বিষাদকে অন্তরালে রেখে

জ্বলজ্বলে একটি আসর ছিল, মাঝে মাঝে আমরা ক’জন
উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব কি পশ্চিম থেকে এসে
যে যার আসনে বসতাম। সে আসরে সূর্যোদয়, গোধূলিতে
রঙ আর জ্যোৎস্নার জোয়ার ছিল ঝিলের কিনার, সচকিত
হরিণের জলপান ছিল,
ঝাউপাতা আর দোয়েলের গান ছিল। কোনও কোনও
মধ্যরাতে অকস্মাৎ দূরের আকাশ থেকে নেমে
নক্ষত্রেরা জুড়ে দিত নাচ আর আমরা ক’জন
মুগ্ধতায় মনের গহনে
দিতাম ডুবসাঁতার বিষাদকে অন্তরালে রেখে।

সকলের নয়, কারও কারও মনের নানান স্তরে
থাকে কিছু অন্ধকার-সেই অন্ধকার
কখনও কখনও লকলকে জিভ হয় লোভে আর
লালসায়, কখনও-বা ফণা হয়ে কাউকে কাউকে
ছোবলায়, জানা ছিল বান্ধব তোমার।

ছিলাম সবাই রাজা, ছিল না প্রজার
ধাঁচ কারও, সে তোমারই নেপথ্য আচারে। কী-যে হ’লে,
একদিন, বন্ধু তুমি, কাউকে কিছু না বলে সে আসর ছেড়ে
উঠে গেলে। ফিরলে না আর।

কোন্‌ অভিমানের কুয়াশা
তোমাকে রাখত ঘিরে? তোমার হাসির অন্তরালে
বেদনার কিছু মেঘ জমেছিল, অনেক প্রহর
তোমার প্রফুল্ল সাহচর্যে কাটিয়েও কখনও পাইনি টের।
‘গুডবাই’ ছিল না তোমার ওষ্ঠে, এমন নিভিয়ে,
ভাবতে পারিনি। আমাদের
ব্যাকুল আহ্বান ব্যর্থ হলো, ব্যর্থ হতে
থাকবে সর্বদা। একে-একে
আমরা সবাই যাব, চলে যাব, জানি না কখন;
এই আসরের গল্প বলবার মতো থাকবে না কেউ আর।