1 of 2

চিলেকোঠার সেপাই – ২৬

চিলেকোঠার সেপাই – ২৬

৪/৫ দিনের মধ্যে খিজির আলি মোটামুটি সেরে ওঠে। হাঁটুর ব্যথাটা কমতেই সে যায় বস্তিতে তার নিজের ঘরে। রাত তখন ৯টা হবে, জুম্মনের মা ফেরেনি। শত্ৰু-ড্রাইভার ও প্লায়ার ছাড়াও খিজিরের হাতে সাইকেলের নতুন ১টা চেন। সেদিন গোলমালের সুযোগে রহমতউল্লার গ্যারেজ থেকে হাতানো। নতুন মাল-অন্ধকারেও চকচক করছে।-একদিন চানস্ মেলা তো একটা দিয়া চুতমারানি বজলুটারে চাবকাইয়া এক্কেরে ফিনিস কইরা ফালান যায়—এখন এই জিনিসগুলো একটু আড়ালে রাখা দরকার। খিজির ঘরের ভেতর নিভৃত ১টি কোণ খোজে। কিন্তু দ্যাখো, এইটুকু ঘর, তার ভেতর মাল-সামান কতো! মাটির হাড়ি ৩টে, ৩টে সরা, এালুমিনিয়ামের বাটি ১টা, টিনের থাল মগ এমনকি কাচের গ্লাস পর্যন্ত আছে। আবার দ্যাখো, রুটি বেলার বেলুন। পিড়ি নাই তো বেলুন দিয়ে হবে কি?—মহাজনের বাড়ি থেকে হাতাবার সময় জুম্মনের মায়ের ছুশজ্ঞান লোপ পায়। আরে এটা কি?-হাত ঝুলিয়ে ঠাহর করতে না পেরে খিজির হাতড়ে হাতড়ে কুপি বার করে জ্বালায়। আরে বাবা! এ তো চাবি-লাগানো খেলনা-গাড়ি জুম্মন আলির আবির্ভাবের পর মহাজনের বাড়ি থেকে জুম্মনের মা তাহলে দামী দামী খেলনাও সরাতে শুরু করেছে। মোটর গাড়িটা একবার চালিয়ে দেখলে হতো!—না থাক। কোনো রকমে তার নিজের ৩টে জিনিস লুকিয়ে রেখে কেটে পড়তে হবে। বজলু শালা ভাঙা হাতপা নিয়ে পড়ে থাকলে কি হবে, মহাজনের লোকবলের কি কোনো ঘাটতি আছে?-কিন্তু এগুলো সে রাখে কোথায়? তক্তপোষের নিচে স্প্রিংওয়ালায় মোটরগাড়ির পাশে ২টো ইটের ওপর রাখা কাঠের টুকরা, শবনম ও সাবিহার রঙিন ছবিওয়ালা কাগজে ঢাকা এই কাঠের ওপর মো, পাউডার, নারকেল তেল, লিপস্টিক, এমনকি শ্যামপুর খালি বোতল। সবগুলো রহমতউল্লার মেয়ের ড্রেসিং টেবিলের মাল। খিজির উপুড় হয়ে জোরে নিশ্বাস নিলে ঘরের অক্সিজেনের-অভাবে-রুগ্ন বাতাস তার নাকের সামনে পাকা সিকনির মতো ঝোলে। নাকের তেজি একটা ফুয়ে খিজির সেটাকে ঝেড়ে ফেলতে পারে, কিন্তু তা না করে সেটাকে সে ঝুলতে দেয়। স্নো-পাউডারের গন্ধে বস্তির জলহাওয়ার আঁটোসাটো মরা গেরো খুলে যাচ্ছে, সবকিছু বেশ হালকা হয়ে আসছে। এই স্নো-পাউডার-লিপস্টিক-নেল পালিশ-নারকেল তেল রাখার কাঠের টুকরার নিচে রেখে দেয় তার স্কু-ড্রাইভার ও প্লায়ার। সাইকেলের চেন বিছিয়ে রাখে একেবারে পেছনে, যক্ষের সাপ হয়ে সেটা আগলে রাখবে তার শত্ৰু-ড্রাইভার ও প্লায়ারকে। যাক বাঞ্চোতগুলি এটু আরাম করুক। সেদিন খুব কাজ করেছে ব্যাটারা, বজলুদের মার যা সামলানো গেছে তা এদের জন্যেই। আবার এর মধ্যেই এদের খাটনি শুরু হবে, যাক কয়েকটা দিন আরাম করুক। স্ক্রু-ড্রাইভার, প্লায়ার ও চেনের ওপর বাৎসল্য খিজির বড়ো বড়ো করে কয়েকটা নিশ্বাস ছাড়ে। এই সরব নিশ্বাসের জবাব আসে পাশ থেকে, জড়ানো এ ঐ ধ্বনি শুনে সে চমকে ওঠে।—কে?—বস্তির ভারি গন্ধে মাথার ভেতর সব এলোমেলো হয়ে যায় এবং কুপিট তুলে খিজির দ্যাখে তক্তপোষের ওপর ঘুমিয়ে রয়েছে জুম্মন আলি। তার গায়ের কাথা ঝুলে পড়েছে একদিকে, তার বুকের সবটাই কাঁথার বাইরে। জুম্মনের গায়ে কথা ভালো করে টেনে দিতে দিতে খিজির তার মুখটা ভালো করে দ্যাখে। বসন্ত হওয়ার আগে জুম্মনের মায়ের মুখটাও হয়তো এমনি পিছলা লাগতো। জুম্মনের মায়ের অনেক আগেকার, তার সঙ্গে দ্যাখা হওয়ারও আগেকার চেহারা ভালো করে ঠাহর করার জন্য বা হাতের আঙুলগুলো খিজির আলগোছে রাখে জুম্মনের গালে। জুম্মনের চোখজোড়া সম্পূর্ণ খুলে যায় এবং ফুফু’ বলে সে ২বার ডাকে। তার গালে ও লালচে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে খিজির বলে, ডরাস না! তুই কহন আইলি? জুম্মনের ঘুম একেবারে ভেঙে গেলে ভীতু চোখে সে খিজিরকে দ্যাখে এবং দরজার দিকে সেই চোখজোড়া ফিরিয়ে ভয়-পাওয়া গলায় বলে, ‘মা!’
দরজায় সত্যি সত্যি জুম্মনের মা! ৫ দিন পর স্বামীকে দেখে তার প্রতিক্রিয়া কি হলো বোঝা কঠিন। ঝাপশা আলোতে তার মুখের ভাঁজ, গর্ত ও বসন্তের দাগ সব সমান। মাকে দেখে জুম্মন ফের ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু একটু আগে তার ভয় পাওয়াটা ধাক্কা দেয় খিজিরকে। বেদম মার-খাওয়া বুকে ও পিঠে নতুন ব্যথা চিনচিন করে আমার খায়, আমার ভাড়া করা ঘরের মইদ্যে আমার খ্যাতার নিচে নিন্দ পাড়ে, আবার নবাবের বাচ্চা আমারে দেইখ্যা কেমুন নাখোশ হইয়া মায়েরে ডাকে। আমি কি কুত্তা না মিলিটারি? পুলিশ না মহাজন? আমারে দেইখা ডরাইবো ক্যালায়? খিজিরের ইচ্ছা করে পাছায় ২টো লাথি দিয়ে খানকির বাচ্চাকে পাঠিয়ে দেয় মালিবাগ কি নাজিমুদ্দিন রোডের রেল লাইনের ধারে।
মেঝেতে বসে জুম্মনের মা গামছার গেরো খুলে এ্যাঁলুমিনিয়ামের গামলা ধার করে টিনের থালায় ভাত বাড়ে, থালাটা এগিয়ে দেয় খিজিরের দিকে, লও। গোরুর গোশতের ভুনা পাকাইয়াছিলাম।
মাহাজনরে কয়বার মারা দিয়া গোশতো লইয়া আইলি? খানকি মাগীর কামাই আমার বালে ভি খায় না! –
আরেকটি থালে জুম্মনের মা ভাত তরকারি সাজায়, রাইতে এইগুলি ভালো লাগে না? মেয়েটা নিস্তেজ হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সে প্রায় কাতরায়, তোমার ত্যাজেই তোমারে খাইছে। গরিব মানুষের এমুন ত্যাজ খোদা সইজ্য করে না! ’ বলতে বলতে সে ভাত খায়। ২/৩ গ্রাস মুখে তোলার পর তার গ্রাসের পরিমাণ ও খাওয়ার গতি বাড়ে। খিদে যেরকম পেয়েছে, সব ভাত আবার খেয়ে না ফেলে। থালার ভাত আঙুলের দাগে বিভক্ত করতে করতে ছেলেকে ডাকে, এই জুম্মন, ওঠ ভাত খাইবি তে ওঠ। কিন্তু জুম্মনের ওঠবার কোনো লক্ষণ নাই। জুম্মনের মা ফের বিড়বিড় করে জানায় যে বিবিসায়েব আর সিতারাকে পটিয়ে মহাজনকে দিয়ে খিজিরের উচ্ছেদ সে প্রায় ঠেকিয়ে এনেছিলো। কিন্তু নিজের ভালো না চাইলে কেউ তাকে সাহায্য করতে পারে? সেদিন দুপুরে খিজির যে কাণ্ডটা করলো, এরপর কোন মানুষটা তাকে তার বাড়িতে ভাড়াটে হিসাবে থাকতে দেবে—এইসব বলার ফাঁকে ছেলেকে সে ফের ডাকে, শুওরের বাচ্চা, উঠলি? গোশতো ফুরাইয়া গেলে ঘ্যানঘ্যান করবার পারবি না কইলাম!’ এই সতর্কবাণীতে কাজ হয়। বিছানা থেকে উঠে মেঝেতে বসে জুম্মন মায়ের পাত থেকে ঘন সুরুয়া মাখা ভাত খায়। শুকনা শক্ত হাড় নিয়ে ঘুম-জড়ানো গলায় সে প্যান প্যান করে, গোশতো কই? খালি হাড্‌ডি লইয়া আইছো!
তর বাপে তরে ডুমা ডুমা গোশতো পাকাইয়া পঠাইয়া দিছে, না? খা হারামজাদা। খাইলে খা, নইলে উইঠা যা গলা ও চোখ নামিয়ে বিড়বিড় করা সে অব্যাহত রাখে, যার ঘরে থাকবা, যার খাইয়া মানুষ হইলা, তারই মাল সামান লুট করবার চাও। তার গ্যারেজ খালি করনের লাইগা চোরচোট্টো লইয়া দল পাকাও! বিবিসাবে ভি চেতছে, কয় আগিলা জামান হইলে মাহাজনে তোমারে জানে খতম কইরা গতরখান নর্দমার মইদ্যে ফালাইয়া দিতো। অহন—। খিজির নিজেও ভাত খেতে শুরু করেছে, গোশতের টুকরাগুলো সব তার পাতেই, গোশত মুখে সে জবাব দেয়, তার মাহাজনের ভাউরা চুতমারানি বজলুটারে মাইরা লাশ বানাইয়া দিলাম হেই কথা মাহাজনেরে মনে করাইয়া দিস! ঐটারে বহাইয়া দিছি, এ্যার বাদে ধরুম মাহাজনের! আরে, পাবলিকে তো মাহাজনের গ্যারেজ উরেজ, বাড়িঘর ব্যাকটি জ্বালাইয়া দিতো, আমার লাইগা বাইচ গেছে।’
কথাটা সে শুনেছে আলতাফের মুখে। ঐদিন তাকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে ডাক্তার বন্ধুদের সামনে আলতাফ বলছিলো, সিচুয়েশন এমনটাফ হয়ে গিয়েছিলো যে এই লোকটা বললেই সব রিকশাওয়ালা একজোট হয়ে রিকশামালিকদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতো। তখন কিন্তু খিজির খুব খেয়াল করেনি, জুম্মনের মায়ের বিলাপ শুনে সেদিনকার কথাটা খুব দামী হয়ে ওঠে, বুঝলি? ইউনিভারসিটির মইদো, মেডিকেলের মইদ্যে ব্যাকটির খালি এক কথা, খিজির আলি কইলেই রিকশাআলার মাহাজনের গ্যারাজ উরাজ পুড়াইয়া দিতো!
তুমি আগুন দিবার মানা করছিলা? জুম্মনের মায়ের ডান হাত থমকে থাকে তার পাতের ওপর, এই সুযোগে সপাসপ গ্রাস মুখে তোলে জুম্মন, ভাতের মাঝখানে মায়ের আঙুলে চিহ্নিত সীমারেখার ওপার থেকেও সে অকাতরে ভাত টানে। জুম্মনের ভাত খাওয়ার চপচপ আওয়াজ ছাপিয়ে ওঠে জুম্মনের মায়ের উত্তেজিত ও রাগী গলা, ক্যালায়? তুমি আগুন দিবার দিলা না ক্যালায়? মইনষে যে কয় মহাজনে তোমার বাপ লাগে, মিছা কয় না। পাবলিকে মহাজনরে জ্বালাইয়া দিবো, গুড়াইয়া মারবো, খতম করবো,-তোমার কি? তুমি কাঠা? -আমি জিগাই, তুমি গ্যারেজের মইদ্যে আগুন দিবার দিলা না ক্যালয়?
ভাতের শেষ গ্রাসটি থালা ও মুখের মাঝখানে ঝুলিয়ে রেখে খিজির বৌয়ের দ্রুত ও উত্তেজিত সংলাপ শোনে। মেয়েটা খেপে গেলো নাকি? কুপির কালচে হলদে আগুন কি দপ করে জ্বলে উঠলো তার মাথার চুলে?
কথা কও না ক্যান? মাহাজনের বাড়ির মইদ্যে তুমি আগুন জ্বালাইবার দিলা না ক্যালায়? বলতে বলতে এটো হাতে জুম্মনের মা খিজিরের বুকের ওপর জামা খামচে ধরে। খিজির এর জবার দেবে কি?-আগুন কি খিজির ইচ্ছা করলেই লাগাতে পারে?-এতনা আসানি নেহি হ্যাঁয় রে মাগী আলাউদ্দিন মিয়ার হুকুম ছাড়া খিজির কি করবে। ইউনিয়নের পাঞ্জামা-পাঞ্জাবি-চশমারা কতো এলেমদার লোক, তারা না চাইলে সে আগুন জ্বালায় কি করে?-সেদিনকার কথা ভাবতে ভাবতে কুপির শিখাটিকে সে স্বচ্ছ হতে দ্যাখে। নাঃ এখন যাওয়ার দরকার। উঠতে গেলে হাঁটু খচখচ করে।
এদিকে জুম্মনের মা কি যেন বলতে চায়। শুরু করে মাঝপথে থেমে ফের বলে, ‘গতরের মইদ্যে বহুত চোট পাইছো, না? মেডিকলের ডাক্তারে কি কইছে?
কিয়ের চোট? তগো বজলুরে কেমুন কিমা বানাইয়া দিছিদ্যাহস নাই?
একটা খবর তো জানো না?
কি? খিজির এবার বসে পড়ে তক্তপোষের এক ধারে।
জবাব না দিয়ে জুম্মনের মা এটো থালাবাসন গুছিয়ে রাখার কাজে ব্যস্ত হলে খিজির আরাম পায়। বৌয়ের কথা শোনার অজুহাতে আরো কিছুক্ষণ সে এখানে বসে থাকতে পারে। তবে জুম্মনের মা ফের তার হাঁটুর ব্যথার কথা তুললে খিজির একটু খিচড়ে যায়, ‘সোয়াগ থো! কি কথা কইলি না? মালপানি লাগবো? মালপানি চাইলেই বা সে দেবে কোথেকে? অথচ ঝাঝালো করে বলে, কতো লাগবো?
না।
তাইলে? খিজির অসহিষ্ণু ওয়ে ওঠে, কইবি তোক নাইলে আমি যাই গিয়া।
এরপরেও একটু সময় নিয়ে জুম্মনের মা মিনমিন করে কি যে বলে খিজিরের মাথায় ঢোকে না, কি কইলি?
জুম্মনের মা তার বাক্যের পুনরাবৃত্তি করলে খিজির চিৎকার করে ওঠে, কি? কি কইলি? তারপর একটু আস্তে জিগ্যেস করে, ক্যাঠায় কইলো? জুম্মনের মা ছেলের গায়ে কথা জড়িয়ে দেয়। খিজির বলে, হাচা কস?
তাইলে কি?’
‘ঈমানে?
‘ঈমানে!
বুঝলি ক্যামনে? ক্যাঠায় কইলো?
কইবো ক্যাঠায়? খিজিরের প্রতি বাৎসল্য ও কৌতুকে জুম্মনের মায়ের কালো মুখে হাসি উপচে পড়ে, তার বসন্তের দাগগুলো প্রসারিত হয়, পোয়াতি হইলাম আমি, আর আমি বুঝুম না?
হাঁটুর ব্যথা খিজির এখন বিশেষভাবে বুঝতে পাচ্ছে না। সারা শরীর জুড়ে নতুন ধরনের স্পন্দন। এই নতুন ছটফটানি তার অপরিচিত। মাথার ভেতরকার একটা জাম যেন কেটে যাচ্ছে, রিকশার প্যাডেলে দাঁড়িয়ে দিব্যি দেখতে পাচ্ছে, সামনের মাল বোঝাই ট্রাক তার রিকশাকে সাইড দেওয়ার জন্যে রাস্তার ধার ঘেঁষে চলতে শুরু করেছে। কিন্তু সামনের রাস্তা বড়ডো ফাকা, এই মস্ত রাস্তায় কি তার রিকশা ছাড়া কোনো গাড়ি নাই? এই খা খাঁ রাস্তায় রিকশা চালাবার সুযোগ পেয়ে সে একটু বিচলিত হয়। নতুন অৰ্পিত দায়িত্বভারে তার হাড্‌ডিসর্বস্ব বুক চওড়া হতে থাকে।—দুত্তোরি শালা। তার কাজের কি শেষ আছে? এর ওপর এই খানকি মাগীটা কি-না তার বীজ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে!—আহা! এই নিয়ে মাগীটাকে মশলা বাটতে হয়, কাপড় কাচতে হয়, রান্না করতে হয়। আর মাহাজনের যা খাসলত,-একটা আমান খচ্চর, জাউরার পয়দা জাউরা–তার ঘরে জুম্মনের মাকে সে রাখে কি করে?-এই সময় কুপির লালচে হলুদ আলো মেঝেতে গড়িয়ে পড়লো তরল লাল আগুন হয়ে। সমস্ত ঘর ভাসে লাল রক্তে, রক্তের ভেতর শুয়ে থাকে ন্যাংটা মেয়েমানুষ।-বস্তির কাচা ও ভ্যাপসা ঘর দুলতে থাকে পাকা দোতলা বাড়ির সিঁড়ির নিচে। দোলে, দোলে। মায়ের রক্তাক্ত ন্যাংটা গতর থেকে চোখ ফেরাবার জন্য তাকে মাথা ঘোরাতে হলো। সৌভাগ্যক্রমে হঠাৎ করে নর্দমা থেকে পাওয়া গুমুতের গন্ধের ১টি ঝাপটায় মাথা ফের ফিরে আসে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে। সে তোলে সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গ, মনে লয় হাঁটুখান খাম কইরা দিছে।’
জুম্মনের মা তার পাশে বসে স্বামীর হাঁটুতে হাত রাখে, পাওখান গরম ঠাহে।
খিজির সেই হাত সরিয়ে দেয় না, বলে, তুই মাহাজনের ঘরেই কাম করব? এই বস্তির মইদ্যেই থাকবি?
বৌয়ের মুখে হ্যাঁ শোনবার আগেই তাড়াহুড়া করে খিজির হুকুম ছাড়ে, থাক! এখানেই থাক। আমি কৈ থাকি ঠিক নাই। অহন আমার বহুত কাম মাস মাস ভাড়া পঠাইয়া দিমু! তর পয়সাকড়ি লাগলে জুম্মনরে দিয়া খবর দিস খিজির উঠে দাঁড়ালে জুম্মনের মা বলে,
আউজকা না হয় তুমি এহানেই থাকো।
না যাই। সায়েবের গ্যারেজে থাকতে হইবো। বললেও বৌয়ের আরেকটি অনুরোধের আশায় খিজির দাঁড়িয়ে থাকে। রাইতটা থাকো না! আমি না হয় বিবিসায়েবরে দিয়া মাহাজনরে কওয়ামু, তোমার শরীলটা খারাপ। দুই চাইরটা দিন না হয় থাকলা!
মাহাজনেরে কি কইবি মাগী? খিজির ফের চটে যায়, ‘তর মহাজনে জান লইয়া মহল্লা থাইকা ফোটনের তালে মালসামান বাদে, হেই খবর রাখস?
এরপর নরম করে কথা বলা তার আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। দরজায় পা দিয়ে জুম্মনের মায়ের দিকে পিঠ ফিরিয়ে সে তাকে সাবধান করে দেয়, হুশিয়ার থাকবি তুই খানকিটা জিন্দা থাকস আর নাই থাকস, তর প্যাটেরটার কোন জখম উখম হইলে তরে এক্কেরে জানে মাইরা ফালামু, কইয়া দিলাম!’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *