আলফ্রেড নোবেল (১৮৩৩–১৮৯৬) – যাঁর নামে দেয়া হয় নোবেল পুরস্কার
যে নোবেল পুরস্কার বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান ও স্বীকৃতি, সেই পুরস্কার দেওয়া হয় যাঁর নামে এবং অর্থে, তাঁর নাম বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল (Alfred Nobel)।
তিনি কে ছিলেন, তাঁর আত্মপরিচয়ও তিনি নিজেই দিয়েছেন এভাবে :
“আলফ্রেড নোবেল একজন বিশ্ববিশ্রুত প্রতিভাশালী ব্যক্তি। তিনি সুইডেনে জন্মগ্রহণ এবং আমেরিকা ও রাশিয়াতে শিক্ষালাভ করেন। তিনি উগ্র বিস্ফোরক কারখানার প্রতিষ্ঠাতা, নাইট্রোগ্লিসারিন ও বিস্ফোরক দ্রব্যের তিনিই প্রথম আবিষ্কারক ও ব্যবহারকারী। তিনিই ডিনামাইটের আবিষ্কারক এবং সুইডেন, জার্মানি, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি দেশের ডিনামাইট নির্মাতা। শিল্পাঞ্চলে বিস্ফোরক কারখানা নির্মাণ করে তিনি প্রমাণ করেন যে, সে যুগে উন্নত ধরনের বিস্ফোরক আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা ছিল কী অপরিসীম!”
সেই তিনিই আবার তাঁর জীবন সম্পর্কে লিখে গেছেন আরেক মজার কথা। তাঁর এক ভাই যখন তাঁকে আত্মজীবনী লিখতে অনুরোধ করেন, তখন তিনি পরিহাচ্ছলে নিজের সম্পর্কে লিখেছিলেন :
১. আলফ্রেড নোবেল : কোনো ডাক্তারের উচিত ছিল জন্মমুহূর্তে তার শোচনীয় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানো।
২. প্রধান গুণাবলি : নিজে কখনও কারও পক্ষে বোঝাস্বরূপ ছিলেন না। তিনি রীতিমতো নখ পরিষ্কার রাখতেন।
৩. প্রধান প্রধান দোষ : তাঁর কোনো পরিবার ছিল না। তিনি ছিলেন বদরাগী ও পেটরোগা।
৪. কেবল একটি ইচ্ছে ছিল : যাতে জীবন্ত সমাধিস্থ না হন।
৫. সবচেয়ে বড় পাপ : তিনি অর্থলোলুপ ছিলেন না।
৬. স্মরণীয় ঘটনা : কিছুই না।
১৮৯৩ সালে তিনি করেছিলেন এ-রকমেরই আরেকটি মজার ঘটনা। সে বছর তাঁকে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি দেওয়া হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে নিজের সম্পর্কে লেখেন, “নিম্ন স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জীবনে কখনও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি। তিনি নিজের চেষ্টায় বিদ্যার্জন করেছেন। তিনি ফলিত রসায়ন বিজ্ঞানে নিজেকে আবিষ্কার করেন।”
১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে থেকেই তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি এবং প্যারিসের Societe des engenieurs civils-এর সদস্য ছিলেন। সারা জীবন তাঁর মাত্র একটি বই প্রকাশিত হয়। এটি ছিল তাঁর প্রদত্ত সমুদয় ভাষণের সঙ্কলন। তিনি একবার ইংরেজিতে নাকি মস্ত বড় একটি কবিতাও লিখেছিলেন। পৃথিবীর অনেকগুলো ভাষাও ছিল তাঁর আয়ত্তে।
ব্যক্তিগত জীবনে নোবেল ছিলেন খুব খিটখিটে মেজাজের। বিস্তর ধনসম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মনে শান্তি ছিল না। শারীরিক দিক দিয়েও তিনি অসুস্থ থাকতেন প্রায়ই। মাথাধরার রোগ ছিল তাঁর। তাই নিজের অফিসে কাজ করার সময়েও তাঁকে মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখতে হতো। এই ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য তিনি প্রায় সারাক্ষণই বিষণ্নতায় ভুগতেন। এ-ভাবে ধীরে ধীরে তিনি সবকিছুর ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে থাকেন। কারও সঙ্গে মেলামেশা পছন্দ করতেন না। তাঁর কেন যেন মনে হতো, যত লোক তাঁর কাছে আসে, তারা আসে শুধু স্বার্থের জন্যই।
এই বিচিত্র মানুষ আলফ্রেড নোবেল জন্মগ্রহণ করেন সুইডেনের স্টকহোমের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে, ১৮৩৩ সালের ২১ অক্টোবর। নোবেলের পিতা ইমানুয়েল নোবেলও ছিলেন একজন বিজ্ঞানী। কাঠের আসবাবপত্র ও কাঠের অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরির অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস, যা আজকাল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, প্লাইউড, তাঁরই আবিষ্কারক তিনি।
জন্মের পর থেকেই নোবেল ছিলেন রোগা। মায়ের একান্ত সেবাযত্ন এবং চেষ্টাকেই তিনি অকালমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। তাঁর জন্মের সময় তাঁদের পারিবারিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। বাবা ব্যবসায়ে লোকসান দিয়ে দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছিলেন। ফলে তিনি নোবেলসহ তাঁর চার ছেলেকে স্ত্রীর কাছে রেখে দেশ ছেড়ে ভাগ্যান্বষণে ফিনল্যান্ডে পাড়ি জমালেন।
চার বছর পর ১৮৪২ সালের দিকে ইমানুয়েল নোবেল স্ত্রীর কাছে খুশির খবর দিয়ে একটা চিঠি পাঠান। তাতে জানান, তিনি কয়লার খনিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আবিষ্কার করেছেন। তাঁর এই আবিষ্কার রাশিয়ার জারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং এখানে কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করতে পারলে প্রচুর আয় হবে। তাঁদের অভাব দূর হয়ে যাবে। তাই তিনি সবাইকে খুব শিগিরই তাঁর কাছে নিয়ে আসবেন।
অবশেষে তা-ই হল। দেশ ছেড়ে নোবেল বাবা-মায়ের সাথে সেন্ট পিটার্সবার্গে চলে যান ১৮৪২ সালের ১৮ অক্টোবর। সেখানে যাওয়ার পর তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হলো স্কুলে। আবার তাঁদের ভাঙা সংসারে হাসি ফুটল। নোবেল একজন সুইডিশ শিক্ষকের কাছে রুশ, ইংরেজি, ফরাসি এবং জার্মান ভাষা শিখতে লাগলেন।
পিতা ইমানুয়েল রাশিয়াতে একজন খনি-মালিকের সাথে শেয়ারে ব্যবসা করতে শুরু করেন। তিনি খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের এক নতুন যুগের সূচনা করেন। জার ভয়ানক খুশি হলেন তাঁর কৃতিত্বে। এ-জন্য তিনি তাঁর কাছ থেকে পুরস্কার হিসেবে লাভ করেন একটি স্বর্ণপদক পর্যন্ত। তখন তাঁর জমজমাট অবস্থা। শহরের অন্যতম সেরা ধনী ব্যবসায়ী।
তারপর বড় ছেলে রবার্টের বয়স যখন ২০, মেজো ছেলে লুডিগের ১৮ এবং আলফ্রেডের ১৬, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁর ছেলেদের আর পড়াশোনা করার দরকার নেই। তাঁর চেয়ে তারা তাঁর ব্যবসা দেখাশোনা করুক, সেটাই বেশি লাভজনক হবে।
তবে বিদেশ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার জন্য আলফ্রেডকে পাঠালেন তিনি দেশভ্রমণে। দু’বছর ধরে আলফ্রেড ইউরোপের নানা দেশ এবং আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহর ফিরে আসেন সেন্ট পিটার্সবার্গে। ফিরে এসে তিনিও বাবার সাথে জড়িয়ে যান আষ্টেপৃষ্ঠে।
১৮৫৪ সালে শুরু হয় ক্রিমিয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধের পর রাশিয়ার শিল্পকারখানার ওপর নেমে আসে দুরুণ বিপর্যয়। নতুন জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ব্যক্তিমালিকানাধীন সব ধরনের ব্যবসায়িক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারের আগেকার যাবতীয় চুক্তি বাতিল ঘোষণা করে বসেন।
এই বিপদের মধ্যেই তাদের জীবনে নেমে আসে আরেক চরম বিপর্যয়। পিতা ইমানুয়েলের কয়লা খনিতে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ফলে দেউলিয়া হয়ে গেলেন তিনি। যা কিছু উপার্জন করেছিলেন তিনি, এই দুর্ঘটনার ফলে সবই হারাতে হয় তাঁকে।
ছেলেরা এবার যে যার মতো পথ দেখতে লাগলেন। লুডিগ সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে একটি ছোটখাট কারখানা খুলে বসলেন। বড় ভাই রবার্ট ফিনল্যান্ডে গিয়ে খুলে বসলেন বাতি তৈরির ব্যবসা। আর আলফ্রেড বসে গেলেন বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ে।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় ইতালির জনৈক বিজ্ঞানী অ্যাসক্যানিও সবরেরোর আবিষ্কার করা নাইট্রোগ্লিসারিন নিয়ে তিনি আবার নতুন করে শুরু করলেন গবেষণা।
অবশেষে আলফ্রেড তাঁর ছোট ভাই, বাবা আর মাকে নিয়ে আবার ফিরে আসেন নিজের দেশ স্টকহোমে। এই নাইট্রো-গ্লিসারিন থেকেই তাঁরা নতুন ধরনের বিস্ফোরক আবিষ্কার করার চেষ্টা রতে থাকেন। ‘আলফ্রেড তাঁর ছোট ভাই অস্কার এমিলকে নিলেন সাথে নিলেন তাঁর গবেষণাকাজের সহযোগী হিসেবে। এমিল তখন স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের অনার্সের ছাত্র।
এই অবস্থায় ঘটল একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আলফ্রেড সেদিন গিয়েছিলেন শহরের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী জে. ডব্লিউ. স্মিটের কাছে কিছু অর্থসাহায্যের জন্য। কারখানায় তখন দু-চারজন শ্রমিক কাজ করছিলেন। এমন সময় ল্যাবরেটরিতে সংঘটিত বিস্ফোরণে তাঁর ছোট ভাই এমিলসহ দুজন লোকের ঘটনাস্থলেই করুণ মৃত্যু হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ তাঁর ল্যাবরেটরি বন্ধ করে দিয়ে ঘোষণা করেন, শহরের মধ্যে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্যের কারখানা বা গবেষণাগার থাকতে পারবে না। আলফ্রেডের বিরুদ্ধে মামলাও হলো।
মামলায় অবশ্য শেষ পর্যন্ত জয় হয় আলফ্রেডেরই। তিনি যুক্তি দেখান, তাঁর কারখানার কাজ বিপজ্জনক বটে, জীবনের ঝুঁকিও আছে, কিন্তু এই গবেষণার পেছনে নিহিত আছে গোটা মানবসমাজের জন্য বৃহত্তর কল্যাণের একটা বিষয়। তাই ল্যাবরেটরি বন্ধ হতে পারে না। মামলায় জিতে আবার ল্যাবরেটরি চালু করলেন আলফ্রেড।
নোবেলের বাবা ইমানুয়েলই প্রথম নাইট্রোগ্লিসারিন তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তিনি প্রথমে গ্লিসারিন এবং নাইট্রিক অ্যসিডের মিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি করেন নাইট্রোগ্লিসারিন। তখন এই তেলকে বলা হতো বিস্ফোরক তেল। সামান্য আঘাত পেলেই এই তেলে ঘটত প্রচণ্ড বিস্ফোরণ।
কিন্তু নোবেল তেলের সাথে কিসেলগার মিশিয়ে একে ত্রুটিমুক্ত করেন। এটাই আলফ্রেড নোবেলের আবিষ্কৃত ডিনামাইট (Dynamite)।
পরে তিনি নাইট্রোগ্লিসারিনের সাথে কলোডিয়ল মিশিয়ে তৈরি করেন ব্লাস্টিং জেলাটিন তিনি নাইট্রোগ্লিসারিনের সাথে নাইট্রোসেলুলোজ মিশিয়ে তৈরি করেন ধোঁয়াবিহীন পাউডার।
১৮৬৫ সালে তিনি একজন জার্মান অংশীদারের সহযোগিতায় নোবেল অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুরেন। পরে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন অন্য একটি কোম্পানি। নোবেল তাঁর বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় বাকুতে একটি তেল কোম্পানি স্থাপন করে উপার্জন করেন প্রচুর অর্থ।
ডিনামাইটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলফ্রেডের কারখানার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রাওগের কাছে বোহেমিয়াতে স্থাপিতও এবং এর কিছুদিন পর জায়ান্ট পাউডার কোম্পানি নামে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতেও স্থাপিত হয় আরও দুটি কারখানা। এতদিন তাঁর নাইট্রোগ্লিসারিন এবং ডিনামাইট শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হতো। এবার অনেকে একে ব্যবহার করতে শুরু করে ধ্বংসাত্মক কাজে।
যেমন ফরাসি-প্রুশীয় যুদ্ধের সময় প্রুশিয়ার সৈন্যরা প্রতিপক্ষের সড়ক, পুল ও প্রতিরক্ষা-প্রাচীর ইত্যাদি ধ্বংস করতে থাকে ডিনামাইটের সাহায্যে। জার্মান সৈন্যরা বোমার মধ্যে ডিনামাইট ভরে তা নিক্ষেপ করতে থাকে প্রতিপক্ষের সৈন্যদের ওপর।
১৮৭১ সালে ব্রিটেনে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটশ ডিনামাইট কোম্পানি। গ্লাসগোর কাছে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানা স্থাপনের কাজ তিনি নিজেই তদারক করেন।
এই সময়ই তাঁর পিতা ইমানুয়েল নোবেল মারা যান। করখানা তৈরির কাজ শেষ হলে নোবেল প্যারিসে বাড়ি তৈরি করে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। ১৮৮১ সালে তিনি সেখানে আরও বেশি যন্ত্রপাতি সজ্জিত করে একটি ল্যাবরেটরি তৈরি করেন। ইতিমধ্যে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স তাঁকে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য মনোনীত করে।
তিনি ১৮৮৭ সালে নোবেল আবিষ্কার করেন ব্যালিস্টাইট নামে আরেক ধরনের বিস্ফোরক।
১৮৯১ সালে তিনি প্যারিস ছেড়ে ইতালির স্যালরিমোতে এসে একটি বাড়ি কিনে সেখানেই বসবাস করতে শুরু করেন। ১৮৯৩ সালে সুইডিশ ইউনিভার্সিটি আলফ্রেড নোবেলকে ডক্টর অব ফিলসফি উপাধিতে ভূষিত করে। এই স্যালরিমোতেই তিনি আবার নতুন গবেষণায় মেতে ওঠেন। ১৮৯৪-৯৫ সালে তিনি আবিষ্কার করেন কৃত্রিম রাবার গ্যাটাপার্চ এবং চামড়া উন্নত করার পদ্ধতি।
তাঁর প্রধান আবিষ্কার ডিনামাইট ছিল এক মহাধ্বংসকারী বিস্ফোরক। এতে বহু লোকের প্রাণহাসির ঘটনা ঘটে। এতে তিনি খুবই মর্মাহত হন। তাই তিনি মৃত্যুর আগে একটি উইল করে যান। তিনি ছিলেন চিরকুমার। তাঁর এই উইল অনুয়ায়ী প্রতি বছর তাঁর নামে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীগুণীদের তাঁদের অবদানের জন্য পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর জন্য তিনি তাঁর তহবিলে নব্বই লাখ ডলার মূলধন রেখে যান। এই বিশাল অঙ্কের টাকার মুনাফা থেকে প্রতি বছর পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য ও শান্তির ক্ষেত্রে বিশ্বে যাঁরা অমূল্য অবদানের অধিকারী, প্রতি বছর তাঁদেরকে পুরস্কৃত করা হয়ে থাকে।
এই বিস্ময়কর উইলের কথা জানা যায় তাঁর মৃত্যুর পর। মহাধ্বংসকারী বস্তু ডিনামাইট আবিষ্কার করে তিনি যে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন, তার সমুদয় অর্থই তিনি দান করে যান সৃষ্টির কাজে। উইল অনুসারে তিনি এই পুরস্কার দেওয়ার ভার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত করে যান। পদার্থ, অর্থনীতি (নোবেলের মৃত্যুর পরে সংযোজিত) ও রসায়নশাস্ত্রে পুরস্কার দেওয়ার ভার পড়ে স্টকহোমের বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির ওপর। সাহিত্যে পুরস্কার দেয়ার দায়িত্ব পড়ে সুইডিশ অ্যাকাডেমি, চিকিৎসাশাস্ত্রে পুরস্কার দেয়ার দায়িত্ব পড়ে কারোলিন মেডিকেল ইনস্টিটিউট-এর ওপর এবং শান্তির জন্য পুরস্কারের ভার দেওয়া হয় নরওয়ের পার্লামেন্ট নিযুক্ত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটির ওপর।
১৮৯৬ সালের শীতকালেই তাঁর শরীর ভেঙে পড়তে থাকে। বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল মারা যান ১৮৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর। প্রতি বছর তাঁর মৃত্যু-দিবস ১০ ডিসেম্বর তারিখে এই পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণা দেয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয় একটি মোটা অঙ্কের চেক, নোবেলের প্রতিকৃতি অঙ্কিত একটি সোনার পদক এবং একটি সার্টিফিকেট। উল্লেখ্য, ১৯০১ সাল থেকে উল্লিখিত শাখাসমূহে অনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নামাঙ্কিত নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে এই পুরস্কার লাভ করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এশয়া মহাদেশে এই পুরস্কার তিনিই প্রথম লাভ করেন।