গৃহযুদ্ধের আগে

চাঁদটা কি আরকে-ডোবানো অকালজাত শিশুর মতো
দলাপাকানো? হাওয়ায় কী একটা প্রেতগন্ধ ঘোরাফেরা
করে সর্বক্ষণ, অনবরত
গুমরে উঠছে দেয়ালগুলো, গলা-চেরা
অদ্ভুত চিৎকারে ঘুম
ভেঙে যাচ্ছে সব্বার, এ শহর আর
বাসযোগ্য নয়, মাঝে মধ্যে কী নিঃঝুম
লাগে, যতক্ষণ জেগে না ওঠে আবার হাহাকার।

ঝাড়লণ্ঠনের আলো, টুংটাং আওয়াজ,
নূপুর ধ্বনি, চেনা
গুঞ্জন, কিছুই তাকে আজ
পেছনে আটকে রাখতে পারছে না।

তার গায়ে লেগে প্রতিটি শব্দ পিছলে পড়ে, এক ঝটকায়
বেরিয়ে যায় পুরানো দালান ছেড়ে। কে কাকে
কোথায় লটকায়?
চোরকুঠুরিতে না কি গাছে?
কে যেন ডাকে
তারানা বাঈ-এর গলায়; সে কি আছে
এখনো মাইফেলে এই খাঁ খাঁ দুপুরে?
পিছু ডাকে কাজ হবে না, নেমে
এসেছে সে রাস্তায়, বাসি রাতের এস্রাজি সুরে
দিনের পথিক হঠাৎ থেমে
যাবে না; তার জন্য কোনো পালকি-বেহারা
অথবা মোটরকারের দরকার নেই।
হারিয়ে ফেলেনি খেই।

তোমরা কেউ জিগ্যেম কোরো না, ইতিমধ্যে কারা
দেশান্তরী হয়েছে, কাদের ঘর
ছারখার, কে কে মারা
গেছে অর্থাৎ নিহত; কারা পায়নি আশ্রয় কিংবা কবর।
চলছে সে কোন দিকে? উত্তরে না দক্ষিণে?
পূর্বে? পশ্চিমে? অবান্তর এসব প্রশ্ন। নিঃশ্বাসে
যতক্ষণ জোর আছে হাঁটবে, দৌড়ুবে, পথ নেবে চিনে,
দম ফুরুলেই উঠে পড়বে দূরগামী বাসে।

বসে বসে ওর কি আসছে ঢুলুনি?
এরকম হলে নাস্তানাবুদ। গন্তব্যে এসে
চলে গেলে সে দাঁড়াবে কোথায়? গন্তব্যই বা
কোথায়? ‘শুনি,
বন্দুকের আওয়াজ’, বলে কেশে
থুতু ফেলে আশেপাশে দৃষ্টি বুলোয়।
না, এখনো সময় হয়নি নামার।
চোখ অন্ধ হয়ে আসে ধুলোয়,
রঙ বদলে যায় জামার।