আশ্রয় – ৩

তিন

কোনও প্রশ্ন না করে পাইনস ভ্যালিতে কি ঘটেছিল, শুনে নিল ওয়েন্ডি এরিখের বক্তব্য শেষ হবার পর শান্তভাবে মন্তব্য করল, ‘চ্যাপম্যানের কাজের ধারা এ-রকমই।’

‘তোমার সবগুলো গরুই কি ওখানে?’

‘হ্যাঁ।’

‘তোমার র‍্যাঞ্চের তুলনায় যথেষ্ট নয়।’

‘বাবার আরও কেনার ইচ্ছে ছিল। আমি নিজেও কিনতে পারি। কিন্তু অবস্থা দেখে মত পাল্টেছি। তাছাড়া আমার আরও লোকের প্রয়োজন। সমস্যা হচ্ছে, ছোট র‍্যাঞ্চের জন্যে কাজ করতে আগ্রহী লোক পাওয়া যাচ্ছে না।’

এরিখ পাইপে তামাক ভরল। ‘আমি হারিয়ে যাওয়া গরুগুলোর কথাই ভাবছি। কোথায় থাকতে পারে ওগুলো? একটা-দুটো ঘোড়া হয়তো চুরি করে লুকিয়ে রাখা যায়, কিন্তু শ’ শ’ গরুর জন্যে প্রচুর ঘাস আর পানির দরকার।’

‘এ-দেশটা অনেক বড়, এরিখ। এর অধিকাংশ জায়গায় এখনও মানুষের পা পর্যন্ত পড়েনি।’

‘কতগুলো খোয়া গেছে তোমার এ-পর্যন্ত?’

‘দেড়শোর বেশি হবে।’

এরিখ শিস দিল। ‘তোমার দেড়শো, চ্যাপম্যানের কথা সত্যি হলে ওর চারশো, বাটলারের চল্লিশ- মোট পাঁচশো নব্বুই। অন্যান্যদের কি পরিমাণ হবে তার হিসেব পাওয়া যায়নি।’

বারান্দা থেকে নেমে এসে উঠানের এক পাশে দাঁড়াল ওয়েন্ডি। ওর সাথে এরিখও। ওয়েন্ডি চারপাশের পাহাড় সারির দিকে তাকাল।

‘আমার কেবল মনে হয়, এসব পাহাড়ের কোথাও কোনও গোপন উপত্যকা বা ক্যানিয়নের ভেতর রয়েছে ওগুলো। আমরা চিনতে পারছি না, এই যা।’

‘সেটা অসম্ভব নয়,’ এরিখ একমত হলো ওর সঙ্গে।

ওয়েন্ডি ঘুরে ওর দিকে চাইল। ‘তোমাকে বিশ্বাস হয়। কেন, জানি না। তুমি যা বলেছ, তোমার সম্পর্কে ওটুকুই শুধু জানি।’

এরিখ হাসল। ‘তোমার সম্পর্কে আমিও তাই ভাবছি, ম্যাম!’

‘সমানে সমান,’ হাসল ওয়েন্ডিও। ‘মালপত্র কেনার জন্যে আমাকে রকস্প্রিং যেতে হবে। তুমি বাড়িতে থাকো।

‘আমি যাব।’

ওয়েন্ডি মাথা নাড়ল। ‘রকস্প্রিঙে এখন নতুন লোকদের জন্যে সময় ভাল নয়। চ্যাপম্যান আর তার মত লোকেরাই ওটা চালাচ্ছে। গোল্ড বার্জার নামের একজনকে কিছুদিন আগে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। ওর বিরুদ্ধে গরু চোরদের সঙ্গে মাখামাখির অভিযোগ তুলেছিল ডব্লিউ বার র‍্যাঞ্চের লোকেরা। ভিত্তিহীন অভিযোগ। বাবাকেও হয়তো তা-ই করত, এভাবে মারা না পড়লে।

এরিখ করালের দিকে যেতে যেতে বলল, ‘আমি খচ্চরগুলো নিয়ে আসছি। তুমি যা যা দরকার লিস্ট করে নাও। ম্যাম,’ করালের কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াল ও, ‘আমি তোমার কাজ করছি, সুতরাং আমার যা যা করা উচিত, আমাকে করতে দাও।’

‘ঠিক আছে,’ হাল ছেড়ে দিল ওয়েন্ডি। তবে দয়া করে ঝামেলা খুঁজতে যেয়ো না। কাজ সেরে দ্রুত বেরিয়ে আসবে।’

এরিখ করাল থেকে একজোড়া খচ্চর বের করে আনল। হালকা একটা ওয়্যাগনের সাথে জুড়ে দিল গুগুলোকে। স্পেন্সারটা রাখল ওয়্যাগনে তার আসনের নিচে। ওয়্যাগন নিয়ে ঘরের সামনে এলে ওয়েন্ডি ওর হাতে তালিকাটা ধরিয়ে দিল।

‘কোনও সমস্যা হলে,’ বলল ও, ‘জেমস ক্র্যামারের সাহায্য পাবে তুমি। জেমস জেনারেল স্টোরের মালিক ও।’

পথ বাতলাল ওয়েন্ডি। উপত্যকার রাস্তা ধরে মাইল পাঁচেক দক্ষিণে গেলে জাংশন পাবে একটা। ওখান থেকে বামে মোড় নেবে। তারপর বাঁ দিকের রাস্তা ধরে আরও চার মাইল গেলেই রকস্প্রিং টাউন। এরিখ, ওর হাত ধরল মেয়েটি, ‘সাবধানে থেকো।’

‘থাকব,’ কথা দিল এরিখ।

ওয়্যাগন চালিয়ে বেরিয়ে গেল ও। ওয়েন্ডির ছোঁয়া ওর ভেতরে বিচিত্র অনুভূতির সৃষ্টি করেছে। হাতের দিকে চাইল ও, যেন ওখানে স্পর্শটাকে দেখতে পাবে। স্পর্শটা যেন জীবন্ত, অনুভব করল ও।

‘গাধা কোথাকার!’ নিজেকে বকুনি লাগাল এরিখ। ‘তুমি না ঝুট ঝামেলা এড়িয়ে শান্ত নিরুপদ্রব জীবন চেয়েছিলে? এখন দেখো, এক মহিলার জন্যে বাজার করতে ছুটেছ তুমি!’

নির্ঝঞ্ঝাটে রকস্প্রিং গিয়ে পৌছল ও। শহরটা গড়ে উঠেছে একটা খাড়া পাহাড়ের কোল ঘেঁষে, উপত্যকার ওপর। শহরের একটাই প্রধান রাস্তার দু’পাশে দোকানপাট আর বাড়িঘর। শীতকালীন বৃষ্টি আর তুষারপাতের ফলে গুগুলোর অবস্থা জীর্ণশীর্ণ। রাস্তার পুব সারির বাড়ি-ঘরের পেছনে একটা অগভীর খাঁড়ি; খাঁড়ির ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে-থাকা মসৃণ পাথরখণ্ডের ওপর দিয়ে কল কল শব্দে বয়ে যাচ্ছে পানি। পাথরের চাঁই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শহরের ভেতরেও। বিভিন্ন আকারের নিরেট পাথর। এরিখ সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় পাথরখণ্ডটার পাশ কেটে ওয়্যাগন নিয়ে শহরে ঢুকল। জেমসের রকস্প্রিং এম্পোরিয়াম লেখা সাইনবোর্ডটাই প্রথমে ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করল।

ওদিকে গেল ও। হঠাৎ ওক টিকাউর ওপর ওর দৃষ্টি আটকে গেল। টিকাউ দাঁড়িয়ে আছে একটা সেলুনের সামনে, চুচিলার আগার সাহায্যে নখ খোঁচাচ্ছে। সেলুনটার নাম, এরিখ পড়ল, ওয়েস্টার্ন মুন। টিকাউও দেখল এরিখকে। ছুরিটা খাপে আটকাল ও। সেলুনের ভেতর ঢুকে পড়ল চট করে।

এরিখ ওয়্যাগন দাঁড় করিয়ে স্টোরে ঢুকল। জেনারেল স্টোরই বটে। বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র সাজানো থরে থরে। দেয়ালে গাঁথা কীলক থেকে ঝুলছে হারনেস, স্যাডল প্রভৃতি। এ-দেয়াল থেকে ও-দেয়াল পর্যন্ত টানা ওয়ায়্যারে বিভিন্ন সাইজের পাত্র, কড়াই এবং অন্যান্য জিনিস। এক টেকোমাথা বুড়ো লোককে দেখা গেল দোকানে।

‘আমি এরিখ ওয়েন। ক্রস অ্যারোর কাজ করছি। মিস ক্লে পাঠিয়েছে আমাকে মালপত্র নেবার জন্যে।

লোকটা একটা প্যাকিং কেসের মুখ খুলছিল হাতুড়ি ঠুকে, এরিখের কথা শুনে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল।

‘তাই? ডেভিডের কাজ করছ?’

‘না। মিস ক্লে’র।’

‘ও, আচ্ছা। জানতাম না ওয়েন্ডি ওর বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেছে।’ অসন্তুষ্ট দেখাল বুড়ো দোকানদারকে, সামনে এগিয়ে এল ও।

‘ডেভিড ক্লে মারা গেছে, মি. ক্র্যামার।’

হাত থেকে হাতুড়িটা সশব্দে পড়ে গেল ক্র্যামারের। ‘তুমি নিশ্চয়ই ভুল বকছ!’

এরিখ শান্তস্বরে বলল, ‘না।’

ক্র্যামার ওর দিকে তাকাল আবার, তার চোখে কষ্টের ছায়া। ‘হ্যাঁ, তোমার কথা বিশ্বাস করছি। কখন মারা গেল ডেভিড? কি হয়েছিল ওর?’

‘আজ সকাল বেলায়, এরিখ জবাব দিল, ‘ডীপ শ্যাডো ভ্যালিতে পেয়েছি ওকে। গাছের ডাল থেকে ঝুলছিল।’

‘তুমি কি বলতে চাইছ আত্মহত্যা করেছে ও?’

‘আমি ওকে চিনতাম না। আমি শুধু ওকে ফাঁসিতে ঝুলতেই দেখেছি।’

ক্র্যামারের চোখ এরিখকে পাশ কাটিয়ে বাইরে রাস্তায় গিয়ে পড়ল। ‘যতক্ষণ শহরে আছ,’ বলল সে, ‘মুখে কুলুপ এঁটে রেখো, ইয়ংম্যান। ডেভ আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। আমি অবাক হচ্ছি না। জানতাম এ-রকম কিছুই ঘটবে একদিন।’

এরিখের দিকে চাইল ও। ‘ও কাউকে পরোয়া করত না। ওকে সরিয়ে না দিয়ে এদের উপায় ছিল না।’

‘কাউকেই পরোয়া করত না? চ্যাপম্যানকেও না?’

নার্ভাসভঙ্গিতে অ্যাপনে হাত মুছল ক্র্যামার। ‘নতুন হিসেবে খুব বেশি জেনে ফেলেছ, ওয়েন।’

‘চ্যাপম্যান আর ওর লোকদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে।’

ক্র্যামার এরিখের হাত থেকে লিস্টটা নিল। ‘ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে যে, ডেভিড নেই।’ লিস্টে চোখ বুলোল ও। ‘ওয়েন্ডির পরিকল্পনা কি? থাকবে?’

‘থাকবে।’

‘লোকজন?’

‘আমি।’

‘হ্যাঁ। আর কে কে?’

‘আর কেউ নেই।’

‘কেন? সেথ গ্যালি আর জেন্ট স্ট্রেইটের কি হলো?’

‘পালিয়েছে ওরা। মি. ক্লে’র মৃতদেহ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই ভেগেছে।’

‘আমিও তাই ভেবেছি,’ ক্র্যামার মাথা দোলাল।

লিস্ট হাতে কাউন্টারের পেছনে চলে গেল দোকানদার। চোখের সামনে ধরে মনোনিবেশ করল তাতে; কিন্তু মাঝে-মধ্যে যে নাকের ওপর ঝোলানো চশমার ফাঁক দিয়ে এরিখকে মেপে নিচ্ছে, ওর দৃষ্টি এড়াল না তা।

‘আমি শেরিফের সাথে দেখা করতে চাই। মিস ক্লে অবশ্য ঝামেলায় যেতে নিষেধ করেছে।’

‘আমিও তাই করছি।’ লিস্ট থেকে চোখ সরাল ক্র্যামার। এখানকার শেরিফ কে, জানো না নিশ্চয়। জানলে তুমিও বুঝবে ওয়েন্ডি কেন ঝামেলা এড়াতে চেয়েছে।’

‘কে শেরিফ?’ এরিখ জানতে চাইল।

‘একজন চ্যাপম্যান। হল। জর্জের ছোট ভাই।’

এরিখ শিস দিল। ‘তাহলে তো আইন চ্যাপম্যানের পকেটে।’

সায় দিল ক্র্যামার। ‘তবে আমি বলছি না যে, ডেভিডের মৃত্যুতে চ্যাপম্যানের হাত আছে। যদি থাকে, তাহলে হল কোনমতেই ওতে নাক গলাবে না। আর যদি না থাকে, তাহলেও তার কাছে বিশেষ কিছু আশা করা যাবে না।’

‘এই অঞ্চলটা বেপরোয়া লোকে ভরা,’ বলে চলল ও, ‘হল খুব বেশি নাক গলাতে চাইলে ওরা চ্যাপম্যানদেরও ছেড়ে কথা কইবে না। আর জর্জ চ্যাপম্যান সেটা পছন্দ না-ও করতে পারে। হল তা জানে।’

‘তাহলে কি করা উচিত আমাদের?’ এরিখ সামনে ঝুঁকল। স্পষ্ট বিরক্তি ওর কণ্ঠে। ‘মৃতলোকটাকে কবর দিয়ে ওর হত্যাকারীদের কথা ভুলে গিয়ে ঘরে বসে থাকব? মি. ক্র্যামার, সভ্যতার বর্তমান স্তর থেকে ঠিক কতটা নিচে আছে এ-অঞ্চল, জানতে পারি?’

ক্র্যামার ওর দু’হাত কাউন্টারের ওপর রাখল। ‘অনেক নিচে। বলতে পারো, একদম অন্ধকারের গর্ভে। আমার সব কিছুই এখানে, ওয়েন। নইলে অনেক আগেই চলে যেতাম এখান থেকে।’

থামল সে। রাস্তার দিকে চোখ বুলিয়ে নিল একবার। তুমি ওয়েন্ডির হয়ে কাজ করছ,’ খেই ধরল ও। ‘আমি তোমার নার্ভের প্রশংসা করি। কিন্তু বাছা, তুমি যতটুকু সাহসের পরিচয় দিচ্ছ, ততটুকু বুদ্ধির প্রমাণ দিতে পারছ না। জর্জ চ্যাপম্যানের নজর ক্রস অ্যারো’র ওপর। এগোচ্ছেও ও সেভাবে। ডেভিড ক্লে ওটা কেনার পর থেকেই ওর লোকদের ভয় দেখিয়ে ভাগিয়ে দিচ্ছে সে।’

এরিখ দরজার দিকে হেঁটে গেল। ‘আমি শেরিফের ওখানে যাচ্ছি।’

‘তোমার বাড়াবাড়ি না করাই উচিত, এরিখ।’

‘আমি শুধু এ-ব্যাপারে ওর বক্তব্য কি, তাই জানতে চাই।’

দোকান থেকে বেরিয়ে এসে সিগারেট রোল করল ও। রাস্তায় লোকজন বেশি নেই। একটু দূরে একটা বিল্ডিং। বিল্ডিংয়ের মাথায় নক্ষত্রাকৃতির একটা সাইনবোর্ডের ওপর লেখা, শেরিফের অফিস। সিগারেট ধরিয়ে হাঁটতে শুরু করল ও।

অফিসের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। সরু মুখের হালকা পাতলা গড়নের একটা লোক ভেতরে, বসে আছে একটা কাঠের ডেস্ক সামনে নিয়ে।

‘শেরিফ? তুমি?’ এরিখ জিজ্ঞেস করল।

‘উহু।’ কৃশমুখের লোকটা হাসল। ‘শেরিফ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে এখানকার জেলর ক্লার্ক থেকে শুরু করে সংবাদবাহক পর্যন্ত সব কাজের কাজী বলতে পারো আমাকে। নাম? জব রাফ। কি কাজে লাগতে পারি তোমার?’

‘শেরিফ কোথায়?’

‘ওয়েস্টার্ন মূনে চলে যাও। ওকে না চিনে উপায় নেই কারও। অ্যারিজোনার সবচেয়ে বড় আর চকচকে তারাটি তুমি ওর বুকেই আটকানো দেখতে পাবে।’

এরিখ লোকটাকে নড করে বেরিয়ে এল। রাস্তা পেরিয়ে সেলুনের সামনে এসে ব্যাটউইং ঠেলে ভেতরে ঢুকল। ডগ লেইকার আর ওক টিকাউকে একটা টেবিল দখল করে বসে থাকতে দেখল ও। শাদা হ্যাট পরা একটা বিশালাকার লোক বারের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আরেকজনের সাথে। লোকটার গায়ে একটা কালো কোট; কোটের সাথে আটকানো ব্যাজটা দেখে এরিখ ওকে চিনতে পারল। হল চ্যাপম্যান। জর্জ চ্যাপম্যানের

মতই বিশাল সুগঠিত শরীরে ওর প্রচণ্ড শক্তির আভাস; কিন্তু জর্জের মুখে যে- রকম দৃঢ়তা ও কর্তৃত্বের ছাপ, সেটা হলের মধ্যে নেই।

এরিখ ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। আমি এরিখ ওয়েন,’ নিজের পরিচয় দিল ও। ‘মিস্ ওয়েন্ডি ক্লে’র কাজ করছি। ডেভিড ক্লে’র মৃত্যুর ব্যাপারে রিপোর্ট করতে এসেছি।’

জ্বলন্ত সিগারেটটাকে ঠোঁটের এক কোণ থেকে আরেক কোণে নিয়ে গেল হল জিভের সাহায্যে ঠেলে। দাঁতের আগায় ওটার গোড়া চেপে ধরল। ‘কি ঘটেছিল?’

‘আজ সকালে ওকে আমি ডীপ শ্যাডো ভ্যালিতে পেয়েছি; মৃত। ফাঁসিতে ঝুলছিল ও।’

‘আত্মহত্যা। তাই না?’

‘জানি না। হত্যাও হতে পারে।’

হল মুখ হতে সিগারেট নামিয়ে হাতে নিল। তাকাল ওটার দিকে। ‘মৃতদেহ কোথায়?’

‘র‍্যাঞ্চ সিমেট্রিতে কবর দিয়েছি।’

‘কি?’ হল এমন জোরে চেঁচিয়ে উঠল যে, যেন ওভাবে না চেঁচালে এরিখ ওর কথা শুনতে পাবে না। ‘তদন্তের আগে ডেডবডি কবর দিয়ে ফেলেছ! জানো না ওটা সম্পূর্ণ বেআইনী?’

‘আমি শুধু মিস ক্লে’র নির্দেশ পালন করেছি।’

‘হাহ্! মিস ক্লে’র নির্দেশ? নির্দেশ দেবার আগে ওয়েন্ডির ভাল করে জেনে নেয়া উচিত ছিল নিজের অধিকারের সীমা।’

‘ঠিক আছে,’ এরিখ সমঝোতায় যেতে চাইল। ‘দরকার হলে লাশ তোলা যাবে কবর থেকে।’

মুখ বিকৃত করল শেরিফ, যেন একগ্লাস মেহগনি বীচির শরবত খেতে বলেছে কেউ ওকে। অনেক দেরি হয়ে গেছে।

‘প্রয়োজনে এর চেয়ে পুরানো কবরও খুলতে দেখেছি আমি, চ্যাপম্যান।’

‘ঠিক আছে।’ খুঁতনিতে হাত বুলোল হল। ‘জব রাফের নেতৃত্বে একটা তদন্ত দল পাঠাব আমি। আমার ডেপুটি ও।

ডগ লেইকার হেসে উঠল। ঠেলা দিয়ে হ্যাটটাকে সরিয়ে দিল সে মাথার পেছন দিকে। চ্যাপম্যানের কথায়, বোঝা যাচ্ছে, দারুণ মজা পেয়েছে ও। হল ভ্রূকুটি করল; মুখ থেকে সিগারেট ছুঁড়ে ফেলল এরিখ। ‘আমি মনে করি, শেরিফ হিসেবে তদন্তে যাওয়া তোমারই দায়িত্ব।’

প্রকাণ্ড মাথাটিকে একদিকে কাত করল হল চ্যাপম্যান। ‘তোমার উপদেশেই আমি আমার অফিস চালাব?’

এরিখ জবাব দিল না।

‘শোনো,’ চ্যাপম্যান তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, ‘তুমি এখানকার কেউ নও। এখানে ট্যাক্স দিচ্ছ না তুমি। তোমার জমি-জমা, গরু-বাছুর, ঘর-বাড়ি— কিচ্ছু নেই এ-জায়গায়। একজন ভবঘুরে বেকার ছাড়া আর কিছু নও তুমি। ডব্লিউ বারের লোকজন তোমার কথা আগেই বলেছে আমাকে।’

‘দারুণ সুনাম করেছে নিশ্চয়!’ এরিখ ব্যঙ্গ করল।

সামনে ঝুঁকল শেরিফ। ‘তুমি সন্দেহের বাইরে নও। অ্যাপাচিদের মত তুমি পাহাড়ে লুকিয়ে থাকো, কারও সামনে পড়ে গেলে নিজেকে শিকারী বলে পরিচয় দাও। শিকারী! হাহ্! পুঁজিবিহীন ব্যবসায়ী আর কি! আইনের লোকের সাথে মশকরার মজা ঠিকই টের পাবে তুমি।’

এরিখ একটু পিছিয়ে ডগ লেইকার আর ওক টিকাউকে দেখল। ডগের ঠোঁট বেঁকে গেছে, হাসছে সে। টিকাউর মুখে ভাবান্তর নেই, একদৃষ্টে চেয়ে আছে ও এরিখের দিকে। মিস ক্লে মিথ্যে বলেনি দেখছি! বলেছিল, আইন- টাইন কিছুই নেই এখানে।’

‘জাহান্নামে যাও তুমি!’ খেঁকিয়ে উঠল হল। রাগে ওর মুখ বিকৃত হয়ে গেছে। আমি শুনেছি, তুমি নাকি এখানে গোলমাল পাকাবার তালে আছ।’

‘শুনেছ—ডব্লিউ বারের লোকদের কাছে নিশ্চয়?’

‘যার কাছেই শুনি, কথাটা দেখা যাচ্ছে মিথ্যে নয়। কোটের ভেতর হাত গলাল চ্যাপম্যান, একটা নিকেল-প্লেটেড কোল্ট উঁকি দিল ওখান থেকে। ‘এখন আমার কথা শুনে নাও। তোমাকে আমি সাবধান…

এরিখ হাসল। ‘ওটা’ শেরিফের কোটের ভেতর হতে উঁকি দিতে-থাকা কোল্টটার দিকে ইঙ্গিত করল, ‘পুরোটা বের করার মত সাহস তোমার আছে বলে বিশ্বাস হয় না আমার। পায়ের গোড়ালির ওপর ঘুরল ও। ‘তোমার উপদেশগুলো নিজেকেই শুনিয়ো, শেরিফ।

বেরিয়ে গেল ও ব্যাটউইং ঠেলে। চ্যাপম্যান মুখ খিস্তি করল। ‘ওকে, ‘ ডগ আর ওকের দিকে চাইল সে, ‘শহর ছেড়ে বেরোবার আগে একটু তালিম দিয়ে দিয়ো।’

রাস্তা পেরিয়ে স্টোরে ঢুকল এরিখ। কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ‘ঠিকই বলেছিলে তুমি।’

ক্র্যামার মাথা দোলাল। ‘ফোলানো বেলুন। দেখলে মনে হয় জর্জের যমজ। কিন্তু দুই ভাইয়ের পার্থক্য আকাশ আর পাতালের। দুটো ব্যাগ তুলে কাউন্টারের ওপর রাখল ও। হলের সাথে যদি কথা কাটাকাটি হয়ে থাকে, তাহলে এই-মুহূর্তে শহর ছাড়ো। নিজের লড়াই অপরকে দিয়ে করায় ও। গোল্ড বার্জারের বেলায়ও—’

‘শুনেছি,’ এরিখ জানাল।

মালপত্র নিয়ে বেরিয়ে এল ও। ফুটপাথের ওপর রেখে আবার দোকানে ঢুকতে পা বাড়াল ক্র্যামারকে বিদায় জানাবার জন্যে। আচমকা ডান পা কিছু একটার সাথে আটকে গিয়ে উল্টে পড়ল নিজের মালপত্রের ওপর। টাল সামলাতে চেষ্টা করল ও। পারল না। মালপত্রসহ গড়িয়ে পড়ল বৃষ্টিভেজা রাস্তায়। কাদায় মাখামাখি হয়ে গেল ও। পড়া অবস্থায় ওপরের দিকে তাকিয়ে ডগ লেইকারের হাসিমুখ দেখতে পেল।

থুতু ফেলল ডগ। ওর দিকে চেয়ে দেখো, ওক। ক্লে মাগীটার জন্যে বাজার করতে এসেছে। তাহলে চাকরের ভূমিকাতেও তুমি আছ, খোঁড়া মিয়া?’

এরিখ উঠে দাঁড়াল। মাথায় আগুন ধরে গেছে ওর। রাগের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেহে। দোআঁশলার দিকে চাইল ও। স্টোরের সামনে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর মেক্সিকান চুচিলা হাতে। নখ পরিষ্কার করছে মনোযোগ সহকারে। রাস্তায় চলাচলরত মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে ওদের তিনজনকে ঘিরে। উত্তেজনার আভাস পেয়েছে তারা।

ক্র্যামার দরজায় এসে দাঁড়াল। ওর হাতে নতুন দুটো থলে। খালি ‘চলে যাও, এরিখ!’ অনুনয় করল ও।

এরিখ নিরুত্তরে ছড়ানো-ছিটানো জিনিসপত্র কুড়িয়ে নিয়ে আবার থলেয় ভরল।

‘ওগুলো ভাল করে মুছে নাও।’ ডগ বিদ্রূপ করল। ‘ক্লে মাগীটা আবার জিনিসপত্রের ব্যাপারে বড্ড খুঁতখুঁতে। অবশ্য পুরুষ মানুষ বাছার বেলায় দেখছি ততটা নয়।’

ছেড়ে দেয়া স্প্রিংয়ের মত লাফিয়ে উঠল এরিখ। ওর বাঁ হাতের ঘুসি ডগের চোয়াল থেঁতলে দিল; পর মুহূর্তে কোমরের কাছে ডান হাতের ঘুসি খেয়ে ঘুরে গেল সে। সাথে সাথেই মাথার পেছনে এরিখের ডানহাতের আরেক প্রচণ্ড ঘুসি ওকে ক্র্যামারের দোকানের দেয়ালের ওপর নিয়ে ফেলল। মাথা ঠুকে গড়িয়ে গেল সে দেয়াল থেকে ফুটপাথে এবং ওখান থেকে বৃষ্টিভেজা কর্দমাক্ত রাস্তায়।

ডগ ওর কোল্টের দিকে হাত বাড়াল, কিন্তু এরিখের সিক্সগান আগেই বেরিয়ে এল খাপ থেকে। ওটাকে অর্ধবৃত্তাকারে ঘুরিয়ে এরিখ একসঙ্গে দু’জনকেই কাভার করল।

‘ফেলে দাও ওটা, এরিখ নির্দেশ দিল ডগকে।

ডগ কোল্টটা এক পাশে ফেলে দিল। চোয়ালের ক্ষত থেকে রক্ত মুছে নিয়ে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকাল সে এরিখের হাতে উদ্যত সিক্সগানের দিকে। ‘ওটায় আমি তত চালু নই।’

সিক্সগান হোলস্টারে ঢুকিয়ে গানবেল্ট খুলে ফেলল এরিখ। ঠিক আছে। এসো।’

ডগ লেইকার উঠে দাঁড়াল। এরিখের কথা শেষ হবার আগেই মাথা নিচু করে ধেয়ে এল ওর দিকে। পর পর চারটে ঘুসি খেয়ে ওয়্যাগনের ওপর গিয়ে পড়ল এরিখ। ওয়্যাগনের গায়ে পিঠ ঠেকিয়ে একপাশে সরে যেতে চাইল ও। কিন্তু তার আগেই ডগের হাতের প্রচণ্ড ঘুসি খেলো মুখে। হাত এবং কনুইর সাহায্যে মুখ আড়াল করে ওয়্যাগনের পাশ থেকে সরে গিয়ে সামান্য পিছু হটল ও।

ডগ হাসল, দ্রুত এগোল সে বিজয়ী মুষ্টিযোদ্ধার মত মাথা নিচু করে আক্রমণ রচনা করতে করতে। এরিখের দিকে হাতুড়ি পিটানোর মত করে ছোট ছোট ঘুসি ছুঁড়তে লাগল। আচমকা এরিখের প্রচণ্ড বাঁ হাতি ঘুসি ওকে সোজা করে দিল। পরমুহূর্তেই এরিখের রাইট হুক রাস্তার ওপাশের ফুটপাথে নিয়ে ফেলল তাকে। চিৎ হয়ে পড়ল সে শক্ত ফুটপাথের ওপর। মুখ দিয়ে অশ্রাব্য খিস্তি বেরিয়ে এল তার, তীব্র ঘৃণা ফুটে উঠল দু’চোখে।

‘শখ মিটেছে?’ মৃদুকণ্ঠে প্রশ্ন করল এরিখ। হাঁফাচ্ছে সে, আহত পায়ে যন্ত্রণা বোধ করছে।

‘হ্যাঁ-হ্যাঁ, তুমি জিতেছ,’ লেইকার উঠে দাঁড়াল মুখ কালো করে।

এরিখ ঘুরে গানবেল্ট তুলে নেবার জন্যে এগোল। ডগ লেইকার পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর ওপর। আচমকা আক্রান্ত হয়ে টাল সামলাতে পারল না এরিখ, পর পর কয়েকটা ঘুসি খেয়ে আবার ওয়্যাগনের ওপর গিয়ে পড়ল। ওয়্যাগনের চাকায় মাথা ঠুকে গেল তার। লেইকার বুটসুদ্ধ পা তুলল লাথি হাঁকানোর জন্যে। স্পারের খোঁচা থেকে মুখ বাঁচাবার জন্যে এরিখ গড়িয়ে এক পাশে সরে গেল। লেইকারের বুট নেমে এল। এরিখের কনুইর চামড়া ছিঁড়ে নিল স্পার লাগানো বুট।

দাঁতে দাঁত চেপে ডগ লেইকারের পায়ের গোছা আঁকড়ে ধরল এরিখ তারপর সমস্ত শক্তি একত্র করে উঠে দাঁড়াল। ডগ টাল সামলাতে না পেরে চিৎ হয়ে পড়ল আবার। এরিখ তার ওপর চড়াও হয়ে অনবরত ঘুসি চালাল মুখ লক্ষ্য করে। লেইকার ওকে জাপটে ধরল। কাদামাখা রাস্তায় গড়াগড়ি খেতে লাগল ওরা। আচমকা ডগ উঠে দাঁড়াল নিজেকে মুক্ত করে। এরিখ উঠবার আগেই বুট চালাল সে। শেষ মুহূর্তে মাথা সরাতে গেল এরিখ, পারল না পুরোপুরি। মাথার এক পাশ আঁচড়ে দিয়ে নেমে গেল বুট। ওক এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে মারপিট দেখছিল, এবার হাই তুলে ছুরিটা খাপে ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে এগোল এরিখের দিকে 1

উঠবার চেষ্টা করল এরিখ। কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাস্যরত ডগ আর ওককে দেখে অসহায় বোধ করল। ডগের স্পার লাগানো বুটের লাথি ওর মাথার একপাশ আঁচড়ে দিয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করছে ও।

‘শক্ত লোক, না?’ ডগ হাসিমুখে বলল। ‘ভেবেছিলে তোমার সাথে আমরা কেউই পারব না। হাহ্!’

জেমস ক্র্যামার দোকানের ভেতর ঢুকল। বেরিয়ে এল আবার; একটা শটগান ওর হাতে। ডবল-ব্যারেল শটগানের দুটো হ্যামারই টেনে দেয়া।

‘ভাগো, টিকাউ,’ হুকুম দিল ও। ‘তাড়াতাড়ি সরে দাঁড়াও। আমার হাতের এটায় ট্রিগার টেনে দেবার আগেই। তোমার লড়াই নয় এটা।’

টিকাউ ক্র্যামারের দিকে তাকাল। থুতু ফেলে সরে দাঁড়িয়ে একটা খুঁটির গায়ে হেলান দিল সে। রাস্তায় মারপিট উপভোগরত মানুষগুলো এরিখ আর ডগকে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়াল। দ্রুত এগোল ডগ। এরিখ তৈরি হয়ে গেছে। লোকটা ঘুসি পাকিয়ে কাছে আসামাত্র দৃঢ়মুষ্ঠিতে ওর হাত ধরে ফেলল সে, টান দিল একদিকে। ডগ টাল সামলাতে না পেরে ঘুরে গেল, এরিখ ঘোরাতে লাগল ওকে চরকির মত।

ঘুরতে ঘুরতেই হাঁটু চালাল ডগ। বেমক্কা গুঁতো খেয়ে বাঁকা হয়ে গেল এরিখ। প্রচণ্ড আপারকাট চালাল ডগ ওর মাথায়। মুখ থুবড়ে পড়ে গেল এরিখ। ডগ হঠাৎ একখানা চেলাকাঠ তুলে নিল রাস্তা থেকে। এরিখের মাথার ওপর ঘোরাল সে ওটাকে। তারপর একটু ঝুঁকে আঘাত হানল।

মাথায় না লেগে আঘাতটা এরিখের গালে লাগল। মাংস কেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে এল ওর গাল থেকে। ডগ আবার ঝুঁকল আঘাত করার জন্যে। এরিখ বাম বাহুতে নিল আঘাতটাকে, তারপর সজোরে ঘুসি হাঁকাল ডগের পেটে। কলজের কাছে হাতুড়ির আঘাত খেয়ে অঁক করে উঠল লেইকার। চেলাকাঠ ফেলে দিয়ে দু’হাতে পেট চেপে ধরল, দমের জন্যে হাঁসফাঁস করতে লাগল ও ডাঙায় তোলা মাছের মত।

পেছন থেকে এরিখের ঘুসি খেয়ে টলতে টলতে উদ্‌ভ্রান্তের মত হেঁটে গেল লেইকার সঙ্কীর্ণ গলিপথ বেয়ে খাঁড়ির দিকে। লোকটাকে মেরে ফেলার তীব্র ইচ্ছেটা অতিকষ্টে দমন করল এরিখ। ডগ খাঁড়ির পাড়ে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াল, দুর্বল হাতে প্রতিরোধ করতে চাইল এরিখের বৃষ্টির মত আসতে থাকা ঘুসি। এরিখ ওর কাছে ভিড়ে গিয়ে দু’হাতে ঘুসি চালাল। ঘুসির চোটে ভারসাম্য হারাল উদ্ভ্রান্ত লেইকার। এরিখের রাইটহুক ওকে ছুঁড়ে ফেলল খাঁড়ির পানিতে।

‘জাহান্নামে যাও, গোঁ গোঁ করে শাসাল ডগ। ‘তোমাকে আমি খুন করব, দেখে নিয়ো।’

এরিখের মাথায় রক্ত চড়ে গেল আবার। লাফিয়ে খাঁড়ির পানিতে নামল সে-ও। বাঁ হাতে ডগের জামার কলার খামচে ধরে টানল তাকে নিজের দিকে। প্রবল আক্রোশে ঘুসির পর ঘুসি চালাল তার নাকে-মুখে। তারপর ঠেলে ফেলে দিল ওকে স্রোতের মধ্যে। চিৎ হয়ে পড়ল ডগ পানির ওপর। পানির স্রোত তার বুকের ওপর দিয়ে গড়িয়ে গেল।

বুটসুদ্ধ পায়ের লাথি হাঁকাল এরিখ ডগের মুখে। তারপর পা দিয়ে ঠেলে তার মাথাটা একখণ্ড পাথরের ওপর তুলে দিল, যেন দমবন্ধ হয়ে না মরে লোকটা। মুখ থেঁতলে গেছে ডগের। পাথরে মাথা রেখে হাঁ করে বাতাস টানল সে, মাথা নাড়ল।

এরিখ পানি থেকে উঠে এল। দোকানের সামনে এসে গালে হাত দিয়ে বিধে যাওয়া একটা কাঠের কুচি বের করে মুখ মুছল ও। রক্ত ঝরছে মুখ থেকে। আহত পায়ের তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেহে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে ওয়্যাগনের কাছে গেল ও। জড় হওয়া লোকগুলো লড়াই শেষ হওয়ামাত্র যে যার কাজে চলে গেছে। এরিখ গানবেল্ট পরে নিল।

ওক টিকাউ অর্ধনিমীলিত চোখে লক্ষ করছিল ওকে, এরিখ ওর কাছাকাছি হতেই মৃদুস্বরে বলল, ‘খুব শক্ত লোক, না? হয়তো আমার সাথেও তোমাকে লাগতে হতে পারে। সেদিনই প্রমাণ হবে।’ ওপরে-নিচে মাথা দোলাল ও।

এরিখ পাত্তা দিল না দোআঁশলাটাকে। নিজের হ্যাটটা কুড়িয়ে নিয়ে ওয়্যাগনের সীটে গিয়ে বসল। ক্র্যামার ওর হাতে লাগাম ধরিয়ে দিল। ‘এরিখ, এক্ষুণি চলে যাও। বোলতার চাকে ঢিল মেরেছ তুমি।’

এরিখ ঘাড় ফেরাল। ‘তাই?’

‘হ্যাঁ।’ ক্র্যামার বলে চলল, ‘তুমি দুঃসাহসী বটে, তবে এখন থেকে নিজেরও যত্ন নিয়ো।’ মালপত্রের দিকে ইঙ্গিত করল সে, ‘ওসব ফেলে দিয়ে ওয়্যাগনটাকে হালকা করে নাও, তারপর লেজ তুলে ভাগো, এরিখ।

এরিখ হাসল। ‘ধন্যবাদ। আমি এগুলো নিয়েই যাব। কথা দিচ্ছি, এগুলো খাবার জন্যেও বেঁচে থাকব ঠিকই।’

ওয়্যাগন চলতে শুরু করল রাস্তার মাঝখান দিয়ে। এরিখ তাড়া লাগাল খচ্চরগুলোকে, পেছন ফিরে তাকাল না একবারও।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *