• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

৭৮. কুমারীর ব্রত

লাইব্রেরি » তসলিমা নাসরিন » প্রবন্ধ সংকলন (তসলিমা নাসরিন) » নির্বাচিত কলাম (১৯৯০) » ৭৮. কুমারীর ব্রত

কুমারীর ব্রত

কুমারী শব্দটির অর্থ অবিবাহিত নারী। দশ থেকে ষোল বছর বয়সের অনূঢ়া কন্যাকেও কুমারী বলে। কুমারী নারীর প্রতি পুরুষের প্রবল আকর্ষণ সমাজের সর্বত্র বিরাজমান। পুরুষের আকর্ষণ যেন কিছুতেই হ্রাস না পায় এবং ঈশ্বরও যেন কুমারীর প্রতি বিশেষ নজর রাখেন—তাই সমাজের ভাল মানুষেরা কুমারী মেয়েদের সতীত্ব রক্ষার ব্যাপারে নানাবিধ উপদেশ বর্ষণ করেন এবং ‘ব্রত’ পালনের ব্যবস্থা করেন। হিন্দু ধর্মে কুমারীদের জন্য বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন ব্রতের নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। বৈশাখ মাসে শিবব্রত, পুণ্য পুকুর, দশ পুতুল, হরির চরণ, অশ্বখ পাতা, গোকুল ও পৃথিবী ব্ৰত; কার্তিক মাসে যম পুকুর ব্ৰত; অগ্রহায়ণ মাসে–সেঁজুতির ব্ৰত; পৌষ মাসে তুঁষ-তুষলী ব্ৰত; এইসব ব্রতে নানারকম মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়। প্রতিটি মন্ত্রের মূল কথা—সতী হওয়া, স্বামী পাওয়া, পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়া, ভাল রাঁধুনি হওয়া, সধবা অবস্থায় মৃত্যু হওয়া এবং সাত ভাইয়ের এক বোন হওয়া। পুণ্যি পুকুর ব্রতে পুকুরে জল ঢালবার মন্ত্র—পুণ্যি পুকুর পুষ্প-মালা/কে পূজেরে দুপুর বেলা?/আমি সতী লীলাবতী/সাত ভা’য়ের বোন ভাগ্যবতী।/এ পূজলে কি হয়?/নির্ধনীর ধন হয়।/সাবিত্রী—সমান হয়।/স্বামী আদরিণী হয়৷/পুত্র দিয়ে স্বামীর কোলে।/ মরণ-যেন হয় গঙ্গাজলে॥/দশ পুতুল ব্রত করতে হয় মেয়েদের পাঁচ বছর বয়স থেকে। এই ব্রতের মন্ত্র—এবার মরে মানুষ হব, রামের মত পতি পাব।/এবার মরে মানুষ হব, সীতার মত সতী হব।/এবার মরে মানুষ হব, দশরথের মত শ্বশুর পাব।/এবার মরে মানুষ হব, কৌশল্যার মত শাশুড়ি পাব। এবার মরে মানুষ হব, কুন্তীর মত পুত্রবতী হব। এবার মরে মানুষ হব, দ্রৌপদীর মত রাঁধুনি হব৷/এবার মরে মানুষ হব, পৃথিবীর মত ভার সব।

কোনও ব্রত বা মন্ত্র নারীর বানানো নয়। বানিয়েছে পুরুষ। এইসব ব্রত মূলত নারীকে স্বামী-পুত্র-সংসারের আকাঙক্ষায় নিমগ্ন রাখবার কৌশল। নারী যেন কখনও বুঝতে না পারে যে সেও মানুষ। স্বামী পুত্র সংসারের বাইরে নানা কাজে দক্ষতা দেখাবার অধিকার তারও আছে। সেও অশ্বারোহী হতে পারে, সেও সন্মুখ সমরে জয়ী হতে পারে। সেও বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষক, শ্রমিক, চিত্রকর, কবি ও রাষ্ট্রপতি হতে পারে।

হরির চরণ ব্ৰতে মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়—কোন যুবতী পূজে পা/সে যুবতী কি চায়?/রাজেশ্বর স্বামী চায়,/দরবার জোড়া ব্যাটা চায়,/… গোয়ালে গরু, মরায়ে ধান,/ বছর বছর পুত্ৰ পান।/ না দেখেন স্বামী পুত্রের মরণ।/ না দেখেন বন্ধু-বান্ধবের মরণ।/ হবে পুত্র, মরবে না।/ চক্ষের জল পড়বে না।/ দিয়ে ছেলে স্বামীর কোলে/মরণ যেন হয়,/এক গলা গঙ্গাজলে।

অশ্বত্থ পাতা ব্ৰতে মন্ত্র পড়তে হয়—পাকা পাতাটি মাথায় দিলে পাকা চুলে সিঁদুর পরেত।/ কাঁচা পাতাটি মাথায় দিলে কাঞ্চন মূর্তি হয়। কচি পাতাটি মাথায় দিলে নবকুমার কোলে হয়।

সেঁজুতি ব্রতের মন্ত্রে আছে—খাট পালঙ্ক, লেপ, দোলঙ্গ, গির্দে আশে পাশে/রূপযৌবন, সদাই সুখী, স্বামী ভালবাসে।/ পাড়াপড়শি, প্রতিবাসী, মেী বর্ষে মুখে।/ জন্ম এয়োতী পুত্রবতী, জন্ম যায় সুখে।

মূলত একই মন্ত্র ঘুরে ফিরে বছরব্যাপী ব্রতে উচ্চারিত হয়। মন্ত্রে যা উচ্চারিত হয়, সংসার সমাজে একই কথা উচ্চারিত হয়। ভিন্ন কিছু নয়। কুমারীর জন্য যে ব্ৰত সাধনার নিয়ম ছিল আজ থেকে হাজার বছর আগে, সেই নিয়ম একটু এদিক ওদিক করে এখনও প্রচলিত। ব্রত পালন আজকাল অনেকেই হয়ত করে না। কিন্তু ব্রতের ওই মন্ত্রের সুর মস্তিষ্কের কোষে কোষে, রক্তের প্রতি কণিকায় গোপনে বাজে। এ থেকে মুক্তি নেই কারও। প্রতিটি মেয়ের ভেতরে শৈশব থেকে স্বামী পুত্র সংসারের স্বপ্ন রোপন করা হয়। এই স্বপ্ন মহীরুহ হয়ে নারীকে শত খণ্ডে খণ্ডিত করে। পুরুষের ঔরসে পুরুষ জন্ম দেওয়াই নারী জন্মের সার্থকতা। নারীর নিজস্ব কোনও অস্তিত্ব নেই, যেন নারীর জন্মই হয়েছে পুরুষকে সেবায় ও সঙ্গমে তৃপ্ত করা, নিজের জরায়ুতে পুরুষ-সন্তান ধারণ করে পুরুষেরই বংশ বিস্তার করা।

কোনও ব্রতেই কন্যা সন্তানের আকাঙক্ষা নেই, কোনও ব্রতে স্বামী ছাড়া, স্বামীকে তৃপ্ত করা ছাড়া অন্য কোনও স্বপ্ন নেই। এবং এখনও নেই—যখন নারী আর কুমারী ব্রত পালন করে না, যখন নারী বই-খাতা হাতে স্কুলে যায়, কলেজে যায়, অফিসে-আদালতে চাকরি করতে যায়, এখনও একই বৃত্তে নারী আবর্তিত হয়, একই সংস্কারের কুয়োয় নারী পতিত হয়।

কেন এই আবর্তন? নিশ্চয় এই কারণে, যে শিক্ষা ও সংস্কার আশ্রয় করে মানুষ গড়ে উঠছে, তা সুস্থ নয়। ভিতে ফাটল রেখে সাততলা দালান হয়ত ওঠানো যায়, কিন্তু টেকে না। এক ধ্বংসস্তুপের ওপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি। এই কথা স্পষ্ট করে কেউ জানছে না যে নারী মানুষ। নারীর নারীত্ব ও মাতৃত্বের চেয়ে নারীর ব্যক্তিত্ব বড়। নারীত্ব ও মাতৃত্বের যে ব্যাখ্য প্রচলিত, তা পুরুষের স্বার্থে পুরুষেরই বানানো এক সিদ্ধান্ত।

নারী তার শরীরে জরায়ু ধারণ করে, কিন্তু জরায়ুর স্বাধীনতা ধারণ করে না। জরায়ুতে সন্তান বহন করবার এবং না করবার স্বাধীনতা নারীর নেই, নারীকে বলা হয় মাতৃত্বে নারীর সার্থকতা। নারী তা-ই মানে। একটি মিথ্যেকে লালন করে নারী সারা জীবন বাঁচে। জরায়ু নারীর। নারীই নির্ধারণ করবে এই জরায়ুতে সে কিছু ধারণ করবে কি করবে না। জরায়ুতে সন্তান ধারণের নানারকম শর্ত পুরুষেরা আরোপ করেছে। যেমন—বিবাহ (স্বামী-সঙ্গ ছাড়া নারী সন্তানবতী হতে পারে না), বংশ (বংশ রক্ষার কাজ কন্যা দিয়ে চলে না, তাই পুত্রের প্রয়োজন), মাতৃত্ব (যেহেতু মাতৃত্বে নারী জন্মের সার্থকতা, তাই নারীজন্মকে সার্থক করতে হবে)। শর্ত থাকবার অর্থ জরায়ু । যার, জরায়ুর ওপর তার কোনও ইচ্ছে অনিচ্ছের অধিকার চলবে না।

মেয়েদের ব্রত কথায় মেয়েরা ‘পুত্রকে স্বামীর কোলে’ রেখে মৃত্যুবরণ করতে আগ্রহী। স্বামী সাধারণত মেয়ের চেয়ে বয়সে দ্বিগুণ, ত্রিগুণ বা চতুর্গুণ হত (যে সময় ব্ৰত কথার জন্ম)। স্বামীর কোলে পুত্র রেখে, স্বামীর আগে মরে যাওয়া নিশ্চয় অল্প বয়সে মরে যাওয়া। নিজের অকালমৃত্যু কামনাও পুরুষের জন্য এমন এক সুবিধা তৈরি করা যেন পুরুষ এক জীবনে বহু-স্ত্রী ভোগ করতে পারে এবং যেন তারা শতায় বা দীর্ঘায়ু হয়। বহু স্ত্রী ভোগ করবার কথা এইজন্য যে, এক স্ত্রীর অকালমৃত্যু হলে আরেক স্ত্রীর প্রয়োজন জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। তা ছাড়া স্বামীহীনতা নারীর জন্য এত অকল্যাণকর, এত ভয়াবহ এবং দুর্বহ যে নারী স্বামীহীনতা মোটেও সহ্য করতে চায় না। তাই মাথায় সিঁদুর রেখেই মরতে চায়।

একথা সর্বত্র অত্যন্ত স্পষ্ট যে, পুরুষের কাজে সহায়তা করবার জন্যই নারীর জন্ম। নারী নিজের কোনও কাজের জন্য, নিজের কোনও আনন্দের জন্য জন্মায় না। তার একটি একক অস্তিত্ব এখনও স্বীকার্য নয়।

এখনও নারী একক এক ব্যক্তি হিসেবে, পৃথক একটি মানুষ হিসেবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনযাপন করবার অধিকার অর্জন করেনি। তার জন্ম কারও বংশ রক্ষা করে না। নারীর জন্ম কোনও উপার্জনের উৎস নয়। নারী কেবল পুরুষের লালসা নিবারণ করবে এবং তাকে পুত্রসন্তান উপহার দেবে। এই সব বদ্ধমূল সংস্কার উপড়ে ফেলে নারী যদি মানুষ হিসেবে একাকি না দাঁড়ায় তবে সংস্কারের কেবল বিস্তারই হবে, বিনাশ নয়।

রচনাকাল ১৯৮৯-’৯০

Share on FacebookShare on TwitterShare on WhatsAppShare on TelegramShare on SMS
Category: নির্বাচিত কলাম (১৯৯০)
পূর্ববর্তী:
« ৭৭. নীতিকথার কাহিনী লেখা সহজ

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑