আশ্রয় – ১৬

ষোলো

শেষ রাত। ভোর হবার আর বেশি দেরি নেই। রকস্প্রিং শহর থেকে কিছু দূরে দু’জন ঘোড়সওয়ারকে দেখা গেল। শহরের দিকে যাচ্ছে ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে।

‘তুমি না এলেই পারতে, গাস। আহত তুমি।’

‘আমি ডান হাতেই গুলি চালাই।’

‘ভালই বলেছ,’ এরিখ হাসল। ‘জানলাম, যে-হাতে তোমার গুলি লেগেছে, ওটা বাম হাত। কেমন বোধ করছ এখন?’

‘চমৎকার! মনে হচ্ছে অনেক বছর ধরে এত ভাল বোধ করিনি। কেন, জিজ্ঞেস কোরো না। বলতে পারব না।’

‘আমি পারব।’ ওর মুখের দিকে চাইল এরিখ। ‘যে কাজটায় এখন তুমি জড়িয়ে পড়েছ, সেটা একটা ভাল কাজ বলেই।

‘হতে পারে,’ হাসল গাস ল্যামেল। ‘তবে তুমি আমার অভ্যাস খারাপ করে দিচ্ছ। এরপর থেকে এরকম ভাল কাজ খুঁজে খুঁজেই বেড়াতে হবে।’

‘যথেষ্ট পাবে, ওকে আশ্বাস দিল এরিখ। ‘আসলে কী জানো? খারাপ কাজ না-করে থাকতে পারাটাই হচ্ছে ভাল কাজ। আমি জানি তুমি সৎ লোক। সঙ্গদোষেই খারাপ পথে পা বাড়িয়েছিলে।’

‘বাদ দাও।’ প্রসঙ্গ পাল্টাল গাস। ‘তোমার কি মনে হয় যে, চ্যানি শহরেই থাকবে?’

‘থাকবে। বাজি ধরতে পারি আমি এ ব্যাপারে। ওয়েন্ডির ধারে-কাছেই থাকতে চাইবে ও এখন।

‘এরিখ, ও খুব চালু। বিদ্যুতের মতই। আমি বলছি না যে, তুমি কিছুমাত্র কম চালু। তবু সাবধান করছি তোমাকে।’

বুড়োর দিকে ফিরল এরিখ। ‘ধন্যবাদ, গাস। আমি আশা করি ওর বিরুদ্ধে পিস্তল বের করার দরকারই হবে না।’

‘আমিও তা-ই করি। তবে ঝুঁকি নিতে যেয়ো না যেন দয়া করে।’

‘আমি আর রক্তপাত চাই না,’ বলল এরিখ। এ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়েছে। শান্তি চাই এবার।’

‘আমিও চাই।’ নিজের অভিমতটাও জানাল গাস।

চারদিক ফরসা হয়ে গেছে। রকস্প্রিং শহরের প্রথম বিল্ডিংটা নজরে পড়ল ওদের। আকাশে মেঘের আনাগোনা। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। বৃষ্টি নামার পূর্বাভাস। কাঠের পুলে ঘোড়ার খুরের খটাখট শব্দ তুলে শহরে ঢুকল দুই ঘোড়সওয়ার। বিশালদেহী একজন লোক বেরিয়ে এল সামনের একটা ঘর থেকে। দ্রুত এগিয়ে এল লোকটা ওদের কাছে।

‘খবর কী, ওয়েন?’ জানতে চাইল বিশালদেহী 1

‘ভাল, মি. চ্যাপম্যান। সবগুলো গরু উদ্ধার করেছি আমরা রাসলারদের হাত থেকে। বার্জার আর অন্যান্য র‍্যাঞ্চারদের তত্ত্বাবধানে আছে ওগুলো ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নে। রাসলারদের সবাই মারা গেছে।

‘সত্যি!’ খুশিতে বিশাল শরীর নিয়েও প্রায় নাচের মত একটা ভঙ্গি করে ফেলল চ্যাপম্যান। ‘ইস্, আমিও যদি থাকতে পারতাম তখন!’

এরিখ মাথা নাড়ল, গাসের দিকে চাইল ও। ‘আমি অত্যন্ত সুখী যে, তুমি ছিলে না,’ মন্তব্য করল গাস।

চ্যাপম্যান এরিখের দিকে চাইল। কি বলছে ও?’

‘তোমার জন্যে একটা খারাপ খবর আছে, জর্জ,’ এরিখ সতর্কভাবে বলল। অবশ্য যদি তুমি তা মনে করো।’

‘কি খবর?’

‘রকস্প্রিং শহরের শেরিফ হল চ্যাপম্যান মারা গেছে।’

এক মুহূর্ত নীরব রইল চ্যাপম্যান। যেন এরিখ কি বলেছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করল।

‘কার কাজ?’

এরিখ বিপন্নচোখে গাসের দিকে চাইল। শ্রাগ করল গাস। ‘ওকে বলা উচিত, এরিখ।’

ঘোড়া থেকে নেমে সিগারেট রোল করল এরিখ। জর্জকে অফার করল একটা। জর্জ ম্যাচ জ্বেলে সিগারেট ধরাল। ‘বলো এবার।’

সংক্ষেপে জানাল এরিখ সবকিছু। দোমড়ানো ব্যাজটা বের করে জর্জের দিকে বাড়িয়ে দিল সে।

ব্যাজটা হাতে নিল জর্জ। এরিখ লক্ষ্য করল হাতটা কাঁপছে প্ৰকাণ্ড মানুষটার। ব্যাজটাকে উল্টে পাল্টে দেখল ও কিছুক্ষণ, তারপর ছুঁড়ে ফেলে দিল ওটা।

ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!’ বলল চ্যাপম্যান। ‘তিনি আমাদের মঙ্গলের জন্যে সবকিছু করে থাকেন। লেইকার ভাল ছিল না। আমি জানতাম। রাইলটন, মানে বাটলারও একজন ধূর্ত আর নীচ প্রকৃতির লোক ছিল। কিন্তু হল? ও আমার আপন ভাই। ওর এসবে জড়ানোর কোন দরকার ছিল না। আমাদের দুই ভাইয়ের জন্যে ডব্লিউ বার যথেষ্ট বড় ছিল। থামল ও। এরিখের দিকে তাকাল। ‘ওকে কবর দিয়েছ?’

‘মৃতদেহ কবর দেয়াই উচিত,’ তিক্ত স্বরে বলল এরিখ। নয়তো পরিবেশ দূষিত হয়।’

‘ধন্যবাদ।’ একটু ইতস্তত করল চ্যাপম্যান। ‘একটা কথা—দয়া করে ওর নাম কখনও উচ্চারণ করবে না আমার সামনে। ঠিক আছে?’

মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল এরিখ। ‘ঠিক আছে। ওই নামের কেউ কখনও ছিল না রকস্প্রিঙে।’

কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে তাকাল চ্যাপম্যান। ‘তোমার সাথে আরও আলাপ আছে, ওয়েন।’

‘বলো।’

‘বিয়ারি আর ওর মেক্সিকান লোকটা সারারাত শহরে কাটিয়েছে আজ মতলব ভাল নয় ওদের। ঝামেলা পাকাবার তালে আছে। জেমসের দোকানে গিয়েছিল কালরাতে, ওয়েন্ডিকে র‍্যাঞ্চে ফিরিয়ে নেবার জন্যে। জেমস স্রেফ শটগানের মুখে ভাগিয়ে দিয়েছে। রেগে টং হয়ে আছে ওরা বুড়োর ওপর। ব্যাপারটায় মনে হয় আমাদেরও নাক গলানো উচিত।’

‘তুমি এখানে ঘোড়াগুলো নিয়ে অপেক্ষা করো।’ গাসের দিকে তাকাল এরিখ। ‘জর্জ সাহায্য করবে আমাকে।’

‘জর্জের লড়াই নয় এটা, ঝাঁঝিয়ে উঠল গাস। ‘তোমার আর আমার। আমি যাচ্ছি।’

কাঁধ ঝাঁকাল এরিখ। জর্জের দিকে তাকাল। ‘কোথায় এখন ওরা?’

‘ওয়েস্টার্ন মূনে গেলে পাবে।’

এরিখ পা বাড়াল। ‘এসো গাস। জর্জ, ঘোড়াগুলো তোমার জিম্মায় রইল।’

হাঁটতে হাঁটতে স্টারটা বের করে দ্রুত চেক করে নিল এরিখ। লোডেড। খাপে ঢুকিয়ে রাখল আবার অস্ত্রটাকে। সূর্য ওঠেনি এখনও। বাতাস বইছে। মাঝে-মধ্যে দু’এক ফোঁটা করে হালকা বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। ভোরের ফিকে আলোয় নিঃশব্দ পায়ে এগোল ওরা সেলুনের দিকে সামনে একটা ঘর থেকে আগুনের শিখা উঁকি দিচ্ছে বাইরে। সাত সকালে চুলোয় কফি চড়িয়েছে সম্ভবত কোন কফিখোর। রাস্তায় মানুষজন বেরিয়ে আসেনি এখনও। দূরে শহরের শেষ প্রান্ত থেকে একটা মোরগের ডাক ভেসে এল।

এরিখ পিছু ফিরে চাইল। ওদের ঘোড়াগুলোর রশি হাতে দাঁড়িয়ে আছে চ্যাপম্যান এদিকে ফিরে। এরিখ চাইতেই হাত নাড়ল ও।

সেলুনের কাছে চলে এল ওরা। সতর্ক চোখে তাকাল সেলুনের দরজায়। বন্ধ। ভেতরে লোকজনের খুব একটা সাড়া-শব্দ নেই।

একটা লোক নেমে এল রাস্তায়। এরিখ চিনতে পারল লোকটাকে। ডেপুটি শেরিফ জব রাফ। ওদের সামনে এসে দাঁড়াল লোকটা। ‘কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’ জানতে চাইল ও কর্কশ কণ্ঠে।

‘দুটো ভোঁদড়ের নাকে দড়ি পরাতে। খুব একটা পাত্তা দিল না গাস ডেপুটিকে। ‘চেনো নাকি ওদের? চ্যানি বিয়ারি আর টম টিংকার।’

মাথা নেড়ে আপত্তি জানাল ডেপুটি। ‘উঁহুঁ। কোন ঝামেলা চাই না আমি এখানে। হল ফিরে না আসা পর্যন্ত আমিই এখানকার প্রধান ল’ অফিসার। আমার কথা মানতে হবে তোমাদের।’

‘ওর জন্যে তাহলে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে,’ মন্তব্য করল গাস।

‘কি বলছ তুমি?’ রুক্ষস্বরে প্রশ্ন করল ডেপুটি জব রাফ।

‘হল মারা গেছে, রাফ,’ জবাব দিল এরিখ। ওর দু’চোখ সেলুনের দরজায় সেঁটে রয়েছে।

হাড্ডিসার কাঁধদুটো উঁচু করল জব রাফ। ‘তাহলে আমিই শেরিফ এখন থেকে।’ শেরিফোচিত গাম্ভীর্য নিয়ে আসার চেষ্টা করল ও গলায়। ‘বেরিয়ে যাও তোমরা দু’জন শহর থেকে। এক্ষুণি।’

‘সরে দাঁড়াও, রাফ। জরুরী কাজ রয়েছে আমাদের। এরিখ শান্ত স্বরে বলল।

প্রত্যুত্তরে লম্বা একটা হাত বাড়িয়ে এরিখের বুকে টোকা লাগাল রাফ। ‘শহরে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার দায়ে তোমাদের গ্রেফতার করব আমি।

ডান হাতের উল্টো পিঠের একটা চড় লাগাল এরিখ জব রাফের গালে। চেঁচিয়ে উঠে গালে হাত দিল রাফ। পর মুহূর্তে বুকে মাঝারি সাইজের একটা ঘুসি খেয়ে চিৎ হয়ে পড়ল রাস্তায়। ওকে পাশ কাটিয়ে সেলুনের দিকে এগোল ওরা।

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে ততক্ষণে। ঠাণ্ডায় শিউরে উঠল এরিখ। ধীরে ধীরে সেলুনের দরজা খুলে একজন হালকা পাতলা সুদর্শন লোক নিঃশব্দে বেরিয়ে এসে অনিংয়ের নিচে দাঁড়াল। লোকটা চ্যানি বিয়ারি। শান্ত কিন্তু স্মার্ট ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছে সে। কোমরের দু’দিকে দুটো পিস্তল বাঁধা। কোমরের কাছেই ঝুলছে ওর হাত। ওকে দেখে এরিখ আর গাস দাঁড়িয়ে পড়তেই কাছের একটা খুঁটিতে হেলান দিল ও। হাসল বিদ্রূপের ভঙ্গিতে। দু’জন মিশনারি দেখছি!

‘তোমাকে সুপথে ফেরানোর জন্যেই এসেছি, বাছা।’ বিদ্রূপ করল গাসও।

পকেট থেকে একটা তৈরি সিগারেট বের করে ঠোঁটে ঝোলাল বিয়ারি। ম্যাচে কাঠি ঠুকে আগুন ধরিয়ে নিয়ে জ্বলন্ত কাঠির ওপর দিয়ে চাইল ওদের দিকে।

‘কিভাবে চাও?’ ঠোঁটের একপাশ থেকে কায়দা করে অন্য পাশে নিয়ে গেল ও সিগারেটটাকে। ‘একসঙ্গে, না একজন একজন করে?’

এরিখ রাস্তায় চোখ বুলাল। টিংকারকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও।

‘তোমাকে একটা সুযোগ দেব, চ্যানি। ভাগো, যেদিকে ইচ্ছে ভাগো এখান থেকে। এক্ষুণি।’

বিয়ারি হাসল। ‘খুব শক্ত লোক, না?’

আচমকা গাল বকে উঠে এরিখকে ঠেলা দিল গাস। পর মুহূর্তে পিস্তল তুলল ও। এরিখের মাথার এক পাশে জ্বালা ধরিয়ে ছুটে গেল একটা গুলি। গাসের পিস্তলের আওয়াজ শোনা গেল সাথে সাথে। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে চাইল এরিখ। সেলুনের পাশ ঘেঁষে যে গলিটা, সেটার মুখে টিংকারকে দেখতে পেল ও। টলমল করে কয়েক পা সামনে হাঁটল টিংকার বুকে হাত চেপে, তারপর লুটিয়ে পড়ল রাস্তায়।

‘কোন কাজই ঠিক মত সারতে পারত না লোকটা। শেষ হয়ে-যাওয়া সিগারেটের গোড়াটুকু ছুঁড়ে দিল বিয়ারি মৃতলোকটার দিকে। পর মুহূর্তেই গোখরো সাপের মত দু’হাতে ছোবল বসাল ও নিজের দুই কোমরে। দুটো পিস্তল উঠে এল দু’হাতে। এক সঙ্গে দু’জনকেই কাভার করল পিস্তল দুটো।

‘মাথার ওপর হাত তোলো দু’জনে,’ হুকুম দিল ও। ‘নইলে দু’জনকেই ফুটো করে দেব। গরু চুরির অভিযোগ আছে তোমাদের বিরুদ্ধে।’

হাত তোলার কোন লক্ষণ দেখা গেল না এরিখের মধ্যে। ইতোমধ্যে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে একজন দু’জন করে কিছু লোক। উত্তেজনাকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে দেখে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে গেছে তারা।

‘কই, হাত তুলতে বললাম না? কথা না শুনলে গুলি করব!’ তাগাদা দিল চ্যানি বিয়ারি।

এরিখ হাসল। ‘তুমি কিন্তু আমাকে পিস্তল ড্র করতে বলোনি, বাছা সবাই দেখেছে আমি কোন রকম অ্যাকশনে যাইনি। ও,’ রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতলোকটাকে দেখাল সে, ‘চোরের মত গুলি করতে গিয়ে গাসের হাতে মরেছে। তুমি আমাকে গুলি করে বাঁচতে পারবে না। নিরস্ত্র লোকের ওপর গুলি চালালে খুনের অভিযোগে তোমাকে গ্রেফতার করবে জব রাফ।’

‘ওকে থোড়াই কেয়ার করি আমি।’ থুতু ফেলল চ্যানি। ওর মত পাঁচজনকে একা মোকাবেলা করতে পারি আমি।’

‘ভাল কথা।’ হাসল এরিখ। আমিও বিশ্বাস করি। কিন্তু গরু চুরির কথা কি যেন বললে?’

‘হুঁ।’ উজ্জ্বল মুখে সমবেত লোকদের দিকে চাইল চ্যানি। ওয়েন্ডির ওপর চোখ পড়ল ওর। জেমস ক্র্যামারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। ওর দু’চোখে স্পষ্ট উদ্বেগ। নিজের বোকামিটা বুঝতে পারল চ্যানি। ওয়েনকে ড্র করতে বলা উচিত ছিল। অবশ্য আশা ছিল ওর মুভমেন্ট দেখেই পিস্তল বের করবে এরিখ। বুঝতে পারেনি, ও এতটা ভীতু লোক।

বিজয়ীর ভঙ্গিতে চাইল চ্যানি সবার দিকে। বক্তৃতার সুরে শুরু করল, ‘ভাইসব, রকস্প্রিং শহরের আশেপাশের র‍্যাঞ্চগুলো থেকে এতদিন ধরে যেসব গরু চুরি হচ্ছিল, তার মূলে এ লোকটাই। ও একটা গরু চোর। স্বীকার করেছে ও আমার কাছে পাইনস ভ্যালিতে। পরে ও ওখান থেকে পালিয়ে যায়। এখন ধরা পড়েছে আবার। আপনারা কেউ একটা দড়ি নিয়ে আসুন। ঝুলিয়ে দিই ওকে।

অস্ফুট গুঞ্জন শুরু হলো লোকজনের মধ্যে। এরা প্রায় সবাই দোকানদার। রাসলিঙের ব্যাপারটা তাদের জন্যে সরাসরি ক্ষতিকারক না- হলেও পরোক্ষভাবে অবশ্য হুমকি স্বরূপ। কারণ রকস্প্রিং মূলত একটা কাউটাউন। র‍্যাঞ্চাররা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রকস্প্রিংও তার অর্থনৈতিক সচ্ছলতা হারাবে। কেউ কেউ সমর্থন করল বিয়ারিকে। একজন বলে উঠল, ‘তাহলে ঝুলিয়ে দেয়াই উচিত। ওটাই গরু চোরের উপযুক্ত সাজা।’

ভীড় ঠেলে এগিয়ে এল জর্জ চ্যাপম্যান। ‘কিন্তু আমার পাওয়া তথ্যের সঙ্গে তোমারটা মিলছে না, বিয়ারি। এরিখ গরুচোর নয়, বরং গরুচোরদের আখড়া ভেঙে দিয়েছে ও গতরাতে। রবার্ট বাটলার আর ডগ লেইকারসহ কয়েকজন মিলেই এতদিন ধরে রাসলিঙ চালাচ্ছিল।’

চ্যাপম্যানকে পাত্তা দিল না বিয়ারি। ভেংচি কেটে বলল, ‘ভুল তথ্য পেয়েছ তুমি। আর যদি সত্যি বলে দাবি করতে চাও, তাহলে তুমি নিজেও ফেঁসে যাচ্ছ এতে। কারণ সবাই জানে লেইকার তোমারই লোক।’ অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে চাইল ও র‍্যাঞ্চমালিকের দিকে।

আচমকা কথা বলে উঠল জেমস ক্র্যামার। ‘আমার হাতে এটা একটা ডবল ব্যারেল শটগান, চ্যানি। এর গুলিতে কি হয়, জানো নিশ্চয়।’

তাকাল চ্যানি ওর দিকে। বুড়ো দোকানদার কখন যে আগের অবস্থান ছেড়ে ওর পাশে চলে এসেছে, লক্ষ্য করেনি ও কথার ঝোঁকে। খেঁকিয়ে উঠল চ্যানি, ‘তোমার লড়াই নয় এটা, ক্র্যামার। অহেতুক নাক গলাতে আসছ কেন?’

‘তা ঠিক।’ ওর সাথে একমত পোষণ করল জেমস ক্র্যামার। তবে তোমার বিরুদ্ধে একজন লোককে পেছন থেকে গুলি করে খুন করার অভিযোগ আনছি আমি।’

‘মিথ্যে কথা। আমি কাউকে খুন করিনি। কেউ সাক্ষ্য দিতে পারবে না।’

‘গাস পারবে,’ জবাব দিল ক্র্যামার। ‘প্রকৃত ব্যাপার হলো টোকারকে তুমিই খুন করেছ। পরে হলের কাছে মিথ্যে সাক্ষ্য দিয়ে এরিখকে ফাঁসিয়েছ গাস এটাও বলবে যে, তুমি ওকে ভয় দেখিয়ে সে-সময় মিথ্যে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছিলে।’ ল্যামেলের দিকে চাইল ক্র্যামার। ‘কি গাস, বলবে না?’

‘নিশ্চয়ই বলব। খুঁটিনাটি সবকিছুই।’

পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবার উপক্রম হলো চ্যানি বিয়ারির। মরিয়া হয়ে বলল, ‘ডগ লেইকারও ওর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল। ও…

কথা শেষ করতে দিল না ওকে ক্র্যামার। ‘এরিখের সাথে ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল ডগের। সবাই জানে, রকস্প্রিং শহরের রাস্তায় ধোলাই খেয়েছিল ও এরিখের হাতে, বাহাদুরি ফলাতে গিয়ে। তুমি পেছন থেকে বিনা উস্কানিতে গুলি চালানোর ফলে ওর জন্যে এরিখের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর মত একটা সুযোগ জুটে যায়। তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে ওর কোন লাভ হত না। বরং তোমার অনুকূলে সাক্ষ্য দিলেই ব্যাপারটা এরিখের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে এবং তার প্রতি ওর ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ হয়। তাছাড়াও ডগের সাক্ষ্যের কোন মূল্য নেই এখন আর আদালতে। আদালতও জানবে আমাদের মত যে, ও একজন গরুচোর। ক্লিয়ার?’

আবার গুঞ্জন উঠল সমবেত লোকদের মধ্যে। তবে এবার যে ওর অনুকূলে নয়, চ্যানি তা বুঝতে পারল। ছাইয়ের মত ফ্যাকাসে হয়ে গেল ওর সুদর্শন মুখখানা।

‘তোমার বিরুদ্ধে আরেকটা অভিযোগ আছে,’ খেই ধরল ক্র্যামার। ‘একজন অসহায় মহিলাকে তার র‍্যাঞ্চ থেকে উচ্ছেদ করেছ তুমি। মিস ওয়েন্ডি সেটার সাক্ষী। তুমি ওকে ওর র‍্যাঞ্চ থেকে উচ্ছেদ করেছ।

‘মিথ্যে কথা!’ চেঁচিয়ে উঠল চ্যানি। ‘আমি ওকে উচ্ছেদ করিনি। আমি ওকে…’

‘জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছিলে, এই তো? ও রাজি হয়নি এবং সে জন্যে তুমি ওকে হুমকি দিয়েছ।’

হেসে উঠল কেউ একজন। মুহূর্তেই সংক্রমিত হলো তা সবার মধ্যে। ঝুলে পড়ল চ্যানির কাঁধ। জেমস ক্র্যামারের উদ্যত শটগানের মুখে ভুলেও ভাবল না সে পিস্তল চালানোর কথা। দুটো পিস্তলই সে খাপে ঢোকাল। বলল, ‘ঠিক আছে, দোষ স্বীকার করছি আমি। ওয়েন্ডির সাথে ব্যাপারটা মিটমাট করে নেব আজই। আর…টোকারের গুলিবিদ্ধ হবার ব্যাপারটা নেহাত ভুল বোঝাবুঝি। ওর সাথে কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না আমার। আমি চলে যাব এ-অঞ্চল ছেড়ে, কথা দিচ্ছি।’

এবার শেষ পেরেকটা ঠুকল বুড়ো গাস। ‘কিন্তু সনোরার কাছে একটা শহরের মার্শালকে গোপনে হত্যা করার ব্যাপারটাও কি ভুল বোঝাবুঝি ছিল, বাছা? ওটা কিভাবে ব্যাখ্যা করতে চাও তুমি?’ টাকা-পয়সার ব্যাপারটা বেমালুম চেপে গেল বুড়ো।

কথা সরল না চ্যানির মুখ দিয়ে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ও কিছুক্ষণ গাসের দিকে। আচমকা ভাঙা গলায় খেঁকিয়ে উঠল, ‘তোমাকে প্রথমেই খুন করা উচিত ছিল আমার, পাজি বুড়ো কোথাকার! তুমিই সব গণ্ডগোলের মূল।’ দু’হাতে মুখ ঢাকল দোপিস্তলবাজ।

‘রাফ।’ দরাজ গলায় হাঁক দিল জর্জ চ্যাপম্যান। ‘আমার ভাই হল একজন রাসলার ছিল। স্ট্যাম্পিডে মারা গেছে ও। নতুন শেরিফ নিযুক্ত করার আগে পর্যন্ত তুমি ওর স্থলাভিষিক্ত, এখন থেকেই।’ বিয়ারির দিকে আঙুল উঁচাল ও, ‘দেখি কেমন দ্রুত জেলখানায় ঢোকাতে পারো ওকে। প্রথমেই ওর গানবেল্ট খুলে নাও।’

নতুন করে গুঞ্জন উঠল জনতার মধ্যে। মুখে শেরিফোচিত গাম্ভীর্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে করতে ভীড় ঠেলে এগিয়ে এল ডেপুটি শেরিফ জব রাফ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *