আলোয় লোকটাকে চিনল না সোহেল। এদিকে পিঠ দিয়ে রেখেছে সে।

খুলে গেল দরজা। বেরিয়ে এল এক সিকিউরিটি গার্ড। কী যেন বলছে লোকটাকে। উত্তেজিত হয়ে হাত নাড়ল এদিকের লোকটা। মনে হয় তর্ক করছে।

আবারও ভেতরে চলে গেল গার্ড।

অধৈর্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইল প্রথম লোকটা।

‘ঘুরে দাঁড়া, বাপ,’ বিড়বিড় করল সোহেল। ‘সোনার চাঁদ বদনী ধনী ঘোরো তো দেখি?’

ওকে পিঠ দেখিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল লোকটা।

এবার ক্যামেরার ট্রাইপডের পেছনে গিয়ে নতুন করে ফোকাস করল সোহেল। কিন্তু আবারও খুলে গেছে দরজা এবার বেরিয়ে এসেছে স্বয়ং লো হুয়াং লিটন! লোকটার সঙ্গে হেঁটে গেল সেডানের পেছনে। খোলা হলো গাড়ির ট্রাঙ্ক। দু’জন মিলে ওটা থেকে বের করল দীর্ঘ এক কাঠের কেস। ওটা রাখা হলো গাড়ির ছাতে। খুলে ফেলা হলো কেসের ঢাকনি।

নতুন উৎসাহে ফোকাস করল সোহেল।

কেসের ভেতরে ঝিকমিক করছে কয়েকটা তলোয়ার।

‘এত রাতে অ্যান্টিক তলোয়ার কেনার ব্যাপারটা কী?’ আনমনে বলল সোহেল।

সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা দোলাল লো হুয়াং। কয়েকটা তলোয়ার বের করে বন্ধ করে দেয়া হলো কেসের ডালা।

পাহাড়ের একপাশে সরে ড্রাইভার লোকটার চেহারা ক্যামেরায় বন্দি করতে চাইল সোহেল। তবে ঠিকঠাক অ্যাংগেল পেল না। তবে তখনই দেখল ডকের একপাশে বড় এক কনভেক্স মিরর। ওটা রাখা হয়েছে ড্রাইভাররা যেন গুঁতো না লাগায় ডকে।

ওই আয়নার দিকে ক্যামেরা তাক করল সোহেল। নতুন করে ফোকাস করতেই বুঝল, ম্যাগনিফিকেশন করেছে একটু বেশি ওপরে। ঝাপসা দেখাচ্ছে লোকটার ছবি। ট্রাইপড থেকে ক্যামেরা হাতে নিল সোহেল। ওদিকের আলো বেশ জোরালো।

ফোকাস ফিক্স হতেই চিনে গেল ড্রাইভারকে: ওরে চিচিওয়া! গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিটে এলিয়ে পড়ে আছে এক লোক। তাকেও চিনল সোহেল। ওই লোক যেন ঘুমিয়ে আছে। বিড়বিড় করল ও: ‘সুপারইন্টেণ্ডেণ্ট উবোন হিমুরা!’

সন্দেহ কী যে তিনি অফিসে নেই!

মানুষটার মুখে এখন সাদা টেপ।

নড়ছে ক্যামেরার দৃশ্য। লো হুয়াংকে একটা তলোয়ার তুলে দেখাল ওরে। ওটা মুড়িয়ে রাখা হয়েছে চামড়া দিয়ে। এবার গাড়ির ছাত থেকে নিল চামড়ামোড়া পুরু একটা বই। ওটা নিয়ে নিজের হাতেই রাখল লো হুয়াং। অন্যহাতে দেখাল ভেতরে যাওয়ার গেট

গাড়িতে চাপল ওরে চিচিওয়া, তারপর ড্রাইভ করে ঢুকে পড়ল ফ্যাক্টরি বিল্ডিঙের ভেতর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *