নিভিয়ে এক ফুঁয়ে

আকাশ যেন আজ ঠাণ্ডা ভারী কাঁথা
ময়লা ফুটো দিয়ে মারছে উঁকি তারা।
পায় না মনে ঠাঁই ঘরে ফেরার টান,
কলিংবেল দিলো ঝাঁকুনি সন্ধ্যাকে।

পাশের ঘরে এই কবিকে তাড়াতাড়ি
লুকিয়ে রেখে তুমি বিদায় চেয়ে নিলে।
তোমার আচরণে এমন মায়া ছিল,
নিষ্ঠুরতা বলে তাকে পারিনি ধরে নিতে।

বুকের ঝাড়বাতি নিভিয়ে এক ফুঁয়ে
আমাকে ফেলে তুমি ক্ষিপ্র চলে গেলে।
আমার স্বপ্নের পাপড়ি সমুদয়
ছিঁড়েছো কুটি কুটি; হুতুশে তাই মন।

অথচ কিছু আগে দুজনের হাতে হাত
রেখেছি অনুরাগে, ওষ্ঠে নিয়ে ঠোঁট
ভুলেছি লহমায় জগৎ সংসার।
কার সে ঝটকায় গিয়েছো দূরে সরে।

তখন কাছ থেকে বুকের ওঠানামা,
ঠোঁটের নড়া আর চোখের ঝলকানি
দেখেছি তন্ময় এবং তোমাকেই
ব্যাকুল পান করে, কেটেছে সারা বেলা।

আমাকে রেখে গেছো এ শীতে অসহায়,
একলা বসে দেখি অন্তগামী চাঁদ,
এবং শুনি মৃদু পাখির ডানা ঝাড়া।
হৃদয়ে ধুলিঝড়, প্রহর গুণি শুধু।

কখন তুমি ফিরে আসবে জানি না তা।
কোথায় বসে আছো কেমন হুল্লোড়ে,
কথার হাইফেনে, বিদ্রুপের তোড়ে,
পড়ে কি মনে তাকে, এসেছো ফেলে যাকে?

তোমার সত্তায় পূর্ণ অধিকার
প্রতিষ্ঠিত হায় হলো না প্রিয়তমা।
তোমার বরতনু আমার খর তাপে
মাখন হয়ে, আজো গলেনি একবারও।

যখনই কাছে আসো, আলিঙ্গনে বাঁধো,
হঠাৎ জেগে ওঠে তীব্র কোলাহল।
নিষাদ তীর ছোড়ে আমার দিকে, তুমি
আমাকে বার বার আড়াল করে রাখো।

কিন্তু কতকাল থাকবে আবডাল?
আমি কি তস্কর অথবা আততায়ী?
নিজেকে মিছেমিছি অন্তরালে ঢাকি;
হৃদয় ঘায়ে ঘায়ে রক্তজবা হয়।

যখন পুনরায় আসবে তুমি আর
আমার চোখে মুখে নামবে নিরিবিলি
তোমার মসৃণ চুলের কালো ঢল,
বক্ষে নেবো টেনে, কখনো ছাড়বো না।

হন্তারক এই যুগের তমসায়
আমাকে একা ফেলে যেও না তুমি ফের;
না দাও তুলে যদি প্রেমের হাতে ফল,
ইহজীবনে আর ছোবো না তণ্ডুল।