• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

চিলেকোঠার সেপাই – ৩৭

লাইব্রেরি » আখতারুজ্জামান ইলিয়াস » চিলেকোঠার সেপাই (উপন্যাস) » চিলেকোঠার সেপাই – ৩৭

চিলেকোঠার সেপাই – ৩৭

সারাটা রাত খিজিরকে কাটাতে হয়েছে রহমতউল্লার বাড়িতে।
মওলানা ভাসানীর মিটিং থেকে বেরিয়ে মিছিলের লোকজন বর্ধমান হাউসের পাশে আগরতলা মামলার ১নম্বর জজসায়েবের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিলো, আরো অনেকের সঙ্গে খিজির আলি তখন ঐ জজসায়েবকে খুঁজছিলো হন্যে হয়ে। পাওয়া গেলে এই আগুনে ফেলেই শয়তানটাকে সাফ করে ফেলা যায়, ওর জন্যে আলাদা আগুন খরচ করতে হয় না। কিন্তু ব্যাটা কোথাও নাই। তাড়া খাওয়া নেড়ি কুত্তারা ল্যাজখানা পাছার মধ্যে গুঁজে কোনদিক দিয়ে যে সটকে পড়লো কেউ খেয়াল করেনি। আগুনের আঁচে খিজিরের মাথা ঝাঁ ঝাঁ করে:
ইবলিসের গুটি খতম করনের লাইগা মানষে জান বাজি রাইখা কাম করতাছে, আর আমগো মহল্লার সর্দার ইবলিসটা কেমুন খাতির জমাইয়া খায় দায়, নিন্দ পাড়ে, এ্যাঁরে মারে, অরে ধরে, আবার জুম্মনের মায়ের প্যাটের বাচ্চাটারে ভি খতম করনের ফন্দি করে!–সঙ্গে সঙ্গে খিজির রওয়ানা হয় নিজের মহল্লার দিকে।
কিন্তু দেরি হয়ে যায়। নিমতলী পার হতে না হতে সব মানুষের সঙ্গে তাকে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াতে হয়। শোনা গেলো, কারফ্যু ফের জারি হয়েছে, ১৫মিনিট পর রাস্তায় কাউকে দ্যাখামাত্র গুলি করা হবে। লক্ষ্মীবাজার পৌছুঁতে রাস্তা সুমসাম। তবু ওসমানের ঘরের দিকে না গিয়ে খিজির ঢুকে পড়ে রহমতউল্লার গলিতে। আর্মির একটা লরি চলে গেলো ওর সামনে দিয়ে, ঐ সময়টা সে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলো মহাজনের বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে। লরি চরে গেলে উঠলো রহমতউল্লার বাড়ির রকে। কিন্তু একা একা সে মহাজনের কি করতে পারে? এমন সময় আস্তে করে ঘরের জানলা খুলে মুখ বাড়ায় আলাউদ্দিন মিয়া। খিজিরের উত্তেজনা খুব বাড়ে, মহাজনকে খতম করার পরিকল্পনা কার্যকর করার উৎসাহ পায়। মহল্লা এখন নিশ্চয়ই আলাউদ্দিন মিয়ার নিয়ন্ত্রণে। তার হাতে ছাত্র আছে, কর্মী আছে, তার কথা শোনার জন্যে লোকজন এখন প্রস্তুত।
আলাউদ্দিন মিয়া জিগ্যেস করে, খিজির আইছস? রাস্তায় মিলিটারি দেখলি?
না, তামাম মহল্লার মইদ্যে নাই। সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতি আলাউদ্দিন মিয়াকে মহাজন-নিধন-অভিযানে সাহস জোগাবে বলে খিজির এই মিথ্যা বলে।
তাইলে এক কাম কর। কি? মানুষজন ডাকুম? কাজ করার জন্যেই তো খিজির এসেছে, ‘ডাকুম? ‘ডাক্তার লইয়া আয়। মামুর হাল বহুত খারাপ। তা মহাজনের হাল চরমভাবে খারাপ করার উদ্দেশ্যেই তো খিজির এসেছে। ডাক্তার ডেকে কি হবে? দরজা খুলে তাকে ভেতরে ডেকে নেয় আলাউদ্দিন মিয়া, ফিসফিস করে জানায় যে পায়খানা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় রহমতউল্লা মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান। মামী ও সিতারার আর্তনাদ শুনে রান্নাঘর থেকে ছুটে এসেছে জুম্মনের মা। ৩ জনে ধরাধরি করে মহাজনকে ঘরে তোলে। জুম্মনের মা নিজেই ডেকে এনেছে আলাউদ্দিন মিয়াকে। মহাজনকে বিছানায় শুইয়ে ফুল স্পিডে ফ্যান চালানো হয়েছে, মাথার কাছে টেবিল ফ্যান চলছে, তবু তার কপালের ঘাম, ঘাড়ের ঘাম আর শুকায় না। ‘মামী জানে না, সিতারা ভি বুঝবার পারে নাই, মামুর স্ট্রোক হইছে, ডান সাইডটা মনে লয় প্যারালাইসিস হইয়া গেছে। অহন ডাক্তার পাই কে? মেডিক্যাল, মিটফোর্ড, আমাগো ন্যাশনাল-ব্যাকটি হাসপাতালে ফোন করছি, কয় এ্যাঁম্বুলেন্স নাই, এ্যাঁম্বুলেন্স লইয়া গেছে মিলিটারি। আহন কি করি বাবা?
আলাউদিন মিয়ার এই উদ্বেগ খিজিরের মাথায় ঢোকে না। ইবলিসের এই পতনে তার এতো হায় হায় করার কি হলো?
তুই যা বাবা। বজলুরে বিচারাইলাম তো অরে পাই না। কারফ্যুর মইদ্যে ক্যাঠা যাইবো? খিজিরের এই সরল বিবৃতিতে আলাউদ্দিন মিনতি করে, রুচিতার উপরে ডাক্তার ওদুদ বসে। যা না! বহুত বড়ো ডাক্তার।’
‘চোখের ডাক্তার।
*হউক। ব্লাড প্রেশারটা তো দেখবার পারবো। ডাইকা লইয়া আয়।
তার ঘর বন্ধ।
তাহলে বানিয়ানগর গিয়া সাইফুদিনরে লইয়া আয়। আমগো পার্টির সাপোর্টার। যা না বাবা মামুর হাল দেইখা সেতারা বেহুশের লাহান হইছে। যা বাবা’
কারফ্যুর মইদ্যে ডাক্তারে আইবো? গুলি খাইবো না?
মিলিটারি নাইক্কা। বড়ো রাস্তায় তরে একটা মিনিট ভি হাঁটতে হইবো না। গোবিন্দ দত্ত লেনের মইদ্যে দিয়ে বারাইয়া দুইটা কদম হাটলে কাঠের পুললেন। তিনটা বাড়ি পার হইলে সাইফুদিনের বাড়ি। আলাউদ্দিন মিয়া খিজিরের শতবার-দাখা বাড়ি চেনাতে চেষ্টা করে, তাতেও চিড়ে ভেজে না। ডাক্তার আইবো না।’
আইবো। ডাক্তারের হাতে রেড-ক্রস মার্ক ব্যাগ দেখলে মিলিটারি কিছু কইবো না। অরা মানুষ না? মানুষের বালা মুসিবত বোঝে না? ১০০ টাকার ১টা নোট খিজিরের হাতে তুলে দিয়ে সে বলে, যা। এই পাত্তিটা ডাক্তারের হাতে দিয়ে কইবি আলাউদ্দিন সাবের খুব বিপদ। আপনারে ডাকছে।’
মামীর বিলাপে সাড়া দিয়ে আলাউদ্দিন মামার ঘরে যায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এই ঘরে আসে জুম্মনের মা। এইবার, এই সুযোগে খিজির একে নিয়ে সোজা কেটে পড়তে পারে। হাতে ১টা জিন্না মার্ক পাত্তি, তার এখন অভাব কি? জুম্মনের মা এসেই কাঁদতে শুরু করে, কিংবা কাদতে কাদতেই সে এসেছে, খবর পাইলা কে? আহারে। মনে হয় বাচাবো না। আল্লা! অহন আমাগো কি হইবো?
তর আবার কি হইবো? মহাজনে তরে মাগনা খাওয়ায়?’ জুম্মনের মায়ের দুঃখ উথলে ওঠে দ্বিগুণ বেগে, হায়রে আল্লা। এতো বাড়ো নামী মানুষটা বলে মইরা যায়, আর তুমি এইগুলি কি কও? তোমার দিল কি আল্লায় পাষাণ দিয়া বানাইছে?
খিজির বানিয়ানগর গিয়েছিলো। ১০০ কেন হাজার টাকা দিলেও সাইফুদিন ডাক্তার কারফ্যুর ভেতর বেরুতে পারবে না। খিজির তাকে দ্বিতীয়বার অনুরোধ করেনি। বরং নিজে থেকে ডাক্তারকে জানিয়েছে যে বড়ো রাস্তায় মিলিটারির গাড়ি অবিরাম টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে খিজির কাজ একটা করেছে, রহমতউল্লার বাড়ির পেছনে মেস থেকে হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের এক ছাত্রকে ডেকে এনেছে। ১০০টাকার নোটটা খিজিরের কোমরে গোজা, এটা ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা আপাতত তার নাই।
হবু হোমিওপ্যাথকে না ডাকলেও চলতো। এর মধ্যে টেলিফোনে আলউদ্দিন মিয়া তার দলের বড়ো বড়ো নেতাদের দিয়ে তদবির করিয়ে হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালের এ্যাঁমুলেন্স ও ডাক্তার এনে হাজির করেছে। ভোরবেলার দিকে রহমতউল্লার জ্ঞান ফিরে আসে, তবে ডানদিকের মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার অবশ। কথা বলার জন্য খুব চেষ্টা করছে, কিন্তু জড়ানো জিভের ধ্বনি গো গো করে, শব্দের আকার পায় না। এটুকু উদ্ধার করা যায় যে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার লাশটাই ফিরে আসবে। সিতারা ও সিতারার মা এ ব্যাপারে তার সঙ্গে একমত। কারফ্যুর ভেতর রোগী নিয়ে টানা-হ্যাঁচড়া করতে আলাউদ্দিন মিয়াও ভয় পায়।
রহমতউল্লার শোবার ঘরই পরিণত হলো হাসপাতালে। খাটের স্ট্যাণ্ড থেকে ঝোলে স্যালাইন, এ্যাঁম্বুলেন্স থেকে অক্সিজেন টেন্ট নামিয়ে তৈরি রাখা হলো রোগীর মাথার কাছে, যদি দরকার পড়ে। ইঞ্জেকশন দিয়ে রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে ডাক্তার চলে যায়, রাত তখন ২টার কম নয়। ঘরে মা-মেয়েতো রইলোই। মেঝেতে বসে রহমতউল্লার ডান পা ম্যাসেজ করার দায়িত্ব পেয়ে জুম্মনের মায়ের ফোপানি থামলো।
রহমতউল্লার বিছানার পাশে ইজি চেয়ারে বসে থাকে আলাউদ্দিন মিয়া। কিছুক্ষণ পর পর স্যালাইনের ফোটা গুণে দ্যাখার ভার তার ওপর অর্পিত। সায়েবের আদেশে খিজিরকে বসে থাকতে হয় ভেতরের বারান্দায়, সিঁড়ির নিচে। এখন সেখানে কোনো ঝি-চাকরানী থাকে না, হাত পা ছড়িয়ে বসে খিজির হা করে এদের মওত-খেদানো এন্তেজাম দ্যাখে। আলাউদ্দিন মিয়া মাঝে মাঝে এসে সিগ্রেট ধরায়, তার দলের বড়ো বড়ো নেতাদের টেলিফোন করে আধঘণ্টার ভেতর সে এসব কাজ সম্পন্ন করেছে—এই খবরটা নানাভাবে খিজিরকে অবহিত করে। তার গলার স্বর বাড়াবাড়িরকম উঁচু, সিতারা ও সিতারার মায়ের কানে সব কথা তার পৌঁছে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর সে কথা বলে সিতারার সঙ্গে, সিতারা না চাইতেই তাকে সান্তুনা দিচ্ছে, আরে পাগলী! এতো বড়ো ডাক্তারে কইয়া গেলো, দুইটা দিন রেস্ট লইলেই মামু এক্কেরে আগের মানুষ হইয়া যাইবো। মামু তো টেনশনের মইদ্যে থাকে, ব্লাড প্রেশারটা খুব বাড়ছিলো, প্রেশার তো এখন নর্মাল। ঠিক হইয়া যাইবো! তার স্বর ক্রমে নিচু হয়ে আসে। খিজিরের ঘুম পায়। কোথায় যেন গুলি চলছে, গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে দরজা দিয়ে ঘরের ভেতর উকি দিয়ে দ্যাখে ইঞ্জি চেয়ারে শুয়ে আলাউদ্দিন মিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে, টুলে বসে বাপের বালিশের একপাশে মাথা রেখে ঘুমায় সিতারা। আর রহমতউল্লার ডান হাঁটুর ওপর জুম্মনের মায়ের মাথা উপুড় করে রাখা। মহাজনের গা থেকে লেপ সরে গেছে। লুঙি উঠে গেছে ডান উরু পর্যন্ত। তবে তার ঐ সাইডটা এখন অচল।
সকালবেলা কারফ্যু উঠিয়ে নেওয়ার খবর পেয়ে খিজির গেলো ওসমানের ঘরে। ওসমান নাই। সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো মকবুল হোসেন, হাতে বাজারের ব্যাগ। ওসমানের খবর জানতে চাইলে বলে, না রাত্রে তো ঘরেই ছিলো। এইতো মিনিট দুয়েক আগে দেখলাম কার সঙ্গে যেন বেরিয়ে গেলো।’
খিজিরের এদিকে খিদেও পেয়েছে। ন্যাশনাল হাসপাতালের পাশে গলির মাথায় ডালপুরি ভাজা হচ্ছে, লোকের ভিড়ে সেইখানে ঢোকা অসম্ভব। নিজামি রেস্টুরেন্টটা খোলা, কিন্তু রুটি-গোশত খেতে হলে পয়সা লাগে মেলা। হঠাৎ কোমরে গোজা ১০০ টাকার নোটের কথা মনে পড়লে মহা আনন্দে খিজির নিজামিতে ঢুকে পড়ে। কোনো চেয়ার খালি নাই। খিজির এদিক ওদিক তাকিয়ে চেয়ার খালি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, এমন সময় রাস্তা থেকে আসে স্লোগানের শব্দ। মিছিল আসছে জগন্নাথ কলেজ থেকে, রেস্টুরেন্টে চেয়ারের অপেক্ষায় না থেকে খিজির প্রায় লাফ দিয়ে রাস্তায় নামে। আলুবাজার পৌঁছতে পৌঁছতে ছোটো মিছিলটার শরীর বাড়ে। স্টেশন রোড থেকে আরেকটি মিছিল তাদের সঙ্গে যোগ দিলে মিছিল স্ফীতকায় হয়ে ওঠে এবং সবাই প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে চলে গুলিস্তানের দিকে। কিন্তু রেলগেটের ওপারে মিলিটারি ও ইপিআরের লরির ব্যারিকেড। লরির ওপর দাঁড়িয়ে হেলমেটধারীরা মেশিনগান তাক করে রেখেছে মিছিলের দিকে। মিছিল তবু এগিয়ে যাচ্ছিলো। নেতাগোছের কেউ এসে সবাইকে ফিরে যেতে বললে মিছিল স্থির হয়ে দাঁড়ায়।
এদিকে মিলিটারির লোকজন মাইকে বারবার করফু জারি করার কথা ঘোষণা করছে। হঠাৎ কয়েকটা গুলির আওয়াজ হলে মানুষ এলোমেলো ছুটতে শুরু করে।
ছুটতে ছুটতে খিজির চলে আসে নিজের মহল্লায়। বস্তিতে ঢুকতে ঢুকতে সে সিদ্ধান্ত নেয় যে জুম্মনের মায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেব। মহাজন তো অচল হয়ে পড়লো, জুম্মনের মায়ের সঙ্গে বস্তির ঘরে থাকতে তাকে এখন বাধা দেবে কোন শালা? কিন্তু বস্তিতে এসে খবর পায় যে কারফ্যু বিরতির সময় জুম্মনের মা একবার এসেছিলো। আধাঘণ্টা ভি আছিলো না, বজলুর বৌ জানায়, মহাজনের বহুত বিমার। অর লগে আমরা ভি দেখবার গেছিলাম। জুম্মনের মায়ে মহাজনের হাতপাও মালিশ করে।’
খিজির ঘরে ঢুকতে জুম্মন কি যেন লুকাবার জন্য এদিক ওদিক তাকায়। খিজিরের সঙ্গে ঘরে ঢুকছিলো বজলুও, সে চোখ রাঙায়, ‘তর হাতে কি?
কিছু না!
রঙবাজি করস? বজলুর থাবার ঘায়ে জুম্মনের লুঙির কোচড় থেকে প্লায়ার ও জু-ড্রাইভার মেঝেতে গড়িয়ে পড়ে। জিনিসগুলো তুলে বজলুখিজিরের হাতে দেয়, এইগুলি তর না খিজির? এইগুলি দিয়াই তো ঐ দিন আমারে খাম করলি, না? তারপর জুম্মনকে বলে, ‘তুই পাইলি কৈ?
বজলুর বৌ বলে, অর মায়ে দিছে। নইলে পাইবো কৈ?
বজলু জুম্মনের ওপর রাগ করে, তর বাপের জিনিস? কামরুদ্দিন হালায় জিন্দেগিতে এইগুলি চোখে দেখছে? জোগানদারের পোলা, তুই এইগুলি হাতাস ক্যালায়?
ভয়ে জুম্মনের ঠোঁট তিরতির করে কাপে। ভয়েও কাঁপতে পারে, রাগেও কাঁপতে পারে। খিজির জানে, রাগ হলে জুম্মনের মায়ের ঠোঁটজোড়া ঠিক এমনি করে কাপে। খিজির নরম করে বলে, ছামরা, এইগুলি দিয়া তুই করবি কি? জুম্মনের হাতে জিনিস ২টো তুলে দিতে দিতে বলে, ‘ল। রাইখা দে। হারাইবি না। হারাইলে একখান চটকানা দিয়া তর বাপের কাছে পাঠাইয়া দিমু। খিজিরের উদারতায় জুম্মন এবার ভয় পায়, প্লায়ার ও ক্রু-ড্রাইভার সে রেখে দেয় তক্তপোষের নিচে। খিজির ফের ঘোষণা করে, কইলাম না, রাইখা দে।
জোগানদারের পোলাকে এইসব যন্ত্র দেওয়া বজলু অনুমোদন করে না, দিয়া দিলি
দোস্ত ? তর কামে লাগবে না?
‘লাগবো না? আবার লইয়া আহুম।
সারাটা দিন কাটাতে হয় ওখানেই। রাস্তার মোড়ে মিলিটারির গাড়ি। এদিকে বস্তির কারো ঘরে চাল নাই। নতুন এক ভাড়াটে এসেছে, ফেরি করে তরকারি বেচে। তার ঝুড়িতে উদৃত্ত সবজি ছিলো। সেগুলো সেদ্ধ করে তরকারিওয়ালা এক চুপচাপ খেয়ে নিয়েছে। খিজিরের ঘরে সবাই ধুমসে আড্ডা মারে। মহাজনের পক্ষাঘাত হওয়ায় কখনো আফসোস করে, আবার পরের মুহুর্তে তাকে গলাগলি করে। কিছুক্ষণ পর পর করফু নামক সরকারী আদেশটির সঙ্গে নানাভাবে শারীরিক সঙ্গম করার স্পৃহা জানায়। বজলুর বৌ কোথেকে ঝোলা ভর্তি কাঠালের বিচি বার করে, কবে কার বাড়ি থেকে সরিয়ে এনেছিলো কে জানে? সেই বিচি সেদ্ধ করে সবাই মিলে খাওয়া হলো। জুম্মনের গোগ্রাসে খাওয়া দেখে বজলুর বৌ আফসোস করে, ছ্যামরাটা এমুন ত্যারা অর মায়ে কতো কইলো, আমার লগে চল!’ গেলো না। মাহাজনের বাড়ি গেলে প্যাট ভইরা ভাতটা তো খাইতে পারতি।’
কিছুক্ষণ পর পর বজলু কিংবা খিজির সরু গলির মাথায় গিয়ে উকি দিয়ে আসে, কখনো জুম্মনকে পাঠায়। না, মিলিটারির গাড়ি ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিড়িটা পর্যন্ত আনা অসম্ভব। ওদিকের গলি থেকে কে যেন বেরিয়েছিলো। মিলিটারির হাতে তার নাস্তানাবুদ হওয়ার বিবরণ শুনে সবাই হেসেই অস্থির। বজলুর বৌ পর্যন্ত একবার উকি দিয়ে এলো। এক বুড়ো ভদ্রলোককে মিলিটারি কিভাবে ব্যাঙ লাফাতে বাধ্য করছে তার বর্ণনা দিতে দিতে সে হেসে মাটিতে গড়ায়।
সন্ধ্যার পর ট্রাক সরে যাওয়ার শব্দ আসে। খিজির প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সটকে পড়ে। এই সুযোগ। যে কোনো সময় ওরা ফের চলে আসতে পারে।

Category: চিলেকোঠার সেপাই (উপন্যাস)
পূর্ববর্তী:
« চিলেকোঠার সেপাই – ৩৬
পরবর্তী:
চিলেকোঠার সেপাই – ৩৮ »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑