আশ্রয় – ১০

দশ

ব্লু বার্ডস ক্যানিয়নে এসে পাহাড়ের একটা ফাটল মত জায়গায় এরিখ তার মালপত্র লুকিয়ে রাখল। ডিটেকটিভ জো রীভসের কথা ভাবছে ও। গৃহযুদ্ধের সময় লোকটা ওদের বিপক্ষ সেনাদলে ছিল, আর আজকের লড়াইয়ে তারা স্বপক্ষ। এরিখ ব্যাপারটা ভেবে মনে মনে কৌতুকবোধ করল। তবে, যাই হোক, জো’র সাহচর্য ওর অবিরাম একাকিত্ববোধকে কিছু সময়ের জন্যে হলেও দূর করতে পেরেছিল। লোকটা ইয়াঙ্কি নয়, না হোক, লোকটা ভাল।

শুধু ভাল লোকই নয়, এরিখ স্বীকার করল মনে মনে, জো একজন ভাল যোদ্ধাও। অস্ত্রহাতে নয় শুধু, আদর্শগতভাবেও। নিজের পরিবারের জন্যে ন্যূনতম সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের লক্ষ্যে সৎ পথে উপার্জনের চেষ্টা করছে ও। এই দেশটায় ন্যায় এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে অন্যান্য সৎ ও নিরীহ মানুষের বাসোপযোগী করে তোলার প্রয়াস পাচ্ছে।

এদিক-ওদিক ঘুরে-ফিরে কিছুটা সময় কাটল ওর। বিকেলের দিকে ক্রস অ্যারো র‍্যাঞ্চের প্রায় কাছাকাছি এক জায়গায় এসে ঘোড়া থামাল। ওয়েন্ডিকে দেখার অদম্য ইচ্ছেয় তাড়িত হচ্ছে ও। সে রাতের ব্যর্থ চেষ্টার পর আজ আবার ইচ্ছেটা চাগিয়ে উঠেছে ওর ভেতর।

ভ্যালি রোডে শেষ বিকেলের সূর্যালোকে হলদেটে ধুলো উড়তে দেখে ফিল্ডগ্লাসটা চোখে লাগাল এরিখ। একটা বাকবোর্ড আসছে। চালকের আসনে গাস ল্যামেলকে দেখল ও—এবং তার পাশেই, রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল ওর দেহ-মন, ওয়েন্ডি স্বয়ং!

শক্তিশালী ফিল্ডগ্লাস ওয়েন্ডিকে যেন এরিখের দশ গজের মধ্যে নিয়ে এল। ওয়েন্ডির মুখে একধরনের বিষণ্ণতা। বাকবোর্ড বাঁক নিয়ে আড়ালে চলে যাবার আগ পর্যন্ত এরিখ ওয়েন্ডির মুখ হতে চোখ ফেরাতে পারল না।

‘নিশ্চয়ই রকস্প্রিং যাচ্ছে ওরা,’ জিস্টারকে বলল ও। জিস্টার সায় দিল ঘোঁৎ করে নাক ঝেড়ে। চলো, তাহলে আমরাও যাই।’

স্পার দাবাল ও জিস্টারের পেটে। সন্ধের অন্ধকারে শহরের পাশ দিয়ে বয়ে-যাওয়া ক্রীকের ধারের জঙ্গলটাতে উপস্থিত হলো। একটা গাছের সাথে ঘোড়া বেঁধে ঘুরপথে ব্রিজ পেরিয়ে পশ্চিম দিক দিয়ে শহরে ঢুকল।

আলোকজ্জ্বল রকস্প্রিঙের একমাত্র সেলুন ওয়েস্টার্ন মূন থেকে পিয়ানোর টুং-টাং শব্দ শোনা যাচ্ছে। একটা ভাঙাচোরা পরিত্যক্ত দোকান ঘরের প্রায় ধসে-যাওয়া দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করল ও। শহরের হিচ-রেইলে নানান জাতের ঘোড়া বাঁধা। বাকবোর্ড এবং ওয়াগনগুলো সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে নোংরা অপরিচ্ছন্ন রাস্তার এক ধার ঘেঁষে। অন্য সময়ের তুলনায় আজ শহরে লোক সমাগম অনেক বেশি। আজ শনিবারের রাত। কাল ছুটি। বিভিন্ন র‍্যাঞ্চের কর্মচারীরা সাপ্তাহিক বেতন পেয়ে খরচ করার জন্যে শহরে এসে জুটেছে।

ক্রীকের ধার ঘেঁষে সার বাঁধা দোকানগুলোর পেছন দিয়ে এগোল ও। রাস্তায় প্রচুর মানুষ, তাদের হৈ-হল্লা আর হাসি-ঠাট্টায় গমগম করছে ছোট্ট শহরটা। এরিখ জানে, ওর জন্যে এ-সময়টা মোটেও অনুকূল নয়। ডব্লিউ বারের লোকেরা এসেছে শহরে; শেরিফ চ্যাপম্যান, ডগ লেইকার আর শুক টিকাউর দল ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে ওখানে। যে-কোন মুহূর্তে ওদের কারও চোখে পড়ে যাবার ভয়—তবু কিছু সময়ের জন্যে হলেও ওয়েন্ডির মুখোমুখি হবার একটা সুযোগের আশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ও।

ক্র্যামারের দোকানের পেছনে পৌঁছে গেল এরিখ। থামল। হাত দিয়ে কোমরে-গোঁজা অস্ত্রটার অস্তিত্ব অনুভব করে নিল অন্ধকারে। ছয় ইঞ্চি ব্যারেলের স্টার ওটা, প্রায় তিন পাউন্ড ওজন। দোকানের পেছনের দরজা খুলে অন্ধকার কক্ষে ঢুকে পড়ল ও।

ক্র্যামার সামনে খদ্দের নিয়ে ব্যস্ত, এরিখ উঁকি মেরে দেখল। প্রচণ্ড ভীড় দোকানে। দু’জন নতুন কর্মচারী রেখেছে বুড়ো। আরেকটু তাকাতেই তাকে দেখতে পেল ও। বুড়োর সামনে ওয়েন্ডি, কথা বলছে দু’জনে।

কথা বলতে বলতেই উঠে দাঁড়াল দোকানদার। দাঁড়াও, পেছনে কিছু নতুন প্যাটার্ন রেখেছি। তোমাকে এনে দেখাই।’

ওয়েন্ডি সায় দিল হাসিমুখে। ক্র্যামার পেছনের রুমে এসে ঢুকল।

অন্ধকারে ওর মুখে হাতচাপা দিল এরিখ। ‘ওয়েন, আমি, নরম গলায় বলল ও, হাত সরিয়ে নিল মুখ থেকে।

‘ধ্যাত্তেরি, তুমি আমার পিলে চমকে দিয়েছিলে!’

‘তুমি ভয় পেয়ে ভিরমি খাবে, বুঝতে পারিনি।’

অন্ধকারে হাসির শব্দ শোনা গেল। ‘গোল্লায় যাও তুমি! জো’র খবর কী?’

সকালে দেখা হয়েছিল ওর সাথে। ও আর আমি মিলে লেইকারের বিশাল সৈন্যবাহিনীর মোকাবিলা করেছি।’ এরিখও হাসল। ‘ডগ তত ভাল সেনাপতি নয়, জেমস।

অন্ধকারেই কিছু প্যাটার্ন বেছে নিল দোকানদার ক্যাবিনেট থেকে। ‘সারা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে খরবটা। জেরি ফক্সকে খুন করেছ তুমি।’

‘ডগ লেইকারের সাথের লোকটার কথাই বলছ তো? ও মারা গেছে জো রীভসের গুলিতে।‘

‘ওর কথা বলেনি লেইকার।

‘বিয়ারির নামও তো বলেনি ও। তাতে কী? এমনিতেই তো খুনী বলে অভিযুক্ত আমি। নতুন আর কি হবে?’

দরজার হাতলে হাত দিল জেমস। ‘দাঁড়াও। প্যাটার্নগুলো ওয়েন্ডিকে দিয়ে আসি।’

তার ভাল কথা। ওকে বলো, আমি ওর সাথে কথা বলব।’ উড়ী গাজা খেয়েছ?

‘না।’

ঠিক আছে। ঘোৎ করে বিরক্তি প্রকাশ করল জেমস। কিন্তু সংক্ষেপে বল।’ স্টোরে ঢুকে গেল ও।

এরিখ উকি দিল আবার। ক্র্যামার ওয়েন্ডিকে কিছু বলল মৃদুস্বরে। ওয়েন্ডি চমকে উঠে একবার পেছনের রুমের দিকে তাকিয়ে তারপর খদ্দেরদের দিকে চাইল। জেমস এবার উঁচুস্বরে বলল, ‘পেছনের রুমে আরও নানারকমের প্যাটার্ন আছে, ম্যাম। তুমি বরং নিজে গিয়ে বেছে নাও ওখান থেকে।

এক মুহূর্তের জন্যে ইতস্ততভাব দেখা গেল ওয়েন্ডির মধ্যে, তারপরই হাঁটা দিল ও। রুমে ঢুকে পেছনের দরজা আটকে দিল। এরিখ একটা মোমবাতি খুঁজে নিয়ে জ্বালাল। ওয়েন্ডির মুখোমুখি হলো ও।

‘ভাল?’ ঠাণ্ডাস্বরে কুশল জিজ্ঞেস করল ওয়েন্ডি।

এরিখ ওর শীতল অভ্যর্থনায় সাড়া দিল না। তুমি কি এখনও বিশ্বাস করো যে, টোকারকে আমিই খুন করেছি? সরাসরি জানতে চাইল ও ওয়েন্ডির কাছে।

‘কাকে বিশ্বাস করা উচিত,’ ওয়েন্ডি শান্তস্বরে জবাব দিল, ‘বুঝতে পারছি না আমি।’

এরিখ ওর কাছে এগিয়ে এল। ওর গায়ের মিষ্টি সৌরভ পেল সে। ‘আমি শপথ করে বলছি, ওয়েন্ডি, আমি ওকে গুলি করিনি।’

‘গাসের কথা বিশ্বাস করি আমি, ওয়েন্ডি শুকনো কণ্ঠে বলল। ও বলেছে তুমিই গুলি করেছ।’

মাথা নাড়ল এরিখ। ‘ওকে সত্য গোপন করতে বাধ্য করা হয়েছে। যে কোন কারণে হোক, বিয়ারির কথায় সায় দিতে হচ্ছে ওকে।

ওয়েন্ডি একটা টুলে বসল। এরিখের নোংরা কাপড়চোপড় আর খোঁচা খোঁচা দাড়িতে ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, ‘কোথায় আছ তুমি এখন?’

‘লুকিয়ে আছি।’

‘ওরা বলছে, তুমি নাকি আজ আরেকজনকে খুন করেছ।’

‘না।’

‘কেন মিথ্যে বলছ অনর্থক? পসি যখন তোমাকে ধরতে যায়, তখন তুমিই ছিলে শুধু ওখানে। তুমি গুলি করতে করতে পালিয়েছ। তোমার গুলিতে মারা গেছে জেরি ফক্স।

তুমিও আমার কথা বিশ্বাস করবে না, ওয়েন্ডি? ওই দুটো খুনের সঙ্গে আমি কোনভাবেই জড়িত নই।’

ওয়েন্ডি নিচু অথচ ক্রুদ্ধস্বরে বলল, ‘তুমি তো একাই ছিলে পসির বিরুদ্ধে। সুতরাং আর কে করবে গুলি?’

এরিখ চুপ করে রইল। ‘আমার কথার জবাব দিচ্ছ না কেন?’ ওয়েল্ডি প্রশ্ন করল। ‘কে ছিল আর ওখানে?’

‘ওটা জানতে চেয়ো না,’ জবাব দিল এরিখ। তবে এটা বলতে পারি যে, আমি একা ছিলাম না। কিন্তু এটাও তোমাকে গোপন রাখতে হবে।’

‘সাক্ষীরা বলেছে, তুমিই টোকারকে গুলি করেছিলে।’ ওয়েন্ডি উঠে দাঁড়াল। ‘তুমি তা অস্বীকার করেছ। আজকের ব্যাপারটাও তোমার দ্বারা হয়নি বলছ। তাহলে, আমাকে বলতে পারো, এগুলো কে করেছে? বলতে পারো, আমাকে কার কথা বিশ্বাস করতে হবে?’

শ্রাগ করল এরিখ, জবাব দিল না। মেয়েটি পুরোপুরি বিভ্রান্ত এখন, তর্ক করে ফল হবে না।

‘আমি তোমাকে ভাড়া করেছিলাম আমার কাজে সাহায্য করবার জন্যে। তোমাকে অন্যদের থেকে কিছুটা ভিন্ন ভেবেছিলাম, ওদের মত খুনে বদমাশ ভাবিনি। কিন্তু তুমি পরপর দুটো খুন করেছ। অন্যদের কাছে তুমি ক্রস অ্যারোর লোক বলে পরিচিত। আর, এটা আমার অবস্থানকে কোথায় নিয়ে গেছে, ভাবতে পারো তুমি?’

‘শুধু তোমার অবস্থান নয়, ওয়েন্ডি,’ এরিখ ধীর কণ্ঠে জবাব দিল, ‘আমারটাও।’

‘ধরা দিচ্ছ না কেন?’

‘এখানে? হল চ্যাপম্যানের হাতে? তাহলে আত্মপক্ষ সমর্থনের আগেই ওরা আমাকে গুলি করবে, নয়তো ঝুলিয়ে দেবে গাছ থেকে। সেটা আমার একটুও পছন্দ হবে না।’

‘তাহলে পালিয়েই বেড়াও।’

এরিখ কাছে টানল ওয়েন্ডিকে। গাঢ়স্বরে বলতে লাগল, ‘তোমার বাবাকে কবর দেবার আগে আমি আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা বলাতে তুমি কি জবাব দিয়েছিলে, মনে আছে, ওয়েল্ডি? তুমি বলেছিলে, ‘আইন? কিসের আইন? আইন-টাইনের বালাই নেই এখানে। বলোনি?’

চুপ করে রইল ওয়েন্ডি। কয়েকটি নীরব মুহূর্ত কেটে গেল এরপর। ওয়েন্ডি মুখ তুলল, এরিখের দিকে চাইল ও। ‘তোমাকে আমি বিশ্বাস করতেই চাই, ওয়েন।’

‘সত্যি চাও? তাহলে শোনো। বিয়ারি লোক ভাল না। ক্রস অ্যারোকে গোলমালে জড়িয়ে ফেলে নিজের ফায়দা লোটার তালে আছে ও।’

‘সে আমার জন্যে প্রচুর খাটছে, এরিখ।’

‘অবশ্যই।’ এরিখ তিক্তকণ্ঠে সায় দিল। ‘ওর নিজের জন্যেও বটে। এজন্যেই ও গাসকে চাপ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে বলিয়েছে, যাতে আমাকে ক্রস অ্যারো থেকে ভাগানো যায় এবং যাতে ও নির্ঝঞ্ঝাটে নিজের কাজ সারতে পারে।’

ওয়েন্ডির দিকে চাইল এরিখ। ‘যাদের ও ভাড়া করেছে তোমার কাজ করার জন্যে, তারা কেমন লোক তুমি জানো?’

‘না,’ ওয়েন্ডি মাথা নাড়ল। তবে প্রচুর কাজ করছে ওরা আমার জন্যে।’

‘আমি জানি। শোনো, গুজম্যান ব্লু রিভার্স গ্যাঙের সঙ্গে জড়িত ছিল এর আগে। সারা অ্যারিযোনার সবচেয়ে কুখ্যাত দস্যুদল ওটা। ম্যাস্টন আর টিংকারও একই ব্র্যান্ডের। তোমাকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি, ওয়েন্ডি, একটা বাজে যুদ্ধের মুখোমুখি হতে যাচ্ছ তুমি। ওটা তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে শেষ পর্যন্ত। বিয়ারির উদ্দেশ্য পরিষ্কার। একই সঙ্গে ক্রস অ্যারো আর তার মালিককে লাভ করা। ওর পরিকল্পনায় ও যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে ইতোমধ্যে। থামল এরিখ

মোমবাতির মৃদু আলোকে ওয়েন্ডির মুখের রঙ বদল বুঝতে পারেনি এরিখ। হঠাৎ ওর ডান হাতটাকে ঝলসে উঠতে দেখল সে, পর মুহূর্তেই সশব্দ চড়টা অনুভব করল নিজের গালে। এক মুহূর্ত নির্বাক রইল এরিখ, জ্বলছে গালটা। আচমকা দু’হাতে ওয়েন্ডির দু’কাঁধ ধরে কাছে টানল ও রূঢ়ভাবে। ওর প্রশস্ত বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে টাল সামলাল মেয়েটা।

‘আমি দুঃখিত,’ মৃদু অথচ কঠিন স্বরে বলল এরিখ। ‘কিন্তু এটাই সত্যি।’

দরজা খুলে গলা বাড়াল জেমস। ‘বেরিয়ে যাও, এরিখ,’ চাপা কণ্ঠে বলল ও। ‘রবার্ট বাটলার দোকানে ঢুকেছে।

এরিখ পিছিয়ে গেল। বাটলারকে আমার সম্পর্কে কিছু বলতে যেয়ো না, ওয়েন্ডি।’

‘কেন বলব না?’ বিদ্রূপ করল ওয়েন্ডি। ‘ও আমার বন্ধু। তা ছাড়া, তুমি তো নাকি নির্দোষ!’

‘আমার বন্ধু নয় ও।’ দেয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত ক্যাবিনেটের আড়ালে চলে গেল এরিখ।

বাটলার এসে ঢুকল। দরজা আটকে দিয়ে বলল, ‘একজন কর্মচারীর মুখে শুনলাম তুমি ভেতরে।’

‘মিথ্যে যে শোনোনি তা তো দেখতেই পাচ্ছ।

‘তোমার সঙ্গে কথা বলার কোন সুযোগই দিচ্ছ না তুমি,’ বাটলার অনুযোগ করল, ‘কেন?’

ওয়েন্ডি ঘুরল ওর দিকে। ‘তোমাকে কখনও নিষেধ করেছি নাকি?’

‘ল্যামেল কিন্তু ও রকম বলেনি।’

‘ওকে কিছুই বলিনি আমি এ-ব্যাপারে।’

জ্বলে উঠল বাটলার। ‘তাহলে ওটা নিশ্চয়ই সে দোপিস্তলবাজের কাজ। সে-ই ল্যামেলকে বলতে বলেছে। খুব বাড়াবাড়ি করছে লোকটা।’

ওয়েন্ডির কাছে এগোল ও। আমি তার চেয়ে অনেক বেশি কাজে লাগতে পারতাম তোমার, পারতাম না?’

ওয়েন্ডি হাসল। ‘তোমার কাজে লাগার নমুনা আগেই দেখেছি, বাটলার। নতুন আর কী দেখাবে? তোমার তত্ত্বাবধানেই আমার গরুগুলো হারিয়েছে, তোমার নিজেরও দু’জন লোক মারা গেছে। অথচ চ্যানিকে ফোরম্যান বানানোর পর থেকে সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। একটা গরুও খোয়া যায়নি।’

‘হাহ্!’ হাসল বাটলার। সে জন্যে ওকে বাহবা দিচ্ছ, না? কিন্তু আমার এখনও ধারণা যে, গরু চুরির জন্যে দায়ী ছিল ওয়েন। ও চলে যাবার পর থেকে শুধু তোমারই নয়, আর কারও গরু চুরি হয়নি।’

‘আমার ধারণা কিন্তু ভিন্ন। এরিখের অন্য দোষ থাকতে পারে, কিন্তু গরুচোর সে নয়।’

‘বাদ দাও,’ বাটলার প্রসঙ্গ পাল্টাল। কিন্তু আমার কথা হলো, তুমি বিয়ারির ওপর নির্ভর করছ কেন? তাকে কাজে নেবারই বা কি দরকার ছিল? আমিই তোমাকে সাহায্য করতাম, তোমার বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতাম। তোমার বাবা কি চায়নি যে, আমার সঙ্গে তোমার বিয়ে হোক?’

দরজা খুলে মাথা গলাল দোকানদার। ‘গাস এসেছে, ওয়েন্ডি।’

বাটলার ঘুরে দাঁড়াল দোকানদারের দিকে। ও আর আমি একত্রে ব্যবসার ব্যাপারে আলাপ করছিলাম, জেমস। ওয়েন কিংবা বিয়ারির মত উটকো লোকের ওপর নির্ভর করার কি দরকার ওর? তুমি কি বলো?’

শ্রাগ করল দোকানদার। ‘ওটা ওর ব্যাপার। তবে ওয়েনকে আমি খারাপ লোক মনে করি না।’

‘তাহলে ভাল লোক বলেই মনে করো! হাহ্, কাকে, ক্র্যামার? একজন খুনীকে?’

‘ওকে আমি একবারই দেখেছি, ক্র্যামার শুকনো স্বরে জবাব দিল ‘আমার মনে হয়নি, ও খুন করতে পারে।’

‘ওর ওপর দেখছি খুব বিশ্বাস তোমার?’

‘কেন, জানতে চাও? ওকে আমি খুন করতে দেখিনি।’

‘এতেই প্রমাণ হয়ে গেল যে, ও খুন করতে পারে না?’

‘শোনো, বাটলার, ক্র্যামার ব্যাখ্যা করার ভঙ্গিতে বলল। ‘টোকার গুলিবিদ্ধ হবার সময় কিংবা জেরি ফক্স খুন হবার সময় আমি ওখানে উপস্থিত ছিলাম না। যতদূর জানি, তুমি নিজেও ছিলে না। ডগ আর টিকাউর মুখেই শুনেছি আমি। ওদের কথা সত্যি বলে গ্রহণ করা বা না করার ব্যাপারে তোমার সঙ্গে আমার মতের মিল হতেই হবে, এমন কোন কথা নেই। আছে?’

‘টোকারের ব্যাপারে গাসের সাক্ষ্যও তো ওয়েনের বিরুদ্ধে গেছে।’

‘বিয়ারিও ওর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। গাস বিয়ারির লোক। ওরা একসঙ্গেই এসেছে।’

ওয়েন্ডি দরজার দিকে এগোল। ‘আমি যাচ্ছি,’ মৃদুস্বরে জানাল ও। ‘সম্ভবত জেমস ঠিকই বলেছে, তবে আমি নিশ্চিত নই। শুধু একটা ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আমার লোকেরা ঠিকভাবে কাজ-কর্ম করছে। ওদের ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নেই।’ স্টোরে ঢুকল ও।

বাটলার সিগার ধরিয়ে ক্র্যামারের দিকে তাকাল। ‘তুমি ওয়েনের পক্ষ নিয়েছ কেন?’

‘ও খুন করেছে কি না আমি নিজের চোখে দেখিনি,’ জবাব দিল জেমস ‘এটা বলার জন্যে পক্ষ নেবার দরকার হয় না।’

সিগারে লম্বা টান দিল বাটলার। ‘তুমি,’ হাতের টোকায় সিগারের ছাই ঝাড়ল, ‘আমাকে কখনও পছন্দ করোনি।

পায়ের ওপর ভর পাল্টাল জেমস ক্র্যামার। ‘প্রচুর লোক আছে আমার পছন্দের তালিকায়।

‘মাঝে-মধ্যে, দাঁতে দাঁত ঘষল বাটলার, তুমি খুব রহস্যময় আচরণ করো। এখনও করছ। কেন, ক্র্যামার? কি লুকোচ্ছ তুমি?

দরজার দিকে আঙুল দেখাল বুড়ো দোকানদার। ‘বেরোও, বেরিয়ে যাও! অনেকদিন ধরে জ্বালাচ্ছ তুমি মেয়েটাকে। এখন আমার সাথেও শুরু করেছ। তোমার ওসব ফালতু বক-বক শোনার চেয়ে করার মত প্রচুর কাজ রয়েছে আমার। ভাগো বলছি!’

এক পা এগিয়ে গেল বাটলার, ক্র্যামারের জামার কলার টেনে ধরল এক হাতে। ‘গোল্লায় যাও তুমি, বুড়ো! বাজি ধরে বলতে পারি, আমার বিরুদ্ধে মেয়েটিকে খেপিয়ে তুলেছ তুমিই।’

নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করল ক্র্যামার। ‘ছাড়ো। আমার ওপর বীরত্ব ফলিয়ে কোন লাভ হবে না তোমার।’

প্রচণ্ড চড় কষাল বাটলার বুড়ো মানুষটার গালে, পরক্ষণেই কুকুরের মত ‘খ্যাক’ করে উঠল ডান চোখের ওপরে ওর শীর্ণ হাড্ডিসার হাতে পাকানো মুঠোর মোক্ষম ঘুসি খেয়ে। কলার ছেড়ে দিল লাল চুলো, রাগে ও যন্ত্রণায় উন্মত্তের মত ক্র্যামারকে ধরে ঠেলতে ঠেলতে ক্যাবিনেটের ওপর নিয়ে ফেলল, ঠেসে ধরল- ওটার সাথে, যেটার আড়ালে এরিখ লুকিয়ে ছিল। ‘জাহান্নামে যাও তুমি!

বেরিয়ে এল এরিখ, এগোল বাটলারের দিকে। ‘যথেষ্ট দেখিয়েছ, বাটলার। থামো এবার।’

ভূতের গলা শুনেই যেন আঁতকে উঠল বাটলার। ঠোঁট হতে সিগার পড়ে গেল ওর। লাফিয়ে পিছু হটল। ‘ওয়েন! সারাক্ষণই তুমি ওখানে ছিলে?’ বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেছে ওর মুখ।

‘বেরিয়ে যাও, লালচুলোকে দরজা দেখাল এরিখ। ‘দ্বিতীয়বার বলার আগে।‘

‘সম্ভবত ক্র্যামারের মত তোমারও ধোলাই খাবার সাধ জেগেছে, ওয়েন।’

চিবুক থেকে রক্ত মুছল ক্র্যামার। ‘চেষ্টা করে দেখো,’ তিক্তস্বরে বলল ও। তুলোধুনো হয়ে যাবে।’

দেঁতো হাসি হাসল বাটলার, পিছোল একটু। ওর ডান হাত কোটের পকেটে ছোবল মারল, পিস্তল বের করে আনল ও। নড়ো না, ওয়েন।’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করল ও, ‘হল তোমাকে দেখে দারুণ খুশি হবে।’

পিছিয়ে দেয়ালে হেলান দিল এরিখ। পায়ের ওপর ভর পাল্টাল। খেঁকিয়ে উঠল বাটলার, ‘নড়তে নিষেধ করিনি!’ পিস্তল দোলাল সে।

‘তাই?’ হাসল এরিখ। চ্যাপম্যানদের খুশি করার জন্যে অতটা ব্যস্ত তুমি, জানতাম না তো?

‘ব্যস্ত তো বটেই। খোশগল্পের মূড়ে হাসল বাটলারও। তোমাকে যে ধরে দিতে পারবে, তার জন্যে যৎসামান্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে যে! খবরটা পাওনি বুঝি কারও কাছে?’

সায় দিল জেমস। ঠিক বলেছ। কিন্তু তাতে তোমার বিশেষ লাভ হচ্ছে না। কামানটা পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে স্রেফ দূর হয়ে যাও এখান থেকে, এক্ষুণি। আর এরিখকে এখানে দেখেছ, এটা যেন ভুলেও মনে রেখো না।’

‘কী?’ হতভম্ব হয়ে গেল বাটলার।

ওর দিকে ডানহাতের তর্জনী উঁচিয়ে ধরল বুড়ো দোকানদার। টোকারকে এরিখ গুলি করেনি, কিংবা জেরিকেও হত্যা করেনি ও। এটা আমি ছাড়াও আরও অনেকেই মনে করে। হল চ্যাপম্যান আর তার চেলাদের ওপর কারও সুনজর নেই। বিভিন্নভাবে উত্যক্ত হচ্ছে তারা ওদের হাতে। ওদের সময় ঘনিয়ে এসেছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারো। তুমি যদি এখানে থাকার মতলবে এসে থাকো, তাহলে এদের সাথেই চলা উচিত হবে তোমার। এদের বিরুদ্ধে গেলে এরা ঠিকই তা মনে রাখবে। মাথায় যদি তোমার সামান্য ঘিলুও থাকে, তাহলে এরিখকে চ্যাপম্যানের হাতে তুলে দেবার কথা স্রেফ ভুলে যাও।’

অনিশ্চিত ভঙ্গিতে একবার জেমস, আর একবার এরিখের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল বাটলার। ‘যাহ্, ধাপ্পা দিচ্ছ তুমি!’

‘তাই বুঝি!’ ক্র্যামার হাসল। ‘ঠিক আছে। কিন্তু ওয়েন্ডির ব্যাপারটা কিভাবে সামলাবে বলে ভাবছ?’

‘ওর কথা আসছে কেন?’ খেঁকিয়ে উঠল বাটলার।

তুমি তো ওকে বিয়ে করতে চাও, তাই না? ও কিন্তু এরিখকে ভালবাসে। চ্যাপম্যানের লোকদের হাতে ওকে বিনা বিচারে ফাঁসিতে ঝুলতে দেখলে মোটেও খুশি হবে না মেয়েটা। আর ও যখন জানবে যে, তুমিই দায়ী সে জন্যে, কী আশা করতে পারবে তখন ওর কাছে? পিস্তল নামাও, গর্দভ কোথাকার? সোজা বেরিয়ে যাও এখান থেকে, আর মুখে কুলুপ এঁটে থাকবে একদম।

ইতস্তত করল বাটলার, বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। ক্র্যামার সৎ লোক, পোড়- খাওয়া। ‘ঠিক আছে।’ পিস্তল পকেটে ঢোকাল ও। কাউকে কারও হাতে তুলে দেবার গরজ পড়েনি আমার। তবে ওয়েন, ওয়েন্ডির ধারে-কাছেও যেন তোমাকে না-দেখি আর। মনে রেখো, ও আমার।’ বেরিয়ে গেল লালচুলো র্যাঞ্চার।

ক্র্যামার ঘুরল এরিখের দিকে। ‘পালাও এরিখ। এক্ষুণি। বাটলারকে বিশ্বাস নেই। সারা শহরে ডব্লিউ বারের লোকজন গিজ গিজ করছে। জর্জ চ্যাপম্যান নিজেও আছে। খুঁজছে ওরা তোমাকে। জেরিকে মারার প্রতিশোধ নেবার সুযোগ পেলে নেকড়ের মত ছুটে আসবে সবগুলো দল বেঁধে।’

বাতি নিভিয়ে দিল এরিখ। ‘ব্রিজের তলা থেকে আমার লেখা মেসেজটা সরিয়েছে কেউ। জো পায়নি ওটা।’

‘কী?’ আঁতকে উঠল দোকানদার। কার কাজ ওটা?’

‘জানি না।’

‘জো’র কাছে পরবর্তী নির্দেশ পাবে। পালাও এখন।’

এরিখ বেরিয়ে গেল পেছন-দরজা খুলে, অন্ধকারে পা বাড়াল। একটা বিল্ডিঙের শেষ মাথায় গিয়ে থেমে গেল আচমকা। বিপদের গন্ধ পেয়েছে। খাঁড়ি থেকে ভেসে আসা দ্রুত প্রবহমান পানির স্রোতের শব্দ কানে এল ওর। কান পাতল সে। সেলুন থেকে মাতালের হৈ চৈ শোনা যাচ্ছে থেকে থেকে। রাস্তায় মানুষজনের চলাফেরা আর কথাবার্তার আওয়াজ। স্টারটার ওপর হাত বুলিয়ে খানিকটা এগোল ও আবার। তারপরই ঘুরে দাঁড়াল পিস্তলহাতে পেছনে পায়ের শব্দ শুনে।

অন্ধকারে পিস্তল কক করল এরিখ, একটা লোকের নড়াচড়া লক্ষ করল সামনে। এক ঝলক আগুন, সাথে সাথে লোকটার চিৎকার শুনল। এদিকে, এদিকে…’

লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিটা ওর মাথার ওপর দিয়ে চলে গেল। গুলি করল না এরিখ প্রত্যুত্তরে, বরং উল্টোমুখে দৌড় লাগাল দালানের কোনার দিকে। প্রায় পঞ্চাশ ফুট দূর থেকে অন্ধকারে ঝলসে ওঠা আগুনের শিখা দেখা গেল আবার। গুলিটা এসে বিদ্ধ হলো এরিখের মাথার ঠিক ওপরে দালানের দেয়ালে। বালি আর পাথরের কুচি ঝরে পড়ল ওর মাথায়। মাটিতে শুয়ে গড়ান দিল ও, ক্রীকের পাড়ে গিয়ে থামল।

‘ধরো ওকে!’ পরিচিত গলার শব্দ শুনল এরিখ। ‘বেশিদূর যেতে পারেনি ও!’ ডগের গলা।

আরেক গড়ান দিয়ে খাঁড়িতে নেমে গেল এরিখ। পায়ের ওপর ভর দিয়ে উবু হয়ে বসল ঠাণ্ডা পানির ধারে। ক্রীকের পাড়ে বুটের শব্দ। দু’তিনজন লোক এসে দাঁড়িয়েছে ওখানে, খুঁজছে ওকে। ওদের মাথার ওপর দিয়ে দু’তিনটা গুলি পাঠিয়ে দিল ও। দুদ্দাড় করে ছড়িয়ে পড়ল লোকগুলো আড়ালের খোঁজে। হাঁটুতে ভর দিয়ে ভেজা ঠাণ্ডা পাথরের ওপর হামাগুড়ি দিল এরিখ, খাঁড়ির ভেতর দিয়ে এগোল সামনের দিকে। ওপর থেকে অবিরাম গুলি ছুঁড়তে লাগল ডগের লোকেরা, সেও প্রত্যুত্তর পাঠাল মাঝে-মধ্যে।

নিঃশব্দে কিছুদূর এগিয়ে গেল ও। সন্তর্পণে উঠে এল আবার খাঁড়ির পাড়ে, তাকাল পেছন ফিরে। আক্রমণকারীরা এখনও বুঝে উঠতে পারেনি যে, ও এতদূর চলে এসেছে। দ্রুত হাঁটা দিল ও পাড় বেয়ে। আর কিছুদূর যেতে পারলেই পৌঁছে যাবে ক্রীকের ওপারে জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে রাখা জিস্টারের কাছে।

আরেকটু সামনে এগোতেই লোকটাকে দেখতে পেল এরিখ। ওর বিপরীত দিকে মুখ করে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা। এরিখ পেছন থেকে নিঃশব্দে ভিড়ে গেল ওর সাথে, একহাতে গলা পেঁচিয়ে ধরে অপর হাতে পিস্তল ঠেসে ধরল তার পিঠে

‘চুপ একদম!’ মৃদু স্বরে হুকুম দিল এরিখ। নইলে ফুটো করে দেব।’

আঁতকে উঠল অমনোযোগী অস্ত্রধারী। ফর গড’স শেক! গুলি করো না, ওয়েন।’

লোকটা জর্জ চ্যাপম্যান। আরও জোরে ঠেসে ধরল এরিখ স্টারের মাজল ওর পিঠে। চলে যেতে বলো তোমার লোকদের। আর এক পা এগোলেই আমি তোমার কলজে ফুটো করে দেব, বলে দাও এটা ওদের, ‘ শাসাল ও।

বুঝে নিল চ্যাপম্যান, এরিখ মিথ্যে ধমক দিচ্ছে না। ধাওয়াকারীরা এগিয়ে আসছে। পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে তাদের। চ্যাপম্যানের পিঠে চাপ বাড়াল আরেকটু।

‘বলো এক্ষুণি!’ ফিস ফিস করে গর্জে উঠল এরিখ।

হাঁক দিল চ্যাপম্যান নিজের লোকদের উদ্দেশে। ডব্লিউ বারের লোকেরা, তোমরা এদিকে এসো না। গুলি করো না কেউ। ও আমাকে আটকে ফেলেছে।’

‘যে করেই হোক, বস্…’ শুরু করতে গেল ডগ।

ঘেউ ঘেউ করে উঠল চ্যাপম্যান, ‘জাহান্নামে যাও তুমি! যা বলছি, মন দিয়ে শোনো। আমার পেছনে পিস্তল ঠেসে ধরেছে ও। তোমরা বীরত্ব দেখাতে গেলে মারা পড়ব আমি।’

ঠেলে লোকটাকে আরেকটু সামনে নিয়ে গেল এরিখ। হুকুম দিল নিচুস্বরে, ‘পিস্তল ফেলে দাও হাত থেকে।’

জর্জ পিস্তল ফেলে দিল। ‘প্লীজ গুলি কোরো না।’ কাঁপা গলায় মিনতি জানাল র‍্যাঞ্চমালিক।

‘ঘুরে দাঁড়াও আমার দিকে।’ চ্যাপম্যান ঘুরে দাঁড়াল। শুনলাম দড়িহাতে খুঁজে বেড়াচ্ছ তোমরা আমাকে?’ বলল এরিখ।

‘হ্যাঁ,’ স্বীকার করল চ্যাপম্যান। আমার দু’জন লোককে খুন করেছ তুমি।’

‘আমি খুন করিনি।’

‘তুমি আমাকেও খুন করতে চাইছ।’

এরিখ বিশালদেহী লোকটাকে ঠেলে আরেকটু অন্ধকারে নিয়ে গেল। ‘না,’ বলল সে, ‘আমি খুনী নই—ছিলামও না কোনদিন।

মাত্র ফুট দশেক দূরেই পা আছড়াল একটা ঘোড়া। অন্ধকারে তীক্ষ্ণচোখে ওদিকে তাকাল এরিখ।

‘আমার ঘোড়া ওটা,’ জর্জ তাড়াতাড়ি বলে উঠল। ‘কিন্তু ওয়েন, তুমি কেন এসব ব্যাপারে জড়িয়ে পড়লে? প্রথম দিন তোমাকে অন্যরকম ভেবেছিলাম আমি।’

‘প্রথম দিন কার সম্পর্কেই বা সঠিক ধারণা পাওয়া যায়?’ হাসল এরিখ ‘শুনতে চাও কেন এসবে জড়িয়ে পড়েছি? শোনো তবে।’ একটু থেমে গাঢ়স্বরে বলতে শুরু করল ও, ‘ডেভিড ক্লে’কে ফাঁসিতে ঝোলানো অবস্থায় আমিই প্রথম আবিষ্কার করেছিলাম ডীপ শ্যাডো ভ্যালিতে। আমার মনে হয়েছে এটা তোমাদের কাজ। কারণ তোমাদের হাত তো সবক্ষেত্রেই চালু, দড়িতেও। এখন তোমার পিঠে যদি একটা পয়েন্ট চুয়াল্লিশ বুলেট ঢুকিয়ে দেয়া হয়, ব্যাপারটা কি রকম উপভোগ্য হবে তোমার কাছে, চ্যাপম্যান?’

‘খোদার কসম!’ ককিয়ে উঠল চ্যাপম্যান। ‘আমার কোন হাত ছিল না ওতে। ডেভিডকে আমি সত্যি পছন্দ করতাম।’

‘করতেই তো!’ বিদ্রূপ করল এরিখ। ওর র‍্যাঞ্চ আর গরুগুলোকে এখনও পছন্দ করো তুমি।’

‘অবশ্যই। আমি ক্রস অ্যারো আউটফিটটা পেতে আগ্রহী। তাই বলে ডেভিডকে আমি ঝোলাইনি।’

‘মিথ্যে কথা বলছ তুমি।’

গলিপথে বুটের শব্দ শোনা গেল দ্রুত। ডগের গলাও শোনা গেল, তার সাথে, ‘বস্।’

স্টারটা এবার চ্যাপম্যানের পেটে চেপে ধরল এরিখ। ‘ওখানে দাঁড়াও তোমরা,’ হাঁক দিল চ্যাপম্যান। ‘এদিকে আসবে না। তাহলে ওর হাতে মারা পড়ব আমি।

চ্যাপম্যানের ঘোড়াটার দিকে তাকাল এরিখ। ‘তুমি ধরা দিলে ভাল করবে, ওয়েন। যাতে ন্যায় বিচার পাও, সেটা আমি দেখব।’ ওকে বোঝাতে চাইল চ্যাপম্যান।

‘থামো তুমি। উপদেশের দরকার নেই আমার।’

আচমকা পেট থেকে পিস্তল সরিয়ে নিল ও। চ্যাপম্যান কিছু বুঝে ওঠার আগেই কানের পাশে প্রচণ্ড আঘাত অনুভব করল। নিঃশব্দে জ্ঞান হারাল ও।

পড়ে যাবার আগে ওকে আলগোছে ধরে ফেলে মাটিতে শুয়ে দিল এরিখ। ঘুরে পেছনে এগোল ও, উঁকি দিল গলিপথে। গলির মাঝামাঝি এসে দাঁড়িয়ে আছে চ্যাপম্যানের লোকেরা। নির্দেশের অপেক্ষা করছে।

নিঃশব্দে চ্যাপম্যানের ঘোড়ার কাছে চলে গেল ও। পিস্তলের গুঁতো লাগাল ওটার পাছায়। ভয় পেয়ে দৌড় লাগাল ঘোড়াটা। চুপচাপ নেমে গেল এরিখ খাঁড়িতে।

‘পালাচ্ছে ও!’ চিৎকার করে জানান দিল একজন পেছনে। গুলির শব্দ শুনল এরিখ।

ঠাণ্ডা পানিতে নেমে গেল ও, যথাসম্ভব নিঃশব্দে সাঁতরাতে শুরু করল। এদিকে খাঁড়িটা খরস্রোতা, খানিকটা গভীরও। ক্রীকের বরফশীতল পানি সুচ ফোটাচ্ছে ওর শরীরে। গাল বকল ও মৃদুস্বরে।

ডগ লেইকারের চিৎকার শোনা গেল পেছনে। তাড়াতাড়ি ঘোড়া নিয়ে আসো। পালাতে পারবে না ও এবার আমাদের হাত থেকে।

প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে একটা উইলো ঝোপের পাশ দিয়ে খাঁড়ি থেকে উঠে গেল এরিখ। অবাক হয়েছে ও। ক্র্যামারের দোকান থেকে বেরোতে না- বেরোতেই আক্রান্ত হয়েছে ও। কার কাছে খবর পেল ডব্লিউ বার? বাটলারের কাছে? এত দ্রুত! ওয়েন্ডির কাছ থেকে? হতেই পারে না। তাহলে?

ভেজা কাপড় চোপড়ে হি হি করে কাঁপতে কাঁপতে জিস্টারকে বেঁধে- রাখা ঝোপটায় ঢুকল এরিখ। নাক ঝাড়ল জিস্টার মনিবের সাড়া পেয়ে। এরিখ ঘোড়ায় চড়ল। অন্ধকার ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলল সামনে।

যুদ্ধকে এড়িয়ে চলতে চেয়েছে ও। কিন্তু যুদ্ধ ওকে এড়িয়ে যেতে দেয়নি। ডব্লিউ বারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে ও এখন, ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও। এটাই কি ওর নিয়তি? তাহলে নিয়তি তাকে আর কতদূর নিয়ে যাবে এভাবে?

জানে না ও।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *