আশ্রয় – ৮

আট

পরবর্তী এক সপ্তাহ দারুণ ব্যস্ততার মধ্যে কাটল এরিখের। হারানো গরুগুলোর অবস্থান কিংবা ওগুলোর ট্রেইল খুঁজে পাবার আশায় আশপাশের সম্ভব-অসম্ভব প্রায় সব ধরনের জায়গা আঁতিপাঁতি করে খুঁজল ও। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পাথুরে জমি, আলগা পাথরের মেসা, সেজ আর শিনারির জঙ্গল; মাঝে-মধ্যে কিছু ব্যবহৃত-অব্যবহৃত রহস্যময় ট্রেইল। কোথাও বড় বড় পাথরের চাঁই নগ্ন কাঁধ মেলে ধরেছে আকাশের দিকে। অসংখ্য ক্যানিয়ন আর বক্সক্যানিয়নে ঠাসা এ অঞ্চলে হাজারখানেক গরু কোন চিহ্ন না রেখে অনায়াসেই মাসের পর মাস লুকিয়ে রাখা যায়। এরিখ সত্যিকার অর্থেই গরুখোঁজা করল, ব্যাপারটাকে শেষ পর্যন্ত খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মতই মনে হলো ওর। ক্লান্ত এবং কিছুটা হতাশ হয়ে একটা দিন আস্তানায় কাটাবার সিদ্ধান্ত নিল সে।

বিশ্রাম নিতে নিতে প্রথম থেকে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া প্রতিটি ব্যাপার নিয়ে পৃথক পৃথক ভাবে চিন্তা-ভাবনা করল ও। বিশেষ কিছু লাভ হলো না তাতে। কোথাও কোন সূত্র পাওয়া গেল না।

শুধু একটা ব্যাপারে সামান্য আশার আলো দেখতে পেল এরিখ। পাইনস ভ্যালিতে গরুচোরদের হামলায় নিহত জ্যাক মূন মারা যাবার আগে মুখ খুলতে চেয়েছিল। একটা মাত্র শব্দ উচ্চারণ করতে পেরেছিল বেচারা। ‘রাইল’। রাসলিঙের রহস্য ভেদ করার ব্যাপারে এটা সম্ভবত ইঙ্গিতবাহী কোন শব্দ। হয়তো জো কিংবা ক্র্যামার কিছু বলতে পারবে এ সম্বন্ধে।

উঠে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসল এরিখ। ‘রাইল, রিলি কিংবা রাইলিও হতে পারে,’ নিজেকে শোনাল ও। ‘এটাই এখন একমাত্র সূত্র। জঙ্গল চষে বেড়ানো বাদ দিয়ে ওদিকেই ভাবা উচিত আমার,’ বুট পরতে পরতে নিজেকে পরামর্শ দিল সে। স্পেন্সারটা তুলে নিয়ে হাইড-আউট থেকে বেরিয়ে জিস্টারের পিঠে স্যাডল চাপাল। প্রভুর ইঙ্গিত পেয়ে জিস্টার ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নের দিকে ছুটল।

ক্যানিয়ন পেরিয়ে খাঁড়ির পাড় ধরে মৃদু চাঁদের আলোয় ব্রিজের কাছে এসে হাজির হলো এরিখ। ঘোড়া থেকে নেমে ব্রিজের তলায় ঢুকে দেশলাই বের করে আলো জ্বালাল। জেমস ক্র্যামারের কাছ থেকে মেসেজ আশা করছে ও।

অয়েলক্লথের মোড়কটা একটু খুঁজতেই পাওয়া গেল। মোড়ক খুলে ভেতরের ভাঁজ করা একটা কাগজ দেখল সে। বেরিয়ে এসে জিস্টারকে নিয়ে কাছের একটা ঝোপের ভেতরে ঢুকে আলো জ্বালল আবার। স্বল্পালোকে জেমসের দেয়া মেসেজ পড়ল ও:

ক্রস অ্যারো বিয়ারিকে ফোরম্যান বানিয়েছে। পিট গুজম্যান, রস ম্যাসটন আর টম টিংকার নামের তিনজনকে ভাড়া করেছে বিয়ারি। জর্জ লোকজন নিয়ে ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নে তল্লাশি চালাবার কথা ভাবছে। টোকারকে খুনের অভিযোগে শেরিফ তোমার নামে ওয়ারেন্ট জারি করেছে। ভগ লেইকার আর ওক টিকাউ কদিন ধরে ডব্লিউ বারে অনুপস্থিত। হারানো গরুর কোন খবর পাওয়া যায়নি এখনও।

পকেট হাতড়ে এক টুকরো কাগজ বের করে এরিখ তাতে লিখল,

‘মেসেজ পেয়েছি। ‘রাইল’ কিংবা ‘রাইলি’ নামের কারও সম্বন্ধে জানা দরকার। খুব জরুরী। গরুর চিহ্নই নেই।

ভাঁজ করে কাগজটা অয়েলক্লথে মুড়ে ব্রিজের নিচে রেখে দিল ও। তারপর ঘোড়া ছোটাল ক্রস অ্যারোর দিকে। আরেকবার ঢু মারা যাক ওখানে, সিদ্ধান্ত নিল এরিখ।

.

সেদিনের সে অ্যারোয়োটাতে গিয়ে ঘোড়া থামাল এরিখ। নেমে জিস্টারকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দিয়ে সন্তর্পণে টিলা বেয়ে উঠতে শুরু করল। র‍্যাঞ্চ হাউসের কাছে পৌঁছে একটা পাথরের আড়ালে থেমে সাবধানে মুখ বাড়াল। ওয়েন্ডিকে দেখার জন্যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা জেগেছে ওর মনে। করালের দিকে নজর দিল ও। কয়েকটা মাত্র ঘোড়া বাঁধা ওখানে। একটু দূরেই একটা ঢালের মধ্যে কিছু বাছুর। গরুগুলো সম্ভবত পাইনস ভ্যালিতে। যাবার সময় সম্ভব হলে ওখানেও একবার ঢুঁ মারা যাবে, ভাবল এরিখ।

স্পেন্সারটা বাগিয়ে ধরে সাপের মত বুকে হেঁটে সামনে এগোল ও। র‍্যাঞ্চহাউসের প্রায় একশো গজের মধ্যে চলে গেল। ঘুমন্ত ওয়েন্ডির শরীর ভেসে উঠল তার চোখে। অস্থির হয়ে উঠল ও ভেতরে ভেতরে। ওয়েন্ডিকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে, এক পলকের জন্যে হলেও।

আনমনা হয়ে পড়েছিল এরিখ। ফলে একটা পাথরের সাথে ওর স্পেন্সারের বাটের সংঘর্ষের শব্দটা যেন বজ্রপাত ঘটাল ওর কানে; জমে গেল ও একদম।

কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেল। খানিকটা স্বস্তি অনুভব করল এরিখ। কেউ শোনেনি। ধীরে ধীরে মাথা তুলল ও। হঠাৎ কাছের একটা ছায়াচ্ছন্ন অন্ধকার থেকে জ্বলে উঠল অগ্নিশিখাটা। এরিখের সামনে গজ সাতেক দূরে একটা পাথরে লেগে গুলিটা বিঙ শব্দে ছিটকে গেল একদিকে। গড়ান দিল এরিখ, নিচের দিকে ঢালমতন জায়গাটায় গিয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্কহাউসের দরজা খোলার শব্দ কানে এল ওর। কেউ একজন চিৎকার করে উঠল, কিছু একটা বলল কাউকে ডেকে। এরিখ উঠে মাথা নিচু করে দৌড় লাগাল, জিস্টারের কাছে গিয়ে পৌঁছল। পেছনে গুলির শব্দ শোনা গেল আবার।

লাফিয়ে ঘোড়ায় চড়ে ওটাকে রাস্তার দিকে ছোটাল এরিখ। পেছনে ছুটন্ত ঘোড়ার পায়ের শব্দ; ধাওয়া করছে ওরা। স্পার দাবাল এরিখ জিস্টারের পেটে। লাফিয়ে উঠে গতি বাড়াল জিস্টার। পেছনে মানুষের চিৎকার আর গুলির শব্দ, ছুটে আসছে ওরা ধাওয়া করে।

এরিখ ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল ওদিকে। অন্ধকারে দ্রুত ধাবমান দুটো মূর্তি নজরে এল ওর। স্পেন্সার তুলে পরপর দুটো বুলেট পাঠাল ও মূর্তিদুটোর দিকে। তাকাল আবার ঘাড় ফিরিয়ে। নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে পশ্চাদ্ধাবনকারী দু’জন, পিছিয়ে পড়েছে অনেকটা।

হাসল এরিখ। জিস্টারের গতি কমাল না একটুও। আরও কিছুদূর গিয়ে লাগাম টানল ওটার। রাস্তা ছেড়ে নেমে গেল ও ঘোড়াসহ। একটা নিচুমতন রিজ বেয়ে উঠল, নেমে গেল আরেকদিকে। ঝোপঝাড়ের আড়ালে একটা খালি জায়গায় ঘোড়া থামিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। একটু পরেই পাশের রাস্তায় খুরের শব্দ তুলে পাইনস ভ্যালির দিকে ছুটে গেল ধাওয়াকারীরা।

জিস্টারের পিঠ থেকে নামল ও। ভ্যালি রোডের সমান্তরালে ঘোড়াটাকে হাঁটিয়ে নিয়ে চলল দক্ষিণ দিকে। কিছুদূর যেতেই রাস্তায় ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনতে পেল। বুঝতে পারল, পাইন্স ভ্যালি থেকে ফিরে যাচ্ছে ওরা ক্রস অ্যারোতে। পুবাকাশে প্রভাতের আভাস ফুটে উঠতে শুরু করল আস্তে আস্তে। পাইন্স ভ্যালিতে ঢোকার পরিকল্পনা বাদ দিল সে।

ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নে পৌছতে পৌঁছতে ভোর হয়ে গেল প্রায়। ক্লান্ত শরীরে রুইন্স ক্যানিয়নে প্রবেশ করল এরিখ। ঘোড়াটাকে বাইরে বেঁধে রেখে হাইড-আউটে ঢুকল।

চিন্তার ঝড় বইছে ওর মাথায়। বিয়ারি যে ক্রস অ্যারো র‍্যাঞ্চে জাঁকিয়ে বসতে যাচ্ছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। সেভাবেই এগোচ্ছে ও। এরিখকে তাড়াতে পেরে নিশ্চিন্তবোধ করছে পিস্তলবাজ ছোঁড়াটা।

পা থেকে বুট খুলে নিয়ে দুই পা মেসেজ করতে লাগল এরিখ। বিয়ারিকে আর নিশ্চিন্ত থাকতে দেয়া ঠিক হবে না, ভাবল ও। ওর অশুভ পরিকল্পনায় সময় মত বাগড়া না দিলে ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। পরিণামে ওয়েন্ডির জন্যে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু এখন যেটা সমস্যা, সেটা হলো এরিখের। বিয়ারির কাজে বাগড়া দিতে গেলে ওকে ক্রস অ্যারো র‍্যাঞ্চের বিরুদ্ধেই দাঁড়াতে হবে বাহ্যত। সেটা ওয়েন্ডির মোটেও পছন্দ হবে না। এরিখের প্রতি ওর বিতৃষ্ণা বাড়বে আরও, নতুন করে।

কম্বল বিছিয়ে শুয়ে পড়ল সে। ঘুমাল প্রায় দুপুর পর্যন্ত। তারপর উঠে হাত-মুখ ধুয়ে নাস্তা তৈরি করে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত।

খেয়ে-দেয়ে সিগারেট রোল করল ও। ধরাতে যাবে, এমন সময় চোখ পড়ল বাইরে। খিস্তি আউড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল অস্ত্রের ওপর। মুখ থেকে সিগারেট ছিটকে পড়ল একদিকে।

অস্ত্র কক করল এরিখ, নিঃসঙ্গ আরোহীর দিকে তাকাল। এখনও বেশ খানিকটা দূরে; ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে পথ করে নিয়ে এগিয়ে আসছে অশ্বারোহী হাইড-আউটের দিকে।

ফিল্ডগ্লাস বের করে চোখে লাগাল এরিখ। ঘোড়াসহ লোকটা চলে এল ওর চোখের একদম সামনে। হালকা-পাতলা, কিছুটা বিষণ্নমুখের লোকটাকে চিনতে পারল ও। জো রীভস। উপত্যকা এবং পাহাড়গুলোর দিকে নজর বুলোতে বুলোতে আসছে লোকটা। একা।

কটা মুহূর্ত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগল এরিখ। চট করে কাউকে বিশ্বাস করা ওর স্বভাববিরুদ্ধ। তদুপরি বর্তমান পরিস্থিতিতে যথাসম্ভব সাবধানে থাকা উচিত। শেষ পর্যন্ত দ্বিধা কাটিয়ে উঠল সে। কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ওর একার পক্ষে সবকিছু সামাল দেয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।

হাইড-আউট থেকে বেরোল এরিখ। জো রীভস এদিকে তাকাতেই হাত নাড়ল। খেয়াল করল না লোকটা, চোখ ফিরিয়ে নিল। পর মুহূর্তেই তাকাল আবার। মাথা থেকে হ্যাট খুলে নিয়ে এরিখ এবার ওটা নাড়াল।

একসঙ্গে তিনটে কাজ করল অশ্বারোহী। পিছলে নামল ঘোড়ার পিঠ থেকে, ওটার পাছায় প্রচণ্ড এক থাপ্পড় লাগিয়ে ঝাঁপ দিল জঙ্গলের ভেতর হ্যাঁচকা টানে স্ক্যাবার্ড থেকে রাইফেলটা বের করে নিয়ে। হতচকিত ঘোড়াটা সরে গেল একদিকে। এরিখ হাসল। স্টক ডিটেকটিভ কোনরকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয়।

টুপিটা মাথায় পরে নিল ও। হাত নাড়ল ফের। ডিটেকটিভ ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। চিনতে পেরেছে এরিখকে। পিছিয়ে গিয়ে ঘোড়ায় চড়ে এগোল এবার।

এরিখ হাসল। ‘চিনলে কিভাবে?’ কাছাকাছি আসতেই জিজ্ঞেস করল ও।

‘মনে হচ্ছিল, এদিকে কোথাও আছ। জেমসকে বললেই পারতে…’

‘ঝুঁকি নিতে চাইনি,’ এরিখ ব্যাখ্যা করল।

‘ঠিক আছে। তোমার সাথে আলাপ করতে এসেছি আমি।

‘ঘোড়া রেখে আসো ওখানে।’ একটা ঝোপের দিকে ইঙ্গিত করল এরিখ। ‘তারপর আমার প্রাসাদে ঢুকে পড়ো। কফি খেতে খেতে আলাপ করা যাবে।’

ঘোড়া বেঁধে হাইড-আউটে ঢুকল রীভস। তাকাল চারদিকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে।

‘প্রাসাদই বটে!’ মন্তব্য করল ও সকৌতুকে। জায়গাটা ভালই বাছাই করেছ, ভূতের ভয় বাদ দিলে।’

‘আমার ভূতের ভয় নেই।’

‘আমার আছে। বড্ড বেশি কল্পনাপ্রবণ মন আমার।’

দুটো কাপে কফি ঢালল এরিখ। ডিটেকটিভের দিকে এক কাপ বাড়িয়ে দিয়ে নিজের কাপে চুমুক দিল। আড়চোখে চেয়ে দেখতে লাগল ও লোকটাকে। লম্বা মুখের ওপর লম্বাটে নাক, একজোড়া ধূসর, তীক্ষ্ণ চোখ আর নাকের নিচে ঝোলানো মস্ত একজোড়া বাঁকানো গোঁফ লোকটার। হরিণের শিঙে তৈরি বাঁটঅলা কোল্ট ঝুলিয়েছে কোমরে ক্রস-ড্রয়ের ভঙ্গিতে। ওর যেটা বেশি চোখে পড়ল, সেটা রাইফেল। শার্পস রাইফেল ওটা, প্রচলিত শাপসের চেয়ে কিছুটা খাটো, তবে কারবাইনের চেয়ে বড়। এরিখ হাতে নিয়ে দেখল অস্ত্রটা, ভারি।

‘বিশেষভাবে তৈরি?’ জানতে চাইল ও।

‘নাহ্।’ মাথা নাড়ল রীভস। ‘ইউ এস ইস্যু; তিরিশ ইঞ্চি ব্যারেল থেকে চার ইঞ্চি কেটে বাদ দিয়েছি। ঘোড়ায় বসে চালাতে সুবিধে। অবশ্য কারবাইনের চেয়ে এখনও চার ইঞ্চি লম্বা।’

‘অধিকাংশ লোক রিপিটার ব্যবহার করে এখন। হেনরী কিংবা স্পেন্সার,’ মন্তব্য করল এরিখ।

‘হতে পারে।’ জো রীভস কফির তলানিটুকু বাইরে ছুঁড়ে দিল। ‘আমি শাপসেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সৌভাগ্যবানও।

রাইফেলটা নামিয়ে রাখল এরিখ। ওদিকের খবর কী?’

‘ওক টিকাউ এসেছে গত রাতে। জর্জকে কিছু একটা রিপোর্ট করেছে। শোনার চান্স পাইনি। আমার মেসেজ পেয়েছিলে?’

‘পেয়েছি। জবাব রেখে এসেছিলাম, পাওনি?’

‘না তো! আসার পথে ওখানে দেখে এসেছি। কিছুই ছিল না।’

পেটের ভেতর হিমবোধ হলো এরিখের। হয়তো জেমস পেয়েছে ওটা।’

‘আশা করি তাই যেন হয়, বিড়বিড় করল জো।

‘রাইল কিংবা রাইলি- এই নামের কাউকে চেনো তুমি? মানুষ ছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে।’ এরিখ জিজ্ঞাসু চোখে চাইল ডিটেকটিভের দিকে।

‘ডব্লিউ বারের কেউ নয়,’ চিন্তিতভাবে মাথা নাড়াল রীভস। এদিকে এই নামের আর কেউ আছে বলে মনে পড়ছে না। কোথায় শুনেছ এই নাম?’

‘নাম—কিংবা শব্দ। জ্যাক মূন মারা যাবার আগে এটুকুই বলতে পেরেছিল।’

সিগারেট রোল করল জো রীভস। একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারো তুমি। শেষ পর্যন্ত যেখানেই যাক, ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নের ভেতর দিয়েই যেতে হয় গরুগুলোকে।’ সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করল ও।

‘আমার চোখে পড়েনি,’ এরিখ বিরসকণ্ঠে বলল।

কাঁধ ঝাঁকাল ডিটেকটিভ। যায়। আমি জানি।’

‘চ্যাপম্যান যে এতে জড়িত নয়, কতটা নিশ্চিত তুমি?’

‘একশো ভাগই হওয়া উচিত। সারাক্ষণই গরুচোরদের খোঁজে ব্যস্ত থাকে জর্জ। এরপরেও যদি সে এতে জড়িত থাকে, তাহলে আমার জানামতে যত ধুরন্ধর আছে, ও তাদের ওস্তাদ।

‘বিয়ারির খবর কী?’ এরিখ প্রসঙ্গ পাল্টাল। ‘গোলমাল পাকিয়েছে কিছু?’

জো রিভস হাসল। ‘জোড়াপিস্তলবাজ? পাকাবার তালে আছে বৈ কি! বিখ্যাত সব লোক ভাড়া করেছে ও। চিনি সবগুলোকে। গুজম্যান যেটা, সেটা এক সময় ব্লু রিভার গ্যাঙে ছিল। অন্য দু’জন, ম্যাস্টন আর টিংকার, টেক্সাসের ঘাঘু; পেকোস অঞ্চলের মাল। এদের নিয়েও যদি সে রেঞ্জওয়ার না বাধায়, তাহলে অবাক হব আমি।’

‘ডগের খবর কী?’

‘ছুটি নিয়ে বাইরে গেছে কয়েকদিনের জন্যে।’

‘তুমি ডব্লিউ বার থেকে বেরোলে কিভাবে?’

হাসল জো। ‘ভেনিসন খুব পছন্দ করে চ্যাপম্যান। ফুরিয়ে গেছে মনে হয়; আমাকেই পাঠাল।

‘কেউ অনুসরণ করেনি তো তোমাকে?’ এরিখ চিন্তিত হলো।

‘কালকের ছেলে পেয়েছ আমাকে, না? একটা চোখ সারাক্ষণই পেছনে ছিল আমার। কাউকে দেখিনি অনুসরণ করতে।’

‘তবুও,’ এরিখ বাইরে তাকাল। ‘এটা একটা ভয়ঙ্কর খেলা, জো। তুমিও তা জানো। কোনভাবে যদি ওরা তোমার আসল পরিচয় জেনে যায়, তাহলে বাঁচার কোন সুযোগই পাবে না তুমি।’

জো কফির কাপ ভর্তি করল নিজের জন্যে। ‘তুমি সম্ভবত জানো না, এরিখ, আমি কেন স্টক ডিটেকটিভের কাজটা করছি।’ হাত ঘুরাল সে চারদিকে। আমি এই দেশটা পছন্দ করি। আমার বউ-ছেলেমেয়েরা কলোরাডোয়, অপেক্ষা করছে আমার জন্যে। আমাকে দেখার জন্যে অধীর হয়ে আছে ওরা। কিন্তু আমি এখন যেতে পারছি না। এই জঘন্য রাসলিঙ বন্ধ হওয়া উচিত, সে জন্যে কাজ করছি আমি। এটা শেষ হলে আমার ছুটি। বউ-ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসব এখানে, ছোট্ট একটা র‍্যাঞ্চ গড়ে তুলব ওদের জন্যে।’

একটু থামল জো। ‘যে কেউই,’ শুরু করল আবার, ‘যদি র‍্যাঞ্চ গড়তে চায়, তার জন্যে উপযুক্ত সময় এখনই।’

এরিখ মাথা দুলিয়ে সায় দিল। ‘তোমার কথা বুঝতে পেরেছি। আমার উদ্দেশ্যও তাই।’

জো ওর দিকে চাইল। ‘প্রথম সাক্ষাতের কথা আমার মনে আছে এখনও।’ বলল সে। ‘তুমি তখন একজন ভবঘুরে ছিলে!’

এরিখ হাসল। ভাঙা চোরা হাইড-আউটে চোখ বুলাল ও। এখনও তাই, জো।’

‘কিসে তোমার মত পাল্টেছে, এরিখ?’

‘তোমাকে সত্যি কথাই বলছি,’ এরিখ শান্তস্বরে বলল, ‘ডেভিড ক্লে’কে ডীপ শ্যাডো ভ্যালিতে ঝুলন্ত অবস্থায় পেয়েছিলাম আমি। তাছাড়া ওয়েল্ডি পালাতে চায় না এখান থেকে। সবকিছুর বিরুদ্ধে একাই রুখে দাঁড়াতে চায়।’

‘হ্যাঁ।’ হাসিমুখে মাথা দোলাল ডিটেকটিভ। ‘চমৎকার মেয়ে ওয়েন্ডি!’

‘কিন্তু ডেভিডকে ঝুলিয়েছে কারা?’

‘কুইন সাবে! কে বলতে পারে?’ গম্ভীর হলো জো রীভস। ‘অন্যান্য অনেক কিছুর মত এটাও একটা রহস্য।’

আগুন নিভিয়ে দিল এরিখ। ‘তোমার যাওয়া উচিত এখন। চ্যাপম্যান যে কোন সময় ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নে আসতে পারে, জানিয়েছিলে তুমি।’

‘চিন্তার কিছু নেই। এক্ষুণি আসছে না ও।’

‘তবু তোমার যাওয়া উচিত।’

শার্পসটা তুলে নিল রীভস, বেরিয়ে গেল হাইড-আউট থেকে। কিছু দূর গিয়ে ফিরল ও। ‘ব্রিজের তলায় আর কোন মেসেজ রাখার দরকার নেই, তাই না?’

‘না,’ এরিখ জবাব দিল। ‘ক্র্যামারের কাছ থেকে খবর জেনে আসব আমি।’

‘ওটা তোমার জন্যে আরও বিপজ্জনক হবে। রকস্প্রিঙে জামাই আদর পাবে না তুমি।’

‘তবু ঝুঁকি নিতেই হবে।’

ট্রেইলের শেষ মাথায় পৌছে গেল রীভস। ‘দেখো! পিছু ফিরে ডাকল ও এরিখকে। এরিখ ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে ক্যানিয়নের মুখে তাকাল। ধুলো উড়ছে ওদিক থেকে। একটু পরেই পাঁচজন অশ্বারোহীকে দেখতে পেল ওরা। খিস্তি করল এরিখ। ‘ফিরে আসো!’ চিৎকার করে ডাকল সে জোকে। ভেতরে এসে স্পেন্সারটা তুলে নিল। ফাঁদে পড়ে গেছে ওরা ইঁদুরের মত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *