গল্প
উপন্যাস
পরিশিষ্ট

১১. জয়নাগ

একাদশ পরিচ্ছেদ – জয়নাগ

বজ্র রাজপথ ধরিয়া দক্ষিণ দিকে চলিতে আরম্ভ করিল। একপাশে বিপুলবক্ষা জাহ্নবী, অপরপাশে নিবিড়কুন্তলা বনানী, মাঝখানে প্রস্তর-খচিত উচ্চ পথ যেন সন্তর্পণে দুই দিক বাঁচাইয়া চলিয়াছে। আকাশে প্রখর রৌদ্র, কিন্তু ভাগীরথীর জলস্পর্শীশীতল বায়ু মন্দ মন্দ প্রবাহিত হইয়া পথিকের পথ-ক্লেশ নিবারণ করিতেছে।

রাজপথে যাত্রীর বাহুল্য নাই। কদাচিৎ দুই একটি সৈনিকবেশধারী অশ্বারোহী দক্ষিণ হইতে উত্তরে কিম্বা উত্তর হইতে দক্ষিণে মন্দ-স্বচ্ছন্দ গতিতে চলিয়া যাইতেছে, অন্যথা পথ নির্জন। নদীতীরে জনবসতি নাই, সম্ভবত প্রতি বৎসর বর্ষাকালে গঙ্গার তুঙ্গস্ফীত জলধারা কূল ভাসাইয়া লইয়া যায়, তাই মানুষ এখানে বাসস্থান রচনা করিতে সাহসী হয় নাই। ক্রোশের পর ক্রোশ জনহীন বেলাভূমি; কোথাও কাশের স্তম্ব জন্মিয়াছে, কোথাও বালুময় সৈকতে সঙ্গিহীন সারস এক পা তুলিয়া নিশ্চল দাঁড়াইয়া আছে, কোথাও বা উচ্চ পাহাড়ের গায়ে কোটরবাসী অসংখ্য গাঙ-শালিখের কিচিমিচি।

স্থল অপেক্ষা জলে বরং মানুষের চিহ্ন কিছু অধিক পাওয়া যায়। গঙ্গার স্রোতে দূরে দূরে ছোট ছোট ডিঙি ও ভরা ভাসিতেছে। কখনও বড় বহিত্র পাল তুলিয়া মরালগমনে চলিয়াছে; দূর হইতে তাহার পট্টপত্তনের উপর মানুষের সচল আকৃতি দেখা যাইতেছে। সব মিলিয়া বহিঃপ্রকৃতির একটি নিশ্চিন্ত নিরুদ্বেগ রূপ : তৎপরতা আছে কিন্তু ত্বরা নাই।

সূর্য মধ্যগগনে আরোহণ করিলে বজ্র পথপার্শ্বের এক বৃহৎ অশ্বত্থতলে আসিয়া দাঁড়াইল। প্রাতঃকাল হইতে অনেকখানি পথ হাঁটা হইয়াছে, এইবার একটু বিশ্রাম করা যাইতে পারে। জঠরে অগ্নিদেব জ্বলিতে আরম্ভ করিয়াছে, তাঁহারও শান্তিবিধান আবশ্যক।

কিন্তু সর্বাগ্রে গঙ্গায় অবগাহন স্নান। বজ্র অশ্বত্থের ছায়াতলে খাদ্যের পুঁটুলি রাখিয়া তীরের দিকে অগ্রসর হইল।

নদীতট এইখানে ঢালু হইয়া জলে মিশিয়াছে। বজ্র চকিত হইয়া দেখিল, জলের কিনারায় একটা উলঙ্গপ্রায় মানুষ দাঁড়াইয়া আছে এবং গামছার মত রক্তবর্ণ একটি বস্ত্রখণ্ড ঊর্ধ্বে তুলিয়া নাড়িতেছে। মানুষটার দৃষ্টি ছিল নদীর দিকে, তাই সে প্রথমে বজ্রকে দেখিতে পায় নাই। কিন্তু বজ্র যখন তীরে নামিয়া গেল তখন তাহাকে দেখিয়া সে এমনভাবে চমকিয়া উঠিল যেন সে কোনও গর্হিত কার্যে ধরা পড়িয়াছে।

বজ্র লোকটিকে দেখিয়া ঈষৎ বিস্মিত হইয়াছিল কিন্তু কোনও প্রকার সন্দেহ তাহার মনে উদয় হয় নাই। লোকটির পরিধানে কেবল কৌপীন, গামছার মত বস্ত্রখণ্ডটি সম্ভবত তাহার কটিবাস। বজ্র ভাবিল, লোকটি হয়তো যাযাবর সম্প্রদায়ের ভিক্ষু, স্নান করিয়া কটিবাস শুকাইতেছে। সে আর তাহাকে লক্ষ্য করিল না, জলে নামিয়া পরম আরামে স্নান করিতে লাগিল।

লোকটি কিন্তু চোখে উৎকণ্ঠা ভরিয়া বারবার তাহার পানে চাহিতে লাগিল। তাহার আকৃতি দীর্ঘায়ত ও দৃঢ়, মুখে ঈষৎ শ্মশ্রুগুম্ফ আছে, কিন্তু দেখিলে সাধু-বৈরাগী বলিয়া মনে হয় না! মুখে উদাসীনতা বা বৈরাগ্যের চিহ্নমাত্র নাই।

অবশেষে লোকটি কথা কহিল, ছদ্ম তাচ্ছিল্যের সহিত বলিল— ‘তুমি দেখছি দূরের যাত্রী। কোথা থেকে আসছে?’

বজ্র গাত্র-মার্জন করিতে করিতে বলিল— ‘উত্তরের গ্রাম থেকে।’

‘তুমি গ্রামবাসী! কোথায় যাবে?’

‘কর্ণসুবর্ণে।’

‘আগে কখনও কর্ণসুবর্ণে গিয়েছ?’

অপরিচিত ব্যক্তির এত অনুসন্ধিৎসা বজ্রের ভাল লাগিল না, তবু সে সহজভাবেই উত্তর দিল— ‘না। — তুমি কে?’

লোকটি অমনি নিজেকে ভিতরে গুটাইয়া লইল।

‘আমি পরিব্রাজক।’

বজ্র আর প্রশ্ন করিল না। লোকটি একটু নীরব থাকিয়া আবার বলিল— ‘কর্ণসুবর্ণে কী কাজে যাচ্ছ?’

বজ্র এবার সতর্ক হইল। তাহার মনে হইল লোকটি কেবল কৌতূহলবশেই প্রশ্ন করিতেছে না, কোনও গূঢ় অভিসন্ধি আছে। বজ্র উত্তর দিল— ‘গ্রামে কাজকর্ম নেই, তাই নগরে যাচ্ছি যদি কিছু কাজ পাই।’

স্নান সারিয়া সে তীরে উঠিল। লোকটি কিন্তু ছাড়িবার পাত্র নয়, আবার প্রশ্ন করিল— ‘তোমার হাতে ও কিসের অঙ্গদ? সোনার?’

বজ্র লঘুস্বরে বলিল— ‘না, পিতলের। সোনা কোথায় পাব?’

সে বস্ত্র পরিধান করিয়া অশ্বত্থতলে ফিরিয়া গেল, পাতার মোড়ক খুলিয়া আহারে বসিল। প্রচুর কুক্কুট মাংস ও কয়েকটি সুপক্ক কদলী। পরম তৃপ্তির সহিত তাহাই আহার করিতে করিতে বজ্র গলা বাড়াইয়া দেখিল লোকটি তখনও নদীতীরে দাঁড়াইয়া আছে, মাঝে মাঝে অশ্বত্থ বৃক্ষের পানে সংশয়পূর্ণ পশ্চাদ্দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছে, আবার নদীর দিকে ফিরিয়া বস্ত্র আন্দোলিত করিতেছে।

বজ্রের কৌতূহল বৃদ্ধি পাইল। লোকটি কে? এমন অদ্ভুত আচরণ করিতেছে কেন? বজ্র আহার করিতে করিতে গলা উঁচু করিয়া দেখিতে লাগিল।

কিছুক্ষণ কাটিবার পর দেখা গেল গঙ্গাবক্ষে একটা দীর্ঘ শীর্ণ ডিঙা তীরের দিকে আসিতেছে। ডিঙাতে আট দশজন লোক একের পর এক বসিয়া আছে, চারিটি দাঁড়ের আঘাতে ডিঙা হিংস্র হাঙ্গরের ন্যায় ছুটিয়া আসিতেছে।

তীরের কাছাকাছি আসিলে ডিঙার লোকগুলা একসঙ্গে বলিয়া উঠিল— ‘জয়নাগ।’

তীরের লোকটি উত্তর দিলে— ‘জয়নাগ।’

ডিঙা তীরে ভিড়িল। দুইজন দাঁড়ী ছাড়া আর সকলে নামিয়া পড়িল। তখন ডিঙা আবার মুখ ঘুরাইয়া দূর পরপারের পানে ছুটিয়া চলিয়া গেল।

যে কয়জন লোক আসিয়াছিল তাহারা সকলে তীরস্থ ব্যক্তিকে ঘিরিয়া ধরিল। তাহারা সকলেই দৃঢ়কায় বলবান ব্যক্তি, বেশবাস প্রায় তীরস্থ ব্যক্তির ন্যায়। দেখিলে মনে হয় তাহারা একই সম্প্রদায়ের লোক।

তীরস্থ ব্যক্তি মৃদুকণ্ঠে অন্যদের কিছু বলিল; অন্যেরা ভ্রূকুটি করিয়া অশ্বত্থতলের দিকে তাকাইতে লাগিল।

বজ্র একটু অস্বস্তি অনুভব করিল। লোকগুলার আচরণ রহস্যময়; ইহারা যদি দস্যু-তস্কর হয় তাহা হইলে এতগুলা লোকের বিরুদ্ধে তাহার একার কোনও আশা নাই। কিন্তু বিপদের মুখে পলায়ন করা তাহার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। সে বসিয়া আহার করিতে লাগিল।

লোকগুলা নিম্নকণ্ঠে জল্পনা করিল। তারপর একের পর এক সারি দিয়া অশ্বত্থ বৃক্ষের পাশ দিয়া উপরে উঠিতে লাগিল। বজ্রের নিকট দিয়া যাইবার সময় তীক্ষ্ণভাবে তাহাকে নিরীক্ষণ করিয়া গেল। বজ্র নিরুৎসুকভাবে তাহাদের পর্যবেক্ষণ করিল।

বজ্র দেখিল নূতন লোকগুলি রাজপথ লঙ্ঘন করিয়া ওপারের জঙ্গলে অদৃশ্য হইয়া গেল, কেবল পুরানো লোকটি গেল না। সে বন্ধুভাবে বজ্রের কাছে আসিয়া দাঁড়াইল, হাসিয়া বলিল— ‘তুমি বোধহয় জান না আমরা কে?’

বজ্র মাথা নাড়িয়া বলিল— ‘না।’

‘আমরা নাগ সম্প্রদায়ের পরিব্রাজক। দেশে দেশে ঘুরে বেড়াই।’

বজ্র সামান্য কৌতূহল প্রকাশ করিল— ‘তাই বুঝি জয়নাগ বললে।’

‘হাঁ। জয়নাগ শুনলে আমাদের দলের লোককে চিনতে পারি। তুমি যাদের দেখলে ওরা পুণ্ড্রদেশে তীর্থপর্যটনে গিয়েছিল।’

লোকগুলিকে দেখিলে পুণ্যলোভী তীর্থপর্যটক বলিয়া মনে হয় না, কিন্তু বজ্র তাহা বলিল না। তাহার ভোজন শেষ হইয়াছিল, সে নদীতে গিয়া হাত মুখ ধুইল, জল পান করিল। বলিল— ‘আমি এবার চললাম। তুমি কি এখানেই থাকবে?’

নাগ পরিব্রাজক একবার দূরে গঙ্গার অপর পারে দৃষ্টি প্রেরণ করিল, অবহেলাভরে বলিল— ‘আমরা কখন কোথায় থাকি ঠিক নেই। তুমি চললে? ভাল। তোমার যেমন চেহারা নিশ্চয় রাজার সৈন্যদলে কর্ম পাবে।’

বজ্র ক্ষণেক ইতস্তত করিয়া বলিল— ‘রাজার নাম কি?’

পরিব্রাজক চক্ষু কুঞ্চিত করিয়া বলিল— ‘তুমি গৌড়ের মানুষ, রাজার নাম জান না?’

‘না। কী নাম?’

পরিব্রাজক ঔদাসীন্যের অভিনয় করিয়া বলিল— ‘কে জানে। আমরা নাগপন্থী বৈরাগী, রাজা-রাজ্‌ড়ার সংবাদ রাখি না।’

বজ্র একটু হাসিয়া যাত্রা করিল। সে বুঝিয়াছিল ইহারা ভণ্ড বৈরাগী, ইহাদের কোনও গুপ্ত অভিসন্ধি আছে; কিন্তু কী অভিসন্ধি তাহা অনুমান করা তাহার সাধ্য নয়। সে পথ চলিতে চলিতে ভাবিতে লাগিল, নগর এখনও দূরে কিন্তু ইহারই মধ্যে নগরের দীর্ঘ প্রলম্বিত ছায়া তাহার পথের উপর পড়িয়াছে। নদী যতই সাগরের কাছে আসিতে থাকে, সাগরের সান্নিধ্য ততই তাহার সর্বাঙ্গে স্পন্দন-শিহরণ জাগাইয়া তোলে; বজ্র দূর হইতে তেমনই নগর-রূপী মহাজলধির গভীর স্পন্দন নিজ অন্তরে অনুভব করিল। গ্রাম ও বনের অকপট ঋজুতা আর নাই, জনসমুদ্রের কুটিল নক্রসঙ্কুল আবর্ত তাহাকে টানিতে আরম্ভ করিয়াছে। গঙ্গাতীরের এই রহস্যময় ঘটনা যেন তাহারই ইঙ্গিত দিয়া গেল।

কর্ণসুবর্ণ ক্রমে নিকটবর্তী হইতে লাগিল; পথপার্শ্বের বন শেষ হইয়া মাঠ আরম্ভ হইল। দিগন্তের কাছে মহানগরীর হর্ম্যচূড়া দেখা গেল। তারপর, রাক্ষসী বেলায়, বজ্র কর্ণসুবর্ণের উপকণ্ঠে এক বিশাল সংঘারামের নিকট আসিয়া পৌঁছিল। পশ্চিম দিগন্তে তখন রক্তমসী দিয়া রাত্রি ও দিবার মধ্যে সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হইতেছে।

বজ্র দেখিল, রাজপথ ও গঙ্গার মধ্যবর্তী স্থানে বহুবিস্তীর্ণ ভবন, উচ্চ প্রাচীর দিয়া বেষ্টিত। ইহাই রক্তমৃত্তিকার বৌদ্ধ বিহার ও সংঘারাম; চলিত ভাষায় রাঙামাটির মঠ।

নগরের উপকণ্ঠে বটে, কিন্তু বিশাল সংঘারাম ব্যতীত লোকালয় বেশি নাই, কেবল আশেপাশে দুই তিনটি ক্ষুদ্র বিপণি। নগর হইতে যাহারা সংঘে পূজা দিতে আসে, পূজা দিয়া আবার নগরে ফিরিয়া যায়। সংঘে প্রায় পাঁচ শত বৌদ্ধ ভিক্ষু বাস করেন, কিন্তু স্থানটি নির্জন শব্দহীন। এখানে সকল কার্যই নিঃশব্দে অলক্ষিতে সম্পাদিত হয়।

সংঘারামের প্রশস্ত তোরণদ্বারের সম্মুখে দাঁড়াইয়া বজ্র ভিতরে দৃষ্টিপাত করিল। কবাটহীন তোরণদ্বার দিয়া সংঘভূমি দেখা যাইতেছে, কিন্তু সেখানে লোকজন কেহ নাই, দ্বারে দ্বারীও নাই। বাহিরে বিপণিগুলির আগড় বন্ধ, দোকানীরা সন্ধ্যার পূর্বেই দোকান বন্ধ করিয়া নগরে ফিরিয়া গিয়াছে।

সংঘদ্বারের দুই পাশে দুইটি দীপস্তম্ভ। সেকালে মঠ-মন্দির প্রভৃতির অগ্রে উচ্চ দীপস্তম্ভ রচনার রীতি ছিল। ইষ্টকনির্মিত স্তম্ভের সর্বাঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোটর থাকিত, পূজাপার্বণের সময় কোটরগুলিতে দীপ জ্বালিয়া উৎসবের শোভাবর্ধন হইত। বজ্র ঈষৎ বিভ্রান্তভাবে ইতস্তত দৃষ্টিপাত করিতে করিতে সহসা দেখিতে পাইল, একটি দীপস্তম্ভমূলে একজন লোক দাঁড়াইয়া আছে। তাহার বাম পদ দক্ষিণ জানু-অষ্ঠির উপর স্থাপিত, দুই হাতে যষ্টিতে ভর দিয়া এবং মস্তকটি বাহুর উপর রাখিয়া সে সারস পক্ষীর ন্যায় এক পায়ে দাঁড়াইয়া ঘুমাইতেছে।

বজ্র ত্বরিতপদে তাহার নিকটবর্তী হইতেই লোকটি চক্ষু মেলিল, দুই পায়ে দাঁড়াইল ও হাই তুলিল। তুড়ি দিয়া বলিল— ‘জয়নাগ।’

বজ্র আজ দ্বিতীয়বার ‘জয়নাগ’ শুনিল। সে চমকিয়া দাঁড়াইয়া পড়িল। মানুষটিকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিয়া দেখিল, বলবান হৃষ্টপুষ্ট লোক, কিন্তু মুখে ধূর্ততা মাখানো। বজ্র কোনও প্রশ্ন করিবার পূর্বেই সে বলিল— ‘কে বাপু তুমি, কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলে?’

বজ্র বলিল— ‘আমি পথিক, কর্ণসুবর্ণে যাব। নগর এখান থেকে কত দূর?’

লোকটি মিটিমিটি চাহিয়া বলিল— ‘ক্রোশ দুই হবে। আলোয় আলোয় নগরে পৌঁছুতে পারবে না।’

‘রাত্রে পান্থশালায় কি আশ্রয় পাব না?’

‘তুমি যদি নূতন লোক হও, রাত্রে পান্থশালা খুঁজে পাবে না।’

‘তবে উপায়?’

‘উপায় তো সামনেই রয়েছে। মঠে ঢুকে পড়, আহার আশ্রয় দুই পাবে।’

‘কিন্তু— মঠে তো কাউকে দেখছি না।’

‘ভেবেছ কি মঠ খালি?— পাঁচশ নেড়া মাথা আছে। তবে ভারি শান্তশিষ্ট। ভিতরে গেলেই দেখতে পাবে।’

লোকটির কথা বলিবার ভঙ্গি লঘুতাব্যঞ্জক, বৌদ্ধদের প্রতি তাহার বিশেষ শ্রদ্ধা আছে বলিয়া মনে হয় না। বজ্র সংঘের দিকে পা বাড়াইয়া একটু ইতস্তত করিল, বলিল— ‘তুমি কি এখানেই রাত কাটাবে? সংঘ যাবে না?’

লোকটি আবার এক পা তুলিয়া ঘুমাইবার উদ্যোগ করিল, বলিল— ‘আমার জন্যে ভেবো না। জয়নাগ।’

বজ্র প্রশ্ন করিল— ‘জয়নাগ কাকে বলে?’

‘ও একটা মন্তর’— বলিয়া লোকটি চক্ষু মুদিল।

বজ্র ভাবিতে ভাবিতে সংঘদ্বার দিয়া ভিতরে প্রবেশ করিল। এই অদ্ভুত লোকটা নাগ সম্প্রদায়ের লোক তাহাতে সন্দেহ নাই; আগন্তুক পান্থদের মধ্যে তাহার দলের কেহ আছে কিনা জানিবার জন্য এই কূট-কৌশল অবলম্বন করিয়াছে। কিন্তু কেন? কিসের জন্য এই চাতুরীপূর্ণ কপটতা?

কিন্তু এ চিন্তা বজ্রের মস্তিষ্কে অধিকক্ষণ স্থায়ী হইল না, সংঘভূমির দৃশ্য তাহার চিত্ত আকর্ষণ করিয়া লইল।