1 of 2

ধ্বংসযজ্ঞ – ১২

বারো

‘ডক্টর রেজা, ইমার্জেন্সি কল। ওয়াশিংটন থেকে।’

ডেকে দাঁড়িয়ে দিগন্তে ঘনিয়ে আসা ঝড়ের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছিল আসিফ রেজা, ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়াল। অল্পবয়েসী এক নাবিক উদয় হয়েছে।

‘নুমা হেডকোয়ার্টার?’ জিজ্ঞেস করল ও।

‘জী। অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন কথা বলতে চাইছেন আপনার সঙ্গে।’

মাথা ঝাঁকিয়ে কমিউনিকেশন রুমের দিকে পা বাড়াল আসিফ। বাঙালি ছেলেদের তুলনায় বেশ লম্বা বলা চলে ওকে, ছিপছিপে, একহারা দেহ। প্রথম দেখায় তাকে বা তার স্ত্রী তানিয়াকে মোটেই বিজ্ঞানী বলে মনে হয় না, মনে হয় কলেজ-পড়ুয়া চপল তরুণ-তরুণী। বাস্তবে দু’জনেরই বয়স ত্রিশ; পেশায় মেরিন সায়েন্টিস্ট। নিজেদের কাজে অত্যন্ত দক্ষ ওরা, সেই সঙ্গে পছন্দ করে রোমাঞ্চ; সেজন্যেই বন্ধু মাসুদ রানার সহযোগিতায় যোগ দিয়েছে নুমায়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আস্থাভাজন হয়ে উঠেছে অ্যাডমিরাল জর্জ হ্যামিলটন-সহ নুমার সকলের।

এ-মুহূর্তে নুমার জাহাজ অ্যাডভেঞ্চারার নিয়ে দক্ষিণ আটলান্টিকে রয়েছে ওরা, ফকল্যাণ্ড যুদ্ধে ডুবে যাওয়া কয়েকটা ব্রিটিশ জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজছে যুক্তরাজ্য সরকারের অনুরোধে। আপদ-বিপদহীন, নির্বিঘ্ন কাজ; নিয়মিত রিপোর্টও পাঠানো হচ্ছে; তারপরেও অ্যাডমিরাল কথা বলতে চাইছেন মানে নতুন কিছু ঘটেছে।

কমিউনিকেশন রুমে ঢুকল আসিফ। ভিডিও মনিটরের সামনে গিয়ে বসল। অ্যাডমিরাল হ্যামিলটনের চেহারা ফুটে উঠেছে ওতে।

‘গুড মর্নিং, অ্যাডমিরাল,’ সম্ভাষণ জানাল ও।

‘গুড মর্নিং,’ পাল্টা সম্ভাষণ জানালেন অ্যাডমিরাল। ‘কী খবর তোমাদের?’

‘সব ভাল, স্যর। এইচএমএস শেফিল্ডের রেক লোকেট করেছি আমরা। জলকন্যাকে নিয়ে ওটাতে ডাইভ দিচ্ছে তানিয়া।

‘আর ক’দিন লাগবে তোমাদের?’ জানতে চাইলেন অ্যাডমিরাল।

থুতনি চুলকাল আসিফ। ‘বলা কঠিন। বিশাল বড় এলাকা, সরগুলো রেক খুঁজে বের করতে সময় দরকার। কেন?’

‘তোমাদেরকে আরেকটা কাজ দিতে চাই আমি।’

‘ব্রিটিশ দু’জন প্রতিনিধি আছে জাহাজে। ওরা কি এ-কাজ ফেলে অন্য কোথাও যেতে রাজি হবে?’

‘ওদেরকে সামলাবার দায়িত্ব তোমার। ‘কাজটা কী?’

খুলে বললেন অ্যাডমিরাল। আলোচনা সেরে পনেরো মিনিট পর কমিউনিকেশন রুম থেকে বেরিয়ে এল আসিফ। ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দেখা করল প্রথমে, শলা-পরামর্শ করল; তারপর সিঁড়ি ধরে নেমে গেল নিচে। কয়েকটা প্যাসেজ আর হ্যাচ পেরিয়ে পৌঁছে গেল প্রশস্ত এক কন্ট্রোল রুমে। বাড়তি কোনও বাতি জ্বলছে না ভেতরে, দেয়ালজুড়ে লাগানো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক প্যানেল আর তিনটে এলইডি মনিটরের আলোয় মৃদুভাবে আলোকিত হয়ে আছে কামরাটা।

নিরানন্দ চেহারার দু’জন মাঝবয়েসী ভদ্রলোক বসে আছেন দুটো মনিটরের সামনে। তাঁদের মাঝখানে, দেয়ালের দিকে পিঠ ফিরিয়ে, গ্রিড আঁকা একটা কাঁচের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে তানিয়া। টান টান হয়ে আছে সুগঠিত দেহ, দু’হাত প্রসারিত; দেখে মনে হতে পারে দড়ির ওপর ব্যালেন্স রক্ষা করতে চাইছে একজন ট্র্যাপিজ আর্টিস্ট। চোখ ঢাকা পড়ে আছে একটা ভাইজরে, হাতে অদ্ভুত দুটো দস্তানা, পায়ে ধাতব বুট—সবগুলো থেকেই বিভিন্ন রকম তার বেরিয়ে মিশেছে ওর পেছনের একটা কম্পিউটারে।

মৃদু হাসল আসিফ—যান্ত্রিক এক ব্যালেরিনার মত লাগছে ওর স্ত্রীকে। ডানদিকে মুখ ঘোরাল তানিয়া, সঙ্গে সঙ্গে মনিটরের ছবিও ডানে ঘুরল খানিকটা। উজ্জ্বল আলোয় দেখা গেল পলিমাটিতে ঢাকা একটা জাহাজের খোল, আর সেটার গায়ে হাঁ করে থাকা একটা গর্ত।

‘জেন্টলমেন,’ দর্শক হিসেবে বসে থাকা লোকদুটোর উদ্দেশে বলল তানিয়া। ‘এটাই সেই এন্ট্রি পয়েন্ট। এখান দিয়ে আপনাদের জাহাজে ঢুকেছিল মিসাইল।’

‘দেখে তো আঘাতটা গুরুতর মনে হচ্ছে না,’ ব্রিটিশ উচ্চারণে বললেন একজন। মুখভরা চাপদাড়ি তাঁর। নাম, নাইজেল বিলিংস।

‘সেজন্যেই হিট হবার পরেও ছ’দিন ভেসে ছিল জাহাজটা।’

ফকল্যাণ্ড যুদ্ধের প্রথম বড় শিকার এইচএমএস শেফিল্ড—ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির অত্যাধুনিক এক ডেস্ট্রয়ার। আর্জেন্টাইন ফাইটার থেকে ছোঁড়া এক্সোসেট মিসাইলে ঘায়েল হয় ওটা। কোনও এক বিচিত্র কারণে বিস্ফোরিত হয়নি মিসাইলটা, তারপরেও আগুন ধরে গিয়েছিল পুরো জাহাজে। ধুঁকে ধুঁকে টিকে ছিল ছ’দিন, এরপর টো করে সরিয়ে নেবার সময় ডুবে যায়।

‘ব্লাডি ফ্রেঞ্চ!’ দ্বিতীয় ভদ্রলোক গাল দিয়ে উঠলেন। এঁর নাম ব্যারি ইভান্স। এক্সোসেট ফরাসিদের বানানো মিসাইল, সেজন্যেই তাঁর এত রাগ। ‘ওয়াটারলু আর ট্রাফালগারে হারের শোধ নিয়েছে এভাবে।’

‘কথাটা ঠিক নয়,’’ বললেন নাইজেল। ‘ওরা বরং আমাদেরকে মিসাইলগুলোর দুর্বলতা সংক্রান্ত সব তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছিল। সেজন্যেই পরে ঠেকানো গেছে সব আক্রমণ। অবশ্য… আমাদের শত্রুর কাছে মিসাইল বিক্রির আগে আরেকটু ভাবনাচিন্তা করতে পারত ওরা।’

‘আমিও সে-কথাই বলছি।’

মনিটরের দিকে ইশারা করলেন নাইজেল। তানিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভেতরে যেতে পারবেন?’

‘নিশ্চয়ই।’

ডান হাত নেড়ে মুঠো বন্ধ করল তানিয়া, অদৃশ্য একটা নব ধরল। মনিটরে পলির আলোড়ন উঠল, গর্তের দিকে এগিয়ে গেল ক্যামেরা।

দেয়ালে লাগানো একটা ডিসপ্লের দিকে কাল আসিফ, ফার্স্ট পারসন শুটার গেমের মত একটা দৃশ্য ভেসে উঠেছে ওতে, তানিয়াও একই দৃশ্য দেখছে ওর ভাইজরে। একটা কন্ট্রোল প্যানেল দেখা যাচ্ছে ওতে, সেই সঙ্গে নানা ধরনের ইণ্ডিকেটর—ডেপথ, প্রেশার, টেম্পারেচার, ইত্যাদি প্রদর্শন করছে।

দ্বিতীয় আরেকটা ডিসপ্লেতে ফুটে উঠেছে কয়েক মিটার পেছনে বসানো আরেকটা ক্যামেরার ফিড—এটায় তানিয়া যে-জিনিসটাকে অপারেট করছে, সেটা দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। হঠাৎ দেখায় রোবট বলে ভ্রম হয়, আসলে ওটা একটা আরওভি—মানুষ আকৃতির।

‘আমবিলিক্যাল কর্ড ডিটাচ করছি,’ বলল তানিয়া।

আরওভি টেকনোলজির একেবারে নবীন সংযোজন ওই যন্ত্রটা। নুমার কয়েকজন বিজ্ঞানী মিলে তৈরি করেছেন। নাম দেয়া হয়েছে, হিউম্যান-শেপড রোবোটিক আণ্ডারওয়াটার এক্সপ্লোরার। কঠিন এ-নাম পছন্দ হয়নি তানিয়ার, জলকন্যা বলে ডাকতে শুরু করেছে ওটাকে। সেটাই ছড়িয়ে পড়েছে সবার মাঝে।

প্রচলিত যে-কোনও আরওভি-র চেয়ে আকারে অনেক ছোট জলকন্যা। গড়ন মানুষের মত, হাত-পা-পিঠ ভাঁজ করতে পারে… ফলে পানির তলায় এমন অনেক জায়গায় যেতে পারে, যেখানে অন্য কোনও যন্ত্র পাঠানো কঠিন। চাইলে হাত-পাগুলো রিট্র্যাক্ট করে ঢুকিয়ে ফেলা যায় দেহের ভেতর, আরও ছোট করে ফেলা যায় আকার। ছোটখাট গর্তেও ঢুকে যেতে পারে তখন।

এক মাইল লম্বা আমবিলিক্যাল কর্ডের মাধ্যমে অ্যাডভেঞ্চারারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে জলকন্যা, নিয়ন্ত্রণ করতে হয় কন্ট্রোল রুমে বসানো ভার্চুয়াল কন্ট্রোল থেকে, যেমনটা তানিয়া এখন করছে। পাইলটিঙের অভিজ্ঞতাটা অনেকটা থ্রিডি গেমের মত। ভাইজরের কল্যাণে নিজেকে জলকন্যার জায়গায় আবিষ্কার করে পাইলট; এমনভাবে ওটাকে অপারেট করতে পারে, যেন নিজেই ডুব দিয়েছে পানির নিচে। এর জন্যে ফার্স্ট পারসন বা থার্ড পারসন, দুটো ভিউয়েরই ব্যবস্থা রয়েছে—জলকন্যার চোখে বসানো হয়েছে একটা ক্যামেরা, আরেকটা ক্যামেরা রয়েছে পেছনের কর্ডের গায়ে। কর্ডটা চাইলে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়—বিশেষ করে যদি কোনও পরিবেশে ওটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমবিলিক্যাল কর্ডের সাপোর্ট ছাড়াও ইন্টারনাল ব্যাটারির সাহায্যে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সচল থাকতে পারে জলকন্যা।

এখনও এক্সপেরিমেন্টাল স্টেজে রয়েছে যন্ত্রটা। ধারণা করা হচ্ছে, আণ্ডারওয়াটার সার্ভে আর স্যালভিজের ফিল্ডে বিপ্লব ঘটিয়ে দেবে ওটা। ফকল্যাণ্ডে পাঠানো হয়েছে ফাইনাল ট্রায়ালের জন্যে।

টুকটাক কিছু সমস্যা যে রয়েছে, তা প্রমাণ হয়ে গেল তানিয়ার কথা থেকে। অদৃশ্য একটা বোতাম চাপছে ও, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। জলকন্যার শরীর থেকে খুলছে না আমবিলিক্যাল কর্ড।

‘হলোটা কী!’ বিরক্ত গলায় বলল ও। ‘দাঁড়ান, সিকোয়েন্সটা রিসেট করছি।’

তাড়াতাড়ি নাক গলাল আসিফ। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ‘বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত, জেণ্টলমেন। তবে জলকন্যাকে এখন বাড়ি ফিরতে হবে।’

‘কে ওখানে?’ ভাইজরের জন্যে কিছু দেখতে পাচ্ছে না তানিয়া। ‘আসিফ, তুমি?’

‘হ্যাঁ,’ বলল আসিফ। ‘ঝড় আসছে। সবকিছু গুটিয়ে উত্তরে চলে যেতে হবে আমাদেরকে — সাগর উত্তাল হয়ে ওঠার আগেই।’

ভাইজর সরিয়ে বিস্মিত চোখে ওর দিকে তাকাল তানিয়া। চোখাচোখি হলো দু’জনের। নীরবে ওকে কিছু বলল আসিফ, মাথা ঝাঁকিয়ে ভাইজরটা আবার চোখের ওপর টানল। হাতের একটা ভঙ্গি করতেই ডিসপ্লেতে ভেসে উঠল মেসেজ: অটো রিটার্ন।

ক্যামেরার দৃশ্য বদলে গেল। শেফিল্ডের পাশ থেকে সরে এল জলকন্যা। দিক পাল্টে ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করল ওপরে।

ভাইজর আর গ্লাভস্ খুলে ফেলল তানিয়া, পা বের করে, নিল বুট থেকে। প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে এল। একটু টলছে। তাড়াতাড়ি ওকে ধরে ফেলল আসিফ।

‘ঠিক আছ?’ জানতে চাইল নরম গলায়।

‘হুঁ,’ মাথা ঝাঁকাল তানিয়া। ‘এতক্ষণ ভার্চুয়াল পরিবেশে ছিলাম তো, সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে।’ চোখ পিটপিট করল। বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে দৃষ্টি। এরপর হাসল স্বামীর দিকে তাকিয়ে।

‘কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?’ আসিফ জিজ্ঞেস করল।

‘সত্যি সত্যিই যেন গিয়েছিলাম নিচে,’ বলল তানিয়া। ‘পার্থক্য শুধু এ-ই যে, শরীর সম্পূর্ণ শুকনো, ঠাণ্ডাও লাগছে না। ফিরে আসতে পনেরো মিনিট নেবে জলকন্যা, এই ফাঁকে আমরা লাঞ্চটা সেরে নিতে পারি।’

গলা খাঁকারি দিলেন এক অতিথি।

‘সরি,’ তাঁদের দিকে ফিরে বলল তানিয়া। ‘আপনারাও আমন্ত্রিত। চলুন, খাওয়াদাওয়া সেরে নেয়া যাক। এরপর দেখব, আমবিলিক্যাল কর্ড ডিটাচ হলো না কেন। সমস্যাটা ঠিক করে নেবার পর আবার নাহয় নামানো যাবে জলকন্যাকে।’

‘সেটা বোধহয় সম্ভব হবে না,’ বেরসিকের মত বলল আসিফ। ‘আগামী কয়েকদিনের ওয়েদার রিপোর্ট ভাল নয়। মনে হয় না মাস শেষ হবার আগে আর ফিরতে পারব আমরা।’

বিরক্ত হলেন ইভান্স। ‘প্ল্যান করার সময় এসব দেখেননি? আমরা কি তা হলে বসে বসে ভেরেণ্ডা ভাজব আগামী কয়েকদিন?’

‘না, না, তার কোনও প্রয়োজন নেই। উত্তরে যাচ্ছি আমরা। ঝড়ের আওতা থেকে বেরুলেই একটা হেলিকপ্টার এসে তুলে নেবে আপনাদেরকে। উরুগুয়েতে নিয়ে যাবে। সেখান থেকে বিমানে চেপে ইংল্যাণ্ডে ফিরতে পারবেন। ক্যাপ্টেন সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।

ভুরু কোঁচকালেন নাইজেল। ‘হঠাৎ করে এভাবে… আমাদের তাড়াতে চাইছেন নাকি?’

‘কী যে বলেন! হঠাৎ করে আবহাওয়া বিরূপ হয়ে উঠেছে, কিছু তো করার নেই। আপনারাই বা জাহাজে বন্দি হয়ে থাকবেন কেন? তারচেয়ে বাড়ি ফিরে ক’দিন বিশ্রাম নিন। কথা দিচ্ছি, এদিকে ফিরে এলেই আপনাদের আবার খবর দেব আমরা।’

কাঁধ ঝাঁকালেন নাইজেল। ‘বেশ, আপনারা যদি তা-ই ভাল মনে করেন।’

সঙ্গীকে নিয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

সোজা হতেই তানিয়ার চোখে বাঁকা দৃষ্টি দেখল আসিফ। ‘ঘটনা খুলে বলো তো? এই ঝড় যে দু’দিনের বেশি টিকবে না, তা তুমি যেমন জানো, আমিও জানি।’

‘ওরা জানে না,’ বলল আসিফ। ‘সুযোগটা কাজে লাগালাম।’

‘কিন্তু কেন?’

‘অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন কল করেছিলেন। একটা কাজ দিয়েছেন আমাদেরকে।’

‘কী কাজ?’

‘সেদিন একটা কার্গো ক্যারিয়ার ডুবে গেছে আফ্রিকার উপকূলে, শোনোনি? রানা ছিল ওখানে… ক্যাপ্টেনের স্ত্রীকে উদ্ধার করেছে।’

‘এ আর নতুন কী? বিপদ রানাকে চুম্বকের মত টানে।

‘তা অবশ্য ঠিক,’ হাসল আসিফ। ‘তবে ব্যাপার হলো কী, প্রেসকে যতটুকু জানানো হয়েছে, ঘটনা তারচেয়ে অনেক জটিল।’

‘কী রকম?’

‘জলদস্যুরা জাহাজের সব ক্রুকে খুন করেছে, তারপর ইচ্ছে করে ডুবিয়ে দিয়েছে জাহাজ।’

‘জলদস্যুতার সঙ্গে মিলল না ব্যাপারটা।’

‘রাইট। রানা বা অ্যাডমিরাল হ্যামিলটন, কারও কাছেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না ঘটনাটা। ইনশিয়োরেন্স কোম্পানির কাছেও না। অ্যাডমিরাল চাইছেন, জলকন্যাকে নিয়ে আমরা যেন রেক-টায় তল্লাশি চালাই।’

‘হুম,’ মাথা ঝাঁকাল তানিয়া। ‘সাদামাঠা কাজ। তা হলে তোমাকে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে কেন?’

‘অ্যাডমিরালই উদ্বিগ্ন হতে বলেছেন,’ বলল আসিফ। ‘কিছু একটা ধামাচাপা দেবার জন্যে ডোবানো হয়েছে জাহাজটা। আমরা যদি খোঁচাখুঁচি করতে যাই, সেটা ভাল চোখে দেখা না-ও হতে পারে।’

ওর হাত ধরল তানিয়া। ‘সেজন্যে কবে পিছিয়ে গেছি আমরা, বলো?’

উজ্জ্বল হলো আসিফের মুখ। ‘খাঁটি কথা,’ সায় জানাল সে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *