1 of 2

মহাপ্লাবন – ৪০

চল্লিশ

রেসিং গাড়ির বাক্সের মত বদ্ধ জায়গায় দশ ল্যাপ পার করে ঘেমে গোসল হয়েছে রানা। এইমাত্র গ্যারাজ ওঅশরুমে পোশাক পাল্টে ভদ্রস্থ হলো। পরে নিচ্ছে নিজের পোশাক। আঁজলা ভরে পানি তুলে মুখ ধুচ্ছে, এমনসময় প্যান্টের পকেটে বেজে উঠল মোবাইল ফোন।

তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে ফোনটা বের করল রানা। কল করেছে সোহেল।

‘তোর পার্টির মৌজ শেষ, বলল বিসিআই চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। ‘বাড়ির পেছনে এখন ওরে চিচিওয়া।’

গম্ভীর হয়ে গেল রানা।

ওরে চিচিওয়া হাজির হয়েছে সে ব্যাপারে মনে কোনও সন্দেহ থাকলে কল দিত না সোহেল।

‘তার মানে, ওরেকে ধরতে পারেননি উবোন হিমুরা।’

‘কথা ঠিক,’ সায় দিল সোহেল। ‘বলতে পারিস শিকার হয়ে গেছে শিকারী। সেডানের পেছনের সিটে পড়ে আছেন হিমুরা। মুখে টেপ, হাতও আটকানো ওই জিনিস দিয়ে।’

‘জানিস বেঁচে আছেন কি না?’

‘জানার উপায় নেই। মোটেও নড়ছেন না।’

চিবুক দিয়ে কাঁধে ফোন রেখে ডিনার কোট পরছে রানা। নিচু গলায় বলল, ‘গাড়িটা এখন কোথায়?’

‘পার্ক করেছে পরের দালানের লোডিং যোনে।

‘আমি চাইলে কীভাবে ওদিকে যাব?’

‘তোর বিল্ডিং থেকে বেরোবি দক্ষিণ-পশ্চিমের করিডোর ধরে।’

এবার অন্যদিকে সরাতে হবে সবার মনোযোগ।

কাজটা সহজেই পারবে সোহেল।

‘সোহেল, পৌছে যাব ওদিকের বিল্ডিঙে। তার আগে তৈরি করব ডাইভার্শন। সবাই ফ্যাক্টরি থেকে বেরোলে তুই নিজে ঢুকবি। কিন্তু এরা ভেতরে রয়ে গেলে, আমাকে দুই মিনিট সময় দেয়ার পর ফেলবি আতসবাজি।’

‘জানতাম তোর কাজে লাগবে, তাই সাজিয়ে রেখেছি লঞ্চ ট্রেতে,’ জানাল সোহেল।

‘দু’মিনিট সময় দিবি,’ বলে ফোন কেটে দিল রানা। কোটের কাফ ঠিক করে বেরিয়ে এল ওঅশরুম থেকে।

বাইরে অপেক্ষা করছে হিনা। আলাপ জুড়েছে সাবা সাবেলার সঙ্গে। আশপাশে কোথাও নেই লো হুয়াং লিটন

‘ডিনার রেডি তো?’ জানতে চাইল রানা।

‘হ্যাঁ, চলুন,’ বলল ইঞ্জিনিয়ার সাবেলা। ‘একটু পর পৌছুবেন মিস্টার হুয়াং।’

‘চলো।’ মৃদু মাথা দুলিয়ে হিনার হাত ধরে এগোল রানা। গ্যারাজ পার হয়ে ভেতর দরজার দিকে চলেছে ওরা। চারপাশ দেখছে রানা। ওদেরকে প্রায় ঘিরে রেখেছে ওঅর্ক বেঞ্চ। দেয়ালের কাছে একের পর এক যন্ত্রপাতি রাখার আলমারি। সহজেই চোখে পড়বে এমন একটা জিনিস খুঁজছে রানা। ক’সেকেণ্ড পর পেল ওটা। আলতো হাতে চাপ দিল হিনার হাতের তালুতে।

ওর দিকে তাকাল হিনা।

চোখের ইশারায় চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাবা সাবেলার দিকে ইঙ্গিত করল রানা।

চোখ বিস্ফারিত হলো হিনার।

ভেতরে যাওয়ার দরজার কাছে পৌঁছে গেছে ওরা। আর তখনই লোকটার ঘাড় ও কাঁধের মাঝে কারাতে চপ বসাল রানা। মারটা গাঁথল সুপ্রাস্ক্যাপিউলার নার্ভে। অবশ হলো সাবেলার শরীরের ডানদিক। ধুপ করে মেঝেতে পড়ল সে। তার আগে চোয়ালে নিয়েছে রানার ডানহাতি প্রচণ্ড এক ঘুষি।

‘মেরে ফেললেন?’ বলল হিনা। ‘নড়ে তো না!’

‘চিনা স্বর্গের খোয়াব দেখছে,’ ঝুঁকে অচেতন লোকটার কাছ থেকে কি-কার্ড নিল রানা। ‘দড়ি এনে হাত বাঁধো।’

কাছেই ইলেকট্রিকাল কর্ড পেয়ে ওটা দিয়ে সাবেলার দু’কবজি কষে বাঁধল হিনা। ‘আপনি বোধহয় জানেন, রানা, ওরা চোখ রেখেছে আমাদের ওপর? চারপাশে ক্যামেরা।’

‘বুঝতে পারছ, ঝেড়ে দৌড়াতে হবে।’ কয়েক পা সরে এক ওঅর্কবেঞ্চের কাছে থামল রানা। গার্বেজ বিনের পাশেই পেল ডাব্লিউডি-৪০ স্প্রে ক্যান। তুলে নিল ওটা। হিনার হাতে দিয়ে বলল, ‘গার্বেজ বিনে দেখেছি ময়লা কাপড়। ওখানে স্প্রে করো।’

নির্দেশ পালন করল হিনা। খালি করতে লাগল ক্যান। একটু দূরেই ব্যাটারি কার্ট, ওটা ব্যবহার করা হয় রেসের গাড়ি চালু করার সময়। গার্বেজ বিনের কাছে ওটাকে নিয়ে এল রানা।

গার্বেজ ক্যানে প্রায় খালি ক্যান ফেলল হিনা। ও সরে যেতেই ব্যাটারির দুই টার্মিনাল স্পর্শ করাল রানা। নানাদিকে ছিটকে গেল কমলা ফুলকি।

‘যা ভাবছি, তাই করবেন?’ জানতে চাইল হিনা।

‘শিমেযুর দুর্গ পুড়িয়ে দিয়েছিল ওরা,’ বলল রানা। ‘আমরা একই দয়া করছি ওদের ওপর।’

ভুসভুস করে ক্যান থেকে বেরোচ্ছে স্প্রে। ওটার ওপর ফুলকি পড়তেই দপ্ করে জ্বলল আগুন। গার্বেজ ক্যানে রয়েছে তেলে ভেজা সুতি ন্যাকড়া। বৃত্তাকার বিন হয়ে গেল প্রায় ফ্লেমথ্রোয়ার।

ওটাকে গড়িয়ে এক ওঅর্কবেঞ্চের নিচে রাখল রানা। চট্ করে নিভবে না আগুন। দরজার দিকে রওনা হলো ও। ‘জলদি এসো!’

‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’ জানতে চাইল হিনা।

‘বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিমে,’ জানাল রানা।

জানাল রানা। ‘ওখানে এক গাড়িতে আছেন সুপারইণ্টেণ্ডেণ্ট হিমুরা। ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাঁকে এখানে আনা হয়েছে।’

দরজা খুলতে সাবেলার কি-কার্ড ব্যবহার করল রানা। করিডোরে ঢোকার আগেই কনুই ব্যবহার করে ভাঙল ফায়ার প্যানেলের কাঁচ। হ্যাঁচকা টান দিল অ্যালার্ম হ্যাণ্ডেলে। দপ করে জ্বলে উঠেই কর্কশ চিৎকার ছাড়ল ফায়ার অ্যালার্ম।

‘একমিনিট,’ দৌড়ে আবার গ্যারাজে ফিরল হিনা।

‘হাতে সময় নেই,’ তাড়া দিল রানা।

মাত্র আধমিনিট পর আবার ফিরল মেয়েটা, টেনে এনেছে অচেতন সাবেলাকে।

‘আগুনে পুড়বে না,’ বলল রানা, ‘এটা তো তোমাদের সেই কাঠের দুর্গ নয়।’

‘আমি কি আর গাধাটাকে বাঁচাতে গেছি?’ বলল হিনা। ‘আমাদের দরকার ডোরস্টপার। ওই কাজ করবে লোকটা।’

কবাট খুলে সাবেলাকে ওটার সামনে রাখল মেয়েটা। এবার বন্ধ হবে না দরজা, ফলে করিডোর ভরে উঠবে ধোঁয়ায়। খুব কঠিন হবে পিছু নেয়া।

‘চমৎকার, রোবট বউ বিয়ে না করে তোমাকে পটিয়ে ফেললেই ভাল করবে সোহেল,’ বিড়বিড় করল রানা।

দক্ষিণ-পশ্চিম করিডোর ধরে ছুটছে ওরা। শেষমাথায় লক করা ফায়ার ডোর। তবে সাবেলার চাবি খুলে দিল দরজার তালা। পরের ঘর ডিযাইন রুম। চারপাশে স্কেল মডেল ও কমপিউটার। ঘর পেরিয়ে ওরা পেল এলিভেটর লবি। ওরা যে করিডোর ধরে এসেছে, সেটা বাদ দিলেও দু’দিকে দুই দরজা।

দূরের দরজার কাছে পৌছে কি-কার্ড ব্যবহার করে দরজা খুলল রানা। সামনের করিডোরে দু’দিকে অফিস ও কনফারেন্স রুম।

ঘুরে হিনাকে ইশারা করল রানা। দেয়ালে দেখেছে সাঁটিয়ে রাখা ইমার্জেন্সি এস্কেপ প্ল্যান। এ তলার সবই দেখানো হয়েছে ওটাতে।

আরেকবার ফ্লোর প্ল্যান দেখল রানা। ওর কাঁধের ওপর দিয়ে দেখছে হিনা। বলল, ‘ওদিকে।’

ঠিকই বলেছে মেয়েটা।

ডানের দরজা খুলে বাড়ির সামনে দীর্ঘ করিডোর পেল ওরা। ছুটতে ছুটতে রানা দেখল ঘাসের লন ও ছাতে এসে পড়ছে আতসবাজি। বুম বুম শব্দে ফাটছে বোমার মত।

‘ঠিক সময়ে রকেট হামলা,’ হিনাকে বলল রানা, ‘আমাদের সোহেল সত্যিকারের জিনিয়াস!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *