জেদি – স্টিফেন গোল্ডিন

জেদি – স্টিফেন গোল্ডিন

ফ্রেডরিক ফন বার্লিং দি থার্ড এক নমস্য ব্যক্তি।

পাঁচ বছর বয়সে, ছোট্ট ফ্রেডরিক মাকে বলল- মা, তুমি আমাকে সুপারডুপার রকেট আর অ্যাস্ট্রোনট সেট কিনে দেবে?

–না, ফ্রেডি। ওর দাম অনেক। ২৮.৯৫ ডলার। তুমি খুব ভালো ছেলে। কেঁদো না তুমি। পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে মা বললেন।

–এই কান্না শুরু করলাম… এই দেখ’ নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকব… দেখতে দেখতে সর্বাঙ্গ আমার নীল হয়ে যাবে… ভীষণ রাগে খটখট করে জুতোর আওয়াজ করতে করতে বলল ফ্রেডি।

যা বলেছিল তার চেয়ে বেশি করে দেখাল সে… সর্বাঙ্গ ওর গোলাপি হয়ে উঠল।

তোমরা নিশ্চয় বুঝতে পারছ অচিরেই ছোট্ট ফ্রেডি সুপার-ডুপার রকেট আর অ্যাস্ট্রোনট সেট পেয়ে গেল।

দশ বছর বয়সে ফ্রেডি বাবাকে প্রশ্ন করল, তুমি কি আমাকে সত্যিকারের মতো জীবন্ত ছোট্ট ঘোড়া কিনে দেবে?

–না ফ্রেডি… ওর দাম হল ২৮৯.৫০ ডলার। যাও এখন লক্ষ্মী হয়ে খেলা করো।

ফ্রেডি আবার পা ছোঁড়া শুরু করল। বলল, আমি কাঁদব কিন্তু… আর ঘরের এক কোণে মাথার ওপর ভর দিয়ে দু’পা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকব একঘণ্টা ধরে।

মুখে বলার থেকে অনেক ভালো করে দেখাল ফ্রেডি, ঘরের কোণে মাথার ওপর ভর দিয়ে ওপরে পা তুলে পাক্কা তিন ঘণ্টা রইল।

এবারেও নিশ্চয় বুঝতে পারছ সত্যিকারের মতো জীবন্ত ছোট্ট ঘোড়া ফ্রেডি পেয়ে গেল।

ঠিক কুড়ি বছর বয়সে ফ্রেডি ওর কাকাকে বলল, আমার একটা ক্রোম রঙের কনভারটেবল স্পোর্টস কার কিনে দেবে?

কাকার তো মাথায় হাত। সে কী… ওর দাম তো ২৮৯৫ ডলার… তুমি এখন বড় হয়েছ… সব বোঝ… যাও, খেলা করো।

কাঁদব, কাঁদব, কাঁদব। মাটিতে পা ঠুকে ঠুকে আরও বলল, এই…এই জায়গায় আমি দাঁড়িয়ে থাকব সারাদিন..একটুও নড়ব না।

ছোট্ট খুকুরা ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করো। নিজ অক্ষের ওপর নিরক্ষরেখার কাছে আনুমানিক এক হাজার মাইল গতিবেগে ঘুরছে পৃথিবী। (অবশ্য তোমরা মেরুর দিকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই গতিবেগ হ্রাস পাবে… কিন্তু এখন সে সবের প্রয়োজন নেই।) পৃথিবী আবার সূর্যের চারপাশে পাক খাচ্ছে… তার গতিবেগ হল সেকেন্ডে আঠারো মাইল (পৃথিবী আর চাঁদ আবার এক সাধারণ মাধ্যাকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুকে কেন্দ্র করে বনবন করে ঘুরছে… অবশ্য এই বিন্দুটা একেবারে পৃথিবীর অভ্যন্তরে… সুতরাং এটাও এখন ধর্তব্য নয়।)–সূর্য আবার ভেগা নামক এক নক্ষত্র অভিমুখে সেকেন্ডে প্রায় বারো মাইল গতিবেগে ছুটে চলেছে।

সূর্য আবার গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের একপ্রান্তে সেকেন্ডে প্রায় একশো পঁচাত্তর মাইল বেগে বনবন করে ঘুরছে।

খুকুরা বেশ ভালো করে বোঝো। এই ছায়াপথ আবার অন্যান্য সব ছায়াপথসমূহ থেকে মহাবিশ্বের প্রান্তে ফিরে যাচ্ছে… এই গতিবেগের সমতুল্য হল দুই ছায়াপথের প্রতি দশ লক্ষ আলোক-বছরের ব্যবধান-এর হিসাবে সেকেন্ডে ষাট মাইল। তাহলে খুকুমণিরা সমস্ত ব্যাপার কী রকম দাঁড়াল? আমাদের থেকে ছায়াপথের দূরত্ব যদি দশ লক্ষ আলোক-বছর হয়, তাহলে সেকেন্ডে ষাট মাইল বেগে আমরা এর থেকে সরে যাচ্ছি। যদি এই ছায়াপথ কুড়ি লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকে তাহলে আমরা এই ছায়াপথ থেকে সেকেন্ডে একশো কুড়ি মাইল বেগে দূরে সরে যাচ্ছি।

খুকুমণিরা… এসব হল গতির খেলা… গতি আর গতি।

কিন্তু ছোট্ট ফ্রেডি একটুও নড়েনি।

তাহলে নিশ্চয় তোমাদের বলে দিতে হবে না যে, ছোট্ট ফ্রেডির সব আব্দার পূরণ হয়েছিল, যা চেয়েছিল সবই সে পেয়েছিল।