১০০. রাজগণের যুদ্ধ-ভঙ্গের বিবরণ

আশ্চর্য্য শুনিয়া তবে রাজা জন্মেজয়।
জিজ্ঞাসিল মুনিবরে করিয়া বিনয়।।
কহ মুনিবর পুনঃ অদ্ভুত এ কথা।
পৃথিবীর রাজগণ মিলেছিল তথা।।
অসংখ্য অর্ব্বুদ সৈন্য না যায় গণন।
সকলে দলিল মাত্র ভাই দুই জন।।
না চাহি দ্রুপদ নৃহে হেন অবিহিত।
ক্ষত্র হৈয়া পলাইল রণে হৈয়া ভীত।।
সমূহ ক্ষত্রিয় মধ্যে ছাড়িয়া কন্যারে।
কি বুঝিয়া পলাইয়া গেল কি প্রকারে।।
কোথা গেল ধর্ম্মরাজ সহ মাদ্রী-সুত।
কোথা গেল যদুবংশী শ্রীরাম অচ্যুত।।
ভাঙ্গিল প্রাসাদ বৃক্ষ পাঞ্চাল-নগর।
কি মতে রহিল কুন্তী কুম্ভকার-ঘর।।
প্রাণ লৈয়া দেশান্তরে গেল প্রজাগণ।
অন্তঃপুরে কি হইল, না জানি এখন।।
কহ শুনি অপূর্ব্ব কথন মুনিরাজ।
শুনিতে উল্লাস বড় হয় হৃদিমাঝ।।
মুনি বলে, রহস্য শুনহ কুরুরাজ।
যখন বেড়িল আসি ক্ষত্রিয়-সমাজ।।
অনেক করিল যুদ্ধ দ্রুপদ-নৃপতি।
ধৃষ্টদ্যুন্ন- সত্যজিৎ-শিখণ্ডী-সংহতি।।
শিশুপাল সহ সত্যজিতের সংগ্রাম।
বিরাট-শিখণ্ডী যুদ্ধ লোকে অনুপাম।।
তিন অক্ষৌহিণী দলে কৈল মহারণ।
অনেক সংগ্রাম কৈল করি প্রাণপণ।।
জরাসন্ধ সহিত দ্রুপদ নরপতি।
ধৃষ্টদ্যুন্ন কৈল যুদ্ধ কীচক সংহতি।।
দুর্য্যোধনে ডাকি বলিলেন দ্রোণাচার্য্য।
নিবর্ত্তহ, দ্বিজ সঙ্গে নাহি কার্য্য।।
ব্রাহ্মণ বিন্ধিল লক্ষ্য, সবার বিদিত।
তাহার সহিত যুদ্ধ না হয় উচিত।।
অবিহিত কর্ম্ম কৈলে ধর্ম্মে নাহি সহে।
অধর্ম্মে প্রবৃত্ত হৈলে কভু জয় নহে।।
অনাথ দুর্ব্বল জন কৃষ্ণ বলবান্।
দুষ্টকর্ম্ম ভাল নহে তাঁর বিদ্যমান।।
গরুড়-আরূঢ় হয়ে আছেন শ্রীপতি।
তাঁর বলে যুঝে বার, হেন লয় মতি।।
যাবৎ না হন ক্রুদ্ধ দেব হৃষীকেশ।
চল ভালে ভালে প্রাণ লৈয়া যাই দেশ।।
ভীষ্ম যাহা বলিলেন, হইল বিদিত।
কুন্তীপুত্র পার্থ এই জানহ নিশ্চিত।।
অচল পর্ব্বত-প্রায় দাঁড়াইয়া আছে।
কার শক্তি নাহিক যাইতে তার কাছে।।
মানুষেতে কার শক্তি বিন্ধে হেন লক্ষ্য।
কার শক্তি নিবারয়ে এতেক বিপক্ষে।।
শরতের মেঘ যেন উড়ায় পবনে।
বড় বড় রাজগণ ভঙ্গ দিল রণে।।
ভীষ্ম বলিলেন, দ্রোণ যাইবে কেমনে।
লক্ষ রাজা বেড়িলেক একই ব্রাহ্মণে।।
পরার্থে দ্বিজার্থে সাধু ত্যজে যে জীবন।
হেনকথা নীতি শাস্ত্রে কহে সর্ব্বক্ষণ।।
সাক্ষাতে দেখিয়া ইহা যাইব কেমনে।
রাখিব ব্রাহ্মণ আজি মারি রাজগণে।।
তোমাকেও হেন কর্ম্মে না চাহি আচার্য্য।
প্রাণপণে করে লোক দ্বিজাতি সাহায্য।।
হের দেখ হীনস্ত্র দুর্ব্বল দ্বিজগণ।
প্রাণপণে ধাইতেছে জাতির কারণ।।
দ্বিজ নহে এ যদি কুন্তীর নন্দন।
সঙ্কটে রাখিয়া যাই করিয়া কেমনে।।
দ্রোণ কহে, একা পার্থ হয় ইথে ক্ষম।
বিশেষ বুঝিব আজি পার্থ পরাক্রম।।
এই যে অর্জ্জুন রণে করে পরাক্রম।
হের দেখ বন্ধু তার দুষ্টগণ-যম।।
মুহূর্ত্তেকে সবাকারে করিবে সংহার।
এইখানে রহিবারে ভদ্র নাহি আব।।
হের দেখ বেগে আসে হাতে তরুবর।
অন্য কেহ নহে এই, বীর বৃকোদর।।
জানি আমি ভালমতে তাহার চরিত।
নাহি পরাপর জ্ঞান, বুঝে বিপরীত।।
পূর্ব্বের বালক বলি নাহি জান ভীমা।
পিতামহ বলিয়া না উপেক্ষিবে তোমা।।
জতুগৃহে পোড়াইলা, সেই ক্রোধ আছে।
হের এই দিকে আসে হাতে লয়ে গাছে।।
চল শীঘ্র নহিলে ঘটিবে পরমাদ।
বুঝি তব বৃক্ষবাড়ি খেতে আছে সাধ।।
ভীষ্ম চলিলেন শুনি দ্রোণের বচন।
দুর্য্যোধন প্রভৃতি লইয়া সৈন্যগণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীদাস কহে, সাধু শুনে পুণ্যবান।।