চিলেকোঠার সেপাই – ২৪
খিজিরকে নিয়ে রহমতউল্লার সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলে। ছেলেবেলা থেকে সে তার কাছেই মানুষ হলো, অথচ তার বেয়াদবি এখন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তার বস্তি থেকে তাকে উঠিয়ে দেওয়া দরকার। তবে ন্যায়নিষ্ঠার খাতিরে বাড়িওয়ালা জুম্মনের মাকে থাকতে দেবে। কারণ, শয়তানি করবো একজন আর তার গুণাগারি দিবো আরেকজনে? হাজব্যান্ডের লাইগা তো ওয়াইফরে পানিশমেন্ট দিবার পারি না।
খিজিরকে বস্তি থেকে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর রহমতউল্লা তার বাড়ির বাইরের বারান্দায় ইজি চেয়ারে আধশোয়া হয়ে গা এলিয়ে অপরাধ ও শাস্তি সম্বন্ধে তার মতামত ব্যক্ত করছিলো। বলতে বলতে সে উত্তেজিত হয়ে ওঠে, ঐ হালায় একটা নিমকহারাম, জাউরা চোদা, আর খাচরামির লাইগা অর বৌরে খাদাইমু ক্যান? অরে অর্ডার দিচ্ছি, তুই একলাই ভাগ। তার মুখে পানের পিক। আজকাল জর্দা-দেওয়া পানের পিক গিললে মাথাটা কেমন চক্কর দেয়, ঘাড়ের রগ টনটন করে। কথা বন্ধ করে রহমতউল্লা পিকদান নিয়ে আসার জন্য কাকে ইশারা করে। ছোকরামতো এক চাকর পিকদান আনতে গেলে তার কথা স্থগিত থাকে। এই নীরবতার প্রথম ২০/৩০ সেকেন্ড সবাই চুপচাপ ছিলো, কিন্তু এরপর সমবেত মানুষের মধ্যে গুঞ্জন শোনা যায়। কে যেন বলে, অর বৌ একলা থাকবো ক্যামনে?
‘আরে অর আবার বৌ? বজলুর ভাঙা গলা ঘর্ষর করে ওঠে, জাউরা হালার আবার বাপই কি আর বিবিই কি?’
আলাউদ্দিন মিয়ার ১জন রিকশাওয়ালা বলে, উই গেলে কি আর বৌরে রাইখা যাইবো? বৌ ভি অর লগেই যাইবো!
রহমতউল্লার ১ রাজমিস্ত্রী মনিবের মতে সায় দেয়, বৌরে তোমাহাজনে বাইন্ধ্যা রাখবো না। মাহাজনের কথা হইলো, চোরের লাইগা চোরের বিবিরে তো ধরা যায় না।’
আরে মিয়া রাখো মহাজনের সমর্থককেও বজলু কথা বলতে দেবে না। ওর মেজাজটা আজ চড়া। ম্যাটিনি-শোর আগে বিশ্ৰী কাণ্ড ঘটে গেলো। গুলিস্তানে আজ নীলো-ওয়াহিদ মুরাদের নতুন ছবি ছাড়লো, বেলা সাড়ে দশটা থেকে হলের সামনে হাউস ফুল ঝুলছে। ‘হাউস ফুল অবশ্য বজলুরাই করে রাখে। তা ম্যাটিনিতে ভিড়ও হয়েছিলো খুব। ম্যানেজার ও দারোয়ানকে খাজনা দেওয়ার পর কম করে হলেও ২০টা টাকা ওর হাতে থাকতো, কিন্তু শালার পাবলিক হঠাৎ খুব গরম হয়ে উঠলো। রিয়ার স্টল ডিসি, রিয়ার স্টল ডিসি বলতে বলতে হলের সামনে রেলিঙের ধার ঘেঁষে বজলু ঘোরাঘুরি করছে, হঠাৎ একসঙ্গে ঝাপিয়ে পড়লো কমসে কম ১০/১৫ জন লোক। সঙ্গে এলোপাথাড়ি কিলঘুষি ও গালাগালি, শালা র্যাক করো, না? দাঁড়া শালা, তোদের ব্ল্যাক করা দেখিয়ে দিচ্ছি।’ এদের বেশির ভাগই কলেজ ইউনিভারসিটির ছাত্র, একেকটা নম্বরি বিচ্ছ। তার পিঠের বা দিকটা এখনো টনটন করছে, সোজা হয়ে বসে থাকতে পাচ্ছে না। আলাউদ্দিন মিয়ার রিকশাওয়ালাকে সে জোরে ধমক দেয়, চুপমার রে, তুই জানস কি? কামরুদিনের বৌরে ভাগাইয়া লইয়া আনছে। অর আবার বৌ কাঠা? কামরুদিনে মনে করলে নিজে বৌ লইয়া ঘর করবো, কার কি?
এর মধ্যে পিকদানী এসে যায়, শ্লেষ্মা কক্ষসহ অনেকটা পিক ফেলে রহমতউল্লা হাতের তেলোয় ঠোঁটের কোণ মেছে। কফমুক্ত গলায় রহমতউল্লা দ্বিধাহীন ও স্পষ্ট বাণী ছাড়ে, কামরুদিনে তো অর পোলারে লইয়া আলাদা থাকে। আমি কই মায়েরে ছাইড়া পোলায় থাকে ক্যামনে? এই নিমকহারাম কি কামরুদিনের পোলারে দেখবো, কও?
খিজিরে তো জুম্মনরে লগে রাখবার চায়। উই তো না করে নাই। রহমতউল্লাহর গ্যারেজের আরেক রিকশাওয়ালা এই মন্তব্য করলে বজলু তার পিঠের ব্যথা অস্বীকার করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়, ‘তুই হইলি বাঙ্গুচোদা একখান খিজিয়া হালায় নিমকহারামের পয়দা নিমকহারাম। ঘরের মইদ্যে মহাজন অরে থাকবার দিছে, অর মায়েরে ভি থাকবার দিছিলো, অর খাওয়াইয়া বড়ো করছে, বিয়া দিছে, কাম দিছে। অহন মালিকের গিবত কইরা বেড়ায়, মিটিঙের মইদ্যে ফল পাড়ো ঐ হালায় মাইনষের পোলারে রাখবো নিজের কাছে?
রহমতউল্লার উত্তেজনা বোঝা যায় না। ডাক্তার তাকে উত্তেজিত হতে না করেছে। তার ব্লাড প্রেশার আজকাল বেশ বেশি, ওপরে ২০০ এবং নিচে ১০০/১১০ এমনকি ১২০ পর্যন্ত ওঠে। কপাল কুঁচকে সামনের দিকে তাকিয়ে সে বজলুর কথা শোনে।
সেদিন রাত্রে বস্তির মুখে দাঁড়িয়ে থাকে বজলু। সঙ্গে আরো কয়েকজন, এসব ব্যাপারে অন্তত ৩ জন না হলে কাজ হয় না। খিজিরকে বস্তিতে ঢুকতে দেখে বজলু বলে, খিজিরা, তর লগে কথা আছে?
কি? কিন্তু বজলু কথাটা বলে না। তার সঙ্গীরা সব তাকিয়ে থাকে অন্যদিকে। কিছুক্ষণ পর খিজির বলে সর,ঘরে যাই।
অপমানিত হওয়ার মতো ভঙ্গি করে বজলু, কইলাম না কথা আছে।’
কি কথা জলদি ক। স্বর একটু নামিয়ে বজলু বলে, কাউলকা তুই এই ঘর ছাইড়া দিবি। মাহাজনের হুকুম’ খিজির এবার সোজাসুজি বজলুর চোখের দিকে তাকায়। রাস্তার ল্যাপোস্টে বাব আজ কয়েকদিন জ্বলছে না, জায়গাটা এমনিতে অন্ধকার, এর ওপর খিজিরের গলার ছায়া পড়ায় বজলুর মুখের কোনো অংশই বিশেষভাবে দাখা যায় না। অন্ধকার বজলুর দিকে দেখতে দেখতে খিজির বলে, মহাজনে আমারে কইলেই পারে তরে পাঠাইছে ক্যালায়? আমি ভাড়া দেই তরে?
খিজিরের এই বিরক্তি ওদের বেশ সুযোগ করে দিলো। বজলুর এক সঙ্গী বলে, হাড্ডির মনে লয় নয়া নয়া পালিশ লাগতাছে। বহুত গিরিজ মালুম হয়।
লোকটিকে খিজির ভালো করে দ্যাখে। এ লোকটিও রিকশাওয়ালা, গোপীবাগ ন৷ টিকাটুলির দিকের ১ গ্যারেজ থেকে রিকশা নেয়। আর যে লোকটি চুপ করে আছে সে হলে বজলুর সিনেমা হলের সহকর্মী, মধুমিতার পেছনে ১টি দেওয়ালের এপাশে ওপাশে ওদের ভালো ১টা আড়ড়া আছে, খিজির কয়েক বার এদের কাছ থেকে টিকেট কিনেছে। বজলুর এই সহকর্মী এবার প্রায় আপন মনে বলে, যার খায় যার পরে, তারেই ধইরা হোগা মারে? লোকটির ছন্দোবদ্ধ বাক্যের জবাবে খিজির ব্যবহার করে সরল গদ্য, মাগনা খাই না, খাইট খাই। মাগনা থাকি না, ভাড়া দিয়া থাকি।
বজলু বলে, কাম তো করে তর বৌ। মাহাজনের বাড়ির মইদ্যে তারে নাম ল্যাখাইয়া তুমি হালায় তামান দিন বাউলি মারো অহন আবার মাহাজনেরে বেইজ্জত করবার চাস, না? মাহাজনের বালটা ছিড়বার পারবি?’
বজলুর সিনেমা হলের সঙ্গী এগিয়ে আসে, ফালতু কথা, আজাইরা বাতচিত কইরা লাভ কি? তোমারে খবর দিয়া গেলাম, তুমি মাহাজনের ঘর ছাড়বা।
ছাড়ম’। বলতে বলতে খিজির বস্তির ভেতর ঢোকে, মগর মহাজনে আমারে কইবো না? ভাড়া বাকি রাখছি? কইলো আর উঠলাম? আমার বৌ-পোলা আছে না? আগো দরিয়ার মইদ্যে ভাসাইয়া দিমু?
বজলুর ঘরের ভেতর থেকে খিলখিল করে হেসে ওঠে ওরা বৌ, হাসির সঙ্গতে তার এইসব কথা শুরু হয়, ‘হ, পোলাপান দিয়া ঘর এক্কেরে ভরাইয়া দিছে। আঁটকুইড়া, আটকুইড়ার বাচ্চা আটকুইড়া, অর আবার পোলাপানের হাউস’
বজলুর সিনেমার সহকর্মী লোকটি হো হো করে হাসে, আরে আটকুইড়ার বাপে আটকুইড়া হয় ক্যামনে? বাপে পয়দা না করলে আটকুইড়া হালায় দুনিয়ার মইদ্যে আইবার পারে?’
বজলুর বৌ বাইরে এসে দাঁড়ায়, তার গলায় খিলখিল হাসির রেশ রয়েই গেছে হয়, হয়। কতো কি হইতে পারে। বুইড়া একদিন যার লগে হুইছে অহন ধরছে তার পোলার বৌরে দুইদিন বাদে আবার এই মাগীর পোলারে দিয়া গতর টিপাইয়া লইবো কতো দেখলাম! আরো কতো দেখুম!
বজলুর সহকর্মী ফের হাসে। এই হাসাহাসিতে চটে গিয়ে বজলু ধমক দেয়, চুপ কর। তুই এখানে কি করব? ঘরে যা!
বজলুর বৌ তবু দাঁড়িয়ে রইলো দেখে বজলু তাড়া দেয়, মাগী গেলি? কি হইছে? তুমি একলাই চিল্লাইবার পারে, আমাগো মুখ নাই? বজলু এবার তারস্বরে চ্যাচায়, রাইত বাজে বারোটা না একটা, মরদ মানুষ দেইখা খানকি মাগীর খাউজানি উঠেছে, না? যা!
তুমি তো পট্টির মইদ্যে গতরখান ঝাইড়া আইলা, নিজের বিবিরে খানকি কইতে শরম করে না? বজলুর বৌ অবিরাম কথা বলে, কেমুন মরদ, এ্যাঁ? মাহাজনে তরে জুম্মনের মায়ের চুচির ধামাটা হাতের মইদ্যে তুইলা দিবো? রাইত একটার সময় নিজের বৌ পোলারে রাইখা মাহাজনের ভাউরামি করো কোন আক্কেলে, এ্যাঁ? আরে বেজাতের পয়দা, ঐ মাগীর উংলিটা কি ধরবার দিবো তরে? বজলুর বৌয়ের চিৎকারে রহমতউল্লার ছোটো উপনিবেশটিতে কারো কারো ঘুম ভাঙে, কেউ ঘুমের মধ্যে পাশ ফেরে। ১টা ঝামেলার সম্ভাবনা আঁচ করে বজলুর রিকশাওয়ালা সঙ্গী খিজিরকে বলে, তুমি মিয়া রংবাজি ছাড়ো। কাউলকা তুমি এই ঘর ছাড়বা। তোমার বৌ মাহাজনের বাড়ি কাম করে, মাহাজনে তারেই খালি থাকবার অর্ডার দিছে।’
খিজির বলে, ঠিক আছে! মাহাজনের লগে কথা কই তোমরা কি মাহাজনের মানিজার? ঠোঠের দুই কোণ বাঁকা করে সে ফের বলে, ভাড়া দেই মাহাজনের হাতে, কথা কইলে তার লগেই কমু। মাহাজনে যুদিল ভাড়া উড়া বাড়াইতে চায় তে খোলাসা কইরা কইলেই পারে!’
খিজিরের এরকম ভদ্রলোক ধরনের চিবিয়ে চিবিয়ে বলা কথায় লোকটি জড়সড় হয়ে তাকে দ্যাথে। এমনকি এই কথার তোড়ে জুম্মনের মা পর্যন্ত ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বস্তি মাত করে স্বামীকে বকে, এই তারা কথা কইয়াই তো মরলা। থাকার মইদ্যে আছে কি? না, ঐ চোপাখান! গতরের মইদ্যে নাই আধাপায়া গোশতো, পাদ দিলে খটখটাইয়া বাজে, তার চোপাখান দ্যাখো? জুম্মনের মায়ের এই সংলাপে বস্তি বেশ গুলজার হয়ে উঠেছে, পাশাপাশি নিজের বেয়ের চুল ধরে টানছে বজলু। এখানে আসার আগে ৩জনে পাইট তিনেক মাল টেনে এসেছে, তাতে পিঠের ব্যথা বোঝা যাচ্ছিলো না। ব্যথাটা আবার চাগিয়ে উঠলো, ওদিকে হাতের কবজিতে জোর কম। গালাগালি করার শক্তিও তার প্রায় নিঃশেষিত, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বৌকে মারা ও গাল দেওয়া-এই ২টো কাজ একসঙ্গে করা একটু কঠিন। তার নীরবতার সুযোগে আমার গতরে হাত দিবি না কইলাম! খানকি পট্টির মইদ্যে গিয়া তর মায়েরে বইনেরে চুল ধইরা টান, বাল ধইরা টান’-এই বাক্যসমূহের পুনরাবৃত্তি করে চলেছে বজলুর বৌ। ১বার বজলুর হ্যাঁচক টানে তার মাথাটা স্বামীর বুকে লাগার সঙ্গে সঙ্গে ঐ মাথা দিয়েই সে এমন গুতো দেয় যে লোকটা দড়াম করে পড়ে যায় ছোটো উঠানের এপাশ ওপাশ জুড়ে। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বীরত্বের অবসান ঘটে এবং প্রায় কাদা কাদো গলায় বলে, আমারে ম্যাইরা ফালাইলো, খানকি মাগি আমারে খতম কইরা দিলো!
রিকশাওয়ালা সঙ্গী তাকে তুলতে গেলে তার শরীরের ভারে নিজেই পড়ে পড়ো হয়ে কোনোরকমে সামলে ওঠে। তখন বজলুর দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে সবাই জুম্মনের মায়ের আক্ষেপ শুনতে শুনতে তার মুখ ও বুক দেখতে শুরু করে।
আমি কই, মাহাজনের কাছে যাও। গিয়া কও, ভুল ১টা হইয়া গেছে, এইসব মাপ কইরা দেন। জুম্মনের মায়ের গলার স্বর এখন অনেকটা নিচু। গলা আরো নামিয়ে সে বলে, গিয়া কও আপনার ভাইগ্লার কাম করি, মহল্লায় তার মিটিঙের মইদ্যে না থাকলে চাকরি থাকবো? আসলে এইভাবে সে মহাজনের বিরুদ্ধে খিজিরের কথিত তৎপরতার একটি কৈফিয়ৎ দাঁড় করাতে চায়। কিন্তু খিজির বলে, ‘আরে তুই চুপ কর না! মিটিঙে যাই কি আলাউদ্দিন মিয়ার লাইগা? তামাম ঢাকার মানুষ মিটিং করে না? মানুষ চেতছে, তর মহাজনের বাপের বাপ, দাদার দাদা, আইয়ুব খানের দিন বলে খতম হইয়া আইতাছে, তার হোগার মইদ্যে আড়াই ইঞ্চি মোটা পাইপ ঢোকে, তার ফাল-পাড়া দ্যাখে ক্যাঠায়? আর তর মহাজনের পাছ খাউজায়, না? আরো তর মাহাজনে তো কীড়ার ভি অধম!
বজলুচিৎপটাং হয়ে শুয়ে রয়েছে ছোট্রো সরু উঠানে, ১টা পা তার নিজের ঘরের দরজায় কাছে। তার বড়ো বড়ো নিশ্বাসের আওয়াজে মনে হয় লোকটা গভীর ঘুমে অচেতন। এদিকে থিজিরের চটাং চটাং কথা শুনে বজলুর সঙ্গীরা একটু ঘাবড়ে গেছে। কিংবা বজলুকে ছাড়া চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ওদের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার ঘুম থেকে উঠে এসেছে বস্তির কয়েকজন পুরুষ। এতো রাত্রে বজলুদের এই অভিযানে ওদের সায় না-ও থাকতে পারে। সিনেমার সহকর্মী বজলুর বৌকে বলে, ঐটারে ভিতরে ঢুকাইয়া দেই?
থাউক না! ফজলুকে ঐ অবস্থায় রেখে বাইরে চলে যেতে যেতে বজলুর এক সঙ্গী খিজিরকে বলে, খিজিরা, লেকচার রাখ। লেকচারের মায়রে বাপ! কাউলকা ঘর খালি করবি, বুঝলি? কামরুদিনে এই ঘর ভাড়া লইবো, বৌ-পোলা লইয়া থাকবো!
সবাই যার যার ঘরে চলে যাওয়ার পর আধ ঘন্টার মধ্যে মানুষের ঘুমের গম্ভীর ও একটানা আওয়াজ সমস্ত বস্তি জুড়ে সরব কুয়াশার মতো কুগুলি পাকিয়ে ফেরে। এমনকি মেঝেতে শুয়ে থাকা খিজিরের কথা-মোড়ানো অন্ধকার কাঠামো দেখে জুম্মনের মা বোঝে সেও ঘুমিয়ে পড়েছে। কবরেও এর চেয়ে চঞ্চলতা থাকে। থাকে না? মরা মানুষের গোরআজাব নাই? এই লোকটা কি মরার চেয়েও অসার-আরে, কাল রাত্রে কোথায় থাকবি, কোথায় থাকবে তোর রোয়াবি? মাটিতে শুলেও মাথার ওপর ১টা ছাদ আছে, এখানে থেকে বার হয়ে ছাদ পাবি?—ফালতু ফুটানি জুম্মনের মায়ের দুই চোক্ষের বিষ? এই হার্ডডিসার মানুষটার আছে কি যে দিনরাত খালি বড়ো বড়ো লোকের সঙ্গে গোলমাল করবে? এমনিতে তো লোকটা খারাপ ছিলো না। বস্তির আর সকলের মতো দিনরাত কথায় কথায় বৌয়ের গায়ে হাত তোলে না। কখনো কখনো মদ খেয়ে এসে কোনো কারণে মেজাজ চড়ে গেলে চড়টা চাপড়টা দেয় বটে, কিন্তু প্রথম কয়েকটা লাগাবার সঙ্গে সঙ্গে খিজিরের সরু ও শক্ত আঙুলগুলো আপনিই সিটকে আসে, হাত ২টোই যেন কুঁকড়ে যায়, সে তখন নিজের ১ হাত অন্য হাতের ওপর ঘষতে থাকে। এরকম ঘষতে কিছুই না বলে হঠাৎ বাইরে চলে যায় এবং সেদিন ফেরে একেবারে গভীর রাতে, আরো ১টা পাইট গিলে। আজকাল অবশ্য গায়ে হাত তোলে আরো কম। তা জুম্মনের মায়ের ওপর তার রাগ করার সময়ই বা কোথায়? আলাউদ্দিন মিয়ার গ্যারেজের কাজের সঙ্গে তার নতুন চাকরি জুটেছে রাজ্যের মানুষ জুটিয়ে মিছিল করা আর মিটিং করা আর নামী মানী মানুষের হোগায় উলিবাজি করা। এভাবে কতোদিন চালাবে? জুম্মনের মা কি ততোদিন পর্যন্ত বসে থাকবে? কিসের গরজ তার? আবার সে কি ইচ্ছা করলেই হাড্ডি খিজিরের মতিবদলের জন্যে বসে থাকতে পারে? এর মধ্যে কামরুদিন এসে তার ছেলেসুদ্ধ তাকে দখল করে নেবে না? মহাজন কামরুদিনকে প্রায় প্রতিদিন খবর পাঠচ্ছে, দোলাই খালের ওপর রাস্তা তৈরির কাজে তাকে দরকার। অথচ দাখো, এই মহাজনই কিছুদিন আগে প্রচার করেছিলো যে ভারা থেকে পড়ে গিয়ে কামরুদিনের হাত পা ভেঙে গেছে, জোগানদারের কাজ করার ক্ষমতা তার চিরকালের জন্য শেষ। মহাজনের এখন দরকার, এখন শোন যাচ্ছে তার মতো মিস্ত্রি এই এলাকায় ১টাও নাই। একবার জুম্মনের মাকে খিজিরের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে মহাজন যে ছ্যাকটা তাকে দিয়ে দিয়েছে কামরুদিন কি সহজে আসে? পুরনো বৌ ও ছেলের সঙ্গে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার টোপ দেখিয়ে তাকে পটাবার চেষ্টা চলছে।–নাকি খিজিরকে চিরকালের জন্যে সরিয়ে দেওয়ার জন্যে তাকে কামরুদিনের সঙ্গে সেঁটে দেওযার মতলব করে মহাজন? -কামরুদিনের ঠাং ভাঙার গল্প সত্যি হলেই বরং ভালো হতো।–নাঃ তা কেন? কামরুদিনের সঙ্গে থাকলে জুম্মনের একটা গতি হয়। পোলার দিকে ওস্তাগারের খুব টান! জুম্মনের জনের পর বাচ্চার জন্যে কতো জিনিস যে সে নিয়ে এসেছিলো তার লেখাজোকা নাই। ঐ খুশিতে বৌয়ের জন্যেও কামরুদিন টেবিলিন না কেরিলিনের শাড়ি নিয়ে আসে। ওস্তাগার তখন কাজ করে র্যাঙ্কিনস্ট্রিটের মস্ত এক বাড়িতে, পুরনো বড়ো বাড়ি, সারা বছর ধরে টুকটাক মেরামত, ছোটোখাটো নতুন কাজ লেগেই থাকতো। বৌকে নতুন শাড়ি পরিয়ে, ৪২ দিনের বাচ্চাকে নিয়ে কামরুদিন গেলো মনিবের বাড়ি। মনিবের বৌ বাচ্চার হাতে ৫টা টাকা দেয় আর জুম্মনের মায়ের পরনের শাড়ি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দ্যাখে। মনিবের বড়ো বেটার বৌ বলে, ও আম্মা, নতুন একটা শাড়ি উঠলে তা পরার জো নেই। মিঞ্জি জোগানদান দারোয়ান ড্রাইভারের বৌ-ঝি সবাই যদি এই শাড়ি পরে তো আমরা কি করি? শাশুড়ি মাগী অ্যাবার ঠেস দিয়ে বলে, কি জানি বাপু, চলনসই একটা কাপড় নিতে আমাদের পাছ ফাটে, এদের এতো পয়সা যে কোথেকে জোটে? তোমার শ্বশুর সাদাসিধে মানুষ, রড সিমেন্টের কি দশা হচ্ছে, কোনো খোজ রাখে?—মনিবের বেটার বৌয়ের কথা শুনে জুম্মনের মা খুব খুশি, এতে বড়ো ঘরের বৌ,-সেও কিনা জুম্মনের মায়ের শাড়ি দেখে হিংসায় মরে! রাত্রিবেলা রসিয়ে রসিয়ে এসব গল্প করলে কামরুদিন একেবারে উঠে বসলো, ‘সোহরাব সাবের বিবি এই কথা কইছে? ঐ কাপড় পিন্দন বাদ দে।
জুম্মনের মা অবাক। কেন? কামরুদিন ধমক দেয়, আবার কথা? কইলাম পিন্দিস না। পরে আস্তে আস্তে বুঝিয়ে বলে, মালিকের লগে পাল্লা দেওন ভালো না, বুঝলি? যার নেমক খাই তার উপরে টেক্কা মারতে গেলে খোদায় ভি গোস্বা হয়। গজব পড়ে, রোজগারপতি পাইড়া যায়। জুম্মনের মা মন খারাপ করে পাশ ফিরে শোয়। তা মন খারাপ হলেই কি রাগ কমে? আর বিবিসাব যে তোমারে চোর কইলো, তুমি রড-সিমেন্ট সরাও
‘চোর? কইছে তা কি হইছে? মায়ের লাহান বুড়া মানুষ, একটা কথা কইছে তো তাই লইয়া মাতম করতে হইবে?
দেদারসে রড-সিমেন্ট সরালেও কামরুদিন মালিককে ভক্তি করতো খুব। চুরি-ছ্যাচরামি একটু আধটু না করলে কি সংসার চলে? তাই নিয়ে মালিক তো কথা বলবেই। মালিকের বড়ো ধরনের লোকসান না করে এদিক ওদিক করার মধ্যে কোনো দোষ নাই। তবে হ্যাঁ, মালিকের সঙ্গে বেয়াদবি করা কি মালিকের মনে কষ্ট দেওয়া গুনা। মালিকের উন্নতি মানে তার উন্নতি, মালিক বড়ো হলে সেও বড়ো হবে। বেশির ভাগ কস্ট্রাক্টর তো আগে ওস্তাগর ছিলো, বড়ো জোর এজি অফিসের কেরানী বা ওয়াপদার ওয়ার্ক সুপার-ভাইজার। পয়সাকড়ি চালাচালি করে আর আল্লারসুল গওসল আজমের দোয়ার বরকতে তারা আজ বড়ো বড়ো কন্ট্রাক্টর সাপ্লায়ার। মালিক হলো বাপমা; খাওয়া বলো পরা বলো, আরাম বলো ফুর্তি বলো, সবই মালিকের বরকতে। মালিক যদি চড়টা চটকানটা দেয় তো মাথা পেতে নাও। কেন, বাপমা ছেলেমেয়েকে মারে না? এই বিবেচনা না থাকলে উন্নতি করা যায়?–আর খিজির? -খিজিরের ওপর জুম্মনের মা ভরসা করবে কোন আক্কেলে?-তুই হইলি পাছাফুটা জাহেল, তুই যাস মহাজনের পিছে লাগতে?-ভিক্টোরিয়া পার্কে সেদিন খিজিরের কারবারটার বৃত্তান্ত শুনে রহমতউল্লার হাপানি-পোষা, কোনেদিকে-না-তাকানো বিবিটা নতুন করে হাসফাস করে আর বলে, ‘খানকির পুতে এইগুলি করে কি? অতোগুলো মানুষের সামনে মাহাজনের গীবত করছে। দিনকাল খারাপ, পাবলিকে যুদিল চেইতা এই বাড়িতে আগুন লাগাইয়া দিতো! শুনে জুম্মনের মা ভয়ে বাঁচে না! এই যে চারদিকে নাকি সব আগুন লাগানো শুরু হয়েছে, আমাদের মহাজনের বাড়িতে যদি আগুন লাগায়! আর পাবলিক কি খালি আগুন লাগিয়েই ক্ষান্ত দেবে? মহাজনকে চুল ধরে বাইরে টেনে আনবে না? তারপর ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নিয়ে মারধোর করে যদি রাস্তায় রিকশা, স্কুটার, ট্রাক, বাস সব জাম, রিকশাওয়ালা রিকশা ছেড়ে, স্কুটার ড্রাইভার স্কুটার ছেড়ে, ট্রাক ড্রাইভার ট্রাক রেখে এসে এলোপাথাড়ি কিলঘুষি চালাতো মহাজনের ওপর।-বস্তির অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকতে থাকতে জুম্মনের মায়ের ভয় জ্বলে ওঠে উত্তেজনা হয়ে, সে ছটফট করে। কেন? না, পাবলিক এসে মহাজনের চোখ দুটো উপড়ে নিচ্ছে, বলছে, হালায় অজাতের পয়দা, তরে আউজকা জানে খতম করুম’ চোখজোড়া গেলে এই বুড়ো কি সময় অসময়ে তার দিকে তাকাতে পারবে?—বুইড়া হালার হাউস কতো ঘরে তর বিবি আছে, একটা বিবি তো মরছে, পোলায় বাইচা থাকলে তার পোলাপানের ভি বিয়ার বয়স হইতো!—আর তুই কিনাট্যারাইয়া টারাইয়াতর কামের মাতরির সিনা দাখসােতর মুখের মইদ্যে ম্যাচবাত্তি জ্বালাইয়া দিলে খিজিরে কি বেইনসাফির কামটা করতো? তর গুনাগরি দিতে হইবো না? আল্লার দুনিয়ার বিচার নাই? বেলাহাজ, বেশরম বুইড়া মরুদ-আল্লার বিচারের ওপর ভরসা করেও জুম্মনের মায়ের উত্তেজনা কমে না। কিন্তু বেশি উত্তেজনা তার সহ্য হয় না। সারাদিন একটানা কাজ করেও তার শরীর এলিয়ে পড়েনি, বরং রহমতউল্লা মহাজনের জ্বলন্ত মুখের কথা ভেবে উত্তেজনায় তার গা মাথা হাত পাহি হি করে কাপে। খিজিরের পাশ ফেরার সঙ্গে হঠাৎ-নিশ্বাসের আওয়াজে তার ছটফট-করা শরীরে উস্কে ওঠে নতুন স্বস্তি: এই বুইড়াই তো মাথার উপরে একখান ছাদ দিয়া রাখছে।—মহাজনের বস্তিতে ভাড়া হয়তো একটু বেশি, কিন্তু এরকম নিশ্চিও কাজের সুযোগ সে পাৰে কোথায়? আবার সুবিধা কতো-বিবিসায়েব বারোমাস বিছানায়, একমাত্র মেয়ে থাকে স্নো-পাউডার-লিপস্টিক আর রেডিও নিয়ে। কাজের মাতরির সঙ্গে খ্যাচাখেচি করার কেউ নাই। প্রতিদিন ইচ্ছামতো কাজ করো, এটা সেটা মুখে দাও, ঘরে ফেরার সময় গামলা ঠেসে ভাত নাও, আর সুযোগ বুঝে মেয়েটার ড্রেসিং টেবিল থেকে ক্ষো পাউডার হাতাও। এরকম আর কোথায় পারে? তার দিকে বুড়োর হেঁদলকুতকুতে চোখজোড়া না থাকলে কি এতো সুখ তার কপালে জোটে? যতোই হোক, বুড়ো কিন্তু এ পর্যন্ত বাড়াবাড়ি কিছু করেনি। করার লোভ যে ১৬ আনার জায়গায় ১৮ আনা তা তার বুকের দিকে বুড়োর আঠালো চাউনি দেখেই বোঝা যায়। এই লোভটা থাকলেই জুম্মনের মা এই বাড়িতে টিকে যাবে। তা যাই বলো, জোয়ান মনিবও ২/৪টা তার দ্যাখা আছে, ওগুলোকে সে হাড়ে হাড়ে চেনে। একদিন সম্বন্ধীর গায়ে-হলুদের উৎসব কি শালীর ছেলের পানচিনিতে বৌকে পাঠিয়ে দিয়ে কাজের মাতারির হাতে ৫টা টাকা গুঁজে পাশে নিয়ে শুয়ে পড়বে। তাও কিন্তু বিছানায় নয়। শোবার ঘর তাদের মসজিদ, সব সময় পাক সাফ রাখা চাই। ভাড়ার ঘর কি রান্নাঘর, এমনকি বাথরুমেও কারবার সারতে তাদের আপত্তি নাই। এরকম ২দিন, ৩দিন, বড়োজোর ৪ দিন করলেই সায়েবদের সখ মিটে যায়। তারপর নিজের নিজের পটের-বিবি মার্ক বৌদের ওপর মোহাব্বত উথলে ওঠে তাদের। সায়েব মানুষরা সব কতো ঢঙ জানে, কয়েকদিন একটু চোর চোর ভাব করে থাকবে। তারপর নিজেদের অপকর্মের জন্যে তার রাগ ঝাড়বে চাকরানীর ওপর। তাকে বিদায় করতে পারলে তখন বাঁচে। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করে তো এই বুড়োর কাছে একেবারে নিশ্চিন্ত। বুড়োর দৌড় যে কতোদূর তা ঈদের আগের রাত্রেই বেশ বোঝা গেছে। হাত ধরার বেশি ক্ষমতা তার নাই। এর বিনিময়ে জুম্মনের নিশ্চিন্ত আশ্রয়। খিজিরের ওপর ভরসা করলে কি ছেলে তার বড়ো হতে পারবে? ভাদাইম খিজিরের কি বুদ্ধিশুদ্ধি কোনোদিন হবে? নিমকহারামটা, তুই আছস BBBBBBB BBB BBB BB BBS BBB BBB B BB BBBBB BBB BBS তর মায়ের লগে মাহাজনে কি করছে না করছে এই মহল্লার মইদো ঐ খবর জানে না ক্যাঠায়? আরে তর যে আলাউদ্দিন মিয়া-এতো সভা মিটিং করে আর লেকচার ঝাড়ে, মাইনষে কয় স্যায় মন্ত্রী ভি হইবার পারে-তো আলাউদ্দিন মিয়া ভি দেহি একদিন বাদে বাদে মহাজনের বাড়ি গিয়া তার মাইয়ার লগে ফাসুর ফুসুর করে, মহাজনরে দেখলে সালামালেকুম মামুজান, শরীর কেমুন? বেলাড প্রেশারটা রেগুলার দেইখেন কইয়া খাড়া হয়, আর তুই কোন বান্দির বাচ্চা তার নামে দুনিয়া শুইদ্যা গিবত কইরা বেড়াস। জিন্দেগীতে তর কিছু হইবো?–রাগে জুম্মনের মায়ের সমস্ত গা নতুন করে কাপে। কিন্তু এইসব কথা তার মাথা জুড়ে বলকায়, মুখ দিয়ে বেরোয় না। মুখ দিয়ে এর বদলে বেরিয়ে আসে রাত্রে খাওয়া কাচকি মাছের দোপেয়াজি দিয়ে মাথা ঠাণ্ড ভাতের গন্ধওয়ালা পানি। কিন্তু খিজিরের শরীর ডিঙিয়ে যাওয়াও তো সম্ভব নয়। তাই বমির অনেকটা গড়িয়ে পড়ে খিজিরের গায়ের কাথায়। খিজির উঠে বসলে জুম্মনের মা দরজায় বসে ওয়াক ওয়াক করে বমি করে। ছোটো উঠানে বজলুর শরীরটা এখন নাই, নইলে বমিতে সেটা ভেসে যেতো।
জুম্মনের মা তক্তপোষে এসে বসলে খিজির বলে, কি হইছে? কাঁথার বমি-লাগা অংশটা পায়ের কাছে দিয়ে শুতে শুতে খিজির জিগ্যেস করে, মাহাজনে মনে লয় ঠাইসা খাওয়াইছে? কি দিয়া হান্দাইয়া দিলো?
এখন জুম্মনের মায়ের কোনো রাগ নাই। তার সমস্ত বুক ও মাথা জুড়ে উদ্বেগ। ৮ বছর আগেকার চেনা অনুভূতির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে সমস্ত শরীর জুড়ে। ঐ সময় গা এইভাবে গোলাতো! তাইতো। গত ২/৩ মাস তার নিয়মিত শরীর খারাপটা হয়নি। আজ দুপুরে মহাজনের বাড়িতে রান্না করতে করতে চুলার পাড় ভেঙে একটু পোড়ামাটি মুখে দিয়েছিলো। কালকেও খেয়েছে। পরশু? বোধহয়। তার আগের দিন? কি জানি!—এখন তাহলে কি হবে? খিজির ফের ঘুমিয়ে পড়েছে। কাল যাকে ঘর ছাড়তে হবে, বৌ থাকে কি না থাকে তার কোনো নিশ্চয়তা নাই, সেই মানুষ এভাবে শুয়ে থাকে কি করে?-কাল থেকে হয়তো এই লোকটিকে নাও দ্যাখা যেতে পারে।-দেহি তো হাড্ডি চোদায় ক্যামনে ঘুমায়া-খিজিরের মুখ দাখার জন্য জুম্মনের মা আড়চোখে নিচের দিকে তাকায়। আড়চোখে দ্যাখার দরকার ছিলো না। ইচ্ছা করলেও খিজির তাকে দেখতে পারতো না। আবার খিজিরের মুখ দ্যাখাও জুম্মনের মায়ের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ ঘরে ঘনঘোট অন্ধকার। বাইরে রাস্তার ল্যাম্পোস্টে বান্ধটা নষ্ট। খিজিরের কালো মুখ কাথায় ঢাকা।