ধ্বজা বা কেতনপূজার মত নানাপ্রকারের যাত্রাও বাঙলার আদিবাসী কোমগুলির অন্যতম প্রধান উৎসব বলিয়া গণ্য করা হইত। রথযাত্রা, স্নানযাত্রা, দোলযাত্রা প্রভৃতি ধর্মোৎসব মূলত তাঁহাদেরই; পরে ক্রমশ ইহাদের আর্যীকরণ নিষ্পন্ন হইয়াছে। লৌকিক ধর্মোৎসবে এই ধরনের যাত্রা বা সচল নৃত্যগীতসহ সামাজিক ধর্মানুষ্ঠানের বিবরণ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ও প্রাচীন বৌদ্ধ সংযুত্তনিকায়-গ্রন্থে জানা যায়।
আর্য ব্রাহ্মণ ও বৌদ্ধ উচ্চকোটির লোকেরা বোধ হয় এই ধরনের সমাজোৎসব ও যাত্রা খুব পছন্দ করিতেন না; সেই জন্যই সম্রাট অশোক সমাজোৎসবের বিরুদ্ধে অনুশাসন প্রচার করিয়াছিলেন। কিন্তু কোনও রাজকীয় অনুশাসনই লোকায়েত ধর্মের এই লৌকিক প্রকাশকে চাপিয়া রাখিতে পারে নাই; জনসাধারণের ধর্মোৎসব ক্রমশ বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য সমাজে স্বীকৃতি লাভ করিয়াছিল, এবং তাহারই ফলে রথযাত্রা, স্নানযাত্রা, দোলযাত্রা প্রভৃতি ধর্মোৎসবের প্রচলন আজও অব্যাহত। প্রাচীন বাঙলাদেশে প্রচলিত স্নানযাত্রাগুলির মধ্যে অগস্ত্যর্ঘ্যযাত্রা (দশহরার স্নান), অষ্টমী স্নানযাত্রা, মাঘীসপ্তমী স্নানযাত্রা প্রভৃতির কথা কালবিবেক-গ্রন্থে জানা যায়।