ধর্ম ও দর্শন
বিজ্ঞান
সাহিত্য
1 of 2

লুই পাস্তুর (১৮২২–১৮৯৫) – জীবাণু আর জলাতঙ্ক রোগ প্রতিষেধকের আবিষ্কারক

লুই পাস্তুর (১৮২২–১৮৯৫) – জীবাণু আর জলাতঙ্ক রোগ প্রতিষেধকের আবিষ্কারক

সেবার স্কুল থেকে ফেরার পথে জোসেফ মেইস্টার নামের এক ছেলেকে কামড়ালো পাগলা কুকুরে। ছেলের বাবা এলেন বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের কাছে। তিনি নিজের আবিষ্কৃত একটা ঔষধের ইনজেকশন দিয়ে দিলেন ছেলেটাকে। তার আর জলাতঙ্ক রোগ হলো না। অথচ এর আগে কাউকে পাগলা কুকুরে কামড়ালেই তার নির্ঘাত এই রোগ হতো এবং মারা যেত। আর এ-ভাবেই দেশ জুড়ে নাম ছড়িয়ে পড়ল লুই পাস্তুরের। তিনি সবার কাছে পরিচিত হলেন জলাতঙ্ক রোগের ডাক্তার হিসেবে, অথচ কোনোদিনই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ডাক্তারি পড়েননি।

বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের জন্ম ১৮২২ সালের ২২ ডিসেম্বর ফ্রান্সের দোলে শহরের নিকটবর্তী জুরা পর্বতের ঢালের এক গাঁয়ে। বাবা ছিলেন ধনী চামড়া ব্যবসায়ী। লুই পাস্তুর পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। তাই তাঁর বাবার ইচ্ছে ছিল লুই বড় হয়ে অধ্যাপক হবে। ছেলেকে যেন তাঁর মতো চামড়ার ব্যবসায়ী হয়ে জীবন কাটাতে না হয়। প্রথমে গাঁয়ের পাঠশালাতেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। তারপর তেরো বছর বয়সে তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় কলেজ ডি’ অ্যারবয়ে কলেজের স্কুল শাখায়।

ভালো ছাত্র হিসেবে অল্পদিনের মধ্যেই তিনি প্রধান শিক্ষক এম. রোমানের সুনজরে পড়ে যান। তিনি তাঁর মেধা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখে চমৎকৃত হন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই ছেলে ভবিষ্যতে বড় একটা কিছু করবে। তাই তিনি লুই পাস্তুরকে তাঁর নিজের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাজধানী শহর প্যারিসের কামকরা বিদ্যাপীঠ ইকোলে নরম্যাল স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানে তিনি একটি বৃত্তিও লাভ করেন। কিন্তু এই স্কুলের পড়াশোনা শেষ হবার কিছুদিন আগে অসুস্থতাজনিত কারণে বাবা তাঁকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।

সুস্থ হওয়ার পর তার জন্মশহর ডোলের একটি অতি সাধারণ স্কুলে আবার ভর্তি করিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। সেখান থেকেই তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা ভালোভাবে পাস করেন।

স্কুল পাস করার পর তিনি বেস্যানকোঁ শহরে এসে রয়্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৪২ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য আবার ফিরে আসেন রাজধানী প্যারিসে।

এখানকার নরম্যাল কলেজের স্কুল শাখায় এর আগে তিনি কিছুদিন পড়াশোনা করেছিলেন। উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ইকোলে কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় আবার অংশ নেন তিনি। মোট ২২ জন প্রার্থীর মধ্যে তিনি পঞ্চদশ স্থান অধিকার করেন। লুই পাস্তুরের মতো মেধাবী ছাত্রের জন্য এটা কোনোমতেই ভালো ফল ছিল না। তাই তিনি ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও মনের দুঃখে ইকোলেতে ভর্তি হলেন না। প্রতিজ্ঞা করলেন, এখানে যদি পড়তেই হয়, তবে তাঁকে ভালো ফল করেই আসতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার জন্য আবার তিনি পড়াশোনায় আত্মনিয়োগ করলেন।

তিনি পরের বছর আবার অ্যাডমিশন টেস্ট দিলেন। এবার হলেন চতুর্থ। এবার তিনি কিছুটা খুশি। তিনি ইকোল কলেজে রাসায়নশাস্ত্রে ভর্তি হলেন। এই কলেজ থেকেই তিনি ১৮৪৭ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

শিক্ষাজীবন শেষ করার পরপরই অর্থাৎ ১৮৪৮ সাল থেকেই শুরু হয় তাঁর গবেষকের জীবন।

প্রথমেই তিনি শুরু করেন টারটারিক অ্যাসিড নিয়ে গবেষণা। এই সময় বিজ্ঞানী মিচেরলিচ গভীর সমস্যায় পড়ে যান এই টারটারিক অ্যাসিড নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে।

তিনি লক্ষ করেন, তাঁর অ্যাসিডের চারপাশ ঘিরে আছে দুধরনের রাসায়নিক পদার্থ দুটোই দেখতে প্রায় একই রকম। কিন্তু দুটোর প্রকৃতি ভিন্ন। অথচ দুটোর মধ্যকার রাসায়নিক গঠন-প্রকৃতি একই ধরনের। সবথেকে মজার ব্যাপার, এ দুটো অ্যাসিডের মধ্যে সূক্ষ্ম আলোকরেখা বিচ্ছুরিত করলে একটি অ্যাসিডের মধ্য দিয়ে আলো পার হয়ে যায়, কিন্তু অপরটির মধ্য দিয়ে আলো বেঁকে যায়। কেন এমন হয়, সেটা তিনি বুঝতে পারছিলেন না।

এরপর পাস্তুর অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করলেন। এক পর্যায়ে দেখলেন, অ্যাসিডের স্ফটিকের আছে রাসায়নিক পদার্থের দুটো গোত্র। এর একটিতে এক ধারে লেগে আছে অতিক্ষুদ্র পলের আবরণ এবং অন্যটিতে আছে অপর পাশে পলের আবরণ। এদের এক গোত্রের পলের আবরণ আশ্চর্যজনকভাবে আলোক রশ্মিকে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু অপরটির আবরণ ভেদ করেই আলো যেতে পারে। তবে এ দুটো পলের আবরণের মধ্যে কেন এই পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছে, তিনি সেটা বুঝতে পারছিলেন না। এরপর তিনি দুটো পলের আবরণকেই একত্রিত করে মিশিয়ে দিলেন। তাতে ফল পাওয়া গেল। এবার আলোকরশ্মি ভেদ করতে পারল পলের আবরণ। এমনি করে পাস্তুর তাঁর সর্বপ্রথম বিজ্ঞান গবেষণায় সাফল্য লাভ করলেন।

তিনি অনুমান করলেন, হয়তো এদের মধ্যকার অ্যাটমের গঠনবৈশিষ্ট্যের পার্থক্যের জন্যই এরকমটা হচ্ছে। কিন্তু একান্ত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পাস্তুরের পক্ষে বস্তুর পরমাণুর গঠন-বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তখনই দেখা সম্ভব হয়নি। কারণ, তখনও পরমাণু বিশ্লেষণ করার মতো বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারই হয়নি। লুই পাস্তুরের এই গবেষণার ফলেই বিজ্ঞানের একটি নতুন শাখার জন্ম হয়—স্টেরিওকেমিস্ট্রি। তারও বহু বছর পরে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে পাস্তুরের সূত্র প্রমাণ করে দেখা সম্ভব হয়েছে।

লুই পাস্তুর শুধু বিজ্ঞান গবেষণা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন না, তিনি ১৮৪৮ সালে রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। এই সময় ফ্রান্সে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে গিয়ে ন্যাশনাল গার্ড-এর পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কাজ করেন। সেই বছরেরই শরৎকালে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এই মর্মে নিয়োগপত্র পেলেন যে, তাঁকে শিক্ষকতার পদে ডিজোঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে হবে।

অবশ্য এর পেছনে কারসাজি ছিল তাঁরই শুভাকাঙ্ক্ষী দুজন শিক্ষক অধ্যাপক বিয়ো এবং অধ্যাপক বালার্ড-এর।

এঁরা যখন দেখলেন, পাস্তুরের মতো একজন প্রতিভাবান ছেলে রাজনীতিতে নেমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাই তাঁকে আবার শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধরে গোপনে তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু পাস্তুর এই চাকরিতে যোগদান না করে দক্ষিণ ইউরোপের দেশসমূহে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।

এরপর তিনি স্ট্রাসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি অধ্যাপনা করেন মোট পাঁচ বছর।

এই সময় স্ট্রাসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ছিলেন প্রফেসার এম. লোরেঁ। বিভিন্ন উপলক্ষে তিনি প্রায়ই লোৱেঁর অফিসে ও বাসায় যেতেন। সেখানেই সাক্ষাৎ হয় মেয়ে ম্যারি লোরের সঙ্গে। প্রথম দর্শনেই প্রেম। তারপর কয়েক মাসের মধ্যেই ১৮৪৯ সালের ১৯ মে ম্যারিকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করেন পাস্তুর।

রাজনীতি ও বিয়ে করা এবং অধ্যাপনার কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও পাস্তুর টারটারিক অ্যাসিডের ওপর তাঁর গবেষণা অব্যাহত রাখেন। অবশেষে ১৮৫৩ সালে এ ব্যপারে তিনি কিছুটা সাফল্য অর্জন করেন। তিনি এই অ্যাসিডের প্রকৃতিতে কিছুটা পরিবর্তন ঘটাতেও সক্ষম হন।

এই সময় একদিন তিনি লক্ষ্য করলেন, অ্যাসিড সলিউশনের চারপাশে একধরনের ছত্রাক গজিয়েছে। এই ছত্রাকগুলোর দিকে আলোর রেখা প্রেরণ করলে আলোর রেখাকে শুধু বাঁদিকে বেঁকে যেতে দেখা যায়। ফলে তিনি আরও পরীক্ষা চালিয়ে দেখলেন যে, এর মধ্যে আছে একধরনের জীবন্ত বস্তু বা জীবাণু। এর জীবাণুরা শুধু অ্যাসিডের একটিমাত্র অণুকেই পছন্দ করে তার দিকে ধাবিত হয়। এই থেকেই লুই পাস্তুর জীবাণুর কার্যক্ষমতা নির্ণয় করতে সক্ষম হন। তিনি দেখলেন, অ্যাসিডের মধ্যকার জীবাণুরাই অ্যাসিডের গুণগত মানের পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে।

এই সময় লুই পাস্তুর লিলি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও ডিনের পদে নিয়োগপত্র লাভ করেন।

ঠিক একই সময় পাউসেট নামের একজন বিজ্ঞানী পরীক্ষা করে ঘোষণা দিলেন যে, জীব থেকেই জীবের জন্ম। জীবাণু থেকেই জীবাণুর উৎপত্তি। কিন্তু লুই পাস্তুর বললেন, না, তা নয়। জীব বা জীবাণু আপনা থেকেও জন্মাতে পারে। তিনি ব্যাপারটা পরীক্ষা করেই দেখালেন।

আরেক দিন এক মদের ব্যবসায়ী এলেন তাঁর কাছে। তিনি বিট থেকে মদ তৈরি করতেন। কিন্তু তাঁর তৈরি মন স্বল্প ক’দিনের ব্যবধানেই কেন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তার সমাধান পেতে তাঁরা পাস্তুরের কাছে যান।

পাস্তুর পরীক্ষা করে দেখলেন—চিনি গাঁজিয়ে ওঠার জন্যেই মদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চিনিকে গাঁজিয়ে তোলে এক ধরনের জীবাণু। তিনি এই জীবাণুনাশের ব্যবস্থা করলেন। তার পর থেকে আর মদ নষ্ট হতো না।

একবার ফ্রান্সের এক গুটিপোকার চাষের খামারে মড়ক শুরু হয়। ডাকা হলো পাস্তুরকে। তিনি এসে দেখলেন, এক ধরনের জীবাণুই এই মড়কের মূল কারণ। তিনি এই জীবাণুধ্বংসের ব্যবস্থা করলেন। ফরে মড়ক বন্ধ হলো। রক্ষা পেল কোটি টাকা মূল্যের খামার।

১৮৫৭ সালে লুই পাস্তুর লিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্যারিসের ইকোলে নরম্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ১৮৬২ সালে তিনি অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের সদস্য নির্বাচিত হন।

ফ্রান্সে তখন অ্যানথ্রাক্স নামে এক বিচিত্র রোগে প্রতি বছর হাজার হাজার জীবজন্তু মারা পড়ত। পাস্তুর লক্ষ্য করলেন, মৃত পশুর শরীরের রক্তে এক ধরনের জীবাণু রয়েছে। আর এ-কারণেই এই রোগ হয়ে থাকে।

তিনি আরও লক্ষ্য করলেন, যদি এই রোগের জীবাণু অল্প পরিমাণে কোনো পশুর শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেই পশুটি সামান্য পরিমাণে রোগাক্রান্ত হলেও সে তার নিজের দেহে একটি প্রতিরোধ ক্ষমতাও গড়ে তুলতে পারবে। ফরে সে আর ঐ রোগে আক্রান্ত হবে না।

লুই পাস্তুর দেশের বহু বিজ্ঞানীকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁদের সামনেই এই পরীক্ষা করে তাঁর আবিষ্কৃত তথ্যের সত্যতা প্রমাণ করে দেখালেন।

তবে পাস্তুরের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হল জলাতঙ্ক রোগের কারণ ও তার নিবারণের উপায় উদ্ভাবন এর জন্যই তিনি বিশ্বে অমর হয়ে থাকবেন।

একবার ফ্রান্সে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরের জনপ্রিয়তার ব্যাপারে জরিপ চালানো হয়। এই জরিপের ফলাফলে তিনি পেয়েছিলেন সর্বাধিক সংখ্যক ভোট। দ্বিতীয় হয়েছিলেন সম্রাট নেপোলিয়ন আর তৃতীয় স্থানে ছিলেন ভিক্টর উগো।

সারা দেশে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল বিস্ময়কর। তেমনি বিদেশেও। একবার ১৮৮২ সালে লন্ডনে বিজ্ঞানীদের এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ফ্রান্স থেকে তাতে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয় বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরকে। তিনি যখন অধিবেশন হলে গিয়ে পৌঁছুলেন, তখন সম্মেলনস্থল লোকে লোকারণ্য।

লুই পাস্তুর ভাবলেন, নিশ্চয়ই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজা আসছেন সম্মেলনকক্ষে এর উদ্বোধন করার জন্য। তাই হয়তো প্রজারা তাঁকে এক নজর দেখার জন্য এমন ভিড় করেছে। এত উল্লাস করছে। লুই পাস্তুর কংগ্রেসের সভাপতিকে বললেন, নিশ্চয়ই এখন রাজা আসছেন, তাই সবাই এত জয়ধ্বনি করছে?

কংগ্রেস সভাপতি হেসে বললেন, না, তিনি এখন আসছেন না।

–তা হলে ওরা এত জয়ধ্বনি করছে কেন?

—ওরা আপনাকেই অভিনন্দন জানাচ্ছে। কেবল আপনাকেই দেখার জন্য এখানে ভিড় করেছে। আপনি এ অধিবেশনে আসছেন, এ খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেজন্যই ওরা এসেছে আপনাকে এক নজর দেখতে।

এই ছিলেন লুই পাস্তুর। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, পৃথিবীতে যে-মানুষটি মানবসমাজের সবচেয়ে বেশি কল্যাণসাধন করে গেছেন, তিনি অন্য আর কেউ নন, লুই পাস্তুর।

১৮৬৮ সালের প্রথমদিকে তাঁর জীবনে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। তাঁর দুটি নাবালিকা কন্যাই প্রায় একইসাথে মৃত্যুবরণ করে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় তিনি খুবই ভেঙে পড়েন। ফলে সেই বছরেরই ১৯ অক্টোবর তারিখে তাঁর স্ট্রোক হয়। এতে তাঁর শরীরের অংশবিশেষ অবশ হয়ে যায়। পরে সামান্য সুস্থ হয়ে তিনি আবার চাকরিতে যোগদান করেন।

এরপরও তিনি পঙ্গু শরীর নিয়েই কাজ চালিয়ে যান এবং জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন। শেষ জীবনে পাস্তুর তাঁর গবেষণার জন্য, বিশেষ করে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ও সম্মান লাভ করেন।

তাঁর মৃত্যু হয় ১৮৯৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। ফ্রান্সে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি গবেষণা কেন্দ্রের চত্বরেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। আজও লাখো ভক্ত তাঁকে প্রতিদিন শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে গিয়ে থাকেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *