• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

চিলেকোঠার সেপাই – ০৪

লাইব্রেরি » আখতারুজ্জামান ইলিয়াস » চিলেকোঠার সেপাই (উপন্যাস) » চিলেকোঠার সেপাই – ০৪

চিলেকোঠার সেপাই – ০৪

আনোয়ার সেদিন বাড়ি ছিলো না। ওর ভাইয়া মহাবিরক্ত, ‘পাবনা না নোয়াখালি কোথায় গেছে ভালো করে বলেও যায় নি। বিপ্লবের অবজেকটিভ কন্ডিশনস নাকি কোথায় কোথায় তৈরি হয়ে আছে, ঐ সব এক্সপ্লোর করতে গেছে। ভাইয়া নিজেও এককালে পলিটিক্স করতো, ভাষা আন্দোলনে জেল-খাটা মানুষ। ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে আজকাল বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় বলে ওদিকে সময় দিতে পারে না। তবে পুরনো রাজনৈতিক বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগটা মোটামুটি আছে। গান বাজনার দিকে খুব ঝোঁক, পার্টির সাংস্কৃতিক তৎপরতার সঙ্গে এখনো জড়িত। ওসমানকে বসিয়ে চা খাওয়ালো, চা খেতে খেতে বলে, ’ওদের পার্টি তো প্রায়ই ভাঙছে। এখন ও যে কোন গ্রুপে বিলঙ করে, সেই গ্রুপের বেস কোথায়,নোয়াখালি না পাবনা না যশোর না চিটাগাং—এসব অঙ্ক মেলাতে পারলে ওর হোয়্যার এ্যাঁবাউটস জানতে পারবে। ওসমানকে বাড়ির গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে দিতে বলে, খোজ পেলে একটু জানাবে তো টাকা পয়সাও নিয়ে যায়নি, কোথায় কিভাবে আছে, কে জানে? আনোয়ারের সঙ্গে ওসমানের দ্যাখা হলো আরো কয়েকদিন পর। আমজাদিয়ায় সেদিন জমজমাট। ঢুকতে না ঢুকতে ভিড়ের মধ্যে শোনা যায়, ওসমান।’
বাইরে থেকে ঢুকেছে, ওসমানের চোখে সব ঝাপসা ঠেকে। কে ডাকলো? কোণের দিকে ওদের টেবিলে যেতে যেতে ওসমান ফের শুনলো, ওসমান। আস্তে আস্তে সব স্পষ্ট হচ্ছে। মোটা চুরুটের ধোঁয়ায় আঁকাবাঁকা পর্দার পেছনে শওকতের ব্রণের দাগখচিত লম্বা ও রোগ মুখ। শওকতের পাশের চেয়ারে চিত্ত আর ফরিদ বসেছে ভাগাভাগি করে। এদের পাশের চেয়ারে আলতাফ। আলতাফের মুখোমুখি ইফতিখার। পাশের টেবিলে বসলেও প্রায় আড়াইট টেবিল জুড়ে রাজত্ব করে আনোয়ার। ওসমানের দিকে একবার খুশি খুশি চোখ করে তাকিয়ে নিয়ে আনোয়ার তার কথা অব্যাহত রাখে, এর আগে পিপল যেসব মুভমেন্টে এ্যাঁকটিভলি পার্টিসিপেট করেছে সেগুলো হয়েছে এক একটি এলাকা জুড়ে। ধরে তেভাগা, ধরে হাজং কিংবা সাওতালদের বিদ্রোহ-এগুলো বিশেষ বিশেষ এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিলো, তাই না? কিন্তু এরকম সমস্ত প্ৰভিন্স জুড়ে—।’
প্রভিন্স কেন? এবার কান্ট্রিওয়াইড মুভমেন্ট চলছে, ওয়েস্ট পাকিস্তানী পিপল আর অলসো পার্টিসিপেটিং ভেরি স্পনটেনিয়াসলি!’ ইফতিখারের এই মন্তব্য আনোয়ার ঘাড় নেড়ে অনুমোদন করতে করতে বলে, এই ব্যাপক আন্দোলন কি কেবল এ্যাঁডাল্ট ফ্র্যাঞ্চাইজ আর পার্লামেন্টারি ফর্ম আর অটোনমির জন্যে? আর কিছু না?
আলতাফের পাশে সিকানদারের চেয়ারে ভাগাভাগি করে বসতে বসতে ওসমান বলে, বায়তুল মোকাররমে পুলিস সাংঘাতিক লাঠিচার্জ করেছে।
কিন্তু তার দিকে না তাকিয়ে আলতাফ জবাব দেয় আনোয়ারকে, ভোটের রাইট চাই আগে। ক্ষমতায় আসতে না পারলে বাঙালি কিছু করতে পারবে না। আলতাফ অবিরাম কথা বলেই চলে। কিন্তু ওসমান কারো কথাই ভালোভাবে শুনতে পারে না। সে তখনো একটু একটু হাঁপাচ্ছে। পুলিসের লাঠির বাড়ি থেকে একটুখানির জন্যে বেঁচে গেছে।
শুক্রবারের অফিস বেলা ১২টায় ছুটি হয়ে গেলে কিছু খাবে বলে সে স্টেডিয়ামের বারান্দায় ধীরে সুস্থে হাটছিলো। একবার ভাবছিলো প্রভিন্সিয়ালে ভাত খেয়ে নেবে। কিন্তু সাড়ে বারোটায় ভাত খেলে বিকালবেলা শুধু চায়ে কুলায় না। এদিকে রোজার জন্যে রাস্তাঘাটে খোলাখুলি খাওয়া বন্ধ। আড়ালে আবডালে সবাই ঠিকই খাচ্ছে, শুধু মানুষের ঝামেলা বাড়ানো ঘুঘনি কি পেপেকটা কি সেদ্ধডিমের আশায় সে এদিক ওদিক দেখছে, এমন সময় চোখে পড়ে স্টেডিয়ামের মেইন গেট ২টোতে উঁচু উঁচু ঘোড়ার ওপর বসে রয়েছে তাগড়া সব পুলিস, পাশে রাইফেল হাতে দাঁড়ানো পুলিসবাহিনী। ১টি ঘটনার প্রত্যাশায় ওসমান খাবার কথা ভুলে তাড়াতাড়ি হাঁটে। কিন্তু ঠিক জায়গায় পৌঁছতে না পৌঁছতে জানাজা শেষ হলো। গত কয়েকদিনে সারা পাকিস্তান জুড়ে পুলিস ও সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত শহীদদের জানাজা। লম্বা কাতারগুলো ভেঙে যাচ্ছে, এদিক ওদিক লোকজনের ছোটো ছোটো জটলা। ছাত্রদের পরবর্তী কর্মসূচী জানবার জন্য ওসমান একবার এ-জটলা একবার ও-জটলার সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু মাইকের পে পো ধ্বনি ছাড়া কিছুই বোঝা যায় না। মাইকের এই ভেঁাতা সঙ্গীত ছাপিয়ে ওঠে শ্লোগান, শহীদের রক্ত – বৃথা যেতে দেবে না’, পুলিসী জুলুম পুলিসী জুলুম-বন্ধ করো বন্ধ করো। গেটে দাঁড়ানো উচালম্বা সাদা ও ধূসর ঘোড়াদের পা কাপে। দিকে দিকে আগুন জ্বলো,-আগুন জ্বলো আগুন জ্বলো। ওসমানের বুক দারুণভাবে ওঠানামা করে। স্লোগানগুলো একটি একটানা আওয়াজে মিলিত হয়ে তার করোটির দেওয়াল তপ্ত করে তোলে শুওরের বাচ্চ আইয়ুব খান মোনেম খানের চাকরবাকরের দল, দ্যাখ! ভালো করে দেখে নে। তোদের সামনে খালি হাতে কেবল বুকসর্বস্ব করে তোদের বাপ আইয়ুব খানকে চ্যালেঞ্জ করতে এসেছে এরা ভরা গলায় ওসমান শ্লোগানের জবাব দেয়, মুক্তি চাই, মুক্তি চাই। খুচরা জটলাগুলো শ্লোগানে শ্লোগানে গাথা হয়, প্রসারিত হতে থাকে একটি অখণ্ড সমাবেশে। স্টেডিয়ামের গেট থেকে পুলিসবাহিনী এপাশ ওপাশ জুড়ে ছড়িয়ে ১পা ১পা করে পেছনে যায়। কয়েক পা এমনি করে হটে গিয়ে হঠাৎ তারা দাঁড়িয়ে পড়লো। জিপিও-র সামনে লরি থেকে লাফিয়ে নামলো বেতের ঢাল ও লাঠিধারী ১পাল পুলিস। তারপর সব এলোমেলো। প্রথম কয়েক মিনিট কেবল লাঠির সপাসপ আওয়াজ এবং পুলিসের নাক ও মুখ থেকে বেরোনো সশব্দ নিশ্বাস ছাড়া কিছুই নাই। মানুষ এখন যায় কোন দিকে? স্টেডিয়ামের জোড়াগেট জুড়ে উচালম্বা ঘোড়া, দক্ষিণে এ-ফুটপাথ থেকে ও-ফুটপাথ জুড়ে পুলিসের দেওয়াল, জিপিও-র সামনে পুলিসের ট্রাক। সবচেয়ে মুশকিল হয় শান্তিপ্রিয় ভদ্রলোকদের। দিনমান সিয়াম অন্তে এফতারে বিসমিল্লা বলে ভালোমন্দ কিছু মুখে দেবে বলে তারা আপেল কি আঙুর কি খেজুর কি কলা কিংবা ক্যাপিটাল বা লাইটের কেক-প্যাস্ট্রি কিনতে এসেছিলো। এই ফ্যাসাদে পড়ে কেউ কেউ মসজিদে ঢুকে নফল নামাজ পড়তে শুরু করলো, বেশ কয়েকজন বায়তুল মোকাররমের এ-প্যাসেজ ও-প্যাসেজ দিয়ে চলে গেলো পুরানা পল্টনের দিকে। ভদ্রলোক ও ছাত্রদের বেশির ভাগই, বলতে গেলে প্রায় সবাই একটা আধটা লাঠির বাড়ি খেয়ে কিংবা মার এড়িয়ে কেটে পড়েছে। এখন রইলো বাকি ২। —১. নোঙরা কাপড় পরা লোকজন এবং ২. অগুনতি পিচ্চি। পুলিসের মার এখন চমৎকার জমে উঠেছে।
পল্টনের দিকে পুলিস নাই। সেদিক দিয়ে চলে গেলেই হতো। কিন্তু পুলিসবিহীন রাস্তা দেখে একটু দিশাহারা মতো হয়ে ওসমান আবার এসে পড়ে জিপিও-র সামনেই। এখানে রোডের সামনে পুলিসের গাড়ি। বুদ্ধি করে ওসমান পায়ের গতি নিয়ন্ত্ৰণ করে। স্টেডিয়ামের উল্টোদিকের ফুটপাথ ধরে সে এমনভাবে হাঁটে যে, মনে হয় এই সব গোলমালের কিছুই তার জানা নাই। ততোক্ষণে গুলিস্তান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে পুলিস। মানুষের ছোটাছুটি চলছে ইপিআরটিসি টার্মিনাল পর্যন্ত। পশ্চিম দিকের বড়ো বড়ো দালানের ছাদ থেকে পিচ্চিরা ঢ়িল ছুড়ছে পুলিসের ওপর। স্টেডিয়ামের পাশে ১টা ক্লাবের এলাকা থেকে কয়েকটা খালি বোতল এসে পড়ে। রাস্তার মাঝখানে লম্বা আইল্যান্ড। না। আর কতোক্ষণ? পুলিস শালারা এবার এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করবে। কিন্তু তাড়াতাড়ি ইটাটা বড়ো ৱিস্কি। এদিককার ফুটপাথ তখন সম্পূর্ণ পুলিসের দখলে। একটু জোরে পা চালালেই ব্যাটার বুঝে ফেলবে যে, সে জানাজা থেকেই আসছে। চোখে মুখে ওসমান একটা বিরক্তি ফোটাবার জন্য একগ্নেচিত্ত হয়; শহরে ১৪৪ ধারা, সমাবেশ কি মিছিল পুলিস সহ্য করবে কেন? —এই ভাবটা তার মুখের আদলে এঁকে ফেলা দরকার। বেশিক্ষণ অবশ্য কষ্ট করতে হয় না, রেলগেটের ওপারে পুলিসের চিহ্নমাত্র নেই, এমনকি স্টেশন রোডের শুরুতে ট্রাফিক আইল্যাণ্ডেও পুলিস নাই। পুলিসের ভয় কেটে গেলে ওসমানের পেটের দিকটা চিন চিন করে। কিন্তু আমজাদিয়ায় ঢোকার পর আড্ডায় জমে থাকায় কথাটা একেবারে ভুলে যায়।
টেবিল এখন আলতাফের দখলে, সবার নীরব অনুমোদন পেয়ে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে, ১৯৫৮-৫৯ সালের পর পাকিস্তানে পার ক্যাপিটা ইনকাম বেড়েছে ১৮০ টাকা। সেখানে ইস্ট পাকিস্তানের ইনক্রিজ কতো জানো? সকলের দিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে বেশ চিবিয়ে চিবিয়ে সে জানায়, ২২ টাকা। টুয়েন্টি টু। এই শোষণ চললে আমাদের পরিণতি কি?
এরপর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্যের ওপর সে ১টার পর ১টা তথ্য দিয়ে চলে। শুনতে শুনতে ওসমানের জিভ নিসপিস করে, আলতাফের পক্ষে কথা বলার জন্যে সে অস্থির। প্রতিটি জায়গায় শালার ডিসপ্যারিটি। সোনার দাম এখানে এক রকম, ওখানে আরেক রকম। কাগজ তৈরি হয় আমাদের এখানে, ওদের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে সেই কাগজ কিনি আমরাই। আমরা গায়ের রক্ত পানি করে পাট ফলাই, সেই পাট বেচে ফেপে ওঠে লাহোর করাচি ইসলামাবাদ। ওপরের দিকে একটা বাঙালি অফিসার নাই। আর্মিতে বাঙালি নাই। সত্যি সত্যি এক দেশ হলে এরকম হতো না। —কিন্তু কথাটা কিভাবে বলবে ওসমান তাই ভাবতে ভাবতে সিকানদারের কনুইয়ের ধাক্কা খায়। সিকানদার আস্তে করে বলে, আজকাল ইউনিভারসিটির মেয়েরা কি রকম ফ্রি হইছে দেখছো? ছেলেদের সাথে কেমন ঘুরতাছে, দ্যাখো!
কয়েকটা টেবিল পর ৪/৫ জন ছেলের সঙ্গে ২জন মেয়ে। ওসমান এতোক্ষণে খেয়ালই করেনি। এইসব রেস্টুরেন্টে মেয়েরা সাধারণত আসেই না, এলেও হার্ডবোর্ড ও পর্দায় ঘেরা কেবিনে বসে। এরকম খোলাখুলি বসেছে, একটু ভালো করে দেখে নেওয়া যাক। ১ জনের প্রোফাইল দ্যাখা যায়, ফর্সা নাকের মাথায় ঘামের বিন্দু। আরেকজনের পেছনটা চোখে পড়ছে একটু, ঘামে-ভেজা জলপাই রঙ ব্লাউজের ওপর মোটা বেণী। এরাও নিশ্চয়ই বায়তুল মোকাররম গিয়েছিলো, লাঠিচার্জের আগেই চলে এসেছে।
সিকানদার ফের বলে, আমাদের সময়ে ছেলেরা মেয়েদের সাথে কথা কইলেই ফাইন হইতো, প্রক্টর দেখতে পারলে হয়!—সোজা রিপোর্ট পাঠাইয়া দিতো। আহা, যদি কয়ট বছর পরে জন্ম নিতাম!’
সিকানদার ওদের কয়েক বছরের সিনিয়র, তাছাড়া ওসমান ইউনিভারসিটিতে পড়েওনি, ওর এই আক্ষেপে সাড়া দেওয়া ওসমানের পক্ষে মুশকিল। সিকানদারের চাপাস্বরের আফসোসের অনেক ওপরে চলছে আলতাফের চড়া গলা, আমাদের একমাত্র প্ররেম, অন্তত এখন প্রথম ও প্রধান সমস্যা পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ।’
চুরুটের ধোঁয়ার পেছন থেকে সিকানদারের কথার জবাব দেয় শওকত, আরে আপনার তো সেদিনকার ছেলে। আমাদের সময় ইউনিভারসিটি ক্যাম্পাসে কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বললে তার রেপড হওয়ার ফিলিং হতো। সবাই জোরে হেসে ফেলে। আলতাফের বিক্ষোভের মাঝখানে এই হাসি তাকে বিব্রত করে। দাঁতে চুরুট চেপে শওকত তার সহপাঠিনীদের নরভীতির বর্ণনা সম্পূর্ণ করে, ছেলেদের কথা শুনে আবার কনসিভ না করে—এই ভয়ে মেয়েরা তখন কনট্রাসেপটিভ ইউজ করতো। এবার সবাই এতো জোরে হাসে যে, অন্য কয়েকটা টেবিল থেকেও লোকজন তাদের দিকে ফিরে তাকায়। হাসি হাসি মুখ করলেও আলতাফ একটু দমে যায়। আনোয়ার এই সুযোগটা নেয়, তোমার এইসব কথা চ্যালেঞ্জ করছে কে? ন্যাশনাল এ্যাঁসেম্বলিতে মিনিস্টাররা পর্যন্ত ডিসপ্যারিটির ডাটা সাপ্লাই করে। কনস্টিটিউশনে ডিসপ্যারিটির কথা আছে। কিম্ভ-‘
তাহলে দ্যাখো, আলতাফের বিব্রত ভাব কেটে গেছে, বেশ জোর দিয়ে বলে, কোন পর্যায়ে গেলে ডিসপ্যারিটির কথা কনস্টিটিউশনেও বলা হয়? আমাদের ভাষা, কালচার থেকে শুরু করে অর্থনীতি সব জা পাঞ্জাবিদের এক্সপ্লয়টেশনের শিকার। এসব বাদ দিয়ে তোমরা জোতদার মারো আর ঘরবাড়ি জ্বালাও?
কোণঠাসা হয়ে আনোয়ার ফের শুরু করার উদ্যোগ নেয়, তুমি ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছো আলতাফ। ওয়েস্ট পাকিস্তানের একটা সেকশনের এক্সপ্লয়টেশনের কথা অস্বীকার করে কে? এসব কথা আমরা যখন প্রথম বলি তোমাদের নেতারা তখন আমাদের গালাগালি করতো।
এর মানে এর নয় যে, আমরা বললে তোমরা আবার আমাদের গালাগালি করবে!
তা নয়। আমার কথা হলো এই যে, মানুষের এই আপসার্জ কি খালি বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটাবার জন্য? বাঙালি ভদ্রলোকের চাকরির ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে?
ইফতিখার মিনমিন করে বলে, কিন্তু ওয়েস্ট পাকিস্তানের কমন পিপল কি হ্যাঁপি?
না। আলতাফ ফের জোর দিয়ে বলে, কিন্তু সেটা আমাদের বিবেচনার বিষয় নয়। পৃথিবীর যেখানে যতো দুঃখী ও শোষিত,নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষ আছে সবাইকে উদ্ধার করার দায়িত্ব আমাদের কে দিলো? পশ্চিম পাকিস্তানের যেটুকু আমরা জানি তা হলো আমাদের শোষণ করার জন্যে অদম্য স্পৃহা। উর্দুভাষী ইফতেখারের যে কোনো কথার জবাব দেওয়ার সময় আলতাফ একটু কঠিন বাঙলা ব্যবহার করে। গত কয়েক মাস থেকে এই প্রবণতা প্রকট হয়ে উঠছে। সিকানদার উত্তেজিত হয়ে বলে, ঐগুলি ছাড়েন। বাখোয়াজি বহুত শুনছি। স্বাধীনতার কথা বলেন। স্বাধীনতা! মাউরাগো হাত থাইকা বাঁচার উপায় ঐ একটাই।’
স্বাধীনতা! স্বাধীনতার কথায় ওসমানের তপ্ত করোটিতে শীতল হওয়া খেলে। সাড়ে ১০টার দিকে অফিসে নোভাজিল খেয়েছিলো, তার এফেক্ট পাওয়া যায়। মেয়ে ২টোকে ভালো করে দ্যাখার জন্য ঘুরে তাকালো, ঐ টেবিলে এখন অন্য সব লোক। বাইরে থেকে গুঞ্জন ভেসে আসছে। জিন্না এ্যাঁভেন্যুতে গোলমাল কি নতুন করে শুরু হলো?
সিকানদার অনুপ্রাণিত উক্তিকে আমন না দিয়ে আনোয়ার আলতাফের দিকেই তাকায়, বলে, ভাষা, কালচার, চাকরি-বাকরিতে সমান অধিকার, আর্মিতে মেজর জেনারেলের পদ পাওয়া—এসব ভদ্রলোকের প্রব্লেম। এই ইস্যুতে ভোটের রাইট পাওয়ার জন্যে মানুষের এতো বড়ো আপসার্জ হতে পারে?
পারে। মানুষ গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করতে পারে।’
‘ভোটের রাইট পাবার জন্য মানুষ প্রাণ দেবে?
‘দেৰে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের জন্য মানুষ যুগে যুগে প্রাণ দিয়ে এসেছে।’
‘ভোট দিলেই কি সব মানুষের জন্য গণতন্ত্র আসে?
আসে। ভোট দেওয়ার অধিকার গনতন্ত্রের একটা বড়ো শর্ত। তোমরা ভোট দিয়ে তোমাদের প্রোগ্রাম অনুসারে কাজ করতে পারবে।
ফরিদ খুব চুপচাপ সিগ্রেট টানছিলো। আলতাফের সমর্থনে সিগ্রেট টানায় সে একটু বিরতি দেয়, ইলেক্টেড হতে না পারলে আপনি বুঝবেন কি করে যে, আপনার পক্ষে মানুষ আছে? আপনি কার হয়ে কথা বলবেন?
বাইরের গুঞ্জন ক্রমে পরিণত হচ্ছে গর্জনে। রাস্তার মিছিল কাছাকাছি চলে এসেছে। সিকানদার উঠে দরজার দিকে চলে যায়। টেবিলে টেবিলে এখন ভাত, চাপাতি, নানরুটি, তরকারি, সালাদ, ডাল ও ফিরনি। তর্ক জমে উঠেছে, বাইরে থেকে আসছে মিছিলের গর্জন, তাই এতো খাবার ও খাবারের গন্ধেও ওসমানের পেটের ব্যথা পাত্তা পায় না।
আনোয়ার বলে, ভোটে মিড়ল ক্লাসের লোক আসবে। দেশের অধিকাংশ মানুষের প্ৰব্লেম তারা বুঝবে কি করে?
বেশ তো, আমরা না হয় মিড়ল ক্লাসের সমস্যাই সমাধান করার চেষ্টা করলাম। ফরিদ এই কথা বললে আলতাফ তাড়াতাড়ি যোগ করে, সব দেশে মধ্যবিত্তই তো নেতৃত্ব দেয়। রেভুলিউশনের লিডারশিপ মধ্যবিত্তের হাতে থাকে না? লেনিন কি প্রলেতারিয়েত? তোমাদের চৌ-এন-লাই?
কিন্তু আমাদের এখানে সাধারণ মানুষের সমস্যা তো তোমাদের লিডারশিপের কনসার্ন নয়। তোমাদের প্রোগামে তার কোনো রিফ্লেকশন নেই।’ আনোয়ারের কথা শেষ করতে না দিয়ে ফরিদ বলে, বেশ তো, মিড়ল ক্লাস যে পর্যন্ত পারে করুক।
তারা তর্ক করে। বাইরের স্লোগানের ধ্বনি ক্রমে শব্দ এবং অর্থপূর্ণ শব্দ হয়ে তাদের কানে আসে। আনোয়ার একটু জোরে বলে, কিন্তু পিপলের স্পনটেনিয়াস আপসার্জকে ভদ্রলোকের সখ মেটাবার জন্যে ইউজ করার রাইট তোমাদের কে দিলো?
আপসার্জ তো আকাশ থেকে পড়েনি। এর জন্যে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। এই প্রস্তুতি নেওয়ার কাজ করেছে কোন অর্গানিজেশন, বলো? দিনের পর দিন মিটিং করে, জেল খেটে—।
জ্বলো জ্বলো, আগুন জ্বলো। মিছিল এবার আমজাদিয়ার সামনে এগিয়ে আসছে। মিছিলের কয়েকজন ছেলেকে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে দেখে প্রায় সবাই উঠে দাঁড়ায়, কেউ বসে থাকলেও খাবার সামনে রেখে ওদের দ্যাখে। পাঞ্জাবি-প্যান্ট, পাজামা-পাঞ্জাবি, চাপা প্যান্টসোয়েটার, চাপা প্যান্ট-পুলওভার নানা পোশাকের কয়েকটা ছাত্র ঢুকেই বলে, পানি খাবো।
কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ম্যানেজার বিকট জোরে চাচায়, ‘পানি দে। কাধে পুলওভার ঝোলানো ১টি ছেলে বলে, চা খেয়ে নিই, এ্যাঁ? ম্যানেজার অনাবশ্যক জোরে হাক ছাড়ে, চা দে!
এর মধ্যে আরো লোকজন ঢুকে পড়েছে। এখন লুঙি-পরা লোক ও রাস্তার পিচ্চিই বেশি। পিচ্চিদের ১জন বলে ওঠে, হালায় আইয়ুব খান! দরজার বেশ খানিকটা ওপরে বড়ো ফ্রেমে কাচে বাধানো ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান, হেলালে জুরত, হেলালে পাকিস্তানের আবক্ষ প্রতিকৃতি। প্রেসিডেন্টের ভরাট গোলাপি মুখ জুড়ে ছড়ানো তার লাল ঠোঁটের চাপা হাসি। সামনের উত্তেজিত লোকদের প্রতি কৌতুক ও তুচ্ছতায় তার ছোটো চোখজোড়া একটু কোচকানো। একটি ছাত্র বলে, শালা দালালের দোকান।
‘দালালের দোকান!
সঙ্গে সঙ্গে স্লোগান ওঠে, আইয়ুবের দালালি, আইয়ুবের দালালি-চলবে না, চলবে না।’ ভাঙো হালা চুতমারানির ছবি ভাইঙা ফালাও। কুত্তার বাচ্চারে লাথি মাইরা ভাঙা’ বলতে বলতে ১০/১১ বছরের ১টি পিচ্চি তার রঙজ্বলা সবুজ লুঙ্গির কোচড় থেকে ১টি ইটের টুকরা ছুড়ে দেয় ছবির দিকে। ইটের টুকরা দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে ১টি টেবিলে রাখা মাটন রেজালার বাটিতে। কাচের বাসন ভাঙার শব্দে ম্যানেজার লাফিয়ে এসে পিচ্চির হাত ধরে ফেলে। ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে ম্যানেজার মিনতি করে, আপনারা থামেন। আমি নামাইয়া দেই! এর মধ্যে ১টি টেবিল চলে এসেছে দরজার কাছে। ঘন নীল রঙের প্যান্ট ও খয়েরি সোয়েটার পরা এলোমেলো চুলের রোগা ১টি ছেলে উঠে পড়ে সেই টেবিলের উপর। ছবি তার নাগালের বাইরে। ১টি চেয়ার উঠিয়ে দেওয়া হয় টেবিলের ওপর, চেয়ারে দাঁড়াতে ছেলেটা ইতস্তত করলে কয়েকজন ছেলে চেয়ারের পায়াগুলো শক্ত করে ধরে। ফ্রেমের ভেতর থেকে প্রেসিডেন্ট অপরিবর্তিত চেহারায় কৌতুক ও তাচ্ছিল্যের হাসি ছাড়ে। লোকজন প্রেসিডেন্টের পতন দ্যাখার জন্য উন্মুখ হয়ে প্রতীক্ষা করছে, টেবিলের ওপরকার চেয়ারে দাঁড়ানো তরুণটি ছবির পেছনে পেরেক-বাধা দড়ি হাতড়াচ্ছে, দড়ির গেরো বোধ হয় সে খুঁজে পাচ্ছে না, হাতড়িয়েই চলে। এমন সময় ঠিক নিচে থেকে পিতলের ১টি এ্যাঁশট্রে এসে পড়ে ছবির ফ্রেমের ওপরকার কাঠে। এরপর আরেকটি এ্যাঁশট্রে। এবার ছবির মাঝামাঝি এ্যাঁশট্রে লেগে কাচ ভেঙে যায়। ফের ১টি ছোটো ইটের টুকরা লাগার সঙ্গে বিশাল ফ্রেম তার একমাত্র অধিবাসীকে নিয়ে প্রথমে হুমড়ি খেয়ে পড়ে চেয়ারে, সেখান থেকে টেবিলের ১টা ধার একটুখানি ছুয়ে ছিটকে পড়ে মোজাইক করা তেল চিটচিটে ময়লা মেঝের ওপর। প্রথম এ্যাঁশট্রেটা গিয়েছিলো নীল প্যান্ট পরা তরুণের কান ঘেষে, চেয়ারে উঠবার সময় তার পা যে রকম কাপছিলো সেই দ্বিধা ভাগ্যিস ভুলে গিয়ে ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে কায়দা করে চমৎকার লাফ দিয়ে নেমে পড়ে। তবে এ্যাঁশট্রের ছাই চোখে লাগায় চেয়ারের পায়া ধরে-রাখা ছেলেদের ২জনকে বেসিনে চোখ ধুতে হয়।
দুটো এ্যাঁশট্রে এবং ইটের টুকরা ছুড়ে-মারা ১০/১১ বছরের পিচ্চির লুঙির কোচড়ে এখনো কয়েকটা পাথর ও ইটের টুকরা। কনুই দিয়ে তার নাকের গোড়া থেকে ঝুলন্ত সিকনি মুছতে মুছতে সে এগিয়ে আসে। আইয়ুব খানকে প্রথমবার ইট লাগাতে পারেনি বলে তার যে গ্রানি হয়েছিলো পরবর্তী সাফল্যে তা একেবারে মুছে গেছে। এই সাফল্যে তার চেহারা ও গলায় পরিণত ও অভিজ্ঞ মানুষের ভার অর্পণ করে, দিছি। খানকির বাচ্চারে এক্কেরে নামাইয়া দিছি!’ রাস্তার ধুলামাটি ও কফথুতু মাখা পায়ে চিৎপটাং রাষ্ট্রপতির কপালে ও মাথায় সে কয়েকটা লাথি মারে। ভাঙা কাচে তার পা কেটে যায়, ভাঙা কাচের নিচে ধুলাবালিরক্তকফথুতু লেগে রাষ্ট্রপতির চেহারা ঘোলাটে হয়; ফলে ছোটো চোখ জোড়ায় কোচকানো অভিব্যক্তি মুছে যায়।
মিছিলের অনেকে রাস্তা থেকেই চিৎকার করে, ‘দালালের দোকান জ্বালাইয়া দাও! ছাত্রদের সবাই ক্লান্ত। এই উত্তেজনায় সাড়া না দিয়ে তাদের কেউ কেউ চেয়ারে বসে পড়েছে। সকাল থেকে মিটিং করে, জানাজা করে, মিছিলে হেঁটে ও স্লোগান দিয়ে ক্লান্ত ছেলেদের কেউ বসে বা কেউ দাঁড়িয়ে টেবিলের রেজালা বা ডাল-গোশত বা স্টু বা চাপ অথবা ফিরনি গিলতে থাকে। ম্যানেজারের ইঙ্গিত ছিলো কি-না কে জানে, বেয়ারাদের প্রায় সবাই এই সব টেবিলে খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখে। ১টি রোজদার ছেলেও ফিরনি খেয়ে ফেলেছিলো, হঠাৎ মনে পড়ায় সে লাফিয়ে ওঠে, দূর রোজাটা নষ্ট হলো কিছুক্ষণ পরে ছেলেরা সব বেরিয়ে যায়। পিচ্চির দল জুলজুল করে এদিক ওদিক দ্যাখে। ১টা পিচ্চি এগিয়ে এসে টেবিলে রাখা গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকচক করে পানি খায়। ম্যানেজারের মুখ ঘামে স্যাঁতসেতে। খসখসে গলায় সে হঠাৎ খেকিয়ে ওঠে, এই শালা ফকুরনির পুত, গ্লাস ধরছস কারে কইয়া? অন্য কোনো পিচ্চি এরপর আর কোনো গ্লাস স্পর্শ করে না বটে, তবে এদের ১জন বলে, ‘এতো গরম দ্যাহান ক্যান? পানিই তো খাইছে, আর কি? দরজার দিকে তাকিয়ে ম্যানেজার কিছুই বলে না। মিছিলের শ্লোগানে সাড়া দিয়ে পিচ্চির দল বাইরে চলে যায়।
রাস্তায় নামবার পরও ওসমানের উত্তেজনা কমে না, এই শালা দালালের রেস্টুরেন্ট জ্বালিয়ে দিলে ভালো হতো।
সিকানদার বিরক্ত হয়, আপনারা বাড়াবাড়ি করেন। ম্যানেজার আইবি-র লোক হইতে পারে।’
মিছিলে লোক তেমন নাই। মনে হতে পারে শো ভাঙার পরে সিনেমা হল থেকে লোক ঘরে ফিরে যাচ্ছে। ফরিদ বলে, সামনে চলো। সামনে মালঝাল। আর ন্নাহ শওকত হতাশ হতাশ ভঙিতে বলে, ‘মেয়ে পাবেন কোথায়? ছাত্রই তো কম। সব লেবার আর স্ট্রিট আর্চিনস! আলতাফ সায় দেয়, হ্যাঁ। আন-অর্গানাইজড প্রসেশন। মিছিলের প্রোগ্রাম ছিলো না।’ ‘তোমাদের কোন কাজটা প্রোগ্রাম অনুসারে হচ্ছে? আনোয়ার ঠাট্টা করে, একেকটা ঘটনা ঘটে যায় আর লিডাররা সবই তাদের প্রোগ্রামে ইনকুড করে। আলতাফ জবাব না দিলে শওকত হেসে ফেলে, লিডারদের কাজ হলো এডিটিং। কোন কাজটা তারা করেনি আর কোন কাজটা তাদের নেতৃত্বে হলো তাই ডিসাইড করা। এ্যাঁকশন উইথ রেট্রোস্পেক্টিভ এফেক্ট। এবার সবাই, এমনকি আলতাফও খুব হাসে। অবশ্য ওসমান গনি বাদে। কারণ সে চলে গেছে একটু সামনে। এদের মধ্যে স্লোগানের জবাব দিচ্ছে সে একাই। কিছুক্ষণ যাবার পর দ্যাখে ডানদিকে বংশাল থেকে বেরিয়ে লাল রঙের বন্ধ ১টি গাড়ি নবাবপুর দিয়ে রায়সাহেবের বাজারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গাড়িটা দেখতে অনেকটা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির মতো, আবার অনেকটা এ্যাঁম্বুলেন্সের মতো। বেশ বড়ো গাড়ি, তাড়াতাড়ি যাচ্ছে, কিন্তু হর্ন টর্ন দেওয়ার বালাই নাই। বুলেট প্রফ নীলচে কালো কাচের আড়ালে কাউকে দ্যাখা যায় না। হঠাৎ মনে হয় গাড়িটার ভেতরে বোধ হয় কোনো মানুষ নাই। —ওসমানের বুকের ভেতর ছমছম করে, সে আরো তাড়াতাড়ি হাঁটে। এমনিতেও তাড়াতাড়ি না হেঁটে উপায় নাই, এই লেবার ধরনের লোকদের ধ্যাবড়া পায়ের সঙ্গে তাল মেলানো বড়ো শক্ত।
এই ওসমান ওসমান’ আনোয়ার ডাকলে সে পেছনে ফিরে তাকায়। আনোয়ার বলে, দাঁড়াও! ওদিকে ফায়ারিং হচ্ছে।’
‘কোনদিকে? ওসমান জিগ্যেস করতে না করতে রায়সায়েবের বাজারের দিক থেকে বহু লোককে দৌড়ে এদিকে আসতে দ্যাখা যায়। পুরুষ্ট হয়ে মিছিল এবার বইছে উল্টোদিকে। ফের একটা গুলির আওয়াজ হলো। ওসমানের হাত ধরে আনোয়ার রাস্তা ক্রস করতে করতে বলে, ‘এবার টিয়ার গ্যাস ছুড়লো। ঐ শালা রায়ট কার দেখেই আমি ভয় পাচ্ছিলাম শালারা একটা কিছু করবে। দৌড়ে পালাচ্ছে মানুষ, তাদের ভেতর দিয়ে রাস্তা ক্রস করা মুশকিল। তাজ হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো চিনাবাদাম, চালভাজা ও ছোলাভাজার ঠেলাগাড়ি, হুট করে গোলক পাল লেনের ভেতর ঢুকে পড়ে। ওসমানের ইচ্ছা করছিলো পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে মাখানো চালভাজা ছোলাভাজা খাবে। হলো না। আনোয়ার তার হাত ধরে টানতে টানতে বলে, তাড়াতাড়ি এসো না!

Category: চিলেকোঠার সেপাই (উপন্যাস)
পূর্ববর্তী:
« চিলেকোঠার সেপাই – ০৩
পরবর্তী:
চিলেকোঠার সেপাই – ০৫ »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑