আশ্রয় – ২

দুই

জিস্টারকে খাইয়ে-দাইয়ে করালে বেঁধে বেরিয়ে আসতেই ওয়েন্ডির রান্নার সুবাস ঝাপটা মারল এরিখের নাকে। খেতে ডাকার আগেই ছুটে গিয়ে খাবার টেবিলে বসার প্রলোভনটা সামলাল অনেক কষ্টে। প্রতীক্ষার সময়টুকু পার করার জন্যে থলে হাতড়ে গেটিসবার্গের যুদ্ধে শত্রুপক্ষীয় এক অফিসারের কাছ থেকে দখল করা জার্মানির তৈরি ফিল্ডগ্লাসটা বের করে বার্নে গিয়ে ঢুকল। সুবিধেমতন একটা জায়গা বেছে নিয়ে বসল, তারপর ফিল্ডগ্লাসটা চোখে লাগিয়ে তাকাল পাহাড়ের দিকে, যেখানে কিছুক্ষণ আগে আলোর প্রতিফলন চোখে পড়েছিল। জায়গাটা র‍্যাঞ্চহাউস থেকে পুবদিকে।

চোখে ফিল্ডগ্লাস ধরতেই লাফ দিয়ে জায়গাটা অর্ধেক পথ এগিয়ে এল ওটার অবস্থান থেকে। এরিখ প্রতিটি ঝোপঝাড়, ছোট-বড় পাথর চাঁই স্পষ্ট দেখতে পেল। মনোযোগের সাথে পরীক্ষা করতে লাগল ও। এক সময় দেখন লোকটাকে। টিকাউ, ওক টিকাউ। দোআঁশলাটা ফিল্ডগ্লাস চোখে লাগিয়ে বসে আছে এখনও। সম্ভবত র‍্যাঞ্চটাকে নজরবন্দী রাখাই ওর এখনকার দায়িত্ব। দায়িত্ব পালন করছে ও- এরিখ স্বীকার করল নিজের কাছে, তিক্তভাবে।

ওয়েন্ডি ঘর থেকে বেরিয়ে এল। বার্নে এসে ঢুকতেই এরিখ চোখ থেকে ফিল্ডগ্লাস নামাল। ওয়েন্ডির দিকে ফিরল ও। আগুনের আঁচে লাল হয়ে উঠেছে মেয়েটার মুখ। অ্যাপ্রোনে হাত মুছতে মুছতে ওয়েন্ডি জানাল, ‘খাবার তৈরি।’

এরিখ হাসল। ওয়েন্ডিকে কৌতূহলী চোখে ফিল্ডগ্লাসটার দিকে চাইতে দেখে তার হাতে দিল ওটা।

‘ওদিকের খালিমতন জায়গাটায় দেখো।’ হাতের ইশারায় জায়গাটা নির্দেশ করল সে।

ওয়েন্ডি ফিল্ডগ্লাস চোখে লাগিয়ে এরিখের নির্দেশিত দিকে তাকাল। ‘একটা লোক,’ বলল ও। ‘আরে! এ যে দেখছি টিকাউ!’

‘তাই,’ সায় দিল এরিখ। ‘কিন্তু ও এদিকে কি দেখছে?’

‘ও তোমার ওপরই নজর রাখছে, এরিখ। আর, বাবাকে কবর দেবার সময় নিশ্চয়ই দেখেছে আমাদের।’

‘হুঁ,’ সায় দিল এরিখ। ‘চ্যাপম্যান তাহলে এখনও ভাবছে, গরুচুরিতে আমার হাত আছে।

ওয়েন্ডি চোখ থেকে ফিল্ডগ্লাস নামাল। ওটা ফিরিয়ে দিতে গিয়ে ওর চোখে তাকাল সে। ‘আছে?’

এরিখ সময় নিল। যত্নের সাথে কাঁচগুলো মুছল। তারপর খাপে ঢুকিয়ে জবাব দিল শান্তস্বরে, ‘নেই।’

‘কিন্তু তুমি ওকে দেখেই পালাচ্ছিলে এ জায়গা ছেড়ে।’ মন্তব্য করল ওয়েন্ডি

এরিখ হাসল। ‘মোটেই না। আমি আসলে আমার ইচ্ছে মতই চলি।’

‘এ জায়গাটা কিন্তু চ্যাপম্যান চালায়, অন্তত চেষ্টা করে।

‘তো?’ বিস্ময়ের ভঙ্গি করল এরিখ। ‘তার মানে এই নয় যে, লোকটা আমাকেও চালায়। এক হাতে ওয়েন্ডির একটা বাহু ধরল ও। হাঁটতে শুরু করল। ‘ওককে রিপোর্ট করার জন্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দেয়া উচিত আমাদের।’

বার্ন থেকে হাত ধরাধরি করে উঠান পেরিয়ে ঘরে ঢুকল ওরা। এরিখ টেবিলে সাজানো খাবারের দিকে তাকাল। চমৎকার আয়োজন! ভেনিসন, স্মল পটেটো- চোখ বুলাল ও কর্নব্রেড, কফি এবং আপেলপাই। খেতে বসল সে খুশি মনে।

ওয়েন্ডি বসল না; এরিখের খাওয়া দেখতে লাগল কাছে বসে। ‘তোমাকে দেখে, এক হিসেবে, আমার হিংসে হয়,’ বলল ও। ‘একটা পাখির মত মুক্ত তুমি। যখন যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াচ্ছ।’

এরিখ হাসল। ‘এটাও মনে করতে পারো,’ বলল সে, ‘ক্ষুধার্ত, নিরুদ্দিষ্ট এবং যে কোন মুহূর্তেই অ্যাপাচিদের গুলি খেয়ে মরার ভয়ে ভীত-

‘কোথাও থিতু হবার ইচ্ছে হয়নি তোমার?’

‘হয়েছে।’ রুটির দিকে হাত বাড়াল এরিখ। ‘কিন্তু সবখানে, যে ভাবেই হোক, একই ব্যাপার ঘটে। লড়াই। সেটা কারও ইচ্ছেয় হোক বা অনিচ্ছায় হোক। আর লড়াই বাধলে তো মানুষকে যে কোন একটা পক্ষ নিতেই হয়, হয় না?’

‘নেয়াটাই জরুরী?’

মাথা নাড়ল এরিখ। ওয়েন্ডির সঙ্গে মতের মিল হয়নি ওর। ‘যাই হোক, নিতে হয়। এটা রেওয়াজ।’

নিজের কথা বলতে লাগল ও, ফ্রী সয়েলার্সদের কারণে আমার বাবা ক্যানসাস ছেড়ে টেক্সাসে চলে আসে। আমরা তুলা-উৎপাদক ছিলাম না, কোন ক্রীতদাসও ছিল না আমাদের। স্টেটস রাইটসের প্রশ্নেও আমাদের কেউই তেমন কেউকেটা ছিল না। তবু আমার চাচাতো ভাই স্যাম, ভাই ক্যাব আর আমি যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলাম আমাদের নতুন রাজ্য টেক্সাসের প্রতি ভালবাসা ও আনুগত্যের কারণে।

‘এরই খেসারত দিতে হয়েছে বিভিন্নভাবে,’ এরিখ বলে চলল। ‘চাচাতো ভাই স্যাম মরেছে গেইনেস মিলে, ভাই ক্যাব গেটিসবার্গে আর আমার অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছ। চিকামগায় এক লড়াইয়ে গুলি খাওয়া পা নিয়ে প্রায় খোঁড়া হয়ে বেঁচে আছি কোনমতে। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে নিজের মা-বাবাকে পেলাম মৃত। দক্ষিণপন্থী কিছু লোকের হাতে মারা গেছে তারা। আমাদের কিছু খচ্চর ছিল, হৃষ্টপুষ্ট। মনে হয়, ওগুলোই বাবা-মার মৃত্যুর আসল কারণ।’

খাবারের থালা সরিয়ে রাখল ও। ‘ধূমপান করতে পারি?’

ওয়েন্ডি সম্মতি দিল। এরিখ পাইপে তামাক ভরে নিয়ে অগ্নিসংযোগ করল।

‘যুদ্ধ শেষে, আবার শুরু করল সে, ‘কনফেডারেটদের কেউ কেউ স্কালাওয়াগস কিংবা কার্পেটব্যাগারদের সঙ্গে যোগ দিল। কেউ কেউ টেক্সাস থেকে মেক্সিকো চলে গেল ম্যাক্সিমিলিয়ন আর বেনিতো বুয়ারেজের পক্ষে- বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্যে। আমি এর কোনটাই পারিনি। আমি নিজের মত থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। ভাবলাম, পশ্চিমে ঘুরে বেড়াব এবং অন্যের লড়াইয়ে নিজেকে আর কখনও জড়াব না।’

‘তোমার কথাবার্তা শিক্ষিত লোকের মত শোনাচ্ছে, ওয়েন্ডি মন্তব্য করল।

‘হতে পারে,’ মৃদু হাসল এরিখ। আমার মা ইলিনয়ের এক স্কুলে টীচার ছিল, বাবা ছিল কেন্টাকিতে উকিল। বড় ভাই ক্যাব ক্যাম্পে থাকার সময় পড়ার উৎসাহ যোগাত। এখন এসব অদ্ভুত মনে হচ্ছে। যুদ্ধ করতাম, মানুষ মারতাম আর অবসর সময়ে ক্যাম্পফায়ারের পাশে বসে চুপচাপ পড়াশোনা করতাম।

ওয়েন্ডি ওর কাপে কফি ঢেলে দিল। ‘এখন আবার সেই যুদ্ধেই তুমি জড়ালে।

‘নাহ্,’ কফিতে চুমুক দিল এরিখ। ‘কই, আমি তো কেবল একজন নিঃসঙ্গ মহিলাকে সাহায্য করার কথা ভাবছি।’

‘তাহলে তোমাকে যুদ্ধ করার কথাও ভাবতে হবে।’

‘আমি একজন মহিলাকে সাহায্য করার কথাই ভাবছি, মিস ওয়েন্ডি। পার্থক্যটা বুঝতে চেষ্টা করো।’

ওয়েন্ডি কাঁধ ঝাঁকাল। ‘আমি এখানেই থাকব। আমার বাবা মিসেস ব্রাউনের কাছ থেকে এ-জায়গা কিনেছিল। তার স্বামী মি. ব্রাউন মিন্টোর হাত থেকে নিজের জমি বাঁচাতে গিয়ে মারা যায়। এদের দু’ছেলের একজন ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে এবং অপরজন জ্বরে ভুগে মারা যায়। আর আমার বাবা ঝুলেছে ফাঁসিতে, তাও নিজের জমি এবং গরু-বাছুর রক্ষা করতে গিয়ে। এ জমির পেছনে প্রচুর রক্ত ঝরেছে, এরিখ। কিন্তু তাতে আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাবে না।’

‘একজন মহিলার পক্ষে কিন্তু সহজ ব্যাপার নয়,’ এরিখ মন্তব্য করল। ‘তোমার সাহায্যের দরকার। আর তা পাবার জন্যে দরকার টাকা-পয়সার। তোমার টাকা আছে?’

‘চালাবার মত আছে।’

‘তোমার দক্ষ লোকের দরকার। গরুতে নয় শুধু, বন্দুকেও। এবং ওটাই সমস্যা। ক্ষুদ্র র‍্যাঞ্চারদের পক্ষে কাজ করার লোক জোটে না। তাছাড়া জেন্ট আর সেথের ব্যাপারটা তো তুমি নিজেই দেখলে। দক্ষ লোক ছিল ওরা, সত্ত- কিন্তু ফাঁসিতে ঝোলার আতঙ্ক ওদেরও তাড়া করেছে।’

‘তোমার বাবাকে গরুচোর সন্দেহে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে ওরা, তোমাকেও ছেড়ে দেবে না। ওরা তোমার গরু-বাছুর কেড়ে নেবে, হয়তো তোমার র‍্যাঞ্চহাউসটাও পুড়িয়ে দিতে পারে। আর যারা তোমার পক্ষে কাজ করতে চাইবে, ওদের ভাগিয়ে দেয়া হবে, নতুবা মেরে ফেলা হবে। এরপরও তোমার এখানে থাকতে চাওয়ার ইচ্ছে হবে?’

ওয়েন্ডি ওর দু’হাতের কনুই টেবিলে ঠেকিয়ে দু’হাতের তালু একত্র করল। এরিখের দিকে ঝুঁকল ও তালুতে চিবুক রেখে। এরিখ ওর দিকে তাকাল। বাবার চোখের মতই ধূসর মেয়েটার দু’চোখ; ভয়ের লেশমাত্র নেই। ‘কনফেডারেটরা কখন বুঝতে পারল যে, তারা হেরে যাচ্ছে, এরিখ?’ প্রশ্ন করল ওয়েন্ডি।

‘গেটিসবার্গের যুদ্ধের পরেই,’ এরিখ জবাব দিল। ‘ওই যুদ্ধে আমাদের পক্ষের প্রচুর দক্ষ অফিসার ও সৈন্য মারা যায়। আসলে, ওখান থেকেই কনফেডারেটরদের মধ্যে ভাঙন ধরে।

‘তারপরও তুমি লড়েছ, না?’ সোজা হয়ে বসল ওয়েন্ডি। ‘আমার তো মনে হয় চিকামগায় আহত না হলে অ্যাপোম্যাটক্স পর্যন্ত তুমি লড়ে যেতে, যেতে না?’

‘হ্যাঁ,’ এরিখ মৃদুকণ্ঠে সায় দিল। ‘তাই করতাম।’

‘তাহলে হয়তো বুঝতে পারছ, আমি কেন যাব না। এটাই আমার বাড়ি, এরিখ। আমার বংশের আমিই সর্বশেষ ব্যক্তি, তোমার মতই। আমি যেতে পারি না, অন্তত আমার বাবার নামে গরু চুরির মিথ্যে বদনামটা রটতে না দেবার জন্যে হলেও।’

এরিখ উঠে ঘুরে দাঁড়াল, সচকিত। ওর শিকারীর কানে দূর থেকে ভেসে আসা ঘোড়ার খুরের শব্দ ধরা পড়েছে।

‘কেউ আসছে,’ ওয়েন্ডিকে সতর্ক করল ও। ‘গোলমাল হতে পারে।’

মৃদু হেসে উঠে দাঁড়াল ওয়েন্ডিও। তুমি অন্যের ঝামেলা এড়িয়ে যাবার কথা বলেছিলে!’ লিভিং রুমের দিকে পা বাড়াল ও।

এরিখ পেছন থেকে ওর পূর্ণ অবয়ব এবং মধুরঙা চুলের দিকে তাকাল। ‘অন্যের?’ নিজেকে শোনাল ও।

ওয়েন্ডি ফিরে এল। ‘কি যেন বলছিলে?’

এরিখ লাল হলো। ‘কিছু না। কারা ওরা?’ বাইরের দিকে ইঙ্গিত করল ও।

‘জর্জ চ্যাপম্যান, ডগ লেইকার আর জো রীভস। লিভিং রুমের জানালা দিয়ে দেখে নিয়েছি।’

এরিখ স্পেন্সারহাতে পেছন দরজা দিয়ে দ্রুত বেরোল। লম্বা ব্যারেলের কোল্টটার সিলিন্ডার ঘুরিয়ে নিয়ে খাপে ঢোকাল। ঘরের পাশ ঘুরে উঠানে এল। একই সময়ে ওয়েন্ডিও বারান্দায় এসে দাঁড়াল।

‘দরজার ওপাশে আমার শার্পসটা আছে,’ মৃদুস্বরে জানাল ও এরিখকে।

চ্যাপম্যান ফটকের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। এরিখকে দেখে মোটেই অবাক হলো না। ‘তোমার বাবা কোথায়?’ হাঁক দিয়ে ওয়েন্ডিকে জিজ্ঞেস করল র‍্যাঞ্চার।

ওয়েন্ডি বারান্দা থেকে উঠানে রৌদ্রালোকে নেমে এল। আলোয় অপূর্ব দেখাল ওকে। ডগ লেইকার স্যাডলে বাহু রেখে সতৃষ্ণ নয়নে দেখতে লাগল। ‘ঘণ্টা দুয়েক আগে,’ চ্যাপম্যানকে জানাল মেয়েটি, ‘কবর দিয়েছি।’

‘তাই? দুঃখিত- সত্যি দুঃখিত। খুব হঠাৎই মরে গেল যেন!’

ওয়েন্ডি মাথা নাড়ল। ‘এই ভদ্রলোক,’ এরিখের দিকে নির্দেশ করল ও, ‘ডীপ শ্যাডো ভ্যালিতে খুঁজে পেয়েছে বাবাকে। মৃত, গাছের ডাল থেকে ঝুলছিল।’

চাপা স্বরে বলল চ্যাপম্যান, ‘আমি এরকম ভাবিনি, মিস ওয়েন্ডি। দুঃখিত।

এরিখ বিশালদেহী লোকটার দিকে চেয়ে ছিল। ওকে আসলেই হতভম্ব মনে হচ্ছে। লোকটা দক্ষ অভিনেতা- ভাবল ও।

‘কাদের কাজ বলে ভাবছ?’ চ্যাপম্যান প্রশ্ন করল।

‘জানি না।’ ওয়েন্ডি ওর কপালে উপচে-পড়া এক গোছা চুল টেনে দিল পেছনে। তবে জানব আমরা, মি. চ্যাপম্যান।

‘আমরা?’ এরিখের দিকে তাকাল চ্যাপম্যান। ‘ও?’

‘হ্যাঁ। আরও লোক না পাওয়া পর্যন্ত আমাকে সাহায্য করবে বলে কথা দিয়েছে।’

নিজের চোয়াল চুলকাল চ্যাপম্যান। ‘আমার কথা শোনো,’ পরামর্শ দেবার ভঙ্গিতে বলল ও, জনাদুয়েক লোক ধার দিচ্ছি আমি তোমাকে। ওরা সারাক্ষণ সাহায্য করবে তোমাকে।

‘না, ধন্যবাদ। আমরা নিজেরাই নিজেদের কাজ দেখব, মি. চ্যাপম্যান। স্যাডল থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল ডগ। হাসল। ‘খোঁড়া মিয়া দেখছি চমৎকার একটা কাজ জুটিয়ে নিয়েছে।’

এরিখের মুখে রক্ত জমে গেল মুহূর্তেই। ওর হাতের স্পেন্সারের নল সামান্য নাড়াল ও। ‘আজ সকালেই জর্জ বলেছিল তুমি বেশি কথা বলো। মিথ্যে বলেনি!’

ছাইয়ের মত ফ্যাকাসে হয়ে গেল ডগ লেইকারের মুখ। ওর ডান হাত পিস্তলের বাঁটে চলে গেল। হাসল এরিখ। হ্যাঁ, এগোও। আরেকটু এগোও, ডগ। আজ সকালে নিরস্ত্র একজনের বিরুদ্ধে তোমাকে সাহায্য করার জন্যে তিনজন বন্ধু ছিল। থামলে কেন, ব্যাটা বেঁটে বামুন? বের করো ওটা। তারপর তোমার ওই গণ্ডারের চামড়ায় একটা ফুটো করে দেব আমি, যাতে তোমার ওই নোংরা ঘিনঘিনে হাসি মুখে নিয়েই মরতে পারো।’

অস্বস্তি বোধ করল ডগ। জো-এর দিকে তাকাল সাহায্যের আশায়। জো ঘোড়াসহ কয়েক কদম পিছিয়ে গেল। ‘এটা আমার লড়াই নয়, ডগ। তোমার। তুমি ওকে সকাল থেকেই খোঁচাচ্ছ।’

এরিখ ডগের নিষ্প্রভ চোখে চোখ রাখল। চোখ সরিয়ে নিল ডগ।

চ্যাপম্যান থুতু ফেলল, নাক গলাল ও। সকালের চেয়ে তোমাকে এখন একটু বেশি অধৈর্য মনে হচ্ছে, ওয়েন। ব্যাপার কি?’

‘কিছু না,’ রুক্ষস্বরে জবাব দিল এরিখ।

চ্যাপম্যান ডানহাতে নিজের চিবুক ছুঁলো। ওয়েন্ডির দিকে চাইল ও আড়চোখে, তারপর এরিখের দিকে। মনে হয়,’ ওপর-নিচে মাথা দোলাল, ‘ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি আমি।’

ওয়েন্ডি অবজ্ঞাসূচক ভঙ্গিতে হাত নাড়ল। ‘কেন এসেছ তোমরা?’

‘কিছু না, এমনিই। পাইনস ভ্যালিতে তোমাদের স্টকটায় একটু চোখ বুলাব।’

মুখ উঁচু করল ওয়েন্ডি। ‘আমাকে জিজ্ঞেস করে নিতে এসেছ, তাই না? টিকাউকে পাঠাবার সময় তো বাবার অনুমতির দরকার মনে করোনি?’

‘করিনি,’ সরুচোখে চাইল চ্যাপম্যান। ‘তবে এটা নিশ্চয় অস্বীকার করবে না যে, টিকাউ ওখানে ডব্লিউ বারের তিনটে গরু পেয়েছিল?’

‘পেয়েছিল, ওয়েন্ডি স্বীকার করল। ‘আমাদেরও কিছু নিশ্চয় তোমার স্টকে পাওয়া যাবে।’

‘বেশি নয়, সামান্য কয়েকটা,’ চ্যাপম্যান হাসল। আমি নিজেই ওগুলো পাঠিয়ে দেব। ভেবো না।’

তুমি দেখতে পারো। কোন আপত্তি নেই আমার। তবে, মি. ওয়েন থাকবে তোমাদের সাথে।

‘মি. ওয়েন?’ চোখ বড় বড় করে তাকাল ডগ। হাসল। ‘বাব্বাহ্!’

করালের দিকে হাঁটা দিল এরিখ। ‘আমার ঘোড়া নিয়ে আসছি।’ পাত্তা দিল না বেঁটে ডগকে।

যেতে যেতে ও চ্যাপম্যানকে ডগের উদ্দেশে ক্রুদ্ধকণ্ঠে বলতে শুনল, ‘তুমি এভাবে ঢিল ছুঁড়তে থাকলে সে-ও পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করবে, গর্দভ কোথাকার!’

‘আমি চাই-ই ও শুরু করুক, বেঁটের জবাব শোনা গেল।

ঘোড়া নিয়ে এল এরিখ। ওয়েন্ডি ওকে ডেকে একপাশে নিয়ে গেল।

‘ওরা যা দেখতে চায়, দেখতে দিয়ো, এরিখ,’ বলল ও। ‘এমন কিছু বলে বোসো না যাতে গোলমাল শুরু করার সুযোগ পায় ওরা। ওখানে রবার্ট আছে। ভাল লোক। গোলমাল না মেটা পর্যন্ত বাবাকে সাহায্য করবে বলেছিল।’

এরিখওর দিকে তাকাল। ‘আমার মারাত্মক কিছু হলে,’ বলল ও, সোজা ঘোড়ার পিঠে চেপে ক্যানিয়ন পেরিয়ে দক্ষিণে পেবল ক্রীকে চলে যেয়ো, ম্যাম। ওখানে ক্যাপ্টেন হার্স্টের খোঁজ কোরো, সাহায্য করবে ও আমার কথা বললে। অশ্বারোহী সৈন্যদল নিয়ে ওদিকের একটা ক্যাম্পে আছে ও।’

ওর বাহুতে হাত ছোঁয়াল ওয়েন্ডি। ‘ওদের সঙ্গে ঝামেলায় যেয়ো না তুমি। ডগ লেইকার হাসতে হাসতে মানুষ খুন করতে পারে। জাত খুনী ও।’

এরিখ টুপি খুলে হাতে নিল। ‘কিছু খুন আমার নিজেকেও করতে হয়েছে, মিস ক্লে।

ওয়েন্ডির চোখে চোখ রাখল ও। হঠাৎ কেমন একটা অনুভূতি হলো তার। যুদ্ধের পর ছয় বছরের মধ্যে এই প্রথম ওর মনে হলো, সে যেন জীবনের একটা উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছে।

এরিখ ঘোড়ায় চড়ল। ‘দেখা হবে, ম্যাম।’ ডব্লিউ বারের লোকদের দিকে এগোল ও।

চ্যাপম্যান দ্রুতবেগে ঘোড়া ছোটাতে শুরু করল। উপত্যকার নিচু অংশে গিয়ে পৌঁছল তারা।

‘এটা,’ হাত ঘুরিয়ে চারদিক দেখাল ও, ‘সারা ম্যালোনের সবচে’ সেরা জায়গাগুলোর একটা, ওয়েন। প্রচুর পানি, ভাল ঘাস চাষাবাদ আর গরু- বাছুর পালনের জন্যে আদর্শ জায়গা।

‘মিস ওয়েন্ডির অংশটাও দরকার আমার। ওটা ব্রাউনদের কাছ থেকেই কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মিসেস ব্রাউন,’ হাসল ও, ‘আমার সাথে ব্যবসা করতে রাজি হয়নি।’

বেঁটে লোকটা সিগারেট জ্বালাল। ‘ওরা কখনও ডব্লিউ বারকে পছন্দ করেনি।’ ঘোঁৎ করে উঠল ও।

‘তবে আমি তাদের বন্ধুই ভাবতাম,’ এরিখকে বলল চ্যাপম্যান।

‘অবশ্যই।’ হাসল লেইকার।

প্রায় মাইল দুয়েক চলার পর পৌঁছল ওরা, যেখান থেকে দুটো পাহাড় শুরু হয়েছে। দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী পথের মুখ বলা যায় ওই জায়গাকে। কিছুটা নিচু ও অসমতল।

‘পাইন্‌স ভ্যালি, বলল চ্যাপম্যান। ‘ক্লে লেআউটের অংশ। গরু রাখার জন্যে দারুণ জায়গা।’

প্রবেশ পথটা ‘S’ অক্ষরের মত পাক খেয়ে নিচ থেকে ধীরে ধীরে উঁচু হতে হতে ছোট একটা প্রায় গোলাকার উপত্যকায় গিয়ে পড়েছে। উপত্যকা ঘাসে ভরা, তাতে গরু-বাছুর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। চরছে ওগুলো। এক পাশে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার পানি আটকে তৈরি করা হয়েছে একটা জলাশয়। সূর্যের আলো চক চক করছে তাতে। বোঝা যায়, গরুগুলোর জন্যে পর্যাপ্ত ঘাস ও পানির বন্দোবস্ত রয়েছে।

ধোঁয়ার গন্ধ পেল এরিখ। তাকাল চারদিকে। একটা কুঁড়ে ঘর দেখতে পেল একটু দূরে এক জায়গায় জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে-থাকা কিছু পাইন গাছের ফাঁকে। চ্যাপম্যানের ডাকাডাকিতে একটা লোক বেরিয়ে এল ওখান থেকে। জো রীভস এরিখের দিকে চাইল। ‘রবার্ট বাটলার।’ বলল ও।

এরিখ দেখল লোকটাকে। সুঠামদেহী, একমাথা লাল চুল ওর। নীলচোখে অশ্বারোহীদের পর্যবেক্ষণ করল লোকটা, সহজভঙ্গিতে স্বাগত জানাল, ‘হ্যালো, জর্জ, জো, ডগ। বেড়াতে বেরিয়েছ বুঝি?’

এরিখের দিকে চাইল লোকটা। চ্যাপম্যান পরিচয় বলল ওর। এরিখ ওয়েন। মিস ক্লে’র কাজ করছে।’

‘মিস ক্লে? সেই কি আজকাল কাজের লোক রাখছে?’

চ্যাপম্যান মাথা নোয়াল। ‘ডেভিড ক্লে মারা গেছে, বব।’

‘না!’ ছাইয়ের মত ফ্যাকাসে হয়ে গেল বাটলারের মুখ।

‘দুঃখিত, ভাই, বিষণ্ন মুখে বলল চ্যাপম্যান। ‘আমি আমার লোকদের লাগিয়ে দেব হত্যাকারীদের খুঁজে পাওয়ার জন্যে। ডেভিড গরু চোর ছিল, এটা আমি বিশ্বাস করি না।

‘নিশ্চয়ই না,’ একমত হলো বাটলার, কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তুমি কি এখনি খুঁজতে শুরু করেছ হত্যাকারীদের?’

চ্যাপম্যান স্যাডলের ওপর নড়েচড়ে বসল। ‘এক্ষুণি নয়,’ বলল ও। ‘আমরা একটা কাজে এসেছি এদিকে

চোখ ছোট করে তাকাল রবার্ট বাটলার। এখানে এখন ক্রস অ্যারো আর আমার ছাড়া আর কারও গরু নেই।’

‘যাই হোক। আমরা দেখি একটু। চলো, ডগ।’

ডগ আর জো এগোল। রবার্ট বাটলার তার প্রকাণ্ড দুই হাত নিজের কোমরে রাখল। ‘প্রমাণ চাই, না, জর্জ?’

জর্জ হাত ওল্টাল। রুটিন চেক, বব।’

‘চুলোয় কফি চড়ানো আছে,’ আমন্ত্রণ জানাল বাটলার। ‘তোমাদেরও হয়ে যাবে।

চ্যাপম্যান সম্মতি জানাল। ‘মন্দ নয়।’

সবাই কুটিরে গিয়ে ঢুকল। বাটলার কাপে কফি ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করল, ‘ওয়েন্ডির ইচ্ছে কি এখন? থেকে যাবে?

‘আপাতত সে-রকমই মনে হচ্ছে। তবে,’ কফিতে চুমুক দিল চ্যাপম্যান, ‘ওটা আমি কিনে নেব একদিন।

বাটলার শুকনো স্বরে সায় দিল, ‘একদিন তাই নেবে তুমি। আমি বাজি ধরে বলতে পারি।’

চ্যাপম্যান হাসল। ‘তোমার কি অবস্থা?’

‘খারাপ!’ বাটলার বিরক্তি প্রকাশ করল। ‘গরু হারিয়েছি তিরিশটা। তিনজন কাজের লোক পালিয়েছে গত হপ্তায়, দু’জন মাত্র লোক আছে এখন আর। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এরাও পালাবে। থামল ও। ‘কারা?’ প্রশ্ন করল চ্যাপম্যানকে। ‘এই জঘন্য চুরির পেছনে ওরা কারা, জর্জ?’

চ্যাপম্যান শ্রাগ করল। ‘আমার নিজের চারশোর মত গেছে। এখানকার ছোট-বড় ছয়টা বাথানের প্রায় প্রত্যেকটিরই একই প্রশ্ন।’ হাত ঘুরিয়ে চারদিকের পাহাড়শ্রেণী দেখাল ও, ‘প্রতিটি ইঞ্চি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। পাইনি।’

কফিতে চুমুক দিল ও। কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি, ব্লু রিভার অঞ্চল থেকে আসা মেক্সিকান গরুচোরদের কাজ এটা। কিন্তু এই অঞ্চলে এ পর্যন্ত ওদিকের কোন লোক দেখিনি আমরা। আবার কারও মতে, অ্যাপাচিদের কাজ। কিন্তু অ্যাপাচিরা অত গরু দিয়ে করবেটা কি? ওরা গরু পালে না। তাছাড়া মাংস হিসেবেও গরুর চেয়ে ওরা ঘোড়া কিংবা খচ্চরই পছন্দ করে বেশি।’

লম্বা চুমুকে কফির শেষ অংশটুকু নিঃশেষ করল চ্যাপম্যান। তলানিটুকু ফেলে দিয়ে কাপ নামিয়ে রাখল। ‘আমার লোকজন সহ আমি উত্তর থেকে স্কাউট করে এসেছি। ওয়েনকে ছাড়া কাউকে দেখিনি এর মধ্যে। তোমাকে বোধ হয় বলিনি, ও একজন ভবঘুরে। পেশা শিকার।’

বাটলার এরিখের দিকে তাকাল। ‘তুমি এ রকম হুট করে ওয়েন্ডির কাজ করার জন্যে জুটলে কোত্থেকে?’

‘এটার জবাব ওয়েনের চেয়ে ওয়েন্ডিই ভাল দিতে পারবে, বব। ওয়েন সুদর্শন, কঠিন পুরুষ। ওয়েন্ডির মত সুন্দরী, তেজস্বিনী অথচ নিঃসঙ্গ রমণীর তাকে স্বভাবতই প্রয়োজন হতে পারে। না কি?’ চ্যাপম্যান হাসিমুখে তাকাল বাটলারের দিকে।

বাটলারের মুখ লাল হয়ে উঠল। এরিখ লালচুলো র‍্যাঞ্চারের মুখে বিপদ-সঙ্কেত দেখতে পেল। ওর নীল চোখে বরফশীতল কঠিন দৃষ্টি। ‘সত্যি, ওয়েন?’

এরিখ মাথা নাড়ল। ‘না,’ মিথ্যে বলল ও। বরং আমাদের বন্ধু মি. চ্যাপম্যান আমার এ অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র যাবার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা হলে ওক টিকাউকে আমার পেছনে লেলিয়ে দেবার ভয়ও দেখিয়েছেন।’

কাশল চ্যাপম্যান খুক খুক করে। ‘ওটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। আমি আসলে নিঃসন্দেহ হতে চেয়েছিলাম যে, গরু চোরদের সাথে তোমার বন্ধুত্ব নেই।’

‘যাকগে ওসব,’ বাটলার উঠে দাঁড়াল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল ও। ‘আমার লোকেরা গতকাল দশটা গরু এনেছে।’

চ্যাপম্যান হাই তুলল। ‘নিশ্চয়ই আমার স্টক থেকে এনেছে ওগুলো।’

‘জাহান্নামে যাও তুমি,’ বাটলার ঘুরে দাঁড়াল। বেড়ার সাথে রাখা রাইফেলের দিকে হাত বাড়াল ও।

বিশাল দেহ নিয়ে নিমেষে নড়ে উঠল চ্যাপম্যান। পর মুহূর্তেই একটা সিক্সশূটার হাতে চলে এল ওর। বাটলার রাইফেল হাতে ওর দিকে ফিরবার আগেই ও তার পিঠে ঠেসে ধরল সিক্সশূটারটা। ‘এখন, বাটলার?’ বলল ও, ‘আমাদের দেখার অধিকার তুমিই দিলে। ওটা ফেলে দাও।’

বাটলার অস্ত্রটা আবার বেড়ায় রেখে দিল। ধীরে ধীরে ঘুরে চ্যাপম্যানের চোখে চোখ রাখল। ‘সুযোগ আমারও আসবে। ওর চোখে ঘৃণা। ‘একদিন।’ আঙুলের আগায় অস্ত্রটা ঘুরিয়ে ওটাকে খাপে ঢোকাল চ্যাপম্যান। ‘চলো,’ নিজের লোকদের বলল ও, ওগুলোর মার্কা চেক করে আসি।’

এরিখও ওদের অনুসরণ করল। ডগ দ্রুত গরুর কাছে পৌঁছে গেল। লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল ও। ‘দশটাই, বস্।

বাটলারসহ ওরা সবাই পৌঁছে গেল। চ্যাপম্যান গরুগুলোর ব্র্যান্ড চেক করল। ‘ওগুলো ডব্লিউ বার ব্র্যান্ডের নয়।’ বাটলার বলল।

‘হ্যাঁ,’ স্বীকার করল চ্যাপম্যান। তবে এগুলো ক্রস অ্যারো কিংবা তোমার ব্র্যান্ড লেজি আর-এরও নয়। এগুলো লেজি এন-

বাটলার থুতু ফেলল। ‘ওগুলো আমি নিথ লিস্টারের কাছ থেকে কিনেছি, দিন তিনেক আগে,’ দ্রুত জবাব দিল ও।

‘জঘন্য মিথ্যুক তো!’

বাটলার রুক্ষ স্বরে প্রশ্ন করল, ‘তুমি কী বোঝাতে চাও, ডগ?’

ডগ লেইকার সামনে এগিয়ে এল এবার। ‘বুঝতে পারছ না, কেমন?’ ওর চোখে কৌতুক। একঘেয়ে স্বরে বলে গেল ও, ‘ঠিক আছে, বুঝিয়ে দিচ্ছি। শোনো, বুড়ো বয়সের জন্যে আমি এখন থেকেই চিন্তা-ভাবনা করি। তুমি নি য়ই জানো না যে, বস্ দয়া করে তার বাথানেই নিজের জন্যে কিছু গরু রাখতে অনুমতি দিয়েছে আমাকে। আমার ব্র্যান্ডের নাম লেজি এন। কেমন, পরিষ্কার তো?’

‘না। তোমার নাম ডগ লেইকার। তোমার ব্র্যান্ডের-’

বাটলারকে কথা শেষ করতে দিল না ডগ। ‘লেজি এন কেন, এই তো? .. তাহলে তোমাকে আমার পুরো নাম জানতে হবে। আমার পুরো নাম ডগ নরম্যান লেইকার। নরম্যানের জন্যেই লেজি এন।’

বাটলার অস্থির হয়ে উঠেছে। পেছন ফিরে কুটিরের দিকে চাইল ও। চ্যাপম্যান শান্ত স্বরে পরামর্শ দিল ওকে, ‘নোড়ো না, বব। তোমার ভাগ্য ভাল যে, মাত্র দশটা গরুর ওপর দিয়ে ক্ষতিটা পেরিয়ে যাচ্ছে।

‘নিথ লিস্টার একজন গরুচোর ছাড়া আর কিছুই নয়। তুমিও জানো সেটা। আমার পাল থেকেই গরুগুলো চুরি করেছিল ও। তুমি মনে হয় শোনোনি। পেছন থেকে গুলি খেয়ে মারা গেছে ও গত হপ্তায়। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে গুলি মাথা ভেদ করে। শার্পসের গুলি। তোমার ওকে চিনতেই কষ্ট হত দেখলে।’

ডগ মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল। ‘ভয়ানক চেহারা হয়েছিল!’

চ্যাপম্যান এরিখকে জিজ্ঞেস করল ও যাবে কি না। এরিখ মাথা নাড়ল। যাবে না ও।

‘ব্যাপারটা বোধ হয় ওর পছন্দ হচ্ছে না,’ ডগ ভেংচি কাটল। ওর কাছে তো দু’দুটো অস্ত্ৰ আছে। আঙুল চুলকাতেই পারে!’

‘নিয়ে যেতে পারো ওগুলো,’ এরিখ নির্লিপ্তস্বরে জবাব দিল। আমি মিস ক্লে’র কাজ করছি। কথাটা মনে রেখো, ডগ। ওগুলোয় মিস ক্লে’র ব্র্যান্ডের গরু নেই।’

‘কি করে ভুলব?’ অবাক হবার ভান করল ডগ। ‘ধ্যাৎ, ভাল করে খুঁজলে হয়তো দেখা যাবে এখানকার সব কটা গরুর ব্র্যান্ডই অন্য ব্র্যান্ড থেকে পাল্টে নেয়া। চলো, বস্

প্রচণ্ড রাগে পাক খেলো এরিখের ভেতরটা। অতিকষ্টে নিজেকে সামলে নিল ও। ওর একটি বেহিসেবী পদক্ষেপকেই এই লোক তিনজন নিমেষে নিজেদের অনুকূলে লুফে নেবে। গুলি করতে সামান্যতম দ্বিধাও করবে না ওরা। সে হয়তো একজনকে ঘায়েল করতে পারবে, তার বেশি নয়।

ডগ আর জো গরুগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে চলল উপত্যকার প্রবেশ-পথের দিকে। একবারও পেছনে না তাকিয়ে চ্যাপম্যান অনুসরণ করল ওদের। বব বাটলারের দিকে ফিরল এরিখ। ‘কেমন?’

বাটলারের মুখ চাপা রাগে শাদাটে রঙ ধারণ করেছে। ‘জাহান্নামে যাক ওরা। ইচ্ছে করছে পেছন থেকে সব কটাকে শুইয়ে দিই।’

‘নিথ লিস্টারের ব্যাপারটা কি?’

কড়াচোখে তাকাল বাটলার ওর দিকে। অবজ্ঞাভরে জবাব দিল, ‘লিস্টার একজন সন্দেহভাজন লোক ছিল, এটা সত্যি। হতে পারে সে চোরাই গরু বিক্রি করেছিল আমার কাছে। কিন্তু আমি ভাবছি চ্যাপম্যানের চালাকির কথা। ডগেরও লেজি এন নামের বাথান আছে একটা! আজকেই প্রথম শুনলাম। তুমি কিছু বুঝতে পারো?’

‘সোজা কাজ। এরিখ মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল। ‘একখণ্ড লোহার দরকার শুধু। এন-এর পাশে একটা দাগ বসালেই ডব্লিউ।’

‘ঠিক তাই,’ মাথা দোলাল বাটলার। ‘ওয়েন্ডিকে বলবে, কাউবয় যোগাড় না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে থাকব। চিন্তার কিছু নেই। ডেভিডের ব্যাপারটা কি হয়েছিল?’

এরিখ লালচুলো র‍্যাঞ্চারকে সংক্ষেপে ঘটনাটা জানাল। নিজের খসখসে চোয়ালে হাত ঘষল বাটলার। ‘ও আমার বন্ধু ছিল। এ ছাড়া ওয়েন্ডির ব্যাপারে ক্লে’র সাথে আমার কথাবার্তাও হয়েছিল। তুমি, আমার বন্ধুত্ব চাইলে, ওর ব্যাপারে কোনও চিন্তা ভুলেও করতে যেয়ো না।’ সিগারেট রোল করল বাটলার। ‘ওয়েন্ডির কাছে ভিড়লে কি ভাবে?’

‘ওর দরকার ছিল আমাকে।’

‘আমি ওর সব প্রয়োজন মেটাব।’

‘আমি যাচ্ছি,’ এরিখ জানাল। ‘কোনও খবর জানাতে হবে ওয়েন্ডিকে?’ সিগারেটে আগুন জ্বালাল বাটলার। আগুনের শিখার ওপর দিয়ে এরিখের দিকে চেয়ে বলল, ‘মনে রেখো ও আমার, ওয়েন। ওর সঙ্গে নিজেকে জড়াবার চেষ্টা করলে তোমার সর্বনাশ করব আমি। বুঝেছ?’

ঘোড়ায় চড়ল এরিখ। ‘দেখা হবে।’ ঘোড়ার পাঁজরে গুঁতো লাগাল ও বুটের আগায়। জিস্টার চলতে শুরু করল।

‘কি বলেছি মগজে গেঁথে নিয়ো, ওয়েন, বাটলার পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলল। ‘ওয়েন্ডি আমার!’

এরিখ ফিরেও তাকাল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *