ফ্যান্টাস্টিক

ফ্যান্টাস্টিক

আমার ছোটমামা প্রায় আমার সমবয়সী। বেজায় বাস্তববাদী, কল্পনা-টল্পনার বালাই নেই, অলৌকিকে বিশ্বাস নেই। ভীষণ খেতেটেতে ভালোবাসে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সক্কলের সঙ্গে গলাগলি ভাব। এমনকী সম্পূর্ণ অচেনা লোকেরাও যে কেন ওকে এত পছন্দ করে, কেউ ভেবে পায় না। মোটা, বেঁটে, মাথায় দু-পাশে টাক, মধ্যিখানের চুল আধ-পাকা, অসমান দাঁতগুলো পান খেয়ে খেয়ে লালচে, ছোট ছোট চোখ সব সময় আনন্দে মিট মিট করছে। কীসের এত আনন্দ তাও বোঝা যায় না ছাই। বৌ বেজায় খিটখিটে, একটা ছেলে দিল্লীতে চাকরি করে, পুজোর সময় একটা করে চিঠি লেখে। একটা মেয়ে, বেজায় ফ্যাশানেবল, ছোট খামার বাড়িতে খাবার টেবিলে লাল লিনো পাতা দেখে নাক সিঁটকায় আর বলে “পুজোর সময় যেন আবার আমার জন্য তুমি কাপড় পছন্দ করতে যেও না বাবা, শেষটা কাকে দান করব ভেবে পাব না।” তার ওপর মামার কুকুর পোষার শখ, সে মামি কিছুতেই দেবে না। কুকুরের লোম খেলে নাকি ক্যান্সার হয় আর কুকুর চাটলে কিডনিতে পোকা হয়। ছোট মামা তাই অন্য লোকের বাড়ির কুকুরের গায়ে হাত বোলায় আর নেড়িকুত্তারা যখন ওর পা চাটে, আহ্লাদে ওর দু-চোখ বুজে যায়।

একটা নাতি একটা নাতনি। কিন্তু দিল্লী থেকে বৌমা কখনো চিঠি লিখে যেতে বলে না। ওদের নাকি দুটো অ্যালসেশিয়ান কুকুর আছে। নাতিনাতনির জন্য একবার ছেলের হাতে কটকের কাঠের খেলনা পাঠিয়েছিল ছোটমামা, মামি যদিও বারণ করেছিল। পরের বার আপিসের কাজে আবার যখন ছেলে এল, খেলনা ফিরিয়ে আনল। বৌমা বলেছে ওসব রঙে নাকি বিষ থাকে, কক্ষনও কিনবে না। এইবার গরমের সময়ে দক্ষিণাবাবুদের সঙ্গে দারজিলিং গেল ছোটমামা, খেলনাগুলো সঙ্গে নিয়ে। সেখানে একবার দেখে গেছিল সুতোর কাটিম নিয়ে রাস্তার নেপালী ছেলেরা খেলা করছে। তারা নালার জল খায়, রঙিন খেলনায় তাদের নিশ্চয় কোনো ক্ষতি হবে না। তাছাড়া খেলনাগুলোকে আমি আচ্ছা করে ঘষে সাবান দিয়ে ধুয়ে দিয়েছিলাম, এতটুকুও রঙ ওঠেনি। বৌটা যেন কী!

দক্ষিণাবাবু ছোট মামার আপিসে কাজ করতেন; এখন কেবলি নানা ছিঁকে রোগে ভোগেন। ছোট মামার পেয়ারের বন্ধু; এক সময় প্রত্যেক শনি-রবিবার তাস খেলতেন; এখন হয়ে ওঠে না। পেনশন নেবার পর ছোট্ট বাড়িতে উঠে গেছেন, সেখানে তাসখেলার জায়গা নেই। আর ছোট মামার বাড়িতে তো হতেই পারে না, কারণ দক্ষিণাবাবুর স্ত্রী পুঁটিবৌদি এই আজকের দিনেও পাতা কেটে চুল আঁচড়ান, হাতা-ওয়ালা আঁটো বডি গায়ে দেন, এক বর্ণ ইংরিজি জানেন না বলে মামি তাঁর উপর হাড়ে চটা! দক্ষিণাবাবুকেও দেখলেই রেগে যায়।

যদিও ছোটমামাকে আর দক্ষিণাবাবুকে আফিসের কাজে মাসে মাসে দারজিলিং যেতে হয়, পুঁটিবৌদির শিলিগুড়ি ছেড়ে নড়বার উপায় ছিল না। বুড়ো রুগ্‌ণ শ্বশুর, দজ্জাল শাশুড়ি, এক পাল বেয়াড়া দেওর ননদ ইত্যাদি, তার ওপর খিটখিটে এক গৃহদেবতা। অন্তত শাশুড়ি বলতেন যে পান থেকে চুন খসলে তিনি নাকি অনর্থ করবেন। মোট কথা পঁচিশ বছর শিলিগুড়িতে কাটিয়েও তাঁর দারজিলিং দেখা হল না। খালি পরিষ্কার দিন থাকলে, বিকেলে পুজোর ফুল আনার নাম করে বড় রাস্তার ওপর পালদের বাড়ি গিয়ে, মাঝে মাঝে অনেক দূরে ছায়া-ছায়া মস্ত মস্ত হাতির মতো কী যেন দেখতে পেতেন আর ভাবতেন, “আহা, ঐ হল দারজিলিং, ওখান থেকে হিমালয় দেখা যায়।” অমনি দুহাত তুলে হিমালয়ের উদ্দেশে নমস্কার করতেন। হিমালয় হলেন দেবতা। তেমন করে কিছু চাইতে পারলে তাঁর দয়া হয়। মনে মনে বলতেন, “ঠাকুর, তোমার যদি অসুবিধা না হয় তো একবার দারজিলিং দেখিও।”

এখন বুড়ো হয়েছেন, শ্বশুর-শাশুড়ি স্বর্গে গেছেন, বেয়াড়া দেওর-ননদগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে, শিলিগুড়ির বাড়ি কবে বিক্রি হয়ে গেছে। এমন সময় পুঁটিবৌদির পিসতুতো ভাই দারজিলিং থেকে চিঠি লিখলেন, “কার্ট রোডের নীচে আমার ‘সুরিয়া’ হোটেল খুবই ভালো চলছে। দুঃখের বিষয় গিন্নিকে নিয়ে দুমাসের জন্য আমাকে দক্ষিণ-ভারতে তীর্থ করতে যেতে হচ্ছে। দক্ষিণাবাবুর তো রেলের রেস্তোরাঁর অভ্যাস আছে, এ দিকের হালচাল-ও জানা আছে। তোরা যদি দয়া করে ঐ দুটো মাস হোটেলটার ভার নিস্‌ তাহলে বেঁচে যাই। খরচপত্র পাঁচশো টাকা পাঠালাম।”

দক্ষিণাবাবু ডাক্তারের কাছে গেছিলেন, কেমন একটা ঘুসঘুসে জ্বর হচ্ছিল রোজ। পুঁটিবৌদি তাঁকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই উত্তর দিয়ে দিলেন যে অতি অবশ্যই তাঁরা ঐ তারিখে দারজিলিং-এ পৌঁছবেন। তাঁর অনেক দিনের শখ ঠাকুর পূর্ণ করলেন ইত্যাদি। তারপর পাশের বাড়ির বটকেষ্ট ঠাকুরপোকে দিয়ে ঠিকানা লিখিয়ে দক্ষিণাবাবু ফিরবার আগেই একেবারে পোস্টাপিসে পাঠিয়ে ডাকে দিলেন যাতে অন্যথা না হয়। বটকেষ্ট ঠাকুরপো হল আমার ছোট মামা।

দক্ষিণাবাবু এসেই ক্যাম্বিসের ডেক-চেয়ারে বসে গোঁজ হয়ে রইলেন। জুতো পর্যন্ত ছাড়লেন না। পুঁটিবৌদি চটি এনে জুতোর ফিতে খুলতে খুলতে বললেন, “কী হল?”

দক্ষিণাবাবু কাষ্ঠ হেসে বললেন, “দারজিলিং, কার্সিয়াং যেতে বলছে।”

পুঁটিবৌদি বললেন, “সূরিয়া মানে কী?”

দক্ষিণাবাব বিরক্ত হলেন, “সরিয়া মানে সর্য। তাই দিয়ে কী হবে?”

“ঐ তো ঠিকানা। সূরিয়া, ওয়াডেল্‌ রোড, দারজিলিং।” দক্ষিণাবাবু আকাশ থেকে পড়লেন। তারপর অনেক ধৈর্য অবলম্বন করে বৌদির কাছ থেকে চিঠি আদায় করে, সেটা পড়ে বললেন, “নিঃসন্দেহে ভগবানের দয়া। কিন্তু এই শরীর নিয়ে হোটেলের ঝক্কি বইতে পারব কেন?”

“বটকেষ্ট ঠাকুরপো বইবে। তোমার মতো তার বাক্সেও গরম জামা আছে। কুমুদিনী-দিদি মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে কাশ্মীর গেছেন। বটকেষ্ট ঠাকুরপো যাবেন বলেছেন।”

ব্যস্‌, দুদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেল। কলকাতার বাড়িতে আমার আরেক মামাতো ভাই আর বুড়ো বামুনঠাকুর রইল। ছোট মামা ওদের সঙ্গে রওনা হল। পুঁটিবৌদি পাঁজি দেখে দিন ঠিক করলেন। মুড়ি পরটা সন্দেশ সঙ্গে নিলেন। রওনাও হলেন, সেখানে নিরাপদে পৌঁছোলেন-ও, কিন্তু তার পরেই এক গেরো। ‘সূরিয়া’ হোটেলে খবর পাওয়া গেল মালিক আর তাঁর স্ত্রী গতকাল তীর্থে গেছেন। এক পাঞ্জাবী ছোকরা ছপরি পরে মালিকের কোয়ার্টার দখল করে আছে, তাকে নাকি মালিক দুমাস থাকতে বলে গেছেন। হোটেল দেখাশুনা অবিশ্যি দক্ষিণাবাবু করবেন।

বলা বাহুল্য ছোকরার সঙ্গে ঝগড়া করা বুদ্ধির কাজ হত না। দক্ষিণাবাবু এতই কাতর হলেন যে সূরিয়া হোটেলের আপিস ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ফার্স্ট এড দিতে হল। হোটেলেই হয়তো চেষ্টা করে থাকার ব্যবস্থা করা যেত কিন্তু পুঁটিবৌদি কিছুতেই রাজী হলেন না। তিনি রান্নাঘরের ছাদে মোরগ বসে থাকতে দেখেছিলেন।

এতক্ষণ পরে ছোটমামার হঠাৎ ডা, ভাগতের বাড়ির কথা মনে পড়ল। সেকালে বাইরে থেকে দেখা চমৎকার বাড়ি, চারদিকে বাঁধানো চাতাল, পাহাড়ের গায়ে চেরি-গাছ, ব্ল্যাক-বেরি গাছ। কিন্তু বাড়িতে কেউ থাকত না। ডা. ভাগত কোন কালে স্বর্গে গেছেন। আহা! গরিব-দুঃখীদের, জন্তু-জানোয়ারদের মিনি-মাগনা চিকিৎসা করতেন। তাঁর বাড়ি থেকে সাহায্য চেয়ে কেউ খালি হাতে ফিরত না। কত অনাথ ছেলে, অনাথ কুকুর ও-বাড়িতে থাকত। অথচ লোকের এমনি কুসংস্কার যে বলবে ও বাড়িতে কিছু আছে কেউ ওদিক মাড়াবে না। ছোটমামা একবার একটা আইরিশ সেটারের বাচ্চা দিয়েছিলেন ডা. ভাগতকে, গিন্নি তো আর পুষতে দিত না। বেশ খাড়াই রাস্তার ওপর বাড়ি, সেই রাস্তা দিয়ে সহজে কেউ যাবে না! এ-সব কথা ছোটমামা অনেক কাল আগেই শুনেছিলেন। দক্ষিণাবাবুও হয়তো শুনেছিলেন, তাঁর হয়তো মনে নেই। কুকুরটা অনেক দিন ছিল ও-বাড়িতে সে-ও আজ ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর হবে। ডা. ভাগত নেই, আর কুকুর ১৪|১৫ বছর বাঁচল তো ঢের।

অফিস ঘরের কৌচে দক্ষিণাবাবুকে শুতে বলে, পুঁটিবৌদিকে বসিয়ে ছোটমামা ওই খাড়া রাস্তা দিয়ে পাহাড়ে চড়তে লাগল। অভ্যাস চলে গেছিল, বেজায় হাঁপ ধরছিল, একটু দূর যায় আর একবার করে পাথরের দেয়ালে বসে হাঁপায়। এমন সময় একটা চমৎকার আইরিশ-সেটার পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসে ওর সঙ্গ নিল। ছোটমামা গলে গেল, তার মাথায় হাত বোলাতে গিয়ে দেখল গলায় কলার বাঁধা। তাতে পেতলের হরফে লেখা ‘রেড’! বাঃ, বেশ নাম। ছোটমামা অনেক সময় ভেবেছিল মামি কুকুর রাখতে দিলে এইরকম কুকুর রাখবে, তার নাম দেবে ‘রেড’। আর সত্যি সত্যি ‘রেড’ এসে হাজির! ‘রেড, রেড’ বলে ডাকতেই কুকুরটা ছোটমামার হাত-মুখ চেটে একাকার করে দিল। মামি দেখলে ফিট হত নিশ্চয়।

দম ফিরে এলে ছোটমামা উঠে আবার পথ ধরল। ‘রেড’ সঙ্গে সঙ্গে চলল।

ছোটমামা যায় আর চেনা পথের সঙ্গে নতুন করে চেনা হয়। ওই সেই চেরি গাছ, পথ থেকে হাত বাড়িয়ে ওর ফল পাড়া যায়। ঐ বাঁকের কাছে হঠাৎ দুটো সিঁড়ির ধাপ, অন্যমনস্ক হলে হোঁচট খাবার ভয়। তার পরেই ডা. ভাগতের লাল লোহার ফটক। ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে ‘রেড’ ল্যাজ নাড়তে লাগল। ছোটমামা মুচকি হাসলে। বলে জন্তু-জানোয়ারের একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় থাকে, যার সাহায্যে মানুষ কিছু বুঝবার আগেই তারা অলৌকিক ব্যাপার টের পায়। ‘রেড’ কিন্তু ছোটমামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির মধ্যে ঢুকল। লাল জিবটা একটু খুলে রইল, মনে হল মিটিমিটি হাসছে।

চমৎকার যত্নে রাখা বাড়ি। এই নাকি হানাবাড়ির চেহারা! সামনে সবুজ দরজা বন্ধ। পেতলের হাতল, চিঠি ফেলবার চাকতি, ঝকঝক করছে। দুপাশে জেরেনিয়ম ফুলের সারি, সযত্নে সাজানো ফুলের টব। রেড বাড়ির পাশ ঘুরে পিছন দিকে চলল। ছোটমামাকে ইতস্তত করতে দেখে মাথা ঘুরিয়ে ল্যাজ নেড়ে আশ্বাস দিতে লাগল।

রান্নাবাড়িটা একটু আলাদা। বড় বাড়ির পিছনের কাচের দরজা থেকে টালির ছাদ দেওয়া লম্বা একটা পথ দিয়ে যেতে হয়। সেখান থেকে সাদা কাপড়পরা ফিটফাট এক বুড়ো বেয়ারা বেরিয়ে এসে, সেলাম করল। তার কাছে সমস্যার কথা তুলতেই সে হেসে বলল, “কোনো অসুবিধা নেই, বাবুসাহেব, মাজির রান্নার জন্য সাহেবের বামুনঠাকুর আছে!” ঝপ করে মনে পড়ল সবাই বলত ডা. ভাগত নিরামিষ খান, সাত্ত্বিক জীবনযাপন করেন। এর সায়েব বোধ হয় তাঁর ভাইপোটাইপো হবে। তিনি তো ব্যাচেলার ছিলেন।

বামুনঠাকুরও বেরিয়ে এল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব ব্যবস্থা হল। বার বাড়ি খুলে কাজ নেই। রান্নাঘরের পাশে ছোট একটি অতিথিশালা, ডাক্তারের দুই একজন রুগী থাকত। দুটি ঘর, দুটি স্নানের ঘর, সারাদিন রোদে ভরে থাকে, যেদিকে তাকানো যায় হিমালয় পাহাড়। বাইরে প্যানজি ফুল।

সেই বাড়িতে ছোটমামা দক্ষিণাবাবুদের তুলল এবং পরম আরামে ওরা সাত সপ্তাহ কাটাল।

দক্ষিণাবাবু আর বৌদি সারাদিন রোদ পোয়াতেন, বাগানে বেড়াতেন, হিমালয় দেখতেন। ছোটমামা সূরিয়া হোটেলের কাজ দেখত। ঐ পাঞ্জাবি ছোকরা ওখানকার ম্যানেজার, তার নিজের কোয়ার্টার ছিল। মালিকের বাড়িতে বোধ হয় কোনো বন্ধু-বান্ধবকে তুলেছিল। ছোটমামা কোথায় উঠল, সে বিষয়ে কেউ কৌতূহল দেখাল না। ভালই হল। ও বিষয়ে কিছু আলোচনা করার ইচ্ছাও ছোটমামার ছিল না। দুপুরে সে হোটেলে খেত; এক সময় হাটবাজার করে রাখত। রাতে বাড়ি যাওয়ার সময় সওদা নিয়ে যেত। রেড ওই সল্ট হিল রোডের তলায় ওর জন্য রোজ অপেক্ষা করত। বাড়ি পৌঁছে ছোটমামা দেখত আগের দিন কেনা মাছ তরকারি বামুনঠাকুর বেঁধে রেখেছে, আর সে কী রান্না!

হু হু করে সাত সপ্তাহ কেটে গেল, হোটেলে পুঁটিবৌদির নামে চিঠি এল, ওর পিসতুতো দাদা-বৌদি এক সপ্তাহ আগেই ফিরে আসছেন। সে খবর পাবামাত্র পাঞ্জাবি ছোকরা মালিকের বাড়ি খালি করে দিয়ে আমতা আমতা করে এদের বাড়ি দখল করতে বলল। ততদিনে দক্ষিণাবাবুর শরীরে তাগদ হয়েছে। শেষের দু সপ্তাহ তিনিই কাজের ভার নিয়েছিলেন। এতে তাঁর খুব সুবিধা হল।

ছোটমামা তাঁদের গুছিয়ে বসিয়ে নিজের স্যুটকেসটি স্টেশনে জমা করে দিয়ে, শেষ একবারের মতো সল্ট হিল রোড বেয়ে ওপরে উঠে ডা. ভাগতের বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁ করে চেয়ে রইল। কোথায় ডা. ভাগতের বাড়ি? বড় বাড়ির ভিতরে কিছু চিহ্ন ছিল বটে, তার ওপর গোছা গোছা হলদে প্রিমরোজ ফুটে ছিল। রান্নাবাড়ির আর ছোট বাড়ির জায়গাটা কবেকার কোন ধ্বসের সঙ্গে নীচে নেমে গিয়েছিল। সেখানে শুধু একটা সাদা গোলাপ লতা বাতাসে দুলছিল।

ছোটমামার চোখ ঝাপসা হয়ে এল। সে তাড়াতাড়ি ফিরে বড় বড় পা ফেলে নামতে শুরু করল। অমনই চারদিক ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেল। তারই মধ্যে ছোটমামা টের পেল হাতের নীচে রেশমের মতো নরম একটা মাথা। মনটা অমনই শান্ত হয়ে গেল। জীবনের ব্যর্থতাগুলোকে মনে হল কিছু না। সল্ট হিল রোডের নীচে পৌঁছে, রেড ওর হাত চেটে দিয়ে চলে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *