• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

৫৮. শব্দের অপচয়

লাইব্রেরি » তসলিমা নাসরিন » প্রবন্ধ সংকলন (তসলিমা নাসরিন) » নির্বাচিত কলাম (১৯৯০) » ৫৮. শব্দের অপচয়

শব্দের অপচয়

সাহিত্য করতে এসে ভালর চেয়ে আমার মন্দ কিছু কম হয়নি। অবশ্য সকল মন্দ অতিক্রম করে । যাবার সাহস আমার ছিল বলে সম্ভবত এখনও বেঁচে আছি, এবং বেশ স্পর্ধা করে এও বলতে পারি যে বেঁচে থাকব।

আমার বাবা, মা বরাবরাই আমার ওপর খুব অসন্তুষ্ট। আমার প্রতাপশালী বাবা কবিতার চেয়ে স্ট্যাটিক্‌স ডিনামিক্‌সের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাতেন, মেডিসিন সার্জারি মুখস্ত হলে আমার জন্য বুড়ি ভরে আঙুর আপেল কিনে আনতেন। আমার ধর্মান্ধ মা কবিতার চেয়ে বেশি পছন্দ করতেন নামাজ রোজা। বিকেলটা অনর্থক লেখালেখিতে নষ্ট না করে কোরানের কিছু আয়াত পড়তে বলতেন।

একটি সাদা কাগজে কবিতা লিখে আমার বড় ভাইকে একদিন পড়তে দিয়েছিলাম। বড় ভাই বললেন—কাগজ দিয়ে এরোপ্লেন বানাতে জানিস? এই দেখ। বলে কাগজটিকে ভাঁজ করে এরোপ্লেন বানিয়ে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলেন।

আমার ছোটবোন খুব চকলেট পছন্দ করত। একবার তার হাতে দু’ প্যাকেট চকলেট গুঁজে দিয়ে বলেছিলাম—দেখ তো কবিতাখানা কেমন হয়েছে? ছোটবোন মুখে চকলেট পুরে, গালের একদিকটা উঁচু বানিয়ে খুব গম্ভীর কণ্ঠে বলল—রবীন্দ্রনাথের মত লিখতে পার না?

তবু থামিনি। গোপনে লিখে গেছি। গোপনেই পত্রিকায় ছাপতে দিয়েছি। পত্রিকায় ছাপা হলে বাড়ির সকলে উল্টেপাল্টে বলেছে—না, মন্দ হয়নি।

লিখতে লিখতে ছিয়াশিতে প্রথম খুব সাহস করে কবিতার বই বের করলাম। বইটি ছাপবার দায়িত্ব ছিল আমার, কথা ছিল নসাস প্রকাশনী বইটির বাঁধাই ও পরিবেশনার দায়িত্ব নেবে। সে বছর ফেব্রুয়ারি প্রায় পেরোয় পেরোয়, এমন সময় কাঁচা বই মেলায় এল, তাও আটচল্লিশ পৃষ্ঠার জায়গায় চল্লিশ পৃষ্ঠা। তখন আকাশ কালো করে ঝড় নামছে, রাত অনেক, সেই ঝড়জলের রাত পেরিয়ে পুরানো ঢাকায় বাঁধাইওয়ালার বাড়ি খুঁজে বের করলাম। বাঁধাইওয়ালা প্রায় ধমকে উঠল—যা হয়েছে, হয়েছে। নতুন বাঁধাই হবে না। শুনে কী ভীষণ কেঁদেছিলাম সে রাতে!

এরপর মাঝে-মধ্যে খুব ভয়ে ভয়ে নসাসে যেতাম বিক্রি-টিক্রির টাকা পয়সা কিছু পাওয়া যায় কিনা। প্রকাশনীর মালিক প্রতিবারই বলতেন—মাস দুই পর আসুন। এরপর বছর দুই পর বইয়ের প্রায় সবগুলো বাণ্ডিল ফেরত নিয়ে এলাম, বই সব পোকায় কাটা।

তিন বছর গেল, আবার গাঁটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশের শখ চাপল। বইয়ের ছাপা প্রায় শেষ। খালিদ আহসান প্রচ্ছদ করে দিচ্ছেন। একদিন খালিদ আহসান এবং কবি হেলাল হাফিজ দুজনই অনিন্দ প্রকাশনীর নাজমুল হককে অনুরোধ করলেন আমার বইটির দায়িত্ব নিতে। আমিও উপস্থিত ছিলাম, নাজমুল হক প্রথম কিছুটা ইতস্তত করলেও পরে রাজি হয়েছিলেন। অথচ আমিই সকলকে স্তম্ভিত করে বলেছিলাম—বইটি আমি অনিন্দ্যকে দেব না। নিজেই ছাপব।

আমি এখন জানি না, গোপনে গোপনে অত অহঙ্কার আমার কোথেকে জন্মাল। আমি সেই অহঙ্কারে ভর করেই দেখেছি মাত্র তিন মাসে আমার সাড়ে বারো শ’ বই বিক্রি হয়ে গেছে। এরপর অন্য এক প্রকাশনী বইটির চতুর্থ মুদ্রণও শেষ করে এনেছে। এখন নানা প্রকাশনী বই ছাপতে বাড়ি অবধি ধর্না দেয়।

আমার কবিতা নিয়ে নানা জনের নানা মত। কেউ খুব উচ্ছসিত, কেউ আবার বলে অনুভূতিগুলো ব্যক্তিগত। ব্যক্তিগত অথবা সমষ্টিগত যা-ই হোক না কেন, অনুভূতিগুলো স্পষ্ট, আমি নিজের অথবা অপর কারও জীবন থেকে যদি এই অনুভূতি ধার নিয়েই থাকি—আমার সাফল্য ওখানেই যে, যে কবিতাগুলোকে আমার ব্যক্তিগত বলে অভিযোগ করা হয়েছে, সে কবিতাগুলোর জন্য অন্তত হাজার দুই চিঠি এসেছে, চিঠি যারা লিখেছে অধিকাংশই নারী, লিখেছে কবিতাটিতে তাদের জীবনের কথা লেখা হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারটি যখন আর অনেকের ব্যক্তিগত হয়ে দাঁড়ায়—তখন সম্ভবত সেটি আর ব্যক্তিগত থাকে না। দু’হাজার চিঠি সংখ্যা হিসেবে বেশি নয়। কিন্তু ওরা প্রতিনিধিত্ব করছে আরও অনেকের। সব মিলিয়ে সমষ্টি যা দাঁড়ায় তা একেবারে হতাশ করবার মত কিছু নয়। আর শুধু চিঠিই বা বলি কেন, সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়ে আমি কি তাদের বেদনার নাগাল পাইনি?

বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমাকে এগোতে হয়। প্রতিবন্ধকতা এ জীবনে যেমন জুটেছে, ভালবাসাও পেয়েছি কিছু কম নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে সিলেট থেকে এসেছে একটি আঠারো উনিশ বছর বয়সের ছেলে। বই মেলায় আমাকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠল। বলল কেবল আপনাকে একটিবার দেখতে সিলেট থেকে ঢাকা এলাম। আমার বাবা-মা-বোন আপনার লেখা এত বেশি পছন্দ করে যে আমি আপনাকে নিমন্ত্রণ করতে এসেছি সিলেটে বেড়াতে যাবার, আমাদের বাড়িতে। আপনি একদিন আসুন, এই আমাদের ফোন নাম্বার, আপনি যাবেন জানালে আমি এসে রিটার্ন টিকিট দিয়ে যাব। এই বিনীত ছেলেটি আমার বইগুলোয় অত্যন্ত আগ্রহ করে অটোগ্রাফ নিল। এর কিছু পর, একই বয়সের আরেকটি ছেলে এসে ‘বিপরীত খেলা’ নামে আমার একটি কবিতা দেখিয়ে বলল—আমি দশ টাকায় বিক্রি হতে চাই।

আমি চমকে বললাম–মানে?

ছেলেটি বলল—এই কবিতায় আপনি দশ পাঁচ টাকায় ছেলে কিনতে চেয়েছেন।

আমি খুব গম্ভীর হয়ে বললাম–ওটি কবিতা।

ছেলেটি বলল—কেবল কবিতা?

আমি বললাম–হ্যাঁ, কেবল কবিতা।

ছেলেটি চলে গেল। ওর দুঃসাহস দেখে আমি অবাক হলাম। তাই বলি, কবিতা লিখতে এসে চারদিক দেখে শুনে আমি কম বিস্মিত হইনি। বিস্মিত হবার আরও একটি গল্প আছে। সেদিন, এক ভদ্রলোক প্রায় ঘণ্টাখানেক আমার কবিতার প্রশংসা করলেন এবং উপসংহারে বললেন—আপনার ন’ বছর বয়সে যে ঘটনাটি ঘটেছিল তা খুব চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম—আমার ন’ বছর বয়সে মানে?

ভদ্রলোক বললেন—আপনার ‘দুরারোগ্য আঙুল’ কবিতাটির কথা বলছি।

আমি অবাক হয়ে বললাম–ওতে কী আছে?

—সেই যে আপনি শশিকান্তর রাজবাড়ি দেখতে চেয়েছিলেন, আর সেই বুড়ো…

এরপর আমি হাসব কি কাঁদব ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি।  বললাম—আপনাকে কে বলল ওটি আমার নিজের গল্প?

ভদ্রলোক চুপসে গেলেন। আমি বুঝিয়ে বললাম—এই সমাজে মেয়ে-বাচ্চারাও কী করে অপদস্থ হয় আমি তার একটি সরল বর্ণনা করেছি মাত্র। ‘আমি’ নামে লেখার মানে—সকলের বেদনাগুলো আমি আমার ভেতর ধারণ করি বলে ‘আমি’ নামে লিখতে আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বাট দিস ইজ নট মাই অটোবায়োগ্রাফি।

ওরকম কোনও ঘটনা আমার জীবনে ঘটেনি বলে আমি কিন্তু কোনও গর্ব করছি না। ঘটতেও পারত, কিন্তু এই সমস্যাগুলো আমার বা তার সমস্যা হিসেবে কেন বিবেচিত হয়, একবার সকলে মিলে এই কথাটি ভাবে না কেন যে এ সমস্যা আমাদের। আমাদের সকলের।

পাঠক বাড়ছে, কিন্তু এই পাঠক বেড়ে কি লাভ, যে পাঠক কোনও সমস্যাকে সকলের করে ভাবে না। আর সকলের অনুভূতিগুলো নিজের ভেতর ধারণ করে না। এও তো তবে এক ধরনের ক্ষতি, শব্দের অপচয়।

Category: নির্বাচিত কলাম (১৯৯০)
পূর্ববর্তী:
« ৫৭. যত যে রাণী হোক, সে তো নারীই
পরবর্তী:
৫৯. ভাগ্যবানের বউ মরে, আর অভাগার গরু মরে »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑